কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আন-নাজম   আয়াত:

সূরা আন-নাজম

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
إثبات صدق الوحي وأنه من عند الله.
তাওহীদী আকীদা সাব্যস্ত করা এবং শিরকী আকীদা বাতিল করতে ওহীর সত্যতা ও এর সুউচ্চ মর্যাদা বর্ণনা করা।

وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ
১. মহান আল্লাহ তারকা যখন পতিত হয় তখনকার শপথ করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ
২. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হেদায়েতের পথ থেকে বিচ্যুত হন নি। আর না তিনি পথভ্রষ্ট হয়েছেন। বরং তিনি সুপথগামী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ
৩. তিনি এই কুরআন দিয়ে তাঁর মনোবৃত্তির তাড়না অনুযায়ী কথা বলেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ
৪. এই কুরআন ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয়। যা জিবরীল (আলাইহিস-সালাম) মারফত আল্লাহ তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَلَّمَهُۥ شَدِيدُ ٱلۡقُوَىٰ
৫. তাঁকে এটি এমন এক ফিরিশতা শিক্ষা দিয়েছেন যিনি মহা শক্তিধর। তিনি হলেন জিবরীল (আলাইহস সালাম)।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ذُو مِرَّةٖ فَٱسۡتَوَىٰ
৬. জিবরীল (আলাইহিস সালাম) হলেন সুন্দর রূপধারী। তিনি রাসূলের সামনে আল্লাহ তাঁকে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন সেই আকৃতিতে প্রকাশ পেলেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَهُوَ بِٱلۡأُفُقِ ٱلۡأَعۡلَىٰ
৭. তখন তিনি আকাশের দিগন্তে অবস্থানরত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ
৮. অতঃপর জিবরীল (আলাইহিস-সালাম) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটবর্তী হলেন। এরপর আরো নিকবর্তী বাড়লেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَكَانَ قَابَ قَوۡسَيۡنِ أَوۡ أَدۡنَىٰ
৯. তাঁর দূরত্ব ছিল দুই ধনুক সমপরিমাণ কিংবা আরো কম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَوۡحَىٰٓ إِلَىٰ عَبۡدِهِۦ مَآ أَوۡحَىٰ
১০. তখন জিবরীল (আলাইহিস-সালাম) আল্লাহর বান্দা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا كَذَبَ ٱلۡفُؤَادُ مَا رَأَىٰٓ
১১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অন্তর তাঁর চক্ষু যা প্রদর্শন করেছে সেটিকে মিথ্যারোপ করে নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَتُمَٰرُونَهُۥ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ
১২. হে মুশরিকরা! তোমরা কি তাঁকে তাঁর প্রতিপালক ভ্রমণের রাতে যা দেখিয়েছেন সে ব্যাপারে তাঁর সাথে ঝগড়া করছো?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ
১৩. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনর্বার তাঁকে ভ্রমণের রাতে নিজ আকৃতিতে দেখেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عِندَ سِدۡرَةِ ٱلۡمُنتَهَىٰ
১৪. সিদরাতুল মুন্তাহার নিকট। সেটি হলো সপ্তাকাশের উপর একটি মহা প্রকাÐ বৃক্ষ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ
১৫. উক্ত বৃক্ষের নিকট রয়েছে জান্নাতুল মা’ওয়া।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِذۡ يَغۡشَى ٱلسِّدۡرَةَ مَا يَغۡشَىٰ
১৬. যখন আল্লাহর কোন মহান বিষয় সেটিকে আচ্ছাদিত করে। যার মূল রহস্য আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا زَاغَ ٱلۡبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ
১৭. তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টি ডান-বাঁ হেলে নি। আর না তাঁর জন্য নির্ধারিত সীমা তিনি অতিক্রম করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَقَدۡ رَأَىٰ مِنۡ ءَايَٰتِ رَبِّهِ ٱلۡكُبۡرَىٰٓ
১৮. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মেরাজের রাতে স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমতার প্রমাণবাহী বহু মহা নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জান্নাত দেখেছেন। জাহান্নাম দেখেছেন। এতদুভয়ের বাইরে আরো অনেক কিছু দেখেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ
১৯. হে মুশরিকরা! তোমরা কি দেখেছো সে সব দেবতাকে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যেগুলোর ইবাদাত করছো। তারা হলো “লাত” ও “উযযা”।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ
২০. আর তোমাদের তৃতীয় আরেকটি দেবতা “মানাত”। বলো সেকি তোমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করতে পারে?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَكُمُ ٱلذَّكَرُ وَلَهُ ٱلۡأُنثَىٰ
২১. হে মুশরিকরা! তোমাদের জন্য কি তোমাদের পছন্দের ছেলে। আর আল্লাহর জন্য কি তোমাদের অপছন্দের মেয়ে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
تِلۡكَ إِذٗا قِسۡمَةٞ ضِيزَىٰٓ
২২. তোমাদের প্রবৃত্তি কেন্দ্রিক এই ভাগাভাগি কিন্তু জুলুমের উপর ভিত্তিশীল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هِيَ إِلَّآ أَسۡمَآءٞ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَمَا تَهۡوَى ٱلۡأَنفُسُۖ وَلَقَدۡ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلۡهُدَىٰٓ
২৩. এ সব দেবতা তো কেবল অর্থহীন কিছু নাম মাত্র। এগুলোর মধ্যে উলূহিয়্যাতের গুনাবলীর কোন কিছুই নেই। যে সব নামকরণ তোমরা ও তোমাদের বাপ দাদারা মিলে নিজেরাই করেছো। যেগুলোর উপর আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি। বস্তুতঃ মুশরিকরা তাদের আকীদায় কেবল ধারণারই অনুসরণ করে। আর অনুসরণ করে শয়তান কর্তৃক তাদের মনে আকর্ষণ সৃষ্টিকারী কুপ্রবৃত্তির। অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যবান মারফত হেদায়েত আগমন করেছে। কিন্তু তারা তদ্বারা হেদায়েত গ্রহণ করে নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لِلۡإِنسَٰنِ مَا تَمَنَّىٰ
২৪. না কি মানুষ আল্লাহর নিকট দেবতাদের যে সুপারিশ চায় তা পায়?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ
২৫. না, বস্তুতঃ মানুষ যা কামনা করে তা পায় না। আল্লাহর জন্য এককভাবে প্রথম এবং শেষ তথা দুনিয়া ও আখিরাত। তিনি তা থেকে যা ইচ্ছা দান করেন। আর যা ইচ্ছা বারণ করেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡـًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ
২৬. আসমানে কতেক ফিরিশতা রয়েছেন যাঁরা সুপারিশ করতে চাইলে আল্লাহ কর্তৃক সে জন্য অনুমতি ও সুপারিশকৃতের ব্যাপারে সন্তুষ্টি ব্যতীত তাঁদের সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ কস্মিনকালেও সুপারিশের উদ্দেশ্যে তাঁর সাথে যে ব্যক্তি কাউকে শরীক করেছে তার উপর সন্তুষ্ট হবেন না। আর না তিনি তার সুপারিশের পাত্র যে তাকে আল্লাহর পরিবর্তে মাবূদ বানিয়েছে তার উপর সন্তুষ্ট হবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• كمال أدب النبي صلى الله عليه وسلم حيث لم يَزغْ بصره وهو في السماء السابعة.
ক. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পূর্ণ আদবের প্রমাণ। যে তিনি সপ্তাকাশের উপরও চক্ষু এ দিক সে দিক করেন নি।

