Check out the new design

કુરઆન મજીદના શબ્દોનું ભાષાંતર - બંગાળી ભાષામાં અનુવાદ - અબુ બકર ઝકરિય્યા * - ભાષાંતરોની અનુક્રમણિકા


શબ્દોનું ભાષાંતર સૂરહ: અલ્ હજ્   આયત:
وَهُدُوٓاْ إِلَى ٱلطَّيِّبِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ وَهُدُوٓاْ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلۡحَمِيدِ
আর তাদেরকে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হয়েছিল [১] এবং তারা পরিচালিত হয়েছিল পরম প্রশংসিত আল্লাহর পথে।
[১] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে কালেমা তাইয়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] কোনো কোনো বর্ণনায় কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ। [কুরতুবী] কারও কারও নিকট, আল-কুরআনের প্রতি তাদেরকে পথ দেখানো হবে। এজন্যই বলা হয় যে, এখানে দুনিয়ায় পথ দেখানো উদ্দেশ্য। সুতরাং দুনিয়াতে তাদেরকে কালেমায়ে শাহাদাত এবং কুরআন পড়ার প্রতি পথনির্দেশ করা হয়েছিল। [কুরতুবী] কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে উত্তম বাণী বলে আখেরাতের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আখেরাতে তাদেরকে “আলহামদুলিল্লাহ।” বলার প্রতি হেদায়াত করা হবে। কেননা তারা জান্নাতে বলবে, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে এ পথের হিদায়াত করেছেন।” [সূরা আল-আরাফ ৪৩] “আর তারা বলবে, ‘প্ৰশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুৰ্দশা দূরীভূত করেছেন।” [সূরা ফাতির ৩৪] সুতরাং জান্নাতে কোনো খারাপ কথা ও মিথ্যা বা অসার শোনা যাবে না। তারা যাই বলবে তা-ই ভালো কথা। আর তারা জান্নাতে আল্লাহর পথেই চলবে, কারণ সেখানে আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী কোনো কিছু থাকবে না। কারও কারও মতে, আয়াতে উত্তম কথা বলে সে সমস্ত কথা বোঝানো হয়েছে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে উত্তম সুসংবাদ আকারে প্রদান করা হয়ে থাকে। [কুরতুবী]

আর প্রশংসিতের পথে বলে এমন স্থানের কথা বলা হয়েছে যেখানে তারা তাদের রাবের প্রশংসা করবে। কারণ তিনি তাদের প্রতি দয়া করেছেন, নেয়ামত দিয়েছেন। অর্থাৎ জান্নাত। যেমন হাদীসে এসেছে, “তাদের প্রতি তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করার ইলহাম হবে যেমন দুনিয়াতে কেউ শ্বাস-প্ৰশ্বাস নিয়ে থাকে।” [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৮৪] অপর কারও মতে, এখানে দুনিয়াতে সিরাতুল মুস্তাকীম প্রাপ্তির কথা বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]
અરબી તફસીરો:
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ ٱلَّذِي جَعَلۡنَٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءً ٱلۡعَٰكِفُ فِيهِ وَٱلۡبَادِۚ وَمَن يُرِدۡ فِيهِ بِإِلۡحَادِۭ بِظُلۡمٖ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছেও মানুষকে বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ [১] থেকে ও মসজিদুল হারাম থেকে [২], যা আমরা করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সব মানুষের জন্য সমান [৩], আর যে সেখানে অন্যায়ভাবে ‘ইলহাদ [৪]’ তথা দীনবিরোধী পাপ কাজের ইচ্ছে করে তাকে আমরা আস্বাদন করাব যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
[১] আল্লাহর পথ বলে ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে, তারা নিজেরা তো ইসলাম থেকে দূরে সরে আছেই; অন্যদেরকেও ইসলাম থেকে বাধা দেয়। [ফাতহুল কাদীর]

[২] এটা তাদের দ্বিতীয় গোনাহ। তারা মুসলিমদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। মসজিদুল হারাম' ঐ মসজিদকে বলা হয় যা বায়তুল্লাহর চতুস্পার্শ্বে নির্মিত হয়েছে। এটা মক্কার হারাম শরীফের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু কোনো কোনো সময় ‘মসজিদুল হারাম’ বলে মক্কার সম্পূর্ণ হারাম শরীফ বোঝানো হয়; যেমন হুদায়বিয়ার ঘটনাতে মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুধু মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়নি; বরং হারামের সীমানায় প্রবেশ করতে বাধা দান করেছিল। সহীহ হাদীস দ্বারা তা-ই প্রমাণিত রয়েছে। কুরআনুল করীম এ ঘটনায় মসজিদুল হারাম শব্দটি সাধারণ হারাম অর্থে ব্যবহার করেছে এবং বলেছে:

وَصَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

[সূরা আল-ফাতহ ২৫] তাফসীরে দুররে-মানসূরে এ স্থানে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে রেওয়ায়েত বৰ্ণনা করা হয়েছে যে, আয়াতে মসজিদে হারাম বলে হারাম এলাকা বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

[৩] এখানে যারা কুফরি করেছে, আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিচ্ছে এবং মাসজিদুল হারাম থেকে বাধা দেয় তাদের কি অবস্থা হবে সেটা উল্লেখ করা হয় নি। তবে আয়াত থেকে সেটা বুঝা যায়, আর তা হচ্ছে, তারা ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে বা ধ্বংস হবে। [ফাতহুল কাদীর]

আয়াতে বর্ণিত ‘সব মানুষের জন্য সমান' বলে বুঝানো হয়েছে যে, হারাম কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোত্রের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। বরং সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত, যার যিয়ারত থেকে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই। মাসজিদুল হারাম ও হারাম শরীফের যে যে অংশে হজের ক্রিয়াকর্ম পালন করা হয়; যেমন- ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান, মীনার সমগ্র ময়দান, আরাফাতের সম্পূর্ণ ময়দান এবং মুযদালিফার গোটা ময়দান, এসব ভূখণ্ড সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য সাধারণ ওয়াকফ। কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত মালিকানা এগুলোর উপর কখনো হয়নি এবং হতেও পারে না। এ বিষয়ে সমগ্র উম্মত ও ফেকাহবিদগণ একমত। এগুলো ছাড়া মক্কা মুকাররমার সাধারণ বাসগৃহ এবং হারামের অবশিষ্ট ভূখণ্ড সম্পর্কেও কোনো কোনো ফেকাহাবিদ বলেন যে, এগুলোও সাধারণ ওয়াকফ সম্পত্তি। এগুলো বিক্রয় করা ও ভাড়া দেয়া হারাম। প্রত্যেক মুসলিম যে কোনো স্থানে অবস্থান করতে পারে। তবে অধিকসংখ্যক ফেকাহবিদগণের উক্তি এই যে, মক্কার বাসগৃহসমূহের উপর ব্যক্তিবিশেষের মালিকানা হতে পারে। কারণ, ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি সফওয়ান ইবন উমাইয়ার বাসগৃহ ক্রয় করে কয়েদীদের জন্য জেলখানা নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে হারামের যে যে অংশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো সর্বাবস্থায় সাধারণ ওয়াকফ। এগুলোতে প্রবেশে বাধা দেয়া হারাম। আলোচ্য আয়াত থেকে এই অবৈধতা প্রমাণিত হয়। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

[৪] অভিধানে إلحاد এর অর্থ সরল পথ থেকে সরে যাওয়া, ঝুঁকে পড়া। অর্থাৎ কোনো বড় মারাত্মক গোনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করাই ইলাহাদ। [ইবন কাসীর] তবে এখানে আল্লাহ তা’আলা যুলুমের সাথে ইলহাদের কথা বলেছেন। ইবন আব্বাস এর অর্থ করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ অপরাধ করা। ইবন আব্বাস থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, হারাম শরীফে আল্লাহ যা হারাম করেছেন যেমন, হত্যা, খারাপ আচরণ, এসবের কোনো কিছুকে হালাল মনে করা। ফলে যে যুলুম করেনি তার উপর যুলুম করা, যে হত্যা করেনি তাকে হত্যা করা। সুতরাং কেউ যদি এ ধরনের কোনো আচরণ করে তবে আল্লাহ তার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। অপর কারও কারও মতে, এখানে যুলুম অর্থ শির্ক। মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা। মুজাহিদ থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে যে, কোনো খারাপ করাই যুলুম শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর] মোটকথা, যাবতীয় খারাপ কাজই এর মধ্যে শামিল হবে। যদিও সকল অবস্থায় খারাপ কাজ করা পাপ কিন্তু হারাম শরীফে একাজ করা আরো অনেক বেশী মারাত্মক পাপ। মুফাসসিরগণ বিনা প্রয়োজনে কসম খাওয়া কিংবা চাকরদেরকে গালি দেয়াকে পর্যন্ত হারাম শরীফের মধ্যে বে-দীনী গণ্য করেছেন এবং একে এ আয়াতের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এই আয়াতের তাফসীর এরূপও বর্ণিত আছে যে, হারাম শরীফ ছাড়া অন্যত্ৰ পাপ কাজের ইচ্ছা করলেই পাপ লেখা হয় না, যতক্ষণ না তা কার্যে পরিণত করা হয়। কিন্তু হারামে শুধু পাকাপোক্ত ইচ্ছা করলেই গোনাহ লেখা হয়। [ইবন কাসীর]
અરબી તફસીરો:
وَإِذۡ بَوَّأۡنَا لِإِبۡرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلۡبَيۡتِ أَن لَّا تُشۡرِكۡ بِي شَيۡـٔٗا وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ
আর স্মরণ করুন যখন আমরা ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম [১] ঘরের স্থান [২], তখন বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কোনো কিছু শরীক করবেন না [৩] এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, সালাতে দণ্ডায়মান এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখুন [৪]।
চতুর্থ রুকু’

