কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা ক্বাফ   আয়াত:

সূরা ক্বাফ

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
وعظ القلوب بالموت والبعث.
পুনরুত্থানের হাকীকত ও প্রতিদান এবং এর প্রমাণাদি ও দৃশ্যাবলী আয়ত্ত করার জন্য উদাসীন অন্তরগুলোকে জাগরিত করা।

قٓۚ وَٱلۡقُرۡءَانِ ٱلۡمَجِيدِ
১. ক্বাফ, এসব যুক্তাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা সূরা বাক্বারার শুরুতেই করা হয়েছে। আল্লাহ এ জন্য কুরআনের শপথ করেছেন। যেহেতু তাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ ও অধিক কল্যাণ এবং বরকত। অবশ্যই তোমাদেরকে কিয়ামত দিবসে হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে পুনর্বার উঠানো হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ عَجِبُوٓاْ أَن جَآءَهُم مُّنذِرٞ مِّنۡهُمۡ فَقَالَ ٱلۡكَٰفِرُونَ هَٰذَا شَيۡءٌ عَجِيبٌ
২. তাদের দ্বারা আপনাকে পরিত্যাগের কারণ এটি ছিলো না যে, তারা আপনাকে মিথ্যুক ধারণা করে। বরং তারা আপনার সত্যতার কথা জানে। তবে তারা এ কথার উপর আশ্চর্য বোধ করেছে যে, ফিরিশতাদের মধ্য থেকে রাসূল না এসে তাদের মধ্য থেকে রাসূল কীভাবে আসলেন?! তাই তারা আশ্চর্য বোধ করে বলেছে: মানুষের মধ্য থেকে আমাদের প্রতি রাসূল আগমন একটি উদ্ভট ব্যাপার।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَءِذَا مِتۡنَا وَكُنَّا تُرَابٗاۖ ذَٰلِكَ رَجۡعُۢ بَعِيدٞ
৩. আমরা মরে যাওয়া ও মাটি হয়ে যাওয়ার পর আবারো কি আমাদেরকে উঠানো হবে?! এই পুনরুত্থান ও আমাদের শরীর নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর জীবন ফেরত আসা একটি অসম্ভব ব্যাপার; যা আদৗ সংঘটিত হওয়ার নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَدۡ عَلِمۡنَا مَا تَنقُصُ ٱلۡأَرۡضُ مِنۡهُمۡۖ وَعِندَنَا كِتَٰبٌ حَفِيظُۢ
৪. আমি অবশ্যই তাদের মরে যাওয়ার পর মাটি তাদের শরীরের কী ভক্ষণ করে ও কীভাবে নিঃশেষ করে তা জানি। আমার নিকট এর কোন কিছুই গোপন থাকে না। এমন কি আমার নিকট এমন এক দফতর রয়েছে যাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাদের জীবনে ও মরণোত্তর যা কিছু হবে সবই সংরক্ষিত আছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ كَذَّبُواْ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ فَهُمۡ فِيٓ أَمۡرٖ مَّرِيجٍ
৫. বরং এ সব মুশরিক তাদের নিকট রাসূল কুরআন নিয়ে আগমন করলে তারা তা অস্বীকার করে। ফলে তারা এক অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কোন ব্যাপারে তাদের স্থায়িত্ব নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَلَمۡ يَنظُرُوٓاْ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَوۡقَهُمۡ كَيۡفَ بَنَيۡنَٰهَا وَزَيَّنَّٰهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٖ
৬. পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা কি তাদের উপর বিদ্যমান আসমান নিয়ে চিন্তা করে না যে, আমি কীভাবে তা সৃষ্টি করেছি, প্রস্তুত করেছি এবং সেটিকে তারকারাজি দ্বারা সুন্দর করে সাজিয়েছি। যাকে দোষযুক্ত করার কোন খুঁত নেই?! অতএব, যিনি এই আসমান সৃষ্টি করেছেন তিনি মৃতদেরকে জীবিত করে পুনরুত্থানে অবশ্যই সক্ষম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡأَرۡضَ مَدَدۡنَٰهَا وَأَلۡقَيۡنَا فِيهَا رَوَٰسِيَ وَأَنۢبَتۡنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوۡجِۭ بَهِيجٖ
