আর তারা মনে করেছিল যে, তাদের কোনো বিপর্যয় হবে না [১]; ফলে তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিল। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবাহ কবুল করেছিলেন। তারপর তাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হয়েছিল [২]। আর তারা যা আমল করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
[১] বনী ইসরাঈলের কাছে তাদের রাসূল যখন কোনো নির্দেশ নিয়ে আসতেন যা তাদের রুচি-বিরুদ্ধ হত, তখন অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তারা আল্লাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করত এবং নবীদের মধ্যে কারো প্রতি মিথ্যারোপ করত এবং কাউকে হত্যা করত। এটি ছিল আল্লাহর প্রতি ঈমান ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা। এখন আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের অবস্থা এ দ্বারা অনুমান করা যায় যে, এত সব নির্মম অত্যাচার ও বিদ্ৰোহীসুলভ অপরাধে লিপ্ত হয়েও তারা সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকত। ভাবখানা এই যে, এসব কুকর্মের জন্য কোনো সাজাই ভোগ করতে হবে না এবং কোনো প্রকার অশুভ পরিণতি কখনো তাদের সামনে আসবে না। কেননা তারা মনে করতে থাকে যে, তারা আল্লাহর পরিবার-পরিজন ও তাঁর প্রিয় বান্দা; সুতরাং তাদের কোনো অপরাধই ধর্তব্য নয়। এরূপ ধারণার কারণে তারা আল্লাহর নিদর্শন ও হুশিয়ারী থেকে সম্পূর্ণ অন্ধ ও বধির হয়ে যায় এবং যা গৰ্হিত তাই করতে থাকে, এমনকি কিছুসংখ্যক নবীকে তারা হত্যা করেছে আর কিছুসংখ্যককে বন্দী করে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা বাদশাহ বখ্তে নসরকে তাদের উপর চাপিয়ে দেন। এরপর দীর্ঘদিন অতীত হলে জনৈক পারস্য সম্রাট তাদেরকে বখ্তে নসরের লাঞ্ছনা ও অবমাননার কবল থেকে উদ্ধার করে বাবেল থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে আসেন। তখন তারা তাওবাহ করে এবং অবস্থা সংশোধনে মনোনিবেশ করে। আল্লাহ তাদের সে তাওবাহ কবুল করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা আবার দুস্কৃতিতে মেতে উঠে এবং অন্ধ ও বধির হয়ে যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া ‘আলাইহিমাস সালামকে হত্যা করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে। এমনকি ঈসা ‘আলাইহিস সালামকেও হত্যা করতে উদ্যত হয়। [আইসারুত তাফাসীর, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর, আততাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
[২] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, বনী ইসরাঈল দু’বার অন্ধ ও বধির হয়েছিল। যার মাঝে আল্লাহ তাদের তাওবাহও কবুল করেছিলেন। এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে সূরা আল-ইসরার ৪,৫,৬,৭ নং আয়াতে।
যাতে বলা হয়েছে, “আর আমরা কিতাবে ওহী দ্বারা বনী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, “নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে” এটা ছিল প্রথমবার অন্ধ ও বধির হওয়া। এর শাস্তিস্বরূপ যা এসেছে, তার বর্ণনায় এসেছে, “তারপর এ দুটির প্রথমটির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হল তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম আমাদের বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী; তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু ধ্বংস করেছিল।” এরপর দ্বিতীয়বার তাদের অন্ধ ও বধির হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, “তারপর পরবর্তী নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে (আমি আমার বান্দাদের পাঠালাম) তোমাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করেছিল আবার সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।” এ দু অন্ধত্ব ও বধিরতা