কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আত-তাওবা   আয়াত:

সূরা আত-তাওবা

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
البراءة من المشركين والمنافقين وجهادهم، وفتح باب التوبة للتائبين.
কাফিরদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছিন্ন করা, মুনাফিকদের গোমর ফাঁক ও মু’মিনদেরকে স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মÐিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অবস্থা জনসম্মুখে উন্মুক্ত করা।

بَرَآءَةٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ
১. হে মুসলিমরা! এটি মূলতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে দায়মুক্তি ও আরব উপদ্বীপের যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছো তার পরিসমাপ্তির ঘোষণা মাত্র।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَسِيحُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِ وَأَنَّ ٱللَّهَ مُخۡزِي ٱلۡكَٰفِرِينَ
২. হে মুশরিকরা! তোমরা চার মাস পর্যন্ত এ জমিনে নিরাপদে ঘুরতে পারো। এরপর তোমাদের সাথে কোন চুক্তি বা নিরাপত্তা বহাল থাকবে না। তোমরা এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, তোমরা কুফরির উপর অটল থাকলে নিশ্চয়ই আল্লাহর আযাব ও শাস্তি থেকে কখনো পালিয়ে যেতে পারবে না। তোমরা এ কথার প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এ দুনিয়াতে বন্দী ও হত্যা এবং কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। উক্ত ঘোষণাটি ওদেরকে শামিল করবে যারা নিজেদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং ওদেরকেও যাদের সাথে অনির্ধারিত সময়ের চুক্তি হয়েছে। তবে যাদের সাথে নির্ধারিত সময়ের চুক্তি হয়েছে যদিও তা চার মাসের বেশি হোক না কেন তার চুক্তিটি সে সময় পর্যন্ত পূর্ণ করা হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلنَّاسِ يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥۚ فَإِن تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
৩. মহান হজ্জের দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সকল মানুষের নিকট এ ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত। হে মুশরিকরা! তোমরা যদি শিরক থেকে তাওবা করে নাও তাহলে তোমাদের তাওবা তোমাদের জন্য অনেক উত্তম হবে। আর যদি তোমরা তাওবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তোমরা এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, না তোমরা কখনো আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবে, না তাঁর শাস্তিকে। হে রাসূল! আপনি কাফিরদেরকে এ দুঃখের সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অপেক্ষা করছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ثُمَّ لَمۡ يَنقُصُوكُمۡ شَيۡـٔٗا وَلَمۡ يُظَٰهِرُواْ عَلَيۡكُمۡ أَحَدٗا فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ
৪. তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছো এবং তারাও তোমাদের চুক্তিটি পুরা করছে উপরন্তু সে চুক্তির কোন ধারাই তারা ভঙ্গ করেনি তাহলে তারা উক্ত বিধানের বাইরেই থাকবে। তাই তোমরা চুক্তির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের চুক্তিটি পুরা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ মানা তথা চুক্তি পুরা করা এবং তাঁর নিষেধ মানা তথা খিয়ানত না করা মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৫. শত্রæদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার সেই চার মাস শেষ হয়ে গেলে তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো। তাদের কিল্লাগুলোতে তাদেরকে ঘেরাও করো এবং তাদের পথে পথে ওত পেতে বসে থাকো। তবে তারা যদি শিরক থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে ও নিজেদের সম্পদের যাকাত দেয় তখন তারা তোমাদের মুসলিম ভাই। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٱسۡتَجَارَكَ فَأَجِرۡهُ حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ أَبۡلِغۡهُ مَأۡمَنَهُۥۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡلَمُونَ
৬. হে রাসূল! যদি মুশরিকদের কেউ আপনার আশ্রয় কামনা করে যার রক্ত ও সম্পদ হালাল তাহলে আপনি তার আবেদনে সাড়া দিন। যেন সে কুর‘আন শুনতে পায়। অতঃপর তাকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দিন। তা এ জন্য যে, কাফিররা মূলতঃ এমন এক জাতি যারা এ ধর্মের মূলতত্ত¡ বুঝে না। তাই যদি তারা কুর‘আন তিলাওয়াত শুনে কিছু বুঝতে পারে তাহলে তারা হয়তোবা হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• في الآيات دليل واضح على حرص الإسلام على تسوية العلاقات الخارجية مع الأعداء على أساس من السّلم والأمن والتّفاهم.
ক. উক্ত আয়াতগুলোতে এ প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে মিলে যে, ইসলাম সর্বদা সন্ধি, নিরাপত্তা ও পরস্পর বুঝাপড়ার ভিত্তিতে শত্রæদের সাথে বহিরাগত সম্পর্ক রক্ষার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

• الإسلام يُقَدِّر العهود، ويوجب الوفاء بها، ويجعل حفظها نابعًا من الإيمان، وملازمًا لتقوى الله تعالى.
খ. ইসলাম পারস্পরিক চুক্তিকে সম্মান করে এবং সে তা পুরা করাকে বাধ্যতামূলক বলেও মনে করে উপরন্তু সে চুক্তি রক্ষাকে ঈমান থেকে উৎসারিত এবং আল্লাহভীরুতার সাথে কঠিনভাবে সম্পৃক্ত একটি ব্যাপার বলেও মনে করে।

• أَنَّ إقامة الصّلاة وإيتاء الزّكاة دليل على الإسلام، وأنهما يعصمان الدّم والمال، ويوجبان لمن يؤدّيهما حقوق المسلمين من حفظ دمه وماله إلا بحق الإسلام؛ كارتكاب ما يوجب القتل من قتل النفس البريئة، وزنى الزّاني المُحْصَن، والرّدّة إلى الكفر بعد الإيمان.
গ. সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করা ইসলামের প্রমাণাদির অন্যতম। উপরন্তু এ দু’টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রক্ত ও সম্পদকে রক্ষা করে। এমনকি এ দু’টো তাদের আদায়কারীদের জন্য মুসলমানদের বিশেষ অধিকার তথা তাদের রক্ত ও সম্পদ রক্ষা করাকে বাধ্যতামূলক মনে করে। তবে ইসলামের অধিকারের দরুনই তা আবার ক্ষুণœ হতে পারে। যেমন: কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা, কোন বিবাহিত ব্যক্তির সাথে ব্যভিচার করা এবং ঈমানের পর কুফরির দিকে ফিরে যাওয়ার মতো হত্যাযোগ্য অপরাধ করা।

• مشروعيّة الأمان؛ أي: جواز تأمين الحربي إذا طلبه من المسلمين؛ ليسمع ما يدلّ على صحّة الإسلام، وفي هذا سماحة وتكريم في معاملة الكفار، ودليل على إيثار السِّلم.
ঘ. নিরাপত্তার বিধান তথা মুসলমানদের জন্য যুদ্ধরত কোন কাফিরকে নিরাপত্তা দেয়াও জায়িয যদি সে তা কামনা করে। যেন সে এমন কিছু মুসলমানদের থেকে শুনতে পায় যা ইসলামের সত্যতাকে প্রমাণ করে। এতে কাফিরদের সাথে আচরণে উদারতা ও সম্মানের পরিচয় দেয়া হয়েছে যা সন্ধি চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রমাণও বটে।

كَيۡفَ يَكُونُ لِلۡمُشۡرِكِينَ عَهۡدٌ عِندَ ٱللَّهِ وَعِندَ رَسُولِهِۦٓ إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۖ فَمَا ٱسۡتَقَٰمُواْ لَكُمۡ فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ
৭. মুশরিকদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের চুক্তি থাকা জায়িয নয়। তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা মসজিদে হারামের নিকট হুদাইবিয়্যাহ সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছো তাদের ব্যাপার অবশ্যই ভিন্ন। হে মুসলিমরা! যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের ও তাদের মধ্যকার এ চুক্তির উপর অটল থাকবে এবং তা ভঙ্গ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তার উপর কায়েম থাকো এবং তা ভঙ্গ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ-নিষেধ মানা মুত্তাকী বান্দাদেরকে ভালোবাসেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَيۡفَ وَإِن يَظۡهَرُواْ عَلَيۡكُمۡ لَا يَرۡقُبُواْ فِيكُمۡ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ يُرۡضُونَكُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَتَأۡبَىٰ قُلُوبُهُمۡ وَأَكۡثَرُهُمۡ فَٰسِقُونَ
৮. তাদের জন্য কীভাবেই বা চুক্তি ও নিরাপত্তা থাকতে পারে; অথচ তারা তোমাদেরই শত্রæ। যদি তারা তোমাদেরকে সুযোগ মতো পেয়ে বসে তখন তারা তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ, আত্মীয়তার বন্ধন অথবা চুক্তি তথা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করবে না। বরং তারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবে?! তারা মুখের সুন্দর কথা দিয়ে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করছে। তবে তাদের অন্তর তো মুখের অনুগামী নয়। তারা যা বলে তা কখনো পুরা করে না। বরং তাদের অধিকাংশই ওয়াদা ভঙ্গের কারণে আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱشۡتَرَوۡاْ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ ثَمَنٗا قَلِيلٗا فَصَدُّواْ عَن سَبِيلِهِۦٓۚ إِنَّهُمۡ سَآءَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
৯. তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের অনুসরণের পরিবর্তে - যেগুলোতে চুক্তি পুরা করার কথা রয়েছে - এ নশ্বর দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ মূল্যকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত চাহিদা ও কুপ্রবৃত্তি পূরণ করতে পারবে। তাই তারা নিজেদেরকে সত্যের অনুসরণ থেকে দূরে সরিয়ে ও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি তারা অন্যদেরকেও সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। বস্তুতঃ তারা যা করছে তা সত্যিই একটি নিকৃষ্ট আমল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا يَرۡقُبُونَ فِي مُؤۡمِنٍ إِلّٗا وَلَا ذِمَّةٗۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُعۡتَدُونَ
১০. তারা শত্রæতার কারণে কোন মু’মিনের ব্যাপারে আল্লাহ, আত্মীয়তার বন্ধন অথবা চুক্তি তথা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। বরং তারা যুলুম ও অত্যাচারের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ وَنُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ
১১. যদি তারা তাদের কুফরি থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়, কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে, সালাত কায়েম করে ও তাদের সম্পদের যাকাত দেয় তখন তারা মুসলিম হিসেবেই পরিচিতি পাবে এবং তারা তাহলে তোমাদের ধর্মীয় ভাই হিসেবে পরিগণিত হবে। তাদের জন্যও তাই থাকবে যা তোমাদের জন্য থাকছে এবং তাদের উপরও তাই বর্তাবে যা তোমাদের উপর বর্তায়। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা তোমাদের জন্য বৈধ হবে না। তাদের ইসলামই তখন তাদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা করবে। বস্তুতঃ আমি আমার আয়াতগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি কেবল জ্ঞানবান লোকদের জন্য। কারণ, তারাই তো তদ্বারা লাভবান হবে এবং অন্যকে লাভবান করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِن نَّكَثُوٓاْ أَيۡمَٰنَهُم مِّنۢ بَعۡدِ عَهۡدِهِمۡ وَطَعَنُواْ فِي دِينِكُمۡ فَقَٰتِلُوٓاْ أَئِمَّةَ ٱلۡكُفۡرِ إِنَّهُمۡ لَآ أَيۡمَٰنَ لَهُمۡ لَعَلَّهُمۡ يَنتَهُونَ
১২. যাদের সাথে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করার চুক্তি করেছেন সে মুশরিকরা যদি তাদের চুক্তি ও অঙ্গীকারগুলো ভঙ্গ করে এবং তোমাদের ধর্মের দোষ-ত্রæটি ধরে ও তার অবমাননা করে তাহলে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। কারণ, তারা হলো কাফিরদের পুরোধা ও নেতা। তাদের সাথে আর কোন চুক্তি ও অঙ্গীকার চলবে না। যা তাদের রক্তকে হিফাযত করবে। বরং তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। যাতে তারা নিজেদের কুফরি, চুক্তিভঙ্গ ও ধর্মের অবমাননা করা থেকে ফিরে আসে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَا تُقَٰتِلُونَ قَوۡمٗا نَّكَثُوٓاْ أَيۡمَٰنَهُمۡ وَهَمُّواْ بِإِخۡرَاجِ ٱلرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةٍۚ أَتَخۡشَوۡنَهُمۡۚ فَٱللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخۡشَوۡهُ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ
১৩. হে মু’মিনরা! তোমরা কেন এমন সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করো না যারা নিজেদের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং তারা দারুন-নাদওয়ায় একত্রিত হয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। মূলতঃ তারাই তো সর্বপ্রথম তোমাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে যখন তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ খুজাআহ গোত্রের বিরুদ্ধে কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ বকর গোত্রকে সহযোগিতা করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় করে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হচ্ছো না?! তোমরা যদি মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। যিনি মানুষের ভয় পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• دلَّت الآيات على أن قتال المشركين الناكثين العهد كان لأسباب كثيرة، أهمها: نقضهم العهد.
ক. উক্ত আয়াতগুলো এ কথা প্রমাণ করে যে, সীমালঙ্ঘনকারী মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে সেগুলোর প্রধান কারণ হলো চুক্তি ভঙ্গ করা।

• في الآيات دليل على أن من امتنع من أداء الصلاة أو الزكاة فإنه يُقاتَل حتى يؤديهما، كما فعل أبو بكر رضي الله عنه.
খ. আয়াতগুলোতে এ কথারও দলীল রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সালাত কিংবা যাকাত আদায় করতে অস্বীকৃতি জানাবে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে যতক্ষণ না সে সেগুলো আদায় করে। যা একদা আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) করেছেন।

• استدل بعض العلماء بقوله تعالى:﴿وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ﴾ على وجوب قتل كل من طعن في الدّين عامدًا مستهزئًا به.
গ. কোন কোন আলিম আল্লাহর বাণী “এবং তারা তোমাদের ধর্মে আঘাত হানে” দ্বারা ইচ্ছাকৃত ধর্মে আঘাতকারী ও ঠাট্টাকারীকে হত্যা করা ওয়াজিব হওয়ার দলীল দিয়েছেন।

• في الآيات دلالة على أن المؤمن الذي يخشى الله وحده يجب أن يكون أشجع الناس وأجرأهم على القتال.
ঘ. উক্ত আয়াতগুলো এ কথাও প্রমাণ করে যে, যে মু’মিন কেবল আল্লাহকে ভয় করবে তাকে অবশ্যই সবচেয়ে সাহসী ও যুদ্ধে বেপরোয়া হতে হবে।

قَٰتِلُوهُمۡ يُعَذِّبۡهُمُ ٱللَّهُ بِأَيۡدِيكُمۡ وَيُخۡزِهِمۡ وَيَنصُرۡكُمۡ عَلَيۡهِمۡ وَيَشۡفِ صُدُورَ قَوۡمٖ مُّؤۡمِنِينَ
১৪. হে মু’মিনরা! তোমরা এ মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের হাতেই তাদেরকে শাস্তি দিবেন। আর তা হবে তাদেরকে হত্যা করার মাধ্যমে। তেমনিভাবে তিনি পরাজিত ও বন্দী করার মাধ্যমে তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন আর তোমাদেরকে তাদের উপর জয়ী করে সাহায্য করবেন। উপরন্তু তিনি শত্রæদের হত্যা, বন্দী, পরাজয় এবং তাদের উপর মু’মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে যে মু’মিন সম্প্রদায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের অন্তরের ব্যাধি দূর করবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيُذۡهِبۡ غَيۡظَ قُلُوبِهِمۡۗ وَيَتُوبُ ٱللَّهُ عَلَىٰ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
১৫. তেমনিভাবে তিনি তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে কাফিরদের উপর জয়ী করে তাদের অন্তরের রাগ মিটাবেন। আর হঠকারীদের মধ্যকার যাদের ব্যাপারে তিনি তাওবা কবুল করার ইচ্ছা করেন তাদের তাওবা কবুল করবেন যদি তারা তাওবা করে। যা ঘটেছে মক্কা বিজয় দিবসে সে এলাকার কিছু লোকের পক্ষ থেকে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই জানেন তাদের মধ্যকার তাওবাকারীদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে এবং তিনি তাঁর সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়তের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ حَسِبۡتُمۡ أَن تُتۡرَكُواْ وَلَمَّا يَعۡلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ مِنكُمۡ وَلَمۡ يَتَّخِذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَا رَسُولِهِۦ وَلَا ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَلِيجَةٗۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ
১৬. হে মু’মিনরা! তোমরা কি মনে করছো যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই এমনিতেই ছেড়ে দিবেন?! বস্তুতঃ পরীক্ষা হলো আল্লাহ তা‘আলার চিরায়ত একটি নিয়ম। তাই তোমাদেরকেও পরীক্ষা করা হবে। যাতে তিনি তোমাদের মধ্যকার নিষ্ঠাবান মুজাহিদ বান্দাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যভাবে জানতে পারেন। যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে বন্ধুত্বের জন্য কাফিরদের কাউকে বন্ধু বানায়নি এবং অন্তরঙ্গতার জন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বানায়নি। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কেই জানেন। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِينَ أَن يَعۡمُرُواْ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ شَٰهِدِينَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِم بِٱلۡكُفۡرِۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ وَفِي ٱلنَّارِ هُمۡ خَٰلِدُونَ
১৭. ইবাদাত ও রকমারি আনুগত্য দিয়ে আল্লাহর মসজিদগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করা মুশরিকদের কাজ হতে পারে না। তারা কুফরি প্রকাশ করে নিজেদের ব্যাপারে কুফরিকে স্বীকার করে। বস্তুতঃ এদের আমলগুলো বাতিল। কারণ, তা কবুলের বিশেষ শর্ত তথা ঈমান তাদের মধ্যে নেই। আর তারা কিয়ামতের দিন অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তবে যদি তারা মুত্যুর আগে শিরক থেকে তাওবা করে নেয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَلَمۡ يَخۡشَ إِلَّا ٱللَّهَۖ فَعَسَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِينَ
১৮. মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত ও তার অধিকার আদায়কারী ওরা যারা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে না। উপরন্তু পরকালের উপর ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদের সম্পদের যাকাত দেয় আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। এদের পক্ষ থেকেই আশা করা যায় যে, তারা সত্যিকারার্থেই সঠিক পথের সন্ধান পাবে। আর মুশরিকরা তো এ থেকে অনেক দূরে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ أَجَعَلۡتُمۡ سِقَايَةَ ٱلۡحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ كَمَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَجَٰهَدَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ لَا يَسۡتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ
১৯. হে মুশরিকরা! তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করা ওদের আমলের সমান মনে করো যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি। উপরন্তু কিয়ামতের দিবসের প্রতিও ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ ও কাফিরদের কথাকে নিচু করার জন্য নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তোমরা কি তাদের সবাইকে আল্লাহর নিকট সম্মানের ক্ষেত্রে একরকম বানিয়ে ফেলোছো?! বস্তুতঃ তারা আল্লাহর নিকট কখনো এক হতে পারে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যালিম মুশরিকদেরকে হিদায়েত করেন না। যদিও তারা কিছু কিছু ভালো কাজও করে। যেমন: হাজীদেরকে পানি পান করানো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ أَعۡظَمُ دَرَجَةً عِندَ ٱللَّهِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ
২০. যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং কুফরির এলাকা থেকে ইসলামের এলাকার দিকে হিজরত করেছে উপরন্তু আল্লাহর পথে সম্পদ ও জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছে তারা আল্লাহর নিকট অন্যদের চেয়ে বেশি মর্যাদাশীল। আর যারা এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সত্যিকারার্থে তারা জান্নাত লাভে সফল হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• في الآيات دلالة على محبة الله لعباده المؤمنين واعتنائه بأحوالهم، حتى إنه جعل من جملة المقاصد الشرعية شفاء ما في صدورهم وذهاب غيظهم.
ক. উক্ত আয়াতগুলোতে মু’মিন বান্দাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা এবং তাদের অবস্থার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি তিনি মু’মিনদের অন্তরের চিকিৎসা এবং তাদের রাগ দূর করাকে শরীয়তের উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে শামিল করেছেন।

