কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-মুদ্দাসসির   আয়াত:

সূরা আল-মুদ্দাসসির

يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ
হে বস্ত্ৰাচ্ছাদিত! [১]
[১] সূরা আল-মুদ্দাস্সির সম্পূর্ণ প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্যতম। এ কারণেই কেউ কেউ একে সর্বপ্রথম অবতীর্ণ সুরাও বলেছেন। কিন্তু সহীহ বৰ্ণনা অনুযায়ী সর্বপ্রথম সূরা আল-আলাকের প্রাথমিক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। [ইবন কাসীর]

________________________________________

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:

আয়াত সংখ্যা: ৫৬ আয়াত।

নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে


[১] হাদীসে এসেছে, সর্ব প্রথম হেরা গিরি গুহায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফেরেশতা জিবরীইল আগমন করে ইকরা সূরার প্রাথমিক আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান। ফেরেশতার এই অবতরণ ও ওহীর তীব্ৰতা প্ৰথম পর্যায়ে ছিল। ফলে এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট গমন করলেন এবং তার কাছে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ওহীর আগমন বন্ধ থাকে। বিরতির এই সময়কালকে “ফ্যাতরাতুল ওহী” বলা হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে এই সময়কালের উল্লেখ করে বলেন, একদিন আমি পথ চলা অবস্থায় হঠাৎ একটি আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, হেরা গিরিগুহার সেই ফেরেশতা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে এক জায়গায় একটি ঝুলন্ত চেয়ারে উপবিষ্ট রয়েছেন। তাকে এই আকৃতিতে দেখে আমি প্রথম সাক্ষাতের ন্যায় আবার ভীত ও আতংকিত হয়ে পড়লাম। আমি গৃহে ফিরে এলাম এবং গৃহের লোকজনকে বললাম, আমাকে বস্ত্ৰাবৃত করে দাও। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হল। [বুখারী ৪, মুসলিম ১৬১]
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُمۡ فَأَنذِرۡ
উঠুন, অতঃপর সতর্ক করুন [১],
[১] এখানে সর্বপ্রথম নির্দেশ হচ্ছে, قُم অর্থাৎ উঠুন। এর আক্ষরিক অর্থ ‘দাঁড়ান’ও হতে পারে। অর্থাৎ আপনি বস্ত্ৰাচ্ছাদন পরিত্যাগ করে দন্ডায়মান হোন। এখানে কাজের জন্যে প্রস্তুত হওয়ার অর্থ নেয়াও অবান্তর নয়। উদ্দেশ্য এই যে, এখন আপনি সাহস করে জনশুদ্ধির দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হন। أنذر শব্দটি إنذار থেকে উদ্ভুত অর্থ সতর্ক করা। এখানে মক্কার কাফেরদেরকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ
আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ
আর আপনার পরিচ্ছদ পবিত্ৰ করুন [১],
[১] এখানে বর্ণিত ثياب শব্দটি ثوب এর বহুবচন। এর আসল ও আক্ষরিক অর্থ কাপড়। কখনও কখনও অন্তর, মন, চরিত্র ও কর্মকেও বলা হয়। এটি একটি ব্যাপক অৰ্থবোধক কথা। এর একটি অর্থ হল, আপনি আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ নাপাক বস্তু থেকে পবিত্র রাখুন। কারণ, শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতা এবং ‘রূহ’ বা আত্মার পবিত্ৰতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। [সা‘দী] একথাটির আরেকটি অর্থ হলো, নিজের পোশাক পরিচ্ছদ নৈতিক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র রাখুন। নিজেকে পবিত্র রাখুন। অন্য কথায় এর অর্থ হলো নৈতিক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র থাকা এবং উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া। অর্থাৎ নিজের নৈতিক চরিত্রকে পবিত্র রাখুন এবং সব রকমের দোষ-ত্রুটি থেকে দূরে থাকুন। [কুরতুবী] সুতরাং নির্দেশের অর্থ হবে এই যে, আপন পোশাক ও দেহকে বাহ্যিক অপবিত্ৰতা থেকে পবিত্র রাখুন এবং অন্তর ও মনকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও চিন্তাধারা থেকে এবং কুচরিত্র থেকে মুক্ত রাখুন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্রতা পছন্দ করেন। এক আয়াতে আছে,

اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ [সূরা আল-বাকারাহ ২২২]

তাছাড়া হাদীসে ‘বিত্রতাকে ঈমানের অর্ধাংশ’ [মুসলিম ২২৩] বলা হয়েছে। তাই মুসলিমকে সর্বাবস্থায় শরীর, স্থান ও পোশাককে বাহ্যিক নাপাকী থেকে এবং অন্তরকে আভ্যন্তরীণ অশুচি, যেমন লোক-দেখানো, অহংকার ইত্যাদি থেকে পবিত্র রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে। [সা‘দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ
আর শির্ক পরিহার করে চলুন [১],
[১] আয়াতে উল্লেখিত الرجز শব্দের এক অর্থ, শাস্তি। অর্থাৎ শাস্তিযোগ্য কাজ। [ফাতহুল কাদীর] এখানে এর অর্থ হতে পারে, পৌত্তলিকতা ও প্রতিমা পূজা। তাছাড়া সাধারণভাবে সকল গোনাহ ও অপরাধ বোঝানোর জন্যও শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে। তাই আয়াতের অর্থ এই যে, প্রতিমা পূজা, শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড অথবা গোনাহ্ পরিত্যাগ করুন। সকল প্রকার ছোট ও বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করুন। [সা’দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ
আর বেশী পাওয়ার প্রত্যাশায় দান করবেন না [১]।
[১] এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হলো, আপনি যার প্রতিই ইহ্সান বা অনুগ্রহ করবেন, নিঃস্বাৰ্থভাবে করবেন। আপনার অনুগ্রহ ও বদান্যতা এবং দানশীলতা ও উত্তম আচরণ হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ইহ্সান বা মহানুভবতার বিনিময়ে কোনো প্রকার পার্থিব স্বাৰ্থ লাভের বিন্দুমাত্ৰ আকাঙ্খাও করবেন না; বেশি পাওয়ার আশায়ও ইহ্সান করবেন না। দ্বিতীয় অর্থ হলো, নবুওয়াতের যে দায়িত্ব আপনি পালন করছেন এবং এর বিনিময়ে কোনো প্রকার ব্যক্তি স্বাৰ্থ উদ্ধার করবেন না; যদিও অনেক বড় ও মহান একটি কাজ করে চলেছেন কিন্তু নিজের দৃষ্টিতে নিজের কাজকে বড় কাজ বলে কখনো মনে করবেন না এবং কোনো সময় এ চিন্তাও যেন আপনার মনে উদিত না হয় যে, নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করে আর এ কাজে প্রাণপণ চেষ্টা-সাধনা করে আপনি আপনার রবের প্রতি কোনো অনুগ্রহ করছেন। [দেখুন, কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ
আর আপনার রবের জন্যেই ধৈর্য ধারণ করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِذَا نُقِرَ فِي ٱلنَّاقُورِ
অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে [১]
[১] ناقور শব্দের অর্থ শিংগা এবং نُقِرَ বলে শিংগায় ফুঁ দিয়ে আওয়াজ বের করা বোঝানো হয়েছে। এখানে শিঙ্গার দ্বিতীয় ফুঁ তথা কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে জড়ো হওয়ার জন্য যে ফুঁক দেয়া হবে তা উদ্দেশ্য। [বাগভী, সা‘দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَذَٰلِكَ يَوۡمَئِذٖ يَوۡمٌ عَسِيرٌ
সেদিন হবে এক সংকটের দিন-
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ غَيۡرُ يَسِيرٖ
যা কাফিরদের জন্য সহজ নয় [১]।
[১] এ বাক্যটি থেকে স্বতঃই প্রতিভাত হয় যে, সেদিনটি ঈমানদারদের জন্য হবে খুবই সহজ এবং এর সবটুকু কঠোরতা সত্যকে অমান্যকারীদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। [সা‘দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
ذَرۡنِي وَمَنۡ خَلَقۡتُ وَحِيدٗا
ছেড়ে দিন আমাকে ও যাকে আমি সৃষ্টি করেছি একাকী [১]।
[১] একথাটির দু‘টি অর্থ হতে পারে এবং দু‘টি অর্থই সঠিক। এক. আমি যখন তাকে সৃষ্টি করেছিলাম সে সময় সে কোনো প্রকার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং মর্যাদা ও নেতৃত্বের অধিকারী ছিল না, সে একা ছিল। আমি তাকে সেসব দান করেছি। দুই. একমাত্র আমিই তার সৃষ্টিকর্তা। অন্য যেসব উপাস্যের প্রভুত্ব কায়েম রাখার জন্য সে আপনার দেয়া তাওহীদের দাওয়াতের বিরোধিতায় এত তৎপর, তাদের কেউই তাকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে আমার সাথে শরীক ছিল না। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَعَلۡتُ لَهُۥ مَالٗا مَّمۡدُودٗا
আর আমি তাকে দিয়েছি বিপুল ধন- সম্পদ [১]
[১] কেয়ামত দিবস সকল কাফেরের জন্যেই কঠিন হবে- একথা বর্ণনা করার পর জনৈক দুষ্টমতি কাফেরের অবস্থা ও তার কঠোর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে যে, তার নাম ওলীদ ইবন মুগীরা। তার দশ বারটি পুত্ৰ সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে খালেদ ইবন ওয়ালীদ ইতিহাসে অনেক বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। আল্লাহ্ তা'আলা তাকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্তুতির প্রাচুর্য দান করেছিলেন। [ইবন কাসীর] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ভাষায়, তার ফসলের ক্ষেত ও বাগ-বাগিচা মক্কা থেকে তায়েফ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এমনকি তার ক্ষেতের ফসল ও বাগানের আমদানী সারা বছর তথা শীত ও গ্ৰীষ্ম সব ঋতুতে অব্যাহত থাকত। তাকে আরবের সরদার গণ্য করা হত। জনসাধারণের মধ্যে তার বিশেষ বিশেষ উপাধি ছিল। সে গর্ব ও অহংকারবশতঃ নিজেকে ওহীদ ইবনুল ওহীদ অর্থাৎ এককের পুত্র একক বলত। তার দাবী ছিল এই যে, সম্প্রদায়ের মধ্যে সেও তার পিতা মুগীরা অদ্বিতীয়। [কুরতুবী, বাগভী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَبَنِينَ شُهُودٗا
এবং নিত্যসঙ্গী পুত্ৰগণ [১],
[১] এসব পুত্ৰ সন্তানদের জন্য شهود শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. রুযী রোজগারের জন্য তাদের দৌড় ঝাপ করতে বা সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতে কিংবা বিদেশ যাত্রা করতে হয় না। তাদের বাড়ীতে এত খাদ্য মজুদ আছে যে, তারা সর্বক্ষণ বাপের কাছে উপস্থিত থাকে বরং তাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে। [ইবন কাসীর] দুই. তার সবগুলো সস্তানই নামকরা এবং প্রভাবশালী, তারা বাপের সাথে দরবার ও সভা-সমিতিতে উপস্থিত থাকে। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَهَّدتُّ لَهُۥ تَمۡهِيدٗا
আর তাকে দিয়েছি স্বাচ্ছন্দ জীবনের প্রচুর উপকরণ-
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ يَطۡمَعُ أَنۡ أَزِيدَ
এর পরও সে কামনা করে যে, আমি তাকে আরও বেশী দেই [১]!
[১] একথার একটি অর্থ হলো, এসব সত্ত্বেও তার লালসা ও আকাঙ্খার শেষ নেই। এত কিছু লাভ করার পরও সে সর্বক্ষণ এ চিন্তায় বিভোর যে, দুনিয়ার সব নিয়ামত ও ভোগের উপকরণ সে কিভাবে লাভ করতে পারবে। দুই. হাসান বাসরী ও আরো কয়েকজন মনীষী বর্ণনা করেছেন যে, সে বলত, মুহাম্মাদের একথা যদি সত্য হয়ে থাকে যে, মৃত্যুর পর আরো একটি জীবন আছে এবং সেখানে জান্নাত বলেও কিছু একটা থাকবে তাহলে সে জান্নাত আমার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَلَّآۖ إِنَّهُۥ كَانَ لِأٓيَٰتِنَا عَنِيدٗا
কখনো নয়, সে তো আমাদের নিদর্শনসমূহের বিরুদ্ধাচারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَأُرۡهِقُهُۥ صَعُودًا
অচিরেই আমি তাকে চড়ার [১] শাস্তি দিয়ে কষ্ট-ক্লান্ত করব।
[১] আল্লাহ্ তা‘আলা সে পাপিষ্ঠকে কি শাস্তি দিবেন আয়াতে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাকে ক্লান্ত-ক্লিষ্ট করা হবে চড়ার শাস্তি দানের মাধ্যমে। কিন্তু কোথায় চড়ানো হবে? বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, তাকে আগুনের পাহাড়ে চড়তে বাধ্য করা হবে, তারপর সেখান থেকে নীচের দিকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, তাকে পিচ্ছিল এক পাহাড়ে চড়তে বাধ্য করা হবে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে যে, সে পাহাড়টিতে হাত রাখা মাত্রই তা গলতে আরম্ভ করবে, এভাবে প্রতি পদে পদে পা ডুবে যাবে। মূলতঃ শান্তিবিহীন অতি কষ্টের শাস্তি তাকে দেওয়া হবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّهُۥ فَكَّرَ وَقَدَّرَ
সে তো চিন্তা করল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَقُتِلَ كَيۡفَ قَدَّرَ
সুতরাং ধ্বংস হোক সে! কেমন করে সে এ সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করল !
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ قُتِلَ كَيۡفَ قَدَّرَ
তারপরও ধ্বংস হোক সে! কেমন করে সে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হল !
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ نَظَرَ
তারপর সে তাকাল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ
তারপর সে ভ্ৰকুঞ্চিত করল ও মুখ বিকৃত করল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَدۡبَرَ وَٱسۡتَكۡبَرَ
তারপর সে পিছন ফিরল এবং অহংকার করল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَقَالَ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا سِحۡرٞ يُؤۡثَرُ
অতঃপর সে বলল, ‘এ তো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত জাদু ভিন্ন আর কিছু নয় [১] ,
