যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বানিয়েছেন শয্যা [১] এবং তাতে বানিয়েছেন তোমাদের চলার পথ [২], যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার;
[১] উদ্দেশ্য এই যে, পৃথিবীর বাহ্যিক আকার শয্যা বা বিছানার মত এবং এতে বিছানার অনুরূপ আরাম পাওয়া যায়। সুতরাং এটা গোলাকার হওয়ার পরিপন্থী নয়। অন্যান্য স্থানেও পৃথিবীকে বিছানা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। [সূরা ত্বা-হা ৫৩, সূরা আন-নাবা ৬]
লক্ষণীয় যে, সে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হচ্ছে, مهد শব্দটির এক অর্থ হচ্ছে, সুস্থির বিছানা বা শয্যা। অপর অর্থ হচ্ছে, ‘দোলনা’। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে তোমাদের জন্য তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর, জালালাইন, আয়সার আত-তাফাসির]
[২] ভূ-পৃষ্ঠে পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমি অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই সব প্রাকৃতিক পথ যা আল্লাহ তৈরী করেছেন। [তাবারী, সা’দী]
আর যিনি আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন পরিমিতভাবে [১]। অতঃপর তা দ্বারা আমরা সঞ্জীবিত করি নির্জীব জনপদকে। এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।
[১] অর্থাৎ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন যা দীর্ঘকাল প্রতি বছর একই ভাবে চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে এমন কোনো অনিয়ম নেই যে কখনো বছরে দুই ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হবে আবার কখনো দু’ইশ ইঞ্চি হবে। তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে এমনভাবে বর্ষণ করেন সাধারণত তা ব্যাপক মাত্রায় ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী হয়। এটাও তাঁর জ্ঞান ও কৌশলেরই অংশ যে, তিনি ভূ-পৃষ্ঠের কিছু অংশকে প্রায় পুরোপুরিই বৃষ্টি থেকে বঞ্চিত করে পানি ও লতাগুল্ম শূন্য মরুভূমি বানিয়ে দিয়েছেন এবং অপর কিছু অঞ্চলে কখনো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেন আবার কখনো ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বর্ষন করেন। [দেখুন, তাবারী]
যাতে তোমরা এর পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ করবে যখন তোমরা এর উপর স্থির হয়ে বসবে এবং বলবে [১], ‘পবিত্ৰ-মহান তিনি, যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে।
[১] সওয়ারীর পিঠে বসার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে যেসব কথা উচ্চারিত হতো সেগুলোই এ আয়াতের উদ্দেশ্য ও অভিপ্ৰায়ের সর্বোত্তম বাস্তব ব্যাখ্যা। আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সফরে রওয়ানা হওয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীর জন্তুর উপর সওয়ার হওয়ার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলতেন। তারপর سُبْحٰنَ الَّذِىْ سَخَّرلَنَا থেকে শুরু করে لَمُنْقَلِبُوْنَ পর্যন্ত পাঠ করতেন। তারপর এই বলে দো'আ করতেন:
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে রিকাবে পা রাখলেন এবং সওয়ার হওয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ' বললেন। তারপর এ আয়াত অর্থাৎ سُبْحٰنَ الَّذِىْ سَخَّرَلَنَا থেকে শুরু করে لَمُنْقَلِبُوْنَ পর্যন্ত বললেন, তারপর ‘আলহামদুলিল্লাহ' তিনবার ও ‘আল্লাহু আকবার তিনবার বললেন এবং তারপর বললেন: “আপনি অতি পবিত্র। আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।” এরপর তিনি হেসে ফেললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি কারণে হাসলেন। তিনি বললেন, বান্দা (হে রব, আমাকে ক্ষমা করে দিন) বললে আল্লাহর কাছে তা বড়ই পছন্দনীয় হয়। তিনি বলেন, আমার এই বান্দা জানে যে, আমি ছাড়া ক্ষমাশীল আর কেউ নেই। [মুসনাদে আহমদ ১/৯৭, আবু দাউদ ২৬০২, তিরমিযী ৩৪৪৬]