• شرع الله الجهاد ليحصل به هذا المقصود الأعظم، وهو أن يتميز الصادقون الذين لا يتحيزون إلا لدين الله من الكاذبين الذين يزعمون الإيمان.
খ. আল্লাহ তা‘আলা জিহাদের বিধান দিয়েছেন একটি মহান উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। আর তা হলো আল্লাহর দীনের প্রতি সত্যবাদী মু’মিনদেরকে মিথ্যাবাদী মু’মিনদের থেকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করে দেখানো।

• عُمَّار المساجد الحقيقيون هم من وُصِفوا بالإيمان الصادق، وبالقيام بالأعمال الصالحة التي أُمُّها الصلاة والزكاة، وبخشية الله التي هي أصل كل خير.
গ. সত্যিকারের মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণকারীরা হলো ওরা যাদের মাঝে সত্য ঈমান ও নেক আমল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার মূল হলো সালাত ও যাকাত। উপরন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর ভয় যা মূলতঃ সমূহ কল্যাণের মূল।

• الجهاد والإيمان بالله أفضل من سقاية الحاج وعمارة المسجد الحرام بدرجات كثيرة؛ لأن الإيمان أصل الدين، وأما الجهاد في سبيل الله فهو ذروة سنام الدين.
ঘ. জিহাদ ও আল্লাহর উপর ঈমান আনা হাজীদেরকে পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামকে রক্ষণাবেক্ষণ করার চেয়েও অনেক গুণ বেশি উত্তম। কারণ, ঈমান হলো ধর্মের মূল। আর আল্লাহর পথে জিহাদ হলো ধর্মের শীর্ষ চ‚ড়া।

يُبَشِّرُهُمۡ رَبُّهُم بِرَحۡمَةٖ مِّنۡهُ وَرِضۡوَٰنٖ وَجَنَّٰتٖ لَّهُمۡ فِيهَا نَعِيمٞ مُّقِيمٌ
২১. তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি নাযিলের আনন্দময় সুসংবাদ দিবেন। তিনি আর কখনো তাদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন না। তেমনিভাবে তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দিবেন। যাতে রয়েছে চিরস্থায়ী নিয়ামত যা কখনো শেষ হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥٓ أَجۡرٌ عَظِيمٞ
২২. তারা সে জান্নাতে অনন্ত কাল থাকবে। যা হবে দুনিয়াতে করা তাদের নেক আমলের প্রতিদান স্বরূপ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার নিকট নিষ্ঠার সাথে তাঁর আদেশ-নিষেধ মানা ব্যক্তির জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُوٓاْ ءَابَآءَكُمۡ وَإِخۡوَٰنَكُمۡ أَوۡلِيَآءَ إِنِ ٱسۡتَحَبُّواْ ٱلۡكُفۡرَ عَلَى ٱلۡإِيمَٰنِۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
২৩. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের আনীত বিধানের অনুসারী মু’মিনরা! তোমরা নিজেদের বংশের অমুসলিম পিতা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়কে এমন অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাবে না যে, তোমরা তাদের নিকট মু’মিনদের গোপন কথা বলবে এবং সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চাইবে যদি তারা কুফরিকে এক আল্লাহর ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়। যারা ওদেরকে কুফরির উপর অবিচল থাকার পরও বন্ধু বানিয়ে নিবে এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করবে তারা বস্তুতঃ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলো এবং সে গুনাহের কারণে নিজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে নিজের উপরই যুলুম করলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ
২৪. হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে বলে দিন: যদি তোমাদের বাপ-দাদা, সন্তানাদি, ভাই-বেরাদর, স্ত্রীগণ, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের কামাই করা সম্পদ, যে ব্যবসায়ের তোমরা কাটতির আশা ও মন্দার আশঙ্কা করছো, যে ঘরে তোমরা অবস্থান করা পছন্দ করছো সেগুলো যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি পছন্দীয় হয় তাহলে তোমরা আল্লাহর প্রেরিতব্য শাস্তি ও আযাবের অপেক্ষা করো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া লোকদেরকে তাঁর পছন্দসই আমল করার তাওফীক দেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٖ وَيَوۡمَ حُنَيۡنٍ إِذۡ أَعۡجَبَتۡكُمۡ كَثۡرَتُكُمۡ فَلَمۡ تُغۡنِ عَنكُمۡ شَيۡـٔٗا وَضَاقَتۡ عَلَيۡكُمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ثُمَّ وَلَّيۡتُم مُّدۡبِرِينَ
২৫. হে মু’মিনরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বহু যুদ্ধে তোমাদের সংখ্যা ও সরঞ্জাম কম থাকা সত্তে¡ও মুশরিক শত্রæদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন। যখন তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে দুনিয়ার উপকরণগুলো গ্রহণ করেছো। অন্যদিকে তোমরা কখনো সংখ্যাধিক্যের অহঙ্কার বোধ করোনি। বস্তুতঃ সংখ্যাধিক্য কখনো তাদের উপর তোমাদের বিজয়ের কারণই ছিলো না। তাই হুনাইন যুদ্ধের দিন যখন তোমরা সংখ্যাধিক্যের অহঙ্কার করে বললে: আজ আমাদেরকে সংখ্যায় স্বল্পতাজনিত পরাজয় বরণ করতে হবে না। তখন তোমাদের গর্ব করা সেই সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন উপকারে আসেনি। বরং তোমাদের শত্রæরাই তোমাদের উপর জয়ী হয়েছে এবং পৃথিবী এতো প্রশস্ত হওয়া সত্তে¡ও তোমাদের জন্য তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে তোমরা পরাজিত অবস্থায় শত্রæর প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক সেখান থেকে পালিয়ে গেলে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَعَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودٗا لَّمۡ تَرَوۡهَا وَعَذَّبَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ وَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلۡكَٰفِرِينَ
২৬. তবে শত্রæ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন। ফলে তারা যুদ্ধের প্রতি আবারো অবিচল হয়ে উঠে। উপরন্তু তিনি এমন এক দল ফিরিশতা পাঠালেন যাঁদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফিরদেরকে হত্যা, বন্দী, সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও সন্তানদেরকে আটক করার মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। তাদেরকে দেয়া এ প্রতিদান মূলতঃ সর্বকালের রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপকারী এবং তাঁদের আনীত বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কাফিরদেরই প্রতিদান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• مراتب فضل المجاهدين كثيرة، فهم أعظم درجة عند الله من كل ذي درجة، فلهم المزية والمرتبة العلية، وهم الفائزون الظافرون الناجون، وهم الذين يبشرهم ربهم بالنعيم.
ক. মুজাহিদদের ফযীলতের মাত্রা অনেক বেশি। আল্লাহর নিকট যে কারো সম্মানের চেয়ে তাদের সম্মানই সর্বাধিক। তাঁদের জন্যই রয়েছে বিশেষ সম্মান ও সুউচ্চ মর্যাদা। তাঁরাই হলেন সফলতা ও নাজাতপ্রাপ্ত মহান সৌভাগ্যবান এবং তাঁদেরকেই তাঁদের প্রতিপালক নিয়ামতের সুসংবাদ দিয়ে থাকেন।

• في الآيات أعظم دليل على وجوب محبة الله ورسوله، وتقديم هذه المحبة على محبة كل شيء.
খ. উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসা এবং এ ভালোবাসাকে সকল ভালোবাসার উপর প্রাধান্য দেয়া বাধ্যতামূলক হওয়ার বিশেষ প্রমাণ রয়েছে।

• تخصيص يوم حنين بالذكر من بين أيام الحروب؛ لما فيه من العبرة بحصول النصر عند امتثال أمر الله ورسوله صلى الله عليه وسلم وحصول الهزيمة عند إيثار الحظوظ العاجلة على الامتثال.
গ. অন্যান্য যুদ্ধের মধ্য থেকে হুনাইন যুদ্ধকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো তাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মানলে বিজয় অর্জন এবং তাঁদের আদেশ মানার উপর দুনিয়ার নগদ লাভকে প্রাধান্য দিলে অনিবার্য পরাজয়মূলক বিশেষ শিক্ষণীয় ব্যাপার রয়েছে।

• فضل نزول السكينة، فسكينة الرسول صلى الله عليه وسلم سكينة اطمئنان على المسلمين الذين معه وثقة بالنصر، وسكينة المؤمنين سكينة ثبات وشجاعة بعد الجَزَع والخوف.
ঘ. উক্ত আয়াতগুলোতে প্রশান্তি নাযিলের ফযীলত বিধৃত হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রশান্তির মানে তাঁর সাথে থাকা মুসলমানদের ব্যাপারে তাঁর স্বস্তি ও সাহায্যের প্রতি আস্থা। আর মু’মিনদের প্রশান্তি মানে ভীতি ও অস্বস্তির পর সাহসিকতা ও অবিচল থাকার প্রশান্তি।

ثُمَّ يَتُوبُ ٱللَّهُ مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ عَلَىٰ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
২৭. উক্ত শাস্তির পর যে ব্যক্তি তার কুফরি ও ভ্রষ্টতা থেকে তাওবা করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবুল ও মঞ্জুর করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। কারণ, তিনি তাদের গুনাহ এবং কুফরির পরও তাদের তাওবা কবুল করছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ فَلَا يَقۡرَبُواْ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَٰذَاۚ وَإِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةٗ فَسَوۡفَ يُغۡنِيكُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦٓ إِن شَآءَۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
২৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী এবং তাঁর শরীয়তের অনুসারী হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা হলো নাপাক। কারণ, তাদের মধ্যে রয়েছে কুফরি, যুলুম, সমূহ নিকৃষ্ট চরিত্র ও প্রচুর বদ অভ্যাস। তাই তারা যেন এ বছর তথা নবম হিজরীর পর হজ্জ বা উমরাহরত অবস্থায় হলেও হারামে মাক্কী তথা মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে। তোমরা যদি তারা যে খাদ্য ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আমদানী করে তা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করো তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তিনি নিজ অনুগ্রহে অচিরেই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তিনি তোমাদের জন্য যে পরিকল্পনা করছেন তাতে তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَٰتِلُواْ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلۡحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حَتَّىٰ يُعۡطُواْ ٱلۡجِزۡيَةَ عَن يَدٖ وَهُمۡ صَٰغِرُونَ
২৯. হে মু’মিনগণ! তোমরা সেই কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো যারা আল্লাহ তা‘আলাকে শরীক বিহীন উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করে না এবং কিয়ামতের প্রতি ঈমান আনে না। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল তাদের উপর যে মৃত পশু, শূকরের গোস্ত, মদ ও সুদ হারাম করে দিয়েছেন তা থেকে বিরত থাকে না। তারা আল্লাহর দেয়া শরীয়তের প্রতি অনুগতও হয় না। চাই তারা ইহুদি হোক অথবা খ্রিস্টান। যতক্ষণ না তারা চাপের মুখে লাঞ্ছিতাবস্থায় নিজেদের হাতে জিযিয়া কর আদায় করে ততক্ষণ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ عُزَيۡرٌ ٱبۡنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَى ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ ٱللَّهِۖ ذَٰلِكَ قَوۡلُهُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡۖ يُضَٰهِـُٔونَ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبۡلُۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُۖ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ
৩০. বস্তুতঃ ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয়ই মুশরিক। ইহুদিরা তখনই আল্লাহর সাথে শিরক করলো যখন তারা দাবি করলো যে, নিশ্চয়ই উযাইর আল্লাহর ছেলে। আর খ্রিস্টানরাও তাঁর সাথে শিরক করলো যখন তারা দাবি করলো যে, নিশ্চয়ই ‘ঈসা মাসীহ আল্লাহর ছেলে। যে কথা বলে তারা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে তা মূলতঃ দলীল বিহীন তাদের একান্তই মুখের কথা। বস্তুতঃ তাদের এ কথা তাদের পূর্বেকার সেই মুশরিকদের কথার ন্যায় যারা বলেছিলো: নিশ্চয়ই ফিরিশতারা আল্লাহর কন্যা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ অপবাদ থেকে মহাপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করুন। কীভাবে তারা সুস্পষ্ট সত্য থেকে বাতিলের দিকে সরে যাচ্ছে?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ
৩১. ইহুদিরা তাদের জাযকদেরকে এবং খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ইবাদতকারী পাদ্রীদেরকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের পালনকর্তা বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যা হারাম করে দিয়েছেন তারা তা ওদের জন্য হালাল করে দেয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যা হালাল করে দিয়েছেন তারা তা ওদের উপর হারাম করে দেয়। উপরন্তু খ্রিস্টানরা মাসীহ ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকেও আল্লাহর পাশাপাশি উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইহুদিদের জাযক, খ্রিস্টানদের পাদ্রী এবং উযাইর ও ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকে শুধুমাত্র এ আদেশ করেছেন যে, তারা যেন এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে। তিনি মহাপবিত্র একক উপাস্য। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। মুশরিক ও অন্যান্যরা তাঁর শরীক আছে বলে যা বলছে তা থেকে তিনি একান্তভাবে পূত-পবিত্র।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• في الآيات دليل على أن تعلق القلب بأسباب الرزق جائز، ولا ينافي التوكل.
ক. উক্ত আয়াতগুলোতে এ প্রমাণ রয়েছে যে, রিযিকের উপকরণসমূহের সাথে অন্তরের সম্পর্ক থাকা জায়িয। তা সত্যিকারার্থে তাওয়াক্কুল বিরোধী নয়।

• في الآيات دليل على أن الرزق ليس بالاجتهاد، وإنما هو فضل من الله تعالى تولى قسمته.
খ. উক্ত আয়াতসমূহে এরও প্রমাণ রয়েছে যে, পরিশ্রম করলেই কেবল রিযিক আসে না। বরং তা মূলতঃ আল্লাহর দয়ামাত্র। যার বন্টনের দায়িত্ব কেবল তাঁরই হাতে।

• الجزية واحد من خيارات ثلاثة يعرضها الإسلام على الأعداء، يقصد منها أن يكون الأمر كله للمسلمين بنزع شوكة الكافرين.
গ. ইসলাম তার শত্রæদের নিকট যে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করে থাকে সেগুলোর একটি হলো জিযিয়া কর। যার উদ্দেশ্য হলো কাফিরদের দাপট ছিনিয়ে নেয়া এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল করা।

• في اليهود من الخبث والشر ما أوصلهم إلى أن تجرؤوا على الله، وتنقَّصوا من عظمته سبحانه.
ঘ. ইহুদিদের মাঝে এতো বেশি অকল্যাণ ও অপবিত্রতা বিদ্যমান, যা তাদেরকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যে, ফলে তারা আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করছে এবং তাঁর মহত্ত¡কে ক্ষুণœ করছে।