[১] উদ্দেশ্য এই যে, এই হতভাগা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত অস্বীকার করার জন্য অনেক চিন্তা-ভাবনার পর প্রস্তাব করল, তাকে জাদুকর বলা হোক। এই ঘৃণ্য প্রস্তাবের কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে তার প্রতি বার বার অভিসম্পাত করেছেন। [ইবন কাসীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا قَوۡلُ ٱلۡبَشَرِ
এ তো মানুষেরই কথা।’
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَأُصۡلِيهِ سَقَرَ
অচিরেই আমি তাকে দগ্ধ করব ‘সাকার’ এ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سَقَرُ
আর আপনাকে কিসে জানাবে ‘সাকার’ কী?
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا تُبۡقِي وَلَا تَذَرُ
এটা অবশিষ্ট রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না [১]।
[১] এর দু‘টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হলো, যাকেই এর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তাকেই সে জ্বলিয়ে ছাই করে দেবে। কিন্তু জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়েও সে রক্ষা পাবে না। বরং আবার তাকে জীবিত করা হবে এবং আবার জ্বালানো হবে। [ইবন কাসীর] আরেক জায়গায় বলা হয়েছে: “সেখানে সে মরে নিঃশেষ হয়েও যাবে না আবার বেঁচেও থাকবে না।” [সূরা আল-আ‘লা ১৩]
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَوَّاحَةٞ لِّلۡبَشَرِ
এটা তো শরীরের চামড়া পুড়িয়ে কালো করে দেবে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَلَيۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ
‘সাকার’-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঊনিশজন প্রহরী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا جَعَلۡنَآ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ إِلَّا مَلَٰٓئِكَةٗۖ وَمَا جَعَلۡنَا عِدَّتَهُمۡ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلَّذِينَ كَفَرُواْ لِيَسۡتَيۡقِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ وَيَزۡدَادَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِيمَٰنٗا وَلَا يَرۡتَابَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَلِيَقُولَ ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ وَٱلۡكَٰفِرُونَ مَاذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِهَٰذَا مَثَلٗاۚ كَذَٰلِكَ يُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَمَا يَعۡلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَۚ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكۡرَىٰ لِلۡبَشَرِ
আর আমরা তো জাহান্নামের প্রহরী কেবল ফেরেশতাদেরকেই করেছি [১]; কাফিরদের পরীক্ষাস্বরূপই আমরা তাদের এ সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবপ্রাপ্তদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, আর যারা ঈমান এনেছে তাদের ঈমান বেড়ে যায়। আর কিতাবপ্রাপ্তরা ও মুমিনরা সন্দেহ পোষণ না করে। আর যেন এর ফলে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা ও কাফিররা বলে, আল্লাহ্ এ (সংখ্যার) উপমা [২] (উল্লেখ করা) দ্বারা কি ইচ্ছা করেছেন?’ এভাবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছে হেদায়াত করেন। আর আপনার রবের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া কেউ জানে না। আর জাহান্নামের এ বর্ণনা তো মানুষের জন্য এক উপদেশ মাত্র।
[১] এখান থেকে “আপনার রবের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন” পর্যন্ত বাক্যগুলোতে একটি ভিন্ন প্ৰসংগ আলোচিত হয়েছে। “জাহান্নামের কর্মচারীর সংখ্যা শুধু উনিশ জন হবে” একথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে শুনে যারা সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছিল এবং কথাটা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে শুরু করেছিল, তাই প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের মাঝখানে বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় ছেদ টেনে তাদের কথার জবাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের দৈহিক শক্তির সাথে তুলনা করে তাদের শক্তি সম্পর্কে অনুমান করা তোমাদের বোকামী ও নিৰ্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা মানুষ নয়, বরং ফেরেশতা। তোমাদের পক্ষে অনুমান করাও সম্ভব নয় যে, কি সাঙ্ঘাতিক শক্তিধর ফেরেশতা আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]

