২. হে রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর কুর‘আনুল-কারীম নাযিল করেছেন। তাই আপনার অন্তরে সে ব্যাপারে কোন সঙ্কীর্ণতা ও সন্দেহ না থাকা চাই। আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর তা নাযিল করেছেন যেন আপনি এর মাধ্যমে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন, তাদের সামনে দলীল উপস্থাপন ও মু’মিনদেরকে উপদেশ দিতে পারেন। কারণ, তারাই তো বস্তুতঃ এ উপদেশ কর্তৃক লাভবান হবে।
৩. হে মানুষ! তোমরা সেই কিতাবেরই অনুসরণ করো যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর নাযিল করেছেন। উপরন্তু তোমরা নিজেদের নবীর সুন্নাতেরও অনুসরণ করো। তোমরা যে শয়তান ও ভÐ পাদ্রীদেরকে ওলী মনে করছো তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা তোমাদের জন্য নিসেধ। অথচ তোমরা তাদেরকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছো এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের জন্য তোমাদের উপর নাযিলকৃত বিধানকে পরিত্যাগ করছো। মূলতঃ তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো। কারণ, তোমরা যদি সত্যিই উপদেশ গ্রহণ করতে তাহলে তোমরা সত্যের উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দিতে না। বরং তোমরা সবকিছু বাদ দিয়ে নিজেদের রাসূল কর্তৃক আনীত বিধানেরই অনুসরণ ও আমল করতে।
৪. কত জনপদই না আমি শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছি। যখন তারা কুফরি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে হঠকারিতা দেখিয়েছে তখন তাদের গাফিল অবস্থায় দিনে কিংবা রাতে আমার কঠিন শাস্তি তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তখন তারা নিজেদের উপর থেকে সেই শাস্তি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়নি, না তাদের ধারণাকৃত মা’বূদরা তা তাদের উপর থেকে প্রতিহত করতে পেরেছে।
৬. তাই আমি কিয়ামতের দিন যে সকল জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তারা রাসূলদের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছিলো? উপরন্তু আমি রাসূলদেরকেও জিজ্ঞাসা করবো যে, যা কিছু তাদেরকে পৌঁছানোর আদেশ করা হয়েছিলো তা কি তারা সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছে এবং তাদের উম্মতরা তাদের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছিলো।
৭. আমি সেদিন সকল সৃষ্টিজীবের সামনে নিজ জ্ঞান থেকেই তারা দুনিয়াতে কী করেছে সেগুলোর বর্ণনা দেবো। কারণ, আমি তাদের সকল আমল সম্পর্কেই জানি। সেগুলোর কোনটিই আমার নিকট অদৃশ্য নয়। আমি কোন সময় তাদের নিকট থেকে অনুপস্থিতও ছিলাম না।
৮. কিয়ামতের দিন আমলসমূহের ওজন এমন ইনসাফ ভিত্তিক হবে যাতে কোন ধরনের যুলুম ও অত্যাচার থাকবে না। সুতরাং ওজনের সময় যার নেকীর পাল্লা তার পাপের পাল্লার চেয়ে ভারী হবে সেই হবে সফলকাম ও ভয়মুক্ত।
৯. আর ওজনের সময় যাদের পাপের পাল্লা তার নেকীর পাল্লার চেয়ে ভারী হবে তারাই কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে। কারণ, তারা দুনিয়াতে আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছিলো।
১০. হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত করেছি এবং সেখানে তোমাদের জীবন ধারণের জন্য উপকরণসমূহ তৈরি করেছি। তাই এ জন্য তোমাদেরকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিৎ। অথচ তোমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ খুবই কম।
১১. হে মানুষ! আমি তোমাদের পিতা আদমকে সৃষ্টি করেছি এবং তাকে সুন্দর গঠন ও অবয়ব দিয়েছি অতঃপর ফিরিশতাদেরকে তার সম্মানে সাজদাহ করার আদেশ করেছি। তারা আমার কথা মেনে তাকে সাজদাহ করেছে। তবে ইবলিস অহঙ্কার ও হঠকারিতা দেখিয়ে তাকে সাজদাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
• من مقاصد إنزال القرآن الإنذار للكافرين والمعاندين، والتذكير للمؤمنين.
ক. কুর‘আন নাযিলের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো কাফির ও হঠকারীদেরকে সতর্ক করা এবং মু’মিনদেরকে ভালোমন্দের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া।
• أنزل الله القرآن إلى المؤمنين ليتبعوه ويعملوا به، فإن فعلوا ذلك كملت تربيتهم، وتمت عليهم النعمة، وهُدُوا لأحسن الأعمال والأخلاق.
খ. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের প্রতি কুর‘আন নাযিল করেছেন তার অনুসরণ ও আমলের জন্য। তারা তা করতে পারলে তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতা লাভ হবে এবং তাদের উপর তাঁর নিয়ামতটুকুও সম্পূর্ণ হবে। উপরন্তু তারা সুন্দর আমল ও আখলাকের দিশা পাবে।
• الوزن يوم القيامة لأعمال العباد يكون بالعدل والقسط الذي لا جَوْر فيه ولا ظلم بوجه.
গ. কিয়াামতের দিন বান্দাদের আমল ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে ওজন করা হবে। যাতে কোন ধরনের যুলুম ও অত্যাচার থাকবে না।
• هَيَّأ الله الأرض لانتفاع البشر بها، بحيث يتمكَّنون من البناء عليها وحَرْثها، واستخراج ما في باطنها للانتفاع به.
ঘ. আল্লাহ তা‘আলা জমিনকে তৈরি করেছেন মানুষ তা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য। যাতে তারা তার উপর ঘর বানাতে পারে এবং তা চাষাবাদ করতে পারে। উপরন্তু তারা যেন তার ভেতরে যা রয়েছে তা বের করে তা কর্তৃক যথাযথ লাভবান হতে পারে।
১২. আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে ধমক দিয়ে বললেন: আদমকে সাজদাহ দেয়ার আদেশ মানার ক্ষেত্রে কী তোমাকে বাধা দিয়েছে? ইবলিস তার প্রতিপালকের প্রশ্নের উত্তরে বললো: আমাকে তা করতে এ কথাই বাধা দিয়েছে যে, আমি তার চেয়ে উত্তম। কারণ, আপনি আমাকে আগুন দিয়ে তৈরি করেছেন আর তাকে কাদা মাটি দিয়ে। অথচ আগুন কাদা মাটির চেয়ে বেশি সম্মানী।
১৩. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: তুমি জান্নাত থেকে নেমে যাও। এখানে তোমার কোন অহঙ্কারই চলবে না। কারণ, সেটি হলো পবিত্র ও পরিচ্ছন্নদের ঘর। তাই তুমি এখানে থাকার জন্য উপযুক্ত নও। হে ইবলিস! নিশ্চয়ই তুমি অধম ও লাঞ্ছিত। যদিও তুমি নিজকে নিজে আদম থেকেও বেশি সম্মানী বলে মনে করো।
১৫. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: হে ইবলিস! নিশ্চয়ই তোমাকে ওদের ন্যায় সময় দেয়া হবে যাদের মৃত্যু আমি শিঙ্গায় প্রথম ফুৎকারের দিন পর্যন্ত লিখে রেখেছি। যেদিন সকল সৃষ্টি জীব মৃত্যু বরণ করবে। তখন একমাত্র তাদের ¯্রষ্টাই বাকি থাকবেন।
১৬. ইবলিস বললো: আমি আদমকে সাজদাহ করা সম্পর্কীয় আপনার আদেশটি অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়েছি। তাই আমি অবশ্যই আপনার প্রদর্শিত সঠিক পথে বসে থাকবো আদম সন্তানকে তা থেকে পথভ্রষ্ট ও দিগ্ভ্রান্ত করার জন্য। যেমনিভাবে আমি তাদের পিতা আদমকে সাজদাহ না করে পথভ্রষ্ট হয়েছি।
১৭. অতঃপর আমি তাদের নিকট সর্ব দিক থেকে এসে তাদেরকে আখিরাতের প্রতি নিরুৎসাহিত ও দুনিয়ার প্রতি উৎসাহিত করবো। উপরন্তু তাদের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি ও তাদের সামনে কুপ্রবৃত্তিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবো। হে আমার প্রতিপালক! আমি তাদেরকে কুফরি শিখানোর দরুন আপনি তাদের অধিকাংশকেই আপনার প্রতি অকৃতজ্ঞ পাবেন।
১৮. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: হে ইবলিস! তুমি আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত এবং নিন্দিত ও অপমানিত হয়ে জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাও। আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সকল অনুসারী ও অনুগামী তথা নিজ প্রতিপালকের আদেশ অমান্যকারীদেরকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দিবো।
১৯. আল্লাহ তা‘আলা আদমকে বললেন: হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী হাওয়া জান্নাতে বসবাস করো। তোমরা সেখানকার পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে যা চাও খেতে পারো। তবে এ নির্দিষ্ট গাছ থেকে কোন কিছুই খাবে না। আমার নিষেধাজ্ঞার পরও তোমরা যদি এ গাছ থেকে কোন কিছু খাও তাহলে তোমরা অবশ্যই আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবেই বিবেচিত হবে।
২০. তখন ইবলিস তাদেও গোপন লজ্জাস্থানগুলো তাদের সামনে খোলার জন্য তাদের সাথে ফিসফিস করে কিছু গোপন কথা বললো। সে তাদেরকে বললো: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ গাছ থেকে কোন কিছু খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ, তিনি চান না যে তোমরা ফিরিশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হও।
২২. সে মূলতঃ ধোঁকা ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে তাদেরকে তাদের পূর্বের সম্মানজনক অবস্থান থেকে নিচে নামিয়ে আনলো। যখন তারা তাদের জন্য নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললো তখন তাদের সামনেই তাদের লজ্জাস্থানগুলো খুলে গেলো। তখন তারা নিজেদের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার জন্য নিজেদের শরীরে জান্নাতের পাতা আঁটতে শুরু করলো। আর তখনই তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে কোন কিছু খেতে নিষেধ করিনি?! আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করে বলিনি যে, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রæ?!
২৩. আদম ও হাওয়া বললেন: হে আমাদের প্রতিপালক! সত্যিই আমরা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছি। তাই আপনি যদি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা ও আমাদের প্রতি দয়া না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ সুবিধা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
২৪. আল্লাহ তা‘আলা আদম, হাওয়া ও ইবলিসকে বললেন: তোমরা জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নেমে যাও। অচিরেই তোমরা একে অপরের শত্রæ হয়ে যাবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করে সেখানকার ক্ষণিকের সুখ ভোগ করতে হবে।
২৫. আল্লাহ তা‘আলা আদম, হাওয়া ও তাদের সন্তানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন: এ জমিনেই তোমরা আল্লাহ তা‘আলার দেয়া সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবে এবং এখানেই মৃত্যু বরণ করবে। অতঃপর পুনরুত্থানের দিন তোমাদেরকে এ কবর থেকেই বের করা হবে।
২৬. হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক বানিয়েছি উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য মানুষের মাঝে সাজসজ্জার প্রয়োজনে পরিপূরক পোশাকও বানিয়েছি। তবে এ প্রকাশ্য পোশাকের চেয়ে তাক্বওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। যা হলো আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সার্বিকভাবে পালন করা। উক্ত পোশাক মূলতঃ আল্লাহর এমন এক নিদর্শন যা আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমা বুঝায়। আশা করি তোমরা তাঁর নিয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করে সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।
২৭. হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের সামনে লজ্জাস্থান ঢাকার প্রকাশ্য পোশাক অথবা তাক্বওয়ার পোশাক পরিত্যাগ করার পাপকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে দেয়। কারণ, সেই তো ইতোপূর্বে তোমাদের পিতা-মাতার সামনে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়াকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দেয়। যার পরিণামে সে তাদেরকে জান্নাত থেকেই বের করে দিয়েছে। এমনকি তাদের সামনেই তাদের লজ্জাস্থানগুলো খুলে গিয়েছিলো। মূলতঃ শয়তান ও তার বংশধররা তোমাদেরকে দেখতে পায় ও অবলোকন করে; আর তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না এবং অবলোকনও করতে পারো না। তাই তোমাদেরকে তার ও তার সন্তানাদির ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। বস্তুতঃ আমি যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি। তবে যারা নেক আমল করে এমন মু’মিনদের উপর তাদের কোন কর্তৃত্ব চলবে না।
২৮. যখন মুশরিকরা নেহায়েত কোন ঘৃণ্য কাজ করে বসে যেমন: শিরক এবং উলঙ্গ হয়ে কা’বা তাওয়াফ করা ইত্যাদি তখন তারা এই কৈফিয়ত উপস্থাপন করে যে, তারা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমন করতেই দেখেছে। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলাও তাদেরকে এমন করার আদেশ করেছেন। হে মুহাম্মাদ! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আল্লাহ তা‘আলা কখনো গুনাহের আদেশ করেন না বরং তিনি তা করতে নিষেধ করেন। অতএব, তোমরা কিভাবে তাঁর ব্যাপারে এ মিথ্যা দাবি করো? হে মুশরিকরা! তোমরা কি না জেনেই আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলো ও তাঁকে অপবাদ দাও?!
২৯. হে মুহাম্মাদ! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলুন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফের আদেশ করেছেন। তিনি কখনো অসৎ এবং অশ্লীলতার আদেশ করেন না। তিনি তোমাদেরকে সকল ইবাদাত একমাত্র তাঁর জন্য খাঁটিভাবে করতে আদেশ করেন। বিশেষ করে মসজিদের ইবাদাতগুলোকে। উপরন্তু তিনি তাঁকে খাঁটি আনুগত্যের ভিত্তিতে এককভাবে ডাকার আদেশ করেন। যেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন। বস্তুতঃ যিনি নতুনভাবে সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই পুনর্বার সৃষ্টি এবং পুনরুত্থানও করতে পারেন।
৩০. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন: এক ভাগকে তিনি হিদায়েত দিয়েছেন এবং হিদায়েতের মাধ্যমগুলোও তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। উপরন্তু তিনি হিদায়েতের পথের বাধাসমূহও তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ভাগের উপর ভ্রষ্টতা অবধারিত হয়েছে। তারা সত্য পথের দিশা পায়নি। তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে বন্ধু বানিয়েছে। ফলে মূর্খতাবশতঃ তারা তাদেরই অনুগামী হয়েছে। অথচ তারা এ ধারণা করে যে, নিশ্চয়ই তারা সঠিক পথের দিশা পেয়েছে।
• من أَشْبَهَ آدم بالاعتراف وسؤال المغفرة والندم والإقلاع - إذا صدرت منه الذنوب - اجتباه ربه وهداه. ومن أَشْبَهَ إبليس - إذا صدر منه الذنب بالإصرار والعناد - فإنه لا يزداد من الله إلا بُعْدًا.
ক. কারো কোন গুনাহ হয়ে গেলে সে যদি আদম (আলাইহিস-সালাম) এর ন্যায় তা স্বীকার করে লজ্জিত হয়ে সেই অপকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে এসে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তার প্রতিপালক তাকে সকলের মধ্য থেকে চয়ন করে তাকে হিদায়েত দিবেন। আর কারো গুনাহের পর সে যদি ইবলিসের ন্যায় তার উপর অটলতা ও হঠকারিতা দেখায় তাহলে সে আল্লাহর রহমত থেকে বহু দূরে সরে যাবে।
• اللباس نوعان: ظاهري يستر العورةَ، وباطني وهو التقوى الذي يستمر مع العبد، وهو جمال القلب والروح.
খ. পোশাক হলো দু’ ধরনের: একটি প্রকাশ্য যা লজ্জাস্থানকে আবৃত করে। আরেকটি অপ্রকাশ্য যার নাম তাক্বওয়া যা বান্দার সাথে সর্বদাই থাকে। যা অন্তর ও রূহের সৌন্দর্যও বটে।
• كثير من أعوان الشيطان يدعون إلى نزع اللباس الظاهري؛ لتنكشف العورات، فيهون على الناس فعل المنكرات وارتكاب الفواحش.
গ. শয়তানের বহু সহযোগী মানুষকে তার প্রকাশ্য পোশাকটি খুলতে আহŸান করে যাতে তাদের লজ্জাস্থানগুলো খুলে যায়। ফলে মানুষের জন্য অশ্লীল ও অসৎ কাজগুলো করা সহজ হয়ে যায়।
• أن الهداية بفضل الله ومَنِّه، وأن الضلالة بخذلانه للعبد إذا تولَّى -بجهله وظلمه- الشيطانَ، وتسبَّب لنفسه بالضلال.
