Check out the new design

የቅዱስ ቁርዓን ይዘት ትርጉም - የባንጋልኛ ትርጉም ‐ በአቡበክር ዘከሪያ * - የትርጉሞች ማዉጫ


የይዘት ትርጉም ምዕራፍ: አል ሐጅ   አንቀጽ:

አል ሐጅ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর [১]; নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার [২]।
৭৮ আয়াত, মাদানী

[১] এই সূরাটি মক্কায় নাযিল না মদীনায় নাযিল, সে সম্পর্কে তাফসীরবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকেই উভয় প্রকার রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। অধিকসংখ্যক তাফসীরবিদগণ বলেন, এই সূরাটি মিশ্র। এতে মক্কায় নাযিল ও মদীনায় নাযিল উভয় প্রকার আয়াতের সমাবেশ ঘটেছে। কুরতুবী এই উক্তিকেই বিশুদ্ধতম আখ্যা দিয়েছেন। [কুরতুবী] কোনো কোনো মুফাসসির এই সূরার কতিপয় বৈচিত্ৰ্য উল্লেখ করে বলেন, এর কিছু আয়াত রাতে, কিছু দিনে, কিছু সফরে, কিছু গৃহে অবস্থানকালে, কিছু মক্কায়, কিছু মদীনায় এবং কিছু যুদ্ধাবস্থায় ও কিছু শান্তিকালে নাযিল হয়েছে। এছাড়া এর কিছু আয়াত রহিতকারী, কিছু আয়াত রহিত এবং কিছু মুহকাম তথা সুস্পষ্ট ও কিছু মুতাশাবিহু তথা অস্পষ্ট। সূরাটিতে নাযিলের সব প্রকারই সন্নিবেশিত রয়েছে। [কুরতুবী]

[১] হাদীসে এসেছে, সফর অবস্থায় এই আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উচ্চঃস্বরে এর তিলাওয়াত শুরু করেন। সফরসঙ্গী সাহাবায়ে কেরাম তার আওয়াজ শুনে এক জায়গায় সমবেত হয়ে গেলেন। তিনি সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, এই আয়াতে উল্লেখিত কেয়ামতের ভূকম্পন কোন দিন হবে তোমরা জানো কি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা সেই দিনে হবে, যেদিন আল্লাহ্ তা'আলা আদম ‘আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করে বললেন, যারা জাহান্নামে যাবে, তাদেরকে উঠাও। আদম ‘আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করবেন, কারা জাহান্নামে যাবে? উত্তর হবে, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বললেন, এই সময়েই ত্ৰাস ও ভীতির আধিক্যে বালকরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম একথা শুনে ভীত-বিহবল হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে মুক্তি পেতে পারে? তিনি বললেন, তোমরা নিশ্চিন্ত থাকো, যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের এক হাজার ইয়াজুজ-মাজুজের মধ্য থেকে এবং একজন তোমাদের মধ্য থেকে হবে। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে, সেদিন তোমরা এমন দুই সম্প্রদায়ের সাথে থাকবে যে, তারা যে দলে ভিড়বে, সেই দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। একটি ইয়াজুজ-মাজুজের সম্প্রদায় ও অপরটি ইবলীস ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ এবং আদম সন্তানদের মধ্যে যারা তোমাদের পূর্বে মারা গেছে, তাদের সম্প্রদায়। [তিরমিযি ৩১৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪৩৫, মুস্তাদরাকে হাকিম ১/২৮, সহীহ ইবন হিব্বান ৭৩৫৪]

[২] আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এবং শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছে করেন তারা ছাড়া আকাশমণ্ডলী ও যমীনের সবাই মূৰ্ছিত হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।” [সূরা আয যুমার ৬৮] এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, কেয়ামতের দু'টি পর্যায় রয়েছে: এক) ইস্রাফিল কর্তৃক প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া। ঐ ফুঁক দেয়া মাত্রই সবকিছু কম্পিত হতে হতে ধ্বংস হয়ে যাবে। সে মহা ধ্বংসের কথা আল্লাহ তা'আলা। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। দুই) ইস্রাফিল কর্তৃক দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া। ঐ ফুঁক দেয়ার সাথে সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর সামনে নীত হবে। তখন হাশরের মাঠে সবাই জমায়েত হবে।

আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ভূকম্পন কখন হবে অর্থাৎ কেয়ামত শুরু হওয়া এবং মনুষ্যকুলের পুনরুখিত হওয়ার পর ভূকম্পন্ন হবে, না এর আগেই হবে। এ সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, কেয়ামতের পূর্বে এই পৃথিবীতে ভূকম্পন হবে এবং এটা কেয়ামতের প্রাথমিক কাজ হিসেবে গণ্য হবে। সে সময় পৃথিবী পৃষ্ঠে বসন্তকারীরা যে অবস্থার সম্মুখীন হবে তার চিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অংকন করা হয়েছে। যেমন, “যখন শিংগায় এক ফুঁক দেয়া হবে এবং যমীন ও পাহাড় তুলে এক আঘাতে ভেঙে দেয়া হবে তখন সে বিরাট ঘটনাটি ঘটে যাবে।” [সূরা আল-হাক্কাহ ১৩-১৫] “যখন পৃথিবীকে পুরোপুরি প্রকম্পিত করে দেয়া হবে এবং সে তার পেটের বোঝা বের করে ছুড়ে ফেলে দেবে আর মানুষ বলবে, এর কি হলো?” [সূরা আয-যালযালাহ ১-৩] "যেদিন প্রকম্পনের একটি ঝটিকা একেবারে নাড়িয়ে দেবে এবং এরপর আসবে দ্বিতীয় ঝটুকা। সেদিন অন্তর কাপতে থাকবে এবং দৃষ্টি ভীতবিহ্বল হবে।” [সূরা আন- নাযিআত ৫-৯] “যে দিন পৃথিবীকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকিয়ে দেয়া হবে এবং পাহাড় গুড়ো হয়ে ধূলির মতো উড়তে থাকবে।” [সূরা আল ওয়াকি'আহ ৪-৬] “যদি তোমরা নবীর কথা না মানো, তাহলে কেমন করে রক্ষা পাবে সেদিনের বিপদ থেকে, যা বাচ্চাদেরকে বুড়া করে দেবে এবং যার প্রচণ্ডতায় আকাশ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে?” [সূরা আল মুযযাম্মিল, আয়াত ১৭-১৮] এ মতটি বেশ কিছু তাবে’য়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে। অপর একদল আলেমের মতে, এখানে হাশরের মাঠে যখন একত্রিত করা হবে তখনকার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। আর এ ব্যাপারে বিভিন্ন সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ঠভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা আদম ‘আলাইহিস সালামকে যখন তার সন্তানদের থেকে জাহান্নামীদেরকে আলাদা করতে বলবেন, তখন এ অবস্থার সৃষ্টি হবে। [বুখারী ৩১৭০, মুসলিম ২২২] আদম ‘আলাইহিস সালামকে সম্বোধন সম্পর্কিত উপরোক্ত হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ভূকম্পন হাশর-নশর ও পুনরুত্থানের পর হবে। আর আয়াতের তাফসীরে এটাই সবচেয়ে প্রাধান্যপ্ৰাপ্ত মত। তবে কোনো কোনো সত্যনিষ্ঠ আলেম বলেন, উভয় উক্তির মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। কেয়ামতের পূর্বে ভূকম্পন হওয়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত এবং হাশর-নশরের পরে হওয়া বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। দু'টিই উদ্দেশ্য হতে পারে; কারণ দুটিই ভয়াবহ ব্যাপার।
የአረብኛ ቁርኣን ማብራሪያ:
يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ
যেদিন তোমরা তা দেখতে পাবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী বিস্মৃত হবে তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুকে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তাদের গর্ভপাত করে ফেলবে [১] ; মানুষকে দেখবেন নেশাগ্রস্থের মত, যদিও তারা নেশগ্রস্থ নয়। বরং আল্লাহর শাস্তি কঠিন [২]।
[১] কেয়ামতের এই ভূকম্পনের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আয়াতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে এবং স্তন্যদাত্রী মহিলারা তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা ভুলে যাবে। যদি এই ভূকম্পন কেয়ামতের পূর্বেই এই দুনিয়াতে হয়, তবে এরূপ ঘটনা ঘটার ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, مرضعة এমন অবস্থাকে বলা হয় যখন কার্যত সে দুধ পান করাতে থাকে এবং শিশু তার স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে থাকে। [ইবন কাসীর] কাজেই এখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে সেটি হচ্ছে, যখন কেয়ামতের সে কম্পন শুরু হবে, মায়েরা নিজেদের শিশু সন্তানদেরকে দুধ পান করাতে করাতে ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের কলিজার টুকরার কী হলো, একথা কোনো মায়ের মনেও থাকবে না। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] পক্ষান্তরে যদি এ ঘটনা হাশর-নশরের পরে হয় তাহলে এর ব্যাখ্যা কারো কারো মতে এরূপ হবে যে, যে মহিলা দুনিয়াতে গর্ভাবস্থায় মারা গেছে, কেয়ামতের দিন সে তদাবস্থায়ই উত্থিত হবে এবং যারা স্তন্যদানের সময় মারা গেছে, তারাও তেমনিভাবে শিশুসহ উখিত হবে। তারা তাদের সন্তানদের দুধ খাওয়ানোর কথা চিন্তাও করবে না। [কুরতুবী]

