Traduction des sens du Noble Coran - Traduction en bengali - Abû Bakr Zakariyâ * - Lexique des traductions


Traduction des sens Verset: (6) Sourate: AL-BAQARAH
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡهِمۡ ءَأَنذَرۡتَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تُنذِرۡهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ
যারা কুফরী [১] করেছে আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন [২] , তারা ঈমান আনবে না [৩]।
[১] কাফির শব্দের অর্থ অস্বীকারকারী, কাফের শব্দটি মুমিন শব্দের বিপরীত। বিভিন্ন কারণে কেউ কাফির হয়, তন্মধ্যে বিশেষ করে ঈমানের ছয়টি রুকনের কোনো একটির প্রতি ঈমান না থাকলে সে নিঃসন্দেহে কাফির। এ ছাড়াও ইসলামের রোকানসমূহও যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলেও সে কাফির হবে। অনুরূপভাবে কেউ দীনের এমন কোনো আহকামকে অস্বীকার করলেও কাফির বলে বিবেচিত হবে যা দীনের বিধি-বিধান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর আয়াত ও হাদীসসমূহ বিশ্লেষণ করে আমরা কুফরীকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। বড় কুফ্‌র, ছোট কুফ্‌র। প্রথমতঃ বড় কুফ্‌র। আর তা পাঁচ প্রকার:

১) মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফ্‌র। আর তা হল রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা। অতএব, তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তাতে যে ব্যক্তি তাদেরকে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করল, সে কুফরী করল। এর দলীল হল আল্লাহ্‌র বাণী, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যারোপ করে অথবা তার কাছে সত্যের আগমণ হলে তাকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামেই কি কাফিরদের আবাস নয়?" [সূরা আল-আন্‌কাবুত: ৬৮]

২) অস্বীকার ও অহংকারের মাধ্যমে কুফর। এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সততা এবং তিনি যে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা, কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশতঃ তাঁর হুকুম না মানা এবং তাঁর নির্দেশ না শোনা। এর দলীল আল্লাহ্‌র বাণী, “যখন আমরা ফেরেশ্‌তাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।। [সূরা আল-বাকারাহ: ৩৪]

৩) সংশয়-সন্দেহের কুফর। আর তা হল রাসূলগণের সততা, তারা যা নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফ্‌রও বলা হয়। আর ধারণা হল একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত। এর দলীল আল্লাহ্‌ তা'আলার বাণী: “আর নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে। আর আমি যদি আমার রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই-ই, তবে আমি তো নিশ্চয়ই এ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তদুত্তরে তার বন্ধু বিতর্কমূলকভাবে জিজ্ঞাসা করতঃ তাঁকে বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তার পর পূর্ণাঙ্গ করেছেন পুরুষ আকৃতিতে? কিন্তু তিনিই আল্লাহ্‌ আমার রব এবং আমি কাউকেও আমার রবের সাথে শরীক করি না।” [সূরা আল-কাহ্‌ফ: ৩৫-৩৮]

৪) বিমুখ থাকার মাধ্যমে কুফর: এদ্বারা উদ্দেশ্য হল দীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে, স্বীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে এসেছেন। এর দলীল আল্লাহ্‌র বাণী: “কিন্তু যারা কুফরি করেছে তারা সে বিষয় থেকে বিমুখ যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।” [সূরা আল-আহকাফ: ৩]

৫) নিফাকের মাধ্যমে কুফ্‌র: এদ্বারা বিশ্বাসগত নিফাক বুঝানো উদ্দেশ্য, যেমন ঈমানকে প্রকাশ করে গোপনে কুফ্‌র লালন করা। এর দলীল আল্লাহ্‌র বাণী: “এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে। ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না।” [সূরা আল-মুনাফিকূন: ৩]

দ্বিতীয়তঃ ছোট কুফ্‌র
এ ধরনের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে না এবং চিরতরে জাহান্নামে অবস্থান করাকেও তা অপরিহার্য করে না। এ কুফরে লিপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শুধু কঠিন শাস্তির ধমক এসেছে। এ প্রকার কুফ্‌র হল নি‘আমত অস্বীকার করা। কুরআন ও সুন্নার মধ্যে বড় কুফ্‌র পর্যন্ত পৌঁছে না এ রকম যত কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে, আল্লাহ্‌ তা'আলার বাণী: “আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক জনপদের যা ছিলো নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে সর্বদিক হতে তার প্রচুর জীবিকা আসত। অতঃপর তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ অস্বীকার করল। ফলে তারা যা করত তজ্জন্য আল্লাহ্‌ সে জনপদকে আস্বাদন করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদন।” [সূরা আন-নাহল: ১১২] এখানে অনুগ্রহ অস্বীকার করাকে কুফর বলা হয়েছে, যা ছোট কুফর। [আল-ওয়াজিবাতুল মুতাহাত্তিমাতু]

