আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে কি আপনি অন্ধকে পথ দেখাবেন, তারা না দেখলেও [১]?
[১] তাদের এ তাকানোর দ্বারা তারা আপনার কাছে নবুওয়াতের যে দলীল-প্রমাণাদি আছে তা দেখতে পায়, কিন্তু তারা এর দ্বারা উপকৃত হয় না। পক্ষান্তরে মুমিনগণ আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আপনার সততার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারে। তাই আপনার প্রতি সম্মানে তাদের চোখ ভরে যায়। কাফেরগণ আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও সম্মানের সাথে দেখে না। [ইবন কাসীর] আর যারা সম্মানের সাথে দেখবে না তাদের হিদায়াত তাওফীক হবে না। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে আরও বলেন, “তারা যখন আপনাকে দেখে তখন তারা আপনাকে শুধু ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্ররূপে গণ্য করে এবং বলে, ‘এই-ই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? ‘সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাগণ হতে দূরে সরিয়ে দিত, যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতাম। যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা জানবে কে বেশী পথভ্রষ্ট।" [সূরা আল-ফুরকান ৪১-৪২]
নিশ্চয় আল্লাহ্ মানষের প্রতি কোনো যুলুম করেন না [১]। বরং মানুষই নিজেদের প্রতি যুলুম করে থাকে [২]।
[১] হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার নিজের উপর হারাম করেছি এবং তা তোমাদের মাঝেও হারাম ঘোষণা করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে যাদেরকে আমি হেদায়াত করেছি তারা ব্যতীত সবাই পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছেই হেদায়াত চাও আমি তোমাদের হেদায়াত দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে যাকে আমি খাবার খাওয়াই সে ব্যতীত সবাই অভূক্ত, ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাওয়াব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে যাকে আমি পরিধান করাই সে ব্যতীত সবাই কাপড়হীন। সুতরাং তোমরা আমার কাছে পরিধেয় বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দিন-রাত অপরাধ করে যাচ্ছ আর আমি তোমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার ক্ষতি করার কাছেও পৌছতে পারবে না যে, আমার ক্ষতি করবে। এমনকি তোমরা আমার কোনো উপকার করার নিকটবর্তীও হতে পারবে না যে, আমার কোনো উপকার তোমরা করে দেবে। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের যাবতীয় মানুষ ও জ্বিন একত্র হয়ে তাকওয়ার দিক থেকে একজনের অন্তরে পরিণত হও তাতেও আমার রাজত্বের সামান্য বৃদ্ধি ঘটবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জ্বিন একত্র হয়ে অন্যায় করার দিক থেকে একজনের অন্তরে পরিণত হও তাতেও আমার রাজত্বের তথা ক্ষমতার সামান্যও কমতি ঘটবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বাপর এবং যাবতীয় মানুষ ও জ্বিন এক মাঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে প্রত্যেকেই চায় তারপর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু দেই তাতে আমার ভাণ্ডার থেকে ততটুকুই কমবে যতটুকু সমুদ্রে সুই ঢুকালে কমে। হে আমার বান্দাগণ! এগুলো তো শুধু তোমাদের আমল, আমি তা তোমাদের জন্য সংরক্ষন করে রাখি। তারপর তোমাদেরকে তা পূর্ণভাবে দেব। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ভালকিছু পাবে সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আর যে অন্য কিছু পায় সে যেন তার নিজেকে ছাড়া আর কাউকে তিরস্কার না করে। [মুসলিম ২৫৭৭]
