কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-কলম   আয়াত:

সূরা আল-কলম

نٓۚ وَٱلۡقَلَمِ وَمَا يَسۡطُرُونَ
নূন---শপথ কলমের [১] এবং তারা যা লিপিবদ্ধ করে তার,
সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:

আয়াত সংখ্যা: ৫২ আয়াত।

নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।


রহমান, রহীম আল্লাহর নামে

[১] মুজাহিদ বলেন, কলম মানে যে কলম দিয়ে যিকর অর্থাৎ কুরআন মজীদ লেখা হচ্ছিলো। [কুরতুবী] কলম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘আলা কলম সৃষ্টি করে তাকে লেখার আদেশ করেন। কলম বলল, কী লিখব? তখন আল্লাহ্ বললেন, যা হয়েছে এবং যা হবে তা সবই লিখ। কলম আদেশ অনুযায়ী অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল ঘটনা ও অবস্থা লিখে দিল।” [মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১৭] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র সৃষ্টির তাকদীর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখে দিয়েছিলেন।” [মুসলিম ২৬৫৩, তিরমিয়ী ২১৫৬, মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৯] কুরআনের অন্যত্রও এ কলমের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “তিনি (আল্লাহ) কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” [সূরা আল-আলাক ৪]
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَآ أَنتَ بِنِعۡمَةِ رَبِّكَ بِمَجۡنُونٖ
আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি উন্মাদ নন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّ لَكَ لَأَجۡرًا غَيۡرَ مَمۡنُونٖ
আর নিশ্চয় আপনার জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার,
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ
আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন [১] ।
[১] আয়াতে উল্লেখিত, “মহৎ চরিত্র” এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দীন। কেননা আল্লাহ তা‘আলার কাছে ইসলাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দীন নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, স্বয়ং কুরআন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “মহৎ চরিত্র”। অর্থাৎ কুরআন পাক যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “মহৎ চরিত্র” বলে কুরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কুরআন শিক্ষা দিয়েছে। [কুরতুবী]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিলো তার চরিত্র। [মুসনাদে আহমাদ ৬/৯১] আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেছেন, “আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহ্র খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোনো কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোনো কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোনো কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? [বুখারী ৬০৩৮, মুসলিম ২৩০৯] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্তায় আল্লাহ্ তা‘আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।” [মুসনাদে আহমাদ ২/৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৬৭০]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَسَتُبۡصِرُ وَيُبۡصِرُونَ
অতঃপর অচিরেই আপনি দেখবেন এবং তারাও দেখবে - - -
আরবি তাফসীরসমূহ:
بِأَييِّكُمُ ٱلۡمَفۡتُونُ
তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত [১]।
[১] مفتون শব্দের অর্থ এস্থলে বিকারগ্রস্ত পাগল। [বাগভী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ
নিশ্চয় আপনার রব সম্যক অবগত আছেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি সম্যক জানেন তাদেরকে, যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَا تُطِعِ ٱلۡمُكَذِّبِينَ
কাজেই আপনি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবেন না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَدُّواْ لَوۡ تُدۡهِنُ فَيُدۡهِنُونَ
তারা কামনা করে যে, আপনি আপোষকামী হোন, তাহলে তারাও আপোষকামী হবে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٖ مَّهِينٍ
আর আপনি আনুগত্য করবেন না প্ৰত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক শপথ কারী, লাঞ্ছিত,
আরবি তাফসীরসমূহ:
هَمَّازٖ مَّشَّآءِۭ بِنَمِيمٖ
পিছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায় [১],
[১] কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে যারা “পিছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়” তাদের নিন্দা করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে কঠিন সাবধানবাণী শোনানো হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কাত্তাত (যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায় সে) জান্নাতে প্ৰবেশ করবে না।” [বুখারী ৬০৫৬]
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَّنَّاعٖ لِّلۡخَيۡرِ مُعۡتَدٍ أَثِيمٍ
কল্যাণের কাজে বাধা দানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ,
আরবি তাফসীরসমূহ:
عُتُلِّۭ بَعۡدَ ذَٰلِكَ زَنِيمٍ
রূঢ় স্বভাব [১] এবং তদুপরি কুখ্যাত [২];
[১] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানাব না? প্রতিটি দূর্বল, যাকে লোকেরা দূর্বল করে রাখে বা দূর্বল হিসেবে চলে নিজের শক্তিমত্তার অহংকারে মত্ত হয় না, সে যদি কোনো ব্যাপারে আল্লাহ্র কাছে শপথ করে বসে আল্লাহ্ সেটা পূর্ণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসীদের চরিত্র সম্পর্কে জানাব না? প্রতিটি রূঢ় স্বভাববিশিষ্ট মানুষ, প্রচণ্ড কৃপন, অহংকারী।” [বুখারী ৪৯১৮]

