আর জান্নাতবাসীগণ জাহান্নামবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি। তোমাদের রব তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তোমরা তা সত্য পেয়েছ কি? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর একজন ঘোষণাকারী তাদের মধ্যে ঘোষণা করবে, আল্লাহর লা'নত যালিমদের উপর---
আর তাদের উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে। আর আ’রাফে [১] কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনবে [২]। আর তারা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘তোমাদের উপর সালাম [৩]।’ তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু আকাংখা করে।
[১] আরাফ কী?:
সূরা হাদীদের ১২ থেকে ১৯নং আয়াতে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হাশরের ময়দানে তিনটি দল হবে। (এক) সুস্পষ্ট কাফের ও মুশরিক। (দুই) মুমিনের দল। তাদের সাথে ঈমানের আলো থাকবে। (তিন) মুনাফেকের দল। এরা দুনিয়াতে মুসলিমদের সাথে লাগা থাকত। সেখানেও প্রথম দিকে সাথে লাগা থাকবে এবং পুলসেরাত চলতে শুরু করবে। তখন একটি ভীষণ অন্ধকার সবাইকে ঘিরে ফেলবে। মুমিনরা ঈমানের আলোর সাহায্যে সামনে এগিয়ে যাবে। মুনাফেকরা ডেকে ডেকে তাদেরকে বলবে: একটু আস। আমরাও তোমাদের আলো দ্বারা উপকৃত হই। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ফিরিশতা বলবে: পেছনে ফিরে যাও এবং সেখানেই আলো তালাশ কর। এ আলো হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্মের। এ আলো হাসিল করার স্থান পেছনে চলে গেছে। যারা সেখানে ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে এ আলো অর্জন করেনি, তারা আজ আলো দ্বারা উপকৃত হবে না। এমতাবস্থায় মুমিন ও মুনাফেকদের মধ্যে একটি প্রাচীর বেষ্টনী দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। এতে একটি দরজা থাকবে। দরজার বাইরে কেবলই আযাব দৃষ্টিগোচর হবে এবং ভেতরে মুমিনরা থাকবে। তাদের সামনে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করবে। ইবন জারীর ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে এ আয়াতে উল্লিখিত اعراف বলে ঐ প্রাচীর বেষ্টনীকেই বুঝানো হয়েছে। এ প্রাচীর বেষ্টনীর উপরিভাগের নামই আরাফ। কেননা, اعراف শব্দটি عرف এর বহুবচন। এর অর্থ প্রত্যেক বস্তুর উপরিভাগ। এ ব্যাখ্যা থেকে জানা গেল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরবেষ্টনীর উপরিভাগকে আরাফ বলা হয়। আয়াতে বলা হয়েছে যে, হাশরে এ স্থানে কিছুসংখ্যাক লোক থাকবে। তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকের অবস্থা নিরীক্ষণ করবে এবং উভয়পক্ষের লোকদের সাথে প্রশ্নোত্তর ও কথাবার্তা বলবে।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আরাফ উঁচু টাওয়ারের মত যা জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে থাকবে। গোনাহগার কিছু বান্দাকে সেখানে রেখে দেয়া হবে।” কেউ কেউ বলেন, আ'রাফ নামকরণ এজন্য করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা একে অপরকে চিনতে পারবে।
আরাফবাসী কারা:
বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, আরাফবাসী ঐ সমস্ত লোক যাদের সৎ এবং অসৎকর্ম সমান হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, কিছু লোক এমনও থাকবে, যারা জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবে, কিন্তু তখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করার আশা পোষণ করবে। তাদেরকেই আরাফবাসী বলা হয়। ইবন জারীর বলেন, তাদের সম্পর্কে এটা বলাই বেশী সঠিক যে, তারা হচ্ছে এমন কিছু লোক যারা জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে তাদের নিদর্শনের মাধ্যমে চিনতে পারবে। [তাবারী]
[২] এ আয়াতে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিহ্ন কেমন হবে তা বর্ণনা করা হয়নি। অন্য আয়াতে তাদের কিছু চিহ্ন বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “সেদিন কিছু মুখ উজ্জল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে; যাদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে।" [সূরা আলে-ইমরান ১০৬] “আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন।" [সূরা আল-মুতাফফিফীন ২৪] আরও বলেন, “সেদিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে।" [সূরা আল-কিয়ামাহ ২২] আরও বলেন, “অনেক চেহারা সেদিন হবে উজ্জ্বল।" [সূরা আবাসা ৩৮] সুতরাং চেহারা শুভ্র ও সুন্দর হওয়া জান্নাতীদের চিহ্ন। আর চেহারা কালো, বিকট ও নীলচক্ষুবিশিষ্ট হওয়া জাহান্নামীদের চিহ্ন। আল্লাহ বলেন, “তাদের মুখমন্ডল যেন রাতের অন্ধকারের আস্তরণে আচ্ছাদিত। তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।" [সূরা ইউনুস ২৭] আরও বলেন, “আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর।" [সূরা আবাসা ৪০] আরও বলেন, "যেদিন শিংগায় ফুক দেয়া হবে এবং যেদিন আমরা অপরাধীদেরকে নীলচক্ষু তথা দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।” [সূরা ত্বা-হা ১০২] আর এ জন্যই ইবন আব্বাস বলেন, জাহান্নামীদের চেনা যাবে তাদের কালো চেহারায়; আর জান্নাতীদের চেনা যাবে তাদের চেহারার শুভ্রতায়। [তাবারী]
