Check out the new design

Terjemahan makna Alquran Alkarim - Terjemahan Berbahasa Bangladesh - Abu Bakar Zakaria * - Daftar isi terjemahan


Terjemahan makna Surah: Al-A'rāf   Ayah:
وَإِذۡ قَالَتۡ أُمَّةٞ مِّنۡهُمۡ لِمَ تَعِظُونَ قَوۡمًا ٱللَّهُ مُهۡلِكُهُمۡ أَوۡ مُعَذِّبُهُمۡ عَذَابٗا شَدِيدٗاۖ قَالُواْ مَعۡذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ
আর স্মরণ করুন, যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে সদুপদেশ দাও কেন?’ তারা বলেছিল, ‘তোমাদের রবের কাছে দায়িত্ব-মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে, এজন্য।’
Tafsir berbahasa Arab:
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦٓ أَنجَيۡنَا ٱلَّذِينَ يَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ بِعَذَابِۭ بَـِٔيسِۭ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ
অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমরা উদ্ধার করি। আর যারা যুলুম করেছিল তাদেরকে আমরা কঠোর শাস্তি দেই, কারণ তারা ফাসেকী করত [১]।
[১] এ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এ জনপদে তিন ধরনের লোক ছিল। এক. যারা প্রকাশ্যে ও পূর্ণ ঔদ্ধত্যসহকারে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করছিল। দুই. যারা নিজের বিরুদ্ধাচারণ করছিল না কিন্তু অন্যের বিরুদ্ধাচারণকে নীরবে হাত পা গুটিয়ে বসে বসে দেখছিল এবং উপদেশ দানকারীদের বলছিল, এ হতভাগাদের উপদেশ দিয়ে কী লাভ? তিন. যারা ঈমানী সম্ভ্রমবোধ ও মর্যাদাবোধের কারণে আল্লাহর আইনের এহেন প্রকাশ্য অমর্যাদা বরদাশত করতে পারেনি এবং তারা এ মনে করে সৎকাজের আদেশ দিতে ও অসৎকাজ থেকে অপরাধীদেরকে বিরত রাখতে তৎপর ছিল যে, হয়তো ঐ অপরাধীরা তাদের উপদেশের প্রভাবে সৎপথে এসে যাবে, আর যদি তারা সৎপথে নাও আসে তাহলে অন্তত নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কর্তব্য পালন করে তারা আল্লাহর সামনে নিজেদের দায়মুক্তির প্রমাণ পেশ করতে পারবে। [ইবন কাসীর] এ অবস্থায় এ জনপদের উপর যখন আল্লাহর আযাব নেমে এলো, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী তখন এ তিনটি দলের মধ্য থেকে তৃতীয় দলটিকেই বাঁচিয়ে নেয়া হয়েছিল, আর যারা অপরাধ করেছিল তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দলটি, যারা অন্যায় করেনি তবে অন্যায় থেকে নিষেধ করেনি তাদের সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কারণ, তারা ভাল কিংবা মন্দ কিছুই করেনি যে, তাদের কথা আলোচনায় আসবে। [ইবন কাসীর] এমতাবস্থায় দ্বিতীয় দলটির পরিণতি কেমন হয়েছিল তাদের সম্পর্কে তাফসীরবিদদের দুটি মত পরিলক্ষিত হয়। ইবন আব্বাস থেকে এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে যে, একমাত্র তারাই আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল যারা অন্যায় করেছিল। আর বাকী দু’টি দল যারা বলেছিল যে, “আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে সদুপদেশ দাও কেন?" আর যারা বলেছিল “তোমাদের রবের কাছে দায়িত্ব-মুক্তির জন্য” আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের উভয় দলকেই শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]

কোনো কোনো তাফসীরবিদ, যারা অন্যায় করেনি তবে অন্যায় থেকে নিষেধও করেনি তাদেরকেও শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করেন। এ বর্ণনাটিও ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর] তবে ইবন কাসীর প্রথম মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ শেষোক্ত মতের পক্ষের লোকেরা বলেন, কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, সামষ্টিক অপরাধের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। কুরআনে বলা

(وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَاصَّةً) [সুরা আনফাল ২৫]