[২] কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, زنيم বলে এমন লোক উদ্দেশ্য যার কানের অনেকাংশ কেটে লটকে রাখা হয়েছে যেমন কোনো কোনো ছাগলের কানের কর্তিত অংশ লটকে থাকে। [বুখারী ৪৯১৭]
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَن كَانَ ذَا مَالٖ وَبَنِينَ
এজন্যে যে, সে ধন-সম্পদ ও সন্তান – সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ
যখন তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, ‘এ তো পূর্ববতীদের কল্প-কাহিনী মাত্ৰ।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَنَسِمُهُۥ عَلَى ٱلۡخُرۡطُومِ
আমরা অবশ্যই তার শুঁড় দাগিয়ে দেব।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّا بَلَوۡنَٰهُمۡ كَمَا بَلَوۡنَآ أَصۡحَٰبَ ٱلۡجَنَّةِ إِذۡ أَقۡسَمُواْ لَيَصۡرِمُنَّهَا مُصۡبِحِينَ
আমরা তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছি [১], যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম উদ্যান-অধিপতিদেরকে, যখন তারা শপথ করেছিল যে, তারা প্ৰত্যুষে আহরণ করবে বাগানের ফল
[১] অর্থাৎ আমি মক্কাবাসীদের পরীক্ষায় ফেলেছি। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا يَسۡتَثۡنُونَ
এবং তারা ‘ইন্শাআল্লাহ্’ বলেনি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَطَافَ عَلَيۡهَا طَآئِفٞ مِّن رَّبِّكَ وَهُمۡ نَآئِمُونَ
অতঃপর আপনার রবের কাছ থেকে এক বিপর্যয় হানা দিল সে উদ্যানে, যখন তারা ছিল ঘুমন্ত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَصۡبَحَتۡ كَٱلصَّرِيمِ
ফলে তা পুড়ে গিয়ে কালোবর্ণ ধারণ করল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَتَنَادَوۡاْ مُصۡبِحِينَ
প্রত্যুষে তারা একে অন্যকে ডেকে বলল,
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَنِ ٱغۡدُواْ عَلَىٰ حَرۡثِكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰرِمِينَ
‘তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তবে সকাল সকাল তোমাদের বাগানে চল।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱنطَلَقُواْ وَهُمۡ يَتَخَٰفَتُونَ
তারপর তারা চলল নিম্নস্বরে কথা বলতে বলতে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَن لَّا يَدۡخُلَنَّهَا ٱلۡيَوۡمَ عَلَيۡكُم مِّسۡكِينٞ
‘আজ সেখানে যেন তোমাদের কাছে কোনো মিসকীন প্ৰবেশ করতে না পারে।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَغَدَوۡاْ عَلَىٰ حَرۡدٖ قَٰدِرِينَ
আর তারা নিবৃত্ত করতে সক্ষম ---- এ বিশ্বাস নিয়ে বাগানে যাত্রা করল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَمَّا رَأَوۡهَا قَالُوٓاْ إِنَّا لَضَآلُّونَ
অতঃপর তারা যখন বাগানের অবস্থা দেখতে পেল, তখন বলল, ‘নিশ্চয় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ نَحۡنُ مَحۡرُومُونَ
‘বরং আমরা তো বঞ্চিত।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ أَوۡسَطُهُمۡ أَلَمۡ أَقُل لَّكُمۡ لَوۡلَا تُسَبِّحُونَ
তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, এখনো তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছনা কেন ?’
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ سُبۡحَٰنَ رَبِّنَآ إِنَّا كُنَّا ظَٰلِمِينَ
তারা বলল ‘আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আমরা তো যালিম ছিলাম।”
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ يَتَلَٰوَمُونَ
তারপর তারা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَآ إِنَّا كُنَّا طَٰغِينَ
তারা বলল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَسَىٰ رَبُّنَآ أَن يُبۡدِلَنَا خَيۡرٗا مِّنۡهَآ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا رَٰغِبُونَ
