আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেন [১]: এক পুত্রের [২] অংশ দুই কন্যার অংশের সমান; কিন্তু শুধু কন্যা দুইয়ের বেশি থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ, আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধেক [৩]। তার সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ; সে নিঃসন্তান হলে এবং পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী হলে তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ; তার ভাই-বোন থাকলে মাতার জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ [৪]; এ সবই সে যা ওসিয়ত করে তা দেয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর [৫]। তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে উপকারে কে তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জান না [৬]। এ বিধান আল্লাহর; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
দ্বিতীয় রুকূ‘
[১] ইসলাম-পূর্বকালে আরব ও অনারব জাতিসমূহের মধ্যে দুর্বল শ্রেণী, ইয়াতীম বালক-বালিকা ও অবলা নারী চিরকালই যুলুম-নির্যাতনের স্বীকার ছিল। প্রথমতঃ তাদের কোনো অধিকারই স্বীকার করা হত না। কোনো অধিকার স্বীকার করা হলেও পুরুষের কাছ থেকে তা আদায় করে নেয়ার সাধ্য কারো ছিল না। ইসলামই সর্বপ্রথম তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এরপর সব অধিকার সংরক্ষণেরও চমৎকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উত্তরাধিকার আইনেও জগতের সাধারণ জাতিসমূহ সমাজের উভয় প্রকার অঙ্গকে তাদের স্বাভাবিক ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। আরবদের নিয়মই ছিল এই যে, যারা অশ্বারোহন করে এবং শক্রদের মোকাবিলা করে তাদের অর্থ-সম্পদ লুট করার যোগ্যতা রাখে, তারাই শুধু উত্তরাধিকারের যোগ্য হতে পারে। [রুহুল মা’আনী] বলাবাহুল্য, বালক-বালিকা ও নারী উভয় প্রকার দুর্বল শ্রেণী এ নিয়মের আওতায় পড়ে না। তাই তাদের নিয়ম অনুযায়ী শুধু যুবক ও বয়ঃপ্রাপ্ত পুত্রই ওয়ারিশ হতে পারত। কন্যা কোনো অবস্থাতেই ওয়ারিশ বলে গণ্য হত না, প্রাপ্ত বয়স্কা হোক কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্কা। পুত্র সন্তানও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে সে উত্তরাধিকারের যোগ্য বলে বিবেচিত হত না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে একটি ঘটনা সংঘটিত হল, সাদ ইবন রবী’ রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দুটি সাদ ইবন রবী’র কন্যা। তাদের বাবা আপনার সাথে উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়ে গেল। আর তাদের চাচা তাদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে গেল। তাদের জন্য কোনো সম্পদই বাকী রাখল না, অথচ সম্পদ না হলে তাদের বিয়েও হয় না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ এর ফয়সালা করবেন। ফলে মীরাসের আয়াত নাযিল হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চাচার কাছে লোক পাঠান এবং বলেন, তুমি সা‘দের কন্যাদ্বয়কে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ এবং তাদের মা-কে এক-অষ্টমাংশ দিয়ে দাও। আর যা বাকী থাকবে তা তোমার। [আবু দাউদ ২৮৯১, ২৮৯২, তিরমিযী ২০৯২. ইবন মাজাহ ২৭২০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৫২]
জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি অসুস্থ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। আমি বেহুশ হয়ে পড়ে ছিলাম, তিনি আমার উপর তার ওযুর পানি ছিটিয়ে দিলে আমি চেতনা ফিরে পেয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, মীরাস কার জন্য? আমার তো কেবল ‘কালালাই ওয়ারিশ হবে। অর্থাৎ আমার পিতৃকুলের কেউ নেই বা সন্তান-সন্তুতি নেই। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী ১৯৪, ৪৫৭৭, মুসলিম ১৬১৬]
