রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সূরা আর-রহমান তেলাওয়াত করেন অথবা তার সামনে তেলাওয়াত করা হলো। তারা নিশ্চুপ থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার কি হলো, আমি দেখতে পাচ্ছি জিনরা তোমাদের চেয়ে উত্তম উত্তর দিচ্ছে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেটা কী? তিনি বললেন, যখনই فَبِاِىِّ اٰلَٓاءِرِّكُمَاتُكَذِّبٰنِ পড়ছিলাম তখনি জিনরা বলছিল “আমরা আমাদের রবের কোনো নিয়ামতকেই মিথ্যা বলি না, আপনার জন্যই যাবতীয় প্ৰশংসা।’ [তাবারী ৩২৯২৮, বাযযার ২২৬৯]
[১] অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহ। সূরাটিকে “আর-রাহমান' শব্দ দ্বারা শুরু করার তাৎপর্য সম্ভবত এই যে, মক্কার কাফেররা আল্লাহ তা’আলার এই নাম সম্পর্কে অবগত ছিল না। তাই মুসলিমদের মুখে রহমান নাম শুনে তারা বলাবলি করত: রাহমান আবার কী? তাদেরকে অবহিত করার জন্য এখানে এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান]
[১] এখান থেকে সমগ্র সূরায় আল্লাহ তা'আলার দুনিয়া ও আখেরাতের অবদানসমূহের অব্যাহত বর্ণনা হয়েছে। প্রথমেই علّم বাক্য দিয়ে সূচনা করার উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এর রচয়িতা নন, এ শিক্ষা দানকারী স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা। তারপর عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ বলে সর্ববৃহৎ অবদান দ্বারা শুরু করা হয়েছে। কুরআন সর্ববৃহৎ অবদান। কেননা এতে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় প্রকার কল্যাণ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম কুরআনকে কায়মনোবাক্যে গ্ৰহণ করেছেন এবং এর প্রতি যথার্থ মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আখেরাতের উচ্চ মর্যাদা ও নেয়ামত দ্বারা গৌরবান্বিত করেছেন এবং দুনিয়াতেও এমন উচ্চ আসন দান করেছেন যা রাজা-বাদশাহরাও হাসিল করতে পারেনা।
ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী علَّم ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম থাকে - এক যা শিক্ষা দেয়া হয় এবং ‘দুই’ যাকে শিক্ষা দেয়া হয়। আয়াতে প্রথম কর্ম উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ কুরআন। কিন্তু দ্বিতীয় কর্ম অৰ্থাৎ কাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। কোনো কোনো তফসীরবিদ বলেন, এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ তা’আলা প্ৰত্যক্ষভাবে তাকেই শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তার মধ্যস্থতায় সমগ্র সৃষ্টজীব এতে দাখিল রয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান, আত তাহরীর ওয়াততানিওয়ীর]
অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যে সৃষ্টি করেছি। [সূরা আয-যারিয়াত ৫৬]
এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মানুষকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হওয়া কোনো আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। বরং তার পক্ষ থেকে যদি এ ব্যবস্থা না থাকতো তাহলে সেটাই হতো বিস্ময়কর ব্যাপার। এ বিষয়টি কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে: “পথ প্রদর্শন করা আমার দায়িত্ব।” [সূরা আল-লাইল ১২] আবার কোথাও বলা হয়েছে: “সরল সোজা পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। বাঁকা পথের সংখ্যা তো অনেক।” [সূরা আন-নাহল ৯] অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফেরা’আউন মূসার মুখে রিসালাতের পয়গাম শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো: তোমার সেই ‘রব’ কে যে আমার কাছে দূত পাঠায়? জবাবে মূসা বললেন, “তিনিই আমার রব যিনি প্রতিটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি দান করে পথ প্রদর্শন করেছেন।” [সূরা ত্বা-হা ৪৭-৫০]