[২] ‘উপমা’ বলে এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা যে উনিশ সংখ্যক প্রহরীর কথা বলেছেন সে কথাটিই উদ্দেশ্য। তারা বলছিল, এ সংখ্যা উল্লেখ করার কী হেকমত ছিল? [ইবন কাসীর, কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَلَّا وَٱلۡقَمَرِ
কখনোই না [১], চাঁদের শপথ,
‘দ্বিতীয় রুকূ’

[১] অর্থাৎ এটা কোনো ভিত্তিহীন কথা নয় যে, তা নিয়ে এভাবে হাসি তামাসা বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা যাবে। [দেখুন, তাবারী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّيۡلِ إِذۡ أَدۡبَرَ
শপথ রাতের, যখন তার অবসান ঘটে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلصُّبۡحِ إِذَآ أَسۡفَرَ
শপথ প্রভাতকালের, যখন তা আলোকোজ্জ্বল হয় -
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّهَا لَإِحۡدَى ٱلۡكُبَرِ
নিশ্চয় জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদসমূহের অন্যতম,
আরবি তাফসীরসমূহ:
نَذِيرٗا لِّلۡبَشَرِ
মানুষের জন্য সতর্ককারীস্বরূপ-
আরবি তাফসীরসমূহ:
لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَتَقَدَّمَ أَوۡ يَتَأَخَّرَ
তোমাদের মধ্যে যে অগ্রসর হতে চায় কিংবা যে পিছিয়ে পড়তে চায় তার জন্য [১] ।
[১] এখানে অগ্ৰে যাওয়ার অর্থ ঈমান ও আনুগত্যের দিকে অগ্রণী হওয়া। আর পশ্চাতে থাকার অর্থ ঈমান ও আনুগত্য থেকে পশ্চাতে থাকা। উদ্দেশ্য এই যে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে সতর্ক করা সব মানুষের জন্যে ব্যাপক। অতঃপর এই সতর্কবাণী শুনে কেউ ঈমান ও আনুগত্যের প্রতি অগ্রণী হয় এবং কোনো কোনো হতভাগা এরপরও পশ্চাতে থেকে যায়। [সা‘দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كُلُّ نَفۡسِۭ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ [১],
[১] رَهِيْنَةٌ এর অর্থ এখানে প্রত্যেকের আটক ও বন্দী হওয়া। ঋণের পরিবর্তে বন্ধকী দ্রব্য যেমন মহাজনের হাতে আটক থাকে-মালিক তাকে কোনো কাজে লাগাতে পারে না, তেমনি কেয়ামতের দিন প্রত্যেকেই তার গোনাহের বিনিময়ে আটক ও বন্দী থাকবে। কিন্তু, আসহাবুল-ইয়ামীন তথা ডানদিকের সৎলোকগণ এ থেকে মুক্ত থাকবে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّآ أَصۡحَٰبَ ٱلۡيَمِينِ
তবে ডানপন্থীরা নয়,
আরবি তাফসীরসমূহ:
فِي جَنَّٰتٖ يَتَسَآءَلُونَ
বাগ-বাগিচার মধ্যে তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করবে –
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَنِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ
অপরাধীদের সম্পর্কে,
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ
‘তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’- এ নিক্ষেপ করেছে?’
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ
তারা বলবে, ‘আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না [১],
[১] এর অর্থ হলো, যেসব মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে সালাত ঠিকমত আদায় করেছে আমরা তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ
আর আমরা অভাবগ্ৰস্তকে খাদ্য দান করতাম না [১],
[১] এ থেকে জানা যায় কোনো অভাবী মানুষকে সামর্থ থাকা সত্ত্বেও খাবার না দেয়া বা সাহায্য না করা মানুষের দোযখ যাওয়ার কারণসমূহের মধ্যে একটা কারণ। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ
এবং আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে বেহুদা আলাপে মগ্ন থাকতাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ
আর আমরা প্রতিদান দিবসে মিথ্যারোপ করতাম,
আরবি তাফসীরসমূহ:
حَتَّىٰٓ أَتَىٰنَا ٱلۡيَقِينُ
অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে [১]।’
[১] অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত আমরা এ নীতি ও কর্মপন্থা অনুসরণ করেছি। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত বিষয় তথা মৃত্যু আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে; তখন আমাদের সব আশা-কৌশলের সমাপ্তি হয়। [সা‘দী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَا تَنفَعُهُمۡ شَفَٰعَةُ ٱلشَّٰفِعِينَ
ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না [১]।
[১] এখানে هُم সর্বনাম দ্বারা সেসব অপরাধীকে বোঝানো হয়েছে, পূর্বের আয়াতে যারা তাদের চারটি অপরাধ স্বীকার করেছে- (১) তারা সালাত আদায় করত না, (২) তারা কোন অভাবগ্ৰস্ত ফকীরকে আহার্য দিত না; অর্থাৎ দরিদ্রদের প্রয়োজনে ব্যয় করত না, (৩) ভ্ৰান্ত লোকেরা ইসলাম ও ঈমানের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলত অথবা গোনাহ ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হত, তারাও তাদের সাথে তাতে লিপ্ত হত এবং সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করত না, (৪) তারা কেয়ামত অস্বীকার করত। এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে, যেসব অপরাধী এসব গোনাহ করে এবং কেয়ামত অস্বীকার করার মত কুফরী করে, তাদের জন্যে কারও সুপারিশ উপকারী হবে না। কেননা তারা কাফের। কাফেরদের জন্যে সুপারিশ করার অনুমতি কাউকে দেয়া হবে না। কেউ করলে গ্রহণীয় হবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর; বাগভী; বাদা’ই‘উত তাফসীর] কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও অনেক সহীহ্ হাদীসে প্রমাণিত আছে যে, নবী-রাসূলগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মপরায়ণগণ-এমন কি সাধারণ মুমিনগণও আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি প্ৰাপ্তির পর অন্যান্য মুমিনদের জন্যে সুপারিশ করবেন এবং তা কবুলও হবে। তবে কাফের মুশরিকদের কারও জন্য কোনো সুপারিশ কাজে আসবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَا لَهُمۡ عَنِ ٱلتَّذۡكِرَةِ مُعۡرِضِينَ
অতঃপর তাদের কী হয়েছে যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় উপদেশ হতে?
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَأَنَّهُمۡ حُمُرٞ مُّسۡتَنفِرَةٞ
তারা যেন ভীত-ত্ৰস্ত হয়ে পলায়নরত একপাল গাধা-
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَرَّتۡ مِن قَسۡوَرَةِۭ
যারা সিংহের ভয়ে পলায়ন করেছে [১]।
[১] حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ অর্থ বন্য গাধা। আর قسورة এর অর্থ সিংহ বা তীরান্দাজ শিকারী। এ স্থলে উভয় অর্থ বর্ণিত আছে। [ফাতহুল কাদীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ يُرِيدُ كُلُّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُمۡ أَن يُؤۡتَىٰ صُحُفٗا مُّنَشَّرَةٗ
বরং তাদের মধ্যকার প্রত্যেকেই কামনা করে যে, তাকে একটি উন্মুক্ত গ্ৰন্থ দেয়া হোক [১]।
[১] অর্থাৎ তারা চায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যদি সত্যি সত্যিই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পাঠিয়ে থাকেন তাহলে তিনি মক্কার প্রত্যেক নেতা ও সমাজপতিদের কাছে যেন একখানা করে পত্র লিখে পাঠান যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যিই আমার নবী, তোমরা তাঁর আনুগত্য করো। [ফাতহুল কাদীর] কুরআন মজীদের অন্য এক জায়গায় মক্কার কাফেরদের এ উক্তিরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আল্লাহর রাসূলদের যা দেয়া হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত তা আমাদের দেয়া না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মেনে নেব না।” [সূরা আল-আন‘আম ২৪] অন্য এক জায়গায় তাদের এ দাবীও উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, “আপনি আমাদের চোখের সামনে আসমানে উঠে যান এবং সেখান থেকে লিখিত কিতাব নিয়ে আসেন, আমরা তা পড়ে দেখবো।” [সূরা আল-ইসরা ৯৩]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَلَّاۖ بَل لَّا يَخَافُونَ ٱلۡأٓخِرَةَ
কখনো নয় [১]; বরং তারা আখেরাতকে ভয় করে না [২]।
[১] অর্থাৎ তাদের এ ধরনের কোনো দাবী কক্ষনো পূরণ করা হবে না। [কুরতুবী]