يُرِيدُونَ أَن يُطۡفِـُٔواْ نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَيَأۡبَى ٱللَّهُ إِلَّآ أَن يُتِمَّ نُورَهُۥ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ
৩২. এ কাফির গোষ্ঠী ও অন্যান্য কাফির গোষ্ঠীরা উক্ত অপবাদ ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে মূলতঃ ইসলামকেই বাতিল ও খতম করতে চায়। উপরন্তু তারা তাতে থাকা আল্লাহর তাওহীদ সংশ্লিষ্ট সকল প্রকারের প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণকেও বাতিল করতে চায়। অথচ তাঁর রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা সবই সত্য। আর আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও অন্য ধর্মের উপর বিজয়ী করবেন। যদিও কাফিররা তাঁর দীনের পরিপূর্ণতা, সুস্পষ্টতা ও তার বিজয়কে অপছন্দ করে থাকে তারপরও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও বিজয়ী করেই ছাড়বেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কোন কিছু চাইলে তা অবশ্যই সংঘটিত হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡمُشۡرِكُونَ
৩৩. আল্লাহ তা‘আলাই তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মানুষের জন্য হিদায়েত স্বরূপ কুর‘আন এবং সত্য ধর্ম ইসলামকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। যাতে তিনি তার মধ্যকার দলীল-প্রমাণ ও বিধানাবলীর মাধ্যমে তাকে অন্য ধর্মের উপর বিজয়ী করতে পারেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡأَحۡبَارِ وَٱلرُّهۡبَانِ لَيَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۗ وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ
৩৪. আল্লাহর দেয়া শরীয়তের উপর আমলকারী ওহে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই বহু ইহুদি জাযক ও বহু খ্রিস্টান পাদ্রী কোন বৈধ অধিকার ছাড়াই মানুষের সম্পদ গ্রাস করে নেয়। তারা ঘুষ ও অন্যান্য মাধ্যমে মানুষের সম্পদ গ্রাস করে। আর মানুষদেরকে আল্লাহর দীনে প্রবেশে বাধা দেয়। হে রাসূল! যারা স্বর্ণ-রুপা জমা করে কিন্তু তাদের উপর বাধ্যতামূলক যাকাতটুকু তারা আদায় করে না, আপনি তাদেরকে কিয়ামত দিবসের বেদনাদায়ক শাস্তির দুঃসংবাদ দিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ
৩৫. তারা যা জমা করেছে অথচ তার পাওনা হক তারা আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার উপর জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে। যখন সেগুলোর তাপ খুব কঠিন হবে তখন সেগুলোকে তাদের কপালে, পার্শ্ব দেশে ও পিঠে রাখা হবে। উপরন্তু তাদেরকে তিরস্কারের সুরে বলা হবে: এগুলো তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা একদা জমা করেছো অথচ সেগুলোর বাধ্যতামূলক যাকাত তোমরা আদায় করোনি। তাই তোমরা আজ সেগুলোর খারাপ পরিণাম ও পরিণতি আস্বাদন করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثۡنَا عَشَرَ شَهۡرٗا فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ يَوۡمَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ مِنۡهَآ أَرۡبَعَةٌ حُرُمٞۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُۚ فَلَا تَظۡلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمۡۚ وَقَٰتِلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ كَآفَّةٗ كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمۡ كَآفَّةٗۚ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ
৩৬. আল্লাহর বিধান ও ফায়সালায় এক বছরের মাসের সংখ্যা সর্বমোট বারোটি। যা আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টির শুরুতে লাওহে মাহফ‚যে লিপিবদ্ধ করেছেন। উক্ত বারো মাসের চার মাসে আবার আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করেছেন। যা লাগাতার তিন মাস তথা যুল-কি’দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। আরেকটি একক মাস তথা রজব। উক্ত বাৎসরিক মাসের সংখ্যা ও সেগুলোর চারটিকে হারাম করে দেয়া মূলতঃ একটি সঠিক ধর্ম। তাই তোমরা এ হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে এবং এগুলোর সম্মান নষ্ট করে নিজেদের উপর যুলুম করো না। আর তোমরা সকল প্রকারের মুশরিকের সাথে যুদ্ধ করো যেমনিভাবে তারা সবাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। তোমরা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য ও অনুগ্রহ নিয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকীদের সাথেই রয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যার সাথে রয়েছেন তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• دين الله ظاهر ومنصور مهما سعى أعداؤه للنيل منه حسدًا من عند أنفسهم.
ক. ইসলামের শত্রæরা হিংসাবশতঃ যতোই আল্লাহর দীনের ক্ষতি করার চেষ্টা করুক না কেন তা সর্বদাই বিজয়ী ও সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।

• تحريم أكل أموال الناس بالباطل، والصد عن سبيل الله تعالى.
খ. বাতিল পন্থায় মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

• تحريم اكتناز المال دون إنفاقه في سبيل الله.
গ. আল্লাহর পথে ব্যয় না করে সম্পদ কুক্ষিগত করাও হারাম।

• الحرص على تقوى الله في السر والعلن، خصوصًا عند قتال الكفار؛ لأن المؤمن يتقي الله في كل أحواله.
ঘ. প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে বিশেষ করে কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় আল্লাহভীতির বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, একজন মু’মিনের জন্য সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা উচিত।

إِنَّمَا ٱلنَّسِيٓءُ زِيَادَةٞ فِي ٱلۡكُفۡرِۖ يُضَلُّ بِهِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُحِلُّونَهُۥ عَامٗا وَيُحَرِّمُونَهُۥ عَامٗا لِّيُوَاطِـُٔواْ عِدَّةَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ فَيُحِلُّواْ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُۚ زُيِّنَ لَهُمۡ سُوٓءُ أَعۡمَٰلِهِمۡۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡكَٰفِرِينَ
৩৭. মুহাররাম মাসের মর্যাদাকে অন্য কোন মাসের দিকে পিছিয়ে দেয়া বা অর্পণ করা এবং তাকে ওর স্থলাভিষিক্ত করা যা জাহিলী যুগের আরবরাই করতো তা কিন্তু আল্লাহর সাথে কুফরি করার উপর বাড়তি আরেকটি কুফরি। তারা হারাম মাসগুলোর ব্যাপারে তাঁর বিধানের সাথে কুফরি করেছে। শয়তান এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কুফরিকারীদেরকে পথভ্রষ্ট করে। সেই তাদের জন্য এ খারাপ পদ্ধতি চালু করে। ফলে তারা হারাম মাসকে হালাল মাসের সাথে বদলিয়ে এক বছরের জন্য হালাল করে নেয়। আবার অন্য বছর তাকে হারাম হিসেবেই বাকি রাখে। যাতে আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোর সংখ্যা ঠিক থাকে। যদিও তারা হুবহু মাসগুলো ঠিক রাখেনি। কারণ, তারা কোন মাসকে হালাল করলে তার পরিবর্তে অন্য মাসকে হারাম করে। এভাবেই তারা আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোকে হালাল করে। আর আল্লাহর বিধানকে অমান্য করে। শয়তান তাদের সামনে খারাপ কাজগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থান করেছে বিধায় তারা তা সম্পাদন করেছে। হারাম মাসকে পিছিয়ে দেয়ার বিদ‘আত সেগুলোরই একটি। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কুফরির উপর হঠকারী কাফিরদেরকে ভালো কাজের তাওফীক দেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَا لَكُمۡ إِذَا قِيلَ لَكُمُ ٱنفِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱثَّاقَلۡتُمۡ إِلَى ٱلۡأَرۡضِۚ أَرَضِيتُم بِٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا مِنَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ فَمَا مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ
৩৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী এবং তাঁর দেয়া শরীয়তের উপর আমলকারী হে মু’মিনরা! তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে জিহাদ তথা শত্রæর সাথে যুদ্ধের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা তা পালনে দেরি করো এবং নিজেদের বাড়ি-ঘরে অবস্থান করতে চাও?! তোমরা কি আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য তৈরিকৃত আখিরাতের স্থায়ী নিয়ামতের পরিবর্তে দুনিয়ার এ নশ্বর জীবনের ভোগ-বিলাস ও অস্থায়ী আস্বাদনে বেশি সন্তুষ্ট?! অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার এ জীবনের ভোগ-বিলাস অতি সামান্য। তাহলে একজন বুদ্ধিমান কীভাবে স্থায়ীর উপর অস্থায়ী এবং মহানের উপর তুচ্ছকে নিজের জন্য পছন্দ করতে পারে?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا تَنفِرُواْ يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا وَيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيۡـٔٗاۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ
৩৯. হে মু’মিনরা! তোমরা যদি আল্লাহর পথে জিহাদ তথা নিজেদের শত্রæর সাথে যুদ্ধ করতে বের না হও তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও পদানত করার মাধ্যমে শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি নিয়ে আসবেন যারা আল্লাহর একান্ত অনুগত হবে। যখন তাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বলা হবে তখন তারা বেরিয়ে পড়বে। বস্তুতঃ তোমরা আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, তিনি তোমাদের প্রতি অমুখাপেক্ষী আর তোমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু করতে সক্ষম। কেউ তাঁকে অক্ষম করতে পারে না। তাই তিনি তোমাদের ছাড়াই তাঁর ধর্ম ও নবীর সহযোগিতা করতে সক্ষম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ ٱللَّهُ إِذۡ أَخۡرَجَهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ ٱثۡنَيۡنِ إِذۡ هُمَا فِي ٱلۡغَارِ إِذۡ يَقُولُ لِصَٰحِبِهِۦ لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَيۡهِ وَأَيَّدَهُۥ بِجُنُودٖ لَّمۡ تَرَوۡهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلسُّفۡلَىٰۗ وَكَلِمَةُ ٱللَّهِ هِيَ ٱلۡعُلۡيَاۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
৪০. হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর রাসূলের সহযোগিতা না করো এবং তাঁর দেয়া আল্লাহর পথে জিহাদের ডাকে সাড়া না দাও তা হলে নিশ্চিত জেনে রাখো যে, তোমরা তাঁর সাথে না থাকা অবস্থায়ও আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন যখন তাঁকে ও আবু বকরকে মুশরিকরা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছিলো। যখন তাদের সাথে তৃতীয় আর কেউ ছিলো না। তারা যে সময়ে তাদেরকে অনুসন্ধানকারী কাফিরদের দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে সাউর গুহায় অবস্থান করছিলো। যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী আবু বকর সিদ্দীক মুশরিকদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা বোধ করছিলো তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: তুমি চিন্তিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সাথেই রয়েছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাঁর নিকট এমন এক সেনাবাহিনী নাযিল করলেন যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। তারা হলো সহযোগিতাকারী ফিরিশতা। উপরন্তু আল্লাহ মুশরিকদের দাবিকে পরাজিত করলেন এবং তাঁর বাণীকে সুউচ্চ করলেন তথা ইসলামকে মর্যদাশীল করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অস্তিত্ব, ক্ষমতা ও শত্রæকে পরাভ‚ত করার ব্যাপারে অত্যন্ত পরাক্রমশালী। কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। তিনি শরীয়ত রচনা, ভাগ্য নির্ধারণ ও জগত পরিচালনায় সুকৌশলী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• العادات المخالفة للشرع بالاستمرار عليها دونما إنكار لها يزول قبحها عن النفوس، وربما ظُن أنها عادات حسنة.
ক. শরীয়ত বিরোধী অভ্যাসগুলো বিনা বাধায় চলতে থাকলে অন্তর থেকে তার অনিষ্টতা বা ক্ষতির বিষয়টি মুছে যেতে থাকে। বরং তখন এগুলোকে ভালো অভ্যাস বলেও ধারণা করা হয়।

• عدم النفير في حال الاستنفار من كبائر الذنوب الموجبة لأشد العقاب، لما فيها من المضار الشديدة.
খ. যুদ্ধের জন্য বের হতে বলার পর বের না হওয়া কবীরা গুনাহগুলোর অন্যতম। এ জন্য শাস্তি অবধারিত। কারণ, তাতে দেশ ও জাতির জন্য বহু মারাত্মক ক্ষতি রয়েছে।

• فضيلة السكينة، وأنها من تمام نعمة الله على العبد في أوقات الشدائد والمخاوف التي تطيش فيها الأفئدة، وأنها تكون على حسب معرفة العبد بربه، وثقته بوعده الصادق، وبحسب إيمانه وشجاعته.
গ. দৃঢ় বিশ্বাসের ফযীলত অসামান্য। মূলতঃ এটি বিপদ ও আশঙ্কার সময় যখন মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হয় তখন তা বান্দার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরিপূর্ণ নিয়ামত। তবে তা নিজ প্রতিপালকের ব্যাপারে বান্দার ধারণা এবং তাঁর সত্য ওয়াদার উপর বান্দার আস্থা তথা বান্দার ঈমান ও সাহসিকতার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।

• أن الحزن قد يعرض لخواص عباد الله الصدِّيقين وخاصة عند الخوف على فوات مصلحة عامة.
ঘ. চিন্তা ও বিষণœতা কখনো কখনো আল্লাহর বিশেষ প্রিয় ও সত্যবাদী বান্দাদেরকেও পেয়ে বসে। বিশেষ করে জাতীয় ব্যাপক স্বার্থ হানির আশঙ্কা দেখা দিলে।

ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
৪১. হে মু’মিনগণ! তোমরা সহজ বা কঠিন, যুবক বা বৃদ্ধ তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়ো এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করো। কারণ, এ বের হওয়া এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করা নিজেদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় ঘরে বসে থাকার চেয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য তুলনাতীত লাভজনক। যদি তোমরা এ ব্যাপারটি বুঝে থাকে তাহলে তা করার চেষ্টা করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَوۡ كَانَ عَرَضٗا قَرِيبٗا وَسَفَرٗا قَاصِدٗا لَّٱتَّبَعُوكَ وَلَٰكِنۢ بَعُدَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلشُّقَّةُۚ وَسَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَوِ ٱسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَكُمۡ يُهۡلِكُونَ أَنفُسَهُمۡ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ
৪২. হে নবী! যে মুনাফিকরা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য আপনার নিকট অনুমতি চেয়েছে আপনি তাদেরকে যেদিকে ডাকছেন তা যদি সহজলব্ধ গনিমতের মাল ও কষ্টহীন সফর হতো তাহলে তারা অবশ্যই আপনার আনুগত্য করতো। কিন্তু শত্রæর সাথে যুদ্ধ করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে তারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়নি। যে মুনাফিকরা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য আপনার নিকট অনুমতি চেয়েছে আপনি তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা অচিরেই আল্লাহর কসম খেয়ে বলবে: আমরা আপনাদের সাথে জিহাদে বের হতে পারলে অবশ্যই বের হতাম। বস্তুতঃ তারা যুদ্ধে না গিয়ে এবং এ মিথ্যা কসমগুলো খেয়ে নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন করে তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করবে। আল্লাহ তা‘আলা জানেন, তারা নিজেদের দাবি ও শপথে অবশ্যই মিথ্যুক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَفَا ٱللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمۡ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَتَعۡلَمَ ٱلۡكَٰذِبِينَ
৪৩. হে রাসূল! তাদেরকে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা আপনার চিন্তাগত ভুলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি কেন তাদেরকে সহজেই যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন? অথচ আপনার ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার ছিলো যতক্ষণ না তাদের উপস্থাপিত ওজর-আপত্তিতে তারা সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী তা সুস্পষ্ট হতো। তখন আপনি মিথ্যাবাদীদেরকে অনুমতি না দিয়ে শুধু সত্যবাদীদেরকে অনুমতি দিতেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا يَسۡتَـٔۡذِنُكَ ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ أَن يُجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلۡمُتَّقِينَ
৪৪. হে রাসূল! যারা আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামত দিবসে সত্যিকারের বিশ্বাসী তাদের উচিৎ নয় যে, তারা নিজেদের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছিয়ে থাকার জন্য আপনার অনুমতি কামনা করবে। বরং তাদের উচিৎ হবে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বলা হলে তারা যুদ্ধের জন্য বের হবে এবং নিজেদের জান-মাল নিয়ে তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এমন মুত্তাকী বান্দাদের সম্পর্কে অবশ্যই জানেন যারা কখনোই এমন ওজর ছাড়া আপনার অনুমতি চাইবে না, যা তাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে সত্যিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّمَا يَسۡتَـٔۡذِنُكَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱرۡتَابَتۡ قُلُوبُهُمۡ فَهُمۡ فِي رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُونَ
৪৫. হে রাসূল! যারা আল্লাহর পথে জিহাদ না করার জন্য আপনার অনুমতি কামনা করে তারা অবশ্যই এমন মুনাফিক যারা আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামতের দিবসে বিশ্বাস করে না এবং যাদের অন্তরে আল্লাহর দীন সম্পর্কে অবশ্যই সন্দেহ রয়েছে। ফলে তারা নিজেদের সন্দেহে অস্থিরভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যের প্রতি তারা কোন পথই খুঁজে পাচ্ছে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَلَوۡ أَرَادُواْ ٱلۡخُرُوجَ لَأَعَدُّواْ لَهُۥ عُدَّةٗ وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيلَ ٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ
৪৬. যদি তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য আপনার সাথে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণের দাবিতে সত্যবাদী হতো তাহলে তারা অবশ্যই যথাসময়ে যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরি করে তার জন্য প্রস্তুত থাকতো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা আপনার সাথে তাদের বের হওয়া অপছন্দ করেছেন তাই তাদের জন্য যুদ্ধে বের হওয়ার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে তারা নিজেদের ঘরে বসে থাকাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَوۡ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمۡ إِلَّا خَبَالٗا وَلَأَوۡضَعُواْ خِلَٰلَكُمۡ يَبۡغُونَكُمُ ٱلۡفِتۡنَةَ وَفِيكُمۡ سَمَّٰعُونَ لَهُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِٱلظَّٰلِمِينَ
৪৭. এ মুনাফিকরা তোমাদের সাথে বের না হওয়াতে বিশেষ ফায়েদা রয়েছে। কারণ, তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের অসহযোগিতা এবং সন্দেহ সৃষ্টির মাধ্যমে তারা আরো ফাসাদ বাড়িয়ে দিতো এবং তোমাদের গ্রæপগুলোতে দ্রæত পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে তোমাদের মাঝে ফাটল ধরিয়ে দিতো। হে মু’মিনগণ! তোমাদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা তাদের মিথ্যা প্রচারণায় কান দিয়ে তা গ্রহণ ও প্রচার করে। ফলে তোমাদের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দেয়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক যালিমদের সম্পর্কে ভালোই জানেন যারা মু’মিনদের মাঝে ষড়যন্ত্র ও সন্দেহ সৃষ্টি করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• وجوب الجهاد بالنفس والمال كلما دعت الحاجة.
ক. প্রয়োজনের সময় নিজের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা ওয়াজিব।

