অতঃপর তারা যখন তাকে নিয়ে গেল এবং কূপের গভীরে নিক্ষেপ করতে একমত হল, আর এ অবস্থায় আমরা তাকে জানিয়ে দিলাম, ‘তুমি তাদেরকে এ কাজের কথা অবশ্যই বলে দেবে’; অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারবে না [১]।
[১] এ আয়াতে বিভিন্ন প্রকার অর্থ করা হয়ে থাকে :
১) ইবন আব্বাস বলেন, ভাইয়েরা যখন ইউসুফ আলাইহিস সালামকে জঙ্গলে নিয়ে গেল এবং তাকে হত্যা করার ব্যাপারে কুপের গভীরে নিক্ষেপ করতে সবাই ঐকমত্যে পৌছল, তখন আল্লাহ তা'আলা ওহীর মাধ্যমে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সংবাদ দিলেন যে, একদিন আসবে, যখন তুমি ভাইদের কাছে তাদের এ কু-কর্মের কথা ব্যক্ত করবে। তারা তখন তোমার অবস্থানের ব্যাপারটি সম্পর্কে কিছু কল্পনাই করতে পারবে না। [ইবন কাসীর]
২) কাতাদাহ বলেন, এ আয়াতের অর্থ- আল্লাহ্ তা'আলা ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামের কাছে কুপের মধ্যে ওহী প্রেরণ করে জানালেন যে, আপনি অচিরেই তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করবেন। অথচ ইউসুফের ভাইয়েরা সে ওহী সম্পর্কে কিছুই জানতে পারলনা। [ইবন কাসীর]
৩) ইমাম কুরতুবী বলেন, এ ওহী সম্পর্কে দু'প্রকার ধারণা সম্ভবপর। (এক) কুপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর তার সাস্তুনা ও মুক্তির সুসংবাদ দানের জন্য এ ওহী আগমন করেছিল। (দুই) কুপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ্ তা'আলা ওহীর মাধ্যমে ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামকে ভবিষ্যত ঘটনাবলী বলে দিয়েছিলেন। এতে আরো বলে দিয়েছিলেন যে, তুমি এভাবে ধ্বংস হওয়ার কবল থেকে মুক্ত থাকবে এবং এমন পরিস্থিতি দেখা দেবে যে, তুমি তাদেরকে তিরস্কার করার সুযোগ পাবে; অথচ তারা তোমাকে চিনবেও না যে, তুমিই তাদের ভাই ইউসুফ।
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম [১] এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না যদিও আমরা সত্যবাদী হই।’
[১] ইবনুল আরাবী ‘আহ্কামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, পারস্পরিক (দৌড়) প্রতিযোগিতা শরীআতসিদ্ধ এবং একটি উত্তম খেলা। এটা জিহাদেও কাজে আসে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। তাছাড়া ঘোড়দৌড়ও প্রমাণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা করেছেন। [দেখুন, বুখারী ২৮৭৯; মুসলিম ১৮৭০] সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সালামা ইবনে আকওয়া’ জনৈক ব্যক্তির সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। [দেখুন, মুসলিম ১৮০৭; মুসনাদে আহমাদ ৪/৫২] উল্লেখিত আয়াত ও বর্ণনা দ্বারা আসল ঘোড়দৌড়ের বৈধতা প্রমাণিত হয়। এছাড়া সাধারণ দৌড়, তীরে লক্ষ্যভেদ ইত্যাদিতেও প্রতিযোগিতা করা বৈধ। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পক্ষকে তৃতীয় পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করাও জায়েয। কিন্তু পরস্পর হার-জিতে কোনো টাকার অংশ শর্ত করা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা কুরআনুল কারীমে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। [আহকামুল কুরআন; অনুরূপ দেখুন, কুরতুবী]
আর তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে। কাজেই উত্তম ধৈর্যই আমি গ্রহণ করব। আর তোমরা যা বর্ণনা করছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্যস্থল [১]।
[১] অর্থাৎ ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভ্রাতারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে এনেছিল, যাতে পিতার মনে বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, বাঘই তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু ইয়াকুব ‘আলাইহিস্ সালাম ঠিকই বুঝলেন যে, ইউসুফকে বাঘে খায়নি; বরং তোমাদেরই মন একটি বিষয় খাড়া করেছে। এখন আমার জন্য উত্তম এই যে, ধৈর্য্যধারণ করি এবং তোমরা যা বল, তাতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি।