[২] অর্থাৎ এদের ঈমান না আনার আসল কারণ এটা নয় যে, তাদের এ দাবী পূরণ করা হচ্ছে না। বরং এর আসল কারণ হলো এরা আখেরাতের ব্যাপারে বেপরোয়া ও নির্ভীক। [ফাতহুল কাদীর] এরা এ পৃথিবীকেই পরম পাওয়া মনে করে নিয়েছে। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَلَّآ إِنَّهُۥ تَذۡكِرَةٞ
নিশ্চয় এ কুরআন তো সকলের জন্য উপদেশবাণী [১]।
[১] এখানে تذكرة তথা ‘উপদেশ’ বলে কুরআন মজীদ বোঝানো হয়েছে। কেননা এর শাব্দিক অর্থ স্মারক। [ইবন কাসীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَن شَآءَ ذَكَرَهُۥ
অতএব যার ইচ্ছে সে তা থেকে উপদেশ গ্ৰহণ করুক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا يَذۡكُرُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُۚ هُوَ أَهۡلُ ٱلتَّقۡوَىٰ وَأَهۡلُ ٱلۡمَغۡفِرَةِ
আর আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া কেউ উপদেশ গ্ৰহণ করতে পারে না; তিনিই যোগ্য যে, একমাত্র তাঁরই তাকওয়া অবলম্বন করা হবে, আর তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী [১]।
[১] আল্লাহ্ তা‘আলা اهْلُ التَّقُوٰى এই অর্থে যে, একমাত্র তারই তাকওয়া অবলম্বন করা যায়। তিনি ব্যতীত আর কারও তাকওয়া অবলম্বন করতে বলা যায় না। একমাত্র তাঁকেই ভয় করা এবং তাঁর নাফরমানী থেকেই বেঁচে থাকা জরুরী। আর وَاَهْلُ الْمَغْفِرَةِ হওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, তিনিই অপরাধী গোনাহ্গারের অপরাধ ও গোনাহ্ যখন ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। অন্য কেউ এরূপ উচ্চমনা হতে পারে না। [দেখুন, ইবন কাসীর]
আরবি তাফসীরসমূহ:
 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-মুদ্দাসসির
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।

বন্ধ