কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ আয়াত: (36) সূরা: সূরা আন-নূর
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ
সে সব ঘরে [১] যাকে সমুন্নত করতে [২] এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ্‌ নির্দেশ দিয়েছেন [৩], সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে [৪],
[১] পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানুষের অন্তরে নিজের হেদায়াতের আলো রাখার একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এবং শেষে বলেছেন: এই নূর দ্বারা সে-ই উপকার লাভ করে, যাকে আল্লাহ্‌ চান ও তাওফীক দেন। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে এমন মুমিনদের আবাসস্থল ও স্থান বর্ণনা করা হয়েছে যে, এরূপ মুমিনদের আসল আবাসস্থল, যেখানে তারা প্রায়ই বিশেষতঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় দৃষ্টিগোচর হয়- সেসব গৃহ, যেগুলোকে উচ্চ রাখার জন্য এবং যেগুলোতে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলা আদেশ করেছেন। এসব গৃহে সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বদা এমন লোকেরা আল্লাহ্‌ তা‘আলার পবিত্ৰতা বর্ণনা করে, যাদের বিশেষ গুণাবলী পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে। অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এসব গৃহ হচ্ছে মসজিদ। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এ তাফসীরকেই অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন। [দেখুন-কুরতুবী, বাগভী]

[২] কোনো কোনো মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন মু‘মিনদের ঘর এবং সেগুলোকে উন্নত করার অর্থ সেগুলোকে নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত করা, নৈতিক মান রক্ষার জন্য তাতে মসজিদের ব্যবস্থা করা। এ অর্থের সমর্থনে আমরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে একটি হাদীস পাই যাতে তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাসগৃহের মধ্যেও মসজিদ অর্থাৎ সালাত আদায় করার বিশেষ জায়গা তৈরী করার এবং তাকে পবিত্র রাখার জন্য আদেশ করেছেন। [ইবন মাজহ ৭৫৮, ৭৫৯]

তবে অধিকাংশ মুফাসসির এ “ঘরগুলো”কে মসজিদ অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং এগুলোকে উন্নত করার অর্থ নিয়েছেন এগুলো নির্মাণ ও এগুলোকে মর্যাদা প্ৰদান করা। “সেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করতে আল্লাহ্‌ নির্দেশ দিয়েছেন।” এ শব্দগুলো বাহ্যত মসজিদ সংক্রান্ত ব্যাখ্যার বেশী সমর্থক দেখা যায়। তখন আয়াতের অর্থ হবে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা মসজিদসমূহকে সমুন্নত করার অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতি দেয়ার মানে আদেশ করা এবং উচ্চ করা মানে সম্মান করা। উচ্চ করার দু’টি অর্থ করা হয়ে থাকে-

[১] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, উচ্চ করার অর্থ আল্লাহ্‌ তা‘আলা মসজিদসমূহে অনৰ্থক কাজ ও কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন।
হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, رِفْعُ مَسَا جِدَ বলে মসজিদসমূহের সম্মান, ইযযত ও সেগুলোকে নাপাকী ও নোংরা বস্তু থেকে পবিত্র রাখা বুঝানো হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “মসজিদে থুথু ফেলা গোনাহ আর তার কাফফারা হলো তা দাফন করা, মিটিয়ে দেয়া।” [বুখারী ৪১৫, মুসলিম ৫৫২]

[২] ইকরিমা ও মুজাহিদ বলেন, رفع বলে মসজিদ নির্মাণ বুঝানো হয়েছে; যেমন কা‘বা নির্মাণ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে:

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ

এখানে رفع قو اعد বলে ভিত্তি নির্মাণ বুঝানো হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে আল্লাহ্‌র জন্য মসজিদ বানায়, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন।” [বুখারী ৪৫০, মুসলিম ৫৩৩]

প্রকৃত কথা এই যে, تُرْفَعَ শব্দের অর্থ মসজিদ নির্মাণ করা, পাক-পবিত্র রাখা এবং মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর, কুরতুবী] এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন ও পেঁয়াজ খেয়ে মুখ না ধুয়ে মসজিদে গমন করতে নিষেধ করেছেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যাক্তির মুখে রসুন বা পেঁয়াজের দুৰ্গন্ধ অনুভব করতেন, তাকে মসজিদ থেকে বের করে ‘বাকী’ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেন: যে ব্যাক্তি রসুন-পেঁয়াজ খেতে চায়, সে যেন উত্তম রূপে পাকিয়ে খায় যাতে দুৰ্গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়।” [মুসলিম ৫৬৭]

[৩] আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যাক্তি গৃহে অযু করে ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব সেই ব্যক্তির সমান, যে ইহরাম বেঁধে গৃহ থেকে হজ্জের জন্য যায়। যে ব্যাক্তি এশরাকের সালাত আদায়ের জন্য গৃহ থেকে অযু করে মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব উমরাকারীর অনুরূপ। এক সালাতের পর অন্য সালাত ইল্লিয়্যীনে লিখিত হয় যদি উভয়ের মাঝখানে কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজ না করে।” [আবু দাউদ ৫৫৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, “যারা অন্ধকারে মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।” [আবু দাউদ ৫৬১, তিরমিযী ২২৩]

[৪] আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করা দ্বারা এখানে তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা), তাহমীদ (প্ৰশংসা বর্ণনা), নফল সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ-নসীহত, দীনী শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার যিকর বুঝানো হয়েছে। [তাবারী, সা‘দী, মুয়াসসার]
আরবি তাফসীরসমূহ:
 
অর্থসমূহের অনুবাদ আয়াত: (36) সূরা: সূরা আন-নূর
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।

বন্ধ