আর যারা শির্ক করেছে, তারা বলল, আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ইবাদাত করতাম না [১]। আর কোনো কিছু তাঁকে ছাড়িয়ে হারামও ঘোষণা করতাম না [২]। তাদের পূর্ববর্তীরা এরূপই করত। রাসূলগণের কর্তব্য কি শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌছে দেয়া নয় [৩]?
[১] আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে কাফের মুশরিকদের একটি বড় সন্দেহের উল্লেখ করে তা অপনোদন করেছেন। সন্দেহটি হলো: যদি আল্লাহ আমাদের কর্মকাণ্ড অপছন্দ করতেন তবে অবশ্যই তার জন্য শাস্তি বিধান করতেন এবং আমাদেরকে তা করতে দিতেন না। যেহেতু তিনি আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন না এবং আমাদেরকে শির্ক করতে দিচ্ছেন তা দ্বারা বুঝা গেল যে, আমাদের কর্মকাণ্ডে আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন। তাই আমাদেরকে আর কোনো দাওয়াত গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা'আলা
তাদের দাবীর মত দাবী তাদের পূর্বেকার কাফের মুশরিকগণও করেছিল। তাদের কাছে এটার ব্যাপারে কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি নেই। তারা তাদের মনগড়া কথাকে চালিয়ে নিচ্ছে। কারণ, আল্লাহ্ তা'আলার ফয়সালা দু’ধরনের। এক ধরনের ফয়সালা আছে যাকে বলা হয় জাগতিক ফয়সালা, যার বাইরে কেউ যাওয়ার অধিকার রাখে না। যেমন, জীবন -মৃত্যু, রোগ-শোক ইত্যাদি। এ ধরনের ফয়সালার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করে না। আরেক ধরনের ফয়সালা আছে যাকে বলা হয় শর’য়ী ফয়সালা। যেমন ঈমান আনা, ভাল কাজ করা ইত্যাদি। এ ধরনের ফয়সালার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। এ ধরনের ফয়সালার ক্ষেত্রে মানুষের স্বাধীনতা রয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে ঈমান আনতে পারে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে। আবার কুফরীও এখতিয়ার করতে পারে যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে। আল্লাহ মানুষকে যে সীমিত স্বাধীনতা দিয়েছেন তার কারণেই তাকে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর শরীআত অনুসারে চলার জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়ে তাঁর পথের দিশা দেন। তিনি তাদেরকে সে পথ মানতে বাধ্য করে দেন না। কারণ, বাধ্য করে দিলে তাকলীফ থাকে না। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রয়োজন পড়তো না। নবীদের কাজ তো শুধু হক পথকে মানুষের সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা। এর পর যারা ঈমান আনবে তারা জান্নাতি হবে আর যারা ঈমান আনবে না তারা জাহান্নামি হবে। সুতরাং এখানে কাফেরদের উত্থাপন করা কুটতর্কের কোনো অর্থ নেই। তারা অন্যান্য ব্যাপারে এ ধরনের কুটতর্ক মানে না, শুধু ঈমান ও নতুন আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে তা পেশ করে থাকে। তাদেরকে যদি গালি দেয়া হয় বা তাদের কাবাকে কেউ ধ্বংস করতে আসে তবে তা প্রতিহত করতে সদা প্রস্তুত থাকে। তখন একথা বলে না যে, আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে হচ্ছে। শুধু ঈমান ও আল্লাহর আইনের ব্যাপারেই তারা এরকম করে থাকে। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, মাজমু ফাতাওয়া ৮/২৫৬-২৬১; ১০/৩৪; ২০/৬৫; মিনহাজুস সুন্নাহ ৩/৬০]
[২] যেমন তারা বিভিন্ন জন্তুকে ছেড়ে দিত এবং এগুলোকে খাওয়া ও ধরা-ছোয়া হারাম ঘোষণা করত। যেমন, বাহীরা, সায়েবা, ওয়াসীলা ইত্যাদি। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন সূরা আল-আনআম ১৩৮ এবং সূরা আল-মায়েদা ১০৩]