ও এ দুয়ের শাস্তির মাঝখানে আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি দয়াবান হয়ে যে তাওবা কবুল করেছিলেন, তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, “তারপর আমরা তোমাদেরকে আবার তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করলাম।” তারপর আল্লাহ বর্ণনা করলেন যে, আবার যদি তোমরা অন্ধ ও বধির হও এবং দুনিয়ার বুকে ফাসাদ সৃষ্টি কর, তবে আমি আবার তোমাদের জন্য শাস্তি নিয়ে আসব। তিনি বলেন, “কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তবে আমরাও পুনরাবৃত্তি করব।” [সূরা আল-ইসরা ৪-৮]
বনী ইসরাঈল কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করার মাধ্যমে আবার অন্ধ ও বধির হয়েছিল এবং দুনিয়ার বুকে ফেতনা ও ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল। তাওরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সমস্ত গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে তারা গোপন করল। সুতরাং আল্লাহও তাদের নবীর মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি দিলেন। বনু কুরাইযার যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হলো, তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করা হলো, বনু কাইনুকা ও বনু নদ্বীরকে মদীনা থেকে নির্বাসন দেয়া হলো, যেমনটি আল্লাহ তার কিছু বর্ণনা সূরা আল-হাশরে উল্লেখ করেছেন। [আদওয়াউল বায়ান]
যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনি তো মার্ইয়াম-তনয় মসীহ’, অবশ্যই তারা কুফরী করেছে [১]। অথচ মসীহ বলেছিলেন, ‘হে ইসরাঈল-সন্তানগণ! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর।’ নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন [২] এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।
[১] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বনী ইসরাঈলের ঔদ্ধত্য ও তাদের অত্যাচার-উৎপীড়ন বর্ণনা করা হয়েছিল যে, আল্লাহ প্রেরিত রাসূল- যারা তাদের অক্ষয় জীবনের বার্তা এবং তাদের দুনিয়া ও আখেরাত সংশোধনের কার্যবিধি নিয়ে আগমন করেছিলেন, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। কতক নবীকে তারা মিথ্যারোপ করে এবং কতককে হত্যা করে ফেলে। আলোচ্য আয়াতে বনী ইসরাঈলের কুটিলতার আরেকটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে যে, মূৰ্খরা যেমন ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার এক প্রান্তে থেকে আল্লাহর নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং কতককে হত্যা করেছে, তেমনি এরাই বক্রতার অপর প্রান্তে পৌঁছে নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে আল্লাহ্তে পরিণত করে দিয়েছে। তারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনি তো মারইয়াম তনয় মসীহ’ এ কথা বলে তারা কুফরী করল এবং কাফের হয়ে গেল। ইতিহাস বলে যে, যারা এ ধরণের উক্তি করত তারা হচ্ছে, নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়া’কুবিয়্যা এবং নাসতুরিয়্যাহ সম্প্রদায়। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে যদিও এ উক্তিটি শুধু নাসারাদের বলে বর্ণিত হয়েছে। অন্যত্র এ ধরণের বাড়াবাড়ি ও পথভ্রষ্টতা ইয়াহুদী এবং নাসারা উভয়ের ব্যাপারেও বর্ণনা করা হয়েছে,
অর্থাৎ “আর ইয়াহুদীরা বলে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র’, এবং খৃস্টানরা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ এটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল ওরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে?” [সূরা আত-তাওবাহ ৩০]
[২] অর্থাৎ নাসারারা যতই বাড়াবাড়ি করুক এবং ঈসাকে তাদের ইলাহ ঘোষণা করুক, ঈসা এতে কখনও সন্তুষ্ট নন। তিনি নিজেই এর বিপরীত ঘোষণা করেছিলেন। দুনিয়ায় আসার পর দোলনাতেই তার মুখের প্রথম কথা ছিল, (اِنِّىْ عَبْدُ اللّٰهِ) অর্থাৎ “আমি তো আল্লাহর বান্দা বা দাস।” [সূরা মারইয়াম ৩০]