৭. আমি যমীনকে তাতে বসবাস করার মতো করে বিছিয়েছি এবং তাতে সুদৃঢ় পাহাড় স্থাপন করেছি। যাতে তা নড়াচড়া না করে। আর আমি তাতে সর্বপ্রকার উদ্ভিদ ও সুদর্শন বৃক্ষরাজি উদগত করেছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
تَبۡصِرَةٗ وَذِكۡرَىٰ لِكُلِّ عَبۡدٖ مُّنِيبٖ
৮. আমি এ সব এ জন্য সৃষ্টি করেছি যাতে তা আপন প্রতিপালকের প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য চিন্তার খোরাক ও উপদেশ হিসাবে পরিগণিত হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَنَزَّلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ مُّبَٰرَكٗا فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ جَنَّٰتٖ وَحَبَّ ٱلۡحَصِيدِ
৯. আর অমি আসমান থেকে বহু উপকারী ও কল্যাণপূর্ণ বারি বর্ষিয়েছি এবং তদ্বারা বহু বাগান ও তোমাদের উৎপাদিত যবসহ অন্যান্য শস্যাদির ব্যবস্থা করেছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلنَّخۡلَ بَاسِقَٰتٖ لَّهَا طَلۡعٞ نَّضِيدٞ
১০. অমি উঁচু উঁচু সুদীর্ঘ খেজুর বৃক্ষ উৎপন্ন করেছি। যার শেকড় একটির উপর অপরটি ঘনীভূত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
رِّزۡقٗا لِّلۡعِبَادِۖ وَأَحۡيَيۡنَا بِهِۦ بَلۡدَةٗ مَّيۡتٗاۚ كَذَٰلِكَ ٱلۡخُرُوجُ
১১. আমি যা কিছু উৎপন্ন করেছি তা বান্দাদের জীবিকার উদ্দেশ্যেই করেছি। যা তারা ভক্ষণ করবে এবং আমি তদ্বারা এমন নগর জীবিত করেছি যথায় কোন উদ্ভিদ নেই। বস্তুতঃ আমি যেভাবে উদ্ভিদবিহীন এই নগরকে জীবিত করেছি এভাবেই তোমাদের পুনরুত্থান করবো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَذَّبَتۡ قَبۡلَهُمۡ قَوۡمُ نُوحٖ وَأَصۡحَٰبُ ٱلرَّسِّ وَثَمُودُ
১২. হে রাসূল! আপনার পূর্বের জাতিরা তাদের নবীদেরকে মিথ্যারোপ করেছে। নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় ও কুয়াবাসীরা মিথ্যারোপ করছে। তেমনিভাবে মিথ্যারোপ করেছে সামূদ সম্প্রদায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَعَادٞ وَفِرۡعَوۡنُ وَإِخۡوَٰنُ لُوطٖ
১৩. অনুরূপভাবে আদ, ফিরআউন ও লুত জাতি মিথ্যারোপ করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡأَيۡكَةِ وَقَوۡمُ تُبَّعٖۚ كُلّٞ كَذَّبَ ٱلرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ
১৪. তেমনিভাবে শু‘আইব (আলাইহিস-সালাম) এর জাতি আইকাবাসী ও ইয়েমেনের বাদশাহ তুব্বা’র জাতিও মিথ্যারোপ করে। ফলে তাদের উপর অঙ্গীকারকৃত শাস্তি অবধারিত হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَعَيِينَا بِٱلۡخَلۡقِ ٱلۡأَوَّلِۚ بَلۡ هُمۡ فِي لَبۡسٖ مِّنۡ خَلۡقٖ جَدِيدٖ
১৫. আমি কি প্রথমবারের সৃষ্টিতে অপারগ হয়েছি, তাই পুনরুত্থানে অপারগ হবো?! বরং তারা নিজেদের প্রথম সৃষ্টির পর নতুন সৃষ্টির ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• المشركون يستعظمون النبوة على البشر، ويمنحون صفة الألوهية للحجر!
ক. মুশরিকরা মানুষের জন্য নবুওয়াতের বৈশিষ্ট্য অকল্পনীয় মনে করলেও পাথরের জন্য আল্লাহর উলূহিয়্যাতের বৈশিষ্ট্য স্বীকার করতে দ্বিধা করে নি!