[৩] এটা কাফেরদের সন্দেহের উত্তর। বলা হয়েছে যে, তোমাদের দাবী যে আল্লাহ চাইলে আমরা তিনি ব্যতীত আর কারও ইবাদাত করতে সক্ষম হতাম না, যদি তিনি চাইতেন তবে তিনি আমাদের এ কাজ অস্বীকার করেন না কেন? আমাদের কুফর, শির্ক ও অবৈধ কাজকর্ম পছন্দ না করলে তিনি আমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেন না কেন? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কর্মকাণ্ডকে অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের কার্যাবলীকে কঠোরভাবে ঘৃণা করেছেন এবং শক্তভাবে নিষেধ করেছেন। আর সে জন্যই তিনি প্রতি জাতিতে প্রতি প্রজন্মে, প্রতি গোষ্ঠীতে তার নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। তারা সবাই একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানিয়েছেন এবং তিনি ব্যতীত আর কারও ইবাদাত না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক" এভাবে মানুষের কাছে তিনি রাসূলগণকে পাঠিয়েই চলেছেন, যখন থেকে বনী আদমের মধ্যে শির্কের উৎপত্তি হয়েছে। কাওমে নূহের মধ্যে, যখন তাদের কাছে নূহকে তিনি পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি ছিলেন যমীনের অধিবাসীদের কাছে পাঠানো প্রথম রাসূল। এ রাসূলদের পাঠানোর ধারা তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের মাধ্যমে শেষ করেন। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর অবশ্যই আমরা প্রতিটি উম্মতে রাসূলগণকে এ বলে পাঠিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” সুতরাং মুশরিকদের পক্ষে এটা বলা কিভাবে সঙ্গত হবে যে, আল্লাহ ইচ্ছে করলে আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাকে ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ইবাদাত করতাম না। আর কোনো কিছু তাঁকে ছাড়িয়ে হারামও ঘোষণা করতাম না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর শরীআতগত ইচ্ছা তোমাদের সাথে নেই। কেননা তিনি তার রাসূলদের মুখে তোমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেছেন। আর যদি বল প্রকৃতিগত ইচ্ছা যা নির্ধারিত থাকার কারণে তোমরা শির্ক ও কুফরি ও অন্যান্য অন্যায় কাজ করতে সমর্থ হও, তবে এটা থেকে তোমাদের দলীল নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা আল্লাহ্ তা'আলা জাহান্নামও সৃষ্টি করেছেন, জাহান্নামের বাসিন্দা শয়তান ও কাফেরদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি বান্দাদের কুফরীতে সন্তুষ্ট নন। এর মধ্যে তার বিশেষ হিকমত ও রহস্য রয়েছে। [ইবন কাসীর] রহস্যের তাগিদে তাদেরকে জোর করে ঈমানদার ও পরহেযগার বানানো সঠিক ছিল না। সুতরাং কাফেরদের একথা বলা যে, আমাদের ধর্মমত আল্লাহর কাছে পছন্দ না হলে আমাদের বাধ্য করেন না কেন, একটি বোকামী ও হঠকারিতা প্রসূত প্রশ্ন বৈ নয়। শুধু এতটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা আরও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তোমাদের দাবী যে, আমাদের কর্মকাণ্ড আল্লাহর মনঃপুত না হলে আল্লাহ কেন আমাদের কর্মকাণ্ড অস্বীকার করেন না। এ কথাটি মোটেই ঠিক নয়। কারণ, নবী পাঠিয়ে তোমাদের কর্মকাণ্ডকে অস্বীকার করা হয়েছে। সর্বোপরি তোমরা যখন রাসূলদের সাবধানবাণী অনুসারে শির্ক, কুফর ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত হলে না, তখন তিনি তোমাদের উপর শাস্তি নাযিল করেন। তাই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে ?” অর্থাৎ তাদেরকে জিজ্ঞেস কর যারা আমার রাসূলদের নির্দেশের বিরোধিতা করেছিল এবং হকের উপর মিথ্যারোপ করেছিল তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। “আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম।” [সূরা মুহাম্মাদ ১০] “আর এদের পূর্ববর্তীগণও অস্বীকার করেছিল; ফলে কিরূপ হয়েছিল আমার প্রত্যাখ্যান (শাস্তি)।" [সূরা আল-মুলক ১৮] [ইবন কাসীর]
আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর [১]। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্ হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা যমীনে পরিভ্রমন কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে [২]?