[১] এ আয়াতে যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদাত করে তাদের ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। যারা আল্লাহর সাথে এমন ঘরে শির্ক করে যার ভিত্তি রচিত হয়েছিল তাওহীদের উপর। আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সেটার স্থান দেখিয়ে দিলেন, তার কাছে সমৰ্পন করলেন এবং তা তৈরী করার অনুমতি দিলেন। [ইবন কাসীর] অভিধানে بوأ শব্দের অর্থ বর্ণনা করা। [জালালাইন] অপর অর্থ তৈরী করা, কারণ সেটার স্থান অপরিচিত ছিল। [মুয়াসসার] আয়াতের অর্থ এই: একথা উল্লেখযোগ্য ও স্মর্তব্য যে, আমি ইবরাহীম 'আলাইহিস সালামকে বায়তুল্লাহর অবস্থানস্থলের ঠিকানা বর্ণনা করে দিয়েছি। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে ঘর বানানোর নির্দেশ দেয়া হলো, তিনি বিবি হাজেরা ও ইসমাঈলকে নিয়ে তা বানাতে বের হলেন, যখন মক্কার উপত্যকায় আসলেন তখন তিনি তার মাথার উপর ঘরের স্থানটুকুতে মেঘের মত দেখলেন, যাতে মাথার মত ছিল, সে মাথা থেকে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামকে বলা হল: হে ইবরাহীম! আপনি আমার ছায়ায় বা আমার পরিমাণ স্থানে ঘর বানান এর চেয়ে কমাবেন না, বাড়াবেনও না। তারপর যখন ঘর বানানো শেষ করলেন, তখন তিনি বের হয়ে চলে গেলেন এবং ইসমাঈল ও হাজেরাকে ছেড়ে গেলেন, আর এটাই আল্লাহর বাণী: وَاِذْبَوَّاُنَالِاِبْرٰهِيْمَ আয়াতের মর্মার্থ। [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৫৫১]

[২] مَكَانَ الْبَيْتِ শব্দে ইঙ্গিত রয়েছে যে, বায়তুল্লাহ্ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, এর প্রথম নির্মাণ আদম 'আলাইহিস সালামকে পৃথিবীতে আনার পূর্বে অথবা সাথে সাথে হয়েছিল। আদম 'আলাইহিস সালাম ও তৎপরবতী নবীগণ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতেন। কিন্তু এ সমস্ত বর্ণনা খুব শক্তিশালী নয়। সহীহ বৰ্ণনানুসারে ইবরাহীম আলাইহিস সালামই প্রথম কা'বা শরীফ নির্মাণ করেছিলেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, আমরা তাকে হবু ঘরের স্থান দেখিয়েছিলাম। এ অর্থ হবে না যে, সেখানে ঘর ছিল আর তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে আবার তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নির্মাণের জন্য দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইবন কাসীর রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াত থেকেই অনেকে প্রমাণ করেছেন যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামই প্রথম আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেছেন। তার পূর্বে সেটি নির্মিত হয়নি। এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদীস, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন মসজিদটি প্রথম নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, বাইতুল মুকাদ্দাস। আমি বললাম, এ দুয়ের মাঝখানে কত সময়? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। [বুখারী ৩৩৬৬; মুসলিম ৫২০]

[৩] অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে এই ঘরের কাছেই পুনর্বাসিত করার পর কতগুলো আদেশ দেয়া হয়। তন্মধ্যে প্রথম নির্দেশটি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। আর তা হলো, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবেন না।” ইবন কাসীর বলেন, এর অর্থ, একমাত্র আমার জন্যই এ ঘরটি বানাবেন অথবা এ ঘরে শুধু আমাকেই ডাকবেন অথবা এর অর্থ, আমার সাথে কাউকে শরীক করবেন না। [ফাতহুল কাদীর]