[২] অর্থাৎ আল্লাহ তো তাদের কানও দিয়েছেন এবং মনও দিয়েছেন। হক ও বাতিলের পার্থক্য দেখার ও বুঝার জন্য প্রয়োজন ছিল এমন কোনো জিনিস তিনি নিজের পক্ষ থেকে তাদের দিতে কার্পণ্য করেননি। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের চোখ কানা করে নিয়েছে, কানে তালা লাগিয়েছে এবং অন্তরকে বিকৃত করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দিয়েছেন, যাকে ইচ্ছা অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে পথ দেখিয়েছেন। কিছু অন্ধ চক্ষুকে চক্ষুষ্মান করেছেন, কিছু বধিরকে শুনিয়েছেন। কিছু বদ্ধ অন্তরকে খুলে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কিছু লোককে ঈমান থেকে পথভ্রষ্ট করেছেন। তিনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। নিজের রাজত্বে তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রশ্ন করা যায় না। বরং লোকদেরকে তিনি প্রশ্ন করবেন। কারণ, তিনি জ্ঞানী, তিনি প্রজ্ঞাবান, তিনি ইনসাফকারী। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
আর যেদিন তিনি তাদেরকে একত্র করবেন (সেদিন তাদের মনে হবে দুনিয়াতে) যেন তাদের অবস্থিতি দিনের মুহূর্তকাল মাত্র ছিল [১]; তারা পরস্পরকে চিনবে [২]। অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা আল্লাহ্র সাক্ষাতের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করেছে [৩] এবং তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিল না।
[১] অর্থাৎ কাফেরগণ হাশরের মাঠে দুনিয়ার সময়টুকুকে অত্যন্ত সামান্য সময় বিবেচনা করবে। তাদের কেউ কেউ মনে করবে যে, দুনিয়াতে একঘন্টা অবস্থান করেছিল। যেমনটি এ আয়াতে এবং সূরা আল-আহকাফের ৩৫, সূরা ত্বা-হা এর ১০২-১০৪ এবং সূরা আর-রূমের ৫৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তাদের কেউ কেউ মনে করবে যে, সে এক বিকাল বা দিবসের প্রথমভাগ অবস্থান করেছিল। যেমনটি সূরা আন-নাযি’আতের ৪৬ এবং সূরা আল-মুমিনুন এর ১১২-১১৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ কেয়ামতে যখন মৃতদেহকে কবর থেকে উঠানো হবে, তখন একে অপরকে চিনতে পারবে এবং মনে হবে দেখা-সাক্ষাত হয়নি তা যেন খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। তবে অন্য আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, তারা চিনতে পারলেও একে অপরকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “সেদিন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবে না।" [সূরা আল-কাসাস ৬৬] আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেন, “যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে সেদিন তাদের মাঝে না থাকবে বংশের সম্পর্ক, না তারা একে অপরকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবে।” [সূরা আল-মুমিনুন ১০১] আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন, “সেদিন কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু অপর বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না।" [সূরা আল-মা'আরিজ ১০]
[৩] অর্থাৎ একদিন আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে, তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাত হবে, একথাকে মিথ্যা বলেছে।
আর আমরা তাদেরকে যে (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার কিছু যদি আপনাকে (দুনিয়াতে) দেখিয়ে দেই অথবা (তাদের উপর তা আসার আগেই) আপনার মৃত্যু দিয়ে দেই, তাহলে তাদের ফিরে আসা তো আমাদেরই কাছে; তদুপরি তারা যা করে আল্লাহ্ই তার সাক্ষী [১]।
[১] অর্থাৎ যদি আপনার জীবদ্দশায়ই তাদের উপর কোনো প্রতিশ্রুত শাস্তি এসে পড়ে অথবা আপনাকে তার পূর্বেই মৃত্যু দিয়ে দেই তারপরও তো তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল আমার কাছেই। আমি তাদের কাজ-কর্মের সাক্ষী। সে অনুসারেই তাদের বিচার করব।
আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আছে একজন রাসূল [১] অতঃপর যখন তাদের রাসূল আসে তখন তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করা হয় এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হয় না [২]।