ঘ. হিদায়েত হলো মূলতঃ আল্লাহর অনুকম্পা ও দয়া। আর ভ্রষ্টতা হলো বান্দা যখন মূর্খতা ও অত্যাচারবশতঃ শয়তানকে বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং সে নিজেই নিজের ভ্রষ্টতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিদায়েতের পথ দেখান না।
৩১. হে আদম সন্তান! তোমরা নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করতে পারে এমন পোশাক পরো এবং যে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পোশাকের মাধ্যমে তোমরা সালাত ও তাওয়াফের সময় সুসজ্জিত হও তাও পরো। আর আল্লাহর হালালকৃত পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা তা খাও ও পান করো। এ ক্ষেত্রে কখনো তোমরা ভারসাম্যতার সীমা অতিক্রম করো না। এমনকি তোমরা হালালকে অতিক্রম করে হারামের দিকে ধাবিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ভারসাম্যতার সীমারেখা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
৩২. হে রাসূল! যারা আল্লাহর হালালকৃত পোশাক ও খাদ্য ইত্যাদি জাতীয় পবিত্র বস্তুগুলোকে হারাম করে দেয় আপনি সে মুশরিকদেরকে প্রতিহত করতে গিয়ে বলুন: কে তোমাদের সৌন্দর্যের বস্তু পোশাকটিকে তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছে? কে আল্লাহর রিযিক খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি জাতীয় পবিত্র বস্তুগুলোকে তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছে? হে রাসূল! আপনি বলে দিন: এ পবিত্র বস্তুগুলো মূলতঃ দুনিয়ার জীবনে মু’মিনদের জন্য। যদিও দুনিয়াতে অন্যরাও এতে তাদের অংশীদার তবে কিয়ামতের দিন তা সবই তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। তাতে কোন কাফিরই তাদের অংশীদার হবে না। কারণ, জান্নাত কাফিরদের জন্য হারাম। এভাবেই আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্য আয়াতগুলো বিস্তারিত বলে থাকি। কারণ, তারাই তো তা কর্তৃক উপকৃত হবে।
৩৩. হে রাসূল! আপনি আল্লাহর হালালকৃত বস্তু হারামকারী এ মুশরিকদেরকে বলে দিন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর অশ্লীলতা হারাম করেছেন যা নিকৃষ্টতম গুনাহ। চাই তা প্রকাশ্য হোক অথবা অপ্রকাশ্য। তেমনিভাবে তিনি সকল গুনাহকেও হারাম করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি আরো হারাম করেছেন মানুষের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত হরণ ও মানহানি করা। তিনি আরো হারাম করেছেন আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করতে যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন প্রমাণই নেই। তিনি আরো হারাম করেছেন না জেনে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, তাঁর কর্ম ও শরীয়তের ব্যাপারে তাঁর উপর মিথ্যারোপ করা।
৩৪. প্রত্যেক প্রজন্ম ও শতাব্দীর লোকদের মৃত্যুর একটি নির্দিষ্ট সময় ও সীমা রয়েছে। যখন তাদের নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন তা থেকে সামান্য দেরি বা আগে তাদের মৃত্যু হবে না।
৩৫. হে আদম সন্তান! যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসবেন যাঁরা মূলতঃ তোমাদেরই বংশের এবং যাঁরা আমার নাযিলকৃত কিতাবসমূহ তোমাদেরকে পড়ে শুনাবেন তখন তোমরা তাঁদের ও তাঁদের আনীত বিধানসমূহের অনুসরণ করো। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় পূর্বক নিজেদের আমলগুলো বিশুদ্ধ করে নেয় কিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় থাকবে না। না তারা দুনিয়ার সুবিধাদি বঞ্চিত হওয়ার দরুন চিন্তিত হবে।
৩৬. তবে কাফিররা যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর উপর ঈমান আনেনি উপরন্তু রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন অহঙ্কারবশতঃ তারা তার উপর আমল করা থেকে বিরত থাকে তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামী। তারা সেখানে সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করবে।
৩৭. ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর সাথে কোন শরীক কিংবা তাঁর প্রতি দোষারোপ করে অথবা তিনি যা বলেননি তা বলেছেন বলে তাঁর উপর অপবাদ দেয় কিংবা তাঁর সঠিক পথ প্রদর্শক সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে। এ জাতীয় লোকেরা লাওহে মাহফ‚যে লিপিবদ্ধ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত দুনিয়ার ভোগ-বিলাস তো অবশ্যই পেয়ে যাবে তবে যখন মৃত্যুর ফিরিশতা ও তাঁর সহযোগী ফিরিশতারা তাদের রূহ নেয়ার জন্য তাদের নিকট উপস্থিত হবে তখন ফিরিশতারা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলবেন: আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যেগুলোর পূজা করছিলে আজ সে মূর্তিগুলো কোথায়?! তোমরা নিজেদের উপকারের জন্য আজ সেগুলোকে ডাকো। তখন মুশরিকরা ফিরিশতাদেরকে বলবে: আমরা যে মূর্তিগুলোর পূজা করতাম সেগুলো তো আজ নেই। সেগুলো এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। আমরা জানি না সেগুলো এখন কোথায়। বস্তুতঃ তারা যে দুনিয়াতে কাফির ছিলো সে কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। তবে তাদের এ স্বীকারোক্তি তখন তাদের বিরুদ্ধেই প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে। তা তখন তাদের কোন উপকারেই আসবে না।
• المؤمن مأمور بتعظيم شعائر الله من خلال ستر العورة والتجمل في أثناء صلاته وخاصة عند التوجه للمسجد.
ক. একজন মু’মিন তার লজ্জাস্থান আবৃত করা এবং সালাতের সময় বিশেষ করে মসজিদে যাওয়ার সময় সুসজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করতে আদিষ্ট।
• من فسر القرآن بغير علم أو أفتى بغير علم أو حكم بغير علم فقد قال على الله بغير علم وهذا من أعظم المحرمات.
খ. যে ব্যক্তি না জেনে কুর‘আনের তাফসীর করে কিংবা ফতোয়া দেয় অথবা বিচার-ফায়সালা করে সে বস্তুতঃ না জেনে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে। যা সর্বনিকৃষ্ট একটি বিরাট হারাম কাজ।
• في الآيات دليل على أن المؤمنين يوم القيامة لا يخافون ولا يحزنون، ولا يلحقهم رعب ولا فزع، وإذا لحقهم فمآلهم الأمن.
গ. উক্ত আয়াতগুলোতে এ প্রমাণ রয়েছে যে, নিশ্চয়ই মু’মিনরা কিয়ামতের দিন কোন ভয় ও চিন্তা করবে না। না কোন আতঙ্ক ও অস্থিরতায় ভোগবে। আর যদি কখনো তারা এসবের কোনটার সম্মুখীন হয় তাহলেসেটা হবে ক্ষণিকের জন্য। কারণ, তাদের পরিণতি হবে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুখময়।
• أظلم الناس من عطَّل مراد الله تعالى من جهتين: جهة إبطال ما يدل على مراده، وجهة إيهام الناس بأن الله أراد منهم ما لا يريده الله.
ঘ. মানুষের মধ্যকার সবচেয়ে যালিম হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর ইচ্ছাকে দু’ দিক থেকে নষ্ট করে: একদিকে সে আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশকে বাতিল বা অমান্য করে। অন্য দিকে সে মানুষের মাঝে এ সন্দেহ সৃষ্টি করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে এমন কিছু চাচ্ছেন যা তিনি বস্তুতঃ চাননি।
৩৮. ফিরিশতাগণ তাদেরকে বললেন: হে মুশরিকরা! তোমরা পূর্বেকার কাফির ও পথভ্রষ্ট জিন ও মানুষের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো। যখনই কোন জাতি জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখনই সে তার পূর্বেকার জাতিকে অভিসম্পাত করবে। যখন তারা একে অপরের সাথে মিলিত ও একত্রিত হবে তখনই পরবর্তী লোকেরা তথা অনুসারী ও নিচু মানের লোকেরা পূর্ববর্তীদের তথা বড় মাপের লোক ও নেতৃস্থানীয়দের প্রতি ইঙ্গিত করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! এ সব নেতারাই আমাদেরকে হিদায়েতের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাই আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। কারণ, তারা ভ্রষ্টতাকে আমাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবির উত্তরে বলবেন: তোমাদের প্রত্যেক দলের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি। তবে তোমরা তা জানো না।
৩৯. তখন অনুসরণীয় নেতৃস্থানীয়রা তাদের অনুসারীদেরকে বলবে: হে অনুসারীরা! আমাদের উপর তোমাদের এমন কোন দাবি বা মর্যাদা নেই যার দরুন তোমরা আমাদের চেয়ে শাস্তি কম পাওয়ার উপযুক্ত হবে। মূলতঃ তোমরা যে আমল করেছো সেটাই ধর্তব্য। বাতিলের অনুসরণের ব্যাপারে তোমাদের কোন ওযর নেই। হে অনুসারীরা! তাই তোমরা কুফরি ও গুনাহের দরুন শাস্তি আস্বাদন করো যেমনিভাবে আমরা আস্বাদন করছি।
৪০. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে অহঙ্কারবশতঃ তা অমান্য করে ও তার আনুগত্য থেকে দূরে থাকে তারা মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকে নিরাশ হবে। তাদের কুফরির দরুন তাদের আমলগুলো গ্রহণের জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না। এমনকি তারা মারা গেলে তাদের রূহগুলোর জন্যও আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না এবং কস্মিণকালেও তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না একটি উট (যা সর্ববৃহৎ প্রাণীগুলোর একটি) সুইয়ের ছিদ্র (যা সবচেয়ে সঙ্কীর্ণ জায়গা) দিয়ে প্রবেশ করবে। যা বস্তুতঃ অসম্ভব একটি ব্যাপার। তাই তার সাথে সম্পৃক্ত বস্তুটি তথা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাও অসম্ভব। যাদের পাপসমূহ খুবই মারাত্মক আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন প্রতিদানই দিয়ে থাকেন।
৪১. এ জাতীয় অহঙ্কারী মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের বিছানা যা তারা নিচে বিছাবে এবং তাদের জন্য উপরে রয়েছে আগুনের আচ্ছাদন। এ রকম প্রতিদানই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে দিয়ে থাকি। যারা তাঁর সাথে কুফরি করে ও তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪২. আর যারা তাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনে এবং সাধ্যমত নেক আমল করে (বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কিছু চাপিয়ে দেন না) তারাই হলো জান্নাতী। তারা তাতে প্রবেশ করে সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
৪৩. জান্নাতে মু’মিনদের নিয়ামতের পরিপূর্ণতার একটি অংশ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তর থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ উঠিয়ে নিবেন এবং জান্নাতের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত করবেন। উপরন্তু তারা আল্লাহর নিয়ামতের স্বীকারোক্তি দিয়ে বলবে: সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে নেক আমলের তাওফীক দিয়েছেন যা আমাদেরকে এ অবস্থানে উন্নীত করেছে। আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় এর উপযোগী হতে পারতাম না যদি না আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এর তাওফীক দিতেন। আমাদের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূলগণ এমন সত্য নিয়ে এসেছেন যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। এমনকি তাঁরা জান্নাতের ওয়াদা এবং জাহান্নাম থেকে সতর্কতার বিষয়ে সত্যবাদী ছিলেন। উপরন্তু তাদের মাঝে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিয়ে বলবে: এটিই হলো সেই জান্নাত যার সংবাদ দুনিয়াতে আমার রাসূলগণ দিয়েছেন। পরিণামে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তা দিয়েছেন। কারণ, তোমরা একদা নেক আমল করে আল্লাহরই সন্তুষ্টি কামনা করতে।
• المودة التي كانت بين المكذبين في الدنيا تنقلب يوم القيامة عداوة وملاعنة.
ক. দুনিয়ার জীবনে মিথ্যারোপকারীদের মধ্যকার ভালোবাসা কিয়ামতের দিন শত্রæতা ও অভিসম্পাতে রূপান্তিরিত হবে।
• أرواح المؤمنين تفتح لها أبواب السماء حتى تَعْرُج إلى الله، وتبتهج بالقرب من ربها والحظوة برضوانه.
খ. মু’মিনদের রূহের জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। যাতে সেগুলো আল্লাহর দিকে উঠে গিয়ে তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির ভাগী হয়ে প্রফুল্ল হতে পারে।
• أرواح المكذبين المعرضين لا تفتح لها أبواب السماء، وإذا ماتوا وصعدت فهي تستأذن فلا يؤذن لها، فهي كما لم تصعد في الدنيا بالإيمان بالله ومعرفته ومحبته، فكذلك لا تصعد بعد الموت، فإن الجزاء من جنس العمل.
গ. আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারীদের রূহগুলোর জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না। যখন তারা মরে গিয়ে তাদের রূহগুলো উপরের দিকে উঠে আকাশে প্রবেশের অনুমতি চাইবে তখন সেগুলোকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে না। সে রূহগুলো যেমনিভাবে দুনিয়াতে আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর পরিচয় ও ভালোবাসার মাধ্যমে উপরে উঠতে চায়নি তেমনিভাবে মৃত্যুর পরেও সেগুলো উপরে উঠবে না। কারণ, আমলের অনুরূপই হবে তার প্রতিদান।
• أهل الجنة نجوا من النار بعفو الله، وأدخلوا الجنة برحمة الله، واقتسموا المنازل وورثوها بالأعمال الصالحة وهي من رحمته، بل من أعلى أنواع رحمته.
ঘ. জান্নাতীরা আল্লাহর ক্ষমায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং তাদেরকে আল্লাহর রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। উপরন্তু তারা নেক আমলের মাধ্যমে সেখানকার আবাসস্থলের ওয়ারিশ হয়েছে। সেগুলোও হলো আল্লাহরই রহমত। বরং সেগুলো তাঁর রহমতের সর্বোচ্চ প্রকারই বটে।
৪৪. প্রত্যেকেই তার জন্য তৈরিকৃত আবাসে ঢুকার পর স্থায়ী জান্নাতীরা স্থায়ী জাহান্নামীদেরকে বলবে: আমাদের প্রতিপালক আমাদের সাথে যে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন তা আমরা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। আমাদেরকে সেখানে প্রবেশ করানো হয়েছে। হে কাফিররা! তোমরা কি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে জাহান্নামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছো? কাফিররা বলবে: নিশ্চয়ই আমরা তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। তখন একজন আহŸানকারী আল্লাহকে ডেকে বলবে যে, যেন তিনি যালিমদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেন। কারণ, তিনি তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছিলেন; অথচ তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো।
৪৫. এ যালিমরাই স্বেচ্ছায় আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো এবং অন্যদেরকেও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য উৎসাহিত করতো। তারা চাইতো আল্লাহর পথটি সহজ না হোক। যাতে মানুষ তার উপর চলতে না পারে। বস্তুতঃ তারা পরকালে অবিশ্বাসী এবং সেজন্য তারা প্রস্তুতও নয়।
৪৬. এ দু’ দল তথা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝখানে একটি উঁচু দেয়াল থাকবে যার নাম আর’রাফ। এ উঁচু দেয়ালের উপর এমন কিছু লোক থাকবে যাদের পাপ ও পুণ্য সমান। এরা জান্নাতীদেরকে তাদের আলামত তথা চেহারার শুভ্রতা দেখে চিনে ফেলবে। তেমনিভাবে তারা জাহান্নামীদেরকেও তাদের আলামত তথা কালো চেহারা দেখে চিনে ফেলবে। এরা জান্নাতীদেরকে তাদের সম্মানার্থে বলবে: তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অথচ তখনো জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করেনি। তারা আল্লাহর রহমতে সেখানে প্রবেশের আশা করছে।
৪৭. যখন আ’রাফের লোকদের দৃষ্টিকে জাহান্নামীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তারা ওদের কঠিন শাস্তি নিজেদের চোখে দেখতে পাবে তখন তারা আল্লাহর নিকট দু‘আ করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আপনার সাথে শিরক ও কুফরি করেছে এমন যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শামিল করবেন না।
৪৮. আ’রাফের লোকেরা কিছু জাহান্নামী কাফিরদেরকে - যাদেরকে তারা কালো চেহারা এবং নীল চোখের আলামত দেখে চিনতে পারবে - তাদেরকে ডেকে বলবে: তোমাদের প্রচুর সম্পদ ও জনবল কোন কাজে আসেনি। না তোমাদের অহঙ্কার ও সত্য বিমুখতা কোন উপকারে এসেছে।
৪৯. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের দিকে ইঙ্গিত করে কাফিরদেরকে বলবেন: এদেরকে নিয়েই কি তোমরা কসম খেয়ে বলেছিলে যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষে থেকে তাদেরকে দয়া করবেন না! এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে ডেকে বলবেন: হে মু’মিনরা! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। ভবিষ্যত নিয়ে তোমাদের কোন ভয় নেই। দুনিয়ার সুবিধাদি হারিয়ে তোমরা চিন্তিতও হবে না। কারণ, তোমরা স্থায়ী নিয়ামত পেয়েছো।
৫০. জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে তাদের নিকট আবেদন করে বলবে: হে জান্নাতীরা! তোমরা আমাদেরকে পানির প্রবাহ এবং আল্লাহর দেয়া খাদ্যে শামিল করো। তখন জান্নাতীরা বলবে: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা কুফরির দরুন এগুলোকে কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তাই আমরা আল্লাহর হারামকৃত বস্তু দিয়ে কখনোই তোমাদের সহযোগিতা করতে পারবো না।
৫১. এ কাফিররাই ধর্মকে ঠাট্টার পাত্র ও গুরুত্বহীন বানিয়েছে এবং দুনিয়ার জীবন তার চাকচিক্য ও সৌন্দর্যের মাধ্যমে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে। তাই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভুলে যাবেন এবং কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করবেন। তারা দুনিয়াতে কিয়ামতের দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়ে তার জন্য আমল ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। উপরন্তু তারা আল্লাহর দলীল-প্রমাণগুলোকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে; অথচ তারা জানতো যে, মূলতঃ এটিই সত্য।
• عدم الإيمان بالبعث سبب مباشر للإقبال على الشهوات.
ক. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান না আনা কুপ্রবৃত্তির প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ।
• يتيقن الناس يوم القيامة تحقق وعد الله لأهل طاعته، وتحقق وعيده للكافرين.
খ. কিয়ামতের দিন মানুষ আল্লাহর অনুগতদের জন্য তাঁর ওয়াদা এবং কাফিরদের জন্য তাঁর হুঁশিয়ারির বাস্তবতার ব্যাপারে চ‚ড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে পারবে।
• الناس يوم القيامة فريقان: فريق في الجنة وفريق في النار، وبينهما فريق في مكان وسط لتساوي حسناتهم وسيئاتهم، ومصيرهم إلى الجنة.