[৪] দ্বিতীয় আদেশ এরূপ দেয়া হয় যে, আমার গৃহকে পবিত্র রাখুন। পবিত্র করার অর্থ কুফর ও শির্ক থেকে পবিত্র রাখা। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অনুরূপভাবে বাহ্যিক ময়লা-আবর্জনা থেকেও পবিত্র রাখা। [ফাতহুল কাদীর] ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে একথা বলার উদ্দেশ্য অন্য লোকদেরকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট করা। কারণ, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজেই শির্ক ও কুফারী থেকে মুক্ত ছিলেন, তিনি আল্লাহর ঘরকে ময়লা-আবর্জনামুক্ত করতেন। এতদসত্ত্বেও যখন তাকে একাজ করতে বলা হয়েছে, তখন অন্যদের এ ব্যাপারে কতটুকু যত্নবান হওয়া উচিত, তা সহজেই অনুমেয়। আয়াত থেকে আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, এখানে কাবাঘরের সেবার দাবীদার তৎকালীন কাফের মুশরিকদের সাবধান করা হচ্ছে যে, এ ঘর নির্মাণের জন্য তোমাদের পিতার উপর শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, তিনি এটাকে শির্কমুক্ত রাখবেন। তোমরা সে শর্তটি পূর্ণ করতে পারনি, বরং শির্ক দ্বারা কলুষিত করেছ। [ফাতহুল কাদীর] এ নির্দেশের সাথে কাদের জন্য ঘরটি পবিত্র রাখবেন তাদের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা হচ্ছেন তাওয়াফকারী ও সালাতে দণ্ডায়মানকারী, রুকুকারী ও সিজদাকারী লোকদের জন্য। বিশেষ করে তাওয়াফ এ ঘর ছাড়া আর কোথাও জায়েয নেই, আর সালাত এ ঘর ব্যতীত অন্য কোনো দিকে মুখ করে পড়া (নফল ও যুদ্ধের সময়কার সালাত ব্যতীত) জয়েয নেই। অনুরূপভাবে রুকু ও সাজদা বলার কারণে ইবাদাতের মধ্যে এ দু'টি রুকনের গুরুত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
અરબી તફસીરો:
وَأَذِّن فِي ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَجِّ يَأۡتُوكَ رِجَالٗا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٖ يَأۡتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٖ
আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন [১], তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দুর-দুরান্তের পথ অতিক্রম করে [২]
[১] ইবরাহীম 'আলাইহিস সালামের প্রতি তৃতীয় আদেশ এই যে, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দিন যে, বায়তুল্লাহর হজ্জ তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। ইবন আবী হাতেমা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন ইবরাহীম 'আলাইহিস সালামকে হজ্জ ফরয হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরয করলেন: এখানে তো জনমানবহীন প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই; যেখানে জনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌঁছবে? জবাবে আল্লাহ তা'আলা বললেন, আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বে পৌছানোর দায়িত্ব আমার। ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলে আল্লাহ তা'আলা তা উচ্চ করে দেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, তিনি আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে আঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে বললেন: “লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তা গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর এই গৃহের হজ ফরয করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন কর।” এই বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এই আওয়াজ আল্লাহ তা'আলা বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয়; বরং ভবিষ্যতে কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী ছিল, তাদের প্রত্যেকের কান পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌছে দেয়া হয়। যার যার ভাগ্যে আল্লাহ্ তা'আলা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে

لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ

বলেছে। অর্থাৎ হাজির হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ইবরাহিমী আওয়াজের জবাবই হচ্ছে হজে ‘লাব্বাইকা' বলার আসল ভিত্তি। [দেখুন- তাবারী ১৪/১৪৪, হাকীম মুস্তাদরাক ২/৩৮৮]

