অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা আশ-শুআরা - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - পৃষ্ঠার নাম্বার 372 - আল-কুরআনুল কারীম বিশ্বকোষ

আয়াত: 112

قَالَ وَمَا عِلۡمِي بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ

১১২. নূহ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: এ মু’মিনদের ধর্মকর্মের পেছনে কোন্ উদ্যোগ কাজ করছে এবং তার মূল্যই বা কি সে সম্পর্কে জানার কোন মাধ্যম আমার কাছে নেই। এ বিষয়টি দেখা ও তার হিসাব রাখা আমার কাজ নয়।

আয়াত: 113

إِنۡ حِسَابُهُمۡ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّيۖ لَوۡ تَشۡعُرُونَ

১১৩. তাদের হিসাবের দায়িত্ব কেবল আল্লহর উপর। যিনি তাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছুই জানেন। হায়! তোমরা যদি এ বিষয়টির মর্ম উপলব্ধি করতে পারতে তাহলে এমন কথা কখনোই বলতে না।

আয়াত: 114

وَمَآ أَنَا۠ بِطَارِدِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ

১১৪. আমি তোমাদের ঈমান আনার আশায় তোমাদের আবেদন মুতাবিক আমার মজলিস থেকে এসকল মু’মিনদেরকে তাড়িয়ে দিতে পারি না।

আয়াত: 115

إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ مُّبِينٞ

১১৫. আমি কেবল একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকি।

আয়াত: 116

قَالُواْ لَئِن لَّمۡ تَنتَهِ يَٰنُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمَرۡجُومِينَ

১১৬. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: তুমি যদি আমাদেরকে দা’ওয়াত দেয়া থেকে বিরত না হও তাহলে তোমাকে অপদস্ত করে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করা হবে।

আয়াত: 117

قَالَ رَبِّ إِنَّ قَوۡمِي كَذَّبُونِ

১১৭. নূহ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার সম্প্রদায় আমাকে মিথ্যুক বানিয়েছে। তেমনিভাবে আমি আপনার কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছি তারা সে ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে করেনি।

আয়াত: 118

فَٱفۡتَحۡ بَيۡنِي وَبَيۡنَهُمۡ فَتۡحٗا وَنَجِّنِي وَمَن مَّعِيَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ

১১৮. তাই আপনি আমার ও তাদের মাঝে চ‚ড়ান্তকারী ফায়সালা করুন। তথা বাতিলের উপর অবিচল থাকার দরুন তাদেরকে ধ্বংস করুন। আর আপনি কাফির সম্প্রদায়কে যে শাস্তি দিবেন তা থেকে আমাকে ও আমার মু’মিন সাথীদেরকে রক্ষা করুন।

আয়াত: 119

فَأَنجَيۡنَٰهُ وَمَن مَّعَهُۥ فِي ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ

১১৯. অতঃপর আমি তাঁর দু‘আ কবুল করে তাঁকে ও তাঁর মু’মিন সাথীদেরকে অন্যান্য প্রাণী ও মানুষে ভরা নৌকায় চড়িয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলাম।

আয়াত: 120

ثُمَّ أَغۡرَقۡنَا بَعۡدُ ٱلۡبَاقِينَ

১২০. এরপর আমি বাকি সবাইকে তথা নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর কাফির সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মারলাম।

আয়াত: 121

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗۖ وَمَا كَانَ أَكۡثَرُهُم مُّؤۡمِنِينَ

১২১. নিশ্চয়ই নূহ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর সম্প্রদায়ের উল্লিখিত ঘটনায় তথা নূহ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর মু’মিন সাথীদের বেঁচে যাওয়া এবং কাফিরদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মধ্যে শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা রয়েছে। বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই মু’মিন ছিলো না।

আয়াত: 122

وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلرَّحِيمُ

১২২. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক অত্যন্ত পরাক্রমশালী যিনি তাঁর শত্রæদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন এবং তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।

আয়াত: 123

كَذَّبَتۡ عَادٌ ٱلۡمُرۡسَلِينَ

১২৩. ‘আদ সম্প্রদায় বস্তুতঃ সকল রাসূলকেই মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে যখন তারা নিজেদের রাসূল হূদ (আলাইহিস-সালাম) এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।

আয়াত: 124

إِذۡ قَالَ لَهُمۡ أَخُوهُمۡ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ

১২৪. আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন তাদের নবী হূদ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললো: তোমরা কি আল্লাহ ভিন্ন অন্যের ইবাদাত পরিত্যাগ করে তাঁর ভয়ে খাঁটি মুত্তাকী হয়ে যাবে না?!