[২] একথা সুস্পষ্ট যে, এখানে কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করা বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করে পুনরুত্থান অস্বীকারকারীদের উপর দলীল প্রমাণাদি পেশ করা। তাই পরবর্তী আয়াতে সেদিকেই দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] অথবা উদ্দেশ্য তাদেরকে সেদিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে উদ্ধৃদ্ধ করা ও নেক কাজ করার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্ৰহণ করা। [কুরতুবী]
የአረብኛ ቁርኣን ማብራሪያ:
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيۡطَٰنٖ مَّرِيدٖ
মানুষের মধ্যে কিছু সংখ্যক না জেনে আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে [১] এবং সে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করে,
[১] এখানে আল্লাহ সম্পর্কে তাদের যে বিতর্কের উপর আলোচনা করা হচ্ছে তা হচ্ছে আখেরাতে বিচারের জন্য তাদেরকে মৃত্যু ও মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর পুনরায় জীবিত করতে পারেন কি না? আল্লাহ এখানে তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করছেন, যারা আল্লাহ যা তাঁর নবীর উপর নাযিল করেছেন তার অনুসরণ না করে, শয়তানের দেয়া পথের অনুসরণ করে পুনরুত্থান ও আল্লাহর শক্তিকে অস্বীকার করছে। আর সাধারণতঃ যারাই রাসূলের উপর আল্লাহর নাযিলকৃত বাণী ও সুস্পষ্ট হকের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে, তারাই বাতিলপন্থী নেতা, বিদ'আতের প্রতি আহবানকারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। [ইবন কাসীর]
የአረብኛ ቁርኣን ማብራሪያ:
كُتِبَ عَلَيۡهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهۡدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ
তার সম্বন্ধে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তাকে অভিভাবক বানাবে সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে পরিচালিত করবে প্রজ্জলিত আগুনের শাস্তির দিকে।
የአረብኛ ቁርኣን ማብራሪያ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّنَ ٱلۡبَعۡثِ فَإِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٖ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَةٖ ثُمَّ مِن مُّضۡغَةٖ مُّخَلَّقَةٖ وَغَيۡرِ مُخَلَّقَةٖ لِّنُبَيِّنَ لَكُمۡۚ وَنُقِرُّ فِي ٱلۡأَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى ثُمَّ نُخۡرِجُكُمۡ طِفۡلٗا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوٓاْ أَشُدَّكُمۡۖ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰٓ أَرۡذَلِ ٱلۡعُمُرِ لِكَيۡلَا يَعۡلَمَ مِنۢ بَعۡدِ عِلۡمٖ شَيۡـٔٗاۚ وَتَرَى ٱلۡأَرۡضَ هَامِدَةٗ فَإِذَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡهَا ٱلۡمَآءَ ٱهۡتَزَّتۡ وَرَبَتۡ وَأَنۢبَتَتۡ مِن كُلِّ زَوۡجِۭ بَهِيجٖ
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর---আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি [১] মাটি হতে [২], তারপর শুক্র [৩] হতে, তারপর ‘আলাকাহ’ [৪] হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে [৫]--- যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভ স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি [৬], পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও [৭]। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হিনতম বয়সে [৮] প্রত্যাবৃত্ত করা হয়, যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। আর আপনি ভূমিকে দেখুন শুস্ক, অতঃপর তাতে আমরা পানি বর্ষণ করলে তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ [৯];
[১] আয়াতটিকে আল্লাহ তা'আলা পুনরুত্থানের উপর প্রথম প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। প্রথম সৃষ্টি যার পক্ষে করা সম্ভব তাঁর পক্ষে দ্বিতীয় সৃষ্টি কিভাবে কঠিন হবে? প্রথম সৃষ্টিই প্রমাণ করছে যে, তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম। [ইবন কাসীর] আয়াতে মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ বলেন, মানুষের বীর্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত গর্ভাশয়ে সঞ্চিত থাকে। চল্লিশ দিন পর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিন অতিবাহিত হলে তা মাংসপিণ্ড হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে একজন ফিরিশতা প্রেরিত হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এ সময়েই তার সম্পর্কে চারটি বিষয় লিখে দেয়া হয়: [১] তার বয়স কত হবে, [২] সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে, [৩] সে কি কি কাজ করবে এবং [৪] পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে, না হতভাগা হবে। [বুখারী ২৯৬৯, মুসলিম ২৬৪৩]