[২] এ আয়াতে সেই প্রতিক্রিয়া বৰ্ণনা করা হয়েছে, যা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘোষণাকে সব মানবমণ্ডলী পর্যন্ত পৌঁছানোর কারণে কেয়ামত পর্যন্তের জন্য কায়েম হয়ে গেছে তা এই যে, বিশ্বের প্রতিটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মানুষ বায়তুল্লাহর দিকে চলে আসবে; কেউ পদব্রজে, কেউ সওয়ার হয়ে। যারা সওয়ার হয়ে আসবে, তারাও দূর-দূরান্ত দেশ থেকে আগমন করবে। ফলে তাদের সওয়ারীর জন্তুগুলো কৃশকায় হয়ে যাবে। পরবর্তী নবীগণ এবং তাদের উম্মতগণও এই আদেশের অনুসারী ছিলেন। ঈসা 'আলাইহিস সালামের পর যে সুদীর্ঘ জাহেলিয়াতের যুগ অতিবাহিত হয়েছে, তাতেও আরবের বাসিন্দারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও হজের বিধান তেমনিভাবে পালন করেছে, যেমন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত ছিল। যদিও পরবর্তীতে আরবরা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় হজের সঠিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে সমস্ত ভুলের সংশোধন করে দিয়েছিলেন।
અરબી તફસીરો:
لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ
যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে [১] এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে [২]। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও [৩] এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও [৪]।
[১] অর্থাৎ দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে তাদের এই উপস্থিতি তাদেরই উপকারের নিমিত্ত। এখানে منافع শব্দটি نكرة ব্যবহার করে ব্যাপক অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে দীনী উপকার তো অসংখ্য আছেই; পার্থিব উপকারও অনেক প্রত্যক্ষ করা হয়। চিন্তা করলে এ বিষয়টি সাধারণভাবে প্রত্যক্ষ করা যাবে যে, হজের দীনী কল্যাণ অনেক; তন্মধ্যে নিম্নে বর্ণিত কল্যাণটি কোনো অংশে কম নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং তাতে অশ্লীল ও গোনাহর কার্যাদি থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। [বুখারী ১৪৪৯, ১৭২৩,১৭২৪, মুসলিম ১৩৫০] অর্থাৎ জন্মের অবস্থায় শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সে-ও তদ্রুপই হয়ে যায়।” তাছাড়া আরেকটি উপকার তো তাদের অপেক্ষায় আছে। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর সস্তুষ্টি। [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে হজের মধ্যে আরাফাহ, মুযদালিফাহ, ইত্যাদি হজের স্থানে অবস্থান ও দো’আর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভ করা যায়। [কুরতুবী] তবে এখানে কেবল দীনী কল্যাণের কথাই বলা হয়নি, এর সাথে পার্থিব কল্যাণও সংযুক্ত রয়েছে। এ হজের বরকতেই আরবের যাবতীয় সন্ত্রাস, বিশৃংখলা ও নিরাপত্তাহীনতা অন্তত চারমাসের জন্য স্থগিত হয়ে যেতো এবং সে সময় এমন ধরনের নিরাপত্তা লাভ করা যেতো যার মধ্যে দেশের সকল এলাকার লোকেরা সফর করতে পারতো এবং বাণিজ্য কাফেলাও নিরাপদে চলাফেরা করতে সক্ষম হতো। এজন্য আরবের অর্থনৈতিক জীবনের জন্যও হজ একটি রহমত ছিল। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই।" [সূরা আল-বাকারাহ ১৯৮] অর্থাৎ ব্যবসা। [কুরতুবী] ইসলামের আগমনের পরে হজের দীনী কল্যাণের সাথে সাথে পার্থিব কল্যাণও কয়েকগুণ বেশী হয়ে গেছে। প্রথমে তা ছিল কেবলমাত্র আরবের জন্য রহমত, এখন হয়ে গেছে সারা দুনিয়ার তাওহীদবাদীদের জন্য রহমত।

[২] বায়তুল্লাহর কাছে হাজীদের আগমনের এক উপকার তো উপরে বর্ণিত হল যে, তারা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রত্যক্ষ করবে। এরপর দ্বিতীয় উপকার এরূপ বর্ণিত হয়েছে,

وَيَذْكُرُوْااسْمَ اللّٰهِ فِىْٓ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمٰتٍ عَلٰى مَارَزَقَهُمْ مِّنْ م بَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ

অর্থাৎ যাতে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেসব জন্তুর উপর, যেগুলো আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। হাদঈ বা কুরবানীর গোশত তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। এটা বাড়তি নেয়ামত। ‘নির্দিষ্ট দিনগুলো’ বলে সেই দিনগুলো বোঝানো হয়েছে, যেগুলোতে কুরবানী করা জায়েয, অর্থাৎ যিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। [ইবন কাসীর] কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে, এখানে اَيَّامٍ مَّعْلُوْمٰتٍ বলে যিলহজের দশ দিন এবং আইয়ামে তাশরিকের দিনগুলোসহ মোট তের দিনকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] অবশ্য এ ব্যাপারে সহীহ হাদীসেও এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের আমলেরমত উৎকৃষ্ট আমল আর কিছু নেই। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? তিনি বললেন, এমনকি জিহাদও নয়, তবে যদি সে মুজাহিদ তার জান ও মাল নিয়ে জিহাদ করতে বের হয়ে আর ফিরে না আসে।’ [বুখারী ৯৬৯] আয়াতে পশু বলতে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর কথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ উট, গরু, ছাগল ভেড়া, যেমন সূরা আল-আন’আমের ১৪২-১৪৪ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তাদের উপর আল্লাহর নাম নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নামে এবং তার নাম উচ্চারণ করে তাদেরকে যবেহ করা যেমন পরবর্তী বাক্য নিজেই বলে দিচ্ছে। কুরআন মজীদে কুরবানীর জন্য সাধারণভাবে "পশুর উপর আল্লাহর নাম নেয়া”র পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সব জায়গায়ই এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নামে পশু যবেহ করা। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এভাবে যেন এ সত্যটির ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর নাম না নিয়ে অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু যবেহ করা কাফের ও মুশরিকদের পদ্ধতি। মুসলিম যখনই পশু যবেহ করবে আল্লাহর নাম নিয়ে করবে এবং যখনই কুরবানী করবে আল্লাহর জন্য করবে। [দেখুন, কুরতুবী]