[১] এ আয়াত থেকে একটি সত্য স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রত্যেক নবীর মিশনই ছিল তাওহীদের। সবাই তাওহীদের আহবান জানিয়েছেন এবং তাগুত ও শির্ক থেকে তাদের উম্মতকে সাবধান করে গেছেন। এ ব্যাপারে প্রত্যেকের দাবী ছিল এক। কোনো হেরফের ছিল না। আদম, নূহ, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়া সাল্লাম প্রত্যেকেই তাওহীদ তথা একমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানিয়েছেন এবং আল্লাহ ব্যতীত যাবতীয় উপাস্য পরিত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন। তাদের কেউই নিজেকে বা অপর কোনো সৃষ্টিকে ইলাহ বলে ঘোষণা দেননি। নাসারাদের ত্রিত্ববাদ ঈসা আলাইহিসসালামের দাওয়াত নয়। [সমস্ত নবী-রাসূলগণের দাওয়াত যে একই ছিল এবং আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক প্রত্যেক জাতির নিকট নবী-রাসূল পাঠানোর বিষয়ে আরো দেখুন, সূরা আল-আম্বিয়া ২৫, সূরা আয-যুখরুফ ৪৫]
[২] অর্থাৎ নিশ্চয়তা লাভ করার জন্য অভিজ্ঞতার চেয়ে আর কোনো বড় নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নেই। এখন তুমি নিজেই দেখে নাও, মানব ইতিহাসের একের পর এক অভিজ্ঞতা কি প্রমাণ করছে? আল্লাহর আযাব কার ওপর এসেছে- ফেরাউন ও তার দলবলের ওপর, না মূসা ও বনী ইসরাঈলের ওপর? সালেহকে যারা অস্বীকার করেছিল তাদের ওপর, না তাকে যারা মেনে নিয়েছিল তাদের ওপর? হুদ, নূহ ও অন্যান্য নবীদেরকে যারা অমান্য করেছিল তাদের ওপর, না মুমিনদের ওপর? এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাগুলোর ফল কি এই দাড়িয়েছে যে, আমার ইচ্ছার কারণে যারা শির্ক করার ও মনগড়া শরীআত গঠনের সুযোগ লাভ করেছিল তাদের প্রতি আমার সমর্থন ছিল? বরং বিপরীত পক্ষে এ ঘটনাবলী সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ করছে যে, উপদেশ ও অনুশাসন সত্বেও যারা এসব গোমরাহীর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়ে চলেছে। আমার ইচ্ছাশক্তি তাদেরকে অপরাধ করার অনেকটা সুযোগ দিয়েছে। তারপর তাদের নৌকা পাপে ভরে যাওয়ার পর ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
আপনি তাদের হিদায়াতের জন্য ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী হলেও [১] আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেন, তাকে হিদায়াত দেন না এবং তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারীও নেই [২]।
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি এবং মানুষের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন জ্বালালো। আর আগুন যখন তার চারপাশ আলোকিত করল, পতঙ্গ এবং যে সমস্ত প্রাণী আগুনে ঝাঁপ দেয় সেগুলো ঝাঁপ দিতে লাগল। তখন সে ব্যক্তি সেগুলোকে আগুন থেকে ফিরানোর চেষ্টা করল, তা সত্বেও সেগুলো আগুনে পুড়ে মরে। তদ্রুপ আমিও তোমাদের কোমরের কাপড় ধরে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তোমরা তাতে পতিত হও " [বুখারী ৬৪৮৩]
[২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় উম্মাতের হেদায়াতের জন্য ব্যস্ত থাকতেন। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্তনা দিয়ে বলা হচ্ছে যে, আপনি চাইলেই যে, তারা হেদায়াত পেয়ে যাবে এমনটি নয়। হেদায়াত দেয়ার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করবেন। কিন্তু তার চিরাচরিত নিয়ম হলো, তিনি তাদেরকেই হেদায়াত দেন যারা হেদায়াত পাওয়ার জন্য আগ্রহী। অপরপক্ষে যারা হেদায়াতের পথ থেকে দূরে থাকা বেশী পছন্দ করছে, হেদায়াতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদেরকে তিনি হেদায়াত করেন না। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন, সূরা আল-মায়েদাহ ৪১, সূরা হুদ ৩৪, সূরা আল-আরাফ ১৮৬, সূরা ইউনুস ৯৬-৯৭]
আর তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহ্র শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না [১]। অবশ্যই হ্যাঁ, তাঁর নিজের উপর কৃত প্রতিশ্রুতি তিনি সত্যে রূপ দেবেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জনে না [২]।
