যেদিন প্রত্যেকে সে যা ভাল আমল করেছে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তা উপস্থিত পাবে, সেদিন সে কামনা করবে- যদি তার এবং এর মধ্যে বিশাল ব্যবধান থাকত [১]! আল্লাহ্ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন। আর আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল।
[১] অর্থাৎ তার মধ্যে এবং তার আমলের মধ্যে বিশাল ব্যবধান কামনা করবে। তারা চাইবে যেন তাদের আমলনামা তাদেরকে দেয়া না হয়।
বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর [১], আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
চতুর্থ রুকু‘
[১] ভালোবাসা একটি গোপন বিষয়। কারো প্রতি কারো ভালোবাসা আছে কি না, অল্প আছে কি বেশী আছে, তা জানার একমাত্র মাপকাঠি হল অবস্থা ও পারস্পরিক ব্যবহার দেখে অনুমান করা অথবা ভালোবাসার চিহ্ন ও লক্ষণাদি দেখে জেনে নেয়া। যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসার দাবীদার এবং আল্লাহ্র ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খী, আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় ভালোবাসার মাপকাঠি তাদের বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ জগতে যদি কেউ আল্লাহ্র ভালোবাসার দাবী করে, তবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণের কষ্টিপাথরে তা যাচাই করে দেখা অত্যাবশ্যকীয়। এতে আসল ও মেকী ধরা পড়বে। যার দাবী যতটুকু সত্য হবে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে ততটুকু যত্নবান হবে এবং তার শিক্ষার আলোকে পথের মশালরূপে গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে যার দাবী দুর্বল হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে তার দুর্বলতা সেই পরিমানে পরিলক্ষিত হবে। ভালোবাসা অনুসারে মানুষের হাশরও হবে। হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এর জন্য কি তৈরী করেছ? লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন সালাত, সাওম ও সাদকা করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস।” [বুখারী ৬১৭১]
বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না [১]।
[১] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, “নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।” এ থেকে বুঝা গেল যে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা ফরয। আল্লাহ্র আনুগত্য ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্যে তারতম্য করা যাবে না। আল্লাহ্র নির্দেশ যেমন মানতে হবে, তেমনি রাসূলের নির্দেশও মানতে হবে। কেউ আল্লাহ্র আনুগত্য করল কিন্তু রাসূলের আনুগত্য করল না, সে কুফরীর গণ্ডি থেকে বের হতে পারল না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি যেন কাউকে এ রকম না দেখতে পাই যে, সে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে, তখন তার কাছে আমি যে সমস্ত আদেশ-নিষেধ দিয়েছি সে সমস্ত আদেশ-নিষেধের কোনো কিছু এসে পড়ল, তখন সে বলল: আমরা জানি না, আমরা আল্লাহ্র কিতাবে যা পেয়েছি তার অনুসরণ করেছি।" [আবু দাউদ ৪৬০৫; তিরমিযী ২৬৬৩; ইবন মাজাহ ১৩]
সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে রাসূলের আদেশ-নিষেধ পাওয়ার পর সেটা কুরআনে নেই বলে বাহানা করার কোনো সুযোগ নেই। যদি তা করা হয় তবে তা হবে সুস্পষ্ট কুফরী।
নিশ্চয় আল্লাহ্ আদম, নূহ ও ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের [১] বংশধরকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের উপর মনোনীত করেছেন [২]।
[১] এখানে ইমরান বলতে মারইয়াম আলাইহাস সালামের পিতাকে বুঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মূসা ‘আলাইহিস সালামের পিতার নামও ইমরান ছিল। [মুসলিম ১৬৫] তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। পরবর্তী আয়াত থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
[২] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে ইবরাহীম, ইমরান, ইয়াসীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের মধ্যে যারা ঈমানদার কেবল তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাদেরকেই আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বাণী ও রহমত বহনের জন্য মনোনীত করেছেন। এদের বংশধরদের মধ্যে যারা কাফের বা মুশরিক তাদের বোঝানো হয়নি। [তাবারী]