[৩] এখানে كلوا শব্দটি আদেশসূচক পদ হলেও অর্থ ওয়াজিব করা নয়; বরং অনুমতি দান ও বৈধতা প্রকাশ করা; [কুরতুবী] যেমন- কুরআনের

وَاِذَاحَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا

[সূরা আল-মায়েদাহ ২] আয়াতে শিকারের আদেশ অনুমতিদানের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

[৪] দুৰ্দশাগ্ৰস্ত অভাবীকে আহার করানোর ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তার অর্থ এ নয় যে, সচ্ছল বা ধনী ব্যক্তিকে আহার করানো যেতে পারে না। বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন অভাবী না হলেও তাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয। এ বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামের কার্যাবলী থেকে প্রমাণিত। আলকামা বলেন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার হাতে কুরবানীর পশু পাঠান এবং নির্দেশ দেন যে, কুরবানীর দিন একে যবোহ করবে, নিজে খাবে, মিসকীনদেরকে দেবে এবং আমার ভাইয়ের ঘরে পাঠাবে। [আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী ১০২৩৮] ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাও একই কথা বলেছেন অর্থাৎ একটি অংশ খাও, একটি অংশ প্রতিবেশীদেরকে দাও এবং একটি অংশ মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করো। [ইবন কাসীর]
અરબી તફસીરો:
ثُمَّ لۡيَقۡضُواْ تَفَثَهُمۡ وَلۡيُوفُواْ نُذُورَهُمۡ وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ
তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে [১] এবং তাদের মানত পূর্ণ করে [২] আর তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের [৩]।
[১] تفث এর আভিধানিক অর্থ ময়লা যা মানুষের দেহে জমা হয়। [ফাতহুল কাদীর] ইহরাম অবস্থায় চুল মুণ্ডানো, চুল কাটা, উপড়ানো, নখ কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি হারাম। তাই এগুলোর নীচে ময়লা জমা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, হজের কুরবানী সমাপ্ত হলে দেহের ময়লা দূর করে দাও। অর্থাৎ এহরাম খুলে ফেল, মাথা মুণ্ডাও এবং নখ কাট। নাভীর নীচের চুলও পরিস্কার কর। [কুরতুবী] আয়াতে প্রথমে হাদঈ জবাই ও পরে ইহরাম খোলার কথা বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, এই ক্রম অনুযায়ী এসব কার্যাদি সম্পন্ন করা মুস্তাহাব। যদি এতে আগ-পিছ হয়, তবে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, হাদীসে এসেছে, “সেদিন (১০ই যিলহজ তারিখে) হজের কাজগুলোর মধ্যে কোনটা আগ-পিছ করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখনই কোনো প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনি তিনি বলেছেন, কর, কোনো সমস্যা নেই।” [বুখারী ৮১, ১২১, ১৬:২১, ১৬:২২, ৬১৭২, মুসলিম ১৩০৬] এ প্রসংগে এ কথা জেনে নেয়া উচিত যে, পাথর নিক্ষেপ ও মাথামুণ্ডন এ দু'টির যে কোনো একটি এবং হাদঈ জবাইয়ের কাজ শেষ করার পর অন্যান্য যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু স্ত্রী সহবাস ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ হয় না যতক্ষণ না "তাওয়াফে ইফাদাহ” শেষ করা হয়।

[২] نذور শব্দটি نذر এর বহুবচন। অর্থাৎ এ সময়ের জন্য যে ব্যক্তি কোনো মানত করে সে যেন তা পূরণ করে। শরীআতে মানতের স্বরূপ এই যে, শরীআতের আইনে যে কাজ কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব নয়, যদি সে মুখে মানত করে যে, আমি এ কাজ করব অথবা আল্লাহর ওয়াস্তে আমার জন্য এ কাজ করা জরুরী, একেই নযর বা মানত বলা হয়। একে পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়, যদিও মূলতঃ তা ওয়াজিব ছিল না। তবে এর ওয়াজিব হওয়ার জন্য কাজটা গোনাহ ও নাজায়েয না হওয়া সর্বসম্মতিক্রমে শর্ত। যদি কেউ কোনো গোনাহর কাজের মানত করে, সেই গোনাহর কাজ করা তার উপর ওয়াজিব নয়; বরং বিপরীত করা ওয়াজিব। [কুরতুবী] তবে কসমের কাফফারা আদায় করা জরুরী হবে। মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব; আলোচ্য আয়াত থেকে মূলতঃ তাই প্রমাণিত হয়। এতে মানত পূর্ণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াতে উট বা গৃহপালিত জন্তুর যা যবোহ করার জন্য মানত করেছে সেটাকে পূরণ করতে বলা হয়েছে। মুজাহিদ বলেন, এখানে উদ্দেশ্য, হজ ও হাদঈ সংক্রান্ত মানত এবং এমন মানত যা হজের সময় সম্পন্ন করতে হয়। কারও কারও মতে হজের যাবতীয় কাজকে এখানে মানত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