অর্থাৎ সেই বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাক যার কবলে বিশেষভাবে কেবল তোমাদের মধ্য থেকে যারা যুলুম করেছে তারাই পড়বে না। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "মহান আল্লাহ বিশেষ লোকদের অপরাধের দরুন সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশের ক্ষমতাও রাখে এরপরও কোনো অসন্তোষ প্রকাশ করে না। কাজেই লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন আল্লাহ সাধারণ ও অসাধারণ নির্বিশেষে সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।” [আবু দাউদ ৪৩৩৮; তিরমিযী ২১৬৮; ইবন মাজাহ ৪০০৫; মুসনাদে আহমাদ ১/২] এ ছাড়াও আলোচ্য আয়াত থেকে একথাও জানা যায় যে, এ জনপদের উপর দুই পর্যায়ে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়। প্রথম পর্যায়ে নাযিল হয় কঠিন শাস্তি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা নাফরমানি অব্যাহত রেখেছিল তাদেরকে বানরে পরিণত করা হয়। [ফাতহুল কাদীর] দৃশ্যতঃ প্রথম পর্যায়ের আযাবে উভয় দলই শামিল ছিল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আযাব দেয়া হয়েছিল কেবল প্রথম দলকে।


কিন্তু আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, বিশুদ্ধ বর্ণনা ও তাফসীরবিদদের অধিকাংশের মত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় দলটিও শাস্তি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ছিল। কারণ, তারা তো কোনো যুলুম করেনি। আয়াতে শুধু যালেমদেরকেই শাস্তি দেয়ার কথা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। আরও একটি বিষয় এখানে জানা আবশ্যক যে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা ফরযে কিফায়া। যদি কেউ সেটা করে তবে অন্যদের থেকে কর্তব্য আদায় হয়ে যায়। সুতরাং যারা নিষেধ করেছে, তারা চুপ থাকা লোকদের থেকে ফরযে কিফায়া আদায় করে দিয়েছে। তাছাড়া দ্বিতীয় দলটি যে একেবারে চুপ ছিল তা নয়, তারা বলেছিল যে, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন, তাদেরকে নসীহত করে কি লাভ?’ এতে এক ধরণের ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে। [সা'দী] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, তারা সম্পূর্ণরূপে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা থেকে বিরত ছিল না। তাই তাদের উপর আযাব আসেনি এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত।
Tafsir berbahasa Arab:
فَلَمَّا عَتَوۡاْ عَن مَّا نُهُواْ عَنۡهُ قُلۡنَا لَهُمۡ كُونُواْ قِرَدَةً خَٰسِـِٔينَ
অতঃপর তারা যখন নিষিদ্ধ কাজ বাড়াবাড়ির সাথে করতে লাগল তখন আমরা তাদেরকে বললাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
Tafsir berbahasa Arab:
وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبۡعَثَنَّ عَلَيۡهِمۡ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ مَن يَسُومُهُمۡ سُوٓءَ ٱلۡعَذَابِۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ঘোষণা করেন যে [১] অবশ্যই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদেরকে পাঠাবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে [২]। আর নিশ্চয় আপনার রব শাস্তি দানে তৎপর এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
[১] ‘তাআযযানা’ বাক্যাংশের দু'টি অর্থ হতে পারে। এক. ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে দেয়া। দুই. সুদৃঢ় ইচ্ছা এবং সে অনুসারে নির্দেশ। [ইবন কাসীর]