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, বনী আদম আমাকে গালি দেয় অথচ তাদের পক্ষে আমাকে গালি দেয়া উচিত নয়। আবার তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অথচ আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাও তাদের জন্য উচিত নয়। তাদের গালি হলো তারা আমার ব্যাপারে বলে যে, আমার সন্তান আছে, আর আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হলো এটা বলা যে, তিনি (আল্লাহ) যেভাবে আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন সেভাবে পূনরায় সৃষ্টি করবেন না।” [বুখারী ৩১৯৩]
[২] জানেনা বলেই রাসূলদের বিরোধিতা করে এবং কুফরিতে নিপতিত হয়। [ইবন কাসীর] তারা এটাও জানে না যে, পুনরুত্থান ও হিসেব নেয়া তার পক্ষে একেবারেই সহজ। [ফাতহুল কাদীর]
যে বিষয়ে তারা মতানৈক্য করছে, তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার জন্য এবং কফিরদের জানার জন্য যে, নিশ্চয় তারা ছিল মিথ্যাবাদী [১]।
[১] এ বক্তব্য থেকে মৃত্যুর পরের জীবন এবং শেষ বিচারের দিনের জন্য মানুষের পুনরুত্থানের রহস্য ও হিকমত বর্ণনা করা হচ্ছে। [ইবন কাসীর] দুনিয়ায় যখন থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, সত্য সম্পর্কে অসংখ্য মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ ধরনের মতবিরোধের ক্ষেত্রে বিবেকের দাবী এই যে, এক সময় না এক সময় সঠিক ও নিশ্চিতভাবে প্রতিভাত হোক যথার্থই তাদের মধ্যে হক কি ছিল এবং বাতিল কি ছিল, কে সত্যপন্থী ছিল এবং কে মিথ্যাপন্থী। এ দুনিয়ায় এ যবনিকা সরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যায় না। এ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাই এমন যে, এখানে সত্য কোনোদিন পর্দার বাইরে আসতে পারে না। কাজেই বিবেকের এ দাবী পূরণ করার জন্য ভিন্ন আরেকটি জগতের প্রয়োজন। আর সেটাই হচ্ছে আখেরাত| [এ বিষয়টির দিকে আল্লাহ তা'আলা ইঙ্গিত করেছেন, দেখুন সূরা আত-তুর ১৪-১৬, সূরা আল-কামার ৫০, সূরা লুকমান ২৮]
তাছাড়া আরও একটি কারণে মানুষের পুনরুত্থান প্রয়োজন বলে এখানে বলা হয়েছে, তা হচ্ছে, এ সমস্ত কাফের ও মুশরিকরা শপথ ও কসম করে কিয়ামতের আগমন ও সেখানে মানুষের পুনরুত্থানের বিষয়টি অস্বীকার করছে, সুতরাং কিয়ামত ও পুনরুত্থান হলে কারা তাদের শপথে মিথ্যাবাদী ছিল সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। [ইবন কাসীর] তখন তাদের বিচার করা হবে। যেদিন তাদেরকে ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের আগুনের দিকে। [ইবন কাসীর] [এ ব্যাপারে দেখুন সূরা আন-নাজম ৩১]
আমরা কোনো কিছুর ইচ্ছে করলে সে বিষয়ে আমাদের কথা তো শুধু এই যে, আমরা বলি, ‘হও’; ফলে তা হয়ে যায় [১]।
[১] অর্থাৎ লোকেরা মনে করে, মরার পর মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করা এবং সামনের পেছনের সমগ্র মানব-কুলকে একই সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত করা বড়ই কঠিন কাজ। অথচ আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। নিজের কোনো সংকল্প পূর্ণ করার জন্য তাঁর কোনো সাজসরঞ্জাম, উপায়-উপকরণ ও পরিবেশের আনুকুল্যের প্রয়োজন হয় না। তাঁর প্রত্যেকটি ইচ্ছা শুধুমাত্র তাঁর নির্দেশেই পূর্ণ হয়। বর্তমানে যে দুনিয়ার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, এটিও নিছক হুকুম থেকেই অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং অন্য দুনিয়াটিও মুহুর্তকালের মধ্যে শুধুমাত্র একটি হুকুমেই জন্ম লাভ করবে। যখন তিনি ‘হও’ বলবেন তখনি তা হয়ে যাবে। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমাদের আদেশ তো কেবল একটি কথা, চোখের পলকের মত।" [সূরা আল-কামার ৫০] [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহ্র পথে হিজরত [১] করেছে [২], আমরা অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দেব; আর আখিরাতের পুরস্কার তো অবশ্যই শ্রেষ্ঠ। যদি তারা জানত!
