আর উট [১] কে আমরা আল্লাহ্র নিদর্শনগুলোর অন্যতম করেছি [২]; তোমাদের জন্য তাতে অনেক মঙ্গল রয়েছে [৩]। কাজেই এক পা বাঁধা ও বাকী তিনপায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ কর [৪]। তারপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় [৫] তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্থকে ও সাহায্যপ্রার্থীদেরকে [৬]; এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
[১] মূলে البُدْن শব্দটি এসেছে। আরবী ভাষায় তা শুধুমাত্র উটের জন্য ব্যবহার করা হয়। [কুরতুবী] সাধারণতঃ ঐ উটকেই بدن বলা হয় যা কা‘বার জন্য ‘হাদঈ’ হিসেবে প্রেরণ করা হয়। আর ‘হাদঈ’ হচ্ছে, উট, গরু, ছাগল সবগুলোর জন্য ব্যবহৃত নাম। [কুরতুবী] তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর বিধানে গরুকেও উটের হুকুমের সাথে শামিল করেছেন। একটি উট কুরবানী করলে যেমন তা সাতজনের জন্য যথেষ্ট, ঠিক তেমনি সাত জন মিলে একটি গরু কুরবানী দিতে পারে। হাদীসে এসেছে, জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের হুকুম দিয়েছেন আমরা যেন কুরবানীতে উটের ক্ষেত্রে সাতজন এবং গরুর ক্ষেত্রে সাতজন শরীক হয়ে যাই।” [মুসলিম ১২১৩] হজের হাদঈতেও কুরবানীর মত একটি গরু, মহিষ ও উটে সাতজন শরীক হতে পারে। [কুরতুবী]
[২] পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, দীন ইসলামের আলামতরূপে গণ্য হয়, এমন বিশেষ বিধি-বিধান ও ইবাদাতকে شعادٔر বলা হয়। হাদঈ যবেহ করা এমন বিধানাবলীর অন্যতম। কাজেই এ ধরণের বিধানসমূহ পালন করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
[৩] অর্থাৎ তোমরা তা থেকে ব্যাপকহারে কল্যাণ লাভ করে থাকো। দীন ও দুনিয়ার সার্বিক উপকারিতা তাতে রয়েছে। এখানে কেন হাদঈ যবাই করতে হবে সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। মানুষ আল্লাহ্ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয় তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহ্র নামে কুরবানী করা উচিত, শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও, যাতে মানুষ মনে মনে ও কার্যত একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ্ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন এ সবই তাঁর। তারপরও এর মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করে থাকে। মুজাহিদ বলেন, এতে যেমন সওয়াব রয়েছে তেমনি রয়েছে উপকার। [ইবন কাসীর] দুনিয়ার উপকারিতা যেমন, খাওয়া, সদকা, ভোগ করা ইত্যাদি। [সা’দী] ইবরাহীম নাখা‘য়ী বলেন, যদি প্রয়োজন হয় তার উপর সওয়ার হতে পারবে এবং দুধ দুইয়ে খেতে পারবে। [ইবন কাসীর] আর আখেরাতের কল্যাণ তো আছেই।
[৪] صَوَافَّ শব্দের অর্থ তিন পায়ে ভর দিয়ে দণ্ডায়মান থাকবে এবং এক পা বাঁধা থাকবে। উটের জন্য এই নিয়ম। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] দণ্ডায়মান অবস্থায় উট কুরবানী করা সুন্নত ও উত্তম। অবশিষ্ট সব জন্তুকে শোয়া অবস্থায় যবেহ করা সুন্নত। [দেখুন, কুরতুবী] তাউস ও হাসান صَوَافَّ শব্দটির অর্থ করেছেন, খালেসভাবে। অর্থাৎ একান্তভাবে আল্লাহ্র জন্য। তাঁর নামের সাথে আর কারও নাম নিও না। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এখানে “তাদের উপর আল্লাহ্র নাম নাও’’ বলে আল্লাহ্র নামে যবাই করার কথা বলা হয়েছে। ইসলামী শরী‘আতে আল্লাহ্র নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোনো অবকাশ নেই। তাছাড়া এখানে নাম নেয়ার অর্থ শুধু নাম উচ্চারণ নয় বরং মনে-প্ৰাণে আল্লাহ্র জন্য এবং তাঁরই নামে যবাই করা বুঝাবে। যদি কেউ আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করে এবং অন্য কোনো ব্যক্তি যথা পীর, কবর, মাজার, জিন ইত্যাদির সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছা পোষণ করে তবে তা সম্পূর্ণভাবে হারাম ও শির্ক বলে বিবেচিত হবে।
[৫] এখানে وَجَبَتْ অর্থ سَقَطَتْ বা পড়ে যাওয়া করা হয়েছে। যেমন বাকপদ্ধতিতে বলা হয় الشَّمْسُ وَجَبَتْ অর্থাৎ সূর্য ঢলে পড়েছে। এখানে জন্তুর প্রাণ নিৰ্গত হওয়া বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] সুতরাং সম্পপূর্ণভাবে রূহ নিৰ্গত না হওয়া পর্যন্ত প্রাণী থেকে কিছু খাওয়া জায়েয নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রতিটি বস্তুর উপর দয়া লিখে দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা হত্যা করবে, তখন সুন্দরভাবে তা কর। আর যখন যবাই করবে তখন সুন্দরভাবে তা কর। তোমাদের কেউ যেন তার ছুরিটি ধার দিয়ে নেয় এবং যবেহকৃত প্রাণীটিকে শান্তি দেয়।’’ [আবু দাউদ ২৮১৫]
[৬] যাদেরকে হাদঈ ও কুরবানীর গোশত দেয়া উচিত, পূর্ববতী আয়াতে তাদেরকে بادٔس বলা হয়েছে। এর অর্থ দুঃস্থ, অভাবগ্ৰস্ত। এই আয়াতে তদস্থলে مُعْتَرّ ও قَانِعٌ শব্দদ্বয়ের দ্বারা তার তাফসীর করা হয়েছে। قَانِعٌ ঐ অভাবগ্ৰস্ত ফকীরকে বলা হয়, যে কারো কাছে যাচঞা করে না, দারিদ্র্য সত্ত্বেও স্বস্থানে বসে থাকে এবং কেউ কিছু দিলে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে। পক্ষান্তরে مُعْتَرّ ঐ ফকীরকে বলা হয়, যে কিছু পাওয়ার আশায় অন্যত্র গমন করে-মুখে সওয়াল করুক বা না করুক। [দেখুন, ইবন কাসীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
تلاش کے نتائج:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".