আর কিভাবে তোমরা কুফরী করবে অথচ আল্লাহ্র আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করা হয় এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রাসূল রয়েছেন [১]? আর কেউ আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করলে সে অবশ্যই সরল পথের হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।
[১] অর্থাৎ তোমাদের দ্বারা কুফরী হওয়া এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? তোমাদের কাছে তো আল্লাহ্র আয়াতসমূহ দিন-রাত্রি নাযিল হচ্ছেই। তাছাড়া তোমাদের সাথে আছেন আল্লাহ্র নবী যিনি সেটা তোমাদেরকে তেলাওয়াত করে শোনাচ্ছেন এবং তোমাদের কাছে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় তোমাদের পক্ষ থেকে কুফরী হওয়া আশ্চর্যজনক নয় কি? অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা’আলা এ কথাটি বলেছেন, “আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহ্র উপর ঈমান আন না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য ডাকছেন এবং আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে অংগীকার গ্রহণ করেছেন।” [সূরা আল-হাদীদ ৮]
কাতাদা বলেন, কুফরী না করার পক্ষে দুটি বড় নিদর্শন রয়েছে। একটি আল্লাহ্র নবী অপরটি আল্লাহ্র কিতাব। তন্মধ্যে আল্লাহ্র নবী চলে গেছেন কিন্তু তাঁর কিতাব অবশিষ্ট রয়েছে। যাতে রয়েছে আল্লাহ্র রহমত ও অনুগ্রহ হিসেবে হালাল-হারাম, আনুগত্য ও অবাধ্যতার বিষয়ে যাবতীয় বিধি-বিধান। [ইবন আবী হাতেম] কোনো কোনো বর্ণনায় এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আউস ও খাযরাজ গোত্রে অন্ধকার যুগে যে সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হয়েছিল কোনো এক মজলিসে তারা সেটা স্মরণ করে পরস্পর মারমুখী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর [১] এবং তোমরা মুসলিম (পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না [২]
এগারতম রুকূ‘
[১] আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ্র তাকওয়া অর্জনের হক্ক আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকওয়ার ঐ স্তর অর্জন কর, যা তাকওয়ার হক। কিন্তু তাকওয়ার হক বা যথার্থ তাকওয়া কী? আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ, রবী, কাতাদাহ ও হাসান রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, তাকওয়ার হক হল, প্রত্যেক কাজে আল্লাহ্র আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোনো কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা- কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা- অকৃতজ্ঞ না হওয়া। [ইবন কাসীর]
[২] এতে বুঝা যায় যে, পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন। আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয় সেটার উপর জোর দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে ঈমানদারের অবস্থান হবে আশা-নিরাশার মধ্যে। সে এক দিকে আল্লাহ্র রহমতের কথা স্মরণ করে নাজাতের আশা করবে, অপরদিকে আল্লাহ্র শাস্তির কথা স্মরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার ভয় করবে। কিন্তু মৃত্যুর সময় তাকে আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা নিয়েই মরতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে সু ধারণা না নিয়ে মারা না যায়।” [মুসলিম ২৮৭৭] অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার আশা থাকবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।
আর তোমরা সকলে আল্লাহ্র রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা হেদায়াত পেতে পার।
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে [১]; আর তারাই সফলকাম।
[১] ইসলাম যেসব সৎকর্ম ও পূণ্যের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রত্যেক নবী আপন আপন যুগে যে সব সৎকর্মের প্রচলন করেছেন, তা সবই আয়াতের উল্লেখিত ‘মারুফ’ তথা সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। ‘মারুফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিচিত। এসব সৎকর্ম সাধারণ্যে পরিচিত। তাই এগুলোকে ‘মারুফ’ বলা হয়। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব অসৎকর্মরূপী কাজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলে খ্যাত, তা সবই আয়াতে উল্লেখিত মুনকার’ এর অন্তর্ভুক্ত। এ স্থলে ‘ওয়াজিবাত’ অর্থাৎ জরুরী করণীয় কাজ ও ‘মা’আসী’ অর্থাৎ ‘গোনাহর কাজ’ -এর পরিবর্তে ‘মারুফ’ ও ‘মুনকার’ বলার রহস্য সম্ভবত এই যে, নিষেধ ও বাধাদানের নির্দেশটি শুধু সবার কাছে পরিচিত ও সর্বসম্মত মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটাই ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর পরে সরিষা পরিমাণ ঈমানও বাকী নেই। [মুসলিম ৪৯, আবু দাউদ ১১৪০]
অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অচিরেই আল্লাহ তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি নাযিল করবেন। তারপর তোমরা অবশ্যই তাঁর কাছে দো’আ করবে, কিন্তু তোমাদের দোআ কবুল করা হবে না।” [তিরমিযী ২১৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯১]
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক লোক জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহ্র রাসূল, কোন লোক সবচেয়ে বেশী ভাল? তিনি বললেন, সবচেয়ে ভাল লোক হল যে আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎকাজে আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে। [মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৩১]
তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে [১] ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুই কিতাবী সম্প্রদায় তাদের দীনের মধ্যে বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর এ উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। প্রত্যেক দলই জাহান্নামে যাবে কেবল একটি দল ব্যতীত। আর তারা হল আল-জামা’আতের অনুসারী। আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু দল বেরুবে যাদেরকে কুপ্রবৃত্তি এমনভাবে তাড়িয়ে বেড়াবে, যেমন পাগলা কুকুরে কামড়ানো ব্যক্তিকে সর্বদা কুকুর তাড়িয়ে বেড়ায়।” [আবু দাউদ ৪৫৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৪/১০২]
সেদিন কিছু মুখ উজ্জল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে [১]; যাদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), ‘তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে [২]? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে।’
[১] উজ্জ্বল মুখ ও কালো মুখ কারা, এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস বলেন, আহলে সুন্নাত সম্প্রদায়ের মুখমণ্ডল শুভ্র হবে এবং বিদ’আতীদের মুখমণ্ডল কালো হবে। আতা বলেন, মুহাজির ও আনসারগণের মুখমণ্ডল সাদা হবে এবং বণী-নাধীরের মুখমণ্ডল কালো হবে। ইকরিমাহ বলেন, আহলে কিতাবগণের এক অংশের মুখমণ্ডল কালো হবে অর্থাৎ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত লাভের পূর্বে তিনি নবী হবেন বলে বিশ্বাস করতো কিন্তু নবুওয়ত প্রাপ্তির পর তাকে সাহায্য ও সমর্থন করার পরিবর্তে তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘খারেজী সম্প্রদায়ের মুখমণ্ডল কালো হবে। আর যারা তাদের হত্যা করবে, তাদের মুখমণ্ডল সাদা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাতবার না শুনতাম, তবে বর্ণনাই করতাম না।’ [তিরমিয়ী ৩০০০]
[২] তাদের চেহারা কেন কালো হবে, তার কারণ বর্ণনায় এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদের চেহারা কালো হবার কারণ হচ্ছে, “তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে।” অন্য আয়াতে আল্লাহ্র উপর মিথ্যাচার করাকেই চেহারা কালো হওয়ার কারণ বলা হয়েছে, “আর যারা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, আপনি কিয়ামতের দিন তাদের চেহারাসমূহ কালো দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?” [সূরা আয-যুমার ৬০]
আবার কোনো কোনো আয়াতে গোনাহ অর্জন করার কারণে তাদের চেহারা কালো হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। “আর যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করবে; আল্লাহ থেকে তাদের রক্ষা করার কেউ নেই; তাদের মুখমন্ডল যেন রাতের অন্ধকারের আস্তরণে আচ্ছাদিত। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।” [সূরা ইউনুস ২৭]
কোনো কোনো আয়াতে কুফরী ও অপরাধী হওয়াকেই চেহারা কালো হবার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে, “আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা। এরাই কাফির ও পাপাচারী।” [সূরা আবাসা ৪০-৪১] বস্তুত এগুলোতে কোনো বিরোধ নেই। কারণ, এ সব কারণেই চেহারা কালো হবে। কাফেরদের চেহারা কালো হবেই।
আর যাদের মুখ উজ্জল হবে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে থাকবে [১], সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
[১] শুভ্র মুখমণ্ডলবিশিষ্টদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা সর্বদা আল্লাহ্র অনুকম্পায় অবস্থান করবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে আল্লাহ্র অনুকম্পা বলে জান্নাত বুঝানো হয়েছে। তবে জান্নাতকে অনুকম্পা বলার রহস্য এই যে, মানুষ যত ইবাদাতই করুক না কেন, আল্লাহ্র অনুকম্পা ব্যতীত জান্নাতে যেতে পারবে না। কারণ, ইবাদাত করা মানুষের নিজস্ব পরাকাষ্ঠা নয়; বরং আল্লাহ্র প্রদত্ত সামর্থের বলেই মানুষ ইবাদাত করতে পারে। সুতরাং ইবাদাত করলেই জান্নাতে প্রবেশ অপরিহার্য হয়ে যায় না। বরং আল্লাহ্র অনুকম্পার দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
অনুসন্ধানৰ ফলাফল:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".