আর তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে তাঁর অংশ সাব্যস্ত করেছে [১]। নিশ্চয়ই মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।
[১] অংশ বানিয়ে দেয়ার অর্থ আল্লাহর কোনো বান্দাকে তাঁর সন্তান ঘোষণা করা। কেননা সন্তান অনিবাৰ্যরূপেই পিতার স্বগোত্রীয় এবং তার অস্তিত্বের একটি অংশ। তাই কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহর কন্যা বা পুত্র বলার অর্থ এই যে, তাকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তায় শরীক করা। মুশরিকরা ফেরেশতাগণকে 'আল্লাহর কন্যা-সন্তান’ আখ্যা দিত। [দেখুন, জালালাইন, আল-মুয়াসসার]
আর যখন তাদের কাউকে সুসংবাদ দেয়া হয় যা রহমানের প্রতি তারা দৃষ্টান্ত পেশ করে তা দ্বারা, তখন তার মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায় এমতাবস্থায় যে সে দুঃসহ যাতনাক্লিষ্ট।
আর এভাবেই আপনার পূর্বে কোনো জনপদে যখনই আমরা কোনো সতর্ককারী পাঠিয়েছি তখনই তার বিলাসপ্রিয়রা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমারা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক মতাদর্শে পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে থাকব।’
সে সতর্ককারী বলেছে, ‘তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তার চেয়ে উৎকৃষ্ট পথ নিয়ে আসি তবুও কি (তোমরা তাদের অনুসরণ করবে)?’ তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তার সাথে কুফরিকারী।’
তারা কি আপনার রবের রহমত [১] বন্টন করে? আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং তাদের একজনকে অন্যের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; আর আপনার রবের রহমত তারা যা জমা করে তা থেকে উৎকৃষ্টতর।
[১] এখানে রবের রহমত অর্থ তাঁর বিশেষ রহমত, অর্থাৎ নবুওয়াত। [সা’দী, জালালাইন]
আর সব মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, এ আশংকা না থাকলে দয়াময়ের সাথে যারা কুফরী করে, তাদেরকে আমরা দিতাম তাদের ঘরের জন্য রৌপ্য-নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি যাতে তারা আরোহণ করে
আর (অনুরূপ দিতাম) স্বর্ণ নির্মিতও [১] এবং এ সবই তো শুধু দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সম্ভার। আর আখিরাত আপনার রবের নিকট মুত্তাকীদের জন্যই।
[১] কাফেররা বলেছিল, মক্কা ও তায়েফের কোনো বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিকে নবী করা হল না কেন? ৩৩ থেকে ৩৫ নং আয়াতসমূহে এর দ্বিতীয় জওয়াব দেয়া হয়েছে। এর সারমর্ম এই যে, নিঃসন্দেহে নবুওয়তের জন্যে কিছু যোগ্যতা ও শর্ত থাকা জরুরী। কিন্তু ধন-দৌলতের প্রাচুর্যের ভিত্তিতে কাউকে নবুওয়ত দেয়া যায় না। কেননা ধন-দৌলত আমার দৃষ্টিতে এত নিকৃষ্ট ও হেয় যে, সব মানুষের কাফের হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে আমি সব কাফেরের উপর স্বর্ণ-রৌপ্যের বৃষ্টি বর্ষণ করতাম। এই সম্পদ তো এমন সব মানুষের কাছেও আছে যাদের ঘূণ্য কাজ-কর্মের পংকিলতায় গোটা সমাজ পূতিগন্ধময় হয়ে যায়। অথচ একেই তোমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড বানিয়ে রেখেছ। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুনিয়া আল্লাহর কাছে যদি মশার এক পাখার সমানও মর্যাদা রাখত, তবে আল্লাহ কোনো কাফেরকে দুনিয়া থেকে এক ঢোক পানিও দিতেন না।’ [তিরমিয়ী ২৩২০]
আর নিশ্চয় তারাই (শয়তানরা) মানুষদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দেয়, অথচ মানুষরা (ভ্ৰষ্ট পথে থাকার পরও) মনে করে তারা (নিজেরা) হেদায়াতপ্ৰাপ্ত [১]।
[১] অর্থাৎ শয়তানরা সে সমস্ত লোকদেরকে সৎ পথ থেকে দূরে রাখে যারা আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ। শয়তানরা স্মরণবিমুখ লোকদের জন্য ভ্ৰষ্ট পথকে সুশোভিত করে দেখায়, আর আল্লাহর উপর ঈমান ও সৎকাজ করাকে অপছন্দনীয় করে রাখে। আর আল্লাহর স্মরণ বিমুখ লোকেরা শয়তানের পক্ষ থেকে সুশোভিত করার কারণে তারা যে ভ্ৰষ্ট মতাদর্শের উপর রয়েছে সেটাকেই হক ও হেদায়াতের পথ মনে করতে থাকে। [দেখুন-মুয়াসসার]