তিনি আরও বলেছিলেন,“আমার ও তোমাদের রব একমাত্র আল্লাহ। তাঁরই ইবাদাত কর। সরল সঠিক পথ এটিই।” [সূরা আলে ইমরান ৫১, মারইয়াম ৩৬, আযযুখরুফ ৬৪]
তাছাড়া যৌবনের পরবর্তী বয়সেও বলেছেন, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত কর, যারা তাঁর সাথে অন্য কারও ইবাদাত করে তাদের জন্যে আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে । যেমন অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ শির্কের গোনাহ কখনও ক্ষমা করবেন না।” [সূরা আন-নিসা ৪৮, ১১৬]
অনুরূপভাবে জাহান্নামবাসীরা যখন জান্নাতবাসীদের কাছে খাদ্য ও পানি চাইবে, তখন তারা উত্তরে বলবে, “নিশ্চয় আল্লাহ এ দুটি জিনিস কাফেরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন।” [সূরা আল-আরাফ ৫০]
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করতে বলেছেন যে, “শুধু মুমিন মুসলিমরাই জান্নাতে যাবে।” [মুসলিম ১১১]
আরও বলেছেন, “যতক্ষণ তোমরা ঈমানদার না হবে ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” [মুসলিম ৫৪] সুতরাং ঈসা ‘আলাইহিস সালাম কখনোও ইলাহ হওয়ার দাবী করেন নি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। [ইবন কাসীর]
তারা অবশ্যই কুফরী করেছে –যারা বলে, ‘আল্লাহ তো তিনের মধ্যে তৃতীয় [১], অথচ এক ইলাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আর তারা যা বলে তা থেকে বিরত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, তাদের উপর অবশ্যই কষ্টদায়ক শাস্তি আপতিত হবে।
[১] অর্থাৎ ঈসা মসীহ ‘আলাইহিস সালাম, রূহুল কুদস ও আল্লাহ, কিংবা মসীহ, মারইয়াম ও আল্লাহ -সবাই আল্লাহ। তাদের মধ্যে একজন অংশীদার হলেন আল্লাহ। এরপর তারা তিনজনই এক এবং একজনই তিন। এ হচ্ছে নাসারাদের সাধারণ বিশ্বাস। নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়াকুবিয়্যা ও নাসতুরিয়্যা এ তিনটি দলই উপরোক্ত বিশ্বাস পোষণ করে। [ইবন কাসীর]
এ যুক্তিবিরোধী ধর্মবিশ্বাসকে তারা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় ব্যক্ত করে। অতঃপর বিষয়টি যখন কারো বোধগম্য হয় না, তখন একে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য' বলে আখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হয়। সুদ্দি বলেন, এখানে তিনের এক ইলাহ বলা হয়েছে। তিনজন বলতে, ঈসা, তার মা মারইয়াম এবং আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, অন্য আয়াতে কোনো কোনো নাসারাদের দ্বারা ঈসা ও তার মাকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। [আল মায়েদাহ ১১৬]
ইবন কাসীর বলেন, এ মতটি অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [ইবন কাসীর]
তবে কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [১]।
[১] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা তাওবাহ করলে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির চাইতেও বেশী খুশী হন, যে ব্যক্তি তার উটকে মরুভূমির অজানা পথে হারিয়ে ফেলে। চিন্তায় মুমূর্ষ হয়ে পড়েছে; ঠিক এই মুহুর্তে সে তার উটকে পেয়ে গেলে যতটা খুশি হয়।’ [বুখারী ৬৩০৯]
এখানেও আল্লাহর অপার রহমত যে, তিনি বান্দার শির্কের পরও যদি তাঁর কাছে তাওবাহ করে তবে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। [ইবন কাসীর]
মারইয়াম-তনয় মসীহ শুধু একজন রাসূল। তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছেন [১] এবং তাঁর মা অত্যন্ত সত্য নিষ্ঠা ছিলেন। তারা দুজনেই খাওয়া-দাওয়া করতেন [২]। দেখনু আমরা তাদের জন্য আয়াতগুলোকে কেমন বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি; তারপরও দেখুন, তারা কিভাবে সত্যবিমুখ হয়!