অন্য এক বর্ণনায় ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তখনকার সময়ে সম্পদ শুধু ছেলেকেই দেয়া হত, আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়ত করার নিয়ম। তারপর আল্লাহ তা’আলা তা পরিবর্তন করে যা তিনি পছন্দ করেন তা নাযিল করেন এবং ছেলেকে দুই মেয়ের অংশ দেন আর পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ও তিন ভাগের এক নির্ধারণ করেন। স্ত্রীর জন্য আট ভাগের এক ও চার ভাগের এক নির্দিষ্ট করেন। স্বামীকে অর্ধেক অথবা চার ভাগের এক অংশ দেন। [বুখারী ৪৫৭৮]
[২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নির্ধারিত ফরয অংশসমূহ দেয়ার পর সবচেয়ে কাছের পুরুষ লোককে প্রদান করবে।’ [মুসলিম ১৬১৫]
তাই পুত্রের তুলনায় পৌত্র অধিক অভাবগ্রস্ত হলেও (اَقْرَبُوْنَ) এর আইনের দৃষ্টিতে সে ওয়ারিশ হতে পারে না। কেননা পুত্রের উপস্থিতিতে সে নিকটতম আত্মীয় নয়। কুরআনে উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে ইয়াতীম পৌত্রের উত্তরাধিকারিত্বের প্রশ্নটির অকাট্য সমাধান আপনা-আপনি বের হয়ে আসে। তার অভাব দূর করার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এমনি এক ব্যবস্থা পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হবে। এ প্রশ্নে প্রাশ্চাত্যভক্ত নবশিক্ষিতদের ছাড়া কেউ দ্বিমত করেনি। সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় আজ পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে এ কথাই বুঝে এসেছে যে, পুত্র বিদ্যমান থাকা অবস্থায় পৌত্র উত্তরাধিকার স্বত্ব পাবে না, তার পিতা বিদ্যমান থাকুক অথবা মারা যাক। এখন কুরআনী ব্যবস্থার সৌন্দর্য লক্ষ্য করুন। একদিকে স্বয়ং কুরআনেরই বর্ণিত সুবিচার ভিত্তিক বিধান এই যে, নিকটবতী আত্মীয় বর্তমান থাকলে দূরবর্তী আত্মীয় বঞ্চিত হবে, অপরদিকে বঞ্চিত দূরবর্তী আত্মীয়ের মনোবেদনা ও নৈরাশ্যকেও উপেক্ষা করা হয়নি। এর জন্য একটি স্বতন্ত্র আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “যেসব দূরবর্তী, ইয়াতীম, মিসকীন পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যদি তারা বন্টনের সময় উপস্থিত থাকে, তবে অংশীদারদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে এ মাল থেকে স্বেচ্ছায় তাদেরকে কিছু দিয়ে দেয়া। এটা তাদের জন্য এক প্রকার সদকা ও সওয়াবের কাজ।” [সূরা আন-নিসা ৮] তাছাড়া ইসলাম অসীয়ত করার একটি দায়িত্ব মানুষকে দিয়েছে। দাদা যখনই তার নাতিকে বঞ্চিত দেখবে, তখন তার উচিত হবে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে তার জন্য অসিয়ত করা। [আত-তাফসীরুস সহীহ] কারণ, ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত নেই সুতরাং অসিয়তের সর্বোত্তম ক্ষেত্র হচ্ছে নিকটাতীয় অথচ কোনো কারণে ওয়ারিশ হচ্ছে না, এমন লোকদের জন্য তা গুরুত্বের সাথে সম্পাদন করা। এ রকম অবস্থায় অসিয়ত করা কোনো কোনো আলেমের নিকট ওয়াজিব ।
[৩] কুরআনুল করীম কন্যাদেরকে অংশ দেয়ার প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছে যে, কন্যাদের অংশকে আসল ভিত্তি সাব্যস্ত করে এর অনুপাতে পুত্রদের অংশ ব্যক্ত করেছে। অর্থাৎ ‘দুই কন্যার অংশ এক পুত্রের অংশের সমপরিমাণ’ বলার পরিবর্তে ‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমপরিমাণ’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। অনেকেই বোনদেরকে অংশ দেয় না এবং বোনেরা এ কথা চিন্তা করে অনিচ্ছাসত্ত্বেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে ক্ষমা করে দেয় যে, পাওয়া যখন যাবেই না তখন ভাইদের সাথে মন কষাকষির দরকার কী। এরূপ ক্ষমা শরীয়তের আইনে ক্ষমাই নয়; ভাইদের জিম্মায় তাদের হক পাওনা থেকে যায়। যারা এভাবে