কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-আহকাফ   আয়াত:

সূরা আল-আহকাফ

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
بيان حاجة البشريّة للرسالة وإنذار المعرضين عنها.
অবিশ্বাসীদের উপর সাক্ষী দাঁড় করানো এবং তাদেরকে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা। এ কারণেই ভীতিপ্রদর্শন শব্দটি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে।

حمٓ
১. হা-মীম, এ সব যুক্তাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা সূরা বাকারার শুরুতে করা হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
تَنزِيلُ ٱلۡكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَكِيمِ
২. কুরআন সেই প্ররাক্রমশালী সত্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ যাঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না। যিনি তাঁর সৃষ্টি ও পরিচালনায় প্রজ্ঞাবান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَأَجَلٖ مُّسَمّٗىۚ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ عَمَّآ أُنذِرُواْ مُعۡرِضُونَ
৩. আমি আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সেগুলোকে অনর্থক সৃষ্টি করি নি। বরং এগুলোকে এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সত্যসহকারে সৃষ্টি করেছি। তন্মধ্যে রয়েছে, বান্দারা এর মাধ্যমে তাঁকে চিনবে। ফলে এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করবে। রবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। উপরন্তু তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব প্রদানের দাবি হিসাবে এক আল্লাহর জ্ঞানে তাদের আয়ু অবশিষ্ট থাকা অবধি দায়িত্ব পালন করবে। আর যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে তারা আল্লাহর কিতাবে যা থেকে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে তারা তা থেকে বিমুখ। তারা এ নিয়ে কোন পরোয়া করে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ أَرَءَيۡتُم مَّا تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُواْ مِنَ ٱلۡأَرۡضِ أَمۡ لَهُمۡ شِرۡكٞ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِۖ ٱئۡتُونِي بِكِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ هَٰذَآ أَوۡ أَثَٰرَةٖ مِّنۡ عِلۡمٍ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ
৪. হে রাসূল! সত্য থেকে বিমুখ এসব মুশরিকদেরকে আপনি বলুন: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যে সব দেবতার পূজা করো তাদের ব্যাপারে সংবাদ দাও যে, তারা যমীনের কোন্ অংশ সৃষ্টি করেছে? তারা কি পাহাড় সৃষ্টি করেছে? তারা কি নদী সৃষ্টি করেছে? না কি তাদের অংশদারিত্ব রয়েছে আল্লাহ কর্তৃক আসমানসমূহ সৃষ্টিতে। তোমরা আমার নিকট কুরআনের পূর্বে আল্লাহ পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কোন কিতাব নিয়ে আস কিংবা পূর্বেকার লোকদের রেখে যাওয়া অবশিষ্ট জ্ঞান নিয়ে আসো। যদি তোমরা তোমাদের এ দাবিতে সত্য হয়ে থাক যে, দেবতারা ইবাদাতের হকদার।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ
৫. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত এমন দেব-দেবির পূজা করে যে কিয়ামত অবধি তার ডাকে সাড়া দিবে না। বস্তুতঃ তারা আল্লাহর পরিবর্তে যে সব দেবতার পূজা করে তাদের পক্ষে এদের কোন উপকার ও অপকার সাধন তো দূরের কথা বরং তারা মূলতঃ এ সব পূজারীদের ইবাদাত বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الاستهزاء بآيات الله كفر.
ক. আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে বিদ্রƒপ করা কুফরী।

• خطر الاغترار بلذات الدنيا وشهواتها.
খ. দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও প্রবৃত্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়ার ভয়াবহতা।

• ثبوت صفة الكبرياء لله تعالى.
গ. আল্লাহর জন্য অহঙ্কার নামক বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত।