গ. কিয়ামতের দিন মানুষ দু’ শ্রেণীতে ভাগ হবে: তাদের এক দল জান্নাতে এবং আরেক দল জাহান্নামে যাবে। উপরন্তু তাদের উভয়ের মাঝে তথা মধ্য ভাগে আরেকটি দল থাকবে যাদের পাপ ও পুণ্য সমান। বস্তুতঃ তাদের পরিণতি জান্নাতই।
• على الذين يملكون المال والجاه وكثرة الأتباع أن يعلموا أن هذا كله لن يغني عنهم من الله شيئًا، ولن ينجيهم من عذاب الله.
ঘ. যারা পদ, সম্পদ ও অধিক অনুসারীর মালিক তাদেরকে এ কথা অবশ্যই জানতে হবে যে, এ সবই মূলতঃ আল্লাহর হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে এসবের কোনটাই তাদের কোন উপকারে আসবে না।
৫২. আমি তাদের নিকট এ কুর‘আন নিয়ে এসেছি যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত। যা আমি জেনেশুনেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। এটি মু’মিনদেরকে সত্য ও সঠিক পথ দেখায় এবং তা তাদের জন্য রহমতও বটে। কারণ, তাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণের বর্ণনা।
৫৩. কাফিররা কেবল সেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসারই অপেক্ষা করছে যার আসার ব্যাপারে ইতিপূর্বে তাদেরকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যা পরকালে তাদের কর্মের চ‚ড়ান্ত পরিণতিই বটে। যখন তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রæত সেই শাস্তি এবং মু’মিনদেরকে দেয়া প্রতিশ্রæত সেই সুখ-শান্তি সামনে চলে আসবে তখন দুনিয়াতে কুর‘আন পরিত্যাগকারী ও তার বিধি-বিধানের উপর আমল করতে অস্বীকারকারী ব্যক্তিবর্গরা বলবে: নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক, প্রেরিত রাসূলগণ আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছেন; যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাতেও কোন সন্দেহ নেই। আপসোস! আজ যদি আমাদের জন্য এমন কিছু মধ্যস্থতাকারী থাকতো যারা আমাদের শাস্তি ক্ষমা করিয়ে নেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতো! অথবা আমরা যদি দুনিয়ার জীবনে ফিরে গিয়ে বদ আমলের পরিবর্তে আমাদের নাজাতের জন্য কিছু নেক আমল করে আসতে পারতাম! বস্তুতঃ এ কাফিররা নিজেদের কুফরির দরুন নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিয়ে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপরন্তু তারা আল্লাহ ব্যতিরেকে যাদের পূজা করতো তারা আজ অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারা পূজারীদের কোন ফায়েদায় আসেনি।
৫৪. হে মানুস! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে পূর্ব নমুনা ছাড়া ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন এমনভাবে সমুন্নত হয়েছেন যা তাঁর মহত্তে¡র সাথে মানায়। যার ধরন অনুধাবন করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তিনি রাতের অন্ধকারকে দিনের আলো দিয়ে এবং দিনের আলোকে রাতের অন্ধকার দিয়ে দূরীভূত করেন। তাদের প্রত্যেকটি অন্যটিকে দ্রæত তালাশ করে। এতটুকুও দেরি করে না। এটি গেলেই ওটি আসে। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূর্য ও চন্দ্র তৈরি করেছেন। আরো তিনি তৈরি করেছেন নক্ষত্রসমূহ যেগুলো তাঁর নির্দেশে সর্বদা প্রস্তুত ও অবনত। জেনে রাখো, সকল সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহর জন্য। তাহলে তিনি ছাড়া ¯্রষ্টা আর কে?! আদেশও একমাত্র তাঁরই। তাঁর কল্যাণ ও অবদান প্রচুর ও মহৎ। তিনিই মহত্ত¡ ও পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমÐিত সকল জগতের প্রতিপালক।
৫৫. হে মু’মিনরা! তোমরা পরিপূর্ণ বিনয় ও ন¤্রতা নিয়ে গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো। নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবে; কাউকে দেখানোর জন্য নয়। দু‘আতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেও নয়। নিশ্চয়ই তিনি দু‘আয় সীমালঙ্ঘনকারী তথা সুন্নত বিরোধীকে ভালোবাসেন না। আর দু‘আয় সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘন হলো আল্লাহর সাথে অন্যকে ডাকা যা মুশরিকরা করতো।
৫৬. তোমরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যে রাসূলগণকে পাঠিয়ে তা পরিশুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর একক আনুগত্যের ধারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তোমরা আল্লাহর শাস্তির ভয় অন্তরে নিয়ে এবং তাঁর সাওয়াব অর্জনের আশায় এককভাবে আল্লাহকে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। তাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
৫৭. আল্লাহ তা‘আলাই বৃষ্টির সুসংবাদবাহী বাতাস পাঠান। যখন তা পানি ভর্তি মেঘমালা বহন করে তখন আমি সেই মেঘকে মৃত ভ‚খÐের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে সেখানেই বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর সে বৃষ্টির পানি দিয়ে সকল প্রকারের ফল-ফলাদি উৎপন্ন করি। এভাবে ফল-ফলাদি বের করার মতোই আমি মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে জীবিত বের করবো। হে মানুষ! আমি এটি করেছি এ জন্য যে, যাতে তোমরা আল্লাহর কুদরত ও তাঁর নিপুণ কারিগরির কথা স্মরণ করো এবং এ কথাও স্বীকার করো যে, নিশ্চয়ই তিনি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম।
• القرآن الكريم كتاب هداية فيه تفصيل ما تحتاج إليه البشرية، رحمة من الله وهداية لمن أقبل عليه بقلب صادق.
ক. কুর‘আনুল-কারীম হলো একটি হিদায়েতের কিতাব। তাতে মানব জাতীর প্রয়োজনীয় সকল বস্তুর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং নিষ্ঠাবানদের জন্য পথ প্রদর্শকও বটে।
• خلق الله السماوات والأرض في ستة أيام لحكمة أرادها سبحانه، ولو شاء لقال لها: كوني فكانت.
খ. আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন নির্দিষ্ট কোন রহস্য ও হিকমতের জন্য যা তিনি চেয়েছেন। কারণ, তিনি যদি চাইতেন বলতে পারতেন, হয়ে যাও তখন সেগুলো হয়ে যেতো।
• يتعين على المؤمنين دعاء الله تعالى بكل خشوع وتضرع حتى يستجيب لهم بفضله.
গ. মু’মিনদের জন্য আবশ্যক সার্বিক বিনয় ও ন¤্রতা নিয়ে আল্লাহকে ডাকা যাতে তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের ডাকে সাড়া দেন।
• الفساد في الأرض بكل صوره وأشكاله منهيٌّ عنه.
ঘ. জমিনে যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করা একেবারেই নিষিদ্ধ।
৫৮. উৎকৃষ্ট ভ‚মি আল্লাহর আদেশে পরিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে তরুলতা উৎপাদন করে। তেমনিভাবে একজন মু’মিন সদুপদেশ শুনে তা কর্তৃক লাভবান হয়। তখন তা নেক আমল ফলায়। আর লবনাক্ত অনুর্বর জমিন খুব কষ্টেই সামান্য তরুলতা উৎপাদন করে। যাতে কোন কল্যাণ নেই। এভাবেই একজন কাফির সদুপদেশ কর্তৃক কোন ধরনের লাভবান হয় না। না তা লাভজনক কোন নেক আমল ফলায়। এ নিপুণ পদ্ধতি - যা আল্লাহর অস্তিত্বের দলীল - এর ন্যায় আমি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের সামনে সত্যের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের দলীল ও প্রমাণ উপস্থাপন করি। ফলে তারা সেগুলোর সাথে কুফরি করে না। বরং তারা নিজেদের প্রতিপালকের আনুগত্য করে।
৫৯. আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) কে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল করে পাঠিয়েছি। যেন তিনি তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ এবং অন্যের ইবাদাত পরিত্যাগ করার আহŸান জানান। তাই তিনি তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের সত্য কোন মা’বূদ নেই। হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা কুফরির উপর অটল থাকো তাহলে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে অশুভ দিনের কঠিন শাস্তির ভয় পাচ্ছি।
৬১. নূহ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের নেতাদেরকে বললেন: নিশ্চয়ই আমি পথভ্রষ্ট নই যেমন তোমরা ধারণা করছো। বরং আমি নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালকের হিদায়েতের উপরই রয়েছি। বস্তুতঃ আমি আমার ও তোমাদের তথা সর্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকেই তোমাদের নিকট প্রেরিত একজন রাসূল।
৬২. আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে ওহীর বাণী দিয়ে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন তা আমি তোমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। আর আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আদেশ মানতে, তার সাওয়াবের প্রতি উৎসাহিত করতে, আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত না হতে এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পেতে আহŸান জানানোর মাধ্যমে তোমাদেরই কল্যাণ কামনা করছি। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু জানি যা তোমরা জানো না। যা আমাকে আল্লাহ তা‘আলা ওহীর মাধ্যমে শিখিয়েছেন।
৬৩. তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো এবং তোমাদের নিকট কি এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লেগেছে যে, তোমাদেরই চেনা-জানা এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের নিকট প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ওহী ও উপদেশ এসেছে?! তিনি তোমাদের মাঝেই বড় হয়েছেন। তিনি কখনো মিথ্যুক বা পথভ্রষ্ট ছিলেন না। না ছিলেন অন্য জাতের লোক। তোমরা তাঁর উপর মিথ্যারোপ করলে বা তাঁর অবাধ্য হলে তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতে এসেছেন। তেমনিভাবে তিনি এসেছেন এ জন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হও।
৬৪. অতঃপর তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে মিথ্যুক বলেছে এবং তাঁর উপর তারা ঈমানও আনেনি। বরং তারা তাদের কুফরির উপর অটল থেকেছে। ফলে তিনি তাদের উপর বদ্দু‘আ করেছেন। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। বস্তুতঃ আমি তাঁকে ও তাঁর নৌযানের মু’মিন সাথীদেরকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করলাম। আর যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলেছে এবং সেই মিথ্যার উপর অটল থেকেছে তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ প্রেরিত তুফান ও মহা প্লাবনের মাধ্যমে ডুবিয়ে মেরেছি। মূলতঃ তাদের অন্তরগুলো সত্য থেকে অন্ধ ছিলো।
৬৫. আমি ‘আদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের মধ্য থেকেই রাসূল পাঠিয়েছি। যাঁর নাম হূদ (আলাইহিস-সালাম)। তিনি বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের সত্য কোন মা’বূদ নেই। তোমরা কি তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করবে না?! যাতে তোমরা তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারো।
৬৬. তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যকার যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যুক বলেছে এমন বড় ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা বললো: হে হূদ! আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, তুমি যখন আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং মূর্তিপূজা ছাড়তে বলো তখন তোমার মাথা ঠিক থাকে না। তখন তুমি বেকুব বনে যাও। উপরন্তু আমরা এ কথাও নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, তুমি রাসূল হওয়ার দাবিতে নিশ্চিত মিথ্যুক।
৬৭. হূদ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের কথার উত্তরে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমি বেকুব-বুদ্ধিহীন কিছুই নই। বরং আমি সর্ব জগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন রাসূল মাত্র।
• الأرض الطيبة مثال للقلوب الطيبة حين ينزل عليها الوحي الذي هو مادة الحياة، وكما أن الغيث مادة الحياة، فإن القلوب الطيبة حين يجيئها الوحي، تقبله وتعلمه وتنبت بحسب طيب أصلها، وحسن عنصرها، والعكس.
ক. পবিত্র অন্তরসমূহ উৎকৃষ্ট ভূমির ন্যায়। যখন অন্তরগুলোর উপর ওহী নাযিল হয় যা মূলতঃ সেগুলোর প্রাণ সঞ্জীবনী যেমন: বৃষ্টি জমিনের প্রাণ সঞ্জীবনী। যখন পবিত্র অন্তরসমূহের নিকট ওহী চলে আসে তখন সেগুলো তা সহজেই গ্রহণ এবং তা থেকে শিক্ষা নেয়। উপরন্তু সেগুলোর মৌলিক পবিত্রতা ও উৎকৃষ্টতা অনুযায়ী সেগুলোতে ফলনও হয়। যেমনিভাবে এর বিপরীতটিও সত্য।
• الأنبياء والمرسلون يشفقون على الخلق أعظم من شفقة آبائهم وأمهاتهم.
খ. নবী ও রাসূলগণ মানুষদের প্রতি তাদের পিতা-মাতার চেয়েও অনেক বেশি দয়াশীল।
• من سُنَّة الله إرسال كل رسول من قومه وبلسانهم؛ تأليفًا لقلوب الذين لم تفسد فطرتهم، وتيسيرًا على البشر.
গ. আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে মানুষের সুবিধা ও তার প্রয়োজনীয় চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রত্যেক নবীকে তার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এবং তাদের ভাষায় প্রেরণ করা।
• من أعظم السفهاء من قابل الحق بالرد والإنكار، وتكبر عن الانقياد للعلماء والنصحاء، وانقاد قلبه وقالبه لكل شيطان مريد.
ঘ. সবচেয়ে বড় নির্বোধ ব্যক্তি সেই যে সত্যকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে। অহঙ্কারবশতঃ সে আলিম ও পরকল্যাণকামীদের আনুগত্য করে না। বরং তার শরীর ও অন্তর সকল হঠকারী শয়তানের অনুসরণ করে।
৬৮. আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে তাওহীদ ও শরীয়তের বাণী পৌঁছানোর আদেশ করেছেন তাই তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। বস্তুতঃ যা পৌঁছাতে আমি আদিষ্ট সে ব্যাপারে আমি সত্যিই আমানতদার ও পরকল্যাণকামী। তাতে আমি নিজ থেকে কোন ধরনের বেশ-কম করি না।
৬৯. তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো এবং তোমাদের নিকট কি এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লেগেছে যে, তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদেরই মধ্য থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে উপদেশবাণী এসেছে; কোন ফিরিশতা বা জিন তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য আসেনি?! বস্তুতঃ এতে আশ্চর্যের কোন কিছুই নেই বরং তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করো এ জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে এ জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়কে কুফরির কারণে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তেমনিভাবে তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো যিনি তোমাদেরকে বিশেষভাবে প্রকাÐ শরীর, শক্তি ও শত্রæকে আক্রমণের দুর্দান্ত ক্ষমতা দিয়েছেন। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর বিস্তৃত নিয়ামতের কথা স্মরণ করো তাহলে তোমরা উদ্দেশ্যে সফল ও আতঙ্কিত বিষয় থেকে নিষ্কৃতি পাবে।
৭০. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: হে হূদ! তুমি কি আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাতের আদেশ দিতে এবং আমাদের বাপ-দাদারা যে মূর্তিগুলোর পূজা করতো সেগুলো পরিত্যাগ করাতে এসেছো?! বস্তুতঃ তুমি যদি নিজ দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তুমি যে শাস্তির হুমকি দিচ্ছো তা নিয়ে আসো।
৭১. হূদ (আলাইহিস-সালাম) তাদের উত্তরে বললেন: বস্তুতঃ তোমরা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর ক্ষোভকে অবধারিত করে নিয়েছো তাই তা আসা অবশ্যম্ভাবী। তোমরা কি আমার সাথে এমন মূর্তিসমূহ নিয়ে ঝগড়া করছো যেগুলোকে তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা ইলাহ বলে সাব্যস্ত করেছে? অথচ সেগুলোর কোন মূল ভিত্তি নেই! বস্তুতঃ তোমরা যে সেগুলোর উপাস্য হওয়ার দাবি করছো সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন প্রমাণ নাযিল করেননি যা তোমাদের জন্য প্রমাণ হতে পারে। তাই তোমরা যে শাস্তি দ্রæত কামনা করছো তার অপেক্ষা করো; আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি। তা অবশ্যই আপতিত হবে।
৭২. অতঃপর আমি হূদ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর মু’মিন সাথীদেরকে আমার দয়ায় নিরাপদে রেখেছি। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং তারা ঈমান না এনে মিথ্যারোপকারী সেজে নিজেরাই শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে তাদেরকে আমি ধ্বংসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেছি।
৭৩. আর আমি সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরই ভাই সালিহ (আলাইহিস-সালাম) কে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। যিনি তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর ইবাদাতের দিকে ডাকবেন। সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোন মা’বূদ নেই। আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি তার সত্যতার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে। যা হলো এমন একটি উষ্ট্রী যা পাথর থেকে বের হবে। তার পানি পানের নির্দিষ্ট একটি সময় থাকবে এবং তোমাদের জন্যও পানি পানের একটি নির্দিষ্ট দিন থাকবে। সে যেন আল্লাহর জমিন থেকে খেতে থাকে এ ক্ষেত্রে তোমরা তাকে কোন বাধা দিয়ো না। তার রক্ষণাবেক্ষণে তোমাদের কোন কিছুই করতে হবে না। তবে তোমরা তাকে কষ্ট দিয়ো না, না হয় তাকে কষ্ট দেয়ার দরুন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদের উপর নেমে আসবে।
• ينبغي التّحلّي بالصبر في الدعوة إلى الله تأسيًا بالأنبياء عليهم السلام.
ক. নবীদের অনুসরণার্থে আল্লাহর দ্বীনের দা’ওয়াতে প্রচুর ধৈর্য ধরতে হবে।
• من أولويات الدعوة إلى الله الدعوة إلى عبادة الله وحده لا شريك له، ورفض الإشراك به ونبذه.
খ. আল্লাহর পথে দা’ওয়াতের প্রাথমিক কাজ হলো এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তাঁর সাথে যে কোন ধরনের শিরককে প্রত্যাখ্যান ও পরিত্যাগ করতে আহŸান করা।
• الاغترار بالقوة المادية والجسدية يصرف صاحبها عن الاستجابة لأوامر الله ونواهيه.