[২] আলোচ্য আয়াতে পুর্ববর্তী আয়াতে মূসা ‘আলাইহিস সালামের অবশিষ্ট কাহিনী বিবৃত করার পর তার উম্মত অর্থাৎ ইয়াহুদীদের অসৎকর্মশীল লোকদের প্রতি নিন্দাবাদ এবং তাদের নিকৃষ্ট পরিণতির বর্ণনা এসেছে। সে অনুসারে তাদের উপর শাস্তির ঘোষণা খ্ৰীষ্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকে প্রায় প্রতিটি গ্রন্থে দেয়া হয়েছে। এমনকি ঈসা আলাইহিস সালামও তাদেরকে এ একই সতর্কবাণী শুনান। ইনজীল গ্রন্থে তাঁর একাধিক ভাষণ থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। সবশেষে কুরআনুল কারীমেও এ কথাটিকে দৃঢ়ভাবে পূনর্ব্যক্ত করেছে। আর তা হল কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্ তা'আলা তাদের উপর এমন কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই চাপিয়ে রাখতে থাকবেন, যে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে এবং অপমান ও লাঞ্ছনায় জড়িয়ে রাখবে। সুতরাং তখন থেকে নিয়ে অদ্যাবধি ইয়াহুদীরা সবসময়ই সর্বত্র ঘৃণিত, পরাজিত ও পরাধীন অবস্থায় রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, মূসা আলাইহিস সালাম তাদের উপর সাত বছর বা তেরো বছর খাজনা আরোপ করেছিলেন। তারপর গ্ৰীক, কাশদানী, কালদানী নৃপতিরা তাদের উপর কঠোর শাস্তি নিয়ে আপতিত হয়েছিল। পরে বুখতানাসারের হাতে, তারপর নাসারাদের হাতে, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। সবশেষে তারা দাজ্জালের সহযোগীরূপে বের হবে, তারপর দাজ্জাল যখন মারা পড়বে, তখন মুসলিমরা ঈসা আলাইহিস সালামকে সাথে নিয়ে তাদের হত্যা করবে। [দেখুন, বুখারী ২৯২৫, ২৯২৬, ইবন কাসীর]।
Tafsir berbahasa Arab:
وَقَطَّعۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أُمَمٗاۖ مِّنۡهُمُ ٱلصَّٰلِحُونَ وَمِنۡهُمۡ دُونَ ذَٰلِكَۖ وَبَلَوۡنَٰهُم بِٱلۡحَسَنَٰتِ وَٱلسَّيِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ
আর আমরা তাদেরকে যমীনে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছি [১]; তাদের কেউ কেউ সৎ কর্মপরায়ণ আর কেউ অন্যরূপ [২]। আর আমরা তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা প্রত্যবর্তন করে [৩]।
[১] এ আয়াতে ইয়াহূদীদের উপর আরোপিত অন্য আরেক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তা হল, তাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একান্ত বিক্ষিপ্ত করে দেয়া। কোথাও কোনো এক দেশে তাদের সমবেতভাবে বসবাসের সুযোগ হয়নি

(وَقَطَّعْنٰهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ اَسْبَاطًا اُمَمًا)

এর মর্মও তাই। قَطَّعْنَا শব্দটি تقطيع থেকে নির্গত। যার অর্থ খণ্ডবিখণ্ড করে দেয়া। আর اُمَام হল اُمّة এর বহুবচন। যার অর্থ দল বা শ্রেণী। এর মর্ম হল, আমি ইয়াহূদী জাতিকে খণ্ড খন্ড করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। সুতরাং যেখানেই কেউ ঢুকবে সেখানে ইয়াহূদীদের কোনো সম্প্রদায় দেখতে পাবে। [তাবারী]

[২] এ আয়াতে ইয়াহুদীদের শ্রেণী বিভাগ করে বলা হচ্ছে: (مِنْهُمُ الصّٰلِحُوْنَ) অর্থাৎ “এদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে সৎ এবং কিছু অন্য রকম।" "অন্য রকম” -এর মর্ম হল এই যে, কাফের দুস্কৃতকারী ও অসৎ লোক রয়েছে। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের মধ্যে সবই এক রকম লোক নয়, কিছু সৎ লোকও আছে। [তাবারী; ইবন কাসীর] এর অর্থ, সেসব লোক, যারা তাওরাতের যুগে তাওরাতের নির্দেশাবলীর পূর্ণ আনুগত্য ও অনুশীলন করেছে। না তার হুকুমের প্রতি কৃতঘ্নতা প্রকাশ করেছে, আর না কোনো রকম অপব্যাখ্যা ও বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছে। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এছাড়া এতে তারাও উদ্দেশ্য হতে পারেন, যারা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর তার আনুগত্যে আত্মনিয়োগ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান এনেছেন। অপরদিকে রয়েছে সে সমস্ত লোক, যারা তাওরাতকে আসমানী গ্রন্থ বলে স্বীকার করা সত্বেও তার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, কিংবা তার আহকাম বা বিধি বিধানের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদের আখেরাতকে পৃথিবীতে নিকৃষ্ট বস্তু-সামগীর বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর ]

