মানুষের জন্য রয়েছে তার সামনে ও পিছনে একের পর এক আগমনকারী প্রহরী; তারা আল্লাহ্র আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে [১]। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে [২]। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ্ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন তবে তা রদ হওয়ার নয় [৩] এবং তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই।
[১] مُعَقِّبٰتٌ শব্দটি معقبة এর বহুবচন। যে দল অপর দলের পেছনে কাছাকাছি হয়ে আসে, তাকে معقبة অথবা متعقبة বলা হয়। (مِّنْۢ بَيْنِ يَدَيْهِ) এর শাব্দিক অর্থ, উভয় হাতের মাঝখানে। উদ্দেশ্য মানুষের সম্মুখ দিক। (مِنْ خَلْفِهٖ) এর অর্থ পশ্চাদ্দিক। আয়াতের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে।
এক. তারা আল্লাহ্র নির্দেশের কারণে তাকে হেফাযত করে। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ যে ব্যক্তি কথা গোপন করতে কিংবা প্রকাশ করতে চায় এবং যে ব্যক্তি চলাফেরাকে রাতের অন্ধকারে ঢেকে রাখতে চায় অথবা প্রকাশ্য সড়কে ঘুরাফেরা করে- এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের দল নিযুক্ত রয়েছে। তার সম্মুখে ও পশ্চাদ্দিক থেকে তাকে ঘিরে রাখে। তাদের কাজ ও দায়িত্ব পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তারা একের পর এক আগমন করে। রাতে তাদের জন্য কিছু পাহারাদার রয়েছে, যেমন রয়েছে দিনে। তারা তাকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে হেফাযত করে। যেমন, আরও কিছু ফেরেশতা রয়েছে যারা তার ভালো কিংবা মন্দ আমল হেফাযত করে। রাতে কিছু ফেরেশতা দিনে কিছু ফেরেশতা। তার ডানে বামে দুজন, যারা তার আমল লিখে। ডান দিকের ফেরেশতা তার সৎকর্ম লিখে, আর বাম দিকের ফেরেশতা তার অসৎকর্ম লিখে। আবার দুজন ফেরেশতা রয়েছে যারা তাকে হেফাযত করে, একজন তার সামনের দিকে অপরজন তার পিছনের দিকে। সুতরাং সে দিনে রাতে চার ফেরেশতার মাঝখানে বসবাস করে। যারা পরিবর্তিতভাবে আগমন করে থাকে। দু'জন আমল হেফাযতকারী আল্লাহ্র নির্দেশে মানুষের হেফাযত করা তাদের দায়িত্ব। আর বাকী দু’জন লিখক। তাদের আমলনামা লিখে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে: ‘ফিরিশতাদের দু’টি দল হেফাযতের জন্য নিযুক্ত রয়েছে। একদল রাত্রির জন্য এবং একদল দিনের জন্য। উভয় দল ফজর ও আসরের সালাতের সময় একত্রিত হন। ফজরের সালাতের পর রাতের পাহারাদার দল বিদায় নেন এবং দিনের পাহারাদাররা কাজ বুঝে নেন। আসরের সালাতের পর তারা বিদায় হয়ে যায় এবং রাতের ফিরিশতারা দায়িত্ব নিয়ে চলে আসে।’ [বুখারী ৭৪২৯, মুসলিম ৬৩২]
দুই. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আয়াতের আরেকটি অর্থ বর্ণিত আছে, তা হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশ থেকে তাকে হেফাযত করে। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাঁর কোনো প্রকার আযাব যেমন, জিন ইত্যাদি থেকে তাদেরকে হেফাযত করে। [কুরতুবী] তারপর যখন তার তাকদীর অনুসারে কোনো কিছু ঘটার জন্য আল্লাহ্র নির্দেশ আসে তখন ফিরিশতাগণ সরে পড়ে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের সাথে কিছুসংখ্যক হেফাযতকারী ফিরিশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তার উপর যাতে কোনো প্রাচীর ধ্বসে না পড়ে কিংবা সে কোনো গর্তে পতিত না হয়, কিংবা কোনো জন্তু অথবা মানুষ তাকে কষ্ট না দেয়, ইত্যাদি বিষয়ে ফিরিশতাগণ তার হেফাযত করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, তবে কোনো মানুষের তাকদীর লিখিত বিপদাপদে জড়িত হওয়ার সময় ফিরিশতারা সেখান থেকে সরে যায়।’ [ইবন হাজার, ফাতহুল বারী ৮/৩৭২] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন ফিরিশতা এবং একজন শয়তান জুড়ে দেয়া আছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সাথেও? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ্ আমাকে তার উপর সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে আত্মসমৰ্পন করেছে বা আমি নিরাপদ হয়ে গেছি, সে আমাকে ভালো কাজ ছাড়া আর কোনো কিছুর নির্দেশ দেয় না।’ [মুসলিম ২৮১৪] মোটকথা, হেফাযতকারী ফিরিশতা দীন ও দুনিয়া উভয় দিকের বিপদাপদ থেকেই মানুষকে নিদ্রায় ও জাগরণে হেফাযত করে। [ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ “আল্লাহ্ তা'আলা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ স্বয়ং তারাই নিজেদের অবস্থা ও কাজকর্ম মন্দ ও অশান্তিতে পরিবর্তন করে না নেয়।” [বাগভী] তারা যখন নিজেদের অবস্থা অবাধ্যতা ও নাফরমানীতে পরিবর্তিত করে নেয়, তখন আল্লাহ্ তা'আলাও স্বীয় কর্মপন্থা পরিবর্তন করে দেন। এ পরিবর্তন হয় তারা নিজেরা করে অথবা তাদের উপর যারা কর্তৃত্বশীল তারা করে, নতুবা তাদেরই মধ্যকার অন্যদের কারণে সেটা সংঘটিত হয়। যেমন, উহুদের মাঠে তীরন্দাযদের স্থান পরিবর্তনের কারণে মুসলিমদের উপর বিপদ এসে পড়েছিল। ইসলামী শরী’আতে এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে আয়াতের অর্থ এ নয় যে, তিনি কারও কোনো গুনাহ ব্যতীত তাদের উপর বিপর্যয় দেন না। বরং কখনও কখনও অপরের গুনাহের কারণে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আমাদের মধ্যে নেককাররা থাকা অবস্থায় কি আমাদের ধ্বংস করা হবে? তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, যখন অন্যায় অপরাধ ও পঙ্কিলতা বৃদ্ধি পায়।’ [বুখারী ৩৩৪৬; মুসলিম ২৮৮০]
সারকথা, মানুষের হেফাযতের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের পাহারা নিয়োজিত থাকে; কিন্তু সম্প্রদায় যখন আল্লাহ্র নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা ও তাঁর আনুগত্য ত্যাগ করে পাপাচার, ভ্রষ্টতা ও অবাধ্যতার পথ বেছে নেয়, তখন আল্লাহ্র গযব ও আযাব তাদের উপর নেমে আসে। এ আযাব থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “এটা এজন্যে যে, যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন, তাতে পরিবর্তন আনবেন।” [সূরা আল-আনফাল ৫৩]
[৩] বলাবাহুল্য, যখন আল্লাহ্ তা'আলাই কাউকে আঘাত দিতে চান, বিপদে ফেলতে চান, অসুখ দিতে চান, রোগাক্রান্ত করতে চান, তখন কেউ তার সে বিপদ ফেরাতে পারে না। [কুরতুবী] আল্লাহ্র নির্দেশের বিপরীতে তার সাহায্যার্থেও কেউ এগিয়ে আসতে পারে না। সুতরাং তোমরা এ ধরনের ভুল ধারণা পোষণ করো না যে, যা কিছু করতে থাকো না কেন আল্লাহ্র দরবারে এমন কোনো শক্তিশালী পীর, ফকীর বা কোনো পূর্ববতী -পরবর্তী মহাপুরুষ অথবা কোনো জিন বা ফেরেশতা আছে যে তোমাদের নযরানার উৎকোচ নিয়ে তোমাদেরকে অসৎকাজের পরিণাম থেকে বাঁচাবে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর থেকে তাঁর শাস্তি রদ করা হয় না।” [আল-আন’আম ১৪৭] আরো বলেছেন, “অপরাধী সম্পপ্রদায় হতে আমাদের শাস্তি রদ করা যায় না।” [সূরা ইউসুফ ১১০]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Search results:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".