[২] এর অর্থ হচ্ছে মানুষ নামের প্রজাতির সূচনা হয়েছে আদম আলাইহিস সালাম থেকে। তাঁকে সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তারপর পরবর্তী পর্যায়ে শুক্র থেকেই মানব বংশের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে: “মানুষের সৃষ্টি শুরু করেন মাটি থেকে তারপর তার বংশ-ধারা চালান একটি নির্যাস থেকে, যা বের হয় তুচ্ছ পানির আকারে।” [সূরা আস সাজদাহ ৭-৮]

[৩] নুতফা শব্দের অর্থ শুক্র বা বীর্য। সাধারণতঃ নুতফা বলা হয়, অল্প পানিকে। [কুরতুবী] মাটি থেকে আদম সৃষ্টির পর তার বংশধারা জারি রাখা হয়েছে পানির মাধ্যম। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে।” [সূরা আল-মুমিনুন ১২] অন্য আয়াতে বলেন, “তারপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে।” [সূরা আস-সাজদাহ ৮]

[৪] আলাকা শব্দের অর্থ শক্ত রক্ত, ঘন তাজা রক্ত বা প্রচণ্ড লাল বৰ্ণ [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] মানব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে যখন শুক্রটি মহিলার গর্ভাশয়ে স্থির হয়ে যায়, তখন সেটা চল্লিশ দিন এ অবস্থায় থাকে। এর সাথে যা জমা হওয়ার তা জমা হয়। তারপর সেটি একটি পর্যায়ে আল্লাহর হুকুমে লাল তাজা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এভাবে সেটি চল্লিশ দিন অতিবাহিত করে। তারপর সেটি পরিবর্তিত হয়ে একখণ্ড গোস্তের টুকরোতে পরিণত হয়ে যায়। তখন তাতে কোনো রূপ বা সূরত থাকে না। তারপর সেটি বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে। তখন তা থেকে মাথা, দু’হাত, বুক, পেট, দুই রান, দুই পা এবং বাকী অংগ-প্রত্যঙ্গসমূহ। কখনও কখনও সেটি সূরত গ্রহণ করার আগেই গর্ভপাত ঘটে যায়, আবার কখনও পূর্ণ অবয়ব ঘটনের পর সেটির গর্ভপাত হয়ে যায়। [ইবন কাসীর]

[৫] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বীর্য যখন কয়েক স্তর অতিক্রম করে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়, তখন মানব সৃষ্টির কাজে আদিষ্ট ফিরিশতা আল্লাহ তা'আলাকে জিজ্ঞেস করে:

يَارَبّ مُخَلَّقَةٍ وَ غَيْرِ مُخَلَّقَةٍ

অর্থাৎ এই মাংসপিণ্ড দ্বারা মানব সৃষ্টি আপনার কাছে অবধারিত কি না? যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তরে বলা হয় وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ তবে গর্ভাশয়ে সেই মাংসপিণ্ডকে পাত করে দেয়া হয় এবং তা সৃষ্টির অন্যান্য স্তর অতিক্রম করে না। পক্ষান্তরে যদি জবাবে مُخَلَّقَةٍ বলা হয়, তবে ফিরিশতা জিজ্ঞেস করে: ছেলে না মেয়ে, হতভাগা না ভাগ্যবান, বয়স কত, কি কর্ম করবে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করবে? এসব প্রশ্নের জবাব তখনই ফিরিশতাকে বলে দেয়া হয়। [ইবন জরীর ও ইবন আবী হাতিম] উল্লেখিত শব্দদ্বয়ের তাফসীর থেকে এই জানা গেল যে, যে বীর্য দ্বারা মানবসৃষ্টি অবধারিত হয় তা مُّخَلَّقَةٍ । আর যা বিনষ্ট ও পাত হওয়া অবধারিত তা وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] কোনো কোনো মুফাসসির مُّخَلَّقَةٍ ও وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ এর এরূপ তাফসীর করেন যে, যে শিশুর সৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ এবং সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ, সুঠাম ও সুষম হয়, সে مُّخَلَّقَةٍ অর্থাৎ পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট এবং যার কতক অঙ্গ আসম্পূর্ণ অথবা দৈহিক গড়ন ইত্যাদি আসম সে وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ । [কুরতুবী]