[৩] আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, “আমি ভাল-মন্দ অবস্থার দ্বারা তাদের পরীক্ষা করেছি যেন তারা নিজেদের গৰ্হিত আচার-আচরণ থেকে ফিরে আসে।” “ভাল অবস্থার দ্বারা”-এর অর্থ হল এই যে, তাদেরকে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য ও ভোগ-বিলাসের উপকরণ দান। আর "মন্দ অবস্থার দ্বারা”-এর অর্থ হয় লাঞ্ছনা-গঞ্জনার সে অবস্থা যা যুগে যুগে বিভিন্নভাবে তাদের উপর নেমে এসেছে অথবা কোনো কোনো সময়ে তাদের উপর আপতিত দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্য। [তাবারী; ইবন কাসীর] সারমর্ম এই যে, মানব জাতির আনুগত্য ও ঔদ্ধত্যের পরীক্ষা করার দুটিই প্রক্রিয়া। তাদের ব্যাপারে উভয়টিই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ইহুদী সম্প্রদায় এতদুভয় পরীক্ষাতেই অকৃতকার্য হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা যখন তাদের জন্য নেয়ামতের দুয়ার খুলে দিয়ে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দান করেছেন, তখন তারা বলতে শুরু করেছে, (اِنَّ اللّٰهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ اَغْنِيَاءُ) অর্থাৎ "আল্লাহ হলেন ফকীর আর আমরা ধনী।" [সূরা আলে-ইমরান ১৮১] আর তাদেরকে যখন দারিদ্র্য ও দুর্দশার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে, তখন বলতে শুরু করেছে: (يَدُاللّٰهِ مَغْلُوْلَةٌ) অর্থাৎ "আল্লাহর হাত সংকুচিত হয়ে গেছে।” [ সূরা আল-মায়েদাহ ৬৪]
Tafsir berbahasa Arab:
فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٞ وَرِثُواْ ٱلۡكِتَٰبَ يَأۡخُذُونَ عَرَضَ هَٰذَا ٱلۡأَدۡنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغۡفَرُ لَنَا وَإِن يَأۡتِهِمۡ عَرَضٞ مِّثۡلُهُۥ يَأۡخُذُوهُۚ أَلَمۡ يُؤۡخَذۡ عَلَيۡهِم مِّيثَٰقُ ٱلۡكِتَٰبِ أَن لَّا يَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّ وَدَرَسُواْ مَا فِيهِۗ وَٱلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ
অতঃপর অযোগ্য উত্তরপুরুষরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্তরূপে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয় [১]; তারা এ তুচ্ছ দুনিয়ার সামগ্ৰী গ্রহণ করে এবং বলে, ‘আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে [২]। কিন্তু এগুলোর অনুরূপ সামগ্রী তাদের কাছে আসলে তাও তারা গ্রহণ করে; কিতাবের অঙ্গীকার কি তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লার সম্বদ্ধে সত্য ছাড়া বলবে না [৩]? অথচ তারা এতে যা আছে তা অধ্যয়নও করে [৪]। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম; তোমারা কি এটা অনুধাবন কর না?
[১] মুজাহিদ বলেন, এখানে অযোগ্য উত্তরপুরুষ বলে নাসারাদের বোঝানো হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ইবন কাসীর বলেন, এখানে ইয়াহুদী, নাসারাসহ পরবর্তী সবাই উদ্দেশ্য হতে পারে। [ইবন কাসীর] মুজাহিদ বলেন, দুনিয়ার যে বস্তুতেই তাদের চোখ পড়বে, সেটা হালাল কিংবা হারাম যাই হোক না কেন, তারা তাই গ্রহণ করে, তারপর ক্ষমার তালাশে থাকে। আবার যদি আগামী কাল অনুরূপ কিছু নজরে পড়ে সেটাও গ্রহণ করে। [তাবারী] সু’দ্দী বলেন, তাদের মধ্যে কাউকে বিচারক নিয়োগ করা হলে সে ঘুষ খেয়ে বিচার করত, তখন তাদের ভালো লোকেরা একত্র হয়ে বলল যে, এটা করা যাবে না এবং ঘুষও দেয়া যাবে না। কিন্তু পূণরায় তাদের কেউ কেউ ঘুষ খেতে আরম্ভ করে। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে বলতো যে, আমাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। তখন অন্যরা তাকে খারাপ বলত। তারপর এ বিচারকের পদচ্যুতি বা মৃত্যুর কারণে যদি অন্য কাউকেও নিয়োগ করা হতো, সেও ঘুষ খেত। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ তারা আল্লাহর কিতাব পড়েছে কিন্তু কিতাবের হুকুমের বিরোধিতা করেছে। দুনিয়ার যত নিকৃষ্ট কামাই আছে, যেমন ঘুষ ইত্যাদি তা-ই তারা গ্রহণ করে। কারণ তাদের লোভ ও লালসা প্রচণ্ড। তারা গোনাহ করে, তারা জানে এ কাজটি করা গুণাহ। তবুও এ আশায় তারা এ কাজটি করে যে, কোনো না কোনোভাবে তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। কারণ, তারা মনে করে, তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং তারা যত কঠিন অপরাধই করুক না কেন তাদের ক্ষমালাভ অপরিহার্য। এ ভুল ধারণার ফলে কোনো গুনাহ করার পর তারা লজ্জিত হয় না এবং তাওবাও করে না। বরং একই ধরনের গোনাহ করার সুযোগ এলে তারা তাতে জড়িয়ে পড়ে। তারপর আবার যদি তাদের কাছে দুনিয়ার কোনো ভোগ এসে যায়, তা যত হারামই হোক তা গ্রহণ করতে কুষ্ঠাবোধ করে না। বরং তা বারবার করতে থাকে [মুয়াসসার]