• خلق السماوات، وخلق الأرض، وإنزال المطر، وإنبات الأرض القاحلة، والخلق الأول: كلها أدلة على البعث.
খ. আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি, বারি বর্ষানো, শুষ্ক ভূমি থেকে উদ্ভিদ উৎপাদন এবং প্রথমবারের সৃষ্টি এ সব পুনরুত্থানের প্রমাণ।

• التكذيب بالرسل عادة الأمم السابقة، وعقاب المكذبين سُنَّة إلهية.
গ. রাসূলগণকে অবিশ্বাস করা পূর্বসূরীদের অভ্যাস। আর মিথ্যারোপকারীদেরকে শাস্তি প্রদান করা আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম।

وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهِۦ نَفۡسُهُۥۖ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ
১৬. আমি অবশ্যই মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মনে যে সব মনোভাব ও চিন্তার উদয় হয় তা আমি জানি। আমি তার অন্তরের সাথে যুক্ত ঘাড়ে অবস্থিত শিরা অপেক্ষা আরো নিকটবর্তী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِذۡ يَتَلَقَّى ٱلۡمُتَلَقِّيَانِ عَنِ ٱلۡيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ قَعِيدٞ
১৭. যখন তার আমল সংরক্ষণকারী উভয় ফিরিশতা মিলিত হবে। তাদের একজন তার ডান পার্শ্বে বসবে ও অপরজন বসবে তার বাম পার্শ্বে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ
১৮. সে যে কথাই বলুক না কেন তার জন্য তার পার্শ্বে একজন পর্যবেক্ষক পিরিশতা উপস্থিত থাকে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَآءَتۡ سَكۡرَةُ ٱلۡمَوۡتِ بِٱلۡحَقِّۖ ذَٰلِكَ مَا كُنتَ مِنۡهُ تَحِيدُ
১৯. যথার্থই মৃত্যুর যাতনা উপস্থিত হলো। এটিই সেই বস্তু যা থেকে হে উদাসীন মানুষ! তুমি পিছিয়ে ও পলায়নরত ছিলে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِۚ ذَٰلِكَ يَوۡمُ ٱلۡوَعِيدِ
২০. ফুৎকারের জন্য নিয়োজিত ফিরিশতা শিঙ্গায় দ্বিতীয়বার ফুৎকার দিবে। এটিই কিয়ামত দিবস তথা কাফির ও পাপীদের জন্য শাস্তির দিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَآءَتۡ كُلُّ نَفۡسٖ مَّعَهَا سَآئِقٞ وَشَهِيدٞ
২১. প্রত্যেক সত্তা তাকে চালনাকারী একজন ফিরিশতাসহ উপস্থিত হবে। আর অপর ফিরিশতা তার আমলের সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّقَدۡ كُنتَ فِي غَفۡلَةٖ مِّنۡ هَٰذَا فَكَشَفۡنَا عَنكَ غِطَآءَكَ فَبَصَرُكَ ٱلۡيَوۡمَ حَدِيدٞ
২২. সেই চালিত ব্যক্তিকে বলা হবে: তুমি নিজ বিভ্রান্তি, মনোবৃত্তি ও ভোগ-বিলাসে লিপ্ত থাকার ফলে এই দিবস থেকে উদাসীন ছিলে। তাই আমি তোমার উদাসীনতা দূরিভ‚ত করলাম। যাতে তুমি শাস্তি ও আপদ পর্যবেক্ষণ করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقَالَ قَرِينُهُۥ هَٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيدٌ
২৩. তার সাথে নিয়োজিত ফিরিশতা বলবে: এই যে আমার নিকট তার কৃতকর্ম কোনরূপ বেশ-কম ব্যতিরেকে বিদ্যমান রয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلۡقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٖ
২৪. আল্লাহ চালনাকারী ও সাক্ষ্যদাতা উভয় ফিরিশতাকে বলবেন: তোমরা প্রত্যেক সত্য অমান্যকারী গোঁড়াদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَّنَّاعٖ لِّلۡخَيۡرِ مُعۡتَدٖ مُّرِيبٍ
২৫. আল্লাহ যে সব অধিকার অবধারিত করেন তা বেশী বেশী প্রত্যাখ্যানকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারী এবং তিনি যে সব পুরস্কার ও শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন তা অস্বীকারকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِي جَعَلَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ فَأَلۡقِيَاهُ فِي ٱلۡعَذَابِ ٱلشَّدِيدِ
