কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-মুমিনুন   আয়াত:

সূরা আল-মুমিনুন

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
بيان فلاح المؤمنين وخسران الكافرين.
ঈমান এবং তার হাকীকত ও সুফল উপরন্তু তার বিরোধিতার শাস্তি এবং কাফিরদের নিন্দার উল্লেখ। এ জন্যই মু’মিনদের সফলতা ও কাফিরদের ব্যর্থতা দিয়েই সূরাটি শুরু করা হয়েছে।

قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ
১. আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে এবং ভীতিপ্রদ বস্তু থেকে নাজাত পেয়ে সফলকাম হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ
২. যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। সালাতে তাদের অঙ্গগুলো স্থির এবং তাদের অন্তরগুলো অন্যান্য সকল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ
৩. যারা বাতিল ও অসার এবং যে কথা ও কাজগুলোতে পাপ রয়েছে সেগুলো থেকে মুক্ত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ
৪. যারা নিজেদের অন্তরগুলোকে খারাপ বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে এবং নিজেদের সম্পদগুলোকে সেগুলোর যাকাত আদায়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ
৫. যারা নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে ব্যভিচার, সমকামিতা ও সমূহ অশ্লীলতা থেকে রক্ষাকারী। ফলে তারা সাধু ও পবিত্র।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ
৬. তবে যারা নিজেদের স্ত্রী বা নিজেদের মালিকানাধীন বান্দীদেরকে সহবাস ইত্যাদির মাধ্যমে সম্ভোগ করলো তারা কখনোই নিন্দিত হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ
৭. কিন্তু যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রী বা মালিকানাধীন বান্দী ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে যৌন সম্ভোগ করতে চাইবে সে অবশ্যই আল্লাহর দেয়া সীমারেখাগুলো অতিক্রমকারী। কারণ, সে হালালকৃত সম্ভোগ অতিক্রম করে হারামের দিকে ধাবিত হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِأَمَٰنَٰتِهِمۡ وَعَهۡدِهِمۡ رَٰعُونَ
৮. আর যারা আল্লাহ অথবা তাঁর বান্দাদের আমানত ও অঙ্গীকারগুলো রক্ষাকারী। তারা সেগুলোকে নষ্ট না করে বরং সেগুলোকে পূর্ণ করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ
৯. আর যারা নিজেদের সালাতগুলোকে নিয়মিত এবং সেগুলোর রুকন, ওয়াজিব ও মুস্তাহাবসহ সময়মতো আদায় করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ
১০. এ বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারীরাই হলো সত্যিকারের উত্তরাধিকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ
১১. যারা জান্নাতের উচ্চাসনের উত্তরাধিকারী হবে এবং সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাদের নিয়ামতগুলো কখনোই শেষ হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ
১২. আমি নিশ্চয়ই মানবপিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যে মাটি নেয়া হয়েছে এমন সারাংশ থেকে যা জমিনের মাটি মিশ্রিত পানি থেকে সংগৃহিত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةٗ فِي قَرَارٖ مَّكِينٖ
১৩. অতঃপর আমি তার সন্তানদিগকে বংশ পরম্পরায় বীর্য থেকে তৈরি করেছি যা প্রসব পর্যন্ত জরায়ুতেই অবস্থান করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةٗ فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمٗا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمٗا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ
১৪. অতঃপর আমি জরায়ুতে স্থিত বীর্যকে লাল জমাট রক্তে রূপান্তরিত করি। এরপর সে লাল জমাট রক্তকে চিবানোযোগ্য গোস্তের টুকরোতে রূপান্তরিত করি। অতঃপর সেই গোস্তের টুকরোকে শক্ত হাড়ে রূপান্তরিত করি। অনন্তর আমি সেই হাড়গুলোকে গোস্তের পোশাক পরিয়ে দেই। এরপর তাতে রূহ ফুঁকিয়ে তাকে জীব হিসেবে বের করে এনে অন্য এক সৃষ্টি বানিয়ে ফেলি। সর্বোত্তম ¯্রষ্টা আল্লাহ কতোইনা বরকতময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ إِنَّكُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ
১৫. এরপর হে মানুষ! তোমরা এ পর্যায়গুলো অতিক্রম করে অচিরেই তোমাদের নির্ধারিত জীবন শেষে মৃত্যু বরণ করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تُبۡعَثُونَ
১৬. অনন্তর তোমাদেরকে মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন আবারো কবর থেকে উঠানো হবে। যাতে তোমাদের পেশকৃত আমলগুলোর হিসাব করা যায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعَ طَرَآئِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ ٱلۡخَلۡقِ غَٰفِلِينَ
১৭. হে মানুষ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর একের উপর আরেকটি করে সাতটি আকাশ তৈরি করেছি। বস্তুতঃ আমি কখনো আমার সৃষ্টি থেকে গাফিল ছিলাম না। না তাকে কখনো ভুলে গিয়েছিলাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• للفلاح أسباب متنوعة يحسن معرفتها والحرص عليها.
ক. নিশ্চয়ই সফলতার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে যেগুলো জানা ও সেগুলোর প্রতি আগ্রহী হওয়া খুবই জরুরী।

• التدرج في الخلق والشرع سُنَّة إلهية.
খ. সৃষ্টি ও শরীয়তের পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতা একটি ইলাহী নিয়ম।

• إحاطة علم الله بمخلوقاته.
গ. আল্লাহর জ্ঞান তাঁর সকল সৃষ্টিকে ঘিরে রয়েছে।

وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءَۢ بِقَدَرٖ فَأَسۡكَنَّٰهُ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابِۭ بِهِۦ لَقَٰدِرُونَ
১৮. আমি আকাশ থেকে প্রয়োজন মাফিক বৃষ্টির পানি নাযিল করেছি। না এমন বেশি যা ফসলকে নষ্ট করে দিবে। না এতো কম যা যথেষ্ট নয়। অতঃপর আমি তাকে জমিনে স্থিতিশীল করেছি যাতে তা দ্বারা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তু লাভবান হতে পারে। আবার আমি এটিকে উঠিয়ে নিয়ে যেতেও সক্ষম। ফলে তোমরা তা দিয়ে লাভবান হতে পরবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَنشَأۡنَا لَكُم بِهِۦ جَنَّٰتٖ مِّن نَّخِيلٖ وَأَعۡنَٰبٖ لَّكُمۡ فِيهَا فَوَٰكِهُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ
১৯. অতঃপর আমি তোমাদের জন্য এ পানি দিয়ে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ বানিয়েছি। সেগুলোতে রয়েছে তোমাদের জন্য বিভিন্ন ধরন ও রঙের ফল। যেমন: ডুমুর, আনার ও আপেল। যেগুলো থেকে তোমরা খাচ্ছো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَشَجَرَةٗ تَخۡرُجُ مِن طُورِ سَيۡنَآءَ تَنۢبُتُ بِٱلدُّهۡنِ وَصِبۡغٖ لِّلۡأٓكِلِينَ
২০. তেমনিভাবে আমি তোমাদের জন্য এর মাধ্যমে যাইতুনের গাছ তৈরি করেছি। যা সাইনা পহাড়ী এলাকায় জন্মে। যার ফল থেকে তৈরি হয় তেল। যা কর্তৃক কোন বস্তুকে তৈলাক্ত করা হয় এবং তা তরকারী হিসেবেও খাওয়া হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَنۡعَٰمِ لَعِبۡرَةٗۖ نُّسۡقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمۡ فِيهَا مَنَٰفِعُ كَثِيرَةٞ وَمِنۡهَا تَأۡكُلُونَ
২১. হে মানুষ! তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু তথা উট, গাভী ও ছাগলে শিক্ষণীয় বিষয় এবং প্রমাণ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর দয়া এবং তাঁর কুদরতের ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করতে পারো। আমি তোমাদেরকে এ পশুগুলোর পেট থেকে পানকারীদের জন্য সহজ পানীয় তথা খাঁটি দুধ পান করিয়ে থাকি। উপরন্তু তোমাদের জন্য রয়েছে এগুলোর মাঝে অনেক ফায়েদা যেগুলো দ্বারা তোমরা লাভবান হচ্ছো। যেমন: আরোহণ, উল, পশম ও লোম ইত্যাদি সংগ্রহ করা। উপরন্তু তোমরা সেগুলোর গোস্ত খেতে পারো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَعَلَيۡهَا وَعَلَى ٱلۡفُلۡكِ تُحۡمَلُونَ
২২. স্থলভাগে গৃহপালিত পশু তথা উট এবং সাগরে জাহাজের উপর তোমাদেরকে আরোহণ করানো হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ
২৩. নিশ্চয়ই আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) কে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছি যেন তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকেন। তাই তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন: হে আমার জাতি! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই। তোমরা কি আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো মেনে তাঁকে ভয় করবে না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَقَالَ ٱلۡمَلَؤُاْ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ مَا هَٰذَآ إِلَّا بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُرِيدُ أَن يَتَفَضَّلَ عَلَيۡكُمۡ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ لَأَنزَلَ مَلَٰٓئِكَةٗ مَّا سَمِعۡنَا بِهَٰذَا فِيٓ ءَابَآئِنَا ٱلۡأَوَّلِينَ
২৪. অতঃপর তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ও পদমর্যাদাসম্পন্ন কাফিররা তাদের অনুসরণকারী ও জনসাধারণকে বললো: যে নিজেকে রাসূল বলে দাবি করছে সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। সে মূলতঃ এরই মাধ্যমে তোমাদের উপর তার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব খাটাতে চাচ্ছে। আল্লাহ যদি সত্যিকারার্থে আমাদের নিকট কোন রাসূল পাঠাতে চাইতেন তাহলে তিনি ফিরিশতাই পাঠাতেন। কোন মানুষ পাঠাতেন না। আমরা কখনো এ জাতীয় কোন দাবি আমাদের পূর্ববর্তী মুরুব্বিদের নিকট শুনতে পাইনি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هُوَ إِلَّا رَجُلُۢ بِهِۦ جِنَّةٞ فَتَرَبَّصُواْ بِهِۦ حَتَّىٰ حِينٖ
২৫. মূলতঃ সে একজন পাগল ব্যক্তি। কী বলছে সে তা বুঝতে পারছে না। তাই তোমরা তার ব্যাপারে অপেক্ষা করো যতক্ষণ না তার ব্যাপারটি মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِي بِمَا كَذَّبُونِ
২৬. নূহ (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করুন তথা আমাকে অস্বীকার করার দরুন তাদের থেকে আমার জন্য প্রতিশোধ নিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡهِ أَنِ ٱصۡنَعِ ٱلۡفُلۡكَ بِأَعۡيُنِنَا وَوَحۡيِنَا فَإِذَا جَآءَ أَمۡرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ فَٱسۡلُكۡ فِيهَا مِن كُلّٖ زَوۡجَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِ وَأَهۡلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيۡهِ ٱلۡقَوۡلُ مِنۡهُمۡۖ وَلَا تُخَٰطِبۡنِي فِي ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِنَّهُم مُّغۡرَقُونَ
২৭. অতঃপর আমি তাঁর নিকট এ মর্মে ওহী পাঠালাম যে, আপনি আমার শিখানো পদ্ধতি অনুযায়ী আমার চোখের সামনেই নৌকা তৈরি করুন। এরপর যখন তাদেরকে ধ্বংস করার আদেশ এসে গেলো এবং তন্দুর থেকে প্রবল বেগে পানি বের হতে শুরু করলো তখন আমি তাঁকে এ মর্মে আদেশ করলাম যে, আপনি প্রত্যেক জীব থেকে নর ও মাদী উভয়কেই এ নৌকাতে উঠিয়ে নিন যাতে তাদের বংশ পরম্পরা টিকে থাকে। উপরন্তু আপনি নিজ পরিবারকেও এতে প্রবেশ করান। তবে যাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই আল্লাহর পক্ষ থেকে ধ্বংসের ফায়সালা করা হয়েছে তাদেরকে নয়। যেমন: আপনার জনৈকা স্ত্রী ও জনৈক সন্তান। আর আপনি যারা কুফরির মাধ্যমে নিজেদের উপর যুলুম করেছে তাদের নাজাত ও তাদেরকে ধ্বংস না করার ব্যাপারে আমাকে সম্বোধন করবেন না। নিশ্চয়ই তারা অনিবার্যভাবে তুফানের পানিতে ডুবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• لطف الله بعباده ظاهر بإنزال المطر وتيسير الانتفاع به.
ক. বান্দাদের প্রতি আল্লাহর দয়া সুপ্রকাশ্য। কারণ, তিনি বৃষ্টি নাযিল করে তা থেকে লাভবান হওয়ার পথ তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।

• التنويه بمنزلة شجرة الزيتون.
খ. যাইতুন গাছের মর্যাদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব।

• اعتقاد المشركين ألوهية الحجر، وتكذيبهم بنبوة البشر، دليل على سخف عقولهم.
গ. মুশরিকদের পাথরের মূর্তির ইবাদাতে বিশ্বাস এবং মানুষের নবুওয়াতকে অস্বীকার তাদের বিবেকের দীনতাই প্রমাণ করে।

• نصر الله لرسله ثابت عندما تكذبهم أممهم.
ঘ. যখন উম্মতরা তাদের রাসূলদেরকে অস্বীকার করে তখন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলদেরকে সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা প্রদান।

فَإِذَا ٱسۡتَوَيۡتَ أَنتَ وَمَن مَّعَكَ عَلَى ٱلۡفُلۡكِ فَقُلِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي نَجَّىٰنَا مِنَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ
২৮. যখন আপনি ও নাজাতপ্রাপ্ত মু’মিনরা আপনার সাথে নৌকায় উঠবে তখন আপনি বলুন: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের হাত থেকে রক্ষা করে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقُل رَّبِّ أَنزِلۡنِي مُنزَلٗا مُّبَارَكٗا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡمُنزِلِينَ
২৯. আরো বলুন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে জমিনের বরকতময় জায়গায় অবতরণ করান। কারণ, আপনিই হলেন সর্বোত্তম অবতরণকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ وَإِن كُنَّا لَمُبۡتَلِينَ
৩০. নিশ্চয়ই উপরোল্লিখিত নূহ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর সাথের মু’মিনদেরকে নাজাত দেয়া, কাফিরদেরকে ধ্বংস করা, রাসূলদেরকে সাহায্য করা ও তাঁদের প্রতি মিথ্যারোপকারীদেরকে ধ্বংস করার মাঝে আমার কুদরতের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের নিকট তাঁকে পাঠিয়ে তাদেরকে মূলতঃ পরীক্ষা করেছি। যাতে মু’মিন কাফির থেকে এবং অনুগত পাপী থেকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক হয়ে যায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَنشَأۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِمۡ قَرۡنًا ءَاخَرِينَ
৩১. অনন্তর আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়ে অন্য আরেকটি জাতি সৃষ্টি করেছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَرۡسَلۡنَا فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ
৩২. তাদের মাঝেও আমি একজন রাসূল পাঠিয়েছি যিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডেকে বললেন: তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করো। তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মা’বূদ নেই। তোমরা কি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধসমূহ মেনে তাঁকে ভয় করবে না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِهِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بِلِقَآءِ ٱلۡأٓخِرَةِ وَأَتۡرَفۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا مَا هَٰذَآ إِلَّا بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يَأۡكُلُ مِمَّا تَأۡكُلُونَ مِنۡهُ وَيَشۡرَبُ مِمَّا تَشۡرَبُونَ
৩৩. তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ও সুধীজনেরা -যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে এবং আখিরাতের শাস্তি ও প্রতিদানের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে উপরন্তু আমি তাদেরকে দুনিয়ার জীবনের নিয়ামতের যে প্রশস্ততা দিয়েছি তা তাদেরকে গাদ্দার বানিয়ে দিয়েছে- তারা নিজেদের অনুসারী ও জনসাধারণকে বললো: এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা খাচ্ছো সে তাই খায় এবং তোমরা যা পান করছো সে তাই পান করে। তোমাদের উপর তার এমন কোন বিশেষত্ব নেই যার দরুন তাকে তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠানো হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَئِنۡ أَطَعۡتُم بَشَرٗا مِّثۡلَكُمۡ إِنَّكُمۡ إِذٗا لَّخَٰسِرُونَ
৩৪. যদি তোমরা তোমাদের মতো মানুষেরই আনুগত্য করো তাহলে তোমরা নিশ্চয়ই তার আনুগত্যে লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্তই হবে। কারণ, তখন তোমরা নিজেদের মা’বূদগুলোকে পরিত্যাগ করলে এবং তোমাদের উপর যার কোন বিশেষত্ব নেই তারই অনুসরণ করলে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَيَعِدُكُمۡ أَنَّكُمۡ إِذَا مِتُّمۡ وَكُنتُمۡ تُرَابٗا وَعِظَٰمًا أَنَّكُم مُّخۡرَجُونَ
৩৫. যে নিজকে একজন রাসূল হিসেবে দাবি করছে সেকি তোমাদের সাথে এমন ওয়াদা করছে যে, তোমরা যখন মরে মাটি ও পুরনো হাড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে কবর থেকে জীবিত উঠানো হবে?! এটাকি কোন যুক্তিসঙ্গত কথা?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ هَيۡهَاتَ هَيۡهَاتَ لِمَا تُوعَدُونَ
৩৬. তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদেরকে যে কবর থেকে জীবিত বের করা হবে এবং তোমরা মাটি ও পুরনো হাড়ে পরিণত হবে এমন ওয়াদা বহু দূরের বিষয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوثِينَ
৩৭. মূলতঃ দুনিয়ার জীবনই তো আসল জীবন। আখিরাতের জীবন বলতে কিছুই নেই। আমাদের জীবিতরা মরে যাবে। তারা আর জীবিত হবে না। বরং অন্যরাই জন্মের মাধ্যমে নতুন জীবন ধারণ করবে। আমাদেরকে মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন আর হিসেবের জন্য উঠানো হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنۡ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبٗا وَمَا نَحۡنُ لَهُۥ بِمُؤۡمِنِينَ
৩৮. যে নিজকে একজন রাসূল হিসেবে দাবি করছে সে তো এমনই একজন মানুষ, যে এ দাবির মাধ্যমে সত্যিই আল্লাহর উপর মিথ্যা বানিয়ে বলেছে। আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِي بِمَا كَذَّبُونِ
৩৯. রাসূল বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। তারা আমাকে মিথ্যুক বলার দরুন আপনি আমার জন্য তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ عَمَّا قَلِيلٖ لَّيُصۡبِحُنَّ نَٰدِمِينَ
৪০. আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তরে বললেন: কিছুক্ষণ পর আপনার আনীত বিধানের প্রতি মিথ্যারোপকারীরা অচিরেই তাদের মিথ্যারোপের জন্য লজ্জিত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّيۡحَةُ بِٱلۡحَقِّ فَجَعَلۡنَٰهُمۡ غُثَآءٗۚ فَبُعۡدٗا لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ
৪১. তাদের গাদ্দারির দরুন তারা শাস্তির উপযুক্ত হলে তাদেরকে এক কঠিন ধ্বংসকারী আওয়াজ পেয়ে বসে। যা তাদেরকে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর ন্যায় ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত করলো। ধ্বংস হোক এ যালিম সম্প্রদায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَنشَأۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِمۡ قُرُونًا ءَاخَرِينَ
৪২. এদের ধ্বংসের পর আমি আরো অন্যান্য সম্প্রদায় ও জাতি তৈরি করেছি। যেমন: লূত্ব, শু‘আইব ও ইউনুস (আলাইহিমুস-সালাম) এর সম্প্রদায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• وجوب حمد الله على النعم.
ক. নিয়ামতের উপর আল্লাহর প্রশংসা করা ওয়াজিব।

