ترجمة معاني القرآن الكريم - الترجمة البنغالية - أبو بكر زكريا * - فهرس التراجم


ترجمة معاني آية: (122) سورة: التوبة
۞ وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ
আর মুমিনদের সকলের একসাথে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়। অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন [১] করতে পারে [২] এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে [৩], যাতে তারা সতর্ক হয়।
[১] বলা হয়েছে (لِّیَتَفَقَّهُوۡا فِی الدِّیۡنِ) “যাতে দীনের মধ্যে বিজ্ঞতা অর্জন করে" উদ্দেশ্যে হলো দীনকে অনুধাবন করা কিংবা তাতে বিজ্ঞতা অর্জন করা। تفقه শব্দের অর্থও তাই। এটি فقه থেকে উদ্ভুত। فقه অর্থ বুঝা, অনুধাবন করা, সুক্ষ্মভাবে বুঝা।

[২] এ আয়াতটি দীনের এলম হাসিলের মৌলিক দলীল। [কুরতুবী] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে এ ব্যাপারে আরও কিছু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এলেম হাসিল করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ দিয়ে চলে, আল্লাহ এই চলার সওয়াব হিসাবে তাঁর রাস্তাকে জান্নাতমুখী করে দেবেন। আল্লাহর ফেরেশতাগণ দীনী জ্ঞান আহরণকারীর জন্য নিজেদের পালক বিছিয়ে রাখেন। আলেমের জন্য আসমান-যমীনের সমস্ত সৃষ্টি এবং পানির মৎস্যকুল দো'আ ও মাগফেরাত কামনা করে। অধিকহারে নফল এবাতদকারী লোকের উপর আলেমের ফযীলত অপরাপর তারকারাজির উপর পূর্ণিমা চাঁদের অনুরূপ। আলেমসমাজ নবীগণের ওয়ারিশ। নবীগণ স্বর্ণ ও রূপার মীরাস রেখে যান না। তবে এলমের মীরাস রেখে যান। তাই যে ব্যক্তি এলমের মীরাস পায়, সে যেন মহাসম্পদ লাভ করল। [তিরমিযী ২৬৮২] অপর হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে। সদকায়ে জারিয়া (যেমন, মসজিদ, মাদ্রাসা ও জনকল্যানমূলক প্রতিষ্ঠান)। এমন ইলম যার দ্বারা লোকেরা উপকৃত হয়। (যেমন, শাগরিদ রেখে গিয়ে এলমে দীনের চর্চা জারী রাখা বা কোনো কিতাব লিখে যাওয়া) নেককার সন্তান-যে তার পিতার জন্য দোআ করে। [মুসলিম ১৬৩১] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম শিক্ষা করা ফরয।” [ইবন মাজাহ ২২৪; ইবন আবদিল বার, জামেউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহি ২৫, ২৬] বলাবাহুল্য, এ হাদীস ও উপরোক্ত অপরাপর হাদীসে উল্লিখিত ইলম’ শব্দের অর্থ দীনের ইলম। তবে অন্যান্য বিষয়ের মত দুনিয়াবী জ্ঞান-বিজ্ঞানও মানুষের জন্য জরুরী। কিন্তু হাদীসসমূহে সে সবের ফযীলত বর্ণিত হয়নি। কারণ, দীনী জ্ঞান অর্জন দু’ভাগে বিভক্ত। ফরযে আইন ও ফরযে কিফায়া। ফরযে আইন: শরীআত মানুষের উপর যেসব কাজ ফরয বা ওয়াজিব করে দিয়েছে, সেগুলোর হুকুম আহকাম ও মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞান হাসিল করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয। যেমন, ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদাহসমূহের জ্ঞান, পবিত্রতা ও অপবিত্রতার হুকুম-আহকাম, সালাত, সাওম, যাকাত ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। ফরযে কেফায়া: যেমন, অধিকার আদায় করা, হুদুদ প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের মধ্যে বিবাদ নিরসন ইত্যাদি। কেননা সবার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকে এটা করতে গেলে নিজেদের অবস্থাও খারাপ হবে, অন্যদেরও। নিজেদের জীবন-জীবিকা অসম্পূর্ণ হবে বা বাতিল হবে। তাই কাউকে না কাউকে সুনির্দিষ্ট করে এর জন্য থাকতে হবে। আল্লাহ যাকে এর জন্য সহজ করে দেন সে এটা করতে পারে। তিনি প্রতিটি মানুষকে পূর্বেই এমন কিছু যোগ্যতা দিয়েছেন যা অন্যদের দেননি। সে হিসেবে প্রত্যেকে তার জন্য যা সহজ হয় তা-ই বহন করবে। [কুরতুবী; বাগভী]