আর এক দল যাত্রীদল আসল, অতঃপর তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পাঠালে সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল। ‘কি সুখবর! এ যে এক কিশোর! [১] এবং তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল [২]। আর তারা যা করেছিল সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবগত [৩]।
[১] ঘটনাচক্রে একটি কাফেলা এ স্থানে এসে যায়। কোনো কোনো তাফসীরে বলা হয়েছে: এ কাফেলা সিরিয়া থেকে মিসর যাচ্ছিল। পথভুলে এ জনমানবহীন জঙ্গলে এসে উপস্থিত হয়। [কুরতুবী] তারা পানি সংগ্রহকারীকে কুপে প্রেরণ করল। লোকটি এই কুপে পৌঁছলেন এবং বালতি নিক্ষেপ করলেন। ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম সর্বশক্তিমানের সাহায্য প্রত্যক্ষ করে বালতির রশি শক্ত করে ধরলেন। পানির পরিবর্তে বালতির সাথে একটি সমুজ্জ্বল মুখমণ্ডল দৃষ্টিতে ভেসে উঠল। এ মুখমণ্ডলের ভবিষ্যত মাহাত্ম্য থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেও উপস্থিত ক্ষেত্রেও অনুপম সৌন্দর্য ও গুণগত উৎকর্ষের নিদর্শনাবলী তার মাহাত্ম্য কম পরিচায়ক ছিল না। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে কুপের তলদেশ থেকে ভেসে উঠা এই অল্পবয়স্ক, অপরূপ ও বুদ্ধিদীপ্ত বালককে দেখে লোকটি সোল্লাসে চীৎকার করে উঠল; (يٰبُشْرٰى هٰذَا غُلٰمٌ) -আরে, আনন্দের কথা- এ তো বড় চমৎকার এক কিশোর বের হয়ে এসেছে। ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাতের পর দেখলাম যে, আল্লাহ তা'আলা সমগ্র বিশ্বের রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেক তাকে দান করেছেন।” [মুসলিম ১৬২]
[২] অর্থাৎ তারা তাকে একটি পণ্যদ্রব্য মনে করে গোপন করে ফেলল। উদ্দেশ্য এই যে, শুরুতে এ কিশোরকে দেখে অবাক বিস্ময়ে চীৎকার করে উঠল; কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করে স্থির করল যে, এটা জানাজানি না হওয়া উচিত এবং গোপন করে ফেলা দরকার, যাতে একে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ লাভ করা যায়। সমগ্র কাফেলার মধ্যে এ বিষয় জানাজানি হয়ে গেলে সবাই এতে অংশীদার হয়ে যাবে। এরূপ অর্থও হতে পারে যে, ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামের ভ্রাতারা বাস্তব ঘটনা গোপন করে তাকে পণ্যদ্রব্য করে নিল। এমতাবস্থায় আয়াতের অর্থ এই হবে যে, ইউসুফ ভ্রাতারা নিজেরাই ইউসুফকে পণ্যদ্রব্য স্থির করে বিক্রি করে দিল। [তাবারী; কুরতুবী]
[৩] অর্থাৎ তাদের সব কর্মকাণ্ড আল্লাহ্ তা'আলার জানা ছিল। উদ্দেশ্য এই যে, ইউসুফ ভ্রাতারা কি করবে এবং তাদের কাছ থেকে ক্রেতা কাফেলা কি করবে, তা সবই আল্লাহ্ তা'আলার জানা ছিল। তিনি তাদের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়ারও শক্তি রাখতেন। কিন্তু বিশেষ কোনো রহস্যের কারণেই আল্লাহ্ তা'আলা এসব পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করেননি; বরং নিজস্ব পথে চলতে দিয়েছেন। এর মধ্যে আল্লাহ্ তা'আলা তার হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এটার প্রতি ইঙ্গিত করলেন যে, আপনার কাওম আপনার উপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে তা আমার অজানা নয়, আমি এটার প্রতিকার করতে পারি। কিন্তু আমি তাদেরকে ছাড় দেই। তারপর উত্তম পরিণাম আপনার জন্যই হবে। আর তাদের বিচার আপনিই করবেন। যেমনটি ইউসুফ আলাইহিস সালামের উপর তার ভাইদের প্রাধান্য ও বিচারের ভার পড়েছিল। [ইবন কাসীর]
আর তারা তাকে বিক্রি করল স্বল্প মূল্যে, মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে [১] এবং তারা ছিল তার ব্যাপারে অনাগ্রহী [২]।