অতঃপর যদি আমরা আপনাকে নিয়ে যাই, তবে নিশ্চয় আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নেব [১]
[১] কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেছেন এখন প্রতিশোধ নেয়া বাকী আছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীকে তার উম্মাতের মধ্যে এমন কিছু দেখাননি যা তার মনোকষ্টের কারণ হবে। শেষ পর্যন্ত রাসূল চলে গেলেন। অন্যান্য নবীগণের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল, তারা তাদের জীবদ্দশাতেই তাদের উম্মাতের উপর শাস্তি আপতিত হতে দেখেছিলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪৪৭]
আর নিশ্চয় এ কুরআন আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্য যিকর [১] এবং অচিরেই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।
[১] আয়াতের এক অর্থ হচ্ছে, এ কুরআন আপনার ও আপনার কাওমের জন্য স্মরনিকাস্বরূপ। অপর অর্থ হচ্ছে, এ কুরআন আপনার ও আপনার কাওমের জন্য খুবই সম্মানের বস্তু। অর্থাৎ সুখ্যাতির বিষয়। উদ্দেশ্য এই যে, কুরআন পাক আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্য মহাসম্মান ও সুখ্যাতির কারণ। [তাবারী]
আর আপনার পূর্বে আমরা আমাদের রাসূলগণ থেকে যাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, আমরা কি রহমান ছাড়া ইবাদত করা যায় এমন কোনো ইলাহ স্থির করেছিলাম [১]?
[১] এখানে প্রশ্ন হয় যে, পূর্ববতী নবী-রাসূলগণ তো মারা গেছেন। তাদেরকে জিজ্ঞেস করার আদেশ কিরূপে দেয়া হল? অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে আয়াতের অর্থ এই যে, নবী-রাসূলগণের অনুসারীদের জিজ্ঞেস করুন। কোনো কোনো বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসরা ও মি'রাজের রাত্রে নবী-রাসূলগণকে এ প্রশ্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। [বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
তিনি তো কেবল আমারই এক বান্দা, যার উপর আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে বানিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত [১]।
[১] এটা নাসারাদের সে বিভ্ৰান্তির জওয়াব, যার ভিত্তিতে তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে উপাস্য স্থির করেছিল। পিতা ব্যতীত জন্ম গ্রহণের বিষয়টিকে তারা তার ইলাহ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছিল। আল্লাহ তা'আলা এর খণ্ডনে বলেন, এটা তো নিছক আমার কুদরতের এক প্রদর্শনী ছিল। আমি স্বভাবাতীত কাজ করারও ক্ষমতা রাখি। পিতা ব্যতীত জন্মগ্রহণ করা খুব বেশি স্বভাবাতীত কাজ নয়। কেননা আদমকে পিতা-মাতা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ্ তা'আলা ঈসা আলাইহিস সালামকে তাঁর অসীম ক্ষমতার নমুনা বানানোর অন্য অর্থ, তাকে এমন মু'জিযা দান করা যা না তার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়েছিলো না তার পরে। তিনি মাটি দিয়ে পাখি তৈরী করে তাতে ফুঁ দিতেন আর অমনি তা জীবন্ত পাখি হয়ে যেতো। তিনি জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করতেন এবং কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতেন। এমনকি মৃত মানুষকে পর্যন্ত জীবিত করতেন। আল্লাহর বাণীর তাৎপর্য হচ্ছে, শুধু অসাধারণ জন্ম এবং এসব বড় বড় মু'জিযার কারণে তাকে আল্লাহর দাসত্বের উর্ধ্ব মনে করা এবং আল্লাহর পুত্ৰ বলে আখ্যায়িত করে তার উপাসনা করা নিতান্তই ভ্ৰান্তি। একজন বান্দা হওয়ার চেয়ে অধিক কোনো মর্যাদা তার ছিল না। তাকে নিয়ামতসমূহ দিয়ে অভিসিক্ত করে আল্লাহ তাঁর অসীম ক্ষমতার নমুনা বানিয়ে দিয়েছিলেন। [দেখুন, তাবারী]
আর যদি আমরা ইচ্ছে করতাম তবে তোমাদের পরিবর্তে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা যমীনে উত্তরাধিকারী হত [১]।
