‘যারা অনুসরণ করে রাসূলের, উম্মী [১] নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায় [২], যিনি তাদের সৎকাজের আদেশ দেন, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন [৩]। আর তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে মুক্ত করেন যা তাদের উপর ছিল [৪]। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সাথে নাযিল হয়েছে সেটার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম [৫]।
[১] আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'টি পদবী ‘রাসূল’ ও ‘নবী’ এবং এর সাথে সাথে তৃতীয় একটি বৈশিষ্ট্য ‘উম্মী'-এরও উল্লেখ করা হয়েছে। ইবন আব্বাস বলেন, (اُمِّيْ) উম্মী' শব্দের অর্থ হল নিরক্ষর। যে লেখা-পড়া কোনোটাই জানে না। [বাগভী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, “আমরা নিরক্ষর জাতি। লিখা জানি না, হিসাব জানি না।” [বুখারী ১০৮০] সাধারণ আরবদেরকে এ কারণেই কুরআন اُمِّيِّيْنَ বা নিরক্ষর জাতি বলে অভিহিত করেছে যে, তাদের মধ্যে লেখা-পড়ার প্রচলন খুবই কম ছিল। কারও কারও মতে উম্মী শব্দটি ‘উম্ম’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। আর উম্ম অর্থ, মা! অর্থাৎ সে তার মা তাকে যেভাবে প্রসব করেছে সেভাবে রয়ে গেছে। কারও কারও মতে শব্দটি ‘উম্মত’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। পরে সম্পর্ক করার নিয়মানুসারে ‘তা’ বর্ণটি পড়ে গেছে। তখন অর্থ হবে, উম্মতওয়ালা নবী। কারও কারও মতে, শব্দটি উম্মুল কুরা’ যা মক্কার এক নাম, সেদিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মক্কাবাসী। [বাগভী]
তবে বিখ্যাত মত হচ্ছে যে, উম্মী অর্থ নিরক্ষর। যদিও নিরক্ষর হওয়াটা কোনো মানুষের জন্য প্রশংসনীয় গুণ নয়; বরং ক্রটি হিসাবেই গণ্য। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান-গরিমা, তত্ত্ব ও তথ্য অবগতি এবং অন্যান্য গুণ-বৈশিষ্ট্য ও পরাকাষ্ঠা সত্ত্বেও উম্মী হওয়া তার পক্ষে বিরাট গুণ ও পরিপূর্ণতায় পরিণত হয়েছে। কারণ, শিক্ষাগত, কার্যগত ও নৈতিক পরাকাষ্ঠী যদি কোনো লেখাপড়া জানা মানুষের দ্বারা প্রকাশ পায়, তাহলে তা হয়ে থাকে তার সে লেখাপড়ারই ফলশ্রুতি, কিন্তু কোনো একান্ত নিরক্ষর ব্যক্তির দ্বারা এমন অসাধারণ, অভূতপূর্ব ও অনন্য তত্ত্ব-তথ্য ও সূক্ষ্ম বিষয় প্রকাশ পেলে, তা তার প্রকৃষ্ট মু'জিযা ছাড়া আর কী হতে পারে?
[২] মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব গুণ-বৈশিষ্ট্য তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ ছিল সেগুলোর কিছু আলোচনা তাওরাত ও ইঞ্জীলের উদ্ধৃতি সাপেক্ষে কুরআনুল কারমেও করা হয়েছে। আর কিছু সে সমস্ত মনীষীবৃন্দের উদ্ধৃতিতে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের আসল সংকলন স্বচক্ষে দেখেছেন এবং তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা নিজে পড়েই মুসলিম হয়েছেন। যেমন, কোনো এক ইয়াহুদী বালক নবী কারম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করত। হঠাৎ সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অবস্থা জানার জন্য সেখানে গেলেন। তিনি দেখলেন, তার পিতা তার মাথার কাছে দাড়িয়ে তাওরাত তিলাওয়াত করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইয়াহুদী, আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি সে মহান সত্তার যিনি মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি তাওরাত নাযিল করেছেন, তুমি কি তাওরাতে আমার অবস্থা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং আবির্ভাব সম্পর্কে কোনো বর্ণনা পেয়েছ? সে অস্বীকার করল। তখন তার ছেলে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তিনি (অর্থাৎ এই ছেলের পিতা) ভুল বলছেন। তাওরাতে আমরা আপনার আলোচনা এবং আপনার গুণ-বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো হক মা'বূদ নাই এবং আপনি তার প্রেরিত রাসূল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দিলেন যে, এখন এ বালক মুসলিম। তার মৃত্যুর পর তার কাফন-দাফন মুসলিমরা করবে। তার পিতার হাতে দেয়া হবে না। [মুসনাদে আহমাদ ৫/৪১১] অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এক ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে সবগুণ বর্ণনা করেছে যা সে তাওরাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে দেখেছে। তিনি বলেন, আমি আপনার সম্পর্কে তাওরাতে এ কথাগুলো পড়েছি- “মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ্, তার জন্ম হবে মক্কায়, তিনি হিজরত করবেন ‘তাইবার দিকে; আর তার দেশ হবে সিরিয়া। তিনি কঠোর মেজাজের হবেন না, কঠোর ভাষায় তিনি কথাও বলবেন না, হাটে-বাজারে তিনি হট্টগোলও করবেন না। অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা থেকে তিনি দূরে থাকবেন।" [মুস্তাদরাক ২/৬৭৮, হাদীস ৪২৪২]