[১] বলা হয়েছে, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রাসূল রয়েছে।” এ ধরনের আয়াত আরো দেখুন, সূরা আন-নাহল ৩৬, সূরা ফাতের ২৪। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বের দাবী রাখে তা হলো, আল্লাহ তা'আলা যদিও রাসূলকে সার্বজনিন করেছেন তারপরও তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে হেদায়াতকারীদের প্রেরণ করে থাকেন। তারা নবী বা রাসূল না হলেও নবী-রাসূলদের বাণী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে বহন করে থাকেন। এ ব্যাপারে সূরা রা'দ এর ৭ নং আয়াতে এসেছে যে, "প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াতকারী বা পথপ্রদর্শক আছেন।"
[২] এর অর্থ হচ্ছে, রাসূলের দাওয়াত কোনো মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফায়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত যুক্তি বা সাক্ষ্য-প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে এ ফায়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি ও মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তাঁর কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে এ শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়। তাদের কাছে রাসূল এ জন্যই পাঠাতে হয়, কারণ আল্লাহ্ তা'আলা রাসূল না পাঠিয়ে, মানুষদেরকে সাবধান না করে কাউকে শাস্তি দেন না। আল্লাহ বলেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।" [সূরা আল-ইসরা ১৫] [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
তাছাড়া এ আয়াতের আরেক প্রকার ব্যাখ্যাও বর্ণিত হয়েছে, মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এখানে রাসূলদের আগমন করার অর্থ: কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে তাদের আগমণের কথা বুঝানো হয়েছে। যেমনটি সূরা আয-যুমারের ৬৯ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: “যমীন তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে, 'আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবীগণকে ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে ও তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।” সুতরাং প্রত্যেক উম্মতের আমলনামাই তাদের নবী-রাসূলদের উপস্থিতিতে পেশ করা হবে। তাদের ভাল-মন্দ আমল তাদের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে আমল সংরক্ষণকারী ফিরিশ্তাগণদের মধ্য থেকেও সাক্ষী থাকবে। এভাবেই উম্মতের পর উম্মতের মধ্যে ফয়সালা করা হবে। উম্মতে মুহাম্মাদীয়ারও একই অবস্থা হবে, তবে তারা সবশেষে আসা সত্বেও সর্বপ্রথম তাদের হিসাব-নিকাশ করা হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমরা সবশেষে আগমণকারী তবে কিয়ামতের দিন সবার অগ্রে থাকব।” [বুখারী ৮৭৬] অপর হাদীসে এসেছে, “সমস্ত সৃষ্টিজগতের পূর্বে তাদের বিচার-ফয়সালা করা হবে।" [মুসলিম ৮৫৫]
আর তারা বলে, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, (তবে বল) এ প্রতিশ্রুতি কবে ফলবে [১]?’
[১] আল্লাহ তা’আলা এখানে কাফেরদের কুফরির সংবাদ দিয়ে বলছেন যে, কাফেররা যে আল্লাহর আযাবকে তাড়াতাড়ি চাচ্ছে এবং এর জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের কথা বলছে, এতে তাদের কোনো লাভ নেই। অন্যত্রও আল্লাহ এ কথা বলেছেন, “যারা এটাতে ঈমান রাখে না তারাই তা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তা থেকে ভীত থাকে এবং তারা জানে যে, তা অবশ্যই সত্য।" [সূরা আশ-শূরা ১৮] আরও বলেন, “আর তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি কখনো ভংগ করেন না। আপনার রবের কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।” [সূরা আল-হজ ৪৭] আরও বলেন, “তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।" [সূরা আল-আনকাবৃত ৫৪] তাছাড়া এ সূরার ৫০ নং আয়াতে তাদেরকে রীতিমত সাবধানও করেছেন।
বলুন, ‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার কোনো অধিকার নেই আমার নিজের ক্ষতি বা মন্দের।’ প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকালও পিছাতে বা এগুতেও পারবে ন।
বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও যদি তাঁর শাস্তি তোমাদের উপর রাতে অথবা দিনে এসে পড়ে, তবে অপরাধীরা তার কোনটিকে তাড়াতাড়ি পেতে চায় [১]?
