আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কছে মুশরিকদের চুক্তি কি করে বলবৎ থাকবে? তবে যাদের সাথে মসজিদুল হারামের সন্নিকটে [১] তোমরা পারস্পারিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে, যতক্ষণ তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে [২]; নিশ্চয় আল্লাহ্ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন।
[১] অর্থাৎ হুদায়বিয়ার দিন যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল এখানে তাই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] এখানে মাসজিদুল হারাম বলে পুরো হারাম এলাকা বুঝানো হয়েছে। কুরআনের সুরা আল-ফাত্হ এর ২৫ নং আয়াতেও মাসজিদুল হারাম বলে মক্কার পুরো হারাম এলাকা বুঝানো হয়েছে। আর হুদায়বিয়ার একাংশ হারাম এলাকার ভিতরে, যা সবচেয়ে নিকটতম হারাম এলাকা।
[২] কুরআন মজীদ মুসলিমদের তাকিদ করে যে, শক্রদের বেলায়ও ইনসাফ থেকে কোন অবস্থায় যেন বিচু্যত না হয়। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেমন, নগণ্যসংখ্যক মুশরিক ছাড়া বাকী সবাই চুক্তিভংগ করেছে। সাধারণতঃ এমতাবস্থায় বাছ-বিচার তেমন থাকে না। নির্দোষ ক্ষুদ্র দলকেও সংখ্যা গুরু অপরাধী দলের ভাগ্যই বরণ করতে হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা “তবে যাদের সাথে তোমরা মসজিদুল হারামের পাশে চুক্তি সম্পাদন করেছ” বলে ওদের পৃথক করে দেয়, যারা চুক্তিভংগ করেনি এবং আদেশ দেয়া হয় যে, সংখ্যাগুরু চুক্তিভংগকারী মুশরিকদের প্রতি রাগ করে এদের সাথে তোমরা চুক্তিভংগ করোনা; বরং এরা যতদিন তোমাদের প্রতি সরল ও চুক্তির উপর অবিচল থাকে, তোমরাও তাদের প্রতি সরল থাক। আক্রোশ বশতঃ তাদের কষ্ট দেবে না। আল্লাহ্ তা'আলা এ বিষয়টি অন্যত্র পরিষ্কার ব্যক্ত করেছেন, “কোনো জাতির শক্রতা যেন বে-ইনসাফ হতে তোমাদের উদ্বুদ্ধ না করে।” [সূরা আল-মায়েদাহ ৮] অনুরূপভাবে আলোচ্য সূরা আত-তাওবাহ এর ৮ নং আয়াতের শেষে বলা হয়েছে: “এদের অধিকাংশই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।" অর্থাৎ এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ভদ্র চিত্ত লোক চুক্তির উপর অবিচল থাকতে চায়। কিন্তু সংখ্যাগুরুর ভয়ে তারাও জড়সড়। যারা চুক্তি ভঙ্গ করেনি তারা কারা এটা নির্ধারণে কয়েকটি মত রয়েছে। ইমাম তাবার বলেন, তারা হচ্ছে, কিনানা এর বনী বকরের কোনো কোনো গোষ্ঠী, যারা তাদের অঙ্গীকারে অটল ছিল। কুরাইশ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ, নবম হিজরীতে যে সময় এ ঘোষণা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রদান করেছিলেন, তখন মক্কাতে কুরাইশ বা খুযাআতে কোনো কাফের অবশিষ্ট ছিল না, আর কুরাইশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝেও আর কোনো চুক্তি অবশিষ্ট ছিল না। সুতরাং বুঝা গেল যে, তারা ছিল কিনানার বনী বকরের কিছু লোক। [তাবারী]
কেমন করে চুক্তি বলবৎ থাকবে? অথচ তারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তারা তোমাদের আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের কোনো মর্যাদা দেবে না তারা মুখে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট রাখে; কিন্তু তাদের হৃদয় তা অস্বীকার করে; আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
তারা কোনো মুমিনের সাথে আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের মর্যাদা রক্ষা করে না আর তারাই সীমালংঘনকারী [১]।
[১] এ আয়াতে তাদের চরম হঠকারিতার বর্ণনা দিয়ে বলা হয় যে, এরা চুক্তিবদ্ধ মুসলিমদের সাথেই যে বিশ্বাসঘাতকতা ও আত্মীয়তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করে তা নয় বরং তারা যে কোনো মুসলিমের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে, আত্মীয়তাকেও জলাঞ্জলি দেবে। সুতরাং যে কারণে তারা তোমাদের বিরোধিতা করছে তা হচ্ছে, ঈমান। সেটাই তাদের কাছে কঠোর হয়েছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের দীনের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কর। তোমাদের দীনের শক্রদেরকে শক্র হিসেবেই গ্রহণ কর। [সা’দী]