[১] অধিকাংশ তাফসীরবিদ এখানে منكم শব্দটির অর্থ করেছেন, بدلاًمنكم বা তোমাদের পরিবর্তে। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, আমি ইচ্ছা করলে এমন কাজও করতে পারি, যার নযীর এপর্যন্ত কায়েম হয়নি। অর্থাৎ মানুষের ঔরসে ফেরেশতাও সৃষ্টি করতে পারি। [ফাতহুল কাদীর]
আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, يَخۡلُفُونَ এর অর্থ তারা যমীনের খলীফা বা প্রতিনিধির মর্যাদা লাভ করত অথবা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হতো। আয়াতের আরেক অর্থ হচ্ছে, তারা তোমাদের মত বংশবিস্তার করত। ফেরেশতারা উত্তরাধিকার রেখে যেত। [ইবন কাসীর, বাগভী]
আর ‘ঈসা যখন স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আসল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে এসেছি হিকমতসহ এবং তোমরা যে কিছু বিষয়ে মতভেদ করছ, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমার আনুগত্য কর’।
তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীগণ [১] সানন্দে জান্নাতে প্ৰবেশ কর।
[১] কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, মূল আয়াতে أزواج শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা স্ত্রীদের বুঝাতেও ব্যবহৃত হতে পারে, আবার কোনো ব্যক্তির একই পথের পথিক সমমনা ও সহপাঠী বন্ধুদের বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। এই ব্যাপক অৰ্থবোধক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এ জন্য যে, তার মধ্যে যেন এই উভয় অর্থই শামিল হয়। ঈমানদারদের ঈমানদার স্ত্রীরা এবং তাদের মুমিন বন্ধুরাও জান্নাতে তাদের সাথে থাকবে। [আদওয়াউল বয়ান]
বলুন, ‘দয়াময় আল্লাহর কোনো সন্তান থাকলে আমি হতাম তাঁর ইবাদতে ঘৃণাকারীদের অগ্রণী [১] ;
[১] ওপরে عَابِدِيْنَ এর অর্থ করা হয়েছে, ঘৃণাকারী। এটা আরবী বিভিন্ন বাকরীতিতে ব্যবহৃত আছে। অন্য অনুবাদ হচ্ছে, বলুন হে মুহাম্মাদ! যদি রহমানের কোনো সন্তান থাকে যেটা তোমরা তোমাদের কথায় দাবী করছ, তবে তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করণে ও তোমাদের দাবী অস্বীকারকরণে আমি প্রথম আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী। কারণ, তাঁর কোনো সন্তান থাকতে পারে না। [তাবারী]
তখন عَابِدِيْنَ শব্দের অর্থ হবে, مُؤْمِنِيْنَ আর কথার বাকী অংশ উহ্য থাকবে। তাছাড়া আরেক অনুবাদ হচ্ছে, ইবাদতকারী। অর্থাৎ যদি ধরে নেয়া হয়, তাঁর সন্তান আছে তারপরও আমি আল্লাহরই ইবাদাত করব। কারণ, আমি তাঁর বান্দা। আর বান্দা স্রষ্টার নির্দেশের বাইরে যেতে পারে না। [ইবন কাসীর] কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর সন্তান হওয়া কোনো পর্যায়ে সম্ভব। বরং উদ্দেশ্য একথা ব্যক্ত করা যে, আমি কোনো শক্রতা ও হঠকারিতাবশতঃ তোমাদের বিশ্বাস অস্বীকার করছি না; বরং প্রমাণাদির আলোকেই করছি। বিশুদ্ধ প্রমাণাদি দ্বারা আল্লাহর সন্তান থাকা প্রমাণিত হলে আমি অবশ্যই তা মেনে নিতাম। কিন্তু সর্বপ্রকার দলীল এর বিপক্ষে। কাজেই মেনে নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এ থেকে জানা গেল যে, মিথ্যাপন্থীদের সাথে বিতর্কের সময় নিজের সত্যপ্রিয়তা ফুটানোর উদ্দেশ্যে একথা বলা জায়েয ও সমীচীন যে, তোমার দাবী সত্য প্রমাণিত হলে আমি মেনে নিতাম। কেননা মাঝে মাঝে এধরনের কথায় প্রতিপক্ষের মনে নম্রতা সৃষ্টি হয়, যা তাকে সত্য গ্রহণে উৎসাহিত করে। [দেখুন, তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; আদওয়াউল বায়ান]
আর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু। আর কিয়ামতের জ্ঞান শুধু তাঁরই আছে এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।
4. إبقاء معلومات نسخة الترجمة الموجودة داخل المستند.
5. إفادة المصدر (QuranEnc.com) بأي ملاحظة على الترجمة.
6. تطوير الترجمات وفق النسخ الجديدة الصادرة من المصدر (QuranEnc.com).
7. عدم تضمين إعلانات لا تليق بترجمات معاني القرآن الكريم عند العرض.
نتائج البحث:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".