২৬. যে আল্লাহর সাথে অন্য মাবূদকে শরীক করে নিয়েছে। তাঁর সাথে ওকে ইবাদাতে শরীক করে থাকে। তাই তোমরা তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ قَالَ قَرِينُهُۥ رَبَّنَا مَآ أَطۡغَيۡتُهُۥ وَلَٰكِن كَانَ فِي ضَلَٰلِۭ بَعِيدٖ
২৭. তার সাথে নিজ শয়তান সঙ্গী সম্পর্কচ্ছেদ করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে ভ্রষ্ট করি নি। বরং সে সত্য থেকে বহু দূরে অবস্থানকারী ছিলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ لَا تَخۡتَصِمُواْ لَدَيَّ وَقَدۡ قَدَّمۡتُ إِلَيۡكُم بِٱلۡوَعِيدِ
২৮. আল্লাহ বলবেন: তোমরা আমার নিকট ঝগড়া করো না। কেননা, তাতে কোন লাভ নেই। আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে ইতিপূর্বেই দুনিয়াতে আমার রাসূলদের মাধ্যমে আমাকে অমান্যকরী ও আমার অবাধ্যদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা জানিয়ে দিয়েছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ
২৯. আমার কথা ও অঙ্গীকার কখনো পরিবর্তন হয় না। আর না আমি বান্দাদের পুণ্য কমিয়ে কিংবা পাপ বাড়িয়ে তাদের উপর অবিচার করি। বরং আমি যার যার আমল অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ ٱمۡتَلَأۡتِ وَتَقُولُ هَلۡ مِن مَّزِيدٖ
৩০. সে দিন আমি জাহান্নামকে বলব: তুমি কি তোমার মধ্যে নিক্ষেপিত কাফির ও পাপীদেরকে দিয়ে পরিপূর্ণ হয়েছো? তখন সে অধিক কামনা করতঃ ও স্বীয় রবের রাগের ফলে তার রবকে এই বলে উত্তর দিবে: আরো কি আছে?
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ غَيۡرَ بَعِيدٍ
৩১. আর স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহভীরুদের উদ্দেশ্যে জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে। তাই তারা নিকটে থেকে তথায় বিদ্যমান উপভোগ্য নিয়ামত প্রত্যক্ষ্য করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٖ
৩২. আর তাদেরকে বলা হবে: এটি আল্লাহ কর্তৃক তার প্রতি কৃত অঙ্গীকার যে তাওবার মাধ্যমে নিজ প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসে এবং তার উপর বাধ্যতামূলক বিধানের হিফাযত করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَّنۡ خَشِيَ ٱلرَّحۡمَٰنَ بِٱلۡغَيۡبِ وَجَآءَ بِقَلۡبٖ مُّنِيبٍ
৩৩. যে ব্যক্তি আল্লাহকে এমন গোপনে ভয় করে যেখানে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাকে দেখার নেই এবং আল্লাহর সাথে নিরাপদ ও তাঁর প্রতি ধাবমান অন্তর নিয়ে সাক্ষাৎ করে। উপরন্তু তাঁর প্রতি বেশী বেশী প্রত্যাবর্তনকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٖۖ ذَٰلِكَ يَوۡمُ ٱلۡخُلُودِ
৩৪. আর তাদরেকে বলা হবে, তোমরা নিজেদের অপছন্দের বিষয় থেকে মুক্ত অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করো। এটি সেই চিরস্থায়ী দিন যার কোন লয়-ক্ষয় নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ
৩৫. তথায় তাদের জন্য রয়েছে নিজেদের চাহিদানুযায়ী অবারিত নিয়ামত। আর আমার নিকট রয়েছে এমন সব অতিরিক্ত নিয়ামত যা কোন চক্ষু দেখে নি। আর না কোন কান শ্রবণ করেছে। আর না কোন মানুষের অন্তর তা হৃদয়ঙ্গম করেছে। তন্মধ্যে মহান আল্লাহর দর্শন অন্যতম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• علم الله بما يخطر في النفوس من خير وشر.
ক. অন্তরে ভালো-মন্দ যা কিছুর উদয় হয় সে ব্যাপারে আল্লাহ পরিজ্ঞাত।

