আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বনী ইসরাইল, আল-কাহফ, মারইয়াম, ত্বা-হা এবং আম্বিয়া এগুলো আমার সবচেয়ে প্রাচীন সম্পদ বা সর্বপ্রথম পুজি। [বুখারী ৪৭৩৯] তাই এ সূরাসমূহের গুরুত্বই আলাদা। তন্মধ্যে সূরা মারইয়ামের গুরুত্ব আরো বেশী এদিক দিয়েও যে, এ সূরায় ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার মা সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা দেয়া হয়েছে যা অনুধাবন করলে নাসারাদের ঈমান আনা সহজ হবে। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, হাবশার বাদশাহ নাজাসী জাফর ইবন আবি তালিবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার কাছে তিনি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার কিছু কি আছে? উম্মে সালামাহ বলেন, তখন জাফর ইবন আবি তালিব বললেন: হ্যাঁ। নাজাসী বললেন: আমাকে তা পড়ে শোনাও। জাফর ইবন আবি তালিব তখন কাফ-হা-ইয়া-‘আইন-সাদ থেকে শুরু করে সূরার প্রথম অংশ শোনালেন। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি, এটা শোনার পর নাজাসী এমনভাবে কাঁদতে থাকল যে, তার চোখের পানিতে দাড়ি পর্যন্ত ভিজে গেল। তার দরবারের আলেমরাও কেঁদে ফেলল। তারা তাদের ধর্মীয় কিতাবসমূহ বন্ধ করে নিল। তারপর নাজাসী বলল: “অবশ্যই এটা এবং যা মূসা নিয়ে এসেছে সব একই তাক থেকে বের হয়েছে।’ [মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৬৬-৩৬৮]
[১] এ শব্দগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা সূরা আল-বাকারার শুরুতে করা হয়েছে।
এটা আপনার রবের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়্যার [১] প্রতি,
[১] হাদীসে এসেছে, যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম কাঠ-মিস্ত্রির কাজ করতেন। [মুসলিম ২৩৭৯] এতে বুঝা গেল যে, নবী-রাসূলগণ জীবিকা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কারিগরি পেশা অবলম্বন করতেন। তারা কখনো অপরের উপর বোঝা হতেন না।
[১] এতে জানা গেল যে, দোআ অনুচ্চস্বরে ও গোপনে করাই উত্তম। কাতাদা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্ৰ মন জানেন এবং গোপন শব্দ শুনেন। [তাবারী] তিনি যে দো'আ করেছিলেন তা-ই পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে [১], বার্ধক্যে আমার মাথা শুভ্রোজ্জল হয়েছে [২]; হে আমার রব! আপনাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থকাম হইনি [৩]।
[১] অস্থির দুর্বলতা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, অস্থিই দেহের খুটি। অস্থির দুর্বলতা সমস্ত দেহের দুর্বলতার নামান্তর। [ফাতহুল কাদীর]
[২] اشتعل এর শাব্দিক অর্থ, প্রজ্জ্বলিত হওয়া, এখানে চুলের শুভ্রতাকে আগুনের আলোর সাথে তুলনা করে তা সমস্ত মস্তকে ছড়িয়ে পড়া বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[৩] এখানে দো'আর পূর্বে যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম তার দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। এর একটি কারণ এই যে, এমতাবস্থায় সন্তান না আসাই স্বাভাবিক। এখানে দ্বিতীয় কারণ এটাও যে, দো'আ করার সময় নিজের দুর্বলতা, দুর্দশা ও অভাবগ্ৰস্থতা উল্লেখ করা দোআ কবুল হওয়ার পক্ষে সহায়ক। [কুরতুবী] তারপর বলছেন যে, আপনাকে ডেকে আমি কখনও ব্যৰ্থকাম হইনি। আপনি সবসময় আমার দোআ কবুল করেছেন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
‘যে আমার উত্তরাধিকারিত্ত করবে [১] এবং উত্তরাধিকারিত্ত করবে ইয়া’কুবের বংশের [২] এবং হে আমার রব! তাকে করবেন সন্তোষভাজন।
[১] আলেমদের মতে, এখানে উত্তরাধিকারিত্বের অর্থ নবুওয়াত-রিসালত তথা ইলমের উত্তরাধিকার। আর্থিক উত্তরাধিকারিত্ব নয়। কেননা প্রথমতঃ যাকারিয়্যার কাছে এমন কোনো অর্থ সম্পদ ছিল বলেই প্রমাণ নেই, যে কারণে চিন্তিত হবেন যে, এর উত্তরাধিকারী কে হবে। একজন পয়গম্বরের পক্ষে এরূপ চিন্তা করাও অবান্তর। এছাড়া যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম নিজে কাঠ-মিস্ত্রি ছিলেন। নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কাঠ-মিস্ত্রির কাজের মাধ্যমে এমন সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হয় না যার জন্য চিন্তা করতে হয়। দ্বিতীয়ত: সাহাবায়ে কেরামের ইজমা তথা ঐকমত্য সম্বলিত এক হাদীসে বলা হয়েছে: "নিশ্চিতই আলেমগণ পয়গম্বরগণের ওয়ারিশ। পয়গম্বরগণ কোনো দীনার ও দিরহাম রেখে যান না; বরং তারা ইলম ও জ্ঞান ছেড়ে যান। যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করে, সে বিরাট সম্পদ হাসিল করে।” [আবু দাউদ ৩৬৪১, ইবনে মাজাহ ২২৩, তিরমিয়ী ২৬৮২] তৃতীয়ত: স্বয়ং আলোচ্য আয়াতে এর
