যখন আমরা তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম দুজন রাসূল, তখন তারা তাদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, তারপর আমরা তাদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা। অতঃপর তারা বলেছিলেন, 'নিশ্চয় আমরা তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি।'
তারা বলল, 'তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ [১], রহমান তো কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা শুধু মিথ্যাই বলছ।
[১] অন্য কথায় তাদের বক্তব্য ছিল, তোমরা যেহেতু মানুষ, কাজেই তোমরা আল্লাহ প্রেরিত রাসূল হতে পারো না। মক্কার কাফেররাও এ একই ধারণা করতো। তারা বলতো, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাসূল নন, কারণ তিনি মানুষ। “তারা বলে, এ কেমন রাসূল, যে খাবার খায় এবং বাজারে চলাফেরা করে।” [সূরা আল-ফুরকান ৭] “আর যালেমরা পরস্পর কানাঘুষা করে যে, এ ব্যক্তি (অৰ্থাৎ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কি! তারপর কি তোমরা চোখে দেখা এ যাদুর শিকার হয়ে যাবে?” [সূরা আল-আম্বিয়া ৩] কুরআন মজীদ মক্কার কাফেরদের এ জাহেলী চিন্তার প্রতিবাদ করে বলে, এটা কোনো নতুন জাহেলীয়াত নয়। আজ প্রথমবার এ লোকদের থেকে এর প্রকাশ হচ্ছে না। বরং অতি প্রাচীনকাল থেকে সকল মূর্খ ও অজ্ঞের দল এ বিভ্রান্তির শিকার ছিল যে, মানুষ রাসূল হতে পারে না এবং রাসূল মানুষ হতে পারে না। নূহের জাতির সরদাররা যখন নূহের রিসালাত অস্বীকার করেছিল তখন তারাও একথাই বলেছিল: “এ ব্যক্তি তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। সে চায় তোমাদের ওপর তার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে। অথচ আল্লাহ চাইলে ফেরেশতা নাযিল করতেন। আমরা কখনো নিজেদের বাপ-দাদাদের মুখে একথা শুনিনি।” [সূরা আল-মুমিনুন ২৪] আদ জাতি একথাই হুদা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেছিল: “এ ব্যক্তি তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। সে তাই খায় যা তোমরা খাও এবং পান করে তাই যা তোমরা পান করো। এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য করো তাহলে তোমরা বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” [সূরা আল-মুমিনুন ৩৩– ৩৪] সামূদ জাতি সালেহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কেও এ একই কথা বলেছিল: “আমরা কি আমাদের মধ্য থেকে একজন মানুষের আনুগত্য করবো?" [সূরা আল-ক্বামার ২৪] আর প্রায় সকল নবীর সাথেই এরূপ ব্যবহার করা হয়। কাফেররা বলে: “তোমরা আমাদেরই মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও।” নবীগণ তাদের জবাবে বলেন, “অবশ্যই আমরা তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নই। কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার প্রতি চান অনুগ্রহ বর্ষণ করেন।” [সূরা ইবরাহীম ১১] এরপর কুরআন মজীদ বলছে, এ জাহেলী চিন্তাধারা প্রতি যুগে লোকদের হিদায়াত গ্ৰহণ করা থেকে বিরত রাখে এবং এরই কারণে বিভিন্ন জীবনে ধ্বংস নেমে এসেছে: “তোমাদের কাছে কি এমন লোকদের খবর পৌঁছেনি? যারা ইতিপূর্বে কুফরী করেছিল তারপর নিজেদের কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করে নিয়েছে এবং সামনে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এসব কিছু হয়েছে এজন্য যে, তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসতে থেকেছে৷ কিন্তু তারা বলছে, ‘এখন কি মানুষ আমাদের পথ দেখাবে?’ এ কারণে তারা কুফরী করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” [সূরা আত-তাগাবুন ৫-৬] “লোকদের কাছে যখন হিদায়াত এলো তখন এ অজুহাত ছাড়া আর কোনো জিনিস তাদের ঈমান আনা থেকে বিরত রাখেনি যে, তারা বললো, “আল্লাহ মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?” [সূরা ইসরা ৯৪] তারপর কুরআন মজীদ সুস্পষ্টভাবে বলছে, আল্লাহ চিরকাল মানুষদেরকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং মানুষের হিদায়াতের জন্য মানুষই রাসূল হতে পারে কোনো ফেরেশতা বা মানুষের চেয়ে উচ্চতর কোনো সত্তা এ দায়িত্ব পালন করতে পারে না: “তোমার পূর্বে আমি মানুষদেরকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি, যাদের কাছে আমি আহি পাঠাতাম। যদি তোমরা না জানো তাহলে জ্ঞানবানদেরকে জিজ্ঞেস করো। আর তারা আহার করবে না এবং চিরকাল জীবিত থাকবে, এমন শরীর দিয়ে তাদেরকে আমি সৃষ্টি করিনি।” [সূরা আল-আম্বিয়া ৭-৮] “আমি তোমার পূর্বে যে রাসূলই পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই আহার করতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো।" [সূরা আল-ফুরকান ২০] “হে নবী! তাদেরকে বলে দিন, যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে থাকতো, তাহলে আমি তাদের প্রতি ফেরেশতাদেরকেই রাসূল বানিয়ে নাযিল করতাম।” [সূরা আল-ইসরা ৯৫]
তারা বলল, 'আমরা তো তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি [১], যদি তোমরা বিরত না হও তোমাদেরকে অবশ্যই পাথরের আঘাতে হত্যা করব এবং অবশ্যই স্পর্শ করবে তোমাদের উপর আমাদের পক্ষ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।'