গ. শারীরিক ও বৈষয়িক শক্তির অহঙ্কার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
• النبي يكون من جنس قومه، لكنه من أشرفهم نسبًا، وأفضلهم حسبًا، وأكرمهم مَعْشرًا، وأرفعهم خُلُقًا.
ঘ. নবী তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই হবেন। তবে তিনি তাদের সম্ভ্রান্ত বংশ ও শ্রেষ্ঠ পরিবার থেকে হবেন। উপরন্তু তিনি সাথীদের প্রতি দয়াবান ও সর্বোচ্চ চরিত্রের অধিকারী।
৭৪. তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদেরকে ‘আদ সম্প্রদায়ের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে নিজেদের ভ‚মিতে অবস্থান করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তোমরা তাতে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারছো এবং সেখানে নিজেদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাচ্ছো। তিনি ‘আদ সম্প্রদায়কে তাদের কুফরি ও মিথ্যারোপের দরুন ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে সেখানে স্থান করে দিয়েছেন। তোমরা সেখানকার সমতল এলাকায় অট্টালিকা বানাচ্ছো আর পাহাড় কেটে তোমরা নিজেদের ঘর বানাচ্ছো। তাই তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং আল্লাহর সাথে কুফরি ও সমূহ গুনাহ ছেড়ে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করো।
৭৫. তাঁর সম্প্রদায়ের অহঙ্কারী গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয়রা শক্তি-সামর্থ্যহীন মু’মিনদেরকে বললো: হে মু’মিনরা! তোমরা কি মনে করো সত্যিকারার্থেই সালিহ আল্লাহর রাসূল? মু’মিনরা তাদের উত্তরে বললো: আমরা সালিহ (আলাইহিস-সালাম) কে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে তা সবই বিশ্বাস, স্বীকার ও অনুসরণ করি। উপরন্তু তাঁর শরীয়তের উপর আমল করি।
৭৬. তাঁর সম্প্রদায়ের অহঙ্কারীরা বললো: হে মু’মিনরা! তোমরা যা বিশ্বাস করো আমরা তার সাথে কুফরি করছি। আমরা কখনোই তাঁর উপর ঈমান আনবো না এবং তাঁর শরীয়তের উপরও আমল করবো না।
৭৭. বরং তারা অহঙ্কারবশতঃ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সেই উষ্ট্রীকে জবাই করলো যাকে কোন ধরনের কষ্ট দিতে আল্লাহ তাদেরকে নিষেধ করেছেন। উপরন্তু তারা সালিহ (আলাইহিস-সালাম) এর হুমকিকে সুদূর পরাহত ভেবে ঠাট্টা করে বললো: হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুমকি দিচ্ছো তা নিয়ে আসো যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকো।
৭৮. পরিশেষে কাফিরদের নিকট সেই শাস্তি এসে গেলো যা তারা দ্রæত চেয়েছিলো। এক কঠিন ভ‚মিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করেছে। ফলে তারা ভ‚পৃষ্ঠে চেহারা ও হাঁটুর উপর আছড়ে পড়লো। এ কঠিন ধ্বংস থেকে তাদেরকে কেউই বাঁচাতে পারলো না।
৭৯. অতঃপর সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের সাড়াশব্দে নিরাশ হয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যা পৌঁছানোর আদেশ করেছেন তা আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি। ভয় ও আশার বাণী শুনিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি। অথচ তোমরা এমন এক জাতি যারা উপদেশকারীদের উপদেশকে ভালোবাসো না। যারা সর্বদা তোমাদেরকে কল্যাণের পরামর্শ ও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখতে আগ্রহী।
৮০. হে নবী! আপনি লূত (আলাইহিস-সালাম) কে স্মরণ করুন যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের অপকর্মে বিরক্ত হয়ে বললেন: তোমরা কি বর্ণনাতীত এক বিশ্রী অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যাওনি? আর তা হলো পুরুষদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া। এ জঘন্য অপকর্ম মূলতঃ তোমরা নতুন করেই চালু করেছো। যে অপকর্মে তোমাদের পূর্বে আর কেউ লিপ্ত হয়নি।
৮১. তোমরা যৌন তাড়না নিবারণের জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের সাথে মিলিত হচ্ছো; অথচ তা নিবারণের জন্য মহিলাদেরকেই তৈরি করা হয়েছে। তোমরা এ অপকর্মে না বিবেকের তোয়াক্কা করছো, না শরীয়তের, না সহজাত স্বভাবের। বরং তোমরা মানবিক ভারসাম্যের গÐী পেরিয়ে আল্লাহর দেয়া সীমারেখাও অতিক্রম করেছো। উপরন্তু তোমরা সুস্থ বিবেক ও মর্যাদাপূর্ণ সহজাত স্বভাবের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছো।
• الاستكبار يتولد غالبًا من كثرة المال والجاه، وقلة المال والجاه تحمل على الإيمان والتصديق والانقياد غالبًا.
ক. অহঙ্কারবশতঃ সত্যকে প্রত্যাখ্যান করার প্রবণতা সাধারণত সম্পদের আধিক্য এবং পদমর্যাদার অহমিকা থেকেই জন্ম নিয়ে থাকে। অপর দিকে সম্পদের স্বল্পতা ও পদমর্যাদার ঘাটতি সাধারণত ঈমান, বিশ্বাস ও আনুগত্যে উৎসাহিত করে।
• جواز البناء الرفيع كالقصور ونحوها؛ لأن من آثار النعمة: البناء الحسن مع شكر المنعم.
খ. সুউচ্চ স্থাপনা তথা অট্টালিকা ইত্যাদি বানানো জায়িয। কারণ, নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ হলো নিয়ামতদাতার কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি সুন্দর বাড়ি-ঘর।
• الغالب في دعوة الأنبياء أن يبادر الضعفاء والفقراء إلى الإصغاء لكلمة الحق التي جاؤوا بها، وأما السادة والزعماء فيتمردون ويستعلون عليها.
গ. প্রাথমিকভাবে সাধারণত দুর্বল ও ফকিররাই নবীদের আনা সত্যের বাণী মনোযোগ দিয়ে দ্রæত শুনতে চায়। অপর দিকে নেতা শ্রেণী ও গণ্যমান্যরা সাধারণত সে ব্যাপারে অহঙ্কার ও বিরোধিতা প্রদর্শন করে।
• قد يعم عذاب الله المجتمع كله إذا كثر فيه الخَبَث، وعُدم فيه الإنكار.
ঘ. আল্লাহর শাস্তি কখনো কখনো পুরো সমাজকেই ঘিরে ফেলে যখন তাতে অন্যায় বেড়ে যায় এবং তার প্রতিবাদ করার আর কেউ থাকে না।
৮২. এ ব্যাপারে তাঁর অপকর্মকারী সম্প্রদায়ের এ ছাড়া আর কোন উত্তর ছিলো না যে, তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো: তোমরা লূত ও তাঁর পরিবারকে নিজেদের এলাকা থেকে বের করে দাও। কারণ, তাঁরা আমাদের এ কর্ম থেকে পবিত্র থাকার লোক। তাই তাঁদেরকে আমাদের মাঝে অবস্থান করতে দেয়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়।
৮৩. অতএব, আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করলাম। আমি তাদেরকে রাতের বেলায় আযাবের এলাকা থেকে বের হওয়ার আদেশ করেছি। তবে তাঁর স্ত্রী তার সম্প্রদায়ের অন্যদের সাথে থেকে গেলো। ফলে তার উপরও সে আযাব আসলো যা ওদের উপর এসেছে।
৮৪. আর আমি তাদের উপর কঠিন বর্ষণ করেছি। আমি তাদের উপর শক্ত মাটির পাথর নিক্ষেপ করেছি এবং এলাকাটিকে উপর-নিচ করে উল্টে দিয়েছি। হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, কী পরিণতি হয়েছিলো এ অপরাধী সমপ্রদায়ের? তাদের পরিণতি হয়েছিলো ধ্বংস ও স্থায়ী লাঞ্ছনা।
৮৫. আমি মাদয়ান সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরই এক ভাই শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। তিনি তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোন মা’বূদ নেই। আমি নিজ প্রতিপালকের নিকট থেকে যা নিয়ে এসেছি তার সত্যতার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ ও পরিষ্কার দলীল এসেছে। তোমরা ওজন ও মাপে পুরোপুরি দিয়ে মানুষের অধিকার তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। মানুষের পণ্যে ভেজাল দিয়ে কমমূল্যে বিক্রয় করে অথবা পণ্যের মালিকদেরকে ধোঁকা দিয়ে তাদের অধিকার ক্ষুণœ করো না। নবীদের প্রেরণের মাধ্যমে ভ‚পৃষ্ঠকে পরিশুদ্ধ করার পর তোমরা আবারো তাতে কুফরি ও পাপ করে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। উল্লিখিত উপদেশগুলো তোমাদের জন্য অতি কল্যাণকর ও লাভজনক। কারণ, তাতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা মেনে গুনাহ পরিত্যাগ করার এবং আল্লাহর আদেশ মেনে তাঁর নৈকট্য অর্জনের ব্যাপার নিহিত রয়েছে।
৮৬. আর তোমরা রাস্তায় বসে মানুষের সম্পদ অপহরণের জন্য তাদেরকে হুমকি দিয়ো না। তেমনিভাবে কেউ হিদায়েতের ইচ্ছা করলে তাকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর পথকে কঠিন বানানোর চেষ্টা করো না যাতে মানুষ তাতে সহজে চলতে না পারে। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য তাঁর নিয়ামতকে স্মরণ করো। কারণ, ইতিপূর্বে তোমাদের সংখ্যা কম ছিলো অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তেমনিভাবে তোমরা চিন্তা করে দেখো জমিনে ফাসাদকারী তোমাদের পূর্বের লোকদের পরিণতি কী হয়েছিলো। বস্তুতঃ তাদের পরিণতি ছিলো ধ্বংস ও বিনাশ।
৮৭. যদি তোমাদের একদল আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে আনীত বিধানের উপর ঈমান এনে থাকে এবং আরেক দল না আনে তাহলে হে মিথ্যারোপকারীরা! তোমরা আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষা করো। কারণ, তিনি সর্বোত্তম ও সব চেয়ে বেশি ইনসাফপূর্ণ ফায়সালাকারী।
• اللواط فاحشة تدلُّ على انتكاس الفطرة، وناسب أن يكون عقابهم من جنس عملهم فنكس الله عليهم قُراهم.
ক. সমকামিতা এমন একটি অশ্লীল ও জঘন্য কাজ যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহজাত স্বভাববিরোধী হওয়াই প্রমাণ করে। তাই তাদের শাস্তি তাদের কাজের ন্যায়ই হওয়া উচিত। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা লূত (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়কে এলাকাটি তাদের উপরই উল্টিয়ে তাদেরকে মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন।
• تقوم دعوة الأنبياء - ومنهم شعيب عليه السلام - على أصلين: تعظيم أمر الله: ويشمل الإقرار بالتوحيد وتصديق النبوة. والشفقة على خلق الله: ويشمل ترك البَخْس وترك الإفساد وكل أنواع الإيذاء.
খ. নবীদের দা’ওয়াত যাঁদের মাঝে শুআইব (আলাইহিস-সালাম)ও রয়েছেন তা বস্তুতঃ দু’টি মূলনীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত: ক. আল্লাহর নির্দেশকে সম্মান করা। যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি ও নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাস। খ. আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া। যার মধ্যে রয়েছে কাউকে ঠকানো, জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি ও সকল প্রকারের কষ্ট দেয়া বন্ধ করা।
• الإفساد في الأرض بعد الإصلاح جُرْم اجتماعي في حق الإنسانية؛ لأن صلاح الأرض بالعقيدة والأخلاق فيه خير للجميع، وإفساد الأرض عدوان على الناس.
গ. বিশুদ্ধতার পর জমিনে আবারো ফাসাদ সৃষ্টি করা মানবতার ক্ষেত্রে একটি সামাজিক অপরাধ। কারণ, আকীদা ও আখলাকের মাধ্যমে জমিনকে পরিশুদ্ধ করার মাঝে সবারই কল্যাণ রয়েছে। অপর দিকে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা মূলতঃ মানব সমাজের উপরই অত্যাচার।
• من أعظم الذنوب وأكبرها وأشدها وأفحشها أخذُ ما لا يحقُّ أخذه شرعًا من الوظائف المالية بالقهر والجبر؛ فإنه غصب وظلم وعسف على الناس وإذاعة للمنكر وعمل به ودوام عليه وإقرار له.
ঘ. সর্ববৃহৎ, কঠিন ও বিশ্রী গুনাহ হলো যে সম্পদ গ্রাস করার শরয়ী কোন অধিকার নেই জবরদস্তিমূলক শক্তি খাটিয়ে তা গ্রাস করা। কারণ, তা হলো জবরদখল এবং মানুষের উপর যুলুম ও অত্যাচার। উপরন্তু তাতে রয়েছে অসৎ কাজের স্বীকৃতি প্রচার ও তার বাস্তবায়ন ।
৮৮. শুআইব (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারী অহঙ্কারী নেতৃস্থানীয়রা তাঁকে বললো: হে শুআইব! আমরা তোমাকে ও তোমার প্রতি বিশ্বাসী মু’মিনদেরকে আমাদের এ এলাকা থেকে বের করে দেবো। না হয় তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসো। শুআইব (আলাইহিস-সালাম) আশ্চর্য ও চিন্তিত হয়ে তাদেরকে বললেন: আমরা কি তোমাদের এ ধর্ম ও মিল্লাতের অনুসরণ করবো যদিও আমরা সেটিকে অপছন্দ করি? কারণ, আমরা জানি তোমরা যে ধর্মের উপর রয়েছো তা নিশ্চয়ই বাতিল!
৮৯. তোমরা যে শিরক ও কুফরির উপর রয়েছো যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ দয়ায় আমাদেরকে মুক্ত করেছেন তা যদি আমরা আবারো বিশ্বাস করি তাহলে আমরা সত্যিই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী হয়ে যাবো। তোমাদের বাতিল ধর্মে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য উচিত হবে না। তবে আমাদের প্রতিপালক চাইলে সেটা হবে ভিন্ন কথা। কারণ, সকল কিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন। আমাদের প্রতিপালক সব কিছুই জানেন। কোন কিছুই তাঁর নিকট লুক্কায়িত নয়। তাই এক আল্লাহর উপরই আমরা নির্ভরশীল। যাতে তিনি আমাদেরকে সঠিক রাস্তার উপর অটল রাখেন এবং জাহান্নামের পথ থেকে রক্ষা করেন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের মাঝে ও আমাদের কাফির সম্প্রদায়ের মাঝে সত্য ফায়সালা করুন। আপনি মযলুম সত্যবাদীকে হঠকারী যালিমের উপর বিজয়ী করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনিই তো সর্বোত্তম বিচারকর্তা।
৯০. তাঁর সম্প্রদায়ের বড় বড় নেতৃস্থানীয় কাফিররা যারা তাওহীদের দা’ওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করলো তারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ধর্মের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে বললো: হে আমাদের সম্প্রদায়! তোমরা যদি নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মকে পরিত্যাগ করে শুআইবের ধর্মকে গ্রহণ করো তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।
৯২. যারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে মিথ্যুক বললো তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেলো। যেন তারা কখনোই নিজেদের ঘরে বসবাস ও আনন্দ-ফুর্তি করেনি। যারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে মিথ্যুক বললো তারাই মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কারণ, তারা নিজ সত্তা ও সম্পদ উভয়কেই হারিয়েছে। তবে তাদের সম্প্রদায়ের মু’মিনরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি যা এ মিথ্যারোপকারী কাফিররা ধারণা করেছে।
৯৩. তাদের ধ্বংসের পর নবী শুআইব (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমার প্রতিপালক আমাকে যা পৌঁছানোর আদেশ করেছেন আমি তা তোমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করোনি এবং তোমরা আমার দিকনির্দেশনা মানোনি। তাই আমি কুফরিতে অটল এমন কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কীভাবে আক্ষেপ করতে পারি?!
৯৪. আমি কোন এলাকায় নবী পাঠালে সে এলাকার লোকেরা যদি তাঁকে মিথ্যুক মনে করে এবং তাঁর সাথে কুফরি করে তখন আমি তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট, দরিদ্রতা ও রোগ দিয়ে পাকড়াও করি। যাতে তারা আল্লাহর প্রতি নতি স্বীকার করে কুফরি ও হঠধর্মিতা পরিত্যাগ করে। এখানে মূলতঃ মিথ্যারোপকারী জাতিগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর চিরায়ত নীতির কথা উল্লেখ করে কুরাইশ ও সকল মিথ্যারোপকারী কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
৯৫. আমি তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট ও রোগ-ব্যাধি দিয়ে পাকড়াও করার পর আবারো তাদেরকে কল্যাণ, স্বচ্ছলতা ও নিরাপত্তা দিয়ে বদলিয়ে দিলাম। ফলে তাদের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায়। তখন তারা বলে: আমাদের নিকট কল্যাণ ও অকল্যাণ পৌঁছা এটি একটি সাধারণ নিয়ম মাত্র যা ইতিপূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষদের নিকটও পৌঁছেছিলো। বস্তুতঃ তারা এ কথা বুঝতে পারেনি যে, যে বিপদগুলো তাদের নিকট পৌঁছেছিলো তা ছিলো মূলতঃ তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ, যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আর যে নিয়ামতগুলো তাদের নিকট পৌঁছেছিলো তার উদ্দেশ্য ছিলো মূলতঃ কালক্ষেপন। অতঃপর আমি তাদেরকে হঠাৎ শাস্তির সম্মুখীন করলাম; অথচ তারা শাস্তির কথা টেরই পায়নি, না তারা তার প্রতীক্ষায় ছিলো।
• من مظاهر إكرام الله لعباده الصالحين أنه فتح لهم أبواب العلم ببيان الحق من الباطل، وبنجاة المؤمنين، وعقاب الكافرين.
