আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর [১] অথবা যা কিছু তোমরা মানত [২] কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা জানেন। আর যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।
[১] ‘যা কিছু তোমরা ব্যয় কর’ বলতে সর্বপ্রকার ব্যয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; যে ব্যয়ে সব শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে এবং যে ব্যয়ে সবগুলোর কিংবা কতকগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। উদাহরণতঃ আল্লাহ্র পথে ব্যয় করা হয়নি বরং গোনাহর কাজে ব্যয় করা হয়েছে, কিংবা লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করা হয়েছে, অথবা ব্যয় করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে কিংবা হালাল ও উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করা হয়নি ইত্যাদি, সর্বপ্রকার ব্যয়ই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।
[২] মানত’ শব্দের ব্যাপকতায় সর্বপ্রকার মানতই এসে গেছে। মানত বলতে বুঝায় - কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো কাজ করার শর্ত করা। যেমন, ‘যদি আমার সন্তান হয় তাহলে আমি হজ করব’ বা ‘যদি আমার ব্যবসায় সাফল্য আসে তবে আমি এত টাকা দান করব’ ইত্যাদি। মূলতঃ মানত পূরণ করা ইবাদাত। কিন্তু মানত করা ইবাদাত নয়। মানত করার ব্যাপারে শরীআত কাউকে উৎসাহ দেয়নি। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানত কারো জন্য ভাল কিছু নিয়ে আসে না বরং মানত কৃপণের সম্পদ থেকে কিছু বের করে।’ [বুখারী ৬৬০৮, ৬৬৯২, ৬৬৯৩]
তাই মানত করার চেয়ে যে ‘ইবাদাতের মানত করার ইচ্ছা করেছে, মানত না করে সে ইবাদাত পালন করে তার অসীলায় দো'আ করাই শরীআত নির্দেশিত সঠিক পন্থা। এজন্য শরীআতে মানত করা থেকে নিষেধ এসেছে। কিন্তু যদি কেউ মানত করে, তারপর যদি কাজটা সৎকাজ হয় তবে তা পূরণ করা ওয়াজিব। আর যদি অসৎকাজ হয় তাহলে তা পূরণ করা যাবে না। যেমন, কেউ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হজ করার মানত করলে তাকে হজ করে মানত পূরণ করতে হবে। কিন্তু যদি কেউ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মাযারে বা পীরকে কিছু দেয়ার মানত করে তা পূরণ করা জায়েয হবে না। কেননা তা শির্ক।
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভাল; আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্থকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভাল এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন [১]। আর তোমরা যে আমল কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত [২]।
[১] অর্থাৎ গোপন দান করার মধ্যে যদি তুমি কোনো বাহ্যিক উপকার না দেখ, তবে বিষন্ন হওয়া উচিত নয়। কেননা তোমার গোনাহ আল্লাহ্ মাফ করবেন। এটা তোমার বিরাট উপকার।
[২] বাহ্যতঃ এ আয়াতে ফরয ও নফল সব রকমের দান-সদকাকে অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়েছে যে, সর্ব প্রকার দানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তাই উত্তম। এতে দীনী ও বৈষয়িক উভয় প্রকার উপকারিতাই বর্তমান। দীনী উপকারিতা এই যে, এতে রিয়া তথা লোক দেখানোর সম্ভাবনা নেই এবং দান গ্রহণকারীও লজ্জিত হয় না। বৈষয়িক উপকারিতা এই যে, স্বীয় অর্থের পরিমাণ সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে না। গোপনীয়তা উত্তম হওয়ার মানে স্বতন্ত্র দৃষ্টিতে উত্তম হওয়া। সুতরাং অপবাদ খণ্ডন করা, অন্যে তা অনুসরণ করবে এরূপ আশা করা ইত্যাদি কারণে যদি কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করা উত্তম বিবেচিত হয়, তবে তা এর পরিপন্থী নয়। [মা'আরিফুল কুরআন]