• الأيمان الكاذبة توجب الهلاك.
খ. মিথ্যা কসম ধ্বংসকে অবধারিত করে।

• وجوب الاحتراز من العجلة، ووجوب التثبت والتأني، وترك الاغترار بظواهر الأمور، والمبالغة في التفحص والتريث.
গ. কোন ধরনের হুলস্থুল না করে ধীরস্থিরভাবে যে কোন ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া এবং বাহ্যদৃশ্য দেখে ধোঁকায় না পড়া উচিৎ।

• من عناية الله بالمؤمنين تثبيطه المنافقين ومنعهم من الخروج مع عباده المؤمنين، رحمة بالمؤمنين ولطفًا من أن يداخلهم من لا ينفعهم بل يضرهم.
ঘ. মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এক ধরনের সুদৃষ্টি হলো মুনাফিকদের মনোবলকে নষ্ট করে দেয়া এবং তাদেরকে তাঁর মু’মিন বান্দাদের সাথে বের হতে বাধা দেয়া। এটি মু’মিনদের প্রতি এক ধরনের দয়া ও মায়া বৈ আর কিছুই নয়। যাতে তাদের মাঝে এমন লোক প্রবেশ না করে যে তাদের উপকার না করে বরং তাদের ক্ষতিই করবে।

لَقَدِ ٱبۡتَغَوُاْ ٱلۡفِتۡنَةَ مِن قَبۡلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ ٱلۡأُمُورَ حَتَّىٰ جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَظَهَرَ أَمۡرُ ٱللَّهِ وَهُمۡ كَٰرِهُونَ
৪৮. এ মুনাফিকরা তাবুক যুদ্ধের আগে মু’মিনদের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে তাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো এবং তারা কৌশল করে আপনার সিদ্ধান্তসমূহকে উল্টে-পাল্টে দিতেছিলো। যাতে তাদের অপকৌশল আপনার জিহাদ করার প্রতিজ্ঞায় প্রভাব ফেলতে পারে। অথচ ইতিমধ্যে আপনার জন্য আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা এসে গেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে বিজয়ী ও তাঁর শত্রæদেরকে পদানত করলেন। যদিও তা তাদের নিকট অপছন্দনীয় ছিলো। কারণ, তারা বস্তুতঃ সত্যের উপরই বাতিলের জয় চেয়েছিলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ ٱئۡذَن لِّي وَلَا تَفۡتِنِّيٓۚ أَلَا فِي ٱلۡفِتۡنَةِ سَقَطُواْۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ
৪৯. মুনাফিকদের কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের ওজর-আপত্তি জানিয়ে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিন। আপনি আমাকে আপনার সাথে যেতে বাধ্য করবেন না। যাতে আমি রোমান শত্রæদের স্ত্রীদেরকে দেখে ফিতনায় পড়ে গুনাহে লিপ্ত না হই। জেনে রাখো, তারা তাদের ধারণার চেয়ে আরো বড় ফিতনায় পড়েছে। যা হলো মুনাফিকী ও যুদ্ধে না যাওয়ার ফিতনা। নিশ্চয়ই জাহান্নাম কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। তাদের কেউ তা থেকে রক্ষা পাবে না। না কেউ তা থেকে পালানোর পথ পাবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِن تُصِبۡكَ حَسَنَةٞ تَسُؤۡهُمۡۖ وَإِن تُصِبۡكَ مُصِيبَةٞ يَقُولُواْ قَدۡ أَخَذۡنَآ أَمۡرَنَا مِن قَبۡلُ وَيَتَوَلَّواْ وَّهُمۡ فَرِحُونَ
৫০. হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আপনার পছন্দনীয় আল্লাহর কোন নিয়ামত তথা বিজয় কিংবা গনীমতের কোনটি পেয়ে যান তখন তারা তা অপছন্দ করে এবং সে জন্য তারা খুবই চিন্তিত হয়। আর যদি আপনার নিকট কঠিন সমস্যা কিংবা শত্রæর বিজয় জাতীয় কোন বিপদ এসে পড়ে তখন মুনাফিকরা বলে: আমরা ইতিপূর্বে নিজেদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছি এবং যুদ্ধে বের না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপর দিকে মু’মিনরা যুদ্ধে বেরিয়েছে। ফলে তারা বন্দীদশা ও হত্যার শিকার হয়েছে। আর এ মুনাফিকরা নিজেদের নিরাপত্তায় খুশি হয়ে তাদের পরিবারের নিকট ফিরে গিয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا هُوَ مَوۡلَىٰنَاۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ
৫১. হে রাসূল! আপনি এ মুনাফিকদেরকে বলে দিন: বস্তুতঃ আমাদের নিকট শুধু তাই পৌঁছাবে যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। তিনিই হলেন আমাদের অভিভাবক ও আশ্রয়স্থল। যাঁর নিকট আমরা আশ্রয় গ্রহণ করি। আর আমরা নিজেদের সকল ব্যাপারে তাঁর উপরই ভরসা করি। বস্তুতঃ মু’মিনরা তাদের সকল ব্যাপার কেবল তাঁর নিকটই ন্যস্ত করে থাকে। তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট ও তাদের একান্ত উত্তম অভিভাবক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُونَ بِنَآ إِلَّآ إِحۡدَى ٱلۡحُسۡنَيَيۡنِۖ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَاۖ فَتَرَبَّصُوٓاْ إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ
৫২. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা কি আমাদের ব্যাপারে জয় কিংবা শাহাদাতের কোন একটির অপেক্ষা করছো?! আসলে সে দু’টিই তো উত্তম পরিণতি। তবে আমরাও তোমাদের জন্য দু’টি খারাপ পরিণতির অপেক্ষা করছি। আর তা হচ্ছে এই যে, যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন সেহেতু তিনি যেন নিজ পক্ষ থেকে তোমাদের উপর ধ্বংসাত্মক কোন আযাব নাযিল করেন অথবা তিনি তোমাদেরকে আমাদের হাতে বন্দী কিংবা হত্যা করে শাস্তি দেন। যদি তিনি আমাদেরকে তোমাদের সাথে যুদ্ধের অনুমতি দেন। তাই তোমরা আমাদের পরিণতির অপেক্ষা করো। আর আমরাও তোমাদের পরিণতির অপেক্ষা করছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهٗا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ إِنَّكُمۡ كُنتُمۡ قَوۡمٗا فَٰسِقِينَ
৫৩. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় যে সম্পদগুলো ব্যয় করে যাচ্ছো তা অবশ্যই ব্যয় করতে থাকো। তা তোমাদের পক্ষ থেকে কখনোই গ্রহণ করা হবে না। কেননা, তোমরা কুফরি করে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তা ব্যয় করছো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ نَفَقَٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَٰرِهُونَ
৫৪. বস্তুতঃ তাদের দান কবুল না হওয়ার তিনটি কারণ রয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করা এবং সালাত আদায়ের সময় অলসতা করা ও তা থেকে পিছপা হওয়া। উপরন্তু স্বেচ্ছায় নিজেদের সম্পদগুলো ব্যয় না করা। বরং তারা তা বাধ্য হয়ে ব্যয় করে। কারণ, তারা না সালাত আদায়ে কোন সাওয়াবের আশা করে, না তাদের দান-দক্ষিণায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• دأب المنافقين السعي إلى إلحاق الأذى بالمسلمين عن طريق الدسائس والتجسس.
ক. মুনাফিকদের চরিত্র হলো ষড়যন্ত্র ও গোয়েন্দাগিরির মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া ও বিপদে ফেলার চেষ্টা করা।

• التخلف عن الجهاد مفسدة كبرى وفتنة عظمى محققة، وهي معصية لله ومعصية لرسوله.
খ. জিহাদে না যাওয়া নিশ্চিত মহা ফিতনা ও বিরাট গুনাহের কাজ। যা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণও বটে।

• في الآيات تعليم للمسلمين ألا يحزنوا لما يصيبهم؛ لئلا يَهِنوا وتذهب قوتهم، وأن يرضوا بما قدَّر الله لهم، ويرجوا رضا ربهم؛ لأنهم واثقون بأن الله يريد نصر دينه.
গ. উক্ত আয়াতগুলোতে মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, তারা যেন কোন ধরনের বিপদে পড়ে অস্থির না হয়। যাতে তারা দুর্বল ও শক্তিহীন না হয়ে যায়। বরং তারা আল্লাহর তাক্বদীরে সন্তুষ্ট থাকবে এবং তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি কামনা করবে। কারণ, তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা চান তাঁর দীনের সহযোগিতা করতে।

• من علامات ضعف الإيمان وقلة التقوى التكاسل في أداء الصلاة والإنفاق عن غير رضا ورجاء للثواب.
ঘ. দুর্বল ঈমান ও তাক্বওয়ার ঘাটতির পরিচয় এই যে, সালাত আদায়ে অলসতা করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের আশা ছাড়া দান-সাদাকা করা।

فَلَا تُعۡجِبۡكَ أَمۡوَٰلُهُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُهُمۡۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ أَنفُسُهُمۡ وَهُمۡ كَٰفِرُونَ
৫৫. হে রাসূল! মুনাফিকদের সন্তানাদি ও ধনৈশ্বর্য আপনাকে যেন আশ্চর্যান্বিত না করে এবং আপনি সেগুলোকে লাভজনক মনে করবেন না। কারণ, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির পরিণাম খুবই খারাপ। আল্লাহ তা‘আলা সেগুলো অর্জনের কষ্ট ও ক্লান্তি দিয়ে এমনকি সেগুলোর মাঝে বিপদ নাযিল করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা কুফরি অবস্থায় তাদের রূহগুলোকে শরীর থেকে বের করে নিবেন। ফলে তারা জাহান্নামের তলদেশে চিরস্থায়ীভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنَّهُمۡ لَمِنكُمۡ وَمَا هُم مِّنكُمۡ وَلَٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٞ يَفۡرَقُونَ
৫৬. হে মু’মিনগণ! মুনাফিকরা তোমাদের সাথে মিথ্যা কসম খেয়ে বলবে: নিশ্চয়ই তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথচ তারা ভিতরগতভাবে তোমাদের কেউ নয়। যদিও তারা প্রকাশ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বরং তারা এমন এক জাতি যারা মুশরিকদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ ও বন্দীদশা নেমে এসেছিলো তা তাদের উপরও নেমে আসবে বলে ভয় পায়। তাই তারা ভয়ে ইসলামকে প্রকাশ করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَـًٔا أَوۡ مَغَٰرَٰتٍ أَوۡ مُدَّخَلٗا لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ
৫৭. যদি এ মুনাফিকরা দূর্গ জাতীয় কোন আশ্রয়কেন্দ্র পেয়ে যেতো যাতে তারা নিজেদেরকে সংরক্ষণ করতে পারতো অথবা তারা পাহাড়ের এমন কোন গর্ত পেয়ে যেতো যাতে তারা লুকিয়ে থাকতে পারতো কিংবা তারা ঢুকার ন্যায় কোন সুড়ঙ্গ পথ পেয়ে যেতো তাহলে তারা তাতে অবশ্যই আশ্রয় গ্রহণ করতো এবং দ্রæত তাতে প্রবেশ করতো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنۡهُم مَّن يَلۡمِزُكَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ فَإِنۡ أُعۡطُواْ مِنۡهَا رَضُواْ وَإِن لَّمۡ يُعۡطَوۡاْ مِنۡهَآ إِذَا هُمۡ يَسۡخَطُونَ
৫৮. হে রাসূল! মুনাফিকদের কেউ কেউ সাদাকা বন্টনের ক্ষেত্রে আপনার বদনাম করবে যখন তারা নিজেদের চাহিদা আন্দাজ সম্পদ না পাবে। বস্তুতঃ আপনি তাদেরকে তাদের চাহিদা মতো দিলে তারা আপনার উপর খুশি থাকবে। আর যদি তাদেরকে তাদের চাহিদা মাফিক না দেন তাহলে তারা আপনার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡ أَنَّهُمۡ رَضُواْ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ سَيُؤۡتِينَا ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَرَسُولُهُۥٓ إِنَّآ إِلَى ٱللَّهِ رَٰغِبُونَ
৫৯. যদি এ মুনাফিকরা যারা সাদাকা বন্টনে আপনার বদনাম করেছে তারা যদি আল্লাহর বরাদ্দ এবং তাঁর রাসূলের দেয়া সম্পদে সন্তুষ্ট থাকতো এবং তারা বলতো: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা চান আমাদেরকে দিবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে যা দিয়েছেন তা থেকে তিনিও অচিরেই আমাদেরকে দিবেন। নিশ্চয়ই আমরা এক আল্লাহর নিকট এ ব্যাপারে প্রত্যাশী যে, তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে দিবেন। যদি তারা এমন করতো তাহলে তা আপনার বদনাম করা থেকে তাদের জন্য অনেক উত্তম হতো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
৬০. নিশ্চয়ই ওয়াজিব যাকাত বন্টন করা হবে ফকিরদের মাঝে - তারা এমন লোক যাদের নিকট কোন পেশা বা চাকুরিলব্ধ সম্পদ আছে ঠিকই তবে তা তাদের জন্য যথেষ্ট নয় এবং তাদের খোঁজ-খবরও কেউ নিচ্ছে না, মিসকীনদের মাঝে - যারা কোন কিছুরই মালিক নয়। ফলে তাদের অবস্থা ও কথার দরুন তারা মানুষের নিকটও গোপন নয়। এমনিভাবে যাকাত সংগ্রহকারীদের মাঝে - যাদেরকে প্রশাসন যাকাত সংগ্রহের জন্য পাঠায়, কাফিরদের মাঝে - যাদের সাথে এগুলোর মাধ্যমে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক করা হয় যাতে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কিংবা দুর্বল ঈমানদারদের মাঝে যাতে তাদের ঈমান শক্তিশালী হয় অথবা এর মাধ্যমে যার অনিষ্ট প্রতিহত করা যায়। তেমনিভাবে তা বন্টন করা হবে গোলামদের মাঝে যাতে এর মাধ্যমে তাদেরকে স্বাধীন করা যায় এবং ঋণগ্রস্তদের মাঝে - যারা অপব্যয় ও গুনাহের জন্য ঋণ করেনি। যদি তারা ঋণ পরিশোধের জন্য কোন কিছু না পায় এবং তা বন্টন করা হবে আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে তৈরি করার ক্ষেত্রে এবং মুসাফিরকে তা দেয়া হবে যার খরচাদি নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বস্তুতঃ যাকাত বন্টনকে এদের মাঝে সীমাবদ্ধ করা আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত বিধান। মূলতঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সকল সুবিধাদি জানেন, তিনি তাঁর পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنۡهُمُ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلنَّبِيَّ وَيَقُولُونَ هُوَ أُذُنٞۚ قُلۡ أُذُنُ خَيۡرٖ لَّكُمۡ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَيُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِينَ وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡۚ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ رَسُولَ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ
৬১. মুনাফিকদের কেউ কেউ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কথায় কষ্ট দেয়। যখন তারা তাঁর ধৈর্য দেখে তখন তারা বলে: তিনি সবার কাছ থেকে কথা শুনেন ও তা বিশ্বাস করেন। সত্য ও মিথ্যার মাঝে তিনি পার্থক্য করতে পারেন না। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: নিশ্চয়ই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালো কথা ছাড়া অন্য কিছু শুনেন না। তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন উপরন্তু সত্যবাদী মু’মিনরা যা সংবাদ দেয় তাও বিশ্বাস করেন এবং তাদের প্রতি দয়া করেন। কারণ, তাঁর নবী হয়ে আসাই সকল মু’মিনের জন্য রহমত স্বরূপ। আর যারা তাঁকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الأموال والأولاد قد تكون سببًا للعذاب في الدنيا، وقد تكون سببًا للعذاب في الآخرة، فليتعامل العبد معهما بما يرضي مولاه، فتتحقق بهما النجاة.
ক. সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কখনো কখনো দুনিয়ার শাস্তির কারণ হয়। আবার কখনো কখনো আখিরাতের শাস্তিরও কারণ হয়। তাই বান্দার উচিত এতদুভয়ের সাথে তার মনিবের পছন্দসই আচরণ করা। আর তখনই সেগুলোর মাধ্যমে নাজাত পাওয়া সম্ভব।

• توزيع الزكاة موكول لاجتهاد ولاة الأمور يضعونها على حسب حاجة الأصناف وسعة الأموال.
খ. যাকাত বন্টনের বিষয়টি রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয়দের গবেষণার প্রতি ন্যস্ত। তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণীর প্রয়োজন ও সম্পদেও যোগানের দিকে খেয়াল করে তা বন্টন করবেন।

• إيذاء الرسول صلى الله عليه وسلم فيما يتعلق برسالته كفر، يترتب عليه العقاب الشديد.
গ. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রিসালাত সম্পর্কীয় কষ্ট দেয়া সত্যিই কুফরি। এতে কঠিন শাস্তি অবধারিত।

• ينبغي للعبد أن يكون أُذن خير لا أُذن شر، يستمع ما فيه الصلاح والخير، ويُعرض ترفُّعًا وإباءً عن سماع الشر والفساد.
ঘ. বান্দার উচিত কল্যাণের কথা শ্রবণকারী হওয়া; অকল্যাণের নয়। সে তাই শুনবে যাতে কোন ধরনের কল্যাণ ও সংশোধনী রয়েছে এবং সে নিজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে অকল্যাণ ও ফাসাদের কথা শুনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।

يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ لِيُرۡضُوكُمۡ وَٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَحَقُّ أَن يُرۡضُوهُ إِن كَانُواْ مُؤۡمِنِينَ
৬২. হে মু’মিনগণ! মুনাফিকরা আল্লাহর উপর কসম খেয়ে তোমাদেরকে বলবে: নিশ্চয়ই তারা ইতিপূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কষ্ট দেয় এমন কিছু বলেনি। মূলতঃ তারা তোমাদেরকে খুশি করার জন্য এমনটি করছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলই বেশি উপযুক্ত যাঁদেরকে ঈমান ও আমলের মাধ্যমে খুশি করানো দরকার। যদি এরা সত্যিকার মু’মিন হতো তাহলে তারা তাই করতো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّهُۥ مَن يُحَادِدِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَأَنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدٗا فِيهَاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡخِزۡيُ ٱلۡعَظِيمُ
৬৩. এ মুনাফিকরা কি জানে না যে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের এ কর্মকাÐের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রæতে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর যারা তাঁদের সাথে শত্রæতা পোষণ করে নিশ্চয়ই তারা কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে?! আর এটি মহা লাঞ্ছনা ও অসম্মান বৈ আর কি?
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَحۡذَرُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُورَةٞ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمۡۚ قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ
৬৪. মুনাফিকরা এ কথার ভয় করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর কোন আয়াত নাযিল করে মু’মিনদেরকে তাদের গোপন কুফরি সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন। হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে মুনাফিকরা! তোমরা চাইলে ধর্মের প্রতি আঘাত ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ চালিয়ে যেতে পারো। তবে আল্লাহ তা‘আলা কোন সূরা নাযিল করে কিংবা তাঁর রাসূলকে এ ব্যাপারে জানিয়ে তোমাদের জন্য আশঙ্কাজনক ব্যাপারটি প্রকাশ করে দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ
৬৫. হে রাসূল! আপনি যদি মুনাফিকদেরকে ধর্মের প্রতি আঘাত ও মু’মিনদেরকে গালি দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যে আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন তাহলে তারা অবশ্যই বলবে: আমরা কথার ফাঁকে একটু ঠাট্টা করছিলাম; বাস্তবিক দৃষ্টিতে কোন কিছু বলিনি। হে রাসূল! আপনি বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকারা করছো?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ
৬৬. এ মিথ্যা কৈফিয়ত তোমরা পেশ করো না। কারণ, তোমরা ঠাট্টার মাধ্যমে গোপন কুফরিকে প্রকাশ করে দিয়েছো। যদিও আমি তোমাদের এক দলকে মুনাফিকী ছেড়ে দেয়া এবং তা থেকে তাওবা করা ও আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠার কারণে ক্ষমা করে দেবো তবে তোমাদের অন্য দলটিকে মুনাফিকীর উপর অটলতা এবং তা থেকে তাওবা না করার কারণে অবশ্যই শাস্তি দেবো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلۡمُنَٰفِقُونَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتُ بَعۡضُهُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمُنكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَقۡبِضُونَ أَيۡدِيَهُمۡۚ نَسُواْ ٱللَّهَ فَنَسِيَهُمۡۚ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ
৬৭. মুনাফিকরা চাই পুরুষ হোক কিংবা মহিলা - তারা সবাই মুনাফিকির ক্ষেত্রে একমত। তারা মূলতঃ মু’মিনদের বিপরীত। তারা অসৎ কাজের আদেশ করে এবং সৎ কাজে নিষেধ করে। উপরন্তু তারা সম্পদের ব্যাপারে কৃপণতা করে। তারা কখনোই তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। তারা আল্লাহর আনুগত্যকে পরিত্যাগ করেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলাও এর সুযোগ দানের ব্যাপারে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বস্তুতঃ মুনাফিকরা আল্লাহর আনুগত্য ও সত্য পথ থেকে বেরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ ও ভ্রষ্টতার পথে এগুচ্ছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتِ وَٱلۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ هِيَ حَسۡبُهُمۡۚ وَلَعَنَهُمُ ٱللَّهُۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ
৬৮. আল্লাহ তা‘আলা তাওবা না করা কাফির ও মুনাফিকদের ব্যাপারে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবেন। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। শাস্তি হিসেবে তাই তাদের জন্য উপযুক্ত। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি আর শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• قبائح المنافقين كثيرة، ومنها الإقدام على الأيمان الكاذبة، ومعاداة الله ورسوله، والاستهزاء بالقرآن والنبي والمؤمنين، والتخوف من نزول سورة في القرآن تفضح شأنهم، واعتذارهم بأنهم هازلون لاعبون، وهو إقرار بالذنب، بل هو عذر أقبح من الذنب.
ক. মুনাফিকদের মন্দ চরিত্র অনেক। তবে সেগুলোর অন্যতম হলো মিথ্যা শপথ করা এবং মিথ্যা কাজে অগ্রসর হওয়া, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রæতা করা, কুর‘আন, নবী ও মু’মিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করা, কুর‘আনের এমন কোন সূরা নাযিলের ব্যাপারে ভয় পাওয়া যা তাদের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিতে পারে এবং এ বলে তাদের কৈফিয়ত দেয়া যে, নিশ্চয়ই তারা ঠাট্টা ও বিদ্রƒপ করছিলো। মূলতঃ এটি গুনাহের স্বীকারোক্তি মাত্র। বরং এটি গুনাহের চেয়েও একটি গুরুতর ও মারাত্মক ব্যাপার।

• لا يُقبل الهزل في الدين وأحكامه، ويعد الخوض بالباطل في كتاب الله ورسله وصفاته كفرًا.
খ. ধর্ম ও তার বিধি-বিধানকে নিয়ে ঠাট্টা ও মশকারা গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু আল্লাহর কিতাব, তাঁর রাসূলগণ ও তাঁর গুণাবলী নিয়ে বিধিবহিভর্‚ত পন্থায় আলোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরি কাজ।

• النّفاق: مرض عُضَال متأصّل في البشر، وأصحاب ذلك المرض متشابهون في كل عصر وزمان في الأمر بالمنكر والنّهي عن المعروف، وقَبْض أيديهم وإمساكهم عن الإنفاق في سبيل الله للجهاد، وفيما يجب عليهم من حق.
গ. মুনাফিকী মূলতঃ মানুষের অন্তরের একটি মারাত্মক রোগ এবং এ জাতীয় রোগীরা প্রত্যেক যুগে ও সময়ে একই রকম। তারা অসৎ কাজের আদেশ করে এবং সৎ কাজে নিষেধ করে। উপরন্তু তারা জিহাদ তথা আল্লাহর পথে খরচ করা ও ওয়াজিব অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে নিজেদের হাত গুটিয়ে নেয় ও কার্পণ্য করে।

• الجزاء من جنس العمل، فالذي يترك أوامر الله ويأتي نواهيه يتركه من رحمته.
ঘ. প্রতিদান মূলতঃ কর্মের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। সুতরাং যে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর রহমত থেকে দূরে রাখেন।

كَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ كَانُوٓاْ أَشَدَّ مِنكُمۡ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرَ أَمۡوَٰلٗا وَأَوۡلَٰدٗا فَٱسۡتَمۡتَعُواْ بِخَلَٰقِهِمۡ فَٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِخَلَٰقِكُمۡ كَمَا ٱسۡتَمۡتَعَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُم بِخَلَٰقِهِمۡ وَخُضۡتُمۡ كَٱلَّذِي خَاضُوٓاْۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ
৬৯. হে মুনাফিক সম্প্রদায়! তোমরা কুফরি ও ঠাট্টা-মশকারায় পূর্ববর্তী মিথ্যারোপকারী উম্মতদের ন্যায়। তারা ছিলো তোমাদের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী এবং বেশি সম্পদ ও সন্তানের মালিক। তারা নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত দুনিয়ার সূখ-স্বাচ্ছ্যন্দ ভোগ করে গেছে। সুতরাং হে মুনাফিকরা! তোমরাও তোমাদের জন্য বরাদ্দকৃত অংশ ভোগ করো যেমনিভাবে পূর্বের মিথ্যারোপকারী উম্মতরা তাদের অংশ ভোগ করে গেছে। আর তোমরা সত্যকে অস্বীকার এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মান-সম্মানে আঘাত দেয়ার কাজে লিপ্ত আছো যেমনিভাবে তারা লিপ্ত ছিলো। এ সকল খারাপ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের আমলগুলো বাতিল হয়ে গেছে। কারণ, তা কুফরির দরুন আল্লাহর নিকট নষ্ট বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এরাই ক্ষতিগ্রস্ত যারা নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারে উপনীত করে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ يَأۡتِهِمۡ نَبَأُ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ قَوۡمِ نُوحٖ وَعَادٖ وَثَمُودَ وَقَوۡمِ إِبۡرَٰهِيمَ وَأَصۡحَٰبِ مَدۡيَنَ وَٱلۡمُؤۡتَفِكَٰتِۚ أَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ فَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ
৭০. এ মুনাফিকদের নিকট কি মিথ্যারোপকারী উম্মতের কর্মকাÐ এবং তাদেরকে সে জন্য যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার খবর আসেনি?! যেমন: নূহ, হূদ, সালেহ এবং ইব্রাহীম (আলাইহিমুস-সালাম) এর সম্প্রদায়সমূহ, মাদয়ানবাসী ও লূতের (আলাইহিস-সালাম) সম্প্রদায়ের এলাকাসমূহ। তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণ ও প্রকাশ্য দলীলাদি নিয়ে এসেছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যুলুম করেননি। কারণ, তাদের রাসূলগণ তাদেরকে সতর্ক করেছেন। বরং তারাই আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে নিজেদের উপর যুলুম করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ
৭১. মু’মিন পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের সহযোগী ও সাহায্যকারী। কারণ, তাদের উভয়ের মাঝেই ঈমান রয়েছে। তারা সৎ কাজের আদেশ করে। সৎ কাজ বলতে আল্লাহর পছন্দনীয় তাঁর আনুগত্যের যে কোন ধরনকে বুঝানো হয়। যেমন: তাওহীদ ও নামায। এমনিভাবে তারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। অসৎ কাজ বলতে আল্লাহর অপছন্দনীয় যে কোন গুনাহকে বুঝানো হয়। যেমন: কুফরি ও সুদ। তারা পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় করে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এ সকল প্রশংসনীয় গুণাবলীতে গুণান্বিত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাঁর রহমতের ছায়াতলে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী। কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
৭২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর বিশ্বাসী মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদের সাথে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার অট্টালিকাসমূহের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। তাদের কখনো মৃত্যু হবে না। না তাদের নিয়ামত কখনো বন্ধ হবে। তিনি তাদের সাথে আরো ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতের সুন্দর সুন্দর ঘরে প্রবেশ করাবেন। তবে তিনি তাদের উপর নিজের যে সন্তুষ্টি নাযিল করবেন তা হলো সবচেয়ে বড়। উল্লিখিত প্রতিদান মূলতঃ সর্ববৃহৎ সফলতা। অন্য কোন সফলতা তার নিকটবর্তীও হতে পারে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• سبب العذاب للكفار والمنافقين واحد في كل العصور، وهو إيثار الدّنيا على الآخرة والاستمتاع بها، وتكذيب الأنبياء والمكر والخديعة والغدر بهم.
ক. সর্ব যুগে কাফির ও মুনাফিকদের শাস্তির কারণ একটিই। আর তা হলো দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়া ও তা ভোগে মত্ত হওয়া এবং নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ, তাঁদের সাথে গাদ্দারি, ষড়যন্ত্র ও তাঁদেরকে ধোঁকা দেয়া।

• إهلاك الأمم والأقوام الغابرة بسبب كفرهم وتكذيبهم الأنبياء فيه عظة وعبرة للمعتبر من العقلاء.
খ. কুফরি ও নবীদের প্রতি মিথ্যারোপের কারণে পূর্ববর্তী জাতি ও জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেয়ার মাঝে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও উপদেশ রয়েছে।

• أهل الإيمان رجالًا ونساء أمة واحدة مترابطة متعاونة متناصرة، قلوبهم متحدة في التوادّ والتحابّ والتعاطف.
গ. ঈমানদার পুরুষ-মহিলা সবাই শক্তিশালী, পরস্পর সহযোগী ও সাহায্যকারী এবং একই দলভুক্ত। ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় তাদের হৃদয়গুলো সব একই।

• رضا رب الأرض والسماوات أكبر من نعيم الجنات؛ لأن السعادة الروحانية أفضل من الجسمانية.
ঘ. আসমান ও জমিনের মালিকের সন্তুষ্টি জান্নাতের নিয়ামতের চেয়েও বড়। কারণ, আত্মিক প্রশান্তি শারীরিক প্রশান্তির চেয়ে অনেকগুণ শ্রেষ্ঠ।

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡۚ وَمَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ
৭৩. হে রাসূল! আপনি কাফিরদের সাথে তলোয়ার দিয়ে এবং মুনাফিকদের সাথে মুখ ও প্রমাণ দিয়ে যুদ্ধ করুন। তবে উভয় দলের সাথেই কঠিন আচরণ করুন। কারণ, তারা এরই উপযুক্ত। আর কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থান হবে জাহান্নাম। বস্তুতঃ তাদের পরিণতি কতোই না নিকৃষ্ট।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدۡ قَالُواْ كَلِمَةَ ٱلۡكُفۡرِ وَكَفَرُواْ بَعۡدَ إِسۡلَٰمِهِمۡ وَهَمُّواْ بِمَا لَمۡ يَنَالُواْۚ وَمَا نَقَمُوٓاْ إِلَّآ أَنۡ أَغۡنَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ مِن فَضۡلِهِۦۚ فَإِن يَتُوبُواْ يَكُ خَيۡرٗا لَّهُمۡۖ وَإِن يَتَوَلَّوۡاْ يُعَذِّبۡهُمُ ٱللَّهُ عَذَابًا أَلِيمٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَمَا لَهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٖ
৭৪. মুনাফিকরা আল্লাহর উপর মিথ্যা কসম খেয়ে বলবে: তাদের ব্যাপারে আপনাকে গালি দেয়া ও আপনার ধর্মকে নিন্দা করা বিষয়ক যে সংবাদ আপনার নিকট পৌঁছেছে তা তারা বলেনি। অথচ তাদের ব্যাপারে যে কুফরি কথা আপনার নিকট পৌঁছেছে তারা তা নিশ্চয়ই বলেছে। বরং তারা ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরি করেছে। নিশ্চয়ই তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিলো। তবে সে ব্যাপারে তারা সফল হতে পারেনি। বস্তুতঃ যা অস্বীকার করা সম্ভব নয় তারা তাই অস্বীকার করেছে। সেটি হলো আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে তাদেরকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের প্রতি অমুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। যা মূলতঃ তিনি তাঁর নবীকে দান করেছেন। সুতরাং তারা যদি আল্লাহর নিকট তাদের মুনাফিকী থেকে তাওবা করে নেয় তাহলে তাদের এ তাওবা মুনাফিকীর উপর অটল থাকার চেয়ে অনেক ভালো। আর যদি তারা আল্লাহর নিকট তাওবা করা থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতে হত্যা ও বন্দীদশার মাধ্যমে এবং আখিরাতে জাহান্নামের আগুনের মাধ্যমে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন। সেদিন তাদের জন্য কোন অভিভাবক থাকবে না যে তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করবে। আর না আযাবকে প্রতিরোধ করার জন্য তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَمِنۡهُم مَّنۡ عَٰهَدَ ٱللَّهَ لَئِنۡ ءَاتَىٰنَا مِن فَضۡلِهِۦ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ
৭৫. মুনাফিকদের কেউ কেউ আল্লাহর নিকট এ বলে ওয়াদা করেছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যদি আমাদেরকে অনুগ্রহ করেন তাহলে আমরা গরিবদেরকে দান করবো এবং আমরা সঠিক কর্ম সম্পাদনকারী নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُم مِّن فَضۡلِهِۦ بَخِلُواْ بِهِۦ وَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعۡرِضُونَ
৭৬. বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে অনুগ্রহ করলেন তখন তারা নিজেদের কৃত ওয়াদা রক্ষা করেনি। বরং তারা সম্পদকে আটকে রেখেছে; তা থেকে কোন দান তারা করে নি। উপরন্তু তারা ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পশ্চাদগামী হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَعۡقَبَهُمۡ نِفَاقٗا فِي قُلُوبِهِمۡ إِلَىٰ يَوۡمِ يَلۡقَوۡنَهُۥ بِمَآ أَخۡلَفُواْ ٱللَّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ
৭৭. তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ ও মিথ্যা বলার শাস্তি স্বরূপ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অন্তরে স্থায়ী মুনাফিকীর চ‚ড়ান্ত ব্যবস্থা করলেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ سِرَّهُمۡ وَنَجۡوَىٰهُمۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ
৭৮. মুনাফিকরা কি জানে না যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের মজলিসের গোপন ষড়যন্ত্র ও ধোঁকাবাজী সম্পর্কে ভালোই জানেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা গায়েব সম্পর্কে সবজান্তা। তাঁর নিকট তাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এর শাস্তি দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِينَ يَلۡمِزُونَ ٱلۡمُطَّوِّعِينَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ وَٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُونَ مِنۡهُمۡ سَخِرَ ٱللَّهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ
৭৯. যারা মু’মিনদের মধ্যকার স্বেচ্ছামূলক দানকারীদেরকে সামান্য দানের জন্য দোষারোপ করে। মু’মিনদের মধ্যে এমন স্বেচ্ছামূলক দানকারী আছে যাদের দান স্বল্প। অথচ তা তাদের সাধ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ। যারা ওদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করে বলে: তোমাদের এ সাদাকা কী উপকারে আসবে?! আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করার দরুন তাদের ঠাট্টার প্রতিশোধ নিবেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• وجوب جهاد الكفار والمنافقين، فجهاد الكفار باليد وسائر أنواع الأسلحة الحربية، وجهاد المنافقين بالحجة واللسان.
ক. কাফির ও মুনাফিকদের সাথে প্রয়োজনে যুদ্ধ করা ওয়াজিব। কাফিরদের সাথে যুদ্ধ হবে হাত ও সকল প্রকারের যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে। আর মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ হবে মুখ দিয়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে।

