অবশ্যই আমরা আমাদের রাসূলগণকে পাঠিয়েছি স্পষ্ট প্রমাণসহ [১] এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়ের পাল্লা, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্টা [২] করে। আমরা আরও নাযিল করেছি লোহা যাতে রয়েছে প্ৰচণ্ড শক্তি এবং রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ [৩]। এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দেন কে গায়েব অবস্থায়ও তাঁকে ও তাঁর রাসূলগণকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহা শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
[১] بينات শব্দের আভিধানিক অর্থ সুস্পষ্ট বিষয়। উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট বিধানাবলীও হতে পারে; তাছাড়া এর উদ্দেশ্য মু'জিযা এবং রেসালতের সুস্পষ্ট প্রমাণাদিও হতে পারে। কারণ, পরবর্তী বাক্যে কিতাব নাযিলের আলাদা উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং بينات বলে মু'জিযা ও প্রমাণাদি বোঝানো হয়েছে এবং বিধানাবলীর জন্যে কিতাব নাযিল করার কথা বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
[২] আয়াতে কিতাবের ন্যায় মিযানের বেলায়ও নাযিল করার কথা বলা হয়েছে। কিতাব নাযিল হওয়া এবং ফেরেশতার মাধ্যমে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত পৌঁছা সুবিদিত। কিন্তু মিযান নাযিল করার অর্থ কী? এ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীরে বিভিন্ন উক্তি এসেছে, কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, মীযান নাযিল করার মানে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার ও ন্যায়বিচার সম্পর্কিত বিধানাবলী নাযিল করা। কারও কারও মতে, প্রকৃতপক্ষে কিতাবই নাযিল করা হয়েছে, কিন্তু এর সাথে দাঁড়িপাল্লা স্থাপন ও আবিষ্কারকে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ যেন এরূপ আমি কিতাব নাযিল করেছি ও দাঁড়িপাল্লা উদ্ভাবন করেছি। তাছাড়া আয়াতে কিতাব ও মিযানের পর লৌহ নাযিল করার কথা বলা হয়েছে। এখানেও নাযিল করার মানে সৃষ্টি করা হতে পারে। পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে চতুষ্পদ জন্তুদের বেলায়ও নাযিল করা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [সূরা আয-যুমার ৬] অথচ চতুষ্পদ জন্তু আসমান থেকে নাযিল হয় না- পৃথিবীতে জন্মলাভ করে। সেখানেও সৃষ্টি করার অর্থ বোঝানো হয়েছে। তবে সৃষ্টি করাকে নাযিল করা শব্দে ব্যক্ত করার মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সৃষ্টির বহুপূর্বেই লওহে-মাহফুযে লিখিত ছিল—এ দিক দিয়ে দুনিয়ার সবকিছুই আসমান থেকে অবতীর্ণ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[৩] এতে আল্লাহ তা’আলা মানুষের জন্যে বহুবিধ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। দুনিয়াতে যত শিল্প-কারখানা ও কলকব্জা আবিস্কৃত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে, সবগুলোর মধ্যে লৌহের ভূমিকা সর্বাধিক। লৌহ ব্যতীত কোনো শিল্প চলতে পারে না। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
আর অবশ্যই আমরা নূহ এবং ইবরাহীমকে রাসূল রূপে পাঠিয়েছিলাম এবং আমরা তাদের বংশধরগণের জন্য স্থির করেছিলাম নবুওয়াত ও কিতাব [১], কিন্তু তাদের অল্পই সৎপথ অবলম্বন করেছিল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক।
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে বিশেষ বিশেষ নবী-রাসূলের আলোচনা করা হচ্ছে। প্রথমে নূহ আলাইহিস সালামের এবং পরে নবী-রাসূলগণের শ্রদ্ধাভাজন ও মানবমণ্ডলীর ইমাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সাথে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যত নবী-রাসূল ও ঐশী কিতাব দুনিয়াতে আগমন করবে, তারা সব এদের বংশধরের মধ্য থেকে হবে। অর্থাৎ নুহ আলাইহিস সালামের সেই শাখাকে ঐ গৌরব অর্জনের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যাতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেছেন। এ কারণেই পরবর্তীকালে যত নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছেন এবং যত কিতাব নাযিল করা হয়েছে, তারা সব ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর। এই বিশেষ আলোচনার পর পরবর্তী নবী-রাসূলগণের পরস্পরকে একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এরপর তাদের পশ্চাতে একের পর এক আমি আমার নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। পরিশেষে বিশেষভাবে বনী-ইসরাঈলের সর্বশেষ রাসূল ঈসা আলাইহিস সালামের উল্লেখ করেছেন যিনি শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার শরীয়ত সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন। [ইবন কাসীর]