স্মরণ করুন, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমার গর্ভে যা আছে নিশ্চয় আমি তা একান্ত আপনার জন্য মানত করলাম [১]। কাজেই আপনি আমার নিকট থেকে তা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।'
[১] কাতাদা বলেন, ইমরানের স্ত্রী তার গর্ভে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে দিয়ে দেয়ার মনস্থ করেছিলেন। তারা সাধারণতঃ পুরুষ সন্তানদেরকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। যদি কাউকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হত, সে কখনো উপাসনালয় ত্যাগ করত না। তার কাজই হতো উপাসনালয়ের দেখাশোনা করা। কোনো মহিলাকে এ কাজের জন্য দেয়া হতো না। কারণ, মহিলাকে এ কাজের উপযুক্ত বিবেচনা করা হতো না। কারণ, তার সৃষ্টিগত কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন, হায়েয ও নিফাস। যা উপাসনালয়ে অবস্থানের জন্য উপযুক্ত ছিল না। এ জন্যই ইমরান স্ত্রী যখন সন্তান প্রসব করে দেখলেন যে, তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন, তখন কি করবেন স্থির করতে না পেরে বলেছিলেন, ‘রব! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি’। পরবর্তীতে মানত অনুসারে সে কন্যা সন্তানকেই উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। [তাবারী]
তারপর যখন সে তা প্রসব করল তখন সে বলল, ‘হে আমার রব! নিশ্চয় আমি তা প্রসব করেছি কন্যারুপে।’ সে যা প্রসব করেছে তা সম্পর্কে আল্লাহ্ সম্যক অবগত। আর পুত্রসন্তান কন্যা সন্তানের মত নয়। আর আমি তার নাম মারিয়াম রেখেছি [১] এবং অভিসপ্ত শয়তান হতে তার ও তার সন্তানকে আপনার আশ্রয়ে দিচ্ছি [২]।’
[১] এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, জন্মের দিনই নাম রাখা জায়েয। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "গত রাতে আমার এক সন্তান জন্ম হয়েছে, আমি তার নাম আমার পিতার নামানুসারে ইবরাহীম রাখলাম। [মুসলিম ২৩১৫]
অন্য এক হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল, গত রাতে আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, আমি তার কি নাম রাখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার নাম রাখ আব্দুর রহমান’। [বুখারী ৬১৮৬, মুসলিম ২১৩৩]
[২] এ দো'আর বরকতে আল্লাহ্ তা'আলা মারইয়াম ও ঈসা ‘আলাইহিমাস্ সালামকে শয়তান থেকে হেফাযত করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে সাথে শয়তান তাকে স্পর্শ করে, ফলে সে চিৎকার করে। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার সন্তান এর ব্যতিক্রম’। [বুখারী ৩৪৩১, ৪৫৪৮, মুসলিম ২৩৬৬]
তারপর তার রব তাকে ভালোভাবেই কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন-পালন করলেন [১] এবং তিনি তাকে যাকারিয়্যার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন [২]। যখনই যাকারিয়্যা তার কক্ষে প্রবেশ করত তখনই তার নিকট খাদ্য সামগ্রী দেখতে পেত। তিনি বলতেন, ‘হে মারিয়াম! এ সব তুমি কথায় পেলে?’ (মার্ইয়াম) বলতেন, ‘তা আল্লাহ্র নিকট হতে।’ নিশ্চয় আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে অপরিমিত রিয্ক দান করেন।
[১] এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, তিনি তাকে দেহসৌষ্ঠবে মনোমুগ্ধকর বানিয়েছিলেন, ফলে যে কেউ তাকে দেখত তার ভক্ত হয়ে যেত। কাতাদা বলেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, মারইয়াম ও ঈসা দুনিয়ার অন্যান্য আদম সন্তানের মত গোনাহের কাজে জড়াত না। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
[২] কিভাবে মারইয়াম আলাইহাস সালাম যাকারিয়্যা ‘আলাইহিস সালামের তত্তাবধানে আসলেন এখানে বর্ণনা করা হয় নি। পরবর্তী ৪৪ নং আয়াত থেকে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। যাদেরকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হতো তারা সাধারণত উপাসনালয়েই থাকত। তাদের আর কোনো অভিভাবকের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু যেহেতু মারইয়াম ‘আলাইহিস সালাম কন্যাসন্তান ছিলেন, সেহেতু তৎকালীন সবাই চিন্তা করলেন যে, তার তত্ত্বাবধান করার মত লোকের প্রয়োজন। সবাই তার তত্ত্বাবধান চাচ্ছিল। এ অবস্থায় তাদের কলম দিয়ে তারা লটারী করেছিল। সে লটারীতে যাকারিইয়্যা ‘আলাইহিস সালামের নাম উঠে এসেছিল।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
සෙවීමේ ප්රතිඵල:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".