• المنافقون من شرّ الناس؛ لأنهم غادرون يقابلون الإحسان بالإساءة.
খ. মুনাফিকরা সর্বনিকৃষ্ট মানুষ। কারণ, তারা গাদ্দার। দয়া ও দানের বিপরীতে তারা দাতার সাথে অসদাচরণ করে।

• في الآيات دلالة على أن نقض العهد وإخلاف الوعد يورث النفاق، فيجب على المسلم أن يبالغ في الاحتراز عنه.
গ. উক্ত আয়াতগুলোতে এ প্রমাণ রয়েছে যে, অঙ্গীকার ভঙ্গ ও ওয়াদা খেলাফ করা মুনাফিকী সৃষ্টি করে। তাই একজন মুসলমানের উচিত তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভালোভাবে চেষ্টা করা।

• في الآيات ثناء على قوة البدن والعمل، وأنها تقوم مقام المال، وهذا أصل عظيم في اعتبار أصول الثروة العامة والتنويه بشأن العامل.
ঘ. উক্ত আয়াতসমূহে শারীরিক শক্তি ও কর্মোদ্যমের প্রশংসা করা হয়েছে। যা সম্পদের স্থলাভিষিক্ত। এটি জাতীয় সম্পদের নিয়মাবলী ও কর্মচারীর ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় সূত্র।

ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ
৮০. হে রাসূল! আপনি তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চান বা নাই চান এমনকি আপনি যদি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা চান তাতেও তাদের কোন লাভ হবে না। কারণ, তারা আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দা নয়। তা এ জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শরীয়ত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বেরিয়ে আসা লোকদেরকে সত্য গ্রহণের তাওফীক দেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَرِحَ ٱلۡمُخَلَّفُونَ بِمَقۡعَدِهِمۡ خِلَٰفَ رَسُولِ ٱللَّهِ وَكَرِهُوٓاْ أَن يُجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَقَالُواْ لَا تَنفِرُواْ فِي ٱلۡحَرِّۗ قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرّٗاۚ لَّوۡ كَانُواْ يَفۡقَهُونَ
৮১. তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে না গিয়ে খুবই খুশি। মু’মিনগণ যেভাবে আল্লাহর পথে নিজেদের জান-মাল নিয়ে যুদ্ধ করে সেভাবে মুনাফিকরা যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। এমনকি তারা নিজেদের অন্য মুনাফিক ভাইদেরকেও নিরুৎসাহিত করতে গিয়ে বলে: তোমরা গরমের মধ্যে সফর করো না। আর তাবুক যুদ্ধ ছিলো গরমের সময়ে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: জাহান্নামের আগুন যা মুনাফিকদের জন্য অপেক্ষা করছে তা এ গরম থেকে আরো অধিক বেশি গরম। হায়! যদি তারা বুঝতো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلۡيَضۡحَكُواْ قَلِيلٗا وَلۡيَبۡكُواْ كَثِيرٗا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ
৮২. যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা এ নশ্বর দুনিয়ার জীবনে একটুখানি হেসে নিক। তবে তাদেরকে আখিরাতের স্থায়ী জীবনে বেশি করে কাঁদতে হবে। যা হবে দুনিয়ার জীবনে তাদের অর্জনকৃত কুফরি, গুনাহ ও পাপরাশির প্রতিদান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِن رَّجَعَكَ ٱللَّهُ إِلَىٰ طَآئِفَةٖ مِّنۡهُمۡ فَٱسۡتَـٔۡذَنُوكَ لِلۡخُرُوجِ فَقُل لَّن تَخۡرُجُواْ مَعِيَ أَبَدٗا وَلَن تُقَٰتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّاۖ إِنَّكُمۡ رَضِيتُم بِٱلۡقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٖ فَٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡخَٰلِفِينَ
৮৩. হে নবী! আল্লাহ তা‘আলা যদি আপনাকে মুনাফিকীর উপর অটল এমন কোন মুনাফিক দলের নিকট ফিরিয়ে আনে অতঃপর তারা আপনার সাথে অন্য যুদ্ধে বের হওয়ার অনুমতি চায় তাহলে আপনি তাদেরকে বলে দিন: হে মুনাফিকরা! তোমরা কখনো আমার সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বের হয়ো না। যা তোমাদের জন্য শাস্তি স্বরূপ এবং আমার সাথে তোমাদের অবস্থানের দরুন যে ফাসাদগুলো বর্তাবে তা থেকে বাঁচার জন্য। তোমরা তো তাবুক যুদ্ধে না গিয়ে এবং তা থেকে পিছিয়ে পড়ে অনেক খুশি। তাই তোমরা পিছিয়ে পড়া অসুস্থ, মহিলা ও বচ্চাদের সাথে অবস্থান করো ও বসে থাকো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓۖ إِنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَمَاتُواْ وَهُمۡ فَٰسِقُونَ
৮৪. হে রাসূল! আপনি কখনো মৃত কোন মুনাফিকের জানাযার নামায পড়বেন না। না তার কবরের নিকট তার মাগফিরাতের দু‘আর জন্য দাঁড়াবেন। কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে। উপরন্তু তারা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। আর যার অবস্থা এমন হবে তার জন্য কোন নামায নেই এবং দু‘আও নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا تُعۡجِبۡكَ أَمۡوَٰلُهُمۡ وَأَوۡلَٰدُهُمۡۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُعَذِّبَهُم بِهَا فِي ٱلدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ أَنفُسُهُمۡ وَهُمۡ كَٰفِرُونَ
৮৫. হে রাসূল! এ মুনাফিকদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে আশ্চর্যান্বিত না করে। দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এরই মাধ্যমে শাস্তি দিতে চান। মূলতঃ তা হলো তারা এ পথে যে কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা যে বিপদাপদের সম্মুখীন হচ্ছে তাই। আর আল্লাহ তা‘আলা এটাও চান যে, কুফরি অবস্থায় যেন তাদের রূহগুলো তাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِذَآ أُنزِلَتۡ سُورَةٌ أَنۡ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَجَٰهِدُواْ مَعَ رَسُولِهِ ٱسۡتَـٔۡذَنَكَ أُوْلُواْ ٱلطَّوۡلِ مِنۡهُمۡ وَقَالُواْ ذَرۡنَا نَكُن مَّعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ
৮৬. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর এমন কোন সূরা নাযিল করেন যাতে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর পথে জিহাদের আদেশ রয়েছে তখন তাদের মধ্যকার ধনী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা আপনার কাছ থেকে সরে যাওয়ার অনুমতি চায় এবং তারা বলে: আপনি আমাদেরকে রেহাই দিন। আমরা দুর্বল ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সাথে পেছনেই থেকে যাই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الكافر لا ينفعه الاستغفار ولا العمل ما دام كافرًا.
ক. ইস্তিগফার ও আমল কাফিরদের কোন উপকারে আসবে না যতক্ষণ সে কাফির থাকে।

• الآيات تدل على قصر نظر الإنسان، فهو ينظر غالبًا إلى الحال والواقع الذي هو فيه، ولا ينظر إلى المستقبل وما يتَمَخَّض عنه من أحداث.
খ. আয়াতগুলোতে মানুষের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণের কথাই বলা হয়েছে। সে অধিকাংশ সময় উপস্থিত ও বাস্তবতার দিকে তাকায়। সে কখনো ভবিষ্যত এবং ঘটনার শেষ পরিণতির কথা ভেবে দেখে না।

• التهاون بالطاعة إذا حضر وقتها سبب لعقوبة الله وتثبيطه للعبد عن فعلها وفضلها.
গ. আনুগত্য প্রকাশের সময় যখন এসে যায় তখন তাতে অলসতা করা আল্লাহর শাস্তিতে পতিত হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

• في الآيات دليل على مشروعية الصلاة على المؤمنين، وزيارة قبورهم والدعاء لهم بعد موتهم، كما كان النبي صلى الله عليه وسلم يفعل ذلك في المؤمنين.
ঘ. আয়াতগুলোর মাঝে মু’মিনদের উপর জানাযার নামায পড়া এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের কবর যিয়ারত করা ও তাদের জন্য দু‘আ করার প্রমাণ রয়েছে। যেমনটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মু’মিনদের সাথে করতেন।

رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ ٱلۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ
৮৭. এ মুনাফিকরা যখন দুর্বল ও অক্ষমদের সাথে পেছনে থাকতে সন্তুষ্ট তখন তারা নিজেদের লাঞ্ছনা এবং অবমাননা নিয়েও সন্তুষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুফরি ও মুনাফিকীর দরুন তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। তাই তারা নিজেদের প্রকৃত লাভের বিষয়গুলোও জানে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَٰكِنِ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ جَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡخَيۡرَٰتُۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ
৮৮. তবে রাসূল ও তাঁর সাথী মু’মিনরা ওদের ন্যায় আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছপা হয়নি। তারা নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। ফলে আল্লাহর নিকট তাদের প্রতিদান স্বরূপ ছিলো দুনিয়ার লাভ হাসিল তথা বিজয় ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ এবং আখিরাতের লাভ হাসিল তথা জান্নাতে প্রবেশ করা উপরন্তু তাদের কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য হাসিল ও আশঙ্কা থেকে মুক্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
৮৯. আরো আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য এমন জান্নাত তৈরি রেখেছেন যার অট্টালিকাসমূহের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত। তাতে তারা চিরকাল থাকবে। কখনো তারা ধ্বংস হবে না। এ প্রতিদান মূলতঃ সর্বোচ্চ সফলতা যার নিকটবর্তী আর কোন সফলতা নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَآءَ ٱلۡمُعَذِّرُونَ مِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ لِيُؤۡذَنَ لَهُمۡ وَقَعَدَ ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥۚ سَيُصِيبُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ
৯০. এদিকে মদীনা ও তার আশপাশের বেদুঈনদের একটি গোষ্ঠী আল্লাহর রাসূলের নিকট এসে নিজেদের ওজর-আপত্তি জানিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ না করার অনুমতি চেয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি দলও যুদ্ধে যায়নি। তবে তারা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য কোন ওজর-আপত্তি পেশ করেনি। কারণ, তারা নবী এবং আল্লাহর ওয়াদাকে বিশ্বাস করতো না। এরা অচিরেই তাদের কুফরির দরুন অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّيۡسَ عَلَى ٱلضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرۡضَىٰ وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُواْ لِلَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ مِن سَبِيلٖۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৯১. তবে মহিলা, শিশু, অসুস্থ, অক্ষম, অন্ধ ও ফকির যারা যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য কোন সম্পদ খুঁজে পাচ্ছে না তাদের উপর কোন যুদ্ধ নেই। এদের কারো উপর যুদ্ধে না যাওয়ার কোন গুনাহ নেই। কারণ, তাদের আপত্তিগুলো যথাযথ। যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নিষ্ঠাবান হয় এবং তাঁর দেয়া শরীয়তের উপর আমল করে। এ জাতীয় আপত্তি পেশকারী নিষ্ঠাবানদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা নিষ্ঠাবানদের গুনাহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَآ أَجِدُ مَآ أَحۡمِلُكُمۡ عَلَيۡهِ تَوَلَّواْ وَّأَعۡيُنُهُمۡ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمۡعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُواْ مَا يُنفِقُونَ
৯২. তেমনিভাবে আপনার সাথে যুদ্ধে না যাওয়া ওই লোকদেরও কোন গুনাহ নেই যারা আপনার নিকট এসে যুদ্ধের বাহন হিসেবে আপনার নিকট কোন পশু তলব করেছে। আর আপনি তাদেরকে বলেছেন: আমি এমন কোন পশু পাচ্ছি না যা তোমাদেরকে বাহন হিসেবে দেবো। তখন তারা আপনার কাছ থেকে চলে গেলো। অথচ তাদের চোখগুলো থেকে অশ্রæ গড়িয়ে পড়ছিলো। এ দুঃখে যে, তারা খরচ করার মতো না নিজেদের কাছে কোন কিছু পেয়েছে, না আপনার কাছে। যখন আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করলেন যে, ওজরওয়ালাদেরকে শাস্তি দেয়ার কোন সুযোগ নেই তখন তিনি পাকড়াও ও শাস্তির উপযুক্তদের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন:
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَسۡتَـٔۡذِنُونَكَ وَهُمۡ أَغۡنِيَآءُۚ رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ ٱلۡخَوَالِفِ وَطَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ
৯৩. যারা আপনার নিকট জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে; অথচ তারা তা করতে সক্ষম তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত। কারণ, তাদের নিকট প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ ও ব্যবস্থা ছিলো। তারা নিজেদের ব্যাপারে লাঞ্ছনা ও অবমাননায় সন্তুষ্ট। তারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট যে, তারা পেছনে পড়া লোকদের সাথে নিজেদের ঘরেই অবস্থান করবে। মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। তাই কোন উপদেশ তাতে কাজ করে না। আর এ মোহরের কারণেই তারা জানে না যে, কোন জিনিসে তাদের জন্য ফায়েদা রয়েছে, ফলে তারা তা গ্রহণ করবে আর কোন জিনিসে তাদের বিপদ রয়েছে ফলে তারা তা বর্জন করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• المجاهدون سيحصِّلون الخيرات في الدنيا، وإن فاتهم هذا فلهم الفوز بالجنة والنجاة من العذاب في الآخرة.
ক. মুজাহিদরা অচিরেই দুনিয়ার কল্যাণ হাসিল করবে। আর যদি তা তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে তাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে জান্নাত পাওয়ার সফলতা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি।

• الأصل أن المحسن إلى الناس تكرمًا منه لا يؤاخَذ إن وقع منه تقصير.
খ. আসল নিয়ম হচ্ছে, স্বেচ্ছায় সাহায্য-সহযোগিতাকারীর মাঝে কোন ত্রæটি পাওয়া গেলে সে জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।

• أن من نوى الخير، واقترن بنيته الجازمة سَعْيٌ فيما يقدر عليه، ثم لم يقدر- فإنه يُنَزَّل مَنْزِلة الفاعل له.
গ. যে ব্যক্তি কল্যাণের নিয়্যাত করে এবং তার পরিপক্ক নিয়্যাতের পাশাপাশি তা সম্পাদন করার সাধ্যমতো চেষ্টা করার পরও যদি সে তা করতে না পারে তাহলে তার এ চেষ্টার দরুন তাকে উক্ত কল্যাণ সম্পাদনকারী হিসেবেই ধরে নেয়া হবে।

• الإسلام دين عدل ومنطق؛ لذلك أوجب العقوبة والمأثم على المنافقين المستأذنين وهم أغنياء ذوو قدرة على الجهاد بالمال والنفس.
ঘ. ইসলাম হলো একটি ইনসাফ ও বিবেচনা প্রসূত ধর্ম। এ জন্য সে গুনাহ ও শাস্তি সেই মুনাফিকদের উপরই অবধারিত করেছে যারা নিজেদের জান ও মাল নিয়ে জিহাদ করার শক্তি ও সামর্থ্য রাখার পরও জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি কামনা করে।