[১] আরবী ভাষায় - شَراء শব্দ ক্রয় করা ও বিক্রয় করা উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ স্থলেও উভয় অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি সর্বনামকে ইউসুফ ভ্রাতাদের দিকে ফেরানো হয়, তবে বিক্রয় করার অর্থ হবে এবং কাফেলার লোকদের দিকে ফেরানো হলে ক্রয় করার অর্থ হবে। [ইবন কাসীর] উদ্দেশ্য এই যে, ইউসুফ ভ্রাতারা বিক্রয় করে দিল কিংবা কাফেলার লোকেরা ইউসুফকে খুব সস্তা মূল্যে অর্থাৎ নামে মাত্র কয়েকটি দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করল। আয়াতে বর্ণিত بَخْسٍ এ এর দুটি অর্থ হতে পারে: (এক) খুব কম মূল্যে; [তাবারী] কারণ তারা বাস্তবিকই তাকে খুব কম মূল্যে বিক্রয় করেছিল। (দুই) অন্যায় বা নিকৃষ্ট বিক্রয় সম্পন্ন করল; কারণ তারা স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করেছিল। স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করা হারাম। [কুরতুবী] ইমাম কুরতুবী আরও বলেন, আরব বণিকদের অভ্যাস ছিল, তারা মোটা অঙ্কের লেন-দেন পরিমাপের মাধ্যমে করত এবং চল্লিশের উর্ধ্বে নয়, এমন লেন-দেন গণনার মাধ্যমে করত। তাই دَرَاهمَ শব্দের সাথে مَعْدُوْدَةٍ (গুণাগুনতি) শব্দের প্রয়োগ থেকে বোঝা যায় যে, দিরহামের পরিমাণ চল্লিশের কম ছিল। আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদের বর্ণনায় এসেছে, বিশ দিরহামের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছিল এবং দশ ভাই দুই দিরহাম করে নিজেদের মধ্যে তা বন্টন করে নিয়েছিল। [কুরতুবী]
[২] এর দুটি অর্থ হতে পারে- (এক) ইউসুফের ভাইয়েরা ইউসুফ-এর ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাসক্ত ছিল, তাই তারা এত কমদামে বিক্রয় করে দিয়েছিল। [ইবন কাসীর] ইউসুফকে কম মূল্যে বিক্রয় করার কারণ আবার দুটি হতে পারে। প্রথমতঃ এ কারণে যে, তারা এ মহাপুরুষের সঠিক মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। দ্বিতীয়তঃ তাদের আসল লক্ষ্য তার দ্বারা টাকা-পয়সা উপার্জন করা ছিল না; বরং পিতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়াই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তাই শুধু বিক্রয় করে দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি; বরং তারা আশংকা করছিল যে, কাফেলার লোকেরা তাকে এখানেই ছেড়ে যাবে এবং অতঃপর সে কোনো রকমে পিতার কাছে পৌঁছে আগাগোড়া চক্রান্ত ফাঁস করে দেবে। তাই তাফসীরবিদ মুজাহিদের বর্ণনা অনুযায়ী, তারা কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করল। যখন কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেল, তখন তারা কিছুদূর পর্যন্ত কাফেলার পিছনে পিছনে গেল এবং তাদেরকে বলল: দেখ, এর পলায়নের অভ্যাস রয়েছে। একে মুক্ত ছেড়ে দিও না; বরং বেঁধে রাখ। [কুরতুবী; সাদী] (দুই) এ আয়াতের আরেকটি অর্থ হতে পারে যে, কাফেলার লোকেরা ইউসুফের ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিচ্ছিল না, কেননা, কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুর মূল্য আর কতই হতে পারে? [ফাতহুল কাদীর] কাফেলা বিভিন্ন মনযিল অতিক্রম করে মিশর পর্যন্ত পৌছে ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামকে বিক্রি করে দিল।
আর মিসরের যে ব্যক্তি তাকে কিনেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘এর থাকার সম্মানজনক ব্যবস্থা কর, সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে বা আমরা একে পুত্ররূপেও গ্রহণ করতে পারি [১]।‘ আর এভাবেই আমরা ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম [২]; এবং যাতে আমরা তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেই [৩]। আর আল্লাহ্ তাঁর কাজ সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না [৪]।