আয়াত: 125

إِنِّي لَكُمۡ رَسُولٌ أَمِينٞ

১২৫. নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরই রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তোমাদের কাছেই পাঠিয়েছেন। আমি একজন আমানতদারও বটে। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যা পৌঁছানোর আদেশ করেছেন আমি তার চেয়ে এতটুকুও বেশ-কম করি না।

আয়াত: 126

فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ

১২৬. তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।

আয়াত: 127

وَمَآ أَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ مِنۡ أَجۡرٍۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

১২৭. আমি নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট যা পৌঁছিয়ে দেই সে ব্যাপারে আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান কেবল সকল সৃষ্টির মালিক আল্লাহর নিকটই; অন্য কারো নিকট নয়।

আয়াত: 128

أَتَبۡنُونَ بِكُلِّ رِيعٍ ءَايَةٗ تَعۡبَثُونَ

১২৮. তোমাদের একি অবস্থা? তোমরা প্রত্যেক উঁচু জায়গায় অনর্থক ইমারত নির্মাণ করছো। যা দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের কোন ফায়েদায়ই আসবে না।

আয়াত: 129

وَتَتَّخِذُونَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمۡ تَخۡلُدُونَ

১২৯. তেমনিভাবে তোমরা এমন বড় বড় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করছো যেন তোমরা এ দুনিয়াতে চিরদিন থাকবে। এখান থেকে তোমরা কখনো স্থানান্তরিত হবে না?!

আয়াত: 130

وَإِذَا بَطَشۡتُم بَطَشۡتُمۡ جَبَّارِينَ

১৩০. আর যখন তোমরা মারতে ও হত্যা করতে আঘাত করো তখন তোমরা বিনা দয়া ও মায়ায় একান্ত নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করো।

আয়াত: 131

فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ

১৩১. তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করে চলো।

আয়াত: 132

وَٱتَّقُواْ ٱلَّذِيٓ أَمَدَّكُم بِمَا تَعۡلَمُونَ

১৩২. আর তোমরা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে এমন সব নিয়ামত দিয়েছেন যে সম্পর্কে তোমরা জ্ঞাত আছো।

আয়াত: 133

أَمَدَّكُم بِأَنۡعَٰمٖ وَبَنِينَ

১৩৩. তিনি তোমাদেরকে গবাদি পশু ও সন্তানসন্ততি দান করেছেন।

আয়াত: 134

وَجَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ

১৩৪. তিনি তোমাদেরকে আরো দিয়েছেন বাগান ও ঝর্ণাধারা।

আয়াত: 135

إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ

১৩৫. হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের ব্যাপারে কিয়ামতের সেই মহান দিনের আযাবের আশঙ্কা করছি।

আয়াত: 136

قَالُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡنَآ أَوَعَظۡتَ أَمۡ لَمۡ تَكُن مِّنَ ٱلۡوَٰعِظِينَ

১৩৬. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: তুমি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছো বা দাওনি তা সবই আমাদের নিকট সমান। আমরা কখনোই তোমার উপর ঈমান আনবো না। না আমরা কখনো আমাদের অনুসৃত পথ থেকে ফিরে আসবো।

এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:

• أفضلية أهل السبق للإيمان حتى لو كانوا فقراء أو ضعفاء.

ক. ঈমান আনা অগ্রগামী লোকদের শ্রেষ্ঠত্ব। যদিও তারা ফকির ও দুর্বল হোক না কেন।

• إهلاك الظالمين، وإنجاء المؤمنين سُنَّة إلهية.

খ. যালিমদেরকে ধ্বংস করা ও মু’মিনদেরকে বাঁচিয়ে দেয়া একটি ঐশী নিয়ম।

• خطر الركونِ إلى الدنيا.

গ. দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার ভয়াবহতা।

• تعنت أهل الباطل، وإصرارهم عليه.

ঘ. বাতিলপন্থীদের গাদ্দারি এবং তার উপর তাদের অবিচল থাকার পরিণতি ভয়াবহ।