[৩] ইবন কাসীর বলেন, যখন আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সবাইকে যুদ্ধে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো, বলা হলো যে, “তোমরা হাল্কা ও ভারী সর্বাবস্থায় বেরিয়ে পড়।" [সূরা আত-তাওবাহ ৪১] এবং বলা হলো, “মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববতী মরুবাসীদের জন্য সংগত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পিছনে রয়ে যাবে এবং তার জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে।” [সূরা আত-তাওবাহ ১২০] তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো যুদ্ধে বেরিয়ে পড়লে সবার উপরই বের হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তারপর এ আয়াত নাযিল করে সে নির্দেশের ব্যাপকতা রহিত করা হয়। তবে রহিত না বলে এটাও বলা যেতে পারে যে, আগের যে সমস্ত আয়াতে যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এ আয়াতে সে নির্দেশের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, এর দ্বারা প্রতিটি গোত্রের সবাই বের হওয়ার অর্থ, প্রতি গোত্র থেকে সবার বের না হতে পারলে তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক বের হবে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থেকে তার উপর যে সমস্ত ওহী নাযিল হয় সেটা গভীরভাবে জানবে, অনুধাবন করবে, তারপর তারা যখন তাদের গোত্রের কাছে ফিরে যাবে তখন তাদেরকে শক্ৰদের অবস্থা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করবে। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সুনির্দিষ্টভাবে যুদ্ধে বের হওয়া দ্বারা তাদের দুটি কাজই পূর্ণ হবে। (রাসূলের কাছে অবস্থান করে ওহীর জ্ঞান অর্জন ও সেখান থেকে এসে নিজের জাতিকে শক্রদের অবস্থা সম্পর্কে জানানো।) তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে যারাই গোত্র থেকে এভাবে যুদ্ধে বের হবে, তারা দু’টি সুবিধা পাবে না। তারা হয় ওহীর জ্ঞান অর্জনের জন্য, না হয় জিহাদের জন্য বের হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর এভাবে যুদ্ধের জন্য বের হওয়া ফরযে কিফায়া। [ইবন কাসীর] ইবন আব্বাস বলেন, আয়াতের অর্থ, মুমিনদের উচিত নয় যে, তারা সবাই যুদ্ধের জন্য বের হয়ে যাবে, আর রাসূলকে একা রেখে যাবে। যাতে করে তাদের মধ্যে যারা রাসূলের নির্দেশ ও অনুমতি নিয়ে বের হবে, তারা যখন ফিরে আসবে, তখন এ সময়ে রাসূলের কাছে যারা অবশিষ্ট ছিল তারা কুরআনের যা নাযিল হয়েছে তা যারা যুদ্ধে গেছে তাদেরকে জানাবে। তারা বলবে যে, তোমাদের যুদ্ধে যাওয়ার পরে আল্লাহ তোমাদের নবীর উপর কুরআনের যা নাযিল করেছেন তা আমরা শিখেছি। এভাবে যারা বের হয়েছিল তারা অবস্থান করে তাদের যাওয়ার পরে যা নাযিল হয়েছে তা শিখে নেবে। আর অন্য দল তখন যুদ্ধের জন্য বের হবে। আর এটাই হচ্ছে “যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে” এর অর্থ। অর্থাৎ যাতে করে নবীর কাছে যা নাযিল হয়েছে অবস্থান কারীরা তা জেনে নেয় এবং যারা অভিযানে গেছে তারা ফেরৎ আসলে সেটা অবস্থানকারীদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারে। এভাবে তারা সাবধান হতে পারে। [ইবন কাসীর]