[৬] অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে তোমাদেরকে দুর্বল শিশুর আকারে বের করি। এ সময় শিশুর দেহ, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, জ্ঞান, নড়াচড়া ও ধারণশক্তি ইত্যাদি সবই দুর্বল থাকে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে এগুলোকে শক্তি দান করা হয় এবং পরিশেষে পূর্ণশক্তির স্তরে পৌঁছে যায়। [ইবন কাসীর]

(৭) أشد শব্দটির অর্থ বুদ্ধি, শক্তি ও ভাল-মন্দ পৃথকীকরণে পূর্ণতা। কারও কারও মতে, ত্ৰিশ থেকে চল্লিশ বয়সের মধ্যে। [ফাতহুল কাদীর] উদ্দেশ্য এই যে, পর্যায়ক্রমে উন্নতির ধারা ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে যতক্ষণ তোমাদের প্রত্যেকটি শক্তি পূর্ণতা লাভ না করে, যা যৌবনকালে প্রত্যক্ষ করা হয়। [ইবন কাসীর]

(৮) এটা সেই বয়সকে বলা হয়, যে বয়সে মানুষের বুদ্ধি, চেতনা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে ত্রুটি দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন বয়স থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত দোআ অধিক পরিমানে পাঠ করতেন:

اللّٰهُمّ إنّي أَعُوذُبِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوْذُبِكَ من الُجبْنِ وَأعوذُ بِكَ أنْ أرَدَّ إِلى أَرْذَلِ العُمُر وأعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدّنْيٰا وَأَعوذُ بِكَ مِنْ عَذابِ القَبر

‘হে আল্লাহ্! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি ভীরুতা থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি। অনুরূপভাবে হীনতম বয়সে উপণীত হওয়া থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তদ্রুপ আমি দুনিয়ার ফেতনায় নিপতিত হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাছাড়া আমি কবরের শাস্তি থেকেও আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।' [বুখারী ৫৮৯৩]

এমন বৃদ্ধাবস্থায় মানুষের নিজের শরীরের ও অংগ-প্রত্যংগের কোনো খোঁজ- খবর থাকে না। যে বেক্তি অন্যদেরকে জ্ঞান দিতো বুড়ো হয়ে সে এমন অবস্থায় পৌছে যায়, যাকে শিশুদের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। যে জ্ঞান, জানা শোনা, অভিজ্ঞতা ও দুরদর্শিতা ছিল তার গর্বের বস্তু তা এমনই অজ্ঞতায় পরিবর্তিত হয়ে যায় যে, একটি ছোট ছেলেও তার কথায় হাসতে থাকে। এভাবে বান্দার শক্তি দু’টি দুর্বল অবস্থা ঘিরে আছে। এক ছোট কালের দুর্বলতা, দুই বৃদ্ধাবস্থার দুর্বলতা। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বলতা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বক্ষম।” [সূরা আররুম ৫৪] [সা’দী]

(৯) আয়াতের এ অংশে আল্লাহ তা'আলা পুনরুত্থানের উপর দ্বিতীয় আরেকটি প্রমাণ পেশ করছেন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ যেভাবে তিনি মৃত ভূমিকে জীবিত করতে পারেন, যে যমীনে কোনো প্ৰাণের স্পন্দন নেই, কোনো উদ্ভিদ দেখা যায় না। তারপর তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করে তিনি জীবনের উন্মেষ ঘটান, সেভাবে তাঁর পক্ষে পুনরুত্থান ঘটানো কোনো কঠিন বিষয় নয়।
የአረብኛ ቁርኣን ማብራሪያ:
 
የይዘት ትርጉም ምዕራፍ: አል ሐጅ
የምዕራፎች ማውጫ የገፅ ቁጥር
 
የቅዱስ ቁርዓን ይዘት ትርጉም - የባንጋልኛ ትርጉም ‐ በአቡበክር ዘከሪያ - የትርጉሞች ማዉጫ

ባንጋልኛ ቋንቋ በዶ/ር አቡበክር ሙሐመድ ዘከሪያ ተተረጎመ

መዝጋት