[১] অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামকে মিসরে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বলল: ইউসুফের বসবাসের সুন্দর বন্দোবস্ত কর। ইবন কাসীর বলেন, যে ব্যক্তি ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামকে ক্রয় করেছিলেন, তিনি ছিলেন মিসরের অর্থমন্ত্রী। আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, দুনিয়াতে তিন ব্যক্তি অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং চেহারা দেখে শুভাশুভ নিরূপণকারী প্রমাণিত হয়েছেন। প্রথম- আযীযে মিসর। তিনি স্বীয় নিরূপণ শক্তি দ্বারা ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামের গুণাবলী অবহিত হয়ে স্ত্রীকে উপরোক্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়- ঐ কন্যা, যে মূসা ‘আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে তার পিতাকে বলেছিল: “পিতা, তাকে কর্মচারী রেখে দিন। কেননা, উত্তম কর্মচারী ঐ ব্যক্তি, যে সবল, সুঠাম ও বিশ্বস্ত হয়।" [আল-কাসাস ২৬] তৃতীয়-আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, যিনি ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে পরবর্তী খলীফা মনোনীত করেছিলেন। [তাবারী; ইবনে কাসীর]
[২] অর্থাৎ যেভাবে ইউসুফকে কুপ থেকে বের করে আযীযে মিসর পর্যন্ত পৌছে দিলাম তেমনিভাবে তাকে আমি যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
[৩] (وَ لِنُعَلِّمَهٗ مِنۡ تَاۡوِیۡلِ الۡاَحَادِیۡثِ) – এখানে শুরুতে واو কে عطف অর্থে নিলে এ অর্থেরই একটি বাক্য উহ্য মেনে নেয়া হবে। অর্থাৎ আমি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাতে তিনি এ সময়টুকুতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। আহকাম বিষয়ক ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিষয়ক সব জ্ঞান অর্জন করার সুযোগই তিনি লাভ করতে পারবেন। সুতরাং এভাবে তাকে আমরা বাক্যাদির পরিপূর্ণ মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি শিক্ষা দেই। [সা’দী] অথবা এ বাক্যটি পূর্ববতী বাক্যের কারণ হিসেবে এসেছে অর্থাৎ তাকে আমি যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠা দান করেছি, যার ভূমিকা হিসাবে আমি তাকে স্বপ্লের তা'বীর শিক্ষা দিয়েছি। [বাগভী] বস্তুতঃ তিনি এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন অথবা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পূর্ব ঘোষিত বাণী, আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন’ এ কথাটির সত্যায়ণ হিসেবে আমি আপনাকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। [কুরতুবী]
[৪] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় কর্মে প্রবল ও শক্তিমান। তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। [ইবন কাসীর] কেউই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে গিয়ে কোনো কাজ হাসিল করতে পারে না। কোনো কিছু করতে হলে তিনি তো শুধু বলেন ‘হও’ আর সাথে সাথে তা হয়ে যায়। [কুরতুবী] এর উদাহরণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন, ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম চেয়েছিলেন যেন ইউসুফের স্বপ্ন তার ভাইয়েরা না জানে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তারা জানুক, সুতরাং তাই হয়েছে। ইউসুফের ভাইয়েরা চেয়েছিল ইউসুফকে হত্যা করতে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, সে বেঁচে থাকবে এবং কর্ণধার হবে, বাস্তবে হয়েছেও তাই। ইউসুফের ভাইয়েরা চেয়েছিল ইয়াকুবের মন থেকে ইউসুফের কথা ঘুচে যাক কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তা