[৩] এখানে তাওয়াফ বলে তাওয়াফে যিয়ারত বা “তাওয়াফে ইফাদাহ” বোঝানো হয়েছে, যা যিলহজের দশ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ ও হাদঈ যাবাই করার পর করা হয়। এটি হজের রোকন তথা ফরযের অন্তর্ভুক্ত যা কখনও বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। [কুরতুবী] আর যেহেতু ধূলা-ময়লা দূর করার হুকুমের সাথে সাথেই এর উল্লেখ করা হয়েছে তাই এ বক্তব্য একথা প্রকাশ করে যে, হাদঈ যাবাই করার এবং ইহরাম খুলে গোসল করে নেয়ার পর এ তাওয়াফ করা উচিত। এখানে কাবাঘরের জন্য এ عتيق শব্দ অত্যন্ত অর্থবহ। “আতীক” শব্দটি আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে প্রাচীন। দ্বিতীয় অর্থ স্বাধীন, যার উপর কারোর মালিকানা নেই। তৃতীয় অর্থ সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] এ তিনটি অর্থই এ পবিত্র ঘরটির বেলায় প্রযোজ্য। তাছাড়া লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, আল্লাহর এ ঘরটি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতেও মুক্ত। মুজাহিদ রাহে মাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাঁর গৃহের নাম الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ রেখেছেন; কারণ, আল্লাহ একে কাফের ও অত্যাচারীদের আধিপত্য ও অধিকার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। কোনো কাফেরের সাধ্য নেই যে, একে অধিকারভুক্ত করে। আসহাবে-ফীল তথা হস্তী-বাহিনীর ঘটনা এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
અરબી તફસીરો:
ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ وَأُحِلَّتۡ لَكُمُ ٱلۡأَنۡعَٰمُ إِلَّا مَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡۖ فَٱجۡتَنِبُواْ ٱلرِّجۡسَ مِنَ ٱلۡأَوۡثَٰنِ وَٱجۡتَنِبُواْ قَوۡلَ ٱلزُّورِ
এটাই বিধান এবং কেউ আল্লাহর সম্মানিত বিধানাবলীর [১] প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তার রবের কাছে তার জন্য এটাই উত্তম। আর যেগুলো তোমাদেরকে তিলাওয়াত করে জানানো হয়েছে [২] তা ব্যতীত তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুস্পদ জন্তু। কাজেই তোমরা বেঁচে থাক মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে [৩] এবং বর্জন কর মিথ্যা কথা [৪]।
[১] حُرُمٰتِ اللّٰهِ - বলে আল্লাহর নির্ধারিত সম্মানযোগ্য বিষয়াদি অর্থাৎ শরীআতের বিধানাবলী বোঝানো হয়েছে। সুতরাং যে কেউ আল্লাহর অপরাধ থেকে বেঁচে থাকবে, তার হারামকৃত বিষয়াদি বর্জন করবে এবং যার কাছে হারামকৃত বিষয়াদি করা অনেক বড় গোনাহের কাজ বলে মনের মধ্যে জাগ্রত হয়, তবে তা তার রবের নিকট তার জন্য উত্তম। [ইবন কাসীর] মুজাহিদ বলেন, মক্কা, হজের বিধি-বিধান, মক্কার বিভিন্ন সম্মানিত এলাকা, এসব কিছুই এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য। এগুলোর সম্মান করা, এগুলো সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা এবং জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা, আর আল্লাহ যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্য লাভের উপায়। [ইবন কাসীর]

[২] সূরা আল-আনআম ও সূরা আন-নাহলে যে হুকুম দেয়া হয়েছে সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে: আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম করেছেন সেগুলো হচ্ছে: মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবোহ করা পশু। [সূরা আল-আনআম ১৪৫ ও সূরা আন-নাহল ১১৫] এ গুলো ব্যতীত বিভিন্ন হাদীসে আরও কিছু জীব-জন্তু পাখী হারাম করার ঘোষণা এসেছে। সেগুলোও এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হবে। কারণ রাসূলের কথা ও বাণী ওহীর অন্তর্ভুক্ত এবং তা মানা অপরিহার্য।