[১] মূল আয়াতে البيان শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ কোনো কিছু বলা এবং নিজের উদ্দেশ্য ও অভিপ্ৰায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তোলা। বাকশক্তি এমন একটি বিশিষ্ট গুণ যা মানুষকে জীবজন্তু ও পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করে দেয়। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] বিভিন্ন ভূখণ্ড ও বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন বাকপদ্ধতি সবাই এই বর্ণনা শিক্ষার বিভিন্ন অঙ্গ এবং এটা কার্যত فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ [সূরা আল-বাকারাহ ৩১] আয়াতের তফসীরও।
[১] حسبان শব্দটি কারও কারও মতে ধাতু। এর অর্থ হিসাব। কেউ কেউ বলেন যে, এটা حساب শব্দের বহুবচন। [ইরাবুল কুরআন] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, সূর্য ও চন্দ্রের গতি এবং কক্ষপথে বিচরণের অটল ব্যবস্থা একটি বিশেষ হিসাব ও পরিমাপ অনুযায়ী চালু রয়েছে। সূর্য ও চন্দ্রের গতির উপরই মানব জীবনের সমস্ত কাজ-কারবার নির্ভর করে। এর মাধ্যমেই দিবারাত্রির পার্থক্য, ঋতু পরিবর্তন এবং মাস ও বছর নির্ধারিত হয়। حسبان শব্দটিকে حساب এর বহুবচন ধরা হলে অর্থ এই হবে যে, সূর্য ও চন্দ্র প্ৰত্যেকের পরিক্রমণের আলাদা আলাদা হিসাব আছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]
[১] نجم শব্দটির পরিচিত অর্থ তারকা হলেও আরবী ভাষায় কাণ্ডবিহীন লতানো গাছকেও نجم বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর] আর কাণ্ডবিশিষ্ট বৃক্ষকে شجر বলা হয়। অর্থাৎ সর্বপ্রকার লতা-পাতা ও বৃক্ষ, আল্লাহ তা'আলার সামনে সাজদা করে। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, সাজদা চূড়ান্ত সম্মান প্রদর্শন ও আনুগত্যের লক্ষণ। তাই এখানে উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বৃক্ষ, লতা-পাতা, ফল ও ফুলকে যে যে বিশেষ কাজ ও মানুষের উপকারের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তারা অনবরত সে কাজ করে যাচ্ছে এবং নিজ নিজ কৰ্তব্য পালন করে মানুষের উপকার সাধন করে যাচ্ছে। এই বাধ্যতামূলক আনুগত্যকেই আয়াতে সাজদা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আর যদি نجم দ্বারা তারকা উদ্দেশ্য নেয়া হয় তবে অর্থ হবে, তারকা ও বৃক্ষরাজি সাজদা করছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর; কুরতুবী]
[১] حب এর অর্থ শস্য; যেমন গম, বুট, ধান, মাষ, মসুর ইত্যাদি। عصف সেই খোসাকে বলে, যার ভিতরে আল্লাহর কুদরতে মোড়কবিশিষ্ট অবস্থায় শস্যের দানা সৃষ্টি করা যায়। এর সাথে সম্ভবত আরও একটি অবদানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এই খোসা তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুর খোরাক হয়, যাদের দুধ তোমরা পান কর এবং যাদের বোঝা বহনের কাজে নিয়োজিত কর। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
[২] ريحان এর প্রসিদ্ধ অর্থ সুগন্ধি। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মৃত্তিকা থেকে উৎপন্ন বৃক্ষ থেকে নানা রকমের সুগন্ধি এবং সুগন্ধযুক্ত ফুল সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া ريحان শব্দটি কোনো কোনো সময় নির্যাস ও রিযিকের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তখন অর্থ হবে, আল্লাহ তা'আলা মাটি থেকে তোমাদের জন্য রিযিকের ব্যবস্থাও করেছেন। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[১] মূল আয়াতে آلاء শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং পরবর্তী আয়াতসমূহে এ শব্দটি বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। ভাষাভিজ্ঞ পণ্ডিত ও তাফসীর বিশারদগণ শব্দের অর্থ করেছেন ‘নিয়ামতসমূহ’ বা ‘অনুগ্রহসমগ্র’। [কুরতুবী] তবে মুফাসসির ইবন যায়েদ বলেন, শব্দটির অন্য অর্থ হচ্ছে, শক্তি ও ক্ষমতা। [ফাতহুল কাদীর] আল্লামা আবদুল হামীদ ফারাহী এ অর্থটিকে অধিক প্রাধান্য দিতেন।
[২] আয়াতে জিন ও মানবকে সম্বোধন করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির মত [১]