• سفاهة عقل المشركين حيث عبدوا شيئًا لا يضر ولا ينفع، ونسبوا لله ما يكرهون واصطفوا لهم ما يحبون.
খ. মুশরিকদের বিবেকের ধিক যে, তারা এমন বস্তুর ইবাদাত করে যা না কোন উপকার করতে সক্ষম। আর না কোন অপকার। তারা আল্লাহর প্রতি এমন কিছুর সম্বন্ধ করে যেগুলোকে নিজেদের জন্য অপছন্দ করে। পক্ষান্তরে তারা নিজেদের জন্য এমন কিছু চয়ন করে যেগুলোকে তারা পছন্দ করে।

• الشفاعة لا تقع إلا بشرطين: الإذن للشافع، والرضا عن المشفوع له.
গ. সুপারিশ মূলতঃ দু’টি শর্ত ব্যতীত সংঘটিত হয় না ১. সুপারিশকারীর জন্য অনুমতি ২. যার জন্য সুপারিশ করা হবে তার উপর সন্তুষ্টি।

إِنَّ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأٓخِرَةِ لَيُسَمُّونَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ تَسۡمِيَةَ ٱلۡأُنثَىٰ
২৭. অবশ্যই যারা পরকালের পুনরুত্থানে বিশ্বাসী না তারা ফিরিশতাদেরকে মহিলাদের নামে নামকরণ করে এই বিশ্বাসে যে, তারা মূলতঃ মহিলা। আল্লাহ তাদের এই কট‚ক্তি থেকে বহু উর্দ্ধে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّۖ وَإِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغۡنِي مِنَ ٱلۡحَقِّ شَيۡـٔٗا
২৮. বস্তুতঃ তাদের এই মহিলা প্রকৃতির নামকরণে এমন কোন জ্ঞান নেই যার উপর তারা ভিত্তি করে। তারা এতে কেবল ধারণারই অনুসরণ করে। যা হক হওয়া তো দূরের কথা। বরং তা হকের ব্যাপারে কোন কাজেই আসবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَعۡرِضۡ عَن مَّن تَوَلَّىٰ عَن ذِكۡرِنَا وَلَمۡ يُرِدۡ إِلَّا ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا
২৯. হে রাসূল! আপনি ওর প্রতি বিমুখ থাকুন যে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে থাকে এবং এর কোন কদর করে না। সে কেবল ইহকালই কামনা করে থাকে। ফলে সে পরকালের জন্য কোন কাজই করে না। কেননা, সে পরকালকে বিশ্বাস করে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ذَٰلِكَ مَبۡلَغُهُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱهۡتَدَىٰ
৩০. মুশরিকরা যে আল্লাহর ফিরিশতাদের ব্যাপারে এ সব নেতিবাচক কথা বলে তা কিন্তু তাদের বিদ্যার শেষ সীমা বৈ আর কিছুই নয়। কেননা, তারা মূর্খ। ফলে তারা চ‚ড়ান্ত জ্ঞান পর্যন্ত পৌঁছুতে অক্ষম। হে রাসূল! যে ব্যক্তি আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত তার ব্যাপারে আপনার প্রতিপালক সম্যক অবগত। তিনি ওর ব্যাপারেও অধিক অবগত যে তাঁর পথ অবলম্বন করেছে। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَسَٰٓـُٔواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ بِٱلۡحُسۡنَى
৩১. আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিকানা, সৃষ্টি ও পরিচালনা এককভাবে আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনিই তাদের মধ্যকার যারা মন্দ আমল করেছে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি এবং যারা নেক আমল করেছে তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِينَ يَجۡتَنِبُونَ كَبَٰٓئِرَ ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡفَوَٰحِشَ إِلَّا ٱللَّمَمَۚ إِنَّ رَبَّكَ وَٰسِعُ ٱلۡمَغۡفِرَةِۚ هُوَ أَعۡلَمُ بِكُمۡ إِذۡ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَإِذۡ أَنتُمۡ أَجِنَّةٞ فِي بُطُونِ أُمَّهَٰتِكُمۡۖ فَلَا تُزَكُّوٓاْ أَنفُسَكُمۡۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ
৩২. যারা ছোট-খাটো অপরাধ ছাড়া গুরুতর ও অশ্লীল পাপগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে এবং বেশী বেশী নফল আমল করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমার অধিকারী। বান্দারা তাওবা করলেই তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। তিনি তাদের অবস্থা ও বিষয়াদি সম্পর্কে তখন থেকেই জানেন যখন তাদের পিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। আর তখন থেকে যখন তোমরা নিজেদের মাতাদের পেটে বোঝা হিসাবে দফায় দফায় রূপান্তরিত হচ্ছিলে। তাঁর নিকট এ সবের কোন কিছুই গোপন নয়। তাই তোমরা নিজেরা নিজেদের সাফাই গেয়ে মুত্তাকী হওয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ো না। কেননা, তিনিই ভালো জানেন, কে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে থাকে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي تَوَلَّىٰ
৩৩. আপনি কি ওই ব্যক্তির নোংরামির অবস্থা দেখেছেন যে ইসলামের নিকটবর্তী হয়েও তা থেকে বিমুখ হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَعۡطَىٰ قَلِيلٗا وَأَكۡدَىٰٓ
৩৪. আর যৎসামান্য অর্থ দান করে আবার ক্ষান্ত হয়ে গেছে। কেননা, কার্পণ্যই হলো তার মজ্জাগত অভ্যাস। এতদসত্তে¡ও সে তার নিজের সাফাই গেয়ে বেড়ায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَعِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلۡغَيۡبِ فَهُوَ يَرَىٰٓ
৩৫. না কি তার নিকট গাইবের জ্ঞান রয়েছে। ফলে সে দেখে এবং গাইবের সংবাদ দেয়?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لَمۡ يُنَبَّأۡ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَىٰ
৩৬. না কি সে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী?! না কি আল্লাহর উপর এই মিথ্যারোপকারী ব্যক্তিকে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর উপর অবতীর্ণ পূর্বের কিতাবে বিদ্যমান বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِبۡرَٰهِيمَ ٱلَّذِي وَفَّىٰٓ
৩৭. আর ইবরাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর পুস্তিকাদিতে যা রয়েছে তা সম্পর্কেও। যিনি তাঁর উপর স্বীয় রবের পক্ষ থেকে আপতিত সকল দায়-দায়িত্ব পূর্ণমাত্রায় সম্পন্ন করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ
৩৮. আর তা হলো, কোন মানুষ অন্যের পাপ বহন করবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَن لَّيۡسَ لِلۡإِنسَٰنِ إِلَّا مَا سَعَىٰ
৩৯. আর মানুষের জন্যে তার নিজ আমলের প্রতিদান ছাড়া অন্য কিছু নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّ سَعۡيَهُۥ سَوۡفَ يُرَىٰ
৪০. আর সে অচিরেই কিয়ামত দিবসে তার আমল প্রত্যক্ষ করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ يُجۡزَىٰهُ ٱلۡجَزَآءَ ٱلۡأَوۡفَىٰ
৪১. অতঃপর তার আমলের প্রতিদান পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ ٱلۡمُنتَهَىٰ
৪২. হে রাসূল! আপনার রবের নিকটই বান্দাদের প্রত্যাবর্তন এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের ঠিকানা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّهُۥ هُوَ أَضۡحَكَ وَأَبۡكَىٰ
৪৩. আর তিনি যাকে ইচ্ছা আনন্দ দেন ফলে তাকে হাসান এবং যাকে ইচ্ছা চিন্তাগ্রস্ত করেন ফলে তাকে কাঁদান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّهُۥ هُوَ أَمَاتَ وَأَحۡيَا
৪৪. আর তিনি দুনিয়াতে জীবিতদেরকে মৃত্যু দেন এবং মৃতদেরকে পুনরুত্থানের মাধ্যমে জীবিত করেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• انقسام الذنوب إلى كبائر وصغائر.
ক. পাপ ছোট ও বড় দু’ ভাগে বিভক্ত।

