কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ আয়াত: (63) সূরা: সূরা আন-নূর
لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ
তোমরা রাসূলের আহ্বানকে তোমাদের একে অপরের আহ্বানের মত গণ্য কর না; তোমাদের মধ্যে যারা একে অপরকে আড়াল করে অলক্ষ্যে সরে পড়ে আল্লাহ্‌ তো তাদেরকে জানেন [১]। কাজেই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি [২]।
[১] আয়াতের অর্থ নির্ধারণে বেশ কয়েকটি মত এসেছে,

(এক)

لَاتَجْعَلُوْادُعَآءَالرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ

এর অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরফ থেকে মুসলিমদেরকে ডাকা। (ব্যাকরণগত কায়দার দিক দিয়ে এটা إضافةإلى الفا عل) আয়াতের অর্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ডাকেন তখন একে সাধারণ মানুষের ডাকার মত মনে করো না যে, সাড়া দেয়া না দেয়া ইচ্ছাধীন; বরং তখন সাড়া দেয়া ফরয হয়ে যায় এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া হারাম হয়ে যায়। আয়াতের বর্ণনাধারার সাথে এই তাফসীর অধিক নিকটবর্তী ও মিলে যায়। (দুই) আয়াতের অপর একটি তাফসীর ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইবন কাসীর, কুরতুবী প্রমুখ বৰ্ণনা করেছেন। তা এই যে, دُعَآءَالرَّسُوْلِ এর অর্থ মানুষের তরফ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো কাজের জন্য ডাকা। (ব্যাকরণগত কায়দার দিক দিয়ে এটা إضافةإلى المفعول)। এই তাফসীরের ভিত্তিতে আয়াতের অর্থ এই যে, যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো প্রয়োজনে আহ্বান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তার নাম নিয়ে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবে না- এটা বেআদবী; বরং সম্মানসূচক উপাধি দ্বারা ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া নবীআল্লাহ্‌’ বলবে। [বাগভী]

[২] অর্থাৎ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথের বিরোধিতা করে, তার প্রবর্তিত শরীয়ত ও আইন অনুসারে জীবন পরিচালনা করে না, তার সুন্নাতের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের অন্তরে কুফরী, নিফাকী, বিদ‘আত ইত্যাদি লালন করে অথবা তারা তাতে নিপতিত হওয়ার আশংকা করে। আরো আশংকা করে যে, তাদের উপর কঠোর শাস্তি আসবে, হত্যা, দণ্ডবিধি, জেল ইত্যাদি দুনিয়াতে এবং আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যাক্তি এমন কোনো কাজ করবে যা আমার প্রদর্শিত পথের উপর নয়, তা তার উপরই ফিরিয়ে দেয়া হবে, গ্ৰহণযোগ্য হবে না।” [বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮]

অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার এবং তোমাদের মাঝে উদাহরণ হলো এমন এক ব্যাক্তির, যে আগুন জ্বালালো, তারপর সে আলোয় যখন চতুর্দিক আলোকিত হলো, তখন দেখা গেল যে, পোকা-মাকড় এবং ঐসমস্ত প্ৰাণী যা আগুনে পড়ে, সেগুলো আগুনে পড়তে লাগলো। তখন সে ব্যক্তি তাদেরকে আগুন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলো। কিন্তু সেগুলো তাকে ছাড়িয়ে সে আগুনে ঝাঁপ দিতে থাকলো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই হলো আমার এবং তোমাদের উদাহরণ। আমি তোমাদের কোমরের কাপড়ের গিরা ধরে আগুন থেকে দূরে রাখছি এবং বলছি: আগুন থেকে দূরে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছ।” [বুখারী ৬৪৮৩, মুসিলিম ২২৮৪]
আরবি তাফসীরসমূহ:
 
অর্থসমূহের অনুবাদ আয়াত: (63) সূরা: সূরা আন-নূর
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।

বন্ধ