অতএব তারা যদি তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই [১]; আর আমরা আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে [২]।
[১] মুশরিকদের উপরোক্ত ঘৃণ্য চরিত্রের প্রেক্ষিতে মুসলিমদের জন্যে তাদের সাথে চিরতরে সম্পর্কচ্ছেদ করে নেয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না, কুরআন যে আদর্শ ও ন্যায় নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার আলোকে মুসলিমদের হেদায়াত দেয়: “তবে, তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।" এখানে বলা হয় যে, কাফেররা যত শক্রতা করুক, যত নিপীড়ন চালাক, যখন সে মুসলিম হয়, তখন আল্লাহ যেমন তাদের কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করেন, তেমনি সকল তিক্ততা ভুলে তাদের ভ্রাতৃ-বন্ধনে আবদ্ধ করা এবং ভ্রাতৃত্বের সকল দাবী পূরণ করা মুসলিমদের কর্তব্য। এ শর্ত পূরণ করার ফলে তাদের উপর হাত তোলা ও তাদের জান-মাল নষ্ট করাই শুধু তোমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে না, বরং তার অধিক ফায়েদা এই হবে যে, তারা অন্যান্য মুসলিমদের সমান হতে পারবে। কোনোরূপ বৈষম্য ও পার্থক্য থাকবে না। এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথম কুফর ও শির্ক থেকে তাওবাহ। দ্বিতীয় সালাত কায়েম করা, তৃতীয় যাকাত আদায় করা। [আইসারুত তাফসীর] কারণ, ঈমান ও তাওবাহ হল গোপন বিষয় এর যথার্থতা সাধারণ মুসলিমের জানার কথা নয়। তাই ঈমান ও তাওবাহর দুই প্রকাশ্য আলামতের উল্লেখ করা হয়, আর তা হল, সালাত ও যাকাত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত সকল কেবলানুসারী মুসলিমের রক্তকে হারাম করে দিয়েছে। [তাবারী; ফাতহুল কাদীর] অথাৎ যারা নিয়মিত সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করে এবং ইসলামের বরখেলাফ কথা ও কর্মের প্রমাণ পাওয়া যায় না, সর্বক্ষেত্রে তারা মুসলিমরূপে গণ্য, তাদের অন্তরে সঠিক ঈমান বা মুনাফিকী যাই থাক না কেন। আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু আনহু যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এ আয়াত থেকে অস্ত্ৰধারনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে সাহাবায়ে কেরামের সন্দেহ নিরসন করেছিলেন। [তাবারী]
[২] এখানে জ্ঞান সম্পন্ন লোক বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ্র নাফরমানী করার পরিণাম জানে ও বুঝে এবং তার ভয়ও তাদের মনে জাগরুক রয়েছে। তাদের জন্যই আগের কথাগুলো বলা হলো, তাদের মাধ্যমেই আয়াত ও আহকাম জানা যাবে, আর তাদের মাধ্যমেই দীন ইসলাম ও শরীআত জানা যাবে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাদের মধ্যে গণ্য করুন যারা জানে ও সে অনুসারে আমল করে। [সা’দী]
আর যদি তারা তাদের চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন সম্মন্ধে কটুক্তি করে [১], তবে কুফরের নেতাদের সাথে যুদ্ধ কর [২]; এরা এমন লোক যাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই [৩]; যেন তারা নিবৃত হয় [৪]।
[১] এ বাক্য থেকে আলেমগণ প্রমাণ করেন যে, মুসলিমদের ধর্মের প্রতি বিদ্রুপ করা চুক্তিভঙ্গের নামান্তর। যে ব্যক্তি ইসলাম, ইসলামের নবী বা ইসলামী শরী’আতকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাকে চুক্তি রক্ষাকারী বলা যাবে না। শরীআত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে। [ইবন কাসীর]