ক. আল্লাহর নেক বান্দাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে সম্মান করার একটি বিশেষ নিদর্শন হলো তিনি সত্য ও মিথ্যার বর্ণনা করে মু’মিনদের মুক্তি ও কাফিরদের শাস্তির মাধ্যমে তাদের জন্য জ্ঞানের দরজাগুলো খুলে দিয়ে থাকেন।
• من سُنَّة الله في عباده الإمهال؛ لكي يتعظوا بالأحداث، ويُقْلِعوا عما هم عليه من معاص وموبقات.
খ. আল্লাহর বান্দাদের ব্যাপারে তাঁর চিরায়ত নিয়ম হলো শাস্তি দিতে কালক্ষেপন করা। যাতে তারা উক্ত ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা পায় এবং তারা গুনাহ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐ থেকে ফিরে আসে।
• الابتلاء بالشدة قد يصبر عليه الكثيرون، ويحتمل مشقاته الكثيرون، أما الابتلاء بالرخاء فالذين يصبرون عليه قليلون.
গ. দুঃখ ও কষ্টের পরীক্ষায় অনেকেই ধৈর্য ধরতে পারেন এবং অনেকেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করে যান। তবে স্বচ্ছলতার পরীক্ষায় খুব কম লোকই ধৈর্য ধরতে পারেন।
৯৬. যদি এ এলাকাগুলোর অধিবাসীরা যাদের নিকট আমি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছি তারা যদি রাসূলদের আনীত বিধানকে সত্য মনে করে গুনাহ ও কুফরি ছেড়ে তাদের প্রতিপালকের আদেশ মেনে তাঁকে ভয় করতো তাহলে আমি চতুর্দিক থেকে তাদের উপর কল্যাণের দরজাগুলো খুলে দিতাম। কিন্তু তারা রাসূলদেরকে সত্য না জেনে এবং আল্লাহকে ভয় না করে বরং রাসূলদের আনীত বিধানকে মিথ্যা বলেছে। তাই আমি তাদেরকে গুনাহ ও পাপের দরুন হঠাৎ শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করলাম।
৯৭. এ এলাকাগুলোর মিথ্যারোপকারী লোকেরা কি এ ব্যাপারে নিরাপদ যে, রাতের বেলায় তাদের নিকট আমার শাস্তি আসবে না যখন তারা ঘুমের ভেতর নিরবতা ও আরামে নিমগ্ন থাকবে?
৯৯. তোমরা চিন্তা করে দেখো, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে ঢিল দিয়েছেন এবং যে শক্তি ও রিযিকের প্রশস্ততা দিয়েছেন তা কিন্তু তাদেরকে কঠিনভাবে ধরার জন্য। এ সব এলাকার মিথ্যারোপকারীরা কি আল্লাহর কৌশল ও সূ² পরিকল্পনা থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে? একমাত্র ধ্বংসোন্মুখ সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল থেকে কেউ নিজকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত তারা তাঁর কৌশলকে ভয় পায়। তারা তাঁর নিয়ামত পেয়ে ধোঁকা খায় না। বরং তারা এটিকে আল্লাহর দয়া মনে করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
১০০. যারা গুনাহর দরুন তাদের পূর্বসূরীদের ধ্বংসের পর পৃথিবীতে বসবাস করছে তাদের নিকট কি ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয়? বস্তুতঃ তারা ওদের শাস্তি দেখে শিক্ষা গ্রহণ করেনি; বরং তারা ওদের মতোই কাজ করছে। এদের কাছে কি এ ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা যদি তাদেরকে গুনাহের দরুন শাস্তি দিতে চান তাহলে তিনি তা দিতে পারেন? যা তাঁর চিরায়ত নিয়মই বটে। এমনকি তাদের অন্তরগুলোর উপর মোহর মেরে দিতে পারেন। ফলে তারা কোন উপদেশই গ্রহণ করবে না। এমনকি কোন উপদেশ তাদের কোন ফায়েদায়ই আসবে না।
১০১. হে রাসূল! আমি আপনাকে উক্ত এলাকাগুলোর খবর দিচ্ছি। যেগুলো হলো নূহ, হূদ, সালেহ, লূত্ব ও শুআইবের এলাকা। উপরন্তু তাদের সম্প্রদায়গুলো যে মিথ্যারোপ ও হঠকারিতা দেখিয়েছে এবং তাদের উপর যে ধ্বংস নেমে এসেছে তা সবই বলেছি। যেন তা শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণকারীদের উপদেশ হয়। এ এলাকাবাসীদের নিকট তাদের রাসূলগণ তাদের সত্যতার ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছেন। মূলতঃ তারা রাসূলগণের উপর ঈমান আনবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জানেন তারা রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করবে। রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপকারী এ এলাকার লোকদের অন্তরগুলোর উপর আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে মোহর মেরে দিয়েছেন তেমনিভাবে তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে কুফরিকারীদের অন্তরগুলোর উপরও মোহর মেরে দিবেন। তখন তারা কোনভাবেই ঈমানের পথ খুঁজে পাবে না।
১০২. যে জাতিগুলোর নিকট রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর ওসিয়ত মানতে ও পূরা করতে দেখিনি। না তাদেরকে আল্লাহর আদেশগুলো মানতে দেখেছি। বরং তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছি।
১০৩. উক্ত রাসূলগণের পর আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে তাঁর সত্যতা বুঝায় এমন প্রমাণ ও দলিলাদি দিয়ে পাঠিয়েছি। তবুও তারা সে নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার ও সেগুলোর সাথে কুফরি করেছে। হে রাসূল! আপনি চিন্তা করে দেখুন, ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কি পরিণতি হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ডুবিয়ে মারলেন। উপরন্তু তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নতকে তাদের পেছনে লাগিয়ে দিলেন।
১০৪. যখন আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে ফিরআউনের নিকট পাঠালেন তখন তিনি বললেন: হে ফিরআউন! নিশ্চয়ই আমি সকল সৃষ্টির ¯্রষ্টা এবং তাদের মালিক ও তাদের সমূহ ব্যাপার নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল।
• الإيمان والعمل الصالح سبب لإفاضة الخيرات والبركات من السماء والأرض على الأمة.
ক. ঈমান ও নেক আমল উম্মতের উপর আসমান ও জমিন থেকে কল্যাণ ও বরকত লাভের একটি কারণ।
• الصلة وثيقة بين سعة الرزق والتقوى، وإنْ أنعم الله على الكافرين فإن هذا استدراج لهم ومكر بهم.
খ. রিযিকের প্রশস্ততা ও তাক্বওয়ার মাঝে বিরাট সম্পর্ক আছে। যদিও আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে নিয়ামত দিয়ে থাকেন কিন্তু তা হলো তাঁর কৌশল ও তাদেরকে কঠিনভাবে ধরার জন্য।
• على العبد ألا يأمن من عذاب الله المفاجئ الذي قد يأتي في أية ساعة من ليل أو نهار.
গ. একজন বান্দা কখনো আল্লাহর হঠাৎ শাস্তি থেকে নিজকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। যা দিন ও রাতের যে কোন সময় এসে যেতে পারে।
• يقص القرآن أخبار الأمم السابقة من أجل تثبيت المؤمنين وتحذير الكافرين.
ঘ. কুর‘আন মাজীদ পূর্বের উম্মতদের সংবাদ বর্ণনা করে থাকে মু’মিনদেরকে দৃঢ়পদ এবং কাফিরদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য।
১০৫. মূসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন: যখন আমি তাঁর পক্ষ থেকেই প্রেরিত তখন আমার উচিত তাঁর ব্যাপারে সত্য ছাড়া আর কিছু না বলা। আমি তোমাদের নিকট এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি যা আমার সত্যতা অর্থাৎ আমি যে আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রেরিত রাসূল তা বুঝায়। তাই হে ফিরআউন! আপনি বনী ইসরাঈলকে বন্দিদশা ও নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়ে আমার নিকট ছেড়ে দিন।
১০৬. ফিরআউন মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: তুমি যদি তোমার ধারণা মতে সত্যিই কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাকো তাহলে তা আমার সামনে নিয়ে আসো, যদি তুমি নিজ দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো।
১০৮. তেমনিভাবে তিনি তাঁর হাতখানা নিজের বুকের দিককার জামার খোলা জায়গা অথবা নিজের বগলের নিচ থেকে বের করলে তা প্রচÐ শুভ্রতায় দর্শকদের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে। তবে তা নিছক সাদাই ছিলো তাতে কোন শ্বেত রোগ ছিলো না।
১০৯. যখন নেতৃস্থানীয়রা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর লাঠিটিকে সাপ এবং শ্বেত রোগ ছাড়া তাঁর হাতকে অধিক সাদা হতে দেখলো তখন তারা বললো: বস্তুতঃ মূসা যাদু বিদ্যায় শক্তিশালী একজন যাদুকরই মাত্র।
১১০. সে যা করেছে তার মাধ্যমে সে মূলতঃ তোমাদেরকে এ মিশর এলাকা থেকে বের করে দিতে চায়। অতঃপর ফিরআউন মূসা (আলাইহিস-সালাম) সম্পর্কে সবার পরামর্শ চেয়ে বললো: তোমরা এখন আমাকে এ ব্যাপারে কী পরামর্শ দিচ্ছো?
১১৩. ফিরআউন যাদুকরদেরকে একত্রিত করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠিয়ে দিলো। অতঃপর যাদুকররা ফিরআউনের নিকট আসলো এবং বললো যে, যদি তারা যাদুর মাধ্যমে মূসার উপর সফল ও জয়যুক্ত হয় তাহলে কি তাদের জন্য কোন পুরস্কার রয়েছে?
১১৫. যাদুকররা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর বিপরীতে নিজেদের সফলতার ব্যাপারে আস্থাশীল হয়ে অহংকার করে বললো: হে মূসা! তুমিই বেছে নাও: তুমি কি প্রথমে যাদু দেখাবে, না আমরা দেখাবো?
১১৬. মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের সাহায্যের উপর আস্থাশীল হয়ে নির্ভয়ে তাদেরকে উত্তর দিলেন: আচ্ছা, তোমরাই সর্বপ্রথম তোমাদের লাঠি ও রশিগুলো ছাড়ো। যখন তারা সেগুলো ছাড়লো তখন মানুষের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেলো। তাদের চোখগুলো তখন সঠিক ব্যাপারটি ধরতে পারলো না। বরং তারা আতঙ্কিত হয়ে গেলো। আপাততঃ তারা দর্শনকারীদের দৃষ্টিতে শক্তিশালী যাদুই দেখালো।
১১৭. তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ও কালীমের (যাঁর সাথে তিনি সরাসরি কথা বলেছেন) নিকট ওহী পাঠালেন: হে মূসা! তুমি নিজের লাঠিটি ফেলে দাও। তখন তিনি ফেলে দিলেন। ফলে লাঠিটি সাপে রূপান্তরিত হয়ে তাদের লাঠি ও দড়িগুলোকে গিলে ফিললো। যেগুলোকে তারা যাদু হিসেবে ব্যবহার করেছিলো এবং মানুষরাও তাদের ধোঁকায় পড়ে ভেবেছিলো যে, বস্তুতঃ অনেকগুলো সাপই তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করছে।
• من حكمة الله ورحمته أن جعل آية كل نبي مما يدركه قومه، وقد تكون من جنس ما برعوا فيه.
ক. আল্লাহর হিকমত ও রহমতের একটি নমুনা হলো এই যে, তিনি প্রত্যেক নবীর জন্য এমন অলৌকিক নিদর্শন মনোনীত করেন যে বিষয়ে তারা বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছে। যেহেতু মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় যাদু বিদ্যায় পারদর্শী ছিলো সেহেতু তাঁর অলৌকিক নিদর্শন ছিলো যাদু সদৃশ। যদিও সেটি সত্যিকারার্থে যাদু নয়।
• أنّ فرعون كان عبدًا ذليلًا مهينًا عاجزًا، وإلا لما احتاج إلى الاستعانة بالسحرة في دفع موسى عليه السلام.
খ. মূলতঃ ফিরআউন ছিলো একজন অপারগ, দুর্বল ও হীনমনা ব্যক্তি। নতুবা সে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর প্রতিরোধে যাদুকরদের সহযোগিতা নিতো না।
• يدل على ضعف السحرة - مع اتصالهم بالشياطين التي تلبي مطالبهم - طلبهم الأجر والجاه عند فرعون.
গ. শয়তানদের সাথে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি ফিরআউনের নিকট পুরস্কার ও মর্যাদা কামনা করা বস্তুতঃ যাদুকরদের দুর্বলতাই প্রমাণ করে।
১২৩. এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার পর ফিরআউন হুমকি দিয়ে বললো: তোমরা কি আমার অনুমতির আগেই মূসার উপর ঈমান এনেছো? নিশ্চয়ই তাঁর উপর ও তাঁর আনীত বিধানের উপর তোমাদের ঈমান এক ধরনের ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র যা অত্র শহরবাসীকে নিজদের এলাকা থেকে বের করে দেয়ার জন্য তোমরা ও মূসা পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে ঠিক করে রেখেছিলে। হে যাদুকররা! তোমরা অচিরেই জানতে পারবে তোমাদের উপর কী শাস্তি ও নির্যাতন নেমে আসছে।
১২৪. আমি অবশ্যই প্রত্যেকের ডান হাত ও বাম পা অথবা বাম হাত ও ডান পা কেটে ফেলবো। অতঃপর আমি তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া এবং এ অবস্থার সকল দর্শককে ভীতি প্রদর্শন করার জন্য তোমাদের সবাইকে খেজুুর গাছের খÐে ঝুলিয়ে রাখবো।
১২৬. হে ফিরআউন! মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর হাতের উপর দিয়ে আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে নিদর্শনসমূহ আমাদের নিকট এসেছে তা বিশ্বাস করার কারণেই তুমি আমাদের উপর রাগ করেছো এবং তা অপছন্দ করছো। এটিই যদি আমাদের নিন্দনীয় অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তা হোক। অতঃপর তারা আল্লাহ অভিমুখী হয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দু‘আ করতে গিয়ে বললো: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর অপরিমিত ধৈর্য ঢেলে দিন যাতে আমরা সত্যের উপর অটল থাকতে পারি। আর আপনি আমাদেরকে আপনার অনুগত ও আপনার আদেশ পালনকারী এবং আপনার রাসূলের অনুসারী হিসেবে মৃত্যু দিন।
১২৭. ফিরআউনের বংশের বড় ও নেতৃস্থানীয়রা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) ও তাঁর মু’মিন সাথীদের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য বললো: হে ফিরআউন! তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং তোমাকে ও তোমার উপাস্যগুলোকে পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে ডাকার জন্য বিনা বাধায় ছেড়ে দিবে?! ফিরআউন বললো: অচিরেই আমি বনী ইসরাঈলের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করবো এবং আমাদের খিদমতের জন্য তাদের মহিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবো। আর আমরা অত্যাচার, দাপট ও ক্ষমতা দেখিয়ে তাদের উপরেই প্রভাব খাটাবো।
১২৮. তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে আদেশ দিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের উপর থেকে বিপদ দূর করা ও নিজেদের লাভালাভের জন্য এক আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। আর তোমরা এখন যে পরীক্ষায় পড়েছো সে ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করো। কারণ, পৃথিবী হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর। ফিরআউন ও অন্য কারো জন্য নয়। যার উপর তারা মাতব্বরি করবে। বরং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছায় মানুষের মাঝে এর হাতবদল করেন। তবে এ পৃথিবীতে শুভ পরিণাম কেবল মু’মিনদের জন্য যারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মান্য করে। তাই এ দুনিয়া তাদেরই জন্য যদিও ক্ষণে ক্ষণে তাদের উপর কিছু বালা-মুসীবত নেমে আসে।
১২৯. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈল তাঁকে বললো: হে মূসা! আপনি আসার আগে ও পরে তথা উভয় ক্ষেত্রেই আমাদেরকে ফিরআউনের হাতে আমাদের ছেলেদেরকে হত্যা করা ও মেয়েদেরকে জীবিত রাখার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এ কেমন কথা। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাদেরকে উপদেশ ও বিপদ দূর হওয়ার সুসংবাদ দিয়ে বললেন: আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রæ ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে তদস্থলে কর্তৃত্ব করার সুযোগ দিবেন। তিনি দেখতে চান তারপর তোমরা কি তাঁর কৃতজ্ঞতা করো, না কুফরি করো।
১৩০. সত্যিই আমি ফিরআউনের বংশকে আকাল ও দুর্ভিক্ষ দিয়ে শাস্তি দিয়েছি এবং তাদেরকে জমিনের ফল ও ফসলের ঘাটিতে দিয়ে পরীক্ষা করেছি। যাতে তারা এতটুকু উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে যে, তাদের নিকট যে বিপদ এসেছে তা কেবল তাদের কুফরির শাস্তি স্বরূপ এসেছে। অতএব, তারা যেন আল্লাহর নিকট তাওবা করে।
• موقف السّحرة وإعلان إيمانهم بجرأة وصراحة يدلّ على أنّ الإنسان إذا تجرّد عن هواه، وأذعن للعقل والفكر السّليم بادر إلى الإيمان عند ظهور الأدلّة عليه.
ক. যাদুকরদের অবস্থান এবং প্রকাশ্যে ও সাহসিকতার সাথে তাদের ঈমানের ঘোষণা এ কথাই প্রমাণ করে যে, মানুষ যখন নিজ কুপ্রবৃত্তিমুক্ত হয়ে নিজ মেধা ও সঠিক চিন্তার আনুগত্য করে তখন তার সামনে ঈমানের দলীলসমূহ প্রকাশ পায় এবং সে দ্রæত ঈমানদার হয়ে যায়।
• أهل الإيمان بالله واليوم الآخر هم أشدّ الناس حزمًا، وأكثرهم شجاعة وصبرًا في أوقات الأزمات والمحن والحروب.
