বলুন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্র রাসূল [১], যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’
বিশতম রুকূ’
[১] এ আয়াতে ইসলামের মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্য থেকে রিসালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত সমগ্র দুনিয়ার সমস্ত জিন ও মানবজাতি তথা কেয়ামত পর্যন্ত আগত তাদের বংশধরদের জন্য ব্যাপক। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি মানুষকে বলে দিন: “আমি তোমাদের সবার প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি।” আমার নবুওয়ত লাভ ও রিসালাতপ্রাপ্তি বিগত নবীগণের মত কোনো বিশেষ জাতি কিংবা বিশেষ ভূখণ্ড অথবা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য, বিশ্বের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য কেয়ামতকাল পর্যন্ত তা পরিব্যাপ্ত। অন্য আয়াতেও এসেছে, “আর আমরা তো আপনাকে কেবল সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।" [সূরা সাবা ২৮] অনুরূপভাবে সূরা আলে ইমরান ২০; সূরা আল-আনআম ৯০; সূরা হূদ ১৭; সূরা ইউসুফ ১০৪; সূরা আল-আম্বিয়া ১০৭; সূরা আল-ফুরকান ১; সূরা ছোয়াদ ৮৭; সূরা আল-কালাম ৫২; সূরা আত-তাকওয়ীর ২৭।
হাফেজ ইবন কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাতামুন্নাবিয়ীন বা শেষ নবী হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ও রিসালাত যখন কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত বংশধরদের জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য ব্যাপক, তখন আর অন্য কোনো নতুন রাসূলের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট থাকেই না। [ইবন কাসীর]
হাদীসে এসেছে, আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মধ্যে কোনো এক বিষয়ে মতবিরোধ হয়। তাতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নারায হয়ে চলে যান। তা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে মানানোর জন্য এগিয়ে যান। কিন্তু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছুতেই রাযী হলেন না। এমনকি নিজের ঘরে পৌঁছে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে হাযির হন। এদিকে কিছুক্ষণ পরেই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের এহেন আচরণের জন্য লজ্জিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে উপস্থিত হয়ে নিজের ঘটনা বিবৃত করেন। আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন লক্ষ্য করলেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি ভর্ৎসনা করা হচ্ছে, তখন নিবেদন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, দোষ আমারই বেশী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার একজন সহচরকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকাটাও কি তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তোমরা কি জান না যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে আমি যখন বললাম: ‘হে মানবমণ্ডলী, আমি তোমাদের সমস্ত লোকের জন্য আল্লাহ রাসূল। তখন তোমরা সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। শুধু এই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুই ছিলেন, যিনি সর্বপ্রথম আমাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’ [বুখারী ৪৬৪০]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের ভয় হচ্ছিল যে, শক্ররা না এ অবস্থায় আক্রমণ করে বসে। তাই তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারদিকে সমবেত হয়ে গেলেন। রাসূল সালাত শেষ করে বললেন, আজকের রাতে আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কোনো নবী-রাসূলকে দেয়া হয়নি। তার একটি হল এই যে, আমার রিসালাত ও নবুওয়াতকে সমগ্র দুনিয়ার জাতিসমূহের জন্য ব্যাপক করা হয়েছে। আর আমার পূর্বে যত নবী-রাসূলই এসেছেন, তাদের দাওয়াত ও আবির্ভাব নিজ নিজ সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। দ্বিতীয়তঃ আমাকে আমার শক্রর মোকাবেলায় এমন প্রভাব দান করা হয়েছে যাতে তারা যদি আমার কাছ থেকে এক মাসের দূরত্বেও থাকে, তবুও তাদের উপর আমার প্রভাব ছেয়ে যাবে। তৃতীয়তঃ কাফেরদের সাথে যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে-গনীমত আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। অথচ পূর্ববতী উম্মতদের জন্য তা হালাল ছিল না। বরং এসব মালের ব্যবহার মহাপাপ বলে মনে করা হত। তাদের গনীমতের মাল ব্যয়ের একমাত্র স্থান ছিল এই যে, আকাশ থেকে বিদ্যুৎ এসে সে সমস্তকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিয়ে যাবে। চতুর্থতঃ আমার জন্য সমগ্র ভূমণ্ডলকে মসজিদ করে দেয়া হয়েছে এবং পবিত্র করার উপকরণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে আমাদের সালাত যমীনের যে কোনো অংশে, যে কোনো জায়গায় শুদ্ধ হয়, কোনো বিশেষ মসজিদে সীমাবদ্ধ না হয়। পক্ষান্তরে পূর্ববতী উম্মতদের ইবাদাত শুধু তাদের উপাসনালয়েই হত, অন্য কোথাও নয়। নিজেদের ঘরে কিংবা মাঠে-ময়দানে তাদের সালাত বা ইবাদাত হত না। তাছাড়া পানি ব্যবহারের যখন সামর্থ্য না থাকে, তা পানি না পাওয়ার জন্য হোক কিংবা কোনো রোগ-শোকের কারণে, তখন মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নেয়াই পবিত্রতা ও অযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হয়ে যায়। পূর্ববতী উম্মতদের জন্য এ সুবিধা ছিল না। অতঃপর বললেন, আর পঞ্চমটি এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর প্রত্যেক রাসূলকে একটি দোআ কবুল হওয়ার এমন নিশ্চয়তা দান করেছেন, যার কোনো ব্যতিক্রম হতে পারে না। আর প্রত্যেক নবী-রাসূলই তাদের নিজ নিজ দো’আকে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে নিয়েছেন এবং সে উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হয়েছে। আমাকে তাই বলা হল যে, আপনি কোনো একটা দোআ করুন। আমি আমার দো’আকে আখেরাতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। সে দো'আ তোমাদের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত لااله الّاالله 'আল্লাহ ছাড়া কোনো হক মা’বুদ নেই কালেমার সাক্ষ্য দানকারী যেসব লোকের জন্ম হবে, তাদের কাজে লাগবে। [মুসনাদে আহমাদ ২/২২২]
আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উদ্ধৃত বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদী-নাসারা হোক, যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে জাহান্নামে যাবে’। [মুসনাদে আহমাদ ২/৩৫০]
সারমর্ম এই যে, এ আয়াতের দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য, প্রত্যেক দেশ ও ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য এবং প্রত্যেকটি জাতি ও সম্প্রদায়ের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপকভাবে রাসূল হওয়া প্রমাণিত হয়েছে। সাথে সাথে একথাও সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পর যে লোক তার প্রতি ঈমান আনবে না, সে লোক কোনো সাবেক শরীআত ও কিতাবের কিংবা অন্য কোনো ধর্ম ও মতের পরিপূর্ণ আনুগত্য একান্ত নিষ্ঠাপরায়ণভাবে করতে থাকা সত্বেও কষ্মিনকালেও মুক্তি পাবে না।
Prijevod značenja Plemenitog Kur'ana na bengalski jezik - Dr. Ebu Bekr Muhammed Zekerija. Štampao i distribuirao Kompeks kralja Fehda za štampanje Plemenitog Kur'ana u Medini, 1436. godine po Hidžri.
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Rezultati pretraživanja:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".