জাগরুক থাকুক। সুতরাং ইয়া’কুব সর্বক্ষণ ইউসুফের কথাই বলেছিল। তারা চাইলো যে, তাদের পিতাকে চোখের পানি দিয়ে ধোকা দিবে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, ইয়া’কুব তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন না, ফলে তাই হলো। আযীয পত্নী চেয়েছিল ইউসুফকে দোষারোপ করতে কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তিনি দোষমুক্ত ঘোষিত হবেন, ফলে আযীযের মুখ থেকে আযীয পত্নীই দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ পেলেন। ইউসুফ চাইলেন যে, শরাব পরিবেশনকারী তার কথা বাদশাহকে বলে তাকে বিমুক্ত করে দিক, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, শরাব পরিবেশনকারী তা ভুলে যাক, ফলে তাই হলো। এসবই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তার ইচ্ছায় প্রবল। [কুরতুবী]
কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা'আলা ইউসুফ আলাইহিস সালামের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রবল। তিনি নিজে ইউসুফের কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তার কোনো ব্যাপার অন্যের উপর ন্যস্ত করেন নি। যাতে করে তার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রকারীর যড়যন্ত্র সফল হতে না পারে। [বাগভী]
তারপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্য বোঝে না। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশ বলে সকল মানুষকেই বোঝানো হয়েছে। কারণ, কেউই গায়েব জানে না। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশই উদ্দেশ্য। কারণ, কোনো কোনো নবী-রাসূলকে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কোন কাজের হিকমত সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবহিত করেন। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশ মানুষ বলে মুশরিক এবং যারা তাকদীরের উপর ঈমান রাখে না তাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [কুরতুবী]
আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম [১]। আর এভাবেই আমরা ইহসানকারীদেরকে পুরস্কৃত করি [২]।
[১] অর্থাৎ যখন ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম পূর্ণ শক্তি ও যৌবনে পদার্পণ করলেন, তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও বুৎপত্তি দান করলাম। ‘শক্তি ও যৌবন’ কোনো বয়সে অর্জিত হল, এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। আর ইলম বা বুৎপত্তি দান করার অর্থ এস্থলে নবুওয়াত দান করা। [ইবন কাসীর] মূলতঃ কুরআনের ভাষায় সাধারণভাবে এমন শব্দের মানে হয় “নবুওয়াত দান করা”। ফায়সালা করার শক্তিকে কুরআনের মূল ভাষ্যে বলা হয়েছে “হুকুম”। এ হুকুম অর্থ কর্তৃত্বও হয়। [কুরতুবী]
[২] আমি ইহসানকারীদেরকে এমনিভাবে প্রতিদান দিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য এই যে, নিশ্চিত ধ্বংসের কবল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজত্ব ও সম্মান পর্যন্ত পৌছানো ছিল ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামের সদাচরণ, আল্লাহ ভীতি ও সৎকর্মের পরিণতি। এটা শুধু তারই বৈশিষ্ট নয়, যে কেউ এমন সৎকর্ম করবে, সে এমনিভাবে আমার পুরস্কার লাভ করবে। সুতরাং যেভাবে আমি ইউসুফকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত পার করে সফলতা দিয়েছি তেমনি আপনাকেও হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার কাওমের মুশরিকদের শক্রতা থেকে নাজাত দেব এবং আপনাকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করব। [কুরতুবী]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
සෙවීමේ ප්රතිඵල:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".