খ. আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার ব্যক্তিরাই বিপদ, আপদ ও যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি দৃঢ়চেতা, সাহসী ও ধৈর্যশীল হয়ে থাকে।
• المنتفعون من السّلطة يُحرِّضون ويُهيِّجون السلطان لمواجهة أهل الإيمان؛ لأن في بقاء السلطان بقاء لمصالحهم.
গ. ক্ষমতার লাভবান ব্যক্তিরাই ক্ষমতাশীলকে মু’মিনদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় ও ক্ষেপিয়ে তোলে। কারণ, ক্ষমতাধর ব্যক্তি টিকে থাকলেই তো তাদের সুবিধাগুলো টিকে থাকবে।
• من أسباب حبس الأمطار وغلاء الأسعار: الظلم والفساد.
ঘ. যুলুম ও ফাসাদই হলো অনাবৃষ্টি এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিশেষ কারণ।
১৩১. যখন ফিরআউন গোষ্ঠীর নিকট জমিনের উর্বরতা, ফলের প্রাচুর্যতা ও পণ্যের স্বল্পমূল্য নেমে আসে তখন তারা বলে: এগুলো মূলতঃ আমাদেরকে আমাদের বিশেষত্ব ও উপযুক্ততার দরুন দেয়া হয়েছে। আর যদি তাদের নিকট অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ও রোগের আধিক্য ইত্যাদি জাতীয় বিপদাপদ পৌঁছে তখন তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) ও তাঁর সাথের বনী ইসরাঈলকে নিয়ে কুলক্ষণ ভাবে। অথচ সত্য কথা হলো এগুলো যা তাদের নিকট পৌঁছেছে তা কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের তাক্বদীর অনুযায়ী পৌঁছেছে। তাদের ও মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর এখানে কোন দখলদারিত্ব নেই। তবে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর বদদু‘আ তো অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটি না বুঝে এগুলোকে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সাথে সম্পৃক্ত করে।
১৩২. ফিরআউনের গোষ্ঠী সত্য গ্রহণে হঠকারিতা দেখিয়ে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললো: যে নিদর্শন ও প্রমাণই তুমি আমাদের নিকট নিয়ে আসো না কেন এবং তুমি নিজ ধর্মের সত্যতা প্রমাণ ও আমাদেরকে নিজেদের ধর্ম থেকে ফিরানোর জন্য যে দলীলই নিয়ে আসো না কেন আমরা কখনোই সে ব্যাপারে তোমাকে বিশ্বাস করবো না।
১৩৩. তখন আমি তাদের মিথ্যারোপ ও হঠকারিতার শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর প্রচুর বন্যার পানি পাঠিয়েছি যা তাদের শস্য ও ফল-ফলাদি ডুবিয়ে দেয়। তেমনিভাবে আমি তাদের উপর পঙ্গপাল পাঠিয়েছি যা তাদের সকল ফসল খেয়ে ফেলে। অনুরূপভাবে আমি তাদের উপর আরো পাঠিয়েছি উকুন নামক এক ধরনের পোকা যা ফসলের ক্ষতি করে অথবা চুলে পড়ে মানুষকে কষ্ট দেয়। তেমনিভাবে আমি তাদের উপর আরো পাঠিয়েছি ব্যাঙ যা তাদের পাত্রে পড়ে খাদ্যগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং বিছানায় পড়ে তাদের ঘুমকে নষ্ট করে। অনুরূপভাবে আমি তাদের উপর পাঠিয়েছি রক্ত ফলে তাদের কুয়া ও নদীর পানিগুলো রক্তে রূপান্তরিত হয়। বস্তুতঃ আমি এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে ধারাবাহিকভাবে পৃথক পৃথক করে পাঠিয়েছি। এরপরও কিন্তু তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) আনীত বিধানে বিশ্বাস স্থাপন ও ঈমান আনা থেকে দূরে সরে গেছে। মূলতঃ তারা ছিলো এমন এক জাতি যারা সর্বদা পাপ করতো, বাতিল থেকে ফিরে আসতো না এবং সত্যের প্রতি হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলো না।
১৩৪. যখনই এ শাস্তিগুলো তাদের নিকট আসলো তখনই তারা (আলিাইহিস-সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে বললো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আমাদের শাস্তিগুলো উঠিয়ে নেন। কারণ, তিনিই তো আপনাকে বিশেষভাবে নবুওয়াত দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে ওয়াদাও করেছেন যে, যখনই তাওবা করা হবে তখনই তিনি শাস্তি উঠিয়ে নিবেন। যদি আপনি আমাদের উপর থেকে শাস্তিগুলো উঠিয়ে নেন তাহলে আমরা অবশ্যই আপনার উপর ঈমান আনবো এবং বনী ইসরাঈলকে ছেড়ে দিয়ে আপনার সাথে পাঠিয়ে দেবো।
১৩৫. যখন আমি তাদেরকে ডুবিয়ে মারার আগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের উপর থেকে শাস্তি উঠিয়ে নিলাম তখন তারা ঈমান আনা ও বনী ইসরাঈলকে ছেড়ে দেয়ার নিজেদের ওয়াদাই ভঙ্গ করলো। ফলে তারা কুফরির উপরই থেকে গেলো এবং বনী ইসরাঈলকে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সাথে ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালো।
১৩৬. যখন তাদেরকে ধ্বংস করার নির্দিষ্ট সময় এসে গেলো তখন আমি তাদের উপর সাগরে ডুবিয়ে দেয়ার শাস্তি নাযিল করলাম। কারণ, তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করলো এবং সেগুলো যে সত্যের প্রদি নির্দেশনা দেয় তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো।
১৩৭. আর আমি বনী ইসরাঈলকে যাদেরকে একদা ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় লাঞ্ছিত করেছে তাদেরকে দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ারিশ বানিয়ে দিলাম। এলাকাটি ছিলো সিরিয়া এলাকা যাতে আল্লাহ তা‘আলা পরিপূর্ণভাবে ফসল ও ফল-ফলাদি ফলিয়ে প্রচুর বরকত দিয়েছেন। ফলে হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের সুন্দর বাণীটি পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। যা ছিলো নি¤œরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَنُرِيْدُ أَنْ نَّمُنَّ عَلَى الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا فِيْ الْأَرْضِ، وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِيْنَ﴾ [القصص: ٥] “দুনিয়াতে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো আমি তাদেরকে অনুগ্রহ করার এবং নেতা ও উত্তরাধিকারী বানানোর ইচ্ছা পোষণ করছিলাম”। (আল-ক্বাসাস: ৫) ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের দেয়া কষ্ট সহ্য করার দরুন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলেন। আর আমি ফিরআউন যে ক্ষেতখামার, অট্টালিকা ও বাড়ি-ঘর বানিয়েছিলো তা ধ্বংস করে দিয়েছি।
১৩৮. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) নিজ লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করলে তা খÐিত হয়ে যায় এবং আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই। অতঃপর তারা এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মূর্তিপূজায় নিমগ্ন ছিলো। তখন বনী ইসরাঈল মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্য একটি মূর্তি বানিয়ে দিন যা আমরা পূজা করবো যেমনিভাবে এদের অনেকগুলো মূর্তি রয়েছে যেগুলোকে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে পূজা করে। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: হে আমার জাতি! তোমরা এমন এক অজ্ঞ সম্প্রদায় যারা আল্লাহর প্রাপ্য সম্মান কী এবং তাওহীদ ও শিরক কী এসব সম্পর্কে কিছুই জানো না।
১৩৯. এরা যারা নিজেদের মূর্তি পূজায় নিমগ্ন তাদের ইবাদাত ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সাথে ইবাদাতে অন্যকে শরীক করার দরুন তাদের সকল আনুগত্য ও আমল বাতিল হয়ে যাবে।
১৪০. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: হে আমার জাতি! আমি কিভাবে তোমাদের ইবাদাতের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যকে খুঁজবো; অথচ তোমরা তাঁর অনেকগুলো মহান নিদর্শন দেখেছো এবং তিনি তোমাদেরকে তোমাদের যুগের সকল জগৎবাসীর উপর বিশেষ কিছু নিয়ামতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তথা তোমাদের শত্রæদেরকে ধ্বংস করে তোমাদেরকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
১৪১. হে বনী ইসরাঈল! তোমরা সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের লাঞ্ছনা থেকে বের করে এনে মুক্তি দিয়েছি। যখন তারা তোমাদেরকে হরেক রকমের লাঞ্ছনার স্বাদ আস্বাদন করাচ্ছিলো। তোমাদের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করতো এবং তোমাদের মেয়েদেরকে খিদমতের জন্য বাঁচিয়ে রাখতো। মূলতঃ ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার মাঝে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড় পরীক্ষা রয়েছে। যা বস্তুতঃ তোমাদের কাছ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দাবি করে।
১৪২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সাথে একান্ত আলাপের জন্য ত্রিশ রাত নির্ধারণ করলেন। অতঃপর আরো দশ রাত বাড়িয়ে তিনি তাঁর নির্ধারিত সময় পূরা করলেন। ফলে তা পুরো চল্লিশ রাতই হয়ে গেলো। যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের সাথে একান্তে সাক্ষাতের জন্য রওয়ানার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি তাঁর ভাই হারূনকে বললেন: হে হারূন! তুমি আমার সম্প্রদায়ে আমার প্রতিনিধি হয়ে যাও এবং সুষ্ঠু পরিচালনা ও ন¤্রতার মাধ্যমে তাদের বিষয়গুলোর সমাধান করো। পাপে লিপ্ত হয়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের পথ অবলম্বন করো না এবং পাপীদের সাহয্যকারীও হয়ো না।
১৪৩. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) নির্ধারিত সময়ে তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাতের জন্য আসলেন যা ছিলো পুরো চল্লিশ রাত্রি। তাঁর প্রতিপালক আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন। এ সময়ে তাঁর মন তাঁর প্রতিপালকের দর্শনের জন্য খুব উৎসাহী হয়ে উঠলো। তাই তিনি তাঁকে দেখার আবেদন জানালে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উত্তরে বলেন: দুনিয়ার জীবনে তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পারবে না। কারণ, আমাকে দেখার কোন ক্ষমতাই এখন তোমার নেই। বরং আমি যখন এই পাহাড়ে আমার নূর ক্ষেপন করবো তুমি তখন সেদিকে তাকাও। যদি পাহাড়টি কোন প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তার জায়গায় বাকি থাকে তাহলে তুমি আমাকে অচিরেই দেখতে পাবে। আর যদি তা জমিনের সাথে মিশে যায় তাহলে তুমি আমাকে দুনিয়াতে কখনোই দেখতে পাবে না। যখন আল্লাহ তা‘আলা পাহাড়ে তাঁর নূর ক্ষেপন করলেন তখন পাহাড়টি জমিনের সাথে মিশে গেলো। আর মূসা (আলিাইহিস-সালাম) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। যখন বেহুঁশ অবস্থা থেকে তাঁর হুঁশ ফিরে আসলো তখন তিনি বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার জন্য বেমানান সকল বস্তু থেকে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি এখনই দুনিয়াতে আপনাকে দেখার আবেদন থেকে তাওবা করছি। আমিই এ ব্যাপারে আমার সম্প্রদায়ের সর্বপ্রথম মু’মিন।
• تؤكد الأحداث أن بني إسرائيل كانوا ينتقلون من ضلالة إلى أخرى على الرغم من وجود نبي الله موسى بينهم.
ক. ঘটনাবলীর বর্ণনা এ কথা প্রমাণ করে যে, বনী ইসরাঈলের মাঝে আল্লাহর নবী মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর উপস্থিতি সত্তে¡ও তারা বারবার এক ভ্রষ্টতা থেকে অন্য ভ্রষ্টতার দিকে স্থানান্তরিত হতো।
• من مظاهر خذلان الأمة أن تُحَسِّن القبيح، وتُقَبِّح الحسن بمجرد الرأي والأهواء.
খ. যে কোন জাতির লাঞ্ছনার বিশেষ নিদর্শন হলো তারা নিজ খেয়াল-খুশি মতো মন্দকে ভালো এবং ভালোকে মন্দ বলবে।
• إصلاح الأمة وإغلاق أبواب الفساد هدف سام للأنبياء والدعاة.
গ. জাতির সংশোধন ও পাপের দরজাগুলো বন্ধ করা নবী ও দা‘য়ীদের একটি মহৎ উদ্দেশ্য।
• قضى الله تعالى ألا يراه أحد من خلقه في الدنيا، وسوف يكرم من يحب من عباده برؤيته في الآخرة.
ঘ. আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে ফায়সালা করেছেন যে, দুনিয়াতে তাঁর কোন সৃষ্টি তাঁকে দেখতে পাবে না। তবে তিনি অচিরেই আখিরাতে তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাথে দেখা দিয়ে তাঁদেরকে সম্মানিত করবেন।
১৪৪. আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললেন: হে মূসা! আমি আপনাকে রিসালাতের জন্য মনোনীত করে মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আমি আপনাকে তাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। তেমনিভাবে আমি কোন মধ্যস্থতা ছাড়াই আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সবার উপরে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছি। তাই আমি আপনাকে যে মহা সম্মান দিয়েছি তা গ্রহণ করুন এবং এ মহৎ দানের জন্য আপনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন।
১৪৫. আর আমি মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর জন্য বনী ইসরাঈলের দীন ও দুনিয়ার সকল প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী কিছু ফলকে লিখে দিলাম। যাতে তা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ এবং প্রয়োজনীয় বিধানাবলীর ব্যাখ্যা হতে পারে। অতএব, হে মূসা! তুমি এ তাওরাতকে গুরুত্ব সহকারে শক্তভাবে ধরো। আর তোমার বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়কে আদেশ করো এগুলোর মধ্যকার যা সুন্দর ও যার সাওয়াব বেশি তা আঁকড়ে ধরতে। যেমন: পরিপূর্ণভাবে আদেশগুলো পালন করা, ধৈর্য ধরা ও ক্ষমা করা। আমি অচিরেই তোমাদেরকে আমার আদেশ অমান্যকারী এবং আমার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া লোকদের পরিণতি তথা তাদের ধ্বংস ও বিনাশ দেখাবো।
১৪৬. যারা আল্লাহর বান্দাদের প্রতি অহঙ্কার দেখায় এবং অবৈধভাবে সত্যকে প্যত্যাখ্যান করে তাদেরকে আমি আমার কিতাবের আয়াতসমূহ বুঝতে এবং নিজেদের ও দুনিয়ার আনাচে-কানাচের নিদর্শনসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দেবো না। তারা সকল নিদর্শন দেখে ঠিকই কিন্তু তারা সেগুলোর ব্যাপারে অমূলক অভিযোগ আনে এবং সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। উপরন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনও করে না। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সত্য পথ দেখে ঠিকই কিন্তু তারা তাতে চলবে না এবং তার প্রতি উৎসাহও দেখাবে না। তবে তারা আল্লাহর রোষানলের দিকে পৌঁছানোর ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর পথ দেখলে তাতে চলার চেষ্টা করে। এ সকল বিষয় যা তাদের ব্যাপারে ঘটেছে তা কিন্তু আল্লাহর মহান নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলার দরুন। আর রাসূলদের নিয়ে আসা বিধানের সত্যতা প্রমাণ করে এমন বিষয়ে চিন্তা করার ব্যাপারে গাফিল হওয়ার দরুন।
১৪৭. যারা আমার রাসূলদের সত্যতা প্রমাণ করে এমন নিদর্শনসমূহকে যা এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা মনে করে তাদের সকল আনুগত্য ও আমল বাতিল হয়ে যায়। ঈমানের শর্ত পূরণ না করার দরুন তাদেরকে সেগুলোর সাওয়াব দেয়া হবে না। কিয়ামতের দিন শুধু তাদেরকে আল্লাহর সাথে তাদের কুফরি ও শিরকের প্রতিদান দেয়া হবে। যার পরিণাম হবে জাহান্নামে চিরকাল থাকা।
১৪৮. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাতে যাওয়ার পর তার সম্প্রদায় তাদের অলঙ্কার দিয়ে একটি গো-বাছুরের অবয়ব তৈরি করলো। যার কোন রূহ ছিলো না তবে ছিলো আওয়াজ। তারা কি জানে না যে, এ গো বাছুর তাদের সাথে কথা বলতে পারে না। না তাদেরকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোন কল্যাণের পথ দেখাতে পারে। না তাদের কোন লাভ করতে পারে, না তাদের কোন দুঃখ দূর করতে পারে। বস্তুতঃ তারা তাকে উপাস্য বানিয়ে নিজেদের উপরই নিজেরা যুলুম করলো।
১৪৯. তবে তারা যখন লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছে এবং এ কথা জানতে পেরেছে যে, তারা গো-বাছুরকে আল্লাহর পাশাপাশি মা’বূদ বানিয়ে সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গেছে তখন তারা আল্লাহর নিকট বিনয়ী হয়ে বললো: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যদি আমাদেরকে আপনার আনুগত্যের তাওফীক দিয়ে দয়া না করেন আর আমাদের গো-বাছুর পূজার অপকর্মটি ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
• على العبد أن يكون من المُظْهِرين لإحسان الله وفضله عليه، فإن الشكر مقرون بالمزيد.
ক. বান্দার উচিৎ সে যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পাকে প্রকাশ করে। কারণ, কৃতজ্ঞতাই তো প্রবৃদ্ধির উপায়।
• على العبد الأخذ بالأحسن في الأقوال والأفعال.
খ. বান্দার উচিৎ সুন্দর কথা ও কর্মে বৈশিষ্ট্যমÐিত হওয়া।
• يجب تلقي الشريعة بحزم وجد وعزم على الطاعة وتنفيذ ما ورد فيها من الصلاح والإصلاح ومنع الفساد والإفساد.