يَعۡتَذِرُونَ إِلَيۡكُمۡ إِذَا رَجَعۡتُمۡ إِلَيۡهِمۡۚ قُل لَّا تَعۡتَذِرُواْ لَن نُّؤۡمِنَ لَكُمۡ قَدۡ نَبَّأَنَا ٱللَّهُ مِنۡ أَخۡبَارِكُمۡۚ وَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُولُهُۥ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ
৯৪. মুসলমানরা যখন জিহাদ থেকে ফিরে আসবে তখন জিহাদ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা তাদের সামনে অনেকগুলো অহেতুক কৈফিয়ত পেশ করবে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ও মু’মিনদেরকে এর প্রতিউত্তর শিখিয়ে দিলেন যে, তোমরা বলবে: তোমরা এ সকল মিথ্যা ওজর পেশ করো না। আমরা কখনো তোমাদের এ সকল সংবাদ বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরের কিছু কথা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল অচিরেই দেখবেন, তোমরা কি দ্রæত তাওবা করছো? তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তাওবা কবুল করবেন। না কি তোমরা নিজেদের মুনাফিকীর উপর অটল থাকছো? এরপর তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। যিনি সব কিছু জানেন। ফলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং তার প্রতিদান দিবেন। তাই তোমরা দ্রæত তাওবা ও নেক আমল করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ إِذَا ٱنقَلَبۡتُمۡ إِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ فَأَعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ إِنَّهُمۡ رِجۡسٞۖ وَمَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ
৯৫. হে মু’মিনগণ! তোমরা ফিরে আসলে এ পিছপা হওয়া মুনাফিকরা তাদের মিথ্যা অজুহাতগুলোকে মজবুত করার জন্য অচিরেই আল্লাহর নামে কসম খাবে। যাতে তোমরা তাদেরকে তিরস্কার ও নিন্দা করা থেকে বিরত থাকো। তোমরা ক্ষোভ সহকারে তাদেরকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করো। তারা নাপাক ও তাদের ভেতর খারাপ। যে ঠিকানায় তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হবে জাহান্নাম। আর তা হবে তাদের কামাই করা গুনাহ ও মুনাফিকীর প্রতিদান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَحۡلِفُونَ لَكُمۡ لِتَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡۖ فَإِن تَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَرۡضَىٰ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡفَٰسِقِينَ
৯৬. হে মু’মিনরা! এ পিছপা হওয়া মুনাফিকরা তোমাদের নিকট কসম খাবে যেন তোমরা তাদের উপর খুশি হয়ে যাও এবং তাদের ওজর-আপত্তিগুলো গ্রহণ করো। তোমরা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ো না। তোমরা তাদের উপর সন্তুষ্ট হলে প্রকৃতার্থে তোমাদের প্রতিপালকের বিরোধিতা করা হবে। কারণ, তিনি কুফরি ও মুনাফিকীর মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসা সম্প্রদায়ের উপর খুশি হন না। তাই হে মুসলমানরা! যার উপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট নন তার উপর সন্তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারে তোমরা খুব সতর্ক থাকো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلۡأَعۡرَابُ أَشَدُّ كُفۡرٗا وَنِفَاقٗا وَأَجۡدَرُ أَلَّا يَعۡلَمُواْ حُدُودَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
৯৭. বেদুঈনরা কাফির ও মুনাফিক হলে তাদের কুফরি ও মুনাফিকী শহরবাসীদের কুফরি ও মুনাফিকীর চেয়ে খুবই মারাত্মক হয়। ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাই তাদের জন্য স্বাভাবিক। তেমনিভাবে এটাও স্বাভাবিক যে, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত ফরয, সুন্নাত এবং বিধানগত সূত্রাবলী সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হবে। কারণ, তাদের মাঝে রয়েছে কঠোরতা, লোকসমাজ থেকে দূরে থাকা ও তাদের সাথে না মেশা। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালোই জানেন। তাঁর নিকট তাদের কোন অবস্থাই গোপন নয়। তিনি তাঁর পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغۡرَمٗا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ ٱلدَّوَآئِرَۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ
৯৮. কিছু কিছু বেদুঈন মুনাফিক এ কথা বিশ্বাস করে যে, সে যে সম্পদটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় করে তা সবই বস্তুতঃ ক্ষতির কারণ ও জরিমানা স্বরূপ। কারণ, সে মনে করে, কিছু দান করলে তাকে সাওয়াব দেয়া হবে না এবং কৃপণতা দেখালেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিবেন না। তবুও সে কখনো কখনো মানুষের কট‚ কথার ভয়ে এবং লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। হে মু’মিনরা! সে অপেক্ষা করে যে, তোমাদের উপর কোন অকল্যাণ নাযিল হোক তাহলে সে তোমাদের থেকে নিষ্কৃতি পাবে। বরং তারা যে মু’মিনদের উপর সময়ের অশুভ পরিবর্তন এবং অকল্যাণ পতিত হওয়ার আশা করছিলো আল্লাহ তা‘আলা তা মু’মিনদের উপর পতিত না করে তাদের উপরই পতিত করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সব কথাই শুনেন এবং তাদের গোপন সকল ভাবনাই তিনি জানেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَٰتٍ عِندَ ٱللَّهِ وَصَلَوَٰتِ ٱلرَّسُولِۚ أَلَآ إِنَّهَا قُرۡبَةٞ لَّهُمۡۚ سَيُدۡخِلُهُمُ ٱللَّهُ فِي رَحۡمَتِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৯৯. বেদুঈনদের কেউ কেউ আবার আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামতের দিবসে বিশ্বাস করে এবং সে যে সম্পদটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় করে তা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একটি সাওয়াবের কাজ এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু‘আ ও ইস্তিগফার পাওয়ার উসিলা বলে মনে করে। বস্তুতঃ আল্লাহর পথে ব্যয় ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু‘আ আল্লাহর নিকট সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। সে অচিরেই তাঁর নিকট সে সাওয়াব পাবে তথা আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর সুপ্রশস্ত রহমতের ছায়াতলে প্রবেশ করাবেন। যা তাঁর ক্ষমা ও জান্নাতকে শামিল করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• ميدان العمل والتكاليف خير شاهد على إظهار كذب المنافقين من صدقهم.
ক. আমল ও বিধানগত বাধ্যবাধকতার ময়দান মুনাফিকদের সত্য থেকে মিথ্যা প্রকাশের এক উত্তম সাক্ষী।

• أهل البادية إن كفروا فهم أشد كفرًا ونفاقًا من أهل الحضر؛ لتأثير البيئة.
খ. বেদুঈনরা যদি কুফরি করে তাহলে তারা কুফরি ও মুনাফিকীর ক্ষেত্রে শহরবাসীদের চেয়েও কঠিন হয়। এটি মূলতঃ পরিবেশগত প্রভাবের কারণে।

• الحض على النفقة في سبيل الله مع إخلاص النية، وعظم أجر من فعل ذلك.
গ. নিয়তকে খাঁটি রেখে আল্লাহর পথে ব্যয় করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং যে ব্যক্তি তা করবে সে মহা সাওয়াবের মালিক হবে।

• فضيلة العلم، وأن فاقده أقرب إلى الخطأ.
ঘ. জ্ঞানের ফযীলত অনেক। যার কাছে তা নেই সে ভুলের অতি নিকটবর্তী।

وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
১০০. মুহাজির তথা যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে এবং আনসার তথা যারা তাঁর নবী ও মুহাজিরদেরকে সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম দ্রæত ঈমান এনেছে এবং যারা নিষ্ঠার সাথে বিশ্বাস, কথা ও কাজে ঈমানে অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনসারীদের অনুসরণ করেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আনুগত্য ও ধার্মিকতা কবুল করেছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। কারণ, তিনি তাদেরকে তাঁর মহা প্রতিদান দিয়েছেন এবং তাদের জন্য তৈরি করেছেন এমন জান্নাতসমূহ যেগুলোর অট্টালিকাসমূহের তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে অনেকগুলো নদী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ প্রতিদান মূলতঃ মহান সফলতা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمِمَّنۡ حَوۡلَكُم مِّنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مُنَٰفِقُونَۖ وَمِنۡ أَهۡلِ ٱلۡمَدِينَةِ مَرَدُواْ عَلَى ٱلنِّفَاقِ لَا تَعۡلَمُهُمۡۖ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡۚ سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيۡنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٖ
১০১. মদিনার আশপাশের কিছু বেদুঈনও মুনাফিক এবং মদীনার কিছু অধিবাসীও মুনাফিক। যারা মুনাফিকীর উপর অটল ও অবিচল। যাদেরকে হে রাসূল! আপনি চিনেন না, তবে আল্লাহ তাদেরকে চিনেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিবেন। একবার দুনিয়াতে যা তাদের মুনাফিকী প্রকাশ করে এবং তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করার কারণ হয়। আরেকবার আখিরাতে কবরের শাস্তির মাধ্যমে। অতঃপর তাদেরকে কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের তলদেশের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَءَاخَرُونَ ٱعۡتَرَفُواْ بِذُنُوبِهِمۡ خَلَطُواْ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَءَاخَرَ سَيِّئًا عَسَى ٱللَّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٌ
১০২. মদীনাবাসীদের আরেকটি গোষ্ঠী কোন ওজর ছাড়াই যুদ্ধে যায়নি। তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে যে, নিশ্চয়ই তাদের কোন ওজর ছিলো না এবং তারা কোন মিথ্যা ওজরও পেশ করেনি। বরং তারা নিজেদের পূর্বের নেক আমলসমূহ তথা আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁর শরীয়তকে আঁকড়ে ধরা এবং তাঁর পথে জিহাদ করাকে একটি খারাপ আমলের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। তবে তারা আল্লাহর নিকট তাওবা কবুল হওয়া ও ক্ষমার আশা করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
১০৩. হে রাসূল! আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিন। যার মাধ্যমে আপনি তাদেরকে গুনাহ ও পাপরাশির ময়লা থেকে পবিত্র করবেন এবং তাদের পুণ্য বাড়িয়ে দিবেন। উপরন্তু তা গ্রহণের পর তাদের জন্য দু‘আ করুন। কারণ, আপনার দু‘আ তাদের জন্য রহমত ও প্রশান্তি স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা আপনার দু’আ শুনছেন এবং তিনি তাদের কর্মকাÐ ও নিয়্যাত সম্পর্কে ভালোই জানেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
১০৪. জিহাদ থেকে পিছপা হওয়া এবং আল্লাহর নিকট তাওবাকারী লোকেরা জেনে রাখুক যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের তাওবা ও সাদাকা কবুল করেন। অথচ তিনি সেগুলোর অমুখাপেক্ষী। তবে তিনি সাদাকাকারীর সাদাকার সাওয়াব দিয়ে দেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের তাওবা কবুল ও তাদের প্রতি দয়া করেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقُلِ ٱعۡمَلُواْ فَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُولُهُۥ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۖ وَسَتُرَدُّونَ إِلَىٰ عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ
১০৫. হে রাসূল! আপনি জিহাদ থেকে পিছিয়ে পড়া এবং নিজেদের পাপ থেকে তাওবাকারীদেরকে বলে দিন, তোমরা নিজেদের পূর্বের ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করো এবং নিজেদের আমলগুলো আল্লাহর জন্য নিষ্ঠার সাথে ও তাঁর সন্তুষ্টি মাফিক করো। অচিরেই আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ তোমাদের আমলগুলো দেখবেন এবং অচিরেই তোমাদেরকে নিজেদের সর্বজ্ঞ প্রতিপালকের নিকট উত্থিত করা হবে। তিনি তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে তোমাদের দুনিয়ার সমূহ কর্মকাÐ জানিয়ে দিবেন এবং তার প্রতিদানও দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَءَاخَرُونَ مُرۡجَوۡنَ لِأَمۡرِ ٱللَّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمۡ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيۡهِمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
১০৬. তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া আরেকটি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের কোন ওজর ছিলো না। এদের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহর বিধান ও ফায়সালার জন্য। তিনি যা চান তাদের ব্যাপারে ফায়সালা করবেন। তারা তাওবা না করলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন। আর তাওবা করলে তাদের তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই জানেন, কে তাঁর শাস্তির উপযুক্ত আর কে তাঁর ক্ষমার উপযুক্ত। তিনি তাঁর শরীয়ত ও পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়। আর তারা হলো, মুরারাহ ইবনুর-রাবী’, কা’ব ইবনু মালিক ও হিলাল ইবনু উমাইয়াহ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• فضل المسارعة إلى الإيمان، والهجرة في سبيل الله، ونصرة الدين، واتباع طريق السلف الصالح.
ক. ধর্মের প্রতি দ্রæত অগ্রসর হওয়া, আল্লাহর পথে হিজরত করা, ধর্মের সহযোগিতা করা ও সালাফে সালিহীনের মত ও পন্থা অনুসরণের ফযীলত।

• استئثار الله عز وجل بعلم الغيب، فلا يعلم أحد ما في القلوب إلا الله.
খ. আল্লাহ তা‘আলা গায়েবের জ্ঞানের ব্যাপারটি নিজের জন্য বিশেষভাবে রেখেছেন। তাই কারো অন্তরের ব্যাপার আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।

• الرجاء لأهل المعاصي من المؤمنين بتوبة الله عليهم ومغفرته لهم إن تابوا وأصلحوا عملهم.
গ. মু’মিন পাপীদের ব্যাপারে আশা করা যায় যে, তারা তাওবা ও নিজেদের আমলগুলো শুদ্ধ করে নিলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা কবুল করবেন ও তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

• وجوب الزكاة وبيان فضلها وأثرها في تنمية المال وتطهير النفوس من البخل وغيره من الآفات.
ঘ. যাকাতের আবশ্যকতা ও তার ফযীলতের বয়ান উপরন্তু সম্পদ বৃদ্ধি ও কৃপণতা ইত্যাদির দোষ থেকে অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করার প্রভাবের বর্ণনা।

وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مَسۡجِدٗا ضِرَارٗا وَكُفۡرٗا وَتَفۡرِيقَۢا بَيۡنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَإِرۡصَادٗا لِّمَنۡ حَارَبَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ مِن قَبۡلُۚ وَلَيَحۡلِفُنَّ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّا ٱلۡحُسۡنَىٰۖ وَٱللَّهُ يَشۡهَدُ إِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ
১০৭. মুনাফিকদের কেউ কেউ মসজিদ তৈরি করেছে আল্লাহর আনুগত্যের জন্য নয়। বরং তা মুসলমানদের ক্ষতি, মুনাফিকদেরকে শক্তিশালী করে কুফরি প্রকাশ, মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি এবং মসজিদ তৈরির আগ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ কারীদের জন্য অপেক্ষা ও প্রস্তুতির মানসে তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই এ মুনাফিকরা তোমাদের সামনে কসম করে বলবে: আমরা কেবল এরই মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি দয়া করারই ইচ্ছা পোষণ করেছি। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের এ দাবিতে চরম মিথ্যুক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا تَقُمۡ فِيهِ أَبَدٗاۚ لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ
১০৮. হে নবী! এ ধরনের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য মুনাফিকরা আপনাকে ডাকলে আপনি সাড়া দিবেন না। কারণ, মসজিদে ক্বুবার প্রথম ভিত্তিই হয় আল্লাহভীতির উপর। তাতে সালাত আদায় কুফরির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। মসজিদে ক্বুবায় এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পানি দিয়ে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নাপাক থেকে এবং তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সকল পাপ থেকে পবিত্রতা অর্জন করা পছন্দ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নাপাক এবং গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَمَنۡ أَسَّسَ بُنۡيَٰنَهُۥ عَلَىٰ تَقۡوَىٰ مِنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٍ خَيۡرٌ أَم مَّنۡ أَسَّسَ بُنۡيَٰنَهُۥ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٖ فَٱنۡهَارَ بِهِۦ فِي نَارِ جَهَنَّمَۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ
১০৯. যে নিজের ভিত্তিটুকু স্থাপন করলো আল্লাহভীতির উপর তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে এবং বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সেকি ওর সমান হতে পারে যে মসজিদ বানিয়েছে মুসলমানদের ক্ষতি, কুফরিকে শক্তিশালী ও মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির জন্য?! না তারা উভয়ে কখনো এক সমান হতে পারে না। কারণ, প্রথম জনের ভিত্তি খুবই শক্তিশালী যা পড়ে যাওয়ার কোন আশঙ্কাই নেই। আর এর দৃষ্টান্ত হলো তার ন্যায় যে কোন একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে গর্তের পাড়ে অতঃপর তা ভেঙ্গে পড়ে গেলো। ফলে তার ভিত্তি তাকে নিয়েই জাহান্নামের গভীরে পতিত হলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কুফরি, মুনাফিকী ইত্যাদির মাধ্যমে যুলুমকারী সম্প্রদায়কে ভালো কাজের তাওফীক দেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا يَزَالُ بُنۡيَٰنُهُمُ ٱلَّذِي بَنَوۡاْ رِيبَةٗ فِي قُلُوبِهِمۡ إِلَّآ أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
১১০. ক্ষতির জন্য তৈরি মসজিদ তাদের অন্তরে স্থায়ী সন্দেহ ও মুনাফিকী সৃষ্টি করবে। যতক্ষণ না মৃত্যু অথবা তলোয়ারের আঘাতে তাদের অন্তরগুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মকাÐ ভালোই জানেন। তিনি ভালো-মন্দের প্রতিদানের ফায়সালা বিষয়ে অতি প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
১১১. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে মু’মিনদের থেকে বেশি দাম তথা জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জীবন ক্রয় করেছেন। ফলে তারা আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার জন্য কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে। তাতে তারা কাফিরদেরকে হত্যা করবে এবং কাফিররাও তাদেরকে হত্যা করবে। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে দেয়া তাওরাতে, ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে দেয়া ইঞ্জীলে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেয়া কুর‘আনে এ ব্যাপারে সত্য ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি অঙ্গীকার পূর্ণকারী আর কেউ নেই। তাই হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর সাথে যে ক্রয়-বিক্রির চুক্তি করেছো সেই চুক্তি নিয়ে খুশি ও আনন্দিত হও। কারণ, তাতে তোমরা বিপুল লাভ করেছো। আর এ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সত্যিই মহা সফলতা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• محبة الله ثابتة للمتطهرين من الأنجاس البدنية والروحية.
ক. শারীরিক ও রূহানী নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা সুনির্ধারিত।

• لا يستوي من عمل عملًا قصد به وجه الله؛ فهذا العمل هو الذي سيبقى ويسعد به صاحبه، مع من قصد بعمله نصرة الكفر ومحاربة المسلمين؛ وهذا العمل هو الذي سيفنى ويشقى به صاحبه.
খ. আল্লাহর সন্তুষ্টির ইচ্ছায় আমলকারীর আমল দীর্ঘস্থায়ী ও সে সৌভাগ্যবান হয়। সে ওই ব্যক্তির সমান হতে পারে না যে আমলকারীর উদ্দেশ্য কুফরির সহযোগিতা ও মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা। কারণ, এ আমল নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং তার সম্পাদনকারী দুর্ভাগা হবে।

• مشروعية الجهاد والحض عليه كانت في الأديان التي قبل الإسلام أيضًا.
গ. জিহাদের বৈধতা এবং তাতে উৎসাহিত করা ইসলামের পূর্ব থেকেই সকল ধর্মে বিদ্যমান ছিলো।

• كل حالة يحصل بها التفريق بين المؤمنين فإنها من المعاصي التي يتعين تركها وإزالتها، كما أن كل حالة يحصل بها جمع المؤمنين وائتلافهم يتعين اتباعها والأمر بها والحث عليها.
ঘ. মু’মিনদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি গুনাহের কাজ। তা ছাড়া অত্যাবশ্যক। তেমনিভাবে যে অবস্থায় মু’মিনদের মাঝে ঐক্য ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তার অনুসরণ, আদেশ ও তার প্রতি উৎসাহিত করা অবশ্যই দরকার।

