কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আদ-দুখান   আয়াত:

সূরা আদ-দুখান

حمٓ
হা - মীম।
৪৪- সূরা আদ-দুখান
৫৯ আয়াত, মক্কী
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡكِتَٰبِ ٱلۡمُبِينِ
শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের [১]।
[১] ‘সুস্পষ্ট কিতাব' বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। [সা'দী, মুয়াসসার, জালালাইন]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে [১]; নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী।
[১] গ্রহণযোগ্য তাফসীরবিদদের মতে এখানে কদরের রাত্ৰি বোঝানো হয়েছে, যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয়। সূরা কদরে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, পবিত্র কুরআন শবে-কদরে নাযিল হয়েছে। এতে বোঝা গেল যে, এখানেও বরকতের রাত্রি বলে শবে-কদরই বোঝানো হয়েছে। এ রাত্রিকে ‘মোবারক’ বলার কারণ এই যে, এ রাত্ৰিতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা পয়গম্বরগণের প্রতি যত কিতাব নাযিল করেছেন, তা সবই রমযান মাসেরই বিভিন্ন তারিখে নাযিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সহীফাসমূহ রমযানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ছয় তারিখে, যাবুর বার তারিখে, ইঞ্জীল আঠার তারিখে এবং কুরআন চব্বিশ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর (পঁচিশের রাত্ৰিতে) অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১০৭]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ
সে রাতে প্রত্যেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরকৃত হয় [১],
[১] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ কুরআন অবতরণের রাত্রি, অর্থাৎ শবে-কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয়, যা পরবর্তী শবে-কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ এ বছর কারা কারা জন্মগ্রহণ করবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কি পরিমাণ রিযিক দেয়া হবে। মাহদভী বলেন, এর অর্থ এই যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরে পূর্বাহ্নে, স্থিরীকৃত সকল ফয়সালা এ রাত্রিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অৰ্পণ করা হয়। কেননা কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা এসব ফয়সালা মানুষের জন্মের পূর্বেই সৃষ্টিলগ্নে লিখে দিয়েছেন। অতএব, এ রাত্রিতে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে, যে ফেরেশতাগণের মাধ্যমে ফয়সালা ও তাকদীর প্রয়োগ করা হয়, এ রাত্ৰিতে সারা বছরের বিধানাবলী তাদের কাছে অৰ্পণ করা হয়। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তুমি কোনো মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪৪৮-৪৪৯]
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡرٗا مِّنۡ عِندِنَآۚ إِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِينَ
আমাদের পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, নিশ্চয় আমরা রাসূল প্রেরণকারী
আরবি তাফসীরসমূহ:
رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ
আপনার রবের রহমতস্বরূপ ; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ—
আরবি তাফসীরসমূহ:
رَبِّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَآۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ
আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ رَبُّكُمۡ وَرَبُّ ءَابَآئِكُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ
তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান ; তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও রব।
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ هُمۡ فِي شَكّٖ يَلۡعَبُونَ
বরং তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খেল -- তামাসা করছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱرۡتَقِبۡ يَوۡمَ تَأۡتِي ٱلسَّمَآءُ بِدُخَانٖ مُّبِينٖ
অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ [১],
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে উল্লেখিত ধোঁয়া সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কেয়ামতের অন্যতম আলামত বা কেয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি আলী, ইবন আব্বাস, ইবন ওমর, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বানী অতীতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দো'আর ফলে মক্কাবাসীদের উপর অর্পিত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গিয়েছিল এবং মৃত জন্তু পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধুম্র দৃষ্টিগোচর হত। এ উক্তি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখের। তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে উত্থিত ধূলিকণাকে ধুম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আ‘রাজ প্রমুখের। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ই সমধিক প্রসিদ্ধ। তৃতীয় উক্তি ইবন কাসীরের মতে অগ্রাহ্য। সহীহ হাদীসসমূহে দ্বিতীয় উক্তিই অবলম্বিত হয়েছে। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ের বর্ণনাসমূহ নিম্নরূপ:

হুযায়ফা ইবন আসীদ বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। আমরা তখন পরস্পর কেয়ামতের সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ, ততদিন কেয়ামত হবে না- (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (২) দোখান তথা ধুম্র, (৩) দাব্বা (বা বিচিত্র ধরণের প্রাণী), (৪) ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, (৫) ঈসা আলাইহিস্‌ সালামের অবতরণ, (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধাস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধস, (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধস, (১০) আদন থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যেখানে রাত্রিযাপন করতে আসবে, অগ্নিও থেমে যাবে, যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্যে আসবে, সেখানে অগ্নিও থেমে যাবে। [মুসলিম ২৯০১] এছাড়া কিছু সহীহ ও হাসান হাদীসও একথা প্রমাণ করে যে, ‘দোখান’ ধুম্র কেয়ামতের ভবিষ্যৎ আলামতসমূহের অন্যতম। কুরআনের বাহ্যিক ভাষাও এর সাক্ষ্য দেয়।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, কাফেররা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত কবুল করতে অস্বীকার করল এবং কুফৱীকেই আঁকড়ে রইল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর দো’আ করলেন যে, হে আল্লাহ এদের উপর ইউসুফ আলাইহিস সালামের আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে কাফেররা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে পতিত হল। এমনকি, তারা অস্থি এবং মৃত জন্তুও ভক্ষণ করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধুম্র ব্যতীত কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। এক বর্ণনায় আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তীব্রতায় সে কেবল ধুম্রের মত দেখত। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ তার বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ এ আয়াতখানি তেলাওয়াত করলেন। দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত জনগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করল, আপনি আপনার মুদার গোত্রের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টির দো'আ করুন। নতুবা আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আ করলে, বৃষ্টি হল। তখন

إِنَّا كَاشِفُواْ ٱلۡعَذَابِ قَلِيلًاۚ

আয়াত নাযিল হল। অর্থাৎ, আমরা কিছু দিনের জন্যে তোমাদের থেকে আযাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে গেলে আবার কুফরের দিকে ফিরে যাবে। বাস্তবে তাই হল, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। তখন আল্লাহ তা'আলা

يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰى اِنَّامُنْتَقِمُونَ

আয়াত নাযিল করলেন। অর্থাৎ যেদিন আমরা প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিনের ভয় কর। অতঃপর ইবন মাসউদ বললেন, এই প্রবল পাকড়াও বদর যুদ্ধে হয়ে গেছে। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর তিনি আরও বললেন, পাঁচটি বিষয় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ দোখান তথা ধুম্র, রোম (এর পারসিকদের উপর জয়লাভ), চাঁদ (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (যা বদরের প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল) ও লেযাম (বা স্থায়ী আযাব)। [বুখারী ৪৮০৯, মুসলিম ২৭৯৮]
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَغۡشَى ٱلنَّاسَۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٞ
তা আবৃত করে ফেলবে লোকদেরকে। এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
رَّبَّنَا ٱكۡشِفۡ عَنَّا ٱلۡعَذَابَ إِنَّا مُؤۡمِنُونَ
(তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে শাস্তি দূর করুন, নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَنَّىٰ لَهُمُ ٱلذِّكۡرَىٰ وَقَدۡ جَآءَهُمۡ رَسُولٞ مُّبِينٞ
তারা কি করে উপদেশ গ্ৰহণ করবে? অথচ ইতোপূর্বে তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট এক রাসূল;
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَقَالُواْ مُعَلَّمٞ مَّجۡنُونٌ
তারপর তারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং বলেছিল, ‘এ এক শিক্ষাপ্রাপ্ত পাগল !’
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّا كَاشِفُواْ ٱلۡعَذَابِ قَلِيلًاۚ إِنَّكُمۡ عَآئِدُونَ
নিশ্চয় আমরা অল্প সময়ের জন্য শাস্তি রহিত করব --- (কিন্তু) নিশ্চয় তোমরা তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ نَبۡطِشُ ٱلۡبَطۡشَةَ ٱلۡكُبۡرَىٰٓ إِنَّا مُنتَقِمُونَ
যেদিন আমরা প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন নিশ্চয় আমরা হব প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَلَقَدۡ فَتَنَّا قَبۡلَهُمۡ قَوۡمَ فِرۡعَوۡنَ وَجَآءَهُمۡ رَسُولٞ كَرِيمٌ
আর অবশ্যই এদের আগে আমরা ফির’আউন সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তাদের কাছেও এসেছিলেন এক সম্মানিত রাসূল [১],
[১] মূল আয়াতে كريم শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি যখন মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন তার দ্বারা বুঝানো হয় এমন ব্যক্তিকে যে অত্যন্ত ভদ্র ও শিষ্ট আচার-আচরণ এবং অতীব প্রশংসনীয় গুণাবলীর অধিকারী। সাধারণ গুণাবলী বুঝাতে এ শব্দ ব্যবহৃত হয় না। এখানে মূসা আলাইহিস সালামকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী, কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَنۡ أَدُّوٓاْ إِلَيَّ عِبَادَ ٱللَّهِۖ إِنِّي لَكُمۡ رَسُولٌ أَمِينٞ
(তিনি ফিরআউনকে বলেছিলেন) ‘আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও [১]। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল।
[১] মূল আয়াতে أدُّوْا বলা হয়েছে। আয়াতাংশের একটি অনুবাদ হচ্ছে আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে সোর্পদ করো। এই অনুবাদ অনুসারে এটা ইতোপূর্বে সূরা আল-আ’রাফ এর ১০৫, সূরা ত্বাহার ৪৭ এবং সূরা আশ-শু'আরার ১৭ নং আয়াতে ‘বনী ইসরাঈলদের আমার সাথে যেতে দাও’ বলে যে দাবী করা হয়েছে সেই দাবীর সমার্থক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَن لَّا تَعۡلُواْ عَلَى ٱللَّهِۖ إِنِّيٓ ءَاتِيكُم بِسُلۡطَٰنٖ مُّبِينٖ
‘আর তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করো না, নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসব।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنِّي عُذۡتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمۡ أَن تَرۡجُمُونِ
‘আর নিশ্চয় আমি আমার রব ও তোমাদের রবের আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যাতে তোমরা আমাকে পাথরের আঘাত হানতে না পার [১]।
[১] تِرْجُمُوْنِ শব্দের অর্থ প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করা। এর অপর অর্থ কাউকে গালি দেয়াও হয়। এখানে উভয় অর্থই হতে পারে, কিন্তু প্ৰথম অর্থ নেয়াই অধিক সঙ্গত। কেননা ফির’আউনের সম্প্রদায় মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল। [তাবারী, ইবন কাসীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِن لَّمۡ تُؤۡمِنُواْ لِي فَٱعۡتَزِلُونِ
‘আর যদি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না কর, তবে তোমরা আমাকে ছেড়ে যাও।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَدَعَا رَبَّهُۥٓ أَنَّ هَٰٓؤُلَآءِ قَوۡمٞ مُّجۡرِمُونَ
অতঃপর মূসা তার রবকে ডাকলেন, ‘নিশ্চয় এরা এক অপরাধী সম্পপ্রদায়।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَسۡرِ بِعِبَادِي لَيۡلًا إِنَّكُم مُّتَّبَعُونَ
(আল্লাহ্ বললেন) ‘সুতরাং তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে পড়ুন, নিশ্চয় তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱتۡرُكِ ٱلۡبَحۡرَ رَهۡوًاۖ إِنَّهُمۡ جُندٞ مُّغۡرَقُونَ
আর সমুদ্রকে স্থির থাকতে দিন [১], নিশ্চয় তারা হবে এক ডুবন্ত বাহিনী।
[১] মূসা আলাইহিস সালাম সঙ্গীগণসহ সমুদ্র পার হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে কামনা করবেন যে, সমুদ্র পুনরায় আসল অবস্থায় ফিরে যাক, যাতে ফির’আউনের বাহিনী পার হতে না পারে। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে বলে দিলেন, তোমরা পার হওয়ার পর সমুদ্রকে শান্ত ও আচল অবস্থায় থাকতে দাও এবং পুনরায় পানি চলমান হওয়ার চিন্তা করো না- যাতে ফির’আউন শুষ্ক ও তৈরী পথ দেখে সমুদ্রের মধ্যস্থলে প্ৰবেশ করে। তখন আমি সমুদ্রকে চলমান করে দেব এবং তারা নিমজ্জিত হবে। [দেখুন, তাবারী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَمۡ تَرَكُواْ مِن جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ
তারা পিছনে রেখে গিয়েছিল অনেক উদ্যান ও প্রস্রবণ;
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَزُرُوعٖ وَمَقَامٖ كَرِيمٖ
শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য প্রাসাদ,
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَنَعۡمَةٖ كَانُواْ فِيهَا فَٰكِهِينَ
আর বিলাস উপকরণ, তাতে তারা আনন্দ পেত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَذَٰلِكَۖ وَأَوۡرَثۡنَٰهَا قَوۡمًا ءَاخَرِينَ
এরূপই ঘটেছিল এবং আমরা এ সবকিছুর উত্তরাধিকারী করেছিলাম ভিন্ন [১] সম্প্রদায়কে।
[১] অন্যত্র বলা হয়েছে যে, এই ভিন্ন জাতি হচ্ছে বনী-ইসরাঈল। [সূরা আশ-শু'আরা ৫৯] অবশ্য বনী-ইসরাঈল পুনরায় মিসরে আগমন করেছিল বলে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুরা আশ-শু'আরার ৫৯ নং আয়াতের তফসীরে এর বিস্তারিত জবাবও দেয়া হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَا بَكَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلسَّمَآءُ وَٱلۡأَرۡضُ وَمَا كَانُواْ مُنظَرِينَ
অতঃপর আসমান এবং যমীন তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তারা অবকাশপ্ৰাপ্তও ছিল না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ نَجَّيۡنَا بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ مِنَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡمُهِينِ
আর অবশ্যই আমরা উদ্ধার করেছিলাম বণী ইসরাঈলকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হতে
আরবি তাফসীরসমূহ:
مِن فِرۡعَوۡنَۚ إِنَّهُۥ كَانَ عَالِيٗا مِّنَ ٱلۡمُسۡرِفِينَ
ফির’আউন থেকে; নিশ্চয় সে ছিল সীমালঙ্ঘনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدِ ٱخۡتَرۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ عِلۡمٍ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ
আর আমরা জেনে শুনেই তাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর নির্বাচিত করেছিলাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَءَاتَيۡنَٰهُم مِّنَ ٱلۡأٓيَٰتِ مَا فِيهِ بَلَٰٓؤٞاْ مُّبِينٌ
আর আমরা তাদেরকে এমন নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম যাতে ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা [১] ;
[১] এখানে লাঠি, দীপ্তিময় শুভ্ৰ হাত ইত্যাদি মু'জিযা বোঝানো হয়েছে। بلاء শব্দের দু'অৰ্থ- পুরস্কার ও পরীক্ষা। এখানে উভয় অর্থ অনায়াসে সম্ভবপর। [দেখুন, কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ لَيَقُولُونَ
নিশ্চয় তারা বলেই থাকে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هِيَ إِلَّا مَوۡتَتُنَا ٱلۡأُولَىٰ وَمَا نَحۡنُ بِمُنشَرِينَ
‘আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই এবং আমরা পুনরূত্থিত হওয়ার নই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأۡتُواْ بِـَٔابَآئِنَآ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ
অতএব, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে নিয়ে আস।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَهُمۡ خَيۡرٌ أَمۡ قَوۡمُ تُبَّعٖ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ أَهۡلَكۡنَٰهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ
তারা কি শ্রেষ্ঠ না তুব্বা’ সম্প্রদায় [১] ও তাদের পূর্বে যারা ছিল তারা? আমরা তাদেরকে ধ্বংস করেছিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অপরাধী।
[১] কুরআনে দু’জায়গায় তুব্বার উল্লেখ রয়েছে- এখানে এবং সুরা ক্বাফে। কিন্তু উভয় জায়গায় কেবল নামই উল্লেখ করা হয়েছে-কোনো বিস্তারিত ঘটনা বিবৃত হয়নি। তাই এরা কোন জনগোষ্ঠী এ সম্পর্কে তফসীরবিদগণ বিভিন্ন উক্তি করেছেন। বাস্তবে তুব্বা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়, বরং এটা ইয়ামনের হিমইয়ারী সম্রাটদের উপাধিবিশেষ। তারা দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়ামনের পশ্চিমাংশকে রাজধানী করে আরব, শাম, ইরাক ও আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করেছে। এই সম্রাটগণকে তাবাবি’য়ায়ে-ইয়ামন বলা হয়। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে তাদের মধ্যবর্তী এক সম্রাটকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যার নাম আস’আদ আবু কুরাইব ইবন মাদিকারেব। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের কমপক্ষে সাত’শ বছর পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। হিমইয়ারী সম্রাটদের মধ্যে তার রাজত্বকাল সর্বাধিক ছিল। সে তার শাসনামলে অনেক দেশ জয় করে সমরকন্দ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বৰ্ণনা করেন, এই দিগ্বিজয়কালে একবার সে মদীনা মুনাওয়ারার জনপদ অতিক্রম করে এবং তা করায়ত্ত করার ইচ্ছা করে। মদীনাবাসীরা দিনের বেলায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত এবং রাত্ৰিতে তার আতিথেয়তা করত। ফলে সে লজ্জিত হয়ে মদীনা জয়ের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। এ সময়েই মদীনার দু’জন ইহুদী আলেম তাকে হুশিয়ার করে দেয় যে, এই শহর সে করায়ত্ত করতে পারবে না। কারণ, এটা শেষ নবীর হিজরতভূমি। সম্রাট ইহুদী আলেমদ্বয়কে সাথে নিয়ে ইয়ামন প্ৰব্যাবর্তন করে এবং তাদের শিক্ষা ও প্রচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্ৰহণ করে। অতঃপর তার সম্প্রদায়ও সে দীন গ্রহণ করে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা আবার মূর্তিপূজা ও অগ্নিপূজা শুরু করে দেয়। ফলে তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়। এ থেকে জানা যায় যে, তুব্বার সম্প্রদায় ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল, কিন্তু পরে পথভ্রষ্ট হয়ে আল্লাহর গযবে পতিত হয়েছিল। এ কারণেই কুরআনের উভয় জায়গায় তুব্বার সম্প্রদায় উল্লেখ করা হয়েছে; শুধু তুব্বা উল্লেখিত হয়নি? [দেখুন, তাবারী, ইবন কাসীর, কুরতুবী]

