Translation of the Meanings of the Noble Qur'an - Bengali translation - Abu Bakr Zakaria * - Translations’ Index


Translation of the meanings Ayah: (7) Surah: An-Najm
وَهُوَ بِٱلۡأُفُقِ ٱلۡأَعۡلَىٰ
আর তিনি ছিলেন ঊর্ধ্বদিগন্তে [১],
[১] এ আয়াতে জিবরাঈলকে আসল আকৃতিতে দেখার বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। দিগন্ত অর্থ আসমানের পূর্ব প্রান্ত যেখানে সূর্য উদিত হয় এবং দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ে। সূরা আত-তাকভীরের ২৩ আয়াতে একেই পরিষ্কার দিগন্ত বলা হয়েছে। দুটি আয়াত থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমবার যখন জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে দেখেন তখন তিনি আসমানের পূর্ব প্রান্ত থেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মূলতঃ মহাশক্তিশালী, সহজাত শক্তিসম্পন্ন বা প্রজ্ঞাবান, সৌন্দর্যমণ্ডিত, সোজা হওয়া এবং নিকটবতী হওয়া এগুলো সব জিবরাঈলের বিশেষণ। এই তফসীরের পক্ষে অনেক সঙ্গত কারণ রয়েছে। ঐতিহাসিক দিক দিয়েও সূরা আন-নাজম সম্পূর্ণ প্রাথমিক সূরাসমূহের অন্যতম। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় সর্বপ্রথম যে সূরা প্রকাশ্যে পাঠ করেন তা সূরা আন-নাজম। বাহ্যত মে'রাজের ঘটনা এরপরে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ এই যে, হাদীসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব আয়াতের যে তফসীর করেছেন, তাতে জিবরাঈলকে দেখার কথা উল্লেখ আছে। ইমাম শা'বী তার উস্তাদ মাসরুক থেকে বর্ণনা করেন- তিনি একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে ছিলেন এবং আল্লাহ তা'আলাকে দেখা সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। মাসরুক বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

وَلَقَدْرَاٰهُ بِالْاُفُقُ الْمُبِيْنِ এবং وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেলেন, মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি উত্তরে বলেছেন, আয়াতে যাকে দেখার কথা বলা হয়েছে, সে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মাত্র দু’বার আসল আকৃতিতে দেখেছেন। আয়াতে বর্ণিত দেখার অর্থ এই যে, তিনি জিবরাঈলকে আকাশ থেকে ভূমির দিকে অবতরণ করতে দেখেছেন। তার দেহাকৃতি আসমান ও যমীনের মধ্যবতী শূন্যমণ্ডলকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। [বুখারী ৪৬১২, ৪৮৫৫, মুসলিম ১৭৭/২৮৭, ২৮৮, ২৮৯, তিরমিয়ী ৩০৬৮, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৪১]

অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: এই আয়াত সম্পর্কে সর্বপ্রথম আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, আপনি আপনার পালনকর্তাকে দেখেছেন কি? তিনি বললেন: না, বরং আমি জিবরাঈলকে নিচে অবতরণ করতে দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৬] অনুরূপভাবে শায়বানী বর্ণনা করেন যে, তিনি আবু যরকে এই আয়াতের অর্থ জিজ্ঞাসা করেন, তিনি জওয়াবে বলেন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরাঈলকে ছয়শত ডানাবিশিষ্ট দেখেছেন। [বুখারী ৪৮৫৬] ইবন জারীর রাহে মাহুল্লাহ আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরাঈলকে রফরফের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন। তাঁর অস্তিত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যবতী শূন্যমণ্ডলকে ভরে রেখেছিল। [তাফসীর তাবারী ৩২৪৭০]

এ সব বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সূরা নাজমের উল্লেখিত আয়াতসমূহ দেখা ও নিকটবর্তী হওয়া বলে জিবরাঈলকে দেখা ও নিকটবর্তী হওয়া বোঝানো হয়েছে। আয়েশা, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আবুযর গেফারী, আবু হুরায়রা প্রমুখ সাহাবীর এই উক্তি। তাই ইবন কাসীর আয়াতসমূহের তফসীরে বলেন, আয়াতসমূহে উল্লেখিত দেখা ও নিকটবর্তী হওয়ার অর্থ জিবরাঈলকে দেখা ও জিবরাঈলের নিকটবর্তী হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রথমবার আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন এবং দ্বিতীয়বার মে'রাজের রাত্রিতে সিদরাতুল-মুন্তাহার নিকটে দেখেছিলেন। প্রথমবারে দেখা নবুওয়তের সম্পূর্ণ প্রাথমিক যমানায় হয়েছিল। তখন জিবরাঈল সূরা ইকরার প্রাথমিক আয়াতসমূহের প্রত্যাদেশ নিয়ে প্রথমবার আগমন করেছিলেন। এরপর ওহীতে বিরতি ঘটে, যদ্দরুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিদারুণ উৎকণ্ঠা ও দুর্ভাবনার মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করার ধারণা বারবার তার মনে জাগ্রত হতে থাকে। কিন্তু যখনই এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হত, তখনই জিবরাঈল আলাইহিস সালাম দৃষ্টির অন্তরালে থেকে আওয়াজ দিতেন: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আল্লাহ তা’আলার সত্য নবী, আর আমি জিবরাঈল। এই আওয়াজ শুনে তার মনের ব্যাকুলতা দূর হয়ে যেত। যখনই মনে বিরূপ কল্পনা দেখা দিত, তখনই জিবরাঈল আলাইহিস সালাম অদৃশ্যে থেকে এই আওয়াজের মাধ্যমে তাকে সাস্তুনা দিতেন। অবশেষে একদিন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মক্কার উন্মুক্ত ময়দানে তার আসল আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলেন। তার ছয়শত বাহু ছিল এবং তিনি গাোটা দিগন্তকে ঘিরে রেখেছিলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন এবং তাকে ওহী পৌঁছান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিবরাঈলের মাহাত্ম্য এবং আল্লাহ তা'আলার দরবারে তার সুউচ্চ মর্যাদার স্বরূপ ফুটে ওঠে। সারকথা এই যে, এই প্রথম দেখা এ জগতেই মক্কার দিগন্তে হয়েছিল। দ্বিতীয়বার দেখার কথা وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَىٰ আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। মে'রাজের রাত্রিতে এই দেখা হয়। উল্লেখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই বলা যায় যে, সূরা আন-নাজমের শুরুভাগের আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’আলাকে দেখার কথা আলোচিত হয়নি; বরং জিবরাঈলকে দেখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরাঈলকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন। প্রথমবার নবুওয়াতের প্রারম্ভে। আর দ্বিতীয়টি মি'রাজের রাত্ৰিতে, সিদরাতুল মুস্তাহার নিকটে। [দেখুন, বুখারী ৪৮৫৫, ৪৮৫৬]
Arabic explanations of the Qur’an:
 
Translation of the meanings Ayah: (7) Surah: An-Najm
Surahs’ Index Page Number
 
Translation of the Meanings of the Noble Qur'an - Bengali translation - Abu Bakr Zakaria - Translations’ Index

Translation of the Quran meanings into Bengali by Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria.

close