ইবন আব্বাস থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এ আয়াত জিহাদের ব্যাপারে নয়, বরং যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুদার বংশের উপর দুর্ভিক্ষের বদ-দোআ করেন, তখন তাদের দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন পুরো গোত্রই মদীনায় আসা আরম্ভ করে দিল এবং তারা মুসলিম বলে মিথ্যা দাবী করতে লাগল। এভাবে তারা মদীনার খাবার ও পানীয়ের সংকট সৃষ্টি করে সাহাবীদের কষ্ট দিতে আরম্ভ করল। তখন আল্লাহ তা'আলা আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, তারা মুমিন নয়। ফলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তাদের পরিবার-স্বজনদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন এবং তাদের কাওমকে এরকম করা থেকে সাবধান করে দিলেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, তারা সবাই যেন নবীর কাছে চলে না আসে। তাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে কিছু লোক দীন শেখার জন্য আসতে পারে। অতঃপর তারা যখন তাদের সম্পপ্রদায়ের কাছে ফিরে যাবে তখন তাদের সম্প্রদায়কে সাবধান করতে পারে। [ইবন কাসীর]

হাসান বসরী বলেন, এ আয়াতে দীনের গভীর জ্ঞান ও সাবধান করা’র যে কথা বলা হয়েছে এ উভয় কাজটিই যারা অভিযানে বের হয়েছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট। তখন অর্থ হবে, কেন একটি দল দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে বের হয় না। অর্থাৎ তারা দেখবে ও শিক্ষা নিবে যে, কিভাবে আল্লাহ্ তা'আলা মুশরিকদের উপর তাদেরকে বিজয় দিয়েছেন, আর কিভাবে আল্লাহ তার দীনের সাহায্য করেছেন। আর তারা যখন তাদের কাওমের কাছে ফিরে যাবে তখন তারা তাদের কাওমের কাফিরদেরকে সেটা দ্বারা সাবধান করবে, তাদেরকে জানাবে, কিভাবে আল্লাহ তার রাসূল ও মুমিনদের সাহায্য করে থাকেন। ফলে তারা রাসূলের বিরোধিতা থেকে দুরে থাকবে। [বাগভী]

মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, সবাই একসাথে দাওয়াতের জন্য বের হবে না। বরং প্রতিটি বড় দল থেকে কোন ছোট একটি গ্রুপ দীন শেখা এবং তাদের যাওয়ার পরে যা নাযিল হয়েছে তা জানার জন্য জ্ঞানীর কাছে যাবে। তারা জানার পর তাদের সম্প্রদায়ের সবাইকে সাবধান করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাবে, যাতে তারা আল্লাহর ভয় ও শাস্তি থেকে সাবধান হয়। আর তখনও একটি গ্রুপ কল্যাণের কথা জানার জন্য বসে থাকবে। [বাগভী]

মূলতঃ ফিকহ হচ্ছে, দীনের আহকাম জানা। [বাগভী] এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি দীনের ফিকহ প্রদান করেন।" [বুখারী ৭১; মুসলিম ১০৩৭] অন্য হাদীসে এসেছে, “মানুষ যেন গুপ্তধন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের গুপ্তধনের মত। তাদের মধ্যে যারা জাহেলিয়াতে উত্তম তারা ইসলামেও উত্তম, যদি তারা দীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে।" [বুখারী ৩৪৯৩; মুসলিম ২৫২৬]
التفاسير العربية:
 
ترجمة معاني آية: (122) سورة: التوبة
فهرس السور رقم الصفحة
 
ترجمة معاني القرآن الكريم - الترجمة البنغالية - أبو بكر زكريا - فهرس التراجم

ترجمة معاني القرآن الكريم إلى اللغة البنغالية ترجمها د. أبو بكر محمد زكريا.

إغلاق