পরে কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন [১] এবং তিনি বলবেন, কোথায় আমার সেসব শরীক [২] যাদের সম্বন্ধে তোমরা ঘোর বিতণ্ডা করতে? যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে [৩], আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের উপর--
[১] তাদের গোপন ষড়যন্ত্রসমূহ ফাঁস করে দিয়ে তাদেরকে লজ্জিত করবেন। অনুরূপ কথা সূরা আত-তারেক এর ৯ নং আয়াতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, "যে দিন গোপন তথ্যসমূহ ফাঁস করে দেয়া হবে সেদিন তাদের কোনো শক্তি বা সাহায্যকারী থাকবে না।” অথচ তারা দুনিয়াতে এ শক্তি-সামর্থ্য ও সাহায্যকারীর কারণে গর্ব ও অহংকার করে বেড়াত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক গাদ্দার তথা বিশ্বাসঘাতকের পিছনের অংশে তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ একটি পতাকা লাগিয়ে দেয়া হবে, তাতে বলা থাকবে: এটা অমুকের পুত্র অমুকের গাদ্দারীর প্রমাণপত্ৰ।” [বুখারী ৩১৮৭; মুসলিম ১৭৩৬]
এভাবে আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী ও ধোঁকাবাজের যাবতীয় গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে অপমানিত করবেন।
[২] এখানে শরীকদেরকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করার মূল কারণ হচ্ছে ধমকি প্রদান। কারণ, সেদিন আল্লাহ তা'আলার সম্মান, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবাই সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারবে। আর তখন প্রত্যেকেই বুঝতে পারবে যে, আল্লাহর সাথে যে শরীক নির্ধারণ করেছিলাম তা ছিল বোকামী। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
[৩] এখানে আল্লাহর দীনের জ্ঞানীদের সম্মানিত করা হয়েছে। যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে সমস্ত দলীল-প্রমাণাদি স্থাপন করা শেষ হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর আযাবের বাণী প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, আর কাফেররা ওজর আপত্তি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, তখন জানবে যে, তাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই। তখন দীনের জ্ঞানীরা এ কথা বলবে। তারা বলবে, আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের উপর--- [ইবন কাসীরা] তারা হলো আল্লাহর দীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানী। যারা দুনিয়াতে হক্ক কথা বলতে কখনো পিছপা হতো না তারা আখেরাতেও হক্ক কথা বলার সুযোগ পাবে। এটা তাদের জন্য বড় সম্মানের বিষয়। [ইবন কাসীর]
যাদের মৃত্যু ঘটায় ফিরিশতাগণ তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করা অবস্থায়; তখন তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা কোনো মন্দ কাজ করতাম না।‘ [১] অবশ্যই হ্যাঁ, নিশ্চয় তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবগত।
[১] এটা তাদের মিথ্যাচার। অন্য আয়াতে এসেছে, তারা বলবে “আল্লাহর শপথ আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না।" [সূরা আল-আন’আম ২৩]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যে দিন আল্লাহ পুনরুথিত করবেন তাদের সবাইকে, তখন তারা আল্লাহর কাছে সেরূপ শপথ করবে যেরূপ শপথ তোমাদের কাছে করে।” [সূরা আল-মুজাদালাহ ১৮]
তাদের মিথ্যাচারের কারণে আল্লাহ্ তা'আলা বলছেন যে, তোমাদের কথা সঠিক নয়; বরং তোমরা যাবতীয় মন্দ কাজ করতে। আল্লাহ্ তা'আলা তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছিল তাদেরকে বলা হল, ‘তোমাদের রব কী নাযিল করেছেন?’ তারা বলল, ‘মহাকল্যাণ [১]।’ যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম [২]!