[১] অর্থাৎ অন্যান্য নবী যেমন দুনিয়াতে আগমন করার পর কিছুদিন অবস্থান করে চলে গেছেন; কাজেই তিনি উপাস্য হতে পারেন না। তিনি অন্যান্য নবী-রাসূলদের মতই একজন মানুষ। একজন রাসূলের বেশী তো তিনি কিছু নন। তবে আল্লাহ তাকে বনী-ইসরাঈলদের জন্য নিদর্শন বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তিনি তো কেবল আমারই এক বান্দা, যার উপর আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে বানিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।” [সূরা আয যুখরুফ ৫৯] [ইবন কাসীর]
[২] যে ব্যক্তি পানাহারের মুখাপেক্ষী সে পৃথিবীর সবকিছুরই মুখাপেক্ষী। মাটি, বাতাস, পানি, সূর্য এবং জীবজন্তু থেকে সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। পরমুখাপেক্ষীতার এ দীর্ঘ পরম্পরার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা মসীহ ও মারইয়ামের উপাস্যতা খণ্ডণকল্পে যুক্তির আকারে এরূপ বলতে পারি, মসীহ ও মারইয়াম পানাহারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র থেকে মুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়টি চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা ও লোক পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত। আর যে পানাহার থেকে মুক্ত নয়, যে সত্তা মানব-মণ্ডলীর মত স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে বস্তুজগতের মুখাপেক্ষী, সে কীভাবে আল্লাহ হতে পারে? এ শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট যুক্তিটি জ্ঞানী ও মূখ সবাই সমভাবে বুঝতে পারে। অর্থাৎ পানাহার করা উপাস্য হওয়ার পরিপন্থী। [বাগভী, ইবন কাসীর, সা’দী, আইসারুত তাফাসীর]
বলুন, ‘হে কিতাবীরা! তোমরা তোমাদের দীনে অন্যায় [১] বাড়াবাড়ি করো না [২]। আর যে সম্প্রদায় ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না [৩]।’
[১] আলোচ্য আয়াতে (لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ) বলার সাথে সাথে (غَيْرَ الْحَقِّ) বলা হয়েছে। এর অর্থ এই যে, অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না। তাফসীরবিদদের মতে এ শব্দটি তাকীদ অর্থাৎ বিষয়বস্তুকে জোরদার করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা দীনে বাড়াবাড়ি সর্বাবস্থায়ই অন্যায়। এটা ন্যায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেন, এখানে (غَيْرَ الْحَقِّ) কথাটি (دِيْن) এর গুণ হিসেবে এসেছে। সুতরাং এর অর্থ হবে, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না। কারণ, তোমাদের দীনটি হকের বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। [তাবারী]
[২] غُلُوّ শব্দের অর্থ সীমা অতিক্রম করা দীনের সীমা অতিক্রম করার অর্থ এই যে, বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে দীন যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা লংঘন করা। উদাহরণতঃ নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সীমা এই যে, আল্লাহর সৃষ্টজীবের মধ্যে তাদেরকে সর্বোত্তম মনে করতে হবে। এ সীমা অতিক্রম করে তাদেরকে আল্লাহ কিংবা আল্লাহর পুত্র বলে দেয়া হচ্ছে বিশ্বাসগত সীমা লংঘন। নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ করা এবং হত্যা করতেও কুষ্ঠিত না হওয়া অথবা তাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ কিংবা আল্লাহর পুত্র বলে দেয়া বনী ইসরাঈলের এ পরস্পর বিরোধী দু’টি কাজই হচ্ছে মূর্খতাপ্রসূত বাড়াবাড়ি। মূর্খ ব্যক্তি কখনো মিথ্যাচার অথবা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে পারে না। হয় সে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়, না হয় সীমালংঘনে। তাই আয়াতে বনী ইসরাঈলদেরকে এ ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]
[৩] আলোচ্য আয়াতের শেষভাগে বর্তমান কালের বনী ইসরাঈলদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের অনুসরণ করো না, যারা তোমাদের পূর্বে নিজের পথভ্রষ্ট হয়েছিল এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করেছিল। অতঃপর তাদের পথভ্রষ্টতার স্বরূপ ও কারণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল, যা ছিল বাড়াবাড়ি ও ক্রটির মাঝখানে মধ্যবর্তী পথ। এর দ্বারা হয় তারা নিজেরাই ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়েছিল, না হয় তাদেরকে অন্যরা ভ্রান্তপথে পরিচালিত করেছিল। [তাবারী, ফাতহুল কাদীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
Mga Resulta ng Paghahanap:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".