গ. আনুগত্যের মানসিকতা নিয়ে গুরুত্ব ও সাহসিকতার সাথে শরীয়তকে গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তেমনিভাবে তাতে যে কল্যাণ ও সংশোধন রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা এবং ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলাকে প্রতিরোধ করা।
• على العبد إذا أخطأ أو قصَّر في حق ربه أن يعترف بعظيم الجُرْم الذي أقدم عليه، وأنه لا ملجأ من الله في إقالة عثرته إلا إليه.
ঘ. বান্দার উচিৎ সে যখন তার প্রতিপালকের অধিকারে কোন ধরনের ত্রæটি ও বিচ্যুতি ঘটায় তখন সে যেন তার কৃত এ কঠিন পাপের কথা স্বীকার করে। কারণ, তার এ পদস্খলনের ক্ষমা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই করতে পারে না।
১৫০. যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাত সেরে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা গো-বাছুর পূজা করছে তখন তিনি তাদের উপর অত্যন্ত রাগ ও দুঃখ নিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর তোমরা কতোই না নিকৃষ্ট পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছো। কারণ, তা তো তোমাদেরকে ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে। তোমরা কি আমার অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে গো-বাছুরের পূজায় লিপ্ত হয়েছো?! অতঃপর তিনি কঠিন রাগ ও দুঃখে তাওরাতের ফলকগুলো ফেলে দিলেন। আর নিজের ভাই হারূনের মাথা ও দাঁড়ি ধরে টানতে শুরু করলেন। কারণ, তিনি তো তাদের সাথেই ছিলেন; অথচ তিনি তাদের গো-বাছুর পূজাকে প্রতিরোধ করেননি। তখন হারূন (আলিাইহিস-সালাম) মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট কৈফিয়ত দিতে ও তাঁর দয়া কামনা করতে গিয়ে বললেন: হে আমার মায়ের সন্তান! লোকেরা আমাকে দুর্বল ভেবে লাঞ্ছিত করেছে এবং তারা আমাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হয়েছে। তাই তুমি আমাকে এমন শাস্তি দিয়ো না যাতে আমার শত্রæরা খুশি হয়। আর তুমি আমাকে আমার উপর রাগের দরুন জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। যারা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো ইবাদাত করে।
১৫১. তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ও আমার ভাই হারূনকে ক্ষমা করুন। আর আপনি আমাদেরকে আপনার রহমতের ছায়াতলে স্থান দিন। যা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে রাখবে। হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো আমাদের প্রতি যে কোন দয়াকারীর চেয়েও বেশি দয়াশীল।
১৫২. যারা গো-বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে তাকে পূজা করেছে অচিরেই তাদের উপর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কঠিন ক্ষোভ ও লাঞ্ছনা নেমে আসবে। কারণ, তারা নিজেদের প্রতিপালককে রাগান্বিত ও অপমানিত করেছে। এমন প্রতিদানই আমি আমার উপর মিথ্যারোপকারীদেরকে দিয়ে থাকি।
১৫৩. যারা গুনাহের কাজ করেছে যেমন: আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরি করা। অতঃপর আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর নিকট তাওবা করেছে এবং নিজেদের কৃত পাপ থেকে ফিরে এসেছে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক এ তাওবা করা ও শিরক থেকে ঈমানের দিকে এবং গুনাহ থেকে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসার পর তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাঁর উপর দয়া করবেন।
১৫৪. যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর রাগ ঠাÐা ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলো তখন তিনি যে ফলকগুলো রাগের মাথায় ফেলে দিয়েছেন তা হাতে উঠিয়ে নিলেন। উক্ত ফলকগুলোতে রয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়েত লাভের ব্যবস্থা এবং সত্য ও সঠিক পথের বর্ণনা। উপরন্তু তাতে যারা তাদের প্রতিপালক ও তাঁর শাস্তিকে ভয় পায় তাদের জন্য রয়েছে রহমত ও আশীর্বাদ।
১৫৫. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোকেরা গো-বাছুরের পূজায় লিপ্ত হলে সে ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের নিকট ওজর পেশ করার জন্য বাছাই করা সত্তর জন ভালো লোক চয়ন করলেন এবং আল্লাহ তা‘আলাও তাদের জন্য তুর পাহাড়ের নিকট জমায়েত হওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সময় নির্ধারিত করলেন। যখন তারা সেখানে উপস্থিত হলো তখন তারা আল্লাহর সাথে ধৃষ্টতা দেখিয়ে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখার আবেদন করলো। এর ফলশ্রæতিতে তাদের উপর ভ‚মিকম্প ও প্রচÐ বিস্ফোরণের আযাব আসলো এবং তারা বেহুঁশ হয়ে গেলো। তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের নিকট বিনয়ের সাথে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি তাদেরকে ও আমাকে এখানে আসার আগে ধ্বংস করার ইচ্ছা করতেন তাহলে তা অবশ্যই করতে পারতেন। আপনি কি আমাদের বিবেকহীন লোকদের কর্মকাÐের দরুন আমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন? আমার সম্প্রদায় যে গো-বাছুর পূজা করলো তা তো কেবল তাদের জন্য একটি পরীক্ষাই ছিলো। যার মাধ্যমে আপনি যাকে চান পথভ্রষ্ট করবেন আর যাকে চান সঠিক পথ দেখাবেন। আপনি তো আমাদের সকল ব্যাপারের অভিভাবক। তাই আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আমাদের উপর প্রচুর দয়া করুন। কারণ, আপনিই তো সর্বোত্তম ক্ষমাশীল।
• في الآيات دليل على أن الخطأ في الاجتهاد مع وضوح الأدلة لا يعذر فيه صاحبه عند إجراء الأحكام عليه، وهو ما يسميه الفقهاء بالتأويل البعيد.
ক. উক্ত আয়াতগুলোতে এ প্রমাণ রয়েছে যে, গবেষণাগত ভুলের ক্ষেত্রে দলীল সুস্পষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিধান প্রয়োগের সময় অপারগ মনে করা হয় না। ফকীহগণ যাকে দূরবর্তী ব্যাখ্যা বলে নামকরণ করে থাকে।
• من آداب الدعاء البدء بالنفس، حيث بدأ موسى عليه السلام دعاءه فطلب المغفرة لنفسه تأدُّبًا مع الله فيما ظهر عليه من الغضب، ثم طلب المغفرة لأخيه فيما عسى أن يكون قد ظهر منه من تفريط أو تساهل في رَدْع عَبَدة العجل عن ذلك.
খ. দু‘আর আদব হলো নিজ থেকে শুরু করা। এ জন্য মূসা (আলিাইহিস-সালাম) আল্লাহর রাগ দেখে তাঁর সাথে আদব দেখাতে গিয়ে তাঁর নিকট দু‘আ শুরু করে সর্বপ্রথম নিজের জন্যই ক্ষমা চেয়েছেন। অতঃপর তাঁর ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। কারণ, হয়তো বা গো-বাছুর পূজা প্রতিরোধে তাঁর ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোন ধরনের শিথিলতা ও ত্রæটি হয়ে থাকতে পারে।
• التحذير من الغضب وسلطته على عقل الشخص؛ ولذلك نسب الله للغضب فعل السكوت كأنه هو الآمر والناهي.
গ. এখানে রাগ ও মানুষের মেধার উপর তার প্রভাবের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা রাগের সাথে তার ঠাÐা হওয়াকে সম্পৃক্ত করেছেন। যেন সে নিজেই আদেশ-নিষেধকারী।
• ضرورة التوقي من غضب الله، وخوف بطشه، فانظر إلى مقام موسى عليه السلام عند ربه، وانظر خشيته من غضب ربه.
ঘ. আল্লাহর রাগ থেকে বাঁচা ও তাঁর পাকড়াওকে ভয় করা অত্যন্ত জরুরী। দেখুন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর প্রতিপালকের সাথে তাঁর আচরণ এবং তাঁর প্রতিপালকের রাগের ব্যাপারে তাঁর কতো ভয়।
১৫৬. আপনি আমাদেরকে তাদেরই দলভুক্ত করুন যাদেরকে আপনি এ দুনিয়াতে বিভিন্ন রকমের নিয়ামত ও সুস্থতা দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং নেক আমলের তাওফীক দিয়েছেন। আর পরকালে আপনার নেককার বান্দাদের দলভুক্ত করুন যাদের জন্য আপনি জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন। আমরা আপনার নিকট তাওবা করছি। আমরা নিজেদের ত্রæটির কথা স্বীকার করে আপনার দিকেই ফিরে এসেছি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: যারা দুর্ভাগ্যের উপকরণগুলো অবলম্বন করে আমি তাদেরকেই শাস্তি দেবো। আর আমার রহমত দুনিয়ার সব কিছুকেই শামিল করে। এমন কোন সৃষ্টি নেই যার নিকট আল্লাহর রহমত পৌঁছায়নি এবং তাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ বেষ্টন করে রাখেনি। তবে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে এবং যারা হকদারদেরকে নিজেদের সম্পদের যাকাত দেয় উপরন্তু যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাসী আমি অচিরেই পরকালে আমার রহমতদানে তাদেরকে সৌভাগ্যবান করবো।
১৫৭. যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করে। তিনি এমন এক আনপড় নবী যিনি না পড়তে পারেন না লিখতে পারেন। বরং তাঁর নিকট কেবল তাঁর প্রতিপালকই ওহী পাঠায়। যাঁর নাম ও বৈশিষ্ট্যাবলী এবং তাঁর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর উপর নাযিলকৃত তাওরাতে এবং ঈসা (আলিাইহিস-সালাম) এর উপর নাযিলকৃত ইঞ্জীলে লিখিত পাবে। তিনি তাদেরকে সুন্দর ও সঠিকেরই আদেশ করেন এবং মানুষের সঠিক বিবেক ও বিশুদ্ধ স্বভাবে যা অসুন্দর ও অসঠিক তা থেকেই নিষেধ করেন। উপরন্তু তিনি তাদের জন্য এমন সব মজাদার খাদ্য, পানীয় ও বিবাহের বিষয়াদি হালাল করেন যাতে কোন ধরনের ক্ষতি নেই। আর সকল ধরনের বিশ্রী ও অরুচিকর জিনিস তাদের উপর হারাম করেন। তেমনিভাবে তাদের উপর থেকে এমন কঠিন বিধানাদি দূর করেন যা মেনে চলতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। যেমন: হত্যাকারীকে হত্যা করার বাধ্যবাধকতা; চাই হত্যাকাÐটি ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃত। অতএব, বনী ইসরাঈল ও অন্যান্যদের মধ্যকার যারা তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দিবে উপরন্তু তাঁর শত্রæ কাফিরদের বিরুদ্ধে তাঁকে সহযোগিতা করবে এবং তাঁর উপর নাযিলকৃত পথপ্রদর্শক আলোকময় কুর‘আনের অনুসরণ করবে তারাই সত্যিকারার্থে সফলকাম। যারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হবে এবং তাদেরকে তাদের ভয়ের বস্তুসমূহ থেকে দূরে রাখা হবে।
১৫৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকল আরব ও অনারবদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত একজন রাসূল। আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র তাঁরই। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি মৃতকে জীবিত এবং জীবিতকে মৃত করেন। তাই তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনো এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ঈমান আনো। তিনি এমন এক নবী যিনি লিখতে ও পড়তে জানেন না। তিনি কেবল এমন এক ওহী নিয়ে এসেছেন যা তাঁর প্রতিপালক তাঁর উপরই নাযিল করেন। যিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন এবং তাঁর উপর ও তাঁর পূর্বেকার নবীদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ বিনা পার্থক্যে বিশ্বাস করেন। অতএব, তিনি যা তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো। যাতে তোমরা নিজেদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যা লাভজনক তার সন্ধান পেতে পারো।
১৫৯. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক দলও রয়েছে যারা সত্য দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা মানুষকে সত্য পথ দেখায় এবং ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালা করে। কারো উপর কোন ধরনের যুলুম করে না।
• تضمَّنت التوراة والإنجيل أدلة ظاهرة على بعثة النبي محمد صلى الله عليه وسلم وعلى صدقه.
ক. তাওরাত ও ইঞ্জীলে এমন কিছু সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াত ও তার সত্যতা প্রমাণ করে।
• رحمة الله وسعت كل شيء، ولكن رحمة الله عباده ذات مراتب متفاوتة، تتفاوت بحسب الإيمان والعمل الصالح.
খ. আল্লাহর রহমত সকল বস্তুর উপরই রয়েছে। তবে বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বিভিন্ন পর্যায়ের। যা ঈমান ও নেক আমলের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
• الدعاء قد يكون مُجْملًا وقد يكون مُفَصَّلًا حسب الأحوال، وموسى في هذا المقام أجمل في دعائه.
গ. অবস্থা মাফিক দু‘আ কখনো সংক্ষিপ্ত আবার কখনো বিস্তারিত হয়। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এ জায়গায় সামগ্রিক দু‘আই করেছেন।
• من صور عدل الله عز وجل إنصافه للقِلَّة المؤمنة، حيث ذكر صفات بني إسرائيل المنافية للكمال المناقضة للهداية، فربما توهَّم متوهِّم أن هذا يعم جميعهم، فَذَكَر تعالى أن منهم طائفة مستقيمة هادية مهدية.
ঘ. আল্লাহর ন্যায় বিচারের একটি দিক হলো, কম সংখ্যক হলেও মু’মিনের প্রতিই তিনি অনুগ্রহ করেন। তাই যখন তিনি বনী ইসরাঈলের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলেন যা তাদের পরিপূর্ণতা ও হিদায়েত বিরোধী তখন কেউ সন্দেহ করতে পারে যে, এ বৈশিষ্ট্যাবলী বোধ হয় তাদের সবার মধ্যেই রয়েছে। সে জন্য তিনি এর পরপরই উল্লেখ করলেন যে, তাদের মাঝে এমন এক দলও রয়েছে যাদের সংখ্যা কম হলেও তারা আল্লাহর অনুগ্রহে সত্যের উপর অটল, হিদায়েতপ্রাপ্ত ও হিদায়েত প্রদর্শনকারী।
১৬০. আমি বনী ইসরাঈলকে বারো বংশে ভাগ করে দিয়েছি। যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় তাঁর কাছে এ আবেদন করলো যে, তিনি যেন আল্লাহর নিকট পানির আবেদন করেন তখন আমি মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট এ মর্মে ওহী পাঠালাম যে, হে মূসা! তুমি নিজ লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাতে আঘাত করলে তাদের বারোটি বংশের সংখ্যানুসারে তা থেকে বরোটি ঝর্ণা বেরিয়ে আসে এবং তাদের প্রত্যেক বংশই তাদের বিশেষ পানি পানের জায়গা চিনে নেয়। তাতে তাদের এক বংশের সাথে অন্য কোন বংশ কোনভাবেই অংশীদার নয়। আর আমি তাদের উপর মেঘের ছায়া দিয়েছি। যা তারা চললে তাদের সাথে চলতে থাকে আর তারা থামলে তাদের সাথে থেমে যায়। উপরন্তু আমি তাদের উপর আমার নিয়ামত মধুর ন্যায় সুমিষ্ট পানি এবং সুম্মানী তথা কোয়েলের ন্যায় ছোট পাখির উন্নত গোস্ত নাযিল করি। আমি তাদেরকে বললাম: আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র রিযিক দিয়েছি তা থেকে খাও। মূলতঃ তারা যুলুম করে ও নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা রক্ষা না করার মাধ্যমে আমার কোন কিছু ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তারা নিজেদের অংশ কমিয়ে নিজেদের উপরই যুলুম করেছে। কারণ, তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারে উপনীত করেছে।
১৬১. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে বললেন: তোমরা বাইতুল-মাক্বদিসে প্রবেশ করো এবং সে এলাকার যে কোন জায়গা থেকে যে কোন সময় ফল-ফলাদি ভক্ষণ করো আর বলো: “হিত্তাতুন” অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন। সেই সাথে তোমরা গেট দিয়ে ঢুকার সময় নিজেদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়ী হয়ে রুকু’ অবস্থায় প্রবেশ করো। যদি তোমরা এমন করো তাহলে আমি তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মশীলদেরকে অচিরেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বাড়িয়ে দেবো।
১৬২. তখন তাদের যালিমরা নির্দেশিত কথা পরিবর্তন করে বললো: “হিনতাতুন” অর্থাৎ যবের দানা; তারা ক্ষমা প্রার্থনার আদেশের পরিবর্তে যবের দানা চাইলো। তেমনিভাবে তারা আদিষ্ট কাজেরও পরিবর্তন ঘটালো। তারা আল্লাহর সামনে নত হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে ঢুকার পরিবর্তে জমিনে পাছা ঠেকিয়ে প্রবেশ করলো। ফলে তাদের অন্যায়ের দরুন আমি তাদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি পাঠিয়েছি।
১৬৩. হে রাসূল! আপনি ইহুদিদেরকে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য তাদেরকে সাগরে মাছ ধরা সংশ্লিষ্ট ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করুন। যখন তারা নিষেধাজ্ঞার পরও শনিবারে মাছ শিকার করে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করতো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এভাবে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন যে, শনিবারেই মাছগুলো সাগর বুকে ভেসে তাদের নিকট প্রকাশ্যে আসতো। অন্যান্য দিন মাছগুলো এভাবে আসতো না। তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার দরুন আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। কিন্তু তারা মাছ শিকারের কৌশল আঁটলো। তারা সেদিন জাল পাতলো এবং গর্ত খনন করলো। ফলে শনিবারে মাছগুলো সেখানে পড়তো। আর রবিবারে তারা সেগুলো ধরে খেতো।
ক. অস্বীকার ও অকৃতজ্ঞতা নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটি বিশেষ কারণ।
• من أسباب حلول العقاب ونزول العذاب التحايل على الشرع؛ لأنه ظلم وتجاوز لحدود الله.