তারপর আমরা তাদের পিছনে অনুগামী করেছিলাম আমাদের রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারইয়াম-তনয় ঈসাকে, আর তাকে আমরা দিয়েছিলাম ইঞ্জীল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া [১]। আর সন্ন্যাসবাদ [২]--- এটা তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমরা তাদেরকে এটার বিধান দেইনি; অথচ এটাও ওরা যথাযথভাবে পালন করেনি [৩]। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, তাদেরকে আমরা দিয়েছিলাম তাদের পুরস্কার। আর তাদের অধিকাংশই ছিল ফাসিক।
[১] এখানে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান আনয়নকারী হাওয়ারীগণের বিশেষ গুণ বৰ্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম অথবা ইঞ্জীলের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের অন্তরে স্নেহ ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছি। তারা একে অপরের প্রতি দয়া ও করুণাশীল কিংবা সমগ্র মানবমণ্ডলীর প্রতি তারা অনুগ্রহশীল। এখানে ঈসা আলাইহিস সালামের সাহাবী তথা হাওয়ারিগণের দুটি বিশেষ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে; তা হচ্ছে, দয়া ও করুণা। এরপর তাদের আরেকটি অভ্যাস বর্ণিত হয়েছে যা তারা আবিস্কার করে নিয়েছিল। আর যা আল্লাহ তাদের উপর আবশ্যিক করে দেন নি। আর সেটা হচ্ছে, সন্যাসবাদ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[২] رهبانية শব্দটি رهبان এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। এর অর্থ যে অতিশয় ভয় করে। বলা হয়ে থাকে যে, ঈসা আলাইহিস সালামের পর বনী-ইসরাঈলের মধ্যে পাপাচার ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষতঃ রাজন্যবৰ্গও শাসকশ্রেণী ইঞ্জীলের বিধানাবলীর প্রতি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। বনী-ইসরাঈলের মধ্যে কিছু সংখ্যক খাঁটি আলেম ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তারা এই প্রবণতাকে রুখে দাঁড়ালে তাদেরকে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন প্ৰাণে বেঁচে গেলেন তারা দেখলেন যে, মোকাবেলার শক্তি তাঁদের নেই। কিন্তু এদের সাথে মিলে-মিশে থাকলে তাঁদের দীন-ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। তাই তাঁরা স্বতঃ প্রণোদিত হয়ে নিজেদের জন্যে জরুরি করে নিলেন যে, তারা এখন থেকে বৈধ আরাম-আয়েশও বিসর্জন দিবেন, বিবাহ করবেন না, খাওয়া-পরা এবং ভোগ্যবস্তু সংগ্ৰহ করার চিন্তা করবেন না, বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণে যত্নবান হবেন না, লোকালয় থেকে দূরে কোনো জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ে জীবন অতিবাহিত করবেন অথবা যাযাবরদের ন্যায় ভ্ৰমণ ও পর্যটনে জীবন কাটিয়ে দিবেন যাতে দীনের বিধিবিধান স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে পালন করা যায়। তারা আল্লাহর ভয়ে এই কর্ম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, তাই তারা رهبان তথা সন্ন্যাসী নামে অভিহিত হলো এবং তাদের উদ্ভাবিত মতবাদ رهبانية তথা সন্ন্যাসবাদ নামে খ্যাতি লাভ করে। [কুরতুবী] আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাদের এ কাজের সমালোচনা করেছেন। কারণ, তারা নিজেরাই নিজেদের উপর ভোগ-বিলাস বিসর্জন দেয়া অপরিহার্য করে নিয়েছিল- আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয করা হয়নি। এভাবে তারা নিজেদেরকে শরীয়ত প্রবর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিল যা স্পষ্টত পথভ্রষ্টতা। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