[২] আয়াতে ব্যবহৃত ‘ইনযার’ শব্দের অর্থ, এমন সংবাদ দেয়া যাতে ভয়ের সঞ্চার হয়। এর বিপরীত শব্দ হলো, ‘ইবশার' আর তা এমন সংবাদকে বলা হয় যা শুনে আনন্দ লাভ হয়। সাধারণ অর্থে ‘ইনযার’ বলতে ভয় প্রদর্শন করা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুধু ভয় প্রদর্শনকে ‘ইনযার’ বলা হয় না, বরং শব্দটি দ্বারা এমন ভয় প্রদর্শন বুঝায়, যা দয়ার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। যেভাবে মা সন্তানকে আগুন, সাপ, বিচ্ছু এবং হিংস্র জীবজন্তু হতে ভয় দেখিয়ে থাকেন। ‘নায়ীর’ বা ভয়-প্রদর্শনকারী ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা অনুগ্রহ করে মানবজাতিকে যথার্থ ভয়ের খবর জানিয়ে দিয়েছেন। এ জন্যই নবী-রাসূলগণকে খাসভাবে ‘নাযীর’ বলা হয়। কেননা তারা দয়া ও সতর্কতার ভিত্তিতে অবশ্যম্ভাবী বিপদ হতে ভয় প্রদর্শন করার জন্যই প্রেরিত হয়েছেন। নবীগণের জন্য ‘নাযীর’ শব্দ ব্যবহার করে একদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে, যারা দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতি যথার্থ মমতা ও সমবেদনা সহকারে কথা বলা। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে যে, এ সমস্ত জেদী-অহংকারী লোক, যারা সত্যকে জেনে-শুনেও কুফরীর উপর দৃঢ় হয়ে আছে অথবা অহংকারের বশবর্তী হয়ে কোনো সত্য কথা শুনতে কিংবা সুস্পষ্ট দলীলপ্রমাণ দেখতেও প্রস্তুত নয়, তাদের পথে এনে ঈমানের আলোকে আলোকিত করার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিরামহীন চেষ্টা করেছেন তা ফলপ্রসূ হওয়ার নয়। এদের ব্যাপারে চেষ্টা করা না করা একই কথা।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, কুফ্‌র ও অন্যান্য সব পাপের আসল শাস্তি তো আখেরাতে হবেই; তবে কোনো কোনো পাপের আংশিক শাস্তি দুনিয়াতেও হয়ে থাকে। দুনিয়ার এ শাস্তি ক্ষেত্রবিশেষে নিজের অবস্থা সংশোধন করার সামর্থ্যকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। শুভবুদ্ধি লোপ পায়। মানুষ আখেরাতের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে গাফেল হয়ে গোমরাহীর পথে এমন দ্রুততার সাথে এগুতে থাকে; যাতে অন্যায়ের অনুভূতি পর্যন্ত তাদের অন্তর থেকে দূরে চলে যায়। এ আয়াত থেকে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এ আয়াতে কাফিরদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নসীহত করা না করা সমান বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাদেরকে জানানোর এবং সংশোধনের চেষ্টা করার সওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে। তাই সমগ্র কুরআনে কোনো আয়াতেই এসব লোককে ঈমান ও ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া নিষেধ করা হয়নি। এতে বুঝা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কাজে নিয়োজিত, তা ফলপ্রসূ হোক বা না হোক, সে এ কাজের সওয়াব পাবেই।

[৩] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল যে, সমস্ত মানুষই ঈমান আনুক এবং তার অনুসরণ করে হিদায়াত প্রাপ্ত হউক। তাই আল্লাহ্‌ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করে এটা জানিয়ে দিলেন যে, ঈমান আনা ও হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়। পূর্বে যার জন্য সৌভাগ্য লিখা হয়েছে সেই ঈমান আনবে। আর যার জন্য দূর্ভাগ্য লিখা হয়েছে সে পথভ্রষ্ট হবে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
Les exégèses en arabe:
 
Traduction des sens Verset: (6) Sourate: AL-BAQARAH
Lexique des sourates Numéro de la page
 
Traduction des sens du Noble Coran - Traduction en bengali - Abû Bakr Zakariyâ - Lexique des traductions

ترجمة معاني القرآن الكريم إلى اللغة البنغالية ترجمها د. أبو بكر محمد زكريا.

Fermeture