[১] هجرة আভিধানিক অর্থ ত্যাগ করা। আল্লাহর জন্য দেশ ত্যাগ করা ইসলামে একটি বড় ইবাদাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হিজরতের পূর্বে মানুষ যেসব গোনাহ করে, হিজরত সেগুলোকে খতম করে দেয়।’ [মুসলিম ১২১] হিজরত কোনো কোনো অবস্থায় ফরয, ওয়াজিব এবং কোনো কোনো অবস্থায় মোস্তাহাব ও উত্তম হয়ে থাকে।
[২] কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, যেসব মুহাজির কাফেরদের অসহনীয় জুলুম- নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মক্কা থেকে হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত করেছিলেন এখানে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। [ইবন কাসীর] অপর কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে মদীনায় হিজরতকারী সাহাবীগণের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। যেমন, বিলাল, সুহাইব, খাব্বাব, আম্মার প্রমূখ। [কুরতুবী] তবে যারাই হিজরত করেছে এবং করবে আয়াত তাদের সবাইকে শামিল করে। [কুরতুবী] এখানে আল্লাহ তা'আলা ঐ সমস্ত মুমিন বান্দাদের ফযিলত সম্পর্কে জানাচ্ছেন যারা আল্লাহর পথে তারই সন্তুষ্টির জন্য যুলুম, নির্যাতন, কষ্ট ও জাতির পক্ষ থেকে পরীক্ষায় নিপতিত হওয়ার পর হিজরত করেছে। যারা তাদেরকে ঈমান থেকে কুফরি ও শির্কের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য পরীক্ষায় ফেলেছে, ফলে তারা তাদের জন্মভূমি ও বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে দু'টি সওয়াব। তার একটি দুনিয়াতেই তারা পাবে, আর সেটি হচ্ছে প্রশস্ত রিযিক ও স্বচ্ছন্দ জীবন। [সা’দী] আল্লাহ তা'আলা মদীনাকে তাদের জন্য কি চমৎকার ঠিকানা করেছিলেন। উৎপীড়নকারী প্রতিবেশীদের স্থলে তারা মহানুভব, সহানুভূতিশীল প্রতিবেশী পেয়েছিলেন। তারা শক্ৰদের বিপক্ষে বিজয় ও সাফল্য লাভ করেছিলেন। হিজরতের পর অল্প কিছুদিন অতিবাহিত হতেই তাদের সামনে রিযকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যারা ছিলেন ফকীর, মিসকীন, তারা হয়ে গেলেন বিত্তশালী, ধনী। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ বিজিত হয়। তাদের চরিত্র মাধুর্য ও সৎকর্মের কীর্তি আবহমান কাল পর্যন্ত শক্র-মিত্র নির্বিশেষে সবার মুখে উচ্চারিত হয়। তাদেরকে এবং তাদের বংশধরদেরকে আল্লাহ তা'আলা অসামান্য ইযযত ও গৌরব দান করেন। এগুলো হচ্ছে পার্থিব বিষয়। [ফাতহুল কাদীর] আর দ্বিতীয়টি আখেরাতের সওয়াব। যার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দুনিয়ার সওয়াবের তুলনায় সেটি অনেক বড়। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। আর তারাই সফলকাম। তাদের রব তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন, স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং এমন জান্নাতের যেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী নেয়ামত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে নিশ্চয় আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার।" [সূরা আত-তাওবাহ ২০-২১]
যদি তারা জানতে পারত যে, যারা ঈমান এনেছে এবং হিজরত করেছে তাদের এত বড় সওয়াব রয়েছে তবে কেউই ঈমান ও হিজরত থেকে পিছপা হতো না। [সা’দী]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Rezultati pretraživanja:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".