মোটকথা, সন্ন্যাসবাদ কখনও আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যম ছিল না। এটা এ শরীয়তেও জায়েয নেই। হাদীসে এসেছে, একবার উসমান ইবন মাযউন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী খাওলা বিনত হাকীম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে খুব খারাপ বেশে প্রবেশ করলে তিনি বললেন, তোমার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, আমার স্বামী সারা রাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করে আর সারাদিন সাওম পালন করে, ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে প্রবেশ করলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলের কাছে এ ঘটনা বিবৃত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমানের সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললেন, হে উসমান! আমাদের উপর সন্যাসবাদ লিখিত হয়নি। তুমি কি আমাকে আদর্শ মনে কর না? আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি এবং তাঁর শরীয়তের সীমারেখার বেশী হেফাজতকারী। [মুসনাদে আহমাদ ৬/২২৬]
[৩] অর্থাৎ তারা দ্বিবিধ ভ্ৰান্তিতে ডুবে আছে। একটি ভ্রান্তি হচ্ছে তারা নিজেদের ওপর এমন সব বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নিয়েছিল যা করতে আল্লাহ কোনো নির্দেশ দেননি। দ্বিতীয় ভ্ৰান্তি হচ্ছে নিজেদের ধারণা মতে যেসব বাধ্য বাধকতাকে তারা আল্লাহর সস্তুষ্টির উপায় বলে মনে করে নিজেদের ওপর আরোপ করে নিয়েছিলো, তাঁর হক আদায় করেনি এবং এমন সব আচরণ করেছে যার দ্বারা আল্লাহর সস্তুষ্টির পরিবর্তে তাঁর গযব খরিদ করে নিয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]
হে মুমিনগন! আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বল কর এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আন। তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দেবেন দ্বিগুন পুরুষ্কার [১] এবং তিনি তোমাদেরকে দেবেন নূর, যার সাহায্যে তোমারা চলবে [২] এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[১] এই আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমানদার কিতাবী মুমিনগণকে সম্বোধন করা হয়েছে। যদিও يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا বলে কেবল মুসলিমগণকে সম্বোধন করাই পবিত্র কুরআনের সাধারণ রীতি। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে এই সাধারন রীতির বিপরীতে নাসারাদের জন্য يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সম্ভবতঃ এর রহস্য এই যে, পরবর্তী বাক্যে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান আনার আদেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, এটাই ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমানের দাবী। তারা যদি তা করে, তবে তারা উপরোক্ত সম্বোধনের যোগ্য হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার ও সওয়াব দানের ওয়াদা করা হয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
[২] অর্থাৎ পৃথিবীতে জ্ঞান ও দূরদৃষ্টির এমন “নূর” দান করবেন যার আলোতে তোমরা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পাবে জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের বাঁকা পথসমূহের মধ্যে ইসলামের সরল সোজা পথ কোন্টি। আর আখেরাতে এমন “নূর” দান করবেন যার মাধ্যমে পুল সিরাতের অন্ধকার রাস্তা পার হয়ে জান্নাতে যেতে পারবে। [দেখুন, কুরতুবী]
এটা এজন্যে যে, কিতাবীগণ যেন জানতে পারে, আল্লাহর সামান্যতম অনুগ্রহের উপরও ওদের কোনো অধিকার নেই [১]। আর নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহর ইখতিয়ারে, যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
[১] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, উল্লেখিত বিধানাবলী এজন্যে বর্ণনা করা হলো, যাতে কিতাবধারীরা জেনে নেয় যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান না এনে কেবল ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান স্থাপন করেই আল্লাহ তা'আলার কৃপা লাভের যোগ্য নয়। [দেখুন, মুয়াসসার]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
د لټون پایلې:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".