[৩] অর্থাৎ তারা নিজেরাই জানে যে, আল্লাহ কখনো তাদেরকে একথা বলেননি এবং তাদের নবীগণও কখনো তাদেরকে এ ধরণের নিশ্চয়তা দেননি যে, তোমরা যা ইচ্ছা করতে পারো, তোমাদের সকল গুনাহ অবশ্যি মাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া আল্লাহ নিজে যে কথা কখনো বলেননি তাকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করার কি অধিকারই বা তাদের থাকতে পারে? অথচ তাদের কাছ থেকে অংগীকার নেয়া হয়েছিল যে, আল্লাহর নামে কোনো অসত্য কথা তারা বলবে না। তাওরাত কায়েম করবে, সে অনুযায়ী আমল করবে। কুরআনের অন্যত্র তাদের এ অঙ্গীকারটি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে এসেছে, “স্মরণ করুন, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন: “অবশ্যই তোমরা তা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। এরপরও তারা তা তাদের পেছনে ফেলে রাখে (অগ্রাহ্য করে) ও তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে; কাজেই তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট।" [সূরা আলে ইমরান ১৮৭] কিন্তু তারা কিতাবের বিধান জানার পরও সেটাকে নষ্ট করে দেয়, তা অনুসারে আমল করে না। এভাবে তারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারকে ভঙ্গ করে। [মুয়াসসার]

[৪] অর্থাৎ এমন নয় যে, তারা বুঝে না। তারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ণ করে, তারা জানে যে, তাদেরকে এ ধরনের হারাম বস্তু গ্রহণ করা থেকে তাদের কিতাবে নিষেধ করা হয়েছে। এমন নয় যে, তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তা করছে। বস্তুতঃ তাদের কোনো সন্দেহ নেই। তারা জেনে-বুঝেই এ অন্যায় করছে। এটা নিঃসন্দেহে খারাপ কাজ। [সা’দী]
Tafsir berbahasa Arab:
وَٱلَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِٱلۡكِتَٰبِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُصۡلِحِينَ
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও সালাত কায়েম করে, আমরা তো সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না [১]।
[১] পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে একটি প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা বিশেষতঃ বনী-ইসরাঈলের আলেম সম্প্রদায়ের নিকট থেকে তাওরাত সম্পর্কে নেয়া হয়েছিল যে, এতে কোনো রকম পরিবর্তন কিংবা বিকৃতি সাধন করবে না এবং সত্য ও সঠিক বিষয় ছাড়া মহান রবের প্রতি অন্য কোনো বিষয় আরোপ করবে না। আর এ বিষয়টি পূর্বেই উল্লেখ হয়ে গিয়েছিল যে, বনী ইসরাঈলের আলেমগণ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে স্বার্থাম্বেষীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাওরাতের বিধিবিধানের পরিবর্তন করেছে এবং তাদের উদ্দেশ্য ও স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাতলিয়েছে। এখানে আলোচ্য এই আয়াতটিতে সে বর্ণনারই উপসংহার হিসাবে বলা হয়েছে যে, বনী ইসরাঈলের সব আলেমই এমন নয়; কোনো কোনো আলেম এমনও রয়েছে যারা তাওরাতের বিধি-বিধানকে দৃঢ়তার সাথে ধরেছে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সৎকাজেও নিষ্ঠা অবলম্বন করেছে। আর যথারীতি সালাতও প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনি লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- আল্লাহ তাদের প্রতিদান বিনষ্ট করে দেন না, যারা নিজেদের সংশোধন করে। কাজেই যারা ঈমান ও আমলের উভয় ফরয আদায়ের মাধ্যমে নিজের সংশোধন করে নিয়েছে, তাদের প্রতিদান বা প্রাপ্য বিনষ্ট হতে পারে না। এ আয়াতে কয়েকটি লক্ষণীয় ও জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে-