খ. আযাব নাযিল ও শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার একটি বিশেষ কারণ হলো শরীয়ত অমান্য করার ব্যাপারে কৌশল খাটানো বা বাহানা করা। কারণ, তা মূলতঃ যুলুম ও আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রম করা।
গ. আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলের জন্য লাঞ্ছনা ও হীনমন্যতার ব্যবস্থা করলেন এবং তিনি এ কথাও ঘোষণা করলেন যে, তিনি তাদের উপর কিছু কাল পর পর এমন লোক পাঠাবেন যে তাদেরকে তাদের যুলুম ও বক্রতার দরুন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবে।
১৬৪. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন তাদেরই এক দল তাদেরকে এ অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করলো এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করলো তখন অন্য আরেকটি দল তাদেরকে বললো: কেন তোমরা এমন একটি দলকে উপদেশ দিচ্ছো যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার দরুন এ দুনিয়াতেই ধ্বংস করে দিবেন অথবা কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন? তখন উপদেশদাতারা বললো: আমরা তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করে যেন আমরা আল্লাহর নিকট ওজর পেশ করতে পারি। যাতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সে নির্দেশ পরিত্যাগ করার দরুন শাস্তি না দেন। আর হয়তো বা তারা এ উপদেশ কর্তৃক লাভবান হয়ে নিজেরাই পাপের কাজ থেকে সরে আসে।
১৬৫. যখন পাপীরা উপদেশদাতাদের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো উপরন্তু তারা পাপ থেকে ফিরেও আসলো না তখন আমি যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছে তাদেরকে আমার শাস্তি থেকে মুক্তি দিলাম। আর যারা শনিবারে মাছ শিকার করে আল্লাহর সাথে হঠকারিতা দেখিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছে আমি তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হওয়া এবং পাপে লিপ্ত থাকার দরুন কঠিন শাস্তি দিয়েছি।
১৬৬. যখন তারা অহঙ্কার ও হঠকারিতাবশতঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘন করলো এবং তারা উপদেশও প্রত্যাখ্যান করলো তখন আমি তাদেরকে বললাম: হে পাপীরা! তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও। তখন তারা আমার ইচ্ছা মাফিক তাই হয়ে গেলো। বস্তুতঃ আমি কোন কিছুর ইচ্ছা করলে তাকে আদেশ করে বলি: হয়ে যাও, তখন তা হয়ে যায়।
১৬৭. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা সন্দেহাতীত ও পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে বললেন: আমি অবশ্যই ইহুদিদের উপর এমন লোককে ক্ষমতা দেবো যে তাদেরকে এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক পাপীর দ্রæত শাস্তিদাতা। এমনকি তিনি কখনো কখনো তাকে দুনিয়াতেই দ্রæত শাস্তি দিয়ে থাকেন। তবে তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যকার তাওবাকারীর পাপসমূহের জন্য অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
১৬৮. আমি তাদেরকে এ পৃথিবীর বুকে বিক্ষিপ্ত ও দলে-উপদলে বিভক্ত করে দিলাম; অথচ তারা ইতিপূর্বে একত্রে ছিলো। তাদের মধ্যকার কিছু তো রয়েছে নেককার যারা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকারসমূহ রক্ষা করে। আর কিছু রয়েছে মধ্যমপন্থী। বাকী অন্যরা গুনাহের মাধ্যমে নিজেদের উপরই অত্যাচারী হয়েছে। মূলতঃ আমি তাদেরকে উদারতা ও কঠোরতা দিয়ে পরীক্ষা করেছি যাতে তারা কৃত অপরাধ থেকে ফিরে আসে।
১৬৯. এদের পর একটি নিকৃষ্ট দল তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে যারা তাদের পূর্বসূরী থেকে তাওরাত গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা তা পড়ে ঠিকই, তবে তার উপর আমল করে না। তারা আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত করা এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরে বিচার-ফায়সালা করার জন্য ঘুষ হিসেবে স্বল্পমূল্য তথা দুনিয়ার কিছু সম্পদ ও ফায়েদা গ্রহণ করে থাকে। তাদের আশা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা কি তাদের কাছ থেকে এ ওয়াদা-অঙ্গীকার নেননি যে, তারা যেন কোন ধরনের বিকৃতি ও পরিবর্তন ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে শুধু সত্য কথাই বলে?! তাদের কিতাবের উপর আমল পরিত্যাগ করা কিন্তু মূর্খতার কারণে নয়। বরং তারা তা জেনেশুনেই করছে। কারণ, তারা তা পড়েছে ও জেনেছে। তাই তাদের পাপ হলো খুবই কঠিন। যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে চলে তাদের জন্য দুনিয়ার নশ্বর কিছু সম্পদের চেয়ে পরকাল ও পরকালের স্থায়ী নিয়ামত অনেক উত্তম। যারা দুনিয়ার এ সামান্য সম্পদ গ্রহণ করে তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলা পরকালে আল্লাহভীরুদের জন্য যা তৈরি করে রেখেছেন তা অনেক উত্তম ও চিরস্থায়ী?!
১৭০. যারা আল্লাহর কিতাবকে শক্ত হাতে ধারণ করে এবং তাতে থাকা বিধানসমূহের উপর আমল করে উপরন্তু সালাতের সময়, শর্ত, ওয়াজিব ও সুনানের প্রতি খেয়াল রেখে তা কায়েম করে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলের প্রতিদান দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কখনো কোন নেককারের সাওয়াব নষ্ট করেন না।
• إذا نزل عذاب الله على قوم بسبب ذنوبهم ينجو منه من كانوا يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر فيهم.
ক. যখন কোন জাতির উপর তাদের গুনাহের দরুন আল্লাহর আযাব নাযিল হয় তখন কেবল তারাই সে আযাব থেকে নাজাত পাবে যারা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে।
• يجب الحذر من عذاب الله؛ فإنه قد يكون رهيبًا في الدنيا، كما فعل سبحانه بطائفة من بني إسرائيل حين مَسَخَهم قردة بسبب تمردهم.
খ. আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। কারণ, সে আযাব কখনো কখনো দুনিয়াতে খুব ভয়ানক হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলের একটি দলের সাথে তা করেছেন। তিনি তাদেরকে তাদের নিজেদের হঠকারিতার দরুন বানরে রূপান্তরিত করেন।
• كتب الله على بني إسرائيل الذلة والمسكنة، وتأذن بأن يبعث عليهم كل مدة من يذيقهم العذاب بسبب ظلمهم وانحرافهم.
গ. দুনিয়ার নিয়ামত যতোই বড় মনে হয় তা কিন্তু আখিরাতের স্থায়ী নিয়ামতের বিপরীতে খুবই সামান্য ও নগণ্য।
• نعيم الدنيا مهما بدا أنه عظيم فإنه قليل تافه بجانب نعيم الآخرة الدائم.
ঘ. ঈমানের পর বান্দার সর্বোৎকৃষ্ট আমল হলো সালাত কায়েম করা। কারণ, তা হলো মূলতঃ ধর্মের একটি বিশেষ স্তম্ভ।
১৭১. হে মুহাম্মাদ! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন বনী ইসরাঈলরা তাওরাতের বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানালো এবং আমি পাহাড়কে নিজ জায়গা থেকে সরিয়ে তাদের মাথার উপর তুলে ধরলাম তখন পাহাড়টি তাদের মাথার উপর এমনভাবে থাকলো যে, যেন কোন মেঘ তাদের মাথার উপর ছায়া দিচ্ছে। তারা তখন এ কথাটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে যে, নিশ্চয়ই পাহাড়টি তাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। তখন তাদেরকে বলা হলো: আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা শক্ত করে গুরুত্ব ও দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাতে তোমাদের জন্য যে বিধানাবলী প্রদান করেছেন তা স্মরণ করো; কখনো ভুলে যেও না। আশা করা যায়, তোমরা এমন করতে পারলে অবশ্যই আল্লাহভীরু বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
১৭২. হে মুহাম্মাদ! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক আদমের পিঠ থেকে তাঁর সন্তানগুলোকে বের করে আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতি ও স্বভাবের ভিত্তিতে তাদের থেকে ¯্রষ্টা ও প্রতিপালক হিসেবে তাঁর প্রতি ঈমানের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বললেন: আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তখন তারা সবাই বললো: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এ স্বীকৃতি আদায়ের উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, যেন তোমরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপর ঈমান আনার প্রমাণকে অস্বীকার করতে না পারো এবং এ কথাও বলতে না পারো যে, এ ব্যাপারে আমাদের কোন জ্ঞানই ছিলো না।
১৭৩. তেমনিভাবে তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পারো যে, আমাদের বাপ-দাদারাই কেবল অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আল্লাহর সাথে শিরক করেছে আর আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে শিরকের উপর পেয়েছি তারই অন্ধ অনুসরণ করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি কি আমাদের বাপ-দাদারা যে শিরক করে তাদের আমলগুলো বাতিল করে দিয়েছে তাদের এ কর্মের দরুন আমাদেরকে পাকড়াও করে শাস্তি দিবেন? কারণ, আমাদের মূর্খতা ও আমাদের বাপ-দাদাদের অন্ধ অনুসরণের দরুন আমরা কোনভাবেই পাপী নই।
১৭৪. যেমনিভাবে আমি মিথ্যারোপকারী জাতিগুলোর পরিণামের ব্যাপারে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি তেমনিভাবে আমি এদের পরিণামের ব্যাপারেও আমার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবো। যাতে তারা শিরক থেকে আল্লাহর তাওহীদ ও শিরকমুক্ত ইবাদাতের দিকে ফিরে আসে। যার অঙ্গীকার তারা ইতিপূর্বেই দিয়ে এসেছে।
১৭৫. হে রাসূল! আপনি বনী ইসরাঈলকে তাদের সেই ব্যক্তির খবর পড়ে শুনান যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছি অতঃপর সে তা জেনেছে ও বুঝেছে। তবে সে সেগুলোর উপর আমল করেনি। বরং সে তা পরিত্যাগ করেছে এবং তা থেকে সে বেরিয়ে এসেছে। অতঃপর শয়তান তার পিছু নিয়েছে এবং তার সঙ্গী হয়েছে। ফলে সে হিদায়েত ও নাজাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর ধ্বংস ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।
১৭৬. আমি চাইলে এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে অবশ্যই তাকে উচ্চাসনে আসীন করতাম তথা তাকে এ আয়াতগুলোর উপর আমল করার তাওফীক দিতাম। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে উচ্চ সম্মানের অধিকারী হতো। কিন্তু সে তো যা কিছু তাকে লাঞ্ছনার দিকে নিয়ে যাবে তাই চয়ন করেছে তথা সে দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের দিকে ধাবিত হয়েছে এবং সে তার কুপ্রবৃত্তি যা চেয়েছে সে বাতিলেরই অনুসরণ করেছে। সুতরাং দুনিয়ার কঠিন লোভের ক্ষেত্রে তার দৃষ্টান্ত হলো সেই কুকুরের ন্যায় যে সর্বাবস্থায় জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে। সে বসে থাকলেও জিভ বের করে হাঁপায় আর তাকে তাড়ালেও সে জিভ বের করে হাঁপায়। উক্ত দৃষ্টান্ত সে জাতির জন্য যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি মিথ্যারোপ করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাই হে রাসূল! আপনি ঘটনাগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করুন যাতে তারা এগুলোকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং মিথ্যারোপ ও ভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসে।
১৭৭. তারা কতোইনা নিকৃষ্ট যারা আমার দলীল ও প্রমাণগুলোকে মিথ্যারোপ করেছে এবং সেগুলোকে আদৌ বিশ্বাস করেনি। বস্তুতঃ তারা এরই মাধ্যমে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে নিজেদের উপরই নিজেরা যুলুম করেছে।
১৭৮. যাকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঠিক পথের উপর চলার তাওফীক দিয়েছেন সেই হলো সত্যিকারার্থে হিদায়েতপ্রাপ্ত। আর যারা সত্যিকারার্থে নিজেরাই নিজেদেরকে অধিকার বঞ্চিত করেছে তিনি তাদেরকে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন। তারা কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারকে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। মূলতঃ সেটিই হবে সুস্পষ্ট ও অসামান্য ক্ষতিসাধন।
• المقصود من إنزال الكتب السماوية العمل بمقتضاها لا تلاوتها باللسان وترتيلها فقط، فإن ذلك نَبْذ لها.
ক. আসমানী কিতাব নাযিল করার উদ্দেশ্য হলো সেগুলোর চাহিদানুযায়ী আমল করা। শুধু মুখে তিলাওয়াত করা বা তারতীলের সাথে পড়া নয়। কারণ, সেগুলোর সাথে এমনটি করা সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করারই শামিল।
• أن الله خلق في الإنسان من وقت تكوينه إدراك أدلة الوحدانية، فإذا كانت فطرته سليمة، ولم يدخل عليها ما يفسدها أدرك هذه الأدلة، وعمل بمقتضاها.
খ. আল্লাহ তা‘আলা মানব সৃষ্টির শুরুতেই তার মাঝে তাঁর একত্ববাদের দলীল বুঝার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন। তাই তার সহজাত স্বভাব যদি অবিকল থাকে এবং তাকে নষ্টকারী কোন জিনিস তাকে নষ্ট না করে তাহলে সে এ দলীলগুলো সহজে বুঝে সেগুলোর চাহিদানুযায়ী আমল করবে।
• في الآيات عبرة للموفَّقين للعمل بآيات القرآن؛ ليعلموا فضل الله عليهم في توفيقهم للعمل بها؛ لتزكو نفوسهم.
গ. উক্ত আয়াতগুলোতে কুর‘আনের উপর আমলের তাওফীকপ্রাপ্তদের জন্য বিশেষ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যাতে তারা সেগুলোর উপর আমল করার তাওফীকের ক্ষেত্রে আল্লাহর করুণার ব্যাপারটি বুঝতে পারে। ফলে তাদের অন্তরগুলোও পবিত্র হয়ে যাবে।
• في الآيات تلقين للمسلمين للتوجه إلى الله تعالى بطلب الهداية منه والعصمة من مزالق الضلال.
ঘ. উক্ত আয়াতসমূহে হিদায়েত চাওয়া এবং ভ্রষ্টতার ক্ষেত্রগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুসলমানদেরকে আল্লাহ অভিমুখী হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
১৭৯. নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামের জন্য বহু মানুষ ও জিনকে তৈরি করেছি। কারণ, আমি জানি তারা অচিরেই জাহান্নামীদের কর্মই করবে। তাদের অন্তর দিয়ে তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি অনুধাবন করতে পারে না। তাদের চোখ দিয়ে তারা নিজেদের মাঝে ও দুনিয়ার আনাচে-কানাচে থাকা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। তাদের কান দিয়ে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার কোন সুযোগ পায় না। এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা মূলতঃ জ্ঞান না থাকার দৃষ্টিকোণে চতুষ্পাদ জন্তুর ন্যায়। বরং তারা পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে চতুষ্পাদ জন্তু থেকেও অনেক দূরে। বস্তুতঃ তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনা থেকে একেবারেই উদাসীন।
১৮০. আল্লাহর অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে যেগুলো তাঁর মহত্ত¡ ও পূর্ণতা বুঝায়। তাই তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট উসিলা ধরতে পারো এবং তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা করো। পক্ষান্তরে যারা এ নামগুলোর ক্ষেত্রে এগুলোকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সাব্যস্ত করে কিংবা তাঁর থেকে সেগুলোকে বাদ দিয়ে অথবা সেগুলোর অর্থ বিকৃত করে কিংবা এগুলোর ব্যাপারে অন্যকে তাঁর সাথে তুলনা করে সত্য থেকে দূরে সরতে চায় তাদেরকে তোমরা পরিত্যাগ করো। যারা এগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ সত্যপন্থা অবলম্বন করে না তাদেরকে আমি অচিরেই তাদের কর্মকাÐের দরুন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবো।
১৮১. আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মাঝে এমন একটি দল আছে যারা নিজেরাই সত্যের প্রতি হিদায়েতপ্রাপ্ত এবং তারা অন্যদেরকে সত্যের প্রতি দা‘ওয়াত দিলে তারাও হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়। উপরন্তু তারা সত্য ও ইনসাফের ভিত্তিতে ফায়সালা করে। তারা কখনো অন্যের উপর যুলুম করে না।
১৮২. যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনে না বরং সেগুলোকে অস্বীকার করে আমি অচিরেই তাদের জন্য রিযিকের দরজাগুলো খুলে দেবো। এটি তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য নয়। বরং তাদেরকে আরেকটু অপরাধে আগ্রহী করার জন্য। যাতে তারা ভ্রষ্টতায় আরো অগ্রসর হয়। অতঃপর আমার শাস্তি হঠাৎ তাদের নিকট পৌঁছে যাবে।
১৮৩. আমি তাদের থেকে কিছু কালের জন্য আমার শাস্তি সরিয়ে নেই যাতে তারা এ ধারণা করে যে, তাদেরকে আর শাস্তি দেয়া হবে না। তাই তারা মিথ্যারোপ ও কুফরিতে অটল থাকে। তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। নিশ্চয়ই আমার কৌশল অতি শক্তিশালী। আমি তাদের প্রতি দয়া দেখাই; অথচ তা দিয়ে তাদের লাঞ্ছনার দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
১৮৪. যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা মনে করে তারা কি নিজেদের মেধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটু চিন্তা করে দেখে না? যাতে তাদের নিকট এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাগল নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা নিজ আযাব থেকে সুস্পষ্ট ভীতি প্রদর্শনের জন্য তাঁকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন।