আর যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা করে না তারা বলে, ‘আমাদের কাছে ফিরিশতা নাযিল করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন?’ তারা তো তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে [১] এবং তারা গুরুতর অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে।
[১] অর্থাৎ তারা নিজেদের মনে মনে নিজেদের নিয়ে বড়ই অহংকার করে। [দেখুন- ফাতহুল কাদীর, আয়সারুত-তাফাসির]
যেদিন তারা ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবে সেদিন অপরাধীদের জন্য কোনো সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, ‘রক্ষা কর, রক্ষা কর[১]।’
[১] এখানে
وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًامَّحْجُوْرًا
এ উক্তিটি কাদের তা নির্ধারণে দু’টি মত রয়েছে। যদি উক্তিটি ফেরেশতাদের হয় তবে এর অর্থ হবে, তারা বলবে যে, তোমাদের জন্য কোনো প্রকার সুসংবাদ হারাম করা হয়েছে অথবা বলবে, তোমাদের সাহায্য করা থেকে আমরা আল্লাহ্র দরবারে আশ্রয় নিচ্ছি। আর যদি উক্তিটি কাফেরদের হয় তখন অর্থ হবে, তারা ভয়ে আর্তচিৎকার দিতে দিতে বলবে, বাঁচাও বাঁচাও এবং তাদের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করবে কিন্তু পালানোর কোনো পথ তারা পাবে না অথবা বলবে, কোনো বাধা যদি এ আযাবকে বা ফেরেশতাদেরকে আটকে রাখত! মূলত حجر শব্দের অর্থ সুরক্ষিত স্থান। محجور অর্থ এর তাকীদ। আরবী বাচনভঙ্গিতে শব্দটি তখন বলা হয়, যখন সামনে বিপদ থাকে এবং তা থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে বলা হয়: আশ্রয় চাই! আশ্রয় চাই! অর্থাৎ আমাকে এই বিপদ থেকে আশ্রয় দাও। কেয়ামতের দিন যখন কাফেররা ফিরিশতাদেরকে আযাবের সাজ-সরঞ্জাম আনতে দেখবে, তখন দুনিয়ার অভ্যাস অনুযায়ী এ কথা বলবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এর অর্থ حرامًامحرمًا বর্ণিত আছে। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন যখন তারা ফিরিশতাদেরকে আযাবসহ দেখবে এবং তাদের কাছে ক্ষমা করার ও জান্নাতে যাওয়ার আবেদন করবে কিংবা অভিপ্ৰায় প্রকাশ করবে, তখন ফিরিশতারা জবাবে حِجْرًامَّحْجُوْرًا বলবে। অর্থাৎ কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম ও নিষিদ্ধ। [দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]
সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম [১]।
[১] مستقر শব্দের অর্থ হলো স্বতন্ত্র আবাসস্থল। مقيل শব্দটি قيلولة থেকে উদ্ভুত- এর অর্থ দুপুরে বিশ্রাম করার স্থান। অর্থাৎ হাশরের ময়দানে জান্নাতের হকদার লোকদের সাথে অপরাধীদের থেকে ভিন্নতর ব্যবহার করা হবে। তাদের সম্মানের সাথে বসানো হবে। হাশরের দিনের কঠিন দুপুর কাটানোর জন্য তাদের আরাম করার জায়গা দেয়া হবে। সেদিনের সব রকমের কষ্ট ও কঠোরতা হবে অপরাধীদের জন্য। সৎকর্মশীলদের জন্য নয়। [দেখুন-আদওয়াউল বায়ান, বাগভী]
আর সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে মেঘপুঞ্জ দ্বারা [১] এবং দলে দলে ফিরিশতাদেরকে নামিয়ে দেয়া হবে--
[১] এখানে بِالغَمَامِ এর অর্থ عَنِ الْغَمَامِ অর্থাৎ আকাশ বিদীর্ণ হয়ে তা হতে একটি হালকা মেঘমালা নীচে নামবে, যাতে ফিরিশতারা থাকবে। এই মেঘমালা চাঁদোয়ার আকারে আকাশ থেকে আসবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা বিচার-ফয়সালার জন্য হাশরের মাঠে নেমে আসবেন; আশপাশে থাকবে ফিরিশতাদের দল। এটা হবে হিসাব নিকাশ শুরু হওয়ার সময়; সূরা আল-বাকারার ২১০ নং আয়াতেও একথা বলা হয়েছে। তখন কেবল খোলার নিমিত্তই আকাশ বিদীর্ণ হবে। এটা সেই বিদারণ নয় যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সময় আকাশ ও যমীনকে ধ্বংস করার জন্য হবে। কেননা আয়াতে যে মেঘমালা অবতরণের কথা বলা হয়েছে, তা দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর হবে। তখন নতুন ধরনের আসমান ও যমীন পুনরায় বহাল হয়ে যাবে। মোটকথা, আসমানসমূহ বিদীর্ণ হওয়ার পর সেগুলোর উপরস্থিত সাদা মেঘ দেখা যাবে। রাব্ববুল আলামীন যে মেঘসহ সৃষ্টিকুলের মধ্যে ফায়সালা করতে নাযিল হবেন। আসমানসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেক আসমানের ফিরিশতাগণ কাতারে কাতারে দাঁড়াবে। তারপর তারা সৃষ্টিজগতকে ঘিরে রাখবে। তারা তাদের রবের নির্দেশ পালন করে যাবে। তাদের মধ্যে কেউই আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতীত কোনো কথা বলবে না। যদি ফিরিশতাদেরই এ অবস্থা হবে তাহলে অন্যান্য সৃষ্টিকুলের কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। [দেখুন- কুরতুবী, বাগভী, আদওয়াউল বায়ান]
সে দিন চুড়ান্ত কর্তৃত্ব হবে দয়াময়ের [১] এবং কাফেরদের জন্য সে দিন হবে অত্যন্ত কঠিন।
[১] অর্থাৎ সেখানে কেবলমাত্র একটি রাজত্বই বাকি থাকবে এবং তা হবে এ বিশ্ব-জাহানের যথার্থ শাসনকর্তা আল্লাহ্র রাজত্ব। [আদওয়াউল বায়ান] অন্যত্র বলা হয়েছে: “সেদিন যখন এরা সবাই প্রকাশ হয়ে যাবে, আল্লাহ্র কাছে এদের কোনো জিনিস গোপন থাকবে না, জিজ্ঞেস করা হবে আজ রাজত্ব কার? সবদিক থেকে জবাব আসবে, একমাত্র আল্লাহ্র যিনি সবার উপর বিজয়ী।” [সূরা গাফির ১৬] হাদীসে এ বিষয়বস্তুকে আরো বেশী স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ এক হাতে পৃথিবীগুলো ও অন্য হাতে আকাশসমূহ গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, “আমিই বাদশাহ, আমিই শাসনকর্তা। এখন সেই পৃথিবীর বাদশাহরা কোথায়? কোথায় স্বৈরাচারী একনায়কের দল? অহংকারী ক্ষমতাদর্পীরা?’’ [বুখারী ৭৪১২, মুসলিম ২৭৮৮]
যালিম [১] ব্যক্তি সেদিন নিজের দু‘হাত দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম [২]!
[১] এখানে যালিম ব্যাক্তি বলতে মুশরিক, কাফের, মুনাফিক ও সীমালঙ্ঘনকারী অবাধ্যদের বুঝানো হয়েছে। [দেখুন-সা‘দী]
[২] অর্থাৎ যারাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে না চলে অন্য কারো পথে চলবে, তারাই হাশরের মাঠে আফসোস করতে থাকবে এবং নিজের আঙ্গুল কামড়াতে থাকবে। কিন্তু তখন তাদের সে আফসোস করা তাদের কোনো উপকারে আসবে না। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ সত্যকে তুলে ধরেছেন। [যেমন, সূরা আল-আহযাব ৬৬-৬৮, সূরা আয-যুখরুফ ৬৭] এই আয়াতের ভাষা যেমন ব্যাপক, তার বিধানও তেমনি ব্যাপক। এই ব্যাপকতার দিকে ইঙ্গিত করার জন্য সম্ভবতঃ আয়াতে বন্ধুর নামের পরিবর্তে فلانا বা “অমুক" শব্দ অবলম্বন করা হয়েছে। আয়াতে বিধৃত হয়েছে যে, যে দুই বন্ধু পাপ কাজে সম্মিলিত হয় এবং শরীয়ত বিরোধী কার্যাবলীতে একে অপরের সাহায্য করে, তাদের সবারই বিধান এই যে, কেয়ামতের দিন তারা এই বন্ধুত্বের কারণে কান্নাকাটি করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোনো অমুসলিমকে সঙ্গী করো না এবং তোমার ধনসম্পদ (সঙ্গীদের দিক দিয়ে) যেন মুক্তাকী ব্যাক্তিই খায়।” [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৮, সহীহ ইবন হিব্বান ২/৩১৫, হাদীস নং ৫৫৫, তিরমিযী ২৩৯৫, আবু দাউদ ৪৮৩২] অর্থাৎ মুত্তাকী বা পরহেযগার নয় এমন কোনো ব্যাক্তির সাথে বন্ধুত্ব করো না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মানুষ (অভ্যাসগতভাবে) বন্ধুর ধর্ম ও চালচলন অবলম্বন করে। তাই কিরূপ লোককে বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করা হচ্ছে, তা পূর্বেই ভেবে দেখা উচিত।” [আবু দাউদ ৪৮৩৩, তিরমিযী ২৩৭৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৩৪]
আর কাফেররা বলে, ‘সমগ্র কুরআন তার কাছে একবারে নাযিল হলো না কেন?’ এভাবেই আমরা নাযিল করেছি আপনার হৃদয়কে তা দ্বারা মযবুত করার জন্য এবং তা ক্রমে ক্ৰমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
搜索结果:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".