ٱلتَّٰٓئِبُونَ ٱلۡعَٰبِدُونَ ٱلۡحَٰمِدُونَ ٱلسَّٰٓئِحُونَ ٱلرَّٰكِعُونَ ٱلسَّٰجِدُونَ ٱلۡأٓمِرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡحَٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
১১২. এ জাতীয় প্রতিদান অর্জনকারীরা আল্লাহর অপছন্দনীয় ও রাগের বস্তু থেকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির বস্তুর ফিরে আসে। যারা আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর সামনে অতিশয় বিনয়ী হয়ে সত্যিকারার্থেই তাঁর আনুগত্য করে এবং সর্বাবস্থায় তাঁদের প্রতিপালকের প্রশংসা করে। যারা রোযাদার, নামাযী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ এবং নিষেধ মান্যকারী উপরন্তু তাঁর আদেশ ও নিষেধের হিফাযতকারী। হে রাসূল! আপনি এ বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী মু’মিনদেরকে এমন বস্তুর সংবাদ দিন যা দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে আনন্দিত করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ
১১৩. নবী ও মু’মিনদের উচিত হবে না আল্লাহর নিকট মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। যদিও তারা এদের আত্মীয় হোক না কেন। অথচ তাদের ব্যাপারে এ কথা একেবারেই সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামী। কারণ, তারা শিরকের উপর মৃত্যু বরণ করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا كَانَ ٱسۡتِغۡفَارُ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَن مَّوۡعِدَةٖ وَعَدَهَآ إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُۥٓ أَنَّهُۥ عَدُوّٞ لِّلَّهِ تَبَرَّأَ مِنۡهُۚ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ لَأَوَّٰهٌ حَلِيمٞ
১১৪. তবে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটি তার সাথে করা একটি ওয়াদার কারণে হয়েছে। তিনি তাঁর পিতার ইসলাম গ্রহণের আশায় তার সাথে এ ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি অবশ্যই তার জন্য দু‘আ করবেন। তবে যখন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে, তাঁর পিতা নিশ্চয়ই আল্লাহর শত্রæ যেহেতু কোন উপদেশই তার কোন লাভে আসছে না অথবা তিনি ওহীর মাধ্যমে এ কথা জেনেছেন যে, তাঁর পিতা কাফির অবস্থায় মারা যাবে তখন তিনি তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফার করা থেকে অবসর নিলেন। বস্তুতঃ তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফারের ব্যাপারটি ছিলো তাঁরই গবেষণালব্ধ। তা ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কোন বিধানের বিরোধিতা নয়। বস্তুতঃ ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) ছিলেন আল্লাহর প্রতি বেশি অনুরাগী এবং তাঁর যালিম সম্প্রদায়ের প্রতি বেশি ক্ষমাশীল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِلَّ قَوۡمَۢا بَعۡدَ إِذۡ هَدَىٰهُمۡ حَتَّىٰ يُبَيِّنَ لَهُم مَّا يَتَّقُونَۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ
১১৫. আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে হিদায়েতের তাওফীক দেয়ার পর তিনি তাদের জন্য বর্জন করা আবশ্যকীয় হারাম কাজের বর্ণনা না দিয়ে তাদের উপর ভ্রষ্টতার ফায়সালা করেন না। তার পরও তারা তাতে লিপ্ত হলে তিনি তাদের উপর ভ্রষ্টতার ফায়সালা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। ইতিপূর্বে না জানা অনেক বিষয়ই তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۚ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٖ
১১৬. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিনের মালিক। সেগুলোতে তাঁর কোন শরীক নেই। সেগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। যাকে তিনি জীবন দিতে চান তাকে জীবন। আর যাকে মৃত্যু দিতে চান তাকে মৃত্যু দিয়ে থাকেন। হে মানুষ! তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া এমন কোন অভিভাবক নেই যে তোমাদের সমূহ কর্মকাÐের দায়িত্বভার বহন করবে। না তোমাদের জন্য এমন কোন সাহায্যকারী রয়েছে যে তোমাদের বিপদাপদ প্রতিহত করে শত্রæর উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ ٱلۡعُسۡرَةِ مِنۢ بَعۡدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٖ مِّنۡهُمۡ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّهُۥ بِهِمۡ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ
১১৭. আল্লাহ তা‘আলা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তাওবা গ্রহণ করেছেন যখন তিনি মুনাফিকদেরকে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তেমনিভাবে তিনি মুহাজির এবং আনসারীদের তাওবাও কবুল করেছেন যারা যুদ্ধ থেকে পিছপা হয়নি। বরং তারা কঠিন গরম, কম সম্বল ও শত্রæর শক্তিকে তোয়াক্কা না করে তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করেছে। অথচ তখন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে, তাদের এক দলের অন্তর ঘুরে যাওয়ায় যুদ্ধ না করার ইচ্ছাই পোষণ করছিলো। কারণ, তখন তাদের সার্বিক অবস্থা ছিলো খুবই কঠিন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যুদ্ধে বের হওয়া এবং তার উপর অটল থাকার তাওফীক দিয়েছেন। উপরন্তু তাদের তাওবা কবুল করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত করুণাশীল ও দয়ালু। আর তাঁর দয়ার একটি নমুনা হলো তাদেরকে তাওবার তাওফীক দেয়া ও তা কবুল করা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• بطلان الاحتجاج على جواز الاستغفار للمشركين بفعل إبراهيم عليه السلام.
ক. ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর কর্ম দিয়ে মুশরিকদের জন্য ইস্তিগফার জায়িয হওয়ার প্রমাণ দেয়া সত্যিই বাতিল।

• أن الذنوب والمعاصي هي سبب المصائب والخذلان وعدم التوفيق.
খ. গুনাহ ও পাপরাজি বিপদাপদ, অসহযোগিতা ও ভালোর তাওফীক না পাওয়ার কারণ।

• أن الله هو مالك الملك، وهو ولينا، ولا ولي ولا نصير لنا من دونه.
গ. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সকল ক্ষমতার মালিক। তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি ছাড়া আমাদের জন্য কোন সাহায্যকারী ও অভিভাবক নেই।

• بيان فضل أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم على سائر الناس.
ঘ. সকল মানুষের উপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথীদের ফযীলতের বর্ণনা।

وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ أَنفُسُهُمۡ وَظَنُّوٓاْ أَن لَّا مَلۡجَأَ مِنَ ٱللَّهِ إِلَّآ إِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوبُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
১১৮. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তিন জনের তাওবা কবুল করেছেন। তারা হলো, কা’ব ইবনু মালিক, মুরারাহ ইবনুর-রাবী’ এবং হিলাল ইবনু উমাইয়াহ। আল্লাহর রাসূলের সাথে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার দরুন তাদের তাওবা ও তাওবা কবুল করাকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষকে উদ্দ্যেশ্য করে তাদেরকে পরিত্যাগ করার আদেশ করেছেন। ফলে তাদেরকে চিন্তা ও বিষণœতা পেয়ে বসে এবং দুনিয়া অতি প্রশস্ত হওয়ার পরও তাদের নিকট তা সঙ্কীর্ণ মনে হয়। এমনকি তারা সমাজচ্যুত হওয়ায় তাদের অন্তরগুলোও সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। উপরন্তু তারা এ কথা জেনে যায় যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই। যার নিকট তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দয়া করে তাদেরকে তাওবার তাওফীক দেন। এমনকি তাদের তাওবা কবুলও করেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুলকারী ও তাদের প্রতি অতি দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ
১১৯. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী এবং তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং ঈমান, কথা ও কাজে সত্যবাদীদের সাথেই থাকো। কারণ, সত্য ছাড়া তোমাদের কোন নাজাত নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا كَانَ لِأَهۡلِ ٱلۡمَدِينَةِ وَمَنۡ حَوۡلَهُم مِّنَ ٱلۡأَعۡرَابِ أَن يَتَخَلَّفُواْ عَن رَّسُولِ ٱللَّهِ وَلَا يَرۡغَبُواْ بِأَنفُسِهِمۡ عَن نَّفۡسِهِۦۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ لَا يُصِيبُهُمۡ ظَمَأٞ وَلَا نَصَبٞ وَلَا مَخۡمَصَةٞ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَطَـُٔونَ مَوۡطِئٗا يَغِيظُ ٱلۡكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنۡ عَدُوّٖ نَّيۡلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِۦ عَمَلٞ صَٰلِحٌۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ
১২০. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই যুদ্ধের জন্য বের হলে মদীনাবাসী ও তার আশপাশের বেদুঈনদের জন্য তা থেকে পিছপা হওয়ার কোন অধিকার নেই। এমনকি তাদের কোন অধিকার নেই নিজেদের জীবনের ব্যাপারে কার্পণ্য করে সেগুলোকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবন থেকে দূরে হিফাযতে রাখা। বরং তাদের জন্য আবশ্যক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনের সামনে তাদের জীবনকে বিলিয়ে দেয়া। আর তা এ জন্য যে, আল্লাহর পথে তাদের কোন পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা লাগলে এমনকি কাফিরদেরকে রাগান্বিত করে এমন কোন জায়গায় তারা অবস্থান করলে উপরন্তু তারা শত্রæকে হত্যা বা বন্দী করলে অথবা তাদের থেকে যুদ্ধলব্ধ কোন সম্পদ পেলে কিংবা তাদেরকে পরাজিত করলে এর পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য কবুল হওয়া নেক আমলের সাওয়াব লিখে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। বরং তিনি তাদেরকে তা পুরোপুরি দিয়ে দেন। উপরন্তু তা থেকে আরো বাড়িয়ে দেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا يُنفِقُونَ نَفَقَةٗ صَغِيرَةٗ وَلَا كَبِيرَةٗ وَلَا يَقۡطَعُونَ وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
১২১. তারা কম-বেশি যতো সম্পদই ব্যয় করুক না কেন এবং যে কোন উপত্যকাই তারা অতিক্রম করুক না কেন তাদের জন্য সেই ব্যয় ও সফর জাতীয় আমল লিখে রাখা হবে। যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরকালে তাদের নেক আমলসমূহের প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ
১২২. মু’মিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা সবাই যুদ্ধের জন্য বের হয়ে যাবে। যাতে শত্রæরা তাদের মূলোৎপাটন করতে না পারে। তারা কেন এমন করে না যে, তাদের একদল জিহাদের জন্য বের হবে। আর আরেক দল জিহাদে না গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী হবে। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখ থেকে কুর‘আন ও শরীয়তের বিধানাবলী শুনে ধর্মীয় প্রজ্ঞা হাসিল করবে। এরপর বাড়ি ফিরে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নিজের সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করবে। যাতে তারা আল্লাহর আযাব ও শাস্তির ভয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে। এ বিধানটি ছিলো সে যুদ্ধগুলোর ক্ষেত্রে যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদিক সেদিক কোন যুদ্ধদল পাঠাতেন এবং সে জন্য সাহাবীদের এক দলকে মনোনীত করতেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• وجوب تقوى الله والصدق وأنهما سبب للنجاة من الهلاك.
ক. আল্লাহভীরুতা ও সত্যবাদিতা আবশ্যক এবং এগুলো সত্যিকারার্থে ধ্বংস থেকে বাঁচার বিশেষ কিছু মাধ্যম।

• عظم فضل النفقة في سبيل الله.
খ. আল্লাহর পথে ব্যয় করা মহা ফযীলতের কাজ।

• وجوب التفقُّه في الدين مثله مثل الجهاد، وأنه لا قيام للدين إلا بهما معًا.
গ. ধর্মীয় প্রজ্ঞা অর্জন করা আবশ্যক যেমন জিহাদ করা আবশ্যক। এ দু’টির সমন্বয় ছাড়া কখনো ধর্ম কায়েম হবে না।

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قَٰتِلُواْ ٱلَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ ٱلۡكُفَّارِ وَلۡيَجِدُواْ فِيكُمۡ غِلۡظَةٗۚ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ
১২৩. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে তাদের আশপাশের কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন। কারণ, তারা মু’মিনদের নিকটবর্তী হওয়ার দরুন তাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে আদেশ করেছেন তাদের সাথে নিজেদের শক্তি ও কঠোরতা প্রকাশের জন্য। যাতে তারা ভয় পায় এবং তাদের অনিষ্ট প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে মুত্তাকী মু’মিনদের সাথেই রয়েছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِذَا مَآ أُنزِلَتۡ سُورَةٞ فَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمۡ زَادَتۡهُ هَٰذِهِۦٓ إِيمَٰنٗاۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَزَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَهُمۡ يَسۡتَبۡشِرُونَ
১২৪. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর কোন সূরা নাযিল করেন তখন মুনাফিকদের কেউ কেউ ঠাট্টা ও মশকারা করে প্রশ্ন করে যে, এ নাযিলকৃত সূরাটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত বিধানের প্রতি তোমাদের কার ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে? বস্তুতঃ যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেছে এ সূরাটি তাদের পূর্বের ঈমানের উপর আরো ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ওহী নাযিল হওয়াতে খুবই খুশি। কারণ, তাতে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের ফায়েদা রয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَتۡهُمۡ رِجۡسًا إِلَىٰ رِجۡسِهِمۡ وَمَاتُواْ وَهُمۡ كَٰفِرُونَ
১২৫. এদিকে বিধান ও ঘটনা সম্বলিত কুর‘আনের আয়াত নাযিল হলে কুর‘আন অস্বীকার করার কারণে মুনাফিকদের রোগ ও কদর্যতা আরো বেড়ে যায়। তাই কুর‘আন বেশি নাযিল হলে তাদের অন্তর ব্যাধি আরো বেড়ে যায়। কারণ, কোন কিছু নাযিল হলেই তারা তাতে সন্দেহ করে আর কুফরির উপর তারা মৃত্যু বরণ করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَوَلَا يَرَوۡنَ أَنَّهُمۡ يُفۡتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٖ مَّرَّةً أَوۡ مَرَّتَيۡنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمۡ يَذَّكَّرُونَ
১২৬. আল্লাহ তা‘আলা প্রতি বছর একবার বা দু’বার মুনাফিকদের মুনাফিকী ও তাদের গোমর ফাঁস করে তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন করা দেখে তারা কেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না?! তারা এ কথা জানা সত্তে¡ও যে, স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই তাদের সাথে এ আচরণ করছেন তারপরও তারা কুফরি থেকে তাওবা করে না। না তারা মুনাফিকী থেকে ফিরে আসে। না তারা নিজেদের উপর নাযিল হওয়া বিপদের কথা স্মরণ করে এবং এ কথা মনে করে যে, এটি নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِذَا مَآ أُنزِلَتۡ سُورَةٞ نَّظَرَ بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٍ هَلۡ يَرَىٰكُم مِّنۡ أَحَدٖ ثُمَّ ٱنصَرَفُواْۚ صَرَفَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَفۡقَهُونَ
১২৭. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর মুনাফিকদের অবস্থা সম্বলিত কোন সূরা নাযিল করলে কিছু মুনাফিক অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলে: কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? কেউ না দেখলে তারা দ্রæত মজলিস থেকে উঠে যায়। আল্লাহ তা‘আলা কেন তাদের অন্তরগুলোকে হিদায়েত ও কল্যাণ থেকে ফিরিয়ে দেয় না এবং তাদের অসহযোগিতা করে না। কারণ, তারা তো একটি অবুঝ সম্প্রদায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِيزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيصٌ عَلَيۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ
১২৮. হে আরব জাতি! তোমাদের নিকট তোমাদের বংশেরই একজন রাসূল এসেছেন। তিনি তোমাদের মতোই একজন আরবীভাষী। তোমাদেরই কষ্ট তাঁর কষ্ট। তিনি তোমাদের হিদায়েত ও তোমাদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। তিনি মু’মিনদের প্রতি বিশেষভাবে অতি করুণাসিক্ত ও পরম দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُلۡ حَسۡبِيَ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُۖ وَهُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ
১২৯. তারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আপনার আনীত বিধানকে বিশ্বাস না করলে হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আমার জন্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। আমি কেবল তাঁর উপরই নির্ভর করছি। তিনি মহান আরশের মালিক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• وجوب ابتداء القتال بالأقرب من الكفار إذا اتسعت رقعة الإسلام، ودعت إليه حاجة.
ক. ইসলামের এলাকা প্রশস্ত হয়ে গেলে এবং প্রয়োজন দেখা দিলে নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা ওয়াজিব।

• بيان حال المنافقين حين نزول القرآن عليهم وهي الترقُّب والاضطراب.
খ. কুর‘আন নাযিলের সময় মুনাফিকদের অবস্থার বর্ণনা। আর তা হলো অস্থিরতা নিয়ে কী নাযিল হচ্ছে সেটার অপেক্ষা করা।

• بيان رحمة النبي صلى الله عليه وسلم بالمؤمنين وحرصه عليهم.
গ. মু’মিনদের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দয়া ও আগ্রহের বর্ণনা।

• في الآيات دليل على أن الإيمان يزيد وينقص، وأنه ينبغي للمؤمن أن يتفقد إيمانه ويتعاهده فيجدده وينميه؛ ليكون دائمًا في صعود.
ঘ. উক্ত আয়াতগুলোতে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, ঈমান বাড়ে ও কমে। এজন্য একজন মু’মিনের উচিত তার ঈমানের খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে নবায়ন ও বাড়ানোর ফিকির করা। যাতে তা সর্বদা উন্নতি লাভ করতে পারে।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আত-তাওবা
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