[১] ঈমানদারগণ তাদের কাছে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে তাকে বিরাট নেয়ামত জ্ঞান করে। তারা কাফেরদের মত এটা বলে না যে, পূর্ববর্তীদের গাঁথা। বরং তাদের কাছে এটা এক মহাকল্যাণের বস্তু, রহমত ও উত্তম জিনিস যারা তার অনুসরণ করবে ও তার উপর ঈমান আনবে। তারপর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানদারদের জন্য যে পুরস্কার রয়েছে তা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম। [ইবন কাসীর] যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।" [সূরা আন-নাহল ৯৭]
ইবন কাসীর বলেন, যে কেউ দুনিয়াতে উত্তম আমল করবে, আল্লাহ তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে তার আমলটি সুন্দর করে দিবেন।
[২] এ আয়াতের সমার্থে আরো কিছু আয়াত রয়েছে। [দেখুন, সূরা ইউনুস ২৬, সূরা আন-নাহল ৯৭, সূরা আল-কাসাস ৮০, সূরা আলে ইমরান ১৯৮, সূরা আলআলা ১৭, সূরা আদ-দোহা ৪]
সেটা স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে; তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু চাইবে তাতে তাদের জন্য তা-ই থাকবে [১]। এভাবেই আল্লাহ্ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে,
[১] এ হচ্ছে জান্নাতের আসল পরিচয়। সেখানে মানুষ যা চাইবে তা পাবে। তার ইচ্ছা ও পছন্দ বিরোধী কোনো কাজই সেখানে হবে না। দুনিয়ার কোনো প্রধান ব্যক্তি, কোনো প্রধান নেতা এবং কোনো বিশাল রাজ্যের অধিকারী বাদশাহও কোনো দিন এ নিয়ামত লাভ করেনি। দুনিয়ায় এ ধরনের নিয়ামত লাভের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক অধিবাসীই সেখানে আনন্দ ও উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যাবে। তার জীবনে সর্বক্ষণ সবদিকে সবকিছু হবে তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। তার প্রত্যেকটি আশা সফল হবে, প্রত্যেকটি কামনা ও বাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং প্রত্যেকটি ইচ্ছা ও আকাংখা বাস্তবায়িত হবে। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আয-যুখরুফ ৭১]
ফিরিশতাগণ [১] যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তমভাবে। ফিরিশতাগণ বলবেন, তোমাদের উপর সালাম! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর [২]।
[১] এ আয়াত এবং এর পরবর্তী যে আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাকী ও ফেরেশতাদের আলাপ আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্ট ভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। সূরা আল-মুমিনের ৪৫-৪৬ আয়াতে এসবের চেয়ে বেশী সুস্পষ্ট ভাষায় বর্যখের আযাবের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহ ফিরআউন ও ফিরআউনের পরিবারবর্গ সম্পর্কে বলেছেন, “একটি কঠিন আযাব তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। সকাল-সাঁঝে তাদেরকে আগুনের সামনে নিয়ে আসা হয়। তারপর যখন কিয়ামতের সময় এসে যাবে তখন হুকুম দেয়া হবে- ফিরআউনের পরিবারবর্গকে কঠিনতম আযাবের মধ্যে ফেলে দাও।" এখানে এটা বিশ্বাস করা জরুরী যে, কবরের শাস্তি শুধু রূহের উপর হবে না। বরং রূহ এবং দেহ উভয়টির উপরই হবে। কিয়ামতের মাঠে এবং এর পরবর্তী জীবন হবে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের যার সাথে দুনিয়ার জীবনের কোনো তুলনাই চলে না। সেখানে সবকিছুর গতি প্রকৃতি ভিন্ন হবে।
[২] এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মৃত্যুর সময় ঈমানদারগণের যে অবস্থা হয় এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে কিভাবে সাদর সম্ভাষণ জানায় তা বর্ণনা করছেন। অনুরূপ আয়াত কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এসেছে। [দেখুন, সূরা ফুসসিলাত ৩০-৩২]
তবে একথা জানা আবশ্যক যে, সৎকাজ করা জান্নাতে যাওয়ার কারণ। কিন্তু শুধুমাত্র সৎকাজই মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না, যতক্ষণ তার সাথে আল্লাহর রহমত না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের বিনিময়ে নাজাত পাবে না। লোকেরা বলল: আপনিও পাবেন না? তিনি বললেন: না, আমিও না। তবে আল্লাহ যদি তার রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রাখেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদত করো। এসব কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো। মধ্যম পন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে।” [বুখারী ৬৪৬৩]
তারা তো শুধু তাদের কাছে ফিরিশতা আসার প্রতীক্ষা করে অথবা আপনার রবের নির্দেশ আসার। তাদের পূর্ববর্তীরা এরূপই করত [১]। আর আল্লাহ্ তাদের প্রতি কোনো যুলুম করেননি, কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করত।
[১] এর অর্থ হচ্ছে, যতদূর বুঝনোর ব্যাপার ছিল আপনি তো প্রত্যেকটি সত্যকে উন্মুক্ত করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যুক্তির সাহায্যে তার সত্যতা প্রমাণ করে দিয়েছেন। বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা থেকে এর পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। কোনো বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শির্কের ওপর অবিচল থাকার কোনো অবকাশই রাখেননি। এখন এরাই একটি সরল সোজা কথা মেনে নেবার ব্যাপারে ইতস্তত করছে কেন? এরা কি মউতের ফেরেশতার অপেক্ষায় আছে? এ ফেরেশতা সামনে এসে গেলে তখন জীবনের শেষ মুহুর্তে কি এরা তা মেনে নেবে? অথবা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাব সামনে এসে গেলে তার প্রথম আঘাতের পর তা মেনে নেবে? কাতাদাহ বলেন, ফিরিশতার আগমন বলে এখানে মৃত্যু নিয়ে ফিরিশতাদের আগমন বোঝানো হয়েছে। আর আল্লাহর নির্দেশ বলে কিয়ামতের দিনের কথা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
ئەنجامەکانی گەڕان:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".