কোনো কোনো হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা তুব্বাকে মন্দ বলো না; কারণ সে ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল। [মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৪০]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ
আর আমরা আসমানসমূহ,যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যকার কোনো কিছুই খেলার ছলে সৃষ্টি করিনি;
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ
আমরা এ দু'টিকে যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ يَوۡمَ ٱلۡفَصۡلِ مِيقَٰتُهُمۡ أَجۡمَعِينَ
নিশ্চয় ফয়সালার দিনটি তাদের সবার জন্য নির্ধারিত সময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ لَا يُغۡنِي مَوۡلًى عَن مَّوۡلٗى شَيۡـٔٗا وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ
সেদিন এক বন্ধু অন্য বন্ধুর কোনো কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যও পাবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا مَن رَّحِمَ ٱللَّهُۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلرَّحِيمُ
তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন তার কথা স্বতন্ত্র। নিশ্চয় তিনিই মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ
নিশ্চয় যাক্কূম গাছ হবে [১] ---
[১] যাক্কুমের স্বরূপ সম্পর্কে সূরা আস-সাফফাতে কিছু জরুরী বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, কুরআনের আয়াত থেকে বাহ্যতঃ জানা যায়, যাক্কুম কাফেরদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করার আগেই খাওয়ানো হবে। [ফাতহুল কাদীর] কেননা এখানে মানুষকে খাওয়ানোর পর জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাওয়ার আদেশ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সূরায় বলা হয়েছে,

لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ - فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ- فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ

[সূরা আল- ওয়াকি'আ ৫২-৫৬]
আরবি তাফসীরসমূহ:
طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ
পাপীর খাদ্য ;
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ
গলিত তামার মত, পেটের মধ্যে ফুটতে থাকবে
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ
ফুটন্ত পানি ফুটার মত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ
(বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ
তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির শাস্তি ঢেলে দাও -
আরবি তাফসীরসমূহ:
ذُقۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡكَرِيمُ
(বলা হবে) ‘আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত !
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ هَٰذَا مَا كُنتُم بِهِۦ تَمۡتَرُونَ
‘নিশ্চয় এটা তা-ই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ
নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে [১]—
[১] শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গা অর্থ এমন জায়গা যেখানে কোনো প্রকার আশংকা থাকবে না। কোনো দুঃখ, অস্থিরতা, বিপদ, আশংকা এবং পরিশ্রম ও কষ্ট থাকবে না। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জান্নাতবাসীদের বলে দেয়া হবে, তোমরা এখানে চিরদিন সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না, চিরদিন জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না চিরদিন সুখী থাকবে কখনো দুর্দশাগ্ৰস্ত হবে না এবং চিরদিন যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না। [মুসলিম ২৮৩৭]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ
উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ
তারা পরবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখি হয়ে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ
এরূপই ঘটবে; আর আমরা তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর নয়না হূরদের সাথে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ
সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ
প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না [১]। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন-
[১] অর্থাৎ একবার মৃত্যুর পর আর কোনো মৃত্যু হবে না। এ নিয়ম জাহান্নামীদের জন্যেও। কিন্তু সেটা তাদের জন্যে অধিক কঠোর এবং জান্নাতীদের জন্যে অধিক আনন্দ ও সুখের বিষয় হবে। কারণ, যত বড় নেয়ামতই হোক, তা বিলুপ্ত হওয়ার কল্পনা নিশ্চিতরূপেই মনে বিপদের রেখাপাত করে। জান্নাতীরা যখন কল্পনা করবে যে, এসব নেয়ামত তাদের কাছ থেকে কখনও ছিনিয়ে নেয়া হবে না, তখন এটা তাদের আনন্দকে আরও বৃদ্ধি করে দেবে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكَۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ
আপনার রবের অনুগ্রহস্বরূপ [১]। এটাই তো মহাসাফল্য।
[১] এ আয়াতে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া এবং জান্নাত লাভ করাকে আল্লাহ তাঁর দয়ার ফলশ্রুতি বলে আখ্যায়িত করছেন। এর দ্বারা মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে অবহিত করা উদ্দেশ্য যে, আল্লাহর অনুগ্রহ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির ভাগ্যেই এই সফলতা আসতে পারে না। আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া ব্যক্তি তার সৎকর্ম করার তাওফীক বা সামৰ্থ কিভাবে লাভ করবে? তাছাড়া ব্যক্তি দ্বারা যত উত্তম কাজই সম্পন্ন হোক না কেন তা পূর্ণাঙ্গ ও পূর্ণতর হতে পারে না। সুতরাং সে কাজ সম্পর্কে দাবী করে একথা বলা যাবে না যে, তাতে কোনো ত্রুটি বা অপূর্ণতা নেই। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি বান্দার দুর্বলতা এবং তার কাজকর্মের অপূর্ণতাসমূহ উপেক্ষা করে তার খেদমত কবুল করেন এবং তাকে পুরস্কৃত করে ধন্য করেন। অন্যথায়, তিনি যদি সূক্ষ্মভাবে হিসেব নিতে শুরু করেন তাহলে কার এমন দুঃসাহস আছে, যে নিজের বাহুবলে জান্নাত লাভ করার দাবী করতে পারে? হাদীসে একথাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমল করো এবং নিজের সাধ্যমত সর্বাধিক সঠিক কাজ করার চেষ্টা করো। জেনে রাখো, কোনো ব্যক্তিকে শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।’ লোকেরা বললো: হে আল্লাহর রাসূল, আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিও শুধু আমার আমলের জোরে জান্নাতে যেতে পারবো না। তবে আমার রব যদি তার রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করেন।’ [বুখারী ৬৪৬৭]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِنَّمَا يَسَّرۡنَٰهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ
অতঃপর নিশ্চয় আমরা আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱرۡتَقِبۡ إِنَّهُم مُّرۡتَقِبُونَ
কাজেই আপনি প্রতীক্ষা করুন, নিশ্চয় তারা প্ৰতীক্ষমাণ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আদ-দুখান
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।

বন্ধ