সম্ভবতঃ আমাদের রব এ থেকে উৎকৃষ্টতর বিনিময় দেবেন; নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের অভিমুখী হলাম।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَذَٰلِكَ ٱلۡعَذَابُۖ وَلَعَذَابُ ٱلۡأٓخِرَةِ أَكۡبَرُۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ
শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে এবং আখিরাতের শাস্তি কঠিনতর। যদি তারা জানত [১] !
[১] মক্কাবাসীদের ওপর দুর্ভিক্ষরূপী আযাবের সংক্ষিপ্ত এবং উদ্যান মালিকদের ক্ষেত জ্বলে যাওয়ার বিস্তারিত বর্ণনার পর সাধারণ বিধি বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন আল্লাহর আযাব আসে, তখন এভাবেই আসে। দুনিয়ার এই আযাব আসার পরও তাদের আখেরাতের আযাব দূর হয়ে যায় না; বরং আখেরাতের আযাব ভিন্ন এবং তদপেক্ষা কঠোর হয়ে থাকে। [দেখুন-কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ
নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত তাদের রবের কাছে।
‘দ্বিতীয় রুকূ’
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَنَجۡعَلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ كَٱلۡمُجۡرِمِينَ
তবে কি আমরা মুসলিমদেরকে (অনুগতদেরকে) অপরাধীদের সমান গণ্য করব ?
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا لَكُمۡ كَيۡفَ تَحۡكُمُونَ
তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ ?
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لَكُمۡ كِتَٰبٞ فِيهِ تَدۡرُسُونَ
তোমাদের কাছে কি কোনো কিতাব আছে যাতে তোমরা অধ্যয়ন কর ---
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ لَكُمۡ فِيهِ لَمَا تَخَيَّرُونَ
যে, নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে যা তোমরা পছন্দ কর?
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لَكُمۡ أَيۡمَٰنٌ عَلَيۡنَا بَٰلِغَةٌ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ إِنَّ لَكُمۡ لَمَا تَحۡكُمُونَ
অথবা তোমাদের কি আমাদের সাথে কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ এমন কোনো অঙ্গীকার রয়েছে যে, তোমরা নিজেদের জন্য যা স্থির করবে তাই পাবে ?
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَلۡهُمۡ أَيُّهُم بِذَٰلِكَ زَعِيمٌ
আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন তাদের মধ্যে এ দাবির যিম্মাদার কে?
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَآءُ فَلۡيَأۡتُواْ بِشُرَكَآئِهِمۡ إِن كَانُواْ صَٰدِقِينَ
অথবা তাদের কি (আল্লাহর সাথে) অনেক শরীক আছে ? থাকলে তারা তাদের শরীকগুলোকে উপস্থিত করুক --- যদি তারা সত্যবাদী হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٖ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ
স্মরণ করুন, সে দিনের কথা যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে [১], সেদিন তাদেরকে ডাকা হবে সাজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না;
[১] আয়াতে বলা হয়েছে, “যেদিন পায়ের গোছা উম্মোচিত করা হবে।” পায়ের গোছা উম্মোচিত করার এক অৰ্থ অবস্থা কঠিন হওয়াও হয়। আর তখন অর্থ হবে, যেদিন মানুষের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হবে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর] কিন্তু এ আয়াতের তাফসীরে সহীহ হাদীসে স্পষ্ট এসেছে যে, এখানে মহান আল্লাহর “পায়ের গোছা” বোঝানো হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাদের রব তাঁর পায়ের গোছা” অনাবৃত করবেন, ফলে প্রতিটি মুমিন নর ও নারী তাঁর জন্য সাজদাহ করবেন। পক্ষান্তরে যারা দুনিয়াতে প্রদর্শনেচ্ছা কিংবা শুনানোর উদ্দেশ্যে সাজদাহ করেছিল, তারা সাজদাহ করতে সক্ষম হবে না। তারা সাজদাহ করতে যাবে কিন্তু তাদের পিঠ বাঁকা হবে না।” [বুখারী ৪৯১৯]
আরবি তাফসীরসমূহ:
خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ وَقَدۡ كَانُواْ يُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ وَهُمۡ سَٰلِمُونَ
তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে ডাকা হত সাজদা করতে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَذَرۡنِي وَمَن يُكَذِّبُ بِهَٰذَا ٱلۡحَدِيثِۖ سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُونَ
অতএব, ছেড়ে দিন আমাকে এবং যারা এ বাণীতে মিথ্যারোপ করে তাদেরকে, আমরা তাদেরকে ক্রমে ক্রমে ধরব এমনভাবে যে, তারা জানতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأُمۡلِي لَهُمۡۚ إِنَّ كَيۡدِي مَتِينٌ
আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ تَسۡـَٔلُهُمۡ أَجۡرٗا فَهُم مِّن مَّغۡرَمٖ مُّثۡقَلُونَ
আপনি কি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চাচ্ছেন যে, তা তাদের কাছে দুর্বহ দণ্ড মনে হয় ?
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ عِندَهُمُ ٱلۡغَيۡبُ فَهُمۡ يَكۡتُبُونَ
নাকি তাদের কাছে গায়েবের জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখে রাখে !
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُن كَصَاحِبِ ٱلۡحُوتِ إِذۡ نَادَىٰ وَهُوَ مَكۡظُومٞ
অতএব, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায়, আর আপনি মাছওয়ালার ন্যায় হবেন না, যখন তিনি বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় আহ্বান করেছিলেন [১]।
[১] পবিত্র কুরআনের অন্যত্র এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাছের পেটের এবং সাগরের পানির অন্ধকারে ইউনুস আলাইহিস সালাম উচ্চস্বরে এ বলে প্রার্থনা করলেন: তোমার পবিত্র সত্তা ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। আসলে আমি অপরাধী। আল্লাহ্ তা‘আলা তার ফরিয়াদ গ্রহণ করলেন এবং তাকে এ দুঃখ ও মুসিবত থেকে মুক্তি দান করলেন। [সূরা আম্বিয়া ৮৭-৮৮]
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّوۡلَآ أَن تَدَٰرَكَهُۥ نِعۡمَةٞ مِّن رَّبِّهِۦ لَنُبِذَ بِٱلۡعَرَآءِ وَهُوَ مَذۡمُومٞ
যদি তার রবের অনুগ্রহ তার কাছে না পৌঁছত তবে তিনি লাঞ্ছিত অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হতেন উন্মুক্ত প্ৰান্তরে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱجۡتَبَٰهُ رَبُّهُۥ فَجَعَلَهُۥ مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ
অতঃপর তার রব তাকে মনোনীত করে তাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করলেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِن يَكَادُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَيُزۡلِقُونَكَ بِأَبۡصَٰرِهِمۡ لَمَّا سَمِعُواْ ٱلذِّكۡرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُۥ لَمَجۡنُونٞ
আর কাফিররা যখন কুরআন শোনে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আপনাকে আছড়ে ফেলবে এবং বলে, ‘এ তো এক পাগল।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكۡرٞ لِّلۡعَٰلَمِينَ
অথচ তা [১] তো কেবল সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ।
[১] এখানে ‘তা’ বলে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে কুরআন বোঝানো হয়েছে। তবে কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে ‘তা’ বলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বোঝানো হয়েছে। অথচ দুটি অর্থই এখানে হতে পারে। কুরআন যেমন সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্য উপদেশ তেমনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্য উপদেশ ও সম্মানের পাত্র। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-কলম
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।

বন্ধ