[৩] আ’রাফবাসীরা জান্নাতীদের ডেকে বলবে, ‘সালামুন আলাইকুম’। এ বাক্যটি দুনিয়াতেও পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় সম্মান প্রদর্শনার্থে বলা হয় এবং বলা সুন্নাত। মৃত্যুর পর কবর যিয়ারতের সময় এবং হাশর ও কেয়ামতেও বলা হবে। অনুরূপভাবে ফিরিশতাগণও জান্নাতীদেরকে এ বাক্য দ্বারা সালাম করবে। [সূরা আর-রা'আদ ২৪, সূরা আয-যুমার ৭৩] [তাবারী]। কিন্তু আয়াত ও হাদীসদৃষ্টে জানা যায় যে, দুনিয়াতে 'আসসালামু 'আলাইকুম' বলা সুন্নাত।
আর যখন দৃষ্টি অগ্নিবাসীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা বলবে, ‘হে আমার রব! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না [১]।’
[১] অর্থাৎ আরাফবাসীরা সবাইকে চিনবে, তারপর যখন জান্নাতীদেরকে তাদের পাশ দিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা তাদেরকে ‘সালামুন আলাইকুম' বলবে। যদিও জান্নাতে প্রবেশ করেনি তবুও তারা আশায় থাকবে। পক্ষান্তরে জাহান্নামীদেরকে যখন তাদের পাশ দিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা ভীত সন্ত্রস্ত হবে এবং বলতে থাকবে, হে আমাদের রব আমাদেরকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। [তাবারী]
এরাই কি তারা [১] যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’
[১] জান্নাতের ঈমানদার লোকদের দিকে ইঙ্গিত করে আরাফবাসীরা কাফেরদেরকে বলবে, তোমরা দুনিয়াতে ঈমানদারদের ব্যাপারে উপহাস করতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি কোনো প্রকার দয়া করবেন না। অথচ এখন তারাই জান্নাতে রয়েছে, তাদেরকে ভয়-ভীতি ও পেরেশানী ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তোমাদের অহংকার তোমাদের কোনো কাজে আসে নি। [মুয়াসসার] ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, আরাফবাসী হচ্ছে এমন কিছু লোক, যাদের অনেক বড় বড় গুনাহ রয়েছে। তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়েছে। তাদেরকে দেয়ালের উপর দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সুতরাং তারা যখন জান্নাতীদের দিকে তাকাবে তখন তারা জান্নাতের আশা করবে, আর যখন জাহান্নামীদের দিকে তাকাবে তখন তারা জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি কামনা করবে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর তাদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, হে জাহান্নামবাসী, তোমরা কি এ আরাফবাসীদের নিয়েই বলতে যে, আল্লাহ তাদেরকে তার রহমতে প্রবেশ করাবেন না? হে ‘আরাফবাসী! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর তোমাদের কোনো ভয় ও চিন্তা নেই। [তাবারী]
আর জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের উপর ঢেলে দাও কিছু পানি অথবা তা থেকে যা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদেরকে দিয়েছেন।’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ তো এ দুটি হারাম করেছেন কাফেরদের জন্য।
‘যারা তাদের দীনকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছিল। আর দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছিল। কাজেই আজ আমরা তাদেরকে (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখব, যেমনিভাবে তারা তাদের এ দিনের সাক্ষাতের জন্য কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিল [১], আর (যেমন) তারা আমাদের আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল।
[১] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের রবকে কেয়ামতের দিন দেখতে পাব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দীদার সংক্রান্ত কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘তারপর আল্লাহ তার কোনো এক বান্দার সাথে সাক্ষাত করে বলবেন, হে অমুক! তোমাকে কি আমি সম্মানিত করিনি? নেতৃত্ব দেইনি? বিয়ে করাইনি? তোমার জন্য ঘোড়া ও উট আয়ত্ত্বাধীন করে দেইনি? তোমাকে কি প্রধান এবং শুল্ক আদায়কারী বানাইনি? (তোমাকে এমন আরামে রেখেছি যে, তোমার কোনো কষ্ট অনুভূত হয়নি।) সে বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি আমার সাক্ষাতে বিশ্বাসী ছিলে? সে বলবে, না। তখন আল্লাহ বলবেন, আজ আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়েছিলে।’ [মুসলিম ২৯৬৮]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Njeñtudi wiɗto ngoo:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".