• خطورة التقوُّل على الله بغير علم.
খ. জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর নামে মিথ্যারোপ করার ভয়াবহতা।

• النهي عن تزكية النفس.
গ. নিজেই নিজের প্রশংসা করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা।

وَأَنَّهُۥ خَلَقَ ٱلزَّوۡجَيۡنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلۡأُنثَىٰ
৪৫. আর তিনি পুরুষ ও নারী উভয় প্রকার সৃষ্টি করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مِن نُّطۡفَةٍ إِذَا تُمۡنَىٰ
৪৬. যা গর্ভাশয়ে শুক্রাণু স্থাপন করার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّ عَلَيۡهِ ٱلنَّشۡأَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰ
৪৭. আর তাঁর উপরই এতদুভয়ের মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উদ্দেশ্যে পুনর্বার সৃষ্টির দায়িত্ব।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّهُۥ هُوَ أَغۡنَىٰ وَأَقۡنَىٰ
৪৮. আর তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে ধনী বানিয়েছেন এবং মানুষের খাদ্য নির্বাহের জন্য তিনি তাদেরকে সম্পদ প্রদান করেছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّهُۥ هُوَ رَبُّ ٱلشِّعۡرَىٰ
৪৯. আর তিনি কোন কোন মুশরিক কর্তৃক আল্লাহর সাথে পূজিত “শিরা” নামক তারকার প্রতিপালক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنَّهُۥٓ أَهۡلَكَ عَادًا ٱلۡأُولَىٰ
৫০. আর তিনি পূর্ব যুগের হূদ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় আদকে ধ্বংস করেছেন। যখন তারা নিজেদের কুফরীর উপর গোঁড়ামি প্রদর্শন করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَثَمُودَاْ فَمَآ أَبۡقَىٰ
৫১. আর তিনি সালেহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় সামূদকে ধ্বংস করেছেন। তিনি তাদের কাউকে অবশিষ্ট রাখেন নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقَوۡمَ نُوحٖ مِّن قَبۡلُۖ إِنَّهُمۡ كَانُواْ هُمۡ أَظۡلَمَ وَأَطۡغَىٰ
৫২. তিনি আদ এবং সামূদ (আলাইহিমাস-সালাম) এর পূর্বে নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন। বস্তুতঃ নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর জাতি ছিলো আদ ও সামূদ অপেক্ষা অধিক জালিম ও অবাধ্য। কেননা, নূহ (আলাইহিস-সালাম) তাদের মাঝে সাড়ে নয়শত বৎসর আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে অবস্থান করেছেন। অথচ তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয় নি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡمُؤۡتَفِكَةَ أَهۡوَىٰ
৫৩. আর লুত সম্প্রদায়ের গ্রামকে আসমানে তুলে এরপর সেটিকে উল্টিয়ে যমীনে ফেলে দেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَغَشَّىٰهَا مَا غَشَّىٰ
৫৪. অতঃপর সেটিকে ঢেকে দেয় তথা সেটিকে উপরে তুলে মাটিতে নিক্ষেপের পর পাথর এসে সেটিকে ঢেকে দেয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكَ تَتَمَارَىٰ
৫৫. অতএব, হে মানুষ! তোমার রবের ক্ষমতার উপর প্রমাণবাহী কোন কোন নিআমতের ব্যাপারে তুমি ঝগড়া করছো। আর তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করছো না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
هَٰذَا نَذِيرٞ مِّنَ ٱلنُّذُرِ ٱلۡأُولَىٰٓ
৫৬. তোমাদের নিকট প্রেরিত এই রাসূল প্রথম যুগে প্রেরিত রাসূলদেরই প্রকৃতির।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَزِفَتِ ٱلۡأٓزِفَةُ
৫৭. নিকটতম কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে এসেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَيۡسَ لَهَا مِن دُونِ ٱللَّهِ كَاشِفَةٌ
৫৮. সেটিকে প্রতিহতকারী কেউ নেই। আর না আল্লাহ ব্যতীত এ ব্যাপারে কেউ অবগত আছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَمِنۡ هَٰذَا ٱلۡحَدِيثِ تَعۡجَبُونَ
৫৯. তোমরা কি তোমাদের সামনে পঠিত কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়ার ব্যাপারে আশ্চর্য বোধ করছো?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَتَضۡحَكُونَ وَلَا تَبۡكُونَ
৬০. আর সেটিকে নিয়ে ঠাট্টার ছলে হাসাহাসি করছো এবং সেটির উপদেশসমূহ শ্রবণের সময় কাঁদছো না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَنتُمۡ سَٰمِدُونَ
৬১. আর তোমরা এর ব্যাপারে উদাসীন। এর কোন কদর করছো না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ وَٱعۡبُدُواْ۩
৬২. তাই এককভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদা করো এবং তাঁর উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• عدم التأثر بالقرآن نذير شؤم.
ক. কুরআন দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া কুলক্ষণের সতর্ক-সংকেত।

• خطر اتباع الهوى على النفس في الدنيا والآخرة.
খ. নফসের জন্য ইহ ও পরকালে প্রবৃত্তির অনুসরণের ভয়ানক পরিণতি।

• عدم الاتعاظ بهلاك الأمم صفة من صفات الكفار.
গ. জাতির ধ্বংস থেকে উপদেশ গ্রহণ না করা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আন-নাজম
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