[২] কতিপয় মুফাসসির বলেন, এখানে কুফর-প্রধান বলতে বোঝায় মক্কার ঐ সকল কোরাইশ প্রধান যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লোকদের উস্কানি দান ও রণ প্রস্তুতিতে নিয়োজিত ছিল। বিশেষতঃ এদের সাথে যুদ্ধ করতে আদেশ এজন্যে দেয়া হয় যে, মক্কাবাসীদের শক্তির উৎস হল এরা। [তাবারী; ইবন কাসীর] কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অঙ্গীকার অর্থ, ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় আনুগত্য। কারণ, সন্ধি-চুক্তি তো পূর্বেই প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তারপর ভবিষ্যতে তাদের সাথে নতুন করে কোনো চুক্তি বা সন্ধি করার এখন কোনো ইচ্ছাই ছিল না। কাজেই এখানে অঙ্গীকার ভংগ করা ও চুক্তি বিরোধী কাজ করার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। তা ছাড়া এ আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতের পরেই উল্লেখ হয়েছে। আর পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছে যে, “তারা যদি তাওবা করে, সালাত আদায় করে ও যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের ভাই হবে"। এরপর “তারা যদি অঙ্গীকার ভংগ করে” বলার পরিষ্কার অর্থ এই হতে পারে যে, এর দ্বারা সে লোকদের ইসলাম কবুল ও ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্যের অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করা-ই বুঝানো হয়েছে। আসলে এ আয়াতে মুর্তাদ হওয়ার ফেতনার কথাই বলা হয়েছে, যারা তখনো আসেনি, যা এর দেড় বছর পর আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের শুরুতে হয়েছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ সময় যে কর্মনীতি গ্রহণ করেছিলেন তা কিছুকাল পূর্বে এ আয়াতে দেওয়া হেদায়াত অনুরূপই ছিল। [তাবারী; ইবন কাসীর]
[৩] এখানে বলা হয়েছে: “এদের কোনো শপথ নেই”; কারণ, এরা শপথ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে অভ্যস্ত। তাই এদের শপথের কোনো মূল্য মান নেই। [সা’দী]
[৪] এ থেকে বুঝা যায় যে, মুসলিমদের যুদ্ধ-বিগ্রহের উদ্দেশ্য অপরাপর জাতির মত শক্ৰ নির্যাতন ও প্রতিশোধ স্পৃহা নিবারণ, কিংবা সাধারণ রাষ্ট্রনায়কগণের মত নিছক দেশ দখল না হওয়া চাই। বরং তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য হওয়া চাই শক্রদের মঙ্গল কামনা ও সহানুভূতি এবং বিপথ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা। হয়ত তারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে, ইসলামে অপবাদ দেয়া বাদ দিবে, অথবা ঈমান আনবে। [সা’দী]
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং রাসূলকে বের করে দেয়ার জন্য সংকল্প করেছে? আর তারাই প্রথম তোমাদের সাথে (যুদ্ধ) আরম্ভ করেছে [১]। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? আল্লাহ্কে ভয় করাই তোমাদের পক্ষে বেশী সমীচীন যদি তোমরা মুমিন হও।
[১] অর্থাৎ কাফেররাই প্রথম শুরু করেছে, কি শুরু করেছে? কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা বদরের যুদ্ধ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী] কারণ কাফের কুরাইশগণ যখন বদরে জানতে পারল যে, তাদের বাণিজ্য কাফেলা আশংকামুক্ত হয়েছে তখন তাদের মনের ভিতর হিংসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তারা মুসলিমদের আক্রমণ করা ব্যতীত ক্ষান্ত হতে চাইল না, তারাই তখন বদরের প্রান্তরে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে পাগলপ্রায় হয়ে গেল। কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা তাদের চুক্তিভঙ্গ করে বনু বকরের সাথে মিলিত হয়ে রাসূলের মিত্র বনু খোযা’আকে আক্রমণ করা বুঝানো হয়েছে। [সা’দী]
4. إبقاء معلومات نسخة الترجمة الموجودة داخل المستند.
5. إفادة المصدر (QuranEnc.com) بأي ملاحظة على الترجمة.
6. تطوير الترجمات وفق النسخ الجديدة الصادرة من المصدر (QuranEnc.com).
7. عدم تضمين إعلانات لا تليق بترجمات معاني القرآن الكريم عند العرض.
نتائج البحث:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".