কা’আবে আহবার বলেছেন, তাওরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে লেখা রয়েছে: “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ও নির্বাচিত বান্দা। তিনি না কঠোর মেজাজের লোক, না বাজে বক্তা। নাইবা তিনি হাটে-বাজারে হট্টগোল করার লোক। তিনি মন্দের প্রতিশোধ মন্দ দ্বারা গ্রহণ করেন না; বরং ক্ষমা করে দেন এবং ছেড়ে দেন। তার জন্ম হবে মক্কায়, আর হিজরত হবে তাইবায়। তার দেশ হবে শাম (সিরিয়া)। আর তার উম্মাত হবে ‘হাম্মদীন’। অর্থাৎ আনন্দ-বেদনা উভয় অবস্থাতেই আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী। তারা যে কোনো উর্ধ্বারোহণকালে তাকবীর বলবে। তারা সূর্যের ছায়ার প্রতি লক্ষ্য রাখবে, যাতে সময় নির্ণয় করে যথাসময়ে সালাত আদায় করতে পারে। তিনি তার শরীরের নিম্নাংশে লুঙ্গি পরবেন এবং হস্ত-পদাদি ওযুর মাধ্যমে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। তাদের আযানদাতা আকাশে সুউচ্চ স্বরে আহবান করবেন। জিহাদের ময়দানে তাদের সারিগুলো এমন হবে যেমন সালাতে হয়ে থাকে। রাতের বেলায় তাদের তিলাওয়াত ও যিকরের শব্দ এমনভাবে উঠতে থাকবে, যেন মধুমক্ষিকার শব্দ। [সুনান দারামী ৫, ৮, ৯]
ইবন সা’আদ রাহিমাহুল্লাহ সাহাল মওলা খাইসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সনদ সহকারে উদ্ধৃত করেছেন যে, সাহাল বলেন, আমি ইঞ্জিলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহ পড়েছি যে- “তিনি খুব বেঁটেও হবেন না আবার খুব লম্বাও হবেন না। উজ্জ্বল বর্ণ ও দু'টি কেশ-গুচ্ছধারী হবেন। তার দু’কাঁধের মধ্যস্থলে নবুওয়াতের মোহর থাকবে। তিনি সদকা গ্রহণ করবেন না। গাধা ও উটের উপর সওয়ারী করবেন। ছাগলের দুধ নিজে দুইয়ে নেবেন। তিনি ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর হবেন। তার নাম হবে আহমাদ।” [তাবাকাত ইবন সা’আদ ১/৩৬৩]
আতা ইবন ইয়াসার বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে বললাম, আমাকে তাওরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাগুণ কেমন এসেছে তা বর্ণনা করুন, তিনি বললেন, "তাওরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে: “হে নবী, আমি আপনাকে সমস্ত উম্মতের জন্য সাক্ষী, সৎকর্মশীলদের জন্য সুসংবাদদাতা, অসৎকর্মীদের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী এবং উম্মিয়ীন অর্থাৎ আরবদের জন্য রক্ষণা-বেক্ষণকারী বানিয়ে পাঠিয়েছি। আপনি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি আপনার নাম মুতাওয়াক্কিল’ রেখেছি। আপনি কঠোর মেজাজও নন, দাঙ্গাবাজও নন। হাটে-বাজারে হট্টগোলকারীও নন। মন্দের প্রতিশোধ মন্দের দ্বারা গ্রহণ করেন না; বরং ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা'আলা ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে মৃত্যু দেবেন না; যতক্ষণ না তার মাধ্যমে বাঁকা জাতিকে সোজা করে নেবেন। এমনকি যতক্ষণ না তারা لَااِلٰهَ اِلَّااللّٰهُ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা'বূদ নেই" -এ কালেমার স্বীকৃতিদানকারী হয়ে যাবেন, যতক্ষণ না অন্ধ চোখ খুলে দেবেন, বধির কান যতক্ষণ না শোনার যোগ্য বানাবেন এবং বদ্ধ হৃদয় যতক্ষণ না খুলে দেবেন।” [বুখারী ২১২৫, ৪৮৩৮] তাওরাত ও ইঞ্জীল বর্ণিত শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মাতের গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং নিদর্শনসমূহের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে বহু স্বতন্ত্র গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়েছে। রহমতুল্লাহ কীরানভী মুহাজেরে মক্কী রাহিমাহুল্লাহ তার গ্রন্থ ‘ইযহারুল-হক’-এ বিষয়টিকে অত্যন্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও গবেষণাসহ লিখেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমান যুগের তাওরাত ও ইঞ্জীল- যাতে সীমাহীন বিকৃতি সাধিত হয়েছে- তাতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু গুণ ও বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ রয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ তাওরাত ও ইনজীলের নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুন: এসব স্থানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় বিবরণ-১৮: ১৫-১৯, মথি-২১ : ৩৩-৪৬, যোহন-১: ১৯-২১, ১৪: ১৫-১৭, ২৫-৩০, ১৫: ২৫-২৬, ১৬: ৭-১৫।
[৩] দ্বিতীয় গুণটি এই বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির জন্য পবিত্র ও পছন্দনীয় বস্তু-সামগ্ৰী হালাল করবেন; আর পঙ্কিল বস্তু-সামগ্রীকে হারাম করবেন। অর্থাৎ অনেক সাধারণ পছন্দনীয় বস্তু-সামগ্রী যা শাস্তি স্বরূপ বনী ইসরাঈলের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর উপর থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেবেন। উদাহরণতঃ পশুর চর্বি বা মেদ প্রভৃতি যা বনী ইসরাঈলের অসদাচরণের শাস্তি হিসাবে হারাম করে দেয়া হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোকে হালাল সাব্যস্ত করেছেন। আর নোংরা ও পঙ্কিল বস্তু-সামগ্রীর মধ্যে শুকরের মাংস, সুদ এবং যে সমস্ত খাবার আল্লাহ হারাম করেছেন অথচ তারা সেগুলোকে হালাল বলে চালিয়েছিল। [তাবারী] অনুরূপভাবে, রক্ত, মৃত পশু, মদ ও অন্যান্য হারাম জন্তু এর অন্তর্ভুক্ত এবং হারাম উপায়ে আয় যথা- সুদ, ঘুষ, জুয়া প্রভৃতিও এর অন্তর্ভুক্ত।
[৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তৃতীয় গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের উপর চেপে থাকা বোঝা ও প্রতিবন্ধকতাও সরিয়ে দেবেন। اصر ইসর’ শব্দের অর্থ এমন ভারী বোঝা যা নিয়ে মানুষ চলাফেরা করতে অক্ষম। আর اغلال ‘আগলাল’ غل এর বহুবচন৷ ‘গাল্লুন’ সে হাতকড়াকে বলা হয় যা দ্বারা অপরাধীর হাত তার ঘাড়ের সাথে বেঁধে দেয়া হয় এবং সে একেবারেই নিরুপায় হয়ে পড়ে। اصر ‘ইসর’ ও اغلال ‘আগলাল’ অর্থাৎ অসহনীয় চাপ ও আবদ্ধতা বলতে এ আয়াতে সে সমস্ত কঠিন ও সাধ্যাতীত কর্তব্যের বিধি-বিধানকে বুঝানো হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে ধর্মের উদ্দেশ্য ছিল না, কিন্তু বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের উপর একান্ত শাস্তি হিসাবে আরোপ করা হয়েছিল। যেমন, বিধর্মী কাফেরদের সাথে জিহাদ করে গনীমতের যে মাল পাওয়া যেত, তা বনী ইসরাঈলদের জন্য হালাল ছিল না; বরং আকাশ থেকে একটি আগুন নেমে এসে সেগুলোকে জ্বলিয়ে দিত। শনিবারে শিকার করাও তাদের জন্য বৈধ ছিল না। এ সমস্ত কঠিন ও জটিল বিধানসমূহ যা বনী ইসরাঈলদের উপর আরোপিত ছিল, কুরআনে সেগুলোকে ‘ইসর’ ও ‘আগলাল’ বলা হয়েছে এবং সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব কঠিন বিধি-বিধানের পরিবর্তন অর্থাৎ এগুলোকে রহিত করে তদস্থলে সহজ বিধি-বিধান প্রবর্তন করবেন। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দীন সহজ।’ [বুখারী ৩৯] কুরাআনুল কারীমে বলা হয়েছে
“আল্লাহ্ দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।” [সূরা আল-হাজ্জ ৭৮]
[৫] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ ও পরিপূর্ণ গুণ-বৈশিষ্ট্যের আলোচনার পর বলা হয়েছে: তাওরাত ও ইঞ্জীলে আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃষ্ট গুণ-বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণাদি বাতলে দেয়ার পরিণতি এই যে, যারা আপনার প্রতি ঈমান আনবে এবং আপনার সহায়তা করবে আর সেই নূরের অনুসরণ করবে যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে -অর্থাৎ যারা কুরআনের অনুসরণ করবে- তারাই হল কল্যাণপ্রাপ্ত। এখানে কল্যাণ লাভের জন্য চারটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। প্রথমতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনা, দ্বিতীয়তঃ তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান করা, তৃতীয়তঃ তার সাহায্য ও সহায়তা করা এবং চতুর্থতঃ কুরআন অনুযায়ী চলা। শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন বুঝানোর জন্য (وَعَزَّرُوْهُ) ‘আযযারূহু' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা تعزير থেকে উদ্ভুত। ‘তাষীর’ অর্থ সস্নেহে বারণ করা ও রক্ষা করা। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু (وَعَزَّرُوْهُ) ‘আযযারূহু’ -এর অর্থ করেছেন শ্রদ্ধা ও সম্মান করা। অর্থাৎ রাসূল হিসাবে তার প্রতি ঈমান আনতে হবে, নির্দেশদাতা হিসাবে তার প্রতিটি নির্দেশের অনুসরণ করতে হবে, প্রিয়জন হিসাবে তার সাথে গভীরতম ভালবাসা রাখতে হবে এবং নবুওয়াতের ক্ষেত্রে যেহেতু তিনি পরিপূর্ণ, তাই তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। অপর এক আয়াতেও বলা হয়েছে
(وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ)
অর্থাৎ “তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর এবং তাকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দান কর।” [সূরা আল-ফাতহ ৯] এছাড়া আরো কয়েকটি আয়াতে এই হেদায়াত দেয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহর উপস্থিতিতে এত উচ্চস্বরে কথা বলো না, যা তার স্বর থেকে বেড়ে যেতে পারে। [দেখুন, সূরা হুজুরাত ২] অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে:
অর্থাৎ “হে ইমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে এগিয়ে যেয়ো না।” অর্থাৎ যদি মজলিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত থাকেন এবং তাতে কোনো বিষয় উপস্থাপিত হয়, তাহলে তোমরা তার আগে কোনো কথা বলো না। এ আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে কোনো কোনো সাহাবী বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে কেউ কথা বলবে না এবং তিনি যখন কোনো কথা বলেন, তখন সবাই তা নিশ্চুপ বসে শুনবে। অনুরূপভাবে কুরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকার সময় আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে; এমনভাবে ডাকবে না; নিজেদের মধ্যে একে অপরকে যেভাবে ডেকে থাক। [দেখুন, সূরা হুজুরাত ২] এ আয়াতের শেষে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, এ নির্দেশের খেলাফ কোনো অসম্মানজনক কাজ করা হলে সমস্ত সৎকর্ম ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে যাবে। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম যদিও সর্বক্ষণ-সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মসঙ্গী ছিলেন এবং এমতাবস্থায় সম্মান ও আদবের প্রতি পরিপূর্ণ লক্ষ্য রাখা বড়ই কঠিন হয়ে থাকে; তবুও তাদের অবস্থা এই ছিল যে, এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, যিনি আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন তার শপথ করে বলছি, মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে এমনভাবে কথা বলব যেন কোনো ভাইয়ের কাছে কেউ গোপন বিষয়ে বলে। [মুস্তাদরাকে হাকেম ২/৪৬২] এমনি অবস্থা ছিল উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুরও। [দেখুন: বুখারী ৪৮৪৫] আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা আমার কোনো প্রিয় ব্যক্তি সারা বিশ্বে ছিল না। আর আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি তার প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখতেও পারতাম না। আমার কাছে যদি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকার-অবয়ব সম্পর্কে কেউ জানতে চায়, তাহলে তা বলতে আমি এজন্য অপারগ যে, আমি কখনো তার প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়েও দেখিনি। [ মুসলিম ১২১] উরওয়া ইবন মাসউদকে মক্কাবাসীরা গুপ্তচর বানিয়ে মুসলিমদের অবস্থা জানার জন্য মদীনায় পাঠাল। সে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এমন নিবেদিত প্রাণ দেখতে পেল যে, ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দিল যে, আমি কিস্রা ও কায়সারের দরবারও দেখেছি এবং সম্রাট নাজ্জাশীর সাথেও সাক্ষাত করেছি, এমনটি আর কোথাও দেখিনি। আমার ধারণা, তোমরা কষ্মিনকালেও তাদের মোকাবেলায় জয়ী হতে পারবে না। [সহীহ ইবন হিব্বান ১১/২১৬]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
തിരയൽ ഫലങ്ങൾ:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".