يَرِّثُنِىْ وَيَرِثُ مِنْ اٰلِ يَعْقُوْبَ
বাক্যের যোগ এরই প্রমাণ যে, এখানে আর্থিক উত্তরাধিকারিত্ব বোঝানো হয়নি। কেননা যে পুত্রের জন্মলাভের জন্যে দো'আ করা হচ্ছে, তার পক্ষে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের উত্তরাধিকার হওয়াই যুক্তিযুক্ত; কিন্তু তাদের নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনরা যাদের উল্লেখ আয়াতে করা হয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে আত্মীয়তায় ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম থেকে অধিক নিকটবর্তী। নিকটবর্তী রেখে দূরবর্তীর উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করা উত্তরাধিকার আইনের পরিপন্থী। [ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ আমি কেবলমাত্র নিজের উত্তরাধিকারী চাই না বরং ইয়াকুব বংশের যাবতীয় কল্যাণের উত্তরাধিকারী চাই। সে নবী হবে, যেমন তার পিতৃপুরুষরা যেভাবে নবী হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তিনি বললেন, ‘হে যাকারিয়্যা! আমরা আপনাকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া; এ নামে আগে আমরা কারো নামকরণ [১] করিনি।
[১] سميًّا শব্দের অর্থ সমনামও হয় এবং সমতুল্যও হয়। এখানে প্রথম অর্থ নেয়া হলে আয়াতের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট যে, তার পূর্বে ইয়াহইয়া নামে কারও নামকরণ করা হয়নি। [তাবারী] নামের এই অনন্যতা ও অভূতপূর্বতাও কতক বিশেষ গুণে তাঁর অনন্যতার ইঙ্গিতবহ ছিল। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ইয়াহইয়া অর্থ জীবিতকরণ, তিনি এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ ঈমানের মাধ্যমে জীবন্ত রেখেছিলেন। [তাবারী] পক্ষান্তরে যদি দ্বিতীয় অর্থ নেয়া হয় তখন উদ্দেশ্য হবে, তার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যা তার পূর্ববতী নবীগণের কারও মধ্যে ছিল না। সেসব বিশেষ গুণে তিনি তুলনাহীন ছিলেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এতে জরুরী নয় যে, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম পূর্ববতী নবীগণের চেয়ে সর্বাবস্থায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন। কেননা তাদের মধ্যে ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ও মূসা কলীমুল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত ও সুবিদিত।
তিনি বললেন, ‘এরূপই হবে। আপনার রব বললেন, এটা আমার জন্য সহজ; আমি তো আগে আপনাকে সৃষ্টি করেছি যখন আপনি কিছুই ছিলেন না [১]।
[১] অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্ব প্ৰদান করা এটা তো মহান আল্লাহরই কাজ। তিনি ব্যতীত কেউ কি সেটা করতে পারে? তিনি যখন চাইলেন তখন বন্ধ্যা যুগলের ঘরে এমন অনন্য নাম ও গুণসম্পন্ন সন্তান প্ৰদান করলেন। এভাবে আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছুকেই অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে নিয়ে আসেন। এর জন্য শুধু তাঁর ইচ্ছাই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমরা তাকে আগে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না?” [সূরা মারইয়াম ৬৭] আরও বলেন, “কালপ্রবাহে মানুষের উপর তো এমন এক সময় এসেছিল যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।” [সূরা আল-ইনসান ১] [দেখুন, ইবন কাসীর]
যাকারিয়্যা বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে একটি নিদর্শন দিন।’ তিনি বললেন, ‘আপনার নিদর্শন এ যে, আপনি সুস্থ [১] থাকা সত্ত্বেও কারো সাথে তিন দিন কথাবার্তা বলবেন না।’
[১] سويًّا শব্দের অর্থ সুস্থ। শব্দটি একথা বোঝানোর জন্য যুক্ত করা হয়েছে যে, যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম এর কোনো মানুষের সাথে কথা না বলার এ অবস্থাটি কোনো রোগবশতঃ ছিল না। এ কারণেই আল্লাহর যিকর ও ইবাদতে তার জিহবা তিন দিনই পূর্ববৎ খোলা ছিল; বরং এ অবস্থা মু'জেযা ও গর্ভসঞ্চারের নিদর্শন স্বরূপই প্রকাশ পেয়েছিল। [ইবন কাসীর]
তারপর তিনি (‘ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট) কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে আসলেন এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বললেন।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
検索結果:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".