[১] এখানে إنسان বলে সরাসরি মৃত্তিকা থেকে সৃষ্ট আদম আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। صلصال এর অর্থ পানি মিশ্রিত শুষ্ক মাটি। فخار এর অর্থ পোড়ামাটি। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন। [কুরতুবী] কুরআন মজীদে মানুষ সৃষ্টির যে প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বৰ্ণনা করা হয়েছে, কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানের বক্তব্য একত্রিত করে তার নিম্নোক্ত ক্ৰমিক বিন্যাস অবগত হওয়া যায়। (১) تراب ‘তুরাব’ অর্থাৎ মাটি। আল্লাহ বলেন, كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ [সূরা আলে-ইমরান ৫৯] (২) طين ‘ত্বীন’ অর্থাৎ পচা কৰ্দম যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। আল্লাহ বলেন,
[৫] صَلصَالٍ كَالْفَخَّرِ ‘সালসালিন কাল-ফাখখার’ অর্থাৎ পচা কাদা যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মত হয়ে যায়। আলোচ্য সূরা আর-রাহমানের এ আয়াতেই আল্লাহ তা'আলা এ পর্যায়টি উল্লেখ করে বলেন,
‘বাশার’ মাটির এ শেষ পর্যায় থেকে যাকে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যার মধ্যে তার বিশেষ রূহ ফুৎকার করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যাকে সبজদা করানো হয়েছিল এবং তার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করা হয়েছিল। আল্লাহ্ বলেন,
(৭) مِن سُلٰلَةٍمِّنْ مَّآءٍمَّهِيْنٍ ‘মিন সুলালাতিন মিন মায়িন মাহীন’ তারপর পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মত সংমিশ্রিত দেহ নির্যাস থেকে তার বংশ ধারা চালু করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নির্ধূম আগুনের শিখা থেকে [১]।
[১] جان এর অর্থ জিন জাতি। مارج এর অর্থ অগ্নিশিখা। জিন সৃষ্টির প্রধান উপাদান অগ্নিশিখা, যেমন মানব সৃষ্টির প্রধান উপাদান মৃত্তিকা। نار অর্থ এক বিশেষ ধরনের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে আগুন নয়। আর অর্থ ধোঁয়াবিহীন শিখা। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] এ কথার অর্থ হচ্ছে প্রথম মানুষকে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় তার মাটির সত্তা অস্থি-মাংসে তৈরী জীবন্ত মানুষের আকৃতি লাভ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে শুক্রের সাহায্যে তার বংশধারা চালু আছে। অনুরূপ প্রথম জিনকে নিছক আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তার বংশধরদের থেকে পরবর্তী সময়ে জিনদের অধস্তন বংশধররা সৃষ্টি হয়ে চলেছে। মানব জাতির জন্য আদমের মর্যাদা যা, জিন জাতির জন্য সেই প্রথম জিনের মর্যাদাও তাই। জীবন্ত মানুষ হয়ে যাওয়ার পর আদম এবং তার বংশ থেকে জন্ম লাভকারী মানুষের দেহের সেই মাটির সাথে যেমন কোনো মিল থাকলো না জিনদের ব্যাপারটাও তাই। তাদের সত্তাও মুলত আগুনের সত্তা। কিন্তু আমরা যেমন মাটির স্তুপ নই, অনুরূপ তারাও শুধু অগ্নি শিখা নয়। [দেখুন, আদওয়াউল বায়ান]
[১] দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের অর্থ শীতকালের সবচেয়ে ছোট দিন এবং গ্ৰীষ্মকালের সবচেয়ে বড় দিনের উদয়াচল ও অস্তাচলও হতে পারে। আবার পৃথিবীর দুই গোলার্ধের উদয়াচল ও অস্তাচলও হতে পারে। শীত মৌসুমের সর্বাপেক্ষা ছোট দিনে সূৰ্য অত্যন্ত সংকীর্ণ একটি কোণ সৃষ্টি করে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। অপর দিকে গ্ৰীষ্মের সর্বাপেক্ষা বড় দিনে অতি বিস্তৃত কোণ সৃষ্টি করে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। প্রতি দিন এ উভয় কোণের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান পরিবর্তিত হতে থাকে। এ কারণে কুরআনের অন্য এক স্থানে বলা হয়েছে,
অনুরূপ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় ঠিক সে সময় অন্য গোলার্ধে তা অস্ত যায়। এভাবেও পৃথিবীর দুটি উদয়াচল ও অস্তাচল হয়ে যায়। [ইবন কাসীর; আততাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Sakamakon Bincike:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".