ওয়ারিশী স্বত্ব আত্মসাৎ করে, তারা কঠোর গোনাহগার। তাদের মধ্যে আবার নাবালেগা কন্যাও থাকে। তাদেরকে অংশ না দেয়া দ্বিগুণ গোনাহ৷ এক গোনাহ্ শরীয়তসম্মত ওয়ারিশের অংশ আত্মসাৎ করার এবং দ্বিতীয় গোনাহ ইয়াতীমের সম্পত্তি হজম করে ফেলার। এরপর আরো ব্যাখ্যা সহকারে কন্যাদের অংশ বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, যদি পুত্র সন্তান না থাকে, শুধু একাধিক কন্যাই থাকে, তবে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে। এতে সব কন্যাই সমান অংশীদার হবে। অবশিষ্ট তিন ভাগের এক অন্যান্য ওয়ারিশ যেমন মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, স্ত্রী অথবা স্বামী প্রমূখ পাবে। কন্যাদের সংখ্যা দুই বা তার বেশী হলে দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে তারা সমান অংশীদার হবে।
[৪] কাতাদা বলেন, সন্তানরা মাকে এক তৃতীয়াংশ থেকে কমিয়ে এক ষষ্টাংশে নিয়ে এসেছে, অথচ তারা নিজেরা ওয়ারিশ হয় নি। যদি একজন মাত্র সন্তান থাকে তবে সে তার মায়ের অংশ কমাবে না। কেবল একের অধিক হলেই কমাবে। আলেমগণ বলেন, মায়ের অংশ কমানোর কারণ হচ্ছে, মায়ের উপর তাদের বিয়ে বা খরচের দায়িত্ব পড়ে না। তাদের বিয়ে ও খরচাদির দায়িত্ব তাদের বাপের উপর। তাই তাদের মায়ের অংশ কমানো যথার্থ হয়েছে। [তাবারী; ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]
[৫] এখানে শরীআতের নীতি হচ্ছে এই যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে প্রথমে শরীআত অনুযায়ী তার কাফন-দাফনের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এতে অপব্যয় ও কৃপণতা উভয়টি নিষিদ্ধ। এরপর তার ঋণ পরিশোধ করা হবে। যদি ঋণ সম্পত্তির সমপরিমাণ কিংবা তারও বেশী হয়, তবে কেউ ওয়ারিশী স্বত্ব পাবে না এবং কোনো ওসিয়ত কার্যকর হবে না। পক্ষান্তরে যদি ঋণ পরিশোধের পর সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে কিংবা ঋণ একেবারেই না থাকে, তবে সে কোনো ওসিয়ত করে থাকলে এবং তা গোনাহর ওসিয়ত না হলে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা কার্যকর হবে। যদি সে তার সমস্ত সম্পত্তি ওসিয়ত করে যায় তবুও এক-তৃতীয়াংশের অধিক ওসিয়ত কার্যকর হবে না। মোটকথা, ঋণ পরিশোধের পর এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তিতে ওসিয়ত কার্যকর করে অবশিষ্ট সম্পত্তি শরীআতসম্মত ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। ওসিয়ত না থাকলে ঋণ পরিশোধের পর সমস্ত সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
বন্টনের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, মিকদাম ইবন মাদীকারব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদেরকে সবচেয়ে নিকটতমের ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন, তারপর পরের নিকটতম ব্যক্তি। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩১]
[৬] অর্থাৎ তোমাদের পিতা ও সন্তানের মধ্যে কার দ্বারা তোমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে, তা বলতে পার না। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ইবন আব্বাস বলেন, তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে যে আল্লাহর বেশী অনুগত, সে কিয়ামতের দিন বেশী উঁচু স্তরে অবস্থান করবে; কেননা আল্লাহ্ তা'আলা মুমিনদের পরস্পরের জন্য পরস্পরের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। [তাবারী]
4. إبقاء معلومات نسخة الترجمة الموجودة داخل المستند.
5. إفادة المصدر (QuranEnc.com) بأي ملاحظة على الترجمة.
6. تطوير الترجمات وفق النسخ الجديدة الصادرة من المصدر (QuranEnc.com).
7. عدم تضمين إعلانات لا تليق بترجمات معاني القرآن الكريم عند العرض.
نتائج البحث:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".