[১] সারা জীবন তারা যে জিনিসটিকে মিথ্যা বলতে থাকে, যাকে মিথ্যা মনে করে সারাটা জীবন ভুল কাজে ব্যয় করে এবং যারা সংবাদদানকারী নবী-রাসূলদেরকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকে, সেই জিনিসটি যখন তাদের সমস্ত প্রত্যাশাকে গুড়িয়ে দিয়ে অকস্মাৎ সামনে এসে দাঁড়াবে তখন তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। নিজের কৃতকর্মের হাত থেকে বাচার কোনো পথ থাকবে না। মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। লজ্জায় ও আক্ষেপে অন্তর ভিতরে ভিতরেই দমে যাবে। সুতরাং কত বড় বিপদকে তারা তাড়াতাড়ি ডেকে আনছে? [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
আয়াতের অন্য অর্থ এও হতে পারে যে, বলুন, “তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি তাঁর শাস্তি তোমাদের উপর রাতে অথবা দিনে এসে পড়ে তাহলে অপরাধীরা কোন জিনিস পেতে তাড়াতাড়ি করছে? আযাব তো তাদের খুব কাছের জিনিস। সকাল বা সন্ধ্যা যে কোনো সময় এসে যেতে পারে। [দেখুন, বাগভী]
তবে কি তোমরা এটা ঘটার পর তাতে ঈমান আনবে? এখন [১]?! অথচ তোমরা তো এটাকেই তাড়াতাড়ি পেতে চেয়েছিলে!
[১] অর্থাৎ তোমরা কি তখন ঈমান আনবে, যখন তোমাদের উপর আযাব পতিত হয়ে যাবে? চাই তা মৃত্যুর সময়ে হোক কিংবা তার পূর্বে। কিন্তু তখন তোমাদের ঈমানের উত্তরে কি বলা হবে- (آٰلۡـٰٔنَ) এতক্ষণে ঈমান আনলে, যখন ঈমানের সময় চলে গেছে? যেমন, জলমগ্ন হওয়ার সময়ে ফিরআউন যখন বলল: “আমি ঈমান আনছি, নিশ্চয়ই কোনো হক উপাস্য নেই তিনি ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলর।" [সূরা ইউনুস ৯০] উত্তরে বলা হয়েছিল- (آٰلۡـٰٔنَ) অর্থাৎ এতক্ষণে ঈমান আনলে? বস্তুতঃ তার ঈমান কবুল করা হয়নি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা'আলা বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ না তার মৃত্যুকালীন উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়।” [তিরমিয়ী ৩৫৩৭, মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২, মুস্তাদরাকে হাকম ৪/২৫৭, ইবন মাজাহ ৪২৫৩, ইবন হিব্বান ৬২৮] অর্থাৎ মৃত্যুকালীন গরগরা বা উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর ঈমান ও তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে দুনিয়াতে আযাব সংঘটিত হওয়ার পূর্বাহ্নে তাওবা কবুল হতে পারে। কিন্তু আযাব এসে যাওয়ার পর আর তাওবা কবুল হয় না। আয়াতের শেষে এবং সূরা গাফেরের ৮৪ ও ৮৫ নং আয়াতদ্বয়ে একথাটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরার শেষাংশে ইউনুস আলাইহিস সালামের কওমের ঘটনা আসছে যে, তাদের তাওবা কবুল করে নেয়া হয়েছিল, তা এই মূলনীতির ভিত্তিতেই হয়েছিল। কারণ, তারা দূরে থেকে আযাব আসতে দেখেই বিশুদ্ধ-সত্য মনে কেদে-কেটে তাওবা করে নিয়েছিল। তাই আযাব সরে যায়। যদি আযাব তাদের উপর পতিত হয়ে যেত, তবে আর তাওবা কবুল হত না।
আর তারা আপনার কাছে জানতে চায়, ‘এটা কি সত্য?’ বলুন, ‘হ্যাঁ, আমার রবের শপথ! এটা অবশ্যই সত্য [১] আর তোমরা মোটেই অপারগকারী নও।’
[১] এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবীকে আল্লাহর সত্বার শপথ করে কেয়ামত যে আসন্ন তা বলতে নির্দেশ দিচ্ছেন। পবিত্র কুরআনের আরো দুটি স্থানে এ ধরণের নির্দেশ এসেছে, যেমন সূরা সাবা ৩ এবং আত-তাগাবুন ৭। মূলতঃ কেয়ামতের ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্বের দাবী রাখার কারণেই আল্লাহ্ তাঁর নবীকে শপথ করে বলার নির্দেশ দিয়েছেন।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
ئەنجامەکانی گەڕان:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".