প্রথমতঃ কিতাব বলতে এতে সে কিতাবই উদ্দেশ্য যার আলোচনা ইতোপূর্বে এসেছে। অর্থাৎ তাওরাত। অর্থাৎ যারা তাদের কিতাবে যে নবীর কথা বলা হয়েছে সে অনুসারে ঈমান এনেছে। মুজাহিদ বলেন, এ অনুসারে এটি আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আর এও হতে পারে যে, এতে কুরআনকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যারা বর্তমান নাযিলকৃত কিতাবের অনুসরণ করে তাদের প্রচেষ্টা ও আমল নষ্ট হবার নয়। তখন উম্মতে মুহাম্মাদীই উদ্দেশ্য হবে। [বাগভী; জালালাইন, সা’দী] অথবা সমস্ত আসমানী কিতাবই উদ্দেশ্য। তখন অর্থ হবে যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি তারা যদি তাদের সময়কার কিতাব অনুসারে চলে আমরা তাদের কর্মকাণ্ড ও আমল নষ্ট করি না। আর বর্তমানে কুরআন অনুসারেই সকলকে চলতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। তাতে যত হুকুম-আহকাম আছে তারা সেটার উপর যত্ন সহকারে আমল করে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো শৈথিল্য হয় না। যাদের আমল বিনষ্ট হয় না। তাদের পরিচয় হচ্ছে যে, তারা কঠোরভাবে এ কিতাবে বর্ণিত শরীআতের উপর আমল করে। [আইসারুত তাফাসীর] সুতরাং একান্ত আদব ও সম্মানের সাথে অতি যত্ন সহকারে নিজের কাছে শুধু রেখে দিলেই তার উদ্দেশ্য সাধিত হয় না; বরং তার বিধি-বিধান ও নির্দেশাবলীর অনুবর্তীও হতে হবে।

তৃতীয় লক্ষণীয় বিষয় হল, এখানে একটিমাত্র বিধান সালাত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেই ক্ষান্ত করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের বিধি-বিধানসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান হল সালাত। [সা’দী] তদুপরি সালাতের অনুবর্তিতা আসমানী বিধানসমূহের অনুবর্তিতার বিশেষ লক্ষণ। এরই মাধ্যমে চেনা যায়, কে কৃতজ্ঞ আর কে কৃতঘ্ন। আর এর নিয়মানুবর্তিতার একটা বিশেষ কার্যকারিতাও রয়েছে, যে লোক সালাতে নিয়মানুবর্তী হয়ে যাবে তার জন্য অন্যান্য বিধি-বিধানের নিয়মানুবর্তিতাও সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে লোক সালাতের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তী নয়, তার দ্বারা অন্যান্য বিধি-বিধানের নিয়মানুবর্তিতাও সম্ভব হয় না। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাত হল দীনের স্তম্ভ।' [তিরমিয়ী ২৬১৬] অর্থাৎ যার উপরে তার ইমারত রচিত হয়েছে। যে ব্যক্তি এই স্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে, সে দীনকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে, যে এ স্তম্ভকে বিধ্বস্ত করেছে, সে গোটা দীনের ইমারতকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। যে সালাতের ব্যাপারে গাফলতি করে, সে যত তাসবীহ-ওষীফাই পড়ুক কিংবা যত প্রচেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহর নিকট সে কিছুই নয়।
Tafsir berbahasa Arab:
 
Terjemahan makna Surah: Al-A'rāf
Daftar surah Nomor Halaman
 
Terjemahan makna Alquran Alkarim - Terjemahan Berbahasa Bangladesh - Abu Bakar Zakaria - Daftar isi terjemahan

Bahasa Bangladesh diterjemahkan oleh Dr. Abu Bakar Muhammad Zakaria.

Tutup