• الترف في الدنيا من أسباب الغفلة أو الاستكبار عن الحق.
খ. দুনিয়ার বিলাসিতা গাফিলতি এবং সত্যকে অহঙ্কারবশে প্রত্যাখ্যান করার একটি বিশেষ কারণ।

• عاقبة الكافر الندامة والخسران.
গ. কাফিরের পরিণতিই হলো লজ্জা ও ক্ষতিগ্রস্ততা।

• الظلم سبب في البعد عن رحمة الله.
ঘ. যুলুম হলো আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকার একটি বিশেষ কারণ।

مَا تَسۡبِقُ مِنۡ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسۡتَـٔۡخِرُونَ
৪৩. এ মিথ্যারোপকারী জাতিসমূহের কোন জাতি তার ধ্বংস আসার নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেও যেতে পারবে না, তা থেকে কিছু পরেও থাকতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তাদের যতো উপায়-উপকরণই থাক না কেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا تَتۡرَاۖ كُلَّ مَا جَآءَ أُمَّةٗ رَّسُولُهَا كَذَّبُوهُۖ فَأَتۡبَعۡنَا بَعۡضَهُم بَعۡضٗا وَجَعَلۡنَٰهُمۡ أَحَادِيثَۚ فَبُعۡدٗا لِّقَوۡمٖ لَّا يُؤۡمِنُونَ
৪৪. অতঃপর আমি আমার রাসূলদেরকে ধারাবাহিকভাবে এক এক জন করে পাঠিয়েছি। যখনই সে জাতিসমূহের কোন জাতির নিকট তাদের জন্য প্রেরিত রাসূল এসেছেন তখনই তারা তাঁকে মিথ্যুক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই আমি তাদেরকে একের পর এক ধ্বংস করে দিয়েছি। ফলে মানুষের মুখের কাহিনী ছাড়া তাদের কোন অস্তিত্বই আর বাকি থাকেনি। রাসূলগণ তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে বিধানসমূহ নিয়ে এসেছেন সেগুলোর প্রতি অবিশ্বাসী জাতি ধ্বংস হোক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ أَرۡسَلۡنَا مُوسَىٰ وَأَخَاهُ هَٰرُونَ بِـَٔايَٰتِنَا وَسُلۡطَٰنٖ مُّبِينٍ
৪৫. এরপর আমি মূসা ও তাঁর ভাই হারূনকে নয়টি নিদর্শন তথা লাঠি, উজ্জ্বল হাত, পঙ্গপাল, উকুন, বেঙ, রক্ত, তুফান, দুর্ভিক্ষ ও ফলমূলের ঘাটতি ইত্যাদি সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে পাঠিয়েছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِيْهِۦ فَٱسۡتَكۡبَرُواْ وَكَانُواْ قَوۡمًا عَالِينَ
৪৬. আমি তাঁদেরকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের সুধীজনদের নিকট পাঠালে তারা অহঙ্কার করে তাঁদের উপর ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানায়। বস্তুতঃ তারা যুলুম ও প্রতিপত্তির মাধ্যমে মানুষের উপর এক উদ্ধত জাতি হিসেবে পরিচিত ছিলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَقَالُوٓاْ أَنُؤۡمِنُ لِبَشَرَيۡنِ مِثۡلِنَا وَقَوۡمُهُمَا لَنَا عَٰبِدُونَ
৪৭. তারা বললো: আমরা কি আমাদের ন্যায় এমন দু’টি মানুষের উপর ঈমান আনবো, আমাদের উপর যাদের কোন বিশেষত্বই নেই। আর তাদের সম্প্রদায় বনূ ইসরাঈল তো আমাদের অনুগত ও আমাদের সামনে সদা বিনয়ী?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُواْ مِنَ ٱلۡمُهۡلَكِينَ
৪৮. অতঃপর তারা এই দু’জন আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। ফলে তাদের মিথ্যারোপের দরুন তারা পানিতে ডুবে ধ্বংস হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَٰبَ لَعَلَّهُمۡ يَهۡتَدُونَ
৪৯. আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে তাওরাত দিয়েছে। যাতে তাঁর সম্প্রদায় এরই মাধ্যমে সত্যের দিশা পায় ও তার উপর আমল করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَعَلۡنَا ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَأُمَّهُۥٓ ءَايَةٗ وَءَاوَيۡنَٰهُمَآ إِلَىٰ رَبۡوَةٖ ذَاتِ قَرَارٖ وَمَعِينٖ
৫০. আর আমি ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম ও তাঁর মা মারইয়ামকে আমার অসীম ক্ষমতা বুঝায় এমন নিদর্শন বানিয়েছি। মারইয়াম তার কোন পিতা ছাড়াই তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি তাদেরকে জমিনের একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় দিয়েছি যা ছিলো সমতল ও অবস্থানের উপযুক্ত। উপরন্তু তাতে ছিলো চলমান নতুন পানি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ
৫১. হে রাসূলগণ! আপনারা আমার হালালকৃত পবিত্র খাদ্য থেকে খান এবং শরীয়ত মাফিক নেক আমল করুন। আপনারা যে আমলগুলো করছেন তা আমি সবই জানি। আপনাদের কোন আমলই আমার নিকট গোপন নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱتَّقُونِ
৫২. হে রাসূলগণ! নিশ্চয়ই আপনাদের ধর্ম তো একই ধর্ম। তা হলো ইসলাম। আর আমি আপনাদের প্রতিপালক। আমি ছাড়া আপনাদের আর কোন প্রতিপালক নেই। তাই আপনারা আমার আদেশ ও নিষেধ মেনে একমাত্র আমাকেই ভয় করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ زُبُرٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۭ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ
৫৩. অতঃপর তাঁদের অনুসারীরা তাঁদের মৃত্যুর পর ধর্মকে নিয়ে বিভক্ত হয়েছে। ফলে তারা বিভিন্ন দল