[১] মূলে تطير বলা হয়েছে, এর অর্থ অশুভ, অমঙ্গল ও অলক্ষুণে মনে করা। উদ্দেশ্য এই যে, শহরবাসীরা প্রেরিত লোকদের কথা অমান্য করল এবং বলতে লাগল, তোমরা অলক্ষুণে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, তাদের অবাধ্যতা ও রাসূলদের কথা অমান্য করার কারণে জনপদে দূর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যায়। ফলে তারা তাদেরকে অলক্ষুণে বলল। কাফেরদের সাধারণ অভ্যাস এই যে, কোনো বিপদাপদ দেখলে তার কারণ হেদায়াতকারী ব্যক্তিবর্গকে সাব্যস্ত করে অথবা তাদের এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল একথা বুঝানো যে, তোমরা এসে আমাদের উপাস্য দেবতাদের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছো তার ফলে দেবতারা আমাদের প্রতি রুষ্ট হয়ে উঠেছে এবং এখন আমাদের ওপর যেসব বিপদ আসছে তা আসছে তোমাদেরই বদৌলতে। ঠিক এ একই কথাই আরবের কাফের ও মোনাফিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে বলতো: “যদি তারা কোনো কষ্টের সম্মুখীন হতো, তাহলে বলতো এটা হয়েছে তোমার কারণে।" [সূরা আন-নিসা ৭৮] তাই কুরআন মজীদে বিভিন্ন স্থানে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ ধরনের জাহেলী কথাবার্তাই প্রাচীন যুগের লোকেরাও তাদের নবীগণ সম্পর্কে বলতো। সামূদ জাতি তাদের নবীকে বলতো, “আমরা তোমাকে ও তোমার সাথীদেরকে অমংগলজনক পেয়েছি।” [সূরা আন-নমল ৪৭] আর ফেরাউনের জাতিও এ একই মনোভাবের অধিকারী ছিল: “যখন তারা ভালো অবস্থায় থাকে তখন বলে, এটা আমাদের সৌভাগ্যের ফল এবং তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে তাকে মূসা ও তার সাথীদের অলক্ষ্মণের ফল গণ্য করতো।” [সূরা আল-আরাফ ১৩১]
তারা বললেন, তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই সাথে [১]; এটা কি এজন্যে যে, তোমাদেরকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে [২]? বরং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।
[১] যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক ব্যক্তির কল্যাণ ও অকল্যাণের পরোয়ানা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি।” [সূরা আল-ইসরা ১৩]
[২] অর্থাৎ তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে উপদেশ দেয়াতে এবং আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়াতেই কি তোমরা আমাদের অলক্ষুণে মনে করছ? তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। [তাবারী]
অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চায় না [১] যারা সৎপথপ্রাপ্ত।
[১] কাতাদাহ বলেন, সে ব্যক্তি যখন রাসূলদের কাছে এসে পৌঁছলেন তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তোমাদের এ কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক চাও? তারা বলল, না। তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ কর। অনুসরণ করা তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চান না, আর তারা তো সৎপথপ্ৰাপ্ত। [তাবারী]
‘আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করব [১]? রহমান আমার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না।
[১] আল্লামা শানকীতী বলেন, এর অর্থ, আমি তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত কর তাদের ইবাদাত করব না। আমার আল্লাহ যদি আমার কোনো ক্ষতির ইচ্ছা করেন, তবে এ মাবুদগুলো আমার কোনো কাজে আসবে না। তারা আমার থেকে সে ক্ষতিকে প্ৰতিহত করতে পারবে না। আর আমাকে বিপদ থেকেও উদ্ধার করতে পারবে না। এ আয়াতে এ সমস্ত উপাস্যরা যে কোনো উপকার করতে পারে না বলে বর্ণিত হয়েছে, তা অন্য আয়াতেও এসেছে। যেমন, “বলুন, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্ আমার অনিষ্ট করতে চাইলে তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে?’ বলুন, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট' নির্ভরকারীগণ তাঁর উপরই নির্ভর করে।” [সূরা আয-যুমার ৩৮] “বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে কর তাদেরকে ডাক, অতঃপর দেখবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার বা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই।" [সূরা আল-ইসরা ৫৬]
তাকে বলা হল, 'জান্নাতে প্রবেশ কর [১]।' সে বলে উঠল, 'হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত---
[১] কুরআনের উপরোক্ত বাক্য থেকে এ দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, লোকটিকে শহীদ করে দেয়া হয়েছিল। কেননা কেবল জান্নাতে প্ৰবেশ অথবা জান্নাতের বিষয়াদি দেখা মৃত্যুর পরই সম্ভবপর। [দেখুন- কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] কাতাদাহ বলেন, এ লোকটি তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর দিকে আহবান জানিয়েছে এবং তাদের জন্য উপদেশ ব্যক্ত করেছে, কিন্তু তারা তাকে হত্যা করেছে। [তাবারী]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
തിരയൽ ഫലങ്ങൾ:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".