[৩] رجس শব্দের অর্থ অপবিত্রতা, ময়লা। [ফাতহুল কাদীর] অপবিত্রতা বলা হয়েছে; কারণ, এরা মানুষের অন্তরকে শির্কের অপবিত্রতা দ্বারা পূর্ণ করে দেয়। رجس শব্দের অন্য অর্থ হচ্ছে رجز বা শাস্তি। সে হিসেবে মূর্তিদেরকে رجس বলা হয়েছে, কারণ এগুলো শাস্তির কারণ। [ফাতহুল কাদীর] أوثان শব্দটি وثن এর বহুবচন; অর্থ মূর্তি। তা কাঠ, লোহা, সোনা বা রূপা, যাই হোক। আরবরা এগুলোর পূজা করত। আর নাসারারা ক্রুশ স্থাপন করত এবং তা পূজা করত, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত। [কুরতুবী] তাই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাক যেমন দুৰ্গন্ধময় ময়লা আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অনুরূপভাবে মূর্তিপূজা থেকে দূরে থাক, কারণ তা স্থায়ী শাস্তির কারণ।

[৪] قَوْلَ الزُّوْرِ এর অর্থ মিথ্যা। যা কিছু সত্যের পরিপন্থী, তা-ই বাতিল ও মিথ্যাভুক্ত। [কুরতুবী] আল্লাহর সাথে শির্ক করা থেকে নিষেধ করার সাথে মিথ্যা কথাকে একসাথে অন্যত্রও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “বলুন, ‘নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্ৰকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালজান এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরীক করা- যার কোনো সনদ তিনি নাযিল করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।” [সূরা আল-আরাফ ৩৩] আর আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলার একটি হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। [ইবন কাসীর] যাজ্জাজ বলেন, আরবের মুশরিকরা যে মিথ্যার ভিত্তিতে “বাহীরা”, “সায়েবা” ও “হাম” ইত্যাদিকে হারাম গণ্য করতো তাও এ ফরমানের সরাসরি আওতাধীনে এসে যায়। [ফাতহুল কাদীর] যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে: “আর তোমাদের কণ্ঠ যে মিথ্যা বিধান দিয়ে থাকে যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, এ ধরনের বিধান দিয়ে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করো না।” [সূরা আন নাহল ১১৬] সহীহ হাদীসেও শির্ককে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সাব্যস্ত করার পর পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষীকে কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ সম্পর্কে বলব না? আমরা বললাম, অবশ্যই বলবেন হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, তারপর তিনি বসা অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বললেন, সাবধান! এবং মিথ্যা কথা বলা। সাবধান! এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। [বুখারী ৫৯৭৬; মুসলিম ৮৭] ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া শির্কের সমপর্যায়ের। [ইবন কাসীর] এর কারণ হচ্ছে, ‘মিথ্যা কথা’ শব্দটি ব্যাপক । এর সবচেয়ে বড় প্রকার হচ্ছে শির্ক, তা যে শব্দের মাধ্যমেই হোক না কেন। [ফাতহুল কাদীর] আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করা এবং তার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকার তথা ইবাদাতে তার বান্দাদেরকে অংশীদার করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। অনুরূপভাবে পারস্পরিক লেন-দেন ও সাক্ষ্য প্রদানে মিথ্যাও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এ সংগে মিথ্যা কসমও একই বিধানের আওতায় আসে। ইমামদের মতে, যে ব্যক্তি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা প্রমাণিত হয়ে যাবে তার নাম চারদিকে প্রচার করে দিতে হবে। [কুরতুবী] উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তার পিঠে চাবুক মারতে হবে, মাথা ন্যাড়া করে দিতে হবে, মুখ কালো করে দিতে হবে এবং দীর্ঘদিন অন্তরীণ রাখার শাস্তি দিতে হবে।” উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আদালতে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্যে জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে ওমুকের ছেলে ওমুক, এ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, একে চিনে রাখো। তারপর তাকে কারাগারে আটক করেন। [বাইহাকী: মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার ১৪/২৪৩] বর্তমান কালে এ ধরনের লোকের নাম খবরের কাগজে ছেপে দিলেই ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।
અરબી તફસીરો:
 
શબ્દોનું ભાષાંતર સૂરહ: અલ્ હજ્
સૂરહ માટે અનુક્રમણિકા પેજ નંબર
 
કુરઆન મજીદના શબ્દોનું ભાષાંતર - બંગાળી ભાષામાં અનુવાદ - અબુ બકર ઝકરિય્યા - ભાષાંતરોની અનુક્રમણિકા

બંગાળી ભાષામાં તેનું અનુવાદ, ડૉ. અબૂબકર મુહમ્મદ ઝકરિય્યા દ્વારા કરવામાં આવ્યું.

બંધ કરો