তাদের হিদায়াত দানের দায়িত্ব আপনার নয়; বরং আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে হিদায়াত দেন। আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য আর তোমরা তো শুধু আল্লাহ্কে [১] চেয়েই (তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই) ব্যয় করে থাক। আর তোমরা উত্তম কোনো কিছু ব্যয় করলে তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবেই দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
[১] এ আয়াতে ব্যবহৃত (وَجْهُ اللّٰهِ) অর্থ আল্লাহ্র চেহারা। কিন্তু এখানে এ শব্দ দ্বারা তাঁর পূর্ণ সত্তাকেই বোঝানো হয়েছে। এটা আল্লাহ্ তা'আলার একটি যাতী গুণ। সুতরাং এ শব্দ দ্বারা আল্লাহ্র মুখমণ্ডল ও সত্তা দু’টোই সাব্যস্ত হবে।
এগুলো অভাবগ্রস্থ লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহ্র পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করতে পারে না [১]; আত্মসম্মানবোধে না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে [২]; আপনি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবেন [৩]। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না [৪]। আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ সে ব্যাপারে সবিশেষ জ্ঞানী।
[১] এখানে অভাবগ্রস্ত লোক বলতে ঐ সকল লোককে বোঝানো হয়েছে, যারা দীনী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে জীবিকা অর্জনের উদ্দেশে অন্য কোনো কাজ করতে পারে না।
[২] এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, কোনো ফকীরকে যদি মূল্যবান পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়, তবে এ কারণে তাকে ধনী মনে করা হবে না; বরং ফকীরই বলা হবে। এরূপ ব্যক্তিকে যাকাত দান করাও জায়েয হবে। [তাফসীরে কুরতুবী]
[৩] এতে বোঝা যায় যে, লক্ষণাদি দেখে বিচার করা অশুদ্ধ নয়। কাজেই যদি এমন কোনো বেওয়ারিশ মৃতদেহ পাওয়া যায়, যার দেহে পৈতা আছে এবং সে খতনাকৃতও নয়, তবে তাকে মুসলিমদের গোরস্তানে দাফন করা যাবে না। [তাফসীরে কুরতুবী]
[৪] এ আয়াত থেকে বাহ্যতঃ জানা যায় যে, তারা পথ আগলিয়ে সওয়াল করে না। কিন্তু পথ না আগলিয়েও সওয়াল করে না - এরূপ বোঝা যায় না। কোনো কোনো তাফসীরকারক তাই বলেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট তাফসীরকারদের মতে এর অর্থ এই যে, তারা মোটেই সওয়াল করে না। বরং সওয়াল করা থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরি নিরাপদ দূরত্বে রাখে। [তাফসীরে কুরতুবী]
যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে [১], গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না [২]।
[১] এ আয়াতে ঐ সকল লোকের বিরাট প্রতিদান ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে, যারা আল্লাহ্র পথে ব্যয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারা রাত্ৰে-দিনে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সবসময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে, দান-সদকার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই, দিনরাতেরও কোনো প্রভেদ নেই। এমনিভাবে গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয় প্রকারে আল্লাহ্র পথে ব্যয় করলে সওয়াব পাওয়া যায়। তবে শর্ত এই যে, খাটি নিয়্যতে দান করতে হবে। নাম-যশের নিয়্যত থাকলে চলবে না। প্রকাশ্যে দান করার কোনো প্রয়োজন দেখা না দেয়া পর্যন্তই গোপনে দান করার শ্রেষ্ঠত্ব সীমাবদ্ধ। যেখানে এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয়, সেখানে প্রকাশ্যে দান করাই শ্ৰেয়। [মা'আরিফুল কুরআন]
[২] এখানে দান-সদকা নির্ভুল ও সুন্নাত পদ্ধতি বর্ণনা করে বলা হয়েছে: যারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর অনুগ্রহ প্রকাশ করে না এবং যাকে দান করে, তাকে কষ্ট দেয় না, তাদের সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য তাদের কোনো বিপদাশংকা নেই এবং অতীতের ব্যাপারেও তাদের কোনো চিন্তা নেই।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Rezultati pretraživanja:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".