• إجابة الدعاء من أظهر أدلة وجود الله سبحانه وتعالى واستحقاقه العبادة.
ঘ. দু‘আ কবূল করা আল্লাহর অস্তিত্ব এবং তাঁর ইবাদাত পাওয়ার হকদার হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءٗ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمۡ كَٰفِرِينَ
৬. এরা দুনিয়াতে তাদের উপকার না করার পাশাপাশি তাদের হাশর ঘটানোর পর যারা তাদের ইবাদাত করতো তাদের শত্রæতে পরিণত হবে এবং তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। উপরন্তু তারা যে এদের ইবাদাত করতো এ ব্যাপারে তাদের অবগতিকেও তারা অস্বীকার করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُنَا بَيِّنَٰتٖ قَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لِلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ هَٰذَا سِحۡرٞ مُّبِينٌ
৭. যখন তাদের নিকট আমার রসূলের উপর অবতীর্ণ আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন কাফিররা আমার রাসূলের হাত মারফত তাদের নিকট আগত কুরআন সম্পর্কে বলে, এটি সুস্পষ্ট যাদু; যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত ওহী নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ إِنِ ٱفۡتَرَيۡتُهُۥ فَلَا تَمۡلِكُونَ لِي مِنَ ٱللَّهِ شَيۡـًٔاۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَا تُفِيضُونَ فِيهِۚ كَفَىٰ بِهِۦ شَهِيدَۢا بَيۡنِي وَبَيۡنَكُمۡۖ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
৮. এ সব মুশরিক কি বলতে চায় যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে এই কুরআন গড়ে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ করেছে?! হে রাসূল! আপনি এদেরকে বলুন: আমি যদি একে আমার পক্ষ থেকে গড়ে থাকি তবে কি আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিতে চাইলে তোমরা তা থেকে আমাকে রক্ষা করতে পারবে? তাহলে আমি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে কীভাবে নিজেকে তাঁর শাস্তির সম্মুখীন করবো?! আল্লাহ ভালো জানেন, তোমরা তাঁর কুরআন ও আমাকে নিয়ে যে সব কূট মন্তব্য করে থাকো তিনিই আমার ও তোমাদের মধ্যকার সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট। তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ مَا كُنتُ بِدۡعٗا مِّنَ ٱلرُّسُلِ وَمَآ أَدۡرِي مَا يُفۡعَلُ بِي وَلَا بِكُمۡۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّ وَمَآ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ مُّبِينٞ
৯. হে রাসূল! আপনি নিজ নবুওয়াত অস্বীকারকারী এ সব মুশরিককে বলুন: আমি আল্লাহর প্রেরিত প্রথম রাসূল নই যে, তোমাদের উদ্দেশ্যে আমার দা’ওয়াতকে তোমরা আশ্চর্যের বিষয় মনে করবে। কেননা, আমার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। আর আমি আমার ও তোমাদের সাথে আল্লাহ দুনিয়াতে কী আচরণ করবেন তা জানি না। আমি তো কেবল আমার প্রতি আল্লাহর অবতীর্ণ ওহীর অনুসরণ করি। তাই আমি ওহীর বিপরীত না কিছু বলি, আর না কিছু করি। আমিতো একজন সতর্ককারী মাত্র। আমি আল্লাহর শাস্তি থেকে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করে থাকি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ أَرَءَيۡتُمۡ إِن كَانَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَكَفَرۡتُم بِهِۦ وَشَهِدَ شَاهِدٞ مِّنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ مِثۡلِهِۦ فَـَٔامَنَ وَٱسۡتَكۡبَرۡتُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ
১০. হে রাসূল! আপনি এ সব মিথ্যারোপকারীকে জিজ্ঞেস করুন, তোমরা বলো: যদি এই কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে আর তোমরা তা অস্বীকার করো। অথচ বনী ইসরাইলের এক সাক্ষ্য প্রদানকারী তাওরাতে এর ব্যাপারে যা এসেছে তার ভিত্তিতে ঈমান অনয়ন করে সাক্ষ্য দেয় যে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। তোমরা ঈমানের ব্যাপারে অহঙ্কার প্রদর্শন করে থাকো। তবে কি তোমরা অনাচারী নও?! বস্তুতঃ আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হকের সন্ধান দেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَوۡ كَانَ خَيۡرٗا مَّا سَبَقُونَآ إِلَيۡهِۚ وَإِذۡ لَمۡ يَهۡتَدُواْ بِهِۦ فَسَيَقُولُونَ هَٰذَآ إِفۡكٞ قَدِيمٞ
১১. কুরআন ও রাসূলের আনা বিষয়ে অবিশ্বাসীরা ঈমানদারদেরকে বলে: যদি মুহাম্মাদ যা নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য হতো; যা কল্যাণের প্রতি পথ দেখায় তাহলে এর প্রতি আমাদের পূর্বে ফকীর, দাস ও দুর্বলরা অগ্রণী হতে পারতো না। বস্তুতঃ তারা যেহেতু তাদের রাসূল তাদের নিকট যা নিয়ে আগমন করেছেন তা থেকে আলো গ্রহণ করে নি তাই অচিরেই তারা বলবে: তিনি আমার নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা মিথ্যা ও পুরাতন বিষয়; আমরা এ মিথ্যার অনুসরণ করি না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِن قَبۡلِهِۦ كِتَٰبُ مُوسَىٰٓ إِمَامٗا وَرَحۡمَةٗۚ وَهَٰذَا كِتَٰبٞ مُّصَدِّقٞ لِّسَانًا عَرَبِيّٗا لِّيُنذِرَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُحۡسِنِينَ
১২. এই কুরআনের পূর্বে আল্লাহ মূসার উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন। যা ছিলো সেই কিতাব যাকে হকের ব্যাপারে অনুসরণ করা হতো। আর যা ছিলো বনী ইসরাইলদের মধ্যে যারা এর অনুসরণ করেছে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ এই কুরআন এর পূর্বের কিতাবগুলোর সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় সত্যায়নকারী। যাতে করে তিনি এর মাধ্যমে শিরক ও পাপাচার দ্বারা নিজেদের নফসের উপর জুলুমকারীদের সতর্ক করতে পারেন। বস্তুতঃ এটি মু’মিনদের জন্য সুসংবাদ; যারা তাদের ¯্রষ্টার সাথে সম্পর্ক সুন্দর রেখেছে এবং তাঁর সৃষ্টির সাথেও সম্পর্ক ভালো রেখেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
১৩. যারা বলে যে, আল্লাহ আমাদের রব। তিনি ব্যতীত আমাদের কোন রব নেই। অতঃপর তারা ঈমান ও নেক আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলো তাদের জন্য পরকালে আগত কোন ভয় নেই। আর না তারা দুনিয়া হারানো কিংবা পিছনে রেখে আসা কোন বস্তুর উপর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
১৪. পূর্বের বৈশিষ্ট্যাবলী কর্তৃক গুণান্বিত ব্যক্তিরা হলো জান্নাতী। তারা তথায় চিরদিন থাকবে। এটি হলো দুনিয়ার জীবনে তাদের কৃতকর্মের ফল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• كل من عُبِد من دون الله ينكر على من عبده من الكافرين.
ক. আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরই ইবাদাত করা হয়েছে তারা তাদের ইবাদাতকারী কাফিরদেরকে অস্বীকার করবে।

• عدم معرفة النبي صلى الله عليه وسلم بالغيب إلا ما أطلعه الله عليه منه.
খ. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আল্লাহ যতটুকু অবগত করেন শুধু তা ব্যতীত তিনি অন্য কিছুর গাইবজান্তা নন।

• وجود ما يثبت نبوّة نبينا صلى الله عليه وسلم في الكتب السابقة.
গ. পূর্বেকার কিতাবগুলোতে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের সাক্ষ্য বিদ্যমান।

• بيان فضل الاستقامة وجزاء أصحابها.
ঘ. সরল পথে অটল থাকার ফযীলতের বর্ণনা এবং এ পথে যারা অটল থাকে তাদের প্রতিদান।

وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ
১৫. আমি মানুষকে গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ দিয়েছি যে, সে যেন তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় হয়। তাদের জীবদ্দশায় ও তারা মারা যাওয়ার পর শরীয়ত বিরোধী পন্থা ব্যতিরেকে তাদের সাথে যেন সদ্ব্যবহার করে। বিশেষতঃ তার মায়ের সাথে যে তাকে কষ্ট করে ধারণ করেছে ও কষ্ট করে প্রসব করেছে। তার গর্ভে অবস্থান ও দুধ ছাড়ানোর সময় ছিলো ত্রিশ মাস। অতঃপর যখন সে তার বিবেক ও শারীরিক শক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে এবং চল্লিশ বৎসরে উপনীত হয় তখন যেন বলে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে আমার ও আমার মাতা-পিতার উপর প্রদত্ত নিআমতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দিন। আরো দিন আমাকে আপনার সন্তুষ্টির উপযুক্ত নেক আমলের তাওফীক। আর আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। আপনি আমার সন্তানদেরকে আমার জন্য সংশোধন করুন। আমি আপনার নিকট আমার পাপ থেকে তাওবা করছি। আর আমি আপনার আনুগত্যের জন্য নত শীর এবং আপনার নির্দেশ মান্যকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ نَتَقَبَّلُ عَنۡهُمۡ أَحۡسَنَ مَا عَمِلُواْ وَنَتَجَاوَزُ عَن سَيِّـَٔاتِهِمۡ فِيٓ أَصۡحَٰبِ ٱلۡجَنَّةِۖ وَعۡدَ ٱلصِّدۡقِ ٱلَّذِي كَانُواْ يُوعَدُونَ
১৬. এরা সে সব লোক যাদের নেক আমল আমি কবুল করে থাকি এবং মন্দ কাজগুলো মার্জনা করি। ফলে তদ্বারা তাদেরকে পাকড়াও করিনা। তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করা হলো তা সত্য; যা অবশ্যই বাস্তবে রূপ লাভ করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِي قَالَ لِوَٰلِدَيۡهِ أُفّٖ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِيٓ أَنۡ أُخۡرَجَ وَقَدۡ خَلَتِ ٱلۡقُرُونُ مِن قَبۡلِي وَهُمَا يَسۡتَغِيثَانِ ٱللَّهَ وَيۡلَكَ ءَامِنۡ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞ فَيَقُولُ مَا هَٰذَآ إِلَّآ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ
১৭. আর যে ব্যক্তি স্বীয় মাতা-পিতাকে বলে, তোমাদের উভয়ের জন্য ধ্বংস। তোমরা কি আমাকে আমার মৃত্যুর পর কবর থেকে পুনরুত্থানের কথা বলছো। অথচ বহু শতাব্দীকাল অতিক্রম হয়েছে এবং তাতে যে সব মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে তাদের কেউ জীবিত হয়ে ফিরে নি?! তাদের মাতা-পিতা আল্লাহর নিকট আর্তনাদ করে তাদের সন্তানের জন্য ঈমানের প্রতি হিদায়েতের দু‘আ করে এবং তাদের সন্তানকে বলে, তুমি পুনরুত্থানে ঈমান না আনলে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এর উপর ঈমান আনয়ন করো। কেননা, পুনরুত্থানের ব্যাপারে আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য; তাতে কোন সন্দেহ নেই। তখন সে তার পুনরুত্থানের প্রতি অবিশ্বাসকে নবায়নপূর্বক বলে, পুনরুত্থান সম্পর্কে যা কিছু বলা হলো তা মূলতঃ পূর্বেকারদের বই থেকে বলা হচ্ছে। এটি তাদের লিখনীর উদ্ধৃতি ব্যতীত আর কিছুই না। এটি মূলতঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাব্যস্ত নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ حَقَّ عَلَيۡهِمُ ٱلۡقَوۡلُ فِيٓ أُمَمٖ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِم مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِۖ إِنَّهُمۡ كَانُواْ خَٰسِرِينَ
১৮. এদের জন্য পূর্বেকার জিন ও মানব জাতির অনেকের মতো শাস্তি অবধারিত। তারা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত। তারা জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۖ وَلِيُوَفِّيَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
১৯. আর জান্নাত ও জাহান্নামে উভয় দলের জন্যে তাদের আমল অনুযায়ী বহু স্তর রয়েছে। জান্নাতীদের জন্য রয়েছে উচ্চতর স্তরসমূহ। আর জাহান্নামীদের জন্য রয়েছে নি¤œতর স্তরসমূহ। আল্লাহ অবশ্যই কিয়ামত দিবসে তাদের আমলের পূর্ণমাত্রায় প্রতিদান দিবেন। তাদের কারো উপর পুণ্য কমিয়ে কিংবা পাপ বাড়িয়ে জুলুম করা হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيَوۡمَ يُعۡرَضُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ عَلَى ٱلنَّارِ أَذۡهَبۡتُمۡ طَيِّبَٰتِكُمۡ فِي حَيَاتِكُمُ ٱلدُّنۡيَا وَٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهَا فَٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَبِمَا كُنتُمۡ تَفۡسُقُونَ
২০. যে দিন আল্লাহকে অস্বীকারকারী ও তদীয় রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপকারীদেরকে আগুনের নিকট আনা হবে তাতে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে এবং তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন ও দোষারোপ স্বরূপ বলা হবে, তোমরা নিজেদের ভোগের অংশগুলো দুনিয়ার জীবনে শেষ করে ফেলেছো এবং তথায় বিদ্যমান সুখ ভোগ করে ফেলেছো। তাই আজকের দিনে দুনিয়ার জীবনে যমীনে অন্যায়ভাবে অহঙ্কার এবং কুফরী ও পাপের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে পড়ার ফলস্বরূপ তোমাদেরকে অপমানকর ও অপদস্তকারী শাস্তি আস্বাদন করানো হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• بيان مكانة بِرِّ الوالدين في الإسلام، بخاصة في حق الأم، والتحذير من العقوق.
ক. ইসলামে পিতা-মাতা আর বিশেষ করে মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের অবস্থানের বর্ণনা এবং অসদাচরণ থেকে সতর্কীকরণ।