• خطورة الغفلة عن الدار الآخرة.
খ. পরকাল সম্পর্কে উদাসীন থাকার ভয়বহতা।

• ثبوت صفة العدل لله تعالى.
গ. আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইনসাফের বৈশিষ্ট্য সুসাব্যস্ত।

وَكَمۡ أَهۡلَكۡنَا قَبۡلَهُم مِّن قَرۡنٍ هُمۡ أَشَدُّ مِنۡهُم بَطۡشٗا فَنَقَّبُواْ فِي ٱلۡبِلَٰدِ هَلۡ مِن مَّحِيصٍ
৩৬. আমি এ সব মিথ্যারোপাকারী মক্কাবাসী মুশরিকের পূর্বে কতো জাতিকে ধ্বংস করেছি। তাই তারা পৃথিবীতে খুঁজে দেখলো। হয়তো বা তারা শাস্তি থেকে পালানোর কোন জায়গা খুঁজে পাবে। কিন্তু তারা তা পায় নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكۡرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُۥ قَلۡبٌ أَوۡ أَلۡقَى ٱلسَّمۡعَ وَهُوَ شَهِيدٞ
৩৭. পূর্বেকার জাতিদের ধ্বংসলীলার উপরোক্ত এ সব বর্ণনায় চিন্তাশীল অন্তর সম্পন্ন ব্যক্তি কিংবা সচেতন ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণকারীদের জন্য রয়েছে উপদেশ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٖ
৩৮. আমি নিজ প্রচুর ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি। তাতে ইহুদীরা যেমন বলছে তেমন কোন কষ্টই আমার হয় নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوعِ ٱلشَّمۡسِ وَقَبۡلَ ٱلۡغُرُوبِ
৩৯. অতএব হে রাসূল! আপনি ইহুদী কিংবা অন্যদের কথার উপর ধৈর্য ধারণ করুন। আর নিজ রবের প্রশংসা করতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তাঁর উদ্দেশ্যে ফজরের নামায পড়ুন এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বে আসরের নামায পড়ুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَسَبِّحۡهُ وَأَدۡبَٰرَ ٱلسُّجُودِ
৪০. রাত্রেও তাঁর উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং ফরয নামাযের পর তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱسۡتَمِعۡ يَوۡمَ يُنَادِ ٱلۡمُنَادِ مِن مَّكَانٖ قَرِيبٖ
৪১. হে রাসূল! আপনি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন সে দিনের কথা যে দিন দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকারের জন্য নিয়োজিত ফিরিশতা নিকটতম স্থান থেকে আহŸান করবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ يَسۡمَعُونَ ٱلصَّيۡحَةَ بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكَ يَوۡمُ ٱلۡخُرُوجِ
৪২. সে দিন সকল সৃষ্টি সত্যিই পুনরুত্থানের এমন গর্জন শুনতে পাবে যাতে কোনরূপ সন্দেহ নেই। যে দিন তারা এটি শুনবে সেটি মূলতঃ হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে মৃতদের বেরিয়ে আসার দিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّا نَحۡنُ نُحۡيِۦ وَنُمِيتُ وَإِلَيۡنَا ٱلۡمَصِيرُ
৪৩. আমিই জীবন ও মৃত্যু প্রদান করি। আমি ব্যতীত অন্য কোন জীবনদাতা নেই। আর না কোন মরণদাতা আছে। এককভাবে আমার দিকেই কিয়ামত দিবসে হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে বান্দাদের প্রত্যাবর্তন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ تَشَقَّقُ ٱلۡأَرۡضُ عَنۡهُمۡ سِرَاعٗاۚ ذَٰلِكَ حَشۡرٌ عَلَيۡنَا يَسِيرٞ
৪৪. সে দিন তাদের যমীন ফেটে চৌচির হবে। ফলে তারা দ্রæত তা থেকে বেরিয়ে পড়বে। এই হাশর সংঘটিত করা আমার জন্য অতি সহজ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
نَّحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَا يَقُولُونَۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيۡهِم بِجَبَّارٖۖ فَذَكِّرۡ بِٱلۡقُرۡءَانِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ
৪৫. আমি এ সব মিথ্যারোপকারীর কথা অধিক জানি। আর হে রাসূল! আপনি তাদের উপর দারোগা নন। যার ভিত্তিতে আপনি তাদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবেন। বরং আপনি তো কেবল আল্লাহ যে বিষয় প্রচার করতে নির্দেশ প্রদান করেন তা পৌঁছোনোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। অতএব, আপনি কুরআনের মাধ্যমে কাফির ও পাপীদের মধ্যে তাকে ভীতি প্রদর্শন করুন যে আমার শাস্তিকে ভয় পায়। কেননা, কেবল ভীতজনই উপদেশ গ্রহণের জন্য বললে সে তা গ্রহণ করে এবং স্মরণ করিয়ে দিলে সে তা স্মরণ করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الاعتبار بوقائع التاريخ من شأن ذوي القلوب الواعية.
ক. ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ সচেতন মানুষের কাজ।

• خلق الله الكون في ستة أيام لِحِكَم يعلمها الله، لعل منها بيان سُنَّة التدرج.
খ. আল্লাহ কর্তৃক আসমান ও যমীনকে সাত দিনে সৃষ্টি করার পেছনে কোন না কোন হিকমত রয়েছে যা তিনি জানেন। তন্মধ্যে হতে পারে ক্রমান্বয় অন্যতম।

• سوء أدب اليهود في وصفهم الله تعالى بالتعب بعد خلقه السماوات والأرض، وهذا كفر بالله.
গ. আল্লাহর সাথে ইহুদীদের এই বলে ধৃষ্টতা প্রদর্শন যে তিনি না কি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তা আল্লাহর সাথে তাদের কুফরী আচরণ।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা ক্বাফ
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