• بيان خطر التوسع في ملاذّ الدنيا؛ لأنها تشغل عن الآخرة.
খ. দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকার ভয়াবহতা বর্ণনা করা। কেননা, এটি পরকাল থেকে বিমুখ রাখে।

• بيان الوعيد الشديد لأصحاب الكبر والفسوق.
গ. অহঙ্কারকারী ও পাপাচারীদের কঠিন শাস্তির বর্ণনা।

۞ وَٱذۡكُرۡ أَخَا عَادٍ إِذۡ أَنذَرَ قَوۡمَهُۥ بِٱلۡأَحۡقَافِ وَقَدۡ خَلَتِ ٱلنُّذُرُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦٓ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّا ٱللَّهَ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ
২১. হে রাসূল! আপনি বংশগতভাবে আদ সম্প্রদায়ের ভাই হুদের কথা উল্লেখ করুন। যখন সে তার জাতিকে তাদের উপর আল্লাহর গজব নিপতিত হওয়ার ভয় দেখিয়েছিলো তখন তারা আরব দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের আঁকাবাঁকা বালুকারাশির উপর অবস্থিত তাদের বাড়ীগেুলোতে অবস্থানরত ছিলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا لِتَأۡفِكَنَا عَنۡ ءَالِهَتِنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ
২২. রাসূলগণ হুদের পূর্বে ও পরে স্বীয় সম্প্রদায়কে এ কথা বলে ভীতি প্রদর্শন করেছেন যে, তোমরা এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না। ফলে তাঁর সাথে অন্য কারো ইবাদাত করবে না। হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের ব্যাপারে এক মহা দিবস তথা কিয়ামত দিবসের ভয় পচ্ছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ إِنَّمَا ٱلۡعِلۡمُ عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَلَٰكِنِّيٓ أَرَىٰكُمۡ قَوۡمٗا تَجۡهَلُونَ
২৩. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: তুমি কি আমাদেরকে আমাদের দেবতাদের থেকে বিমুখ করতে এসেছো? তোমার জন্য এটি আদৗ সম্ভব হবে না। আর যদি তোমার দাবিতে তুমি সত্য হয়ে থাকো তাহলে আমাদের উপর শাস্তি আপতিত করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَمَّا رَأَوۡهُ عَارِضٗا مُّسۡتَقۡبِلَ أَوۡدِيَتِهِمۡ قَالُواْ هَٰذَا عَارِضٞ مُّمۡطِرُنَاۚ بَلۡ هُوَ مَا ٱسۡتَعۡجَلۡتُم بِهِۦۖ رِيحٞ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٞ
২৪. যখন তাদের নিকট তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত শাস্তি এসে পড়লো তখন তারা একে আসমানে দৃশ্যমান মেঘমালা স্বরূপ দেখতে পেলো; যা তাদের উপত্যকা অভিমুখী ছিলো। তখন তারা বললো, এই দৃশ্যমান বস্তু আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষাবে। হুদ তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমরা যে ধারণা করেছো যে, এটি এমন একটি মেঘমালা যা তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষাবে, ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। বরং এটি সেই শাস্তি যে ব্যাপারে তোমরা তাড়াহুড়ো করেছিলে। এটি এমন এক বায়ু যাতে রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
تُدَمِّرُ كُلَّ شَيۡءِۭ بِأَمۡرِ رَبِّهَا فَأَصۡبَحُواْ لَا يُرَىٰٓ إِلَّا مَسَٰكِنُهُمۡۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ
২৫. এটি যে বস্তুর উপর দিয়ে অতিক্রম করে সেগুলোর মধ্যে যেগুলোকে আল্লাহ ধ্বংস করতে নির্দেশ প্রদান করেন সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে প্রভাত করে। তথায় তাদের অতীত অস্তিত্বের পরিচায়ক তাদের বসবাসের ঘরবাড়ীগুলো ব্যতীত অন্য কিছু অবশিষ্ট থাকে নি। বস্তুতঃ আমি এই কষ্টদায়ক শাস্তির মতো পাপের উপর গোঁড়ামী প্রদর্শনকারীদেরকে শাস্তি প্রদান করবো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ مَكَّنَّٰهُمۡ فِيمَآ إِن مَّكَّنَّٰكُمۡ فِيهِ وَجَعَلۡنَا لَهُمۡ سَمۡعٗا وَأَبۡصَٰرٗا وَأَفۡـِٔدَةٗ فَمَآ أَغۡنَىٰ عَنۡهُمۡ سَمۡعُهُمۡ وَلَآ أَبۡصَٰرُهُمۡ وَلَآ أَفۡـِٔدَتُهُم مِّن شَيۡءٍ إِذۡ كَانُواْ يَجۡحَدُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُواْ بِهِۦ يَسۡتَهۡزِءُونَ
২৬. আমি হুদ সম্প্রদায়কে প্রতাপ-প্রতিপত্তির এমন সব উপকরণ প্রদান করেছি যা তোমারেকে প্রদান করি নি। আমি তাদেরকে শ্রবণের জন্য কান, দর্শনের জন্য চক্ষু এবং অনুধাবনের জন্য অন্তঃকরণ প্রদান করেছি। এতদসত্তে¡ও তাদের কর্ণ, চক্ষু ও বিবেক কোন উপকারে আসে নি। তথা আল্লাহর শাস্তি আগমনের পর তা তাদের জন্য প্রতিরক্ষার কোন কাজ দেয় নি। যেহেতু তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিলো। ফলে তাদেরকে নবী হুদ (অলাইহস-সালাম) যে শাস্তির ভয় দেখিয়েছিলেন; অথচ তারা একে অবিশ্বাস করেছিলো তা আপতিত হল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ أَهۡلَكۡنَا مَا حَوۡلَكُم مِّنَ ٱلۡقُرَىٰ وَصَرَّفۡنَا ٱلۡأٓيَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ
২৭. হে মক্কাবাসী! আমি তোমাদের আশপাশের বসতিগুলোকে ধ্বংস করেছি তথা আদ, সামূদ, লুত সম্প্রদায় ও মাদয়ানবাসীকে। আর আমি তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্নরূপে দলীল প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি যেন তারা কুফরী থেকে ফেরত আসে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَوۡلَا نَصَرَهُمُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ قُرۡبَانًا ءَالِهَةَۢۖ بَلۡ ضَلُّواْ عَنۡهُمۡۚ وَذَٰلِكَ إِفۡكُهُمۡ وَمَا كَانُواْ يَفۡتَرُونَ
২৮. তাদের মূর্তিগুলো কেন তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি যেগুলোর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তারা পূজা ও বলি দিতো?! তাদেরকে আদৗ সাহায্য করেনি বরং তাদের থেকে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজনের সময় দূরে সরে পড়েছে। বস্তুতঃ এটি হলো তাদের সেই মিথ্যা ও রটনার স্বরূপ যদ্বারা তারা নিজেদেরকে প্রবোধ দিতো এই বলে যে, এ সব মূর্তি তাদেরকে উপকার দিবে ও আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• لا علم للرسل بالغيب إلا ما أطلعهم ربهم عليه منه.
ক. আল্লাহ গায়েবের কোন বিষয় অবগত না করলে নবীরা সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখেন না।

• اغترار قوم هود حين ظنوا العذاب النازل بهم مطرًا، فلم يتوبوا قبل مباغتته لهم.
খ. হূদ সম্প্রদায় প্রতারিত হয়েছিলো যখন তারা তাদের উপর আপতিত শাস্তিকে বৃষ্টি স্বরূপ ধারণা করেছিলো। ফলে এর আক্রমণের পূর্বে তারা তাওবা করে নি।

• قوة قوم عاد فوق قوة قريش، ومع ذلك أهلكهم الله.
গ. আদ সম্প্রদায়ের শক্তি কুরাইশ অপেক্ষা বেশী থাকা সত্তে¡ও আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন।

• العاقل من يتعظ بغيره، والجاهل من يتعظ بنفسه.
ঘ. বুদ্ধিমান অন্যদের দেখে উপদেশ গ্রহণ করে। আর মূর্খ নিজকে দেখে শিক্ষা নেয়।

وَإِذۡ صَرَفۡنَآ إِلَيۡكَ نَفَرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓاْ أَنصِتُواْۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوۡاْ إِلَىٰ قَوۡمِهِم مُّنذِرِينَ
২৯. হে রাসূল! সে সময়ের কথা স্মরণ করুন যখন আপনার প্রতি আমি এক দল জিন পাঠিয়েছিলাম। যারা আপনার উপর অবতীর্ণ কুরআন শ্রবণ করছিলো। তারা তা শ্রবণের জন্য উপস্থিত হলে পরস্পর বলতে থাকে, তোমরা চুপ থাকো। যেন আমরা তা শুনতে পাই। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত শেষ করলে তারা স্বীয় জাতির নিকট প্রত্যাবর্তন করলো এ দায়িত্ব নিয়ে যে, তারা যদি এই কুরআনের উপর ঈমান আনয়ন না করে তাহলে তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয় রয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ يَٰقَوۡمَنَآ إِنَّا سَمِعۡنَا كِتَٰبًا أُنزِلَ مِنۢ بَعۡدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٖ مُّسۡتَقِيمٖ
৩০. তারা ওদেরকে বললো: হে আমাদের জাতি! আমরা এমন এক কুরআন শ্রবণ করেছি যা আল্লাহ মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর পরে অবতীর্ণ করেছেন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবগুলোকে সত্যায়ন করে। আমরা যে কিতাব শ্রবণ করেছি তা সত্যের পথ প্রদর্শন করে এবং সরল পথ দেখায়। যা হলো ইসলামের পথ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰقَوۡمَنَآ أَجِيبُواْ دَاعِيَ ٱللَّهِ وَءَامِنُواْ بِهِۦ يَغۡفِرۡ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمۡ وَيُجِرۡكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ
৩১. হে আমাদের সম্প্রদায়! তোমাদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সত্যের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তার অনুসরণ করো এবং তিনি স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী হিসাবে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করো। তাহলে তিনি তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন এবং তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে সত্যের প্রতি ডাকে সাড়া না দেয়া উপরন্তু তিনি যে স্বীয় রবের প্রেরিত রাসূল সে কথার উপর ঈমান না আনার দরুন তোমাদের উদ্দেশ্যে অপেক্ষমাণ কষ্টদায়ক শাস্তি থেকে রেহাই দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَن لَّا يُجِبۡ دَاعِيَ ٱللَّهِ فَلَيۡسَ بِمُعۡجِزٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَيۡسَ لَهُۥ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءُۚ أُوْلَٰٓئِكَ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ
৩২. যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষ থেকে তাঁর সত্যের আহŸান গ্রহণ করবে না সে যমীনে আল্লাহ থেকে পালিয়ে থাকতে পারবে না। আর না তার জন্য আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন বন্ধুবান্ধব রয়েছে যারা তাকে তাঁর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। বরং তারা হলো সত্য থেকে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَوَلَمۡ يَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَلَمۡ يَعۡيَ بِخَلۡقِهِنَّ بِقَٰدِرٍ عَلَىٰٓ أَن يُحۡـِۧيَ ٱلۡمَوۡتَىٰۚ بَلَىٰٓۚ إِنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ
৩৩. পুনরুত্থান অস্বীকারকারী এ সব মুশরিক কি দেখে না যে, যে আল্লাহ এতো বিশাল ও বিস্তীর্ণ আসমান ও যমীনকে অনায়াসে সৃষ্টি করেছেন তিনি কি হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, অবশ্যই তিনি তাদেরকে জীবিত করতে সক্ষম। তিনি মহিয়ান ও সর্ব বিষয়ে সক্ষম। ফলে তিনি মৃতদেরকে জীবিত করতে অপারগ নন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيَوۡمَ يُعۡرَضُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ عَلَى ٱلنَّارِ أَلَيۡسَ هَٰذَا بِٱلۡحَقِّۖ قَالُواْ بَلَىٰ وَرَبِّنَاۚ قَالَ فَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ
৩৪. যে দিন আল্লাহ ও তদীয় রাসূলদের প্রতি অবিশ্বাসকারীদেরকে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে আগুনের সম্মুখে উপনীত করা হবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে ধমকের স্বরে বলা হবে, তোমরা যে শাস্তি দেখতে পাচ্ছো তা কি সত্য নয়?! না কি তোমরা যেমনটি দুনিয়াতে বলতে তা সেরূপ মিথ্যা?! তদুত্তরে তারা বলবে, অবশ্যই হে আমাদের রব! এটি সত্য। তখন তাদেরকে বলা হবে, তাহলে আল্লাহকে অবিশ্বাসের ফলে তোমরা শাস্তি ভোগ করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱصۡبِرۡ كَمَا صَبَرَ أُوْلُواْ ٱلۡعَزۡمِ مِنَ ٱلرُّسُلِ وَلَا تَسۡتَعۡجِل لَّهُمۡۚ كَأَنَّهُمۡ يَوۡمَ يَرَوۡنَ مَا يُوعَدُونَ لَمۡ يَلۡبَثُوٓاْ إِلَّا سَاعَةٗ مِّن نَّهَارِۭۚ بَلَٰغٞۚ فَهَلۡ يُهۡلَكُ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ
৩৫. হে রাসূল! আপনি নিজ জাতি কর্তৃক আপনাকে অবিশ্বাস করার উপর ধৈর্য ধারণ করুন। যেমনটি দৃঢ়প্রত্যয়ী রাসূলগণ করেছিলেন। তথা নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা (আলাইহিমুস-সালাম)। তাদের শাস্তির জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। কেননা, তাদের শাস্তির মেয়াদ এতো দীর্ঘ হবে যে, আপনার জাতির মিথ্যারোপকারীরা মনে করবে, দুনিয়াতে তারা কেবল এক মুহূর্ত অবস্থান করেছিলো। বস্তুতঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ এই কুরআন মানব ও দানবের জন্য বার্তা ও যথেষ্ট বাণী। বস্তুতঃ শাস্তি দিয়ে যাদেরকে ধ্বংস করা হবে তারা নিশ্চিতভাবে কুফরী ও পাপাচারের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বহির্গমনকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• من حسن الأدب الاستماع إلى المتكلم والإنصات له.
ক. আলোচকের কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ও নিরবতা অবলম্বন আদব ও শিষ্টাচারের সুন্দর বহিঃপ্রকাশ।

• سرعة استجابة المهتدين من الجنّ إلى الحق رسالة ترغيب إلى الإنس.
খ. দানবদের মধ্যকার হেদায়েত গ্রহণকারীদের তড়িৎ সাড়া দেয়ার মধ্যে মানবদের জন্য উৎসাহের বার্তা বিদ্যমান।

• الاستجابة إلى الحق تقتضي المسارعة في الدعوة إليه.
গ. সত্যকে গ্রহণ করা এর প্রতি দ্রæত দাওয়াত প্রদানের দাবি রাখে।

• الصبر خلق الأنبياء عليهم السلام.
ঘ. ধৈর্য ধারণ বস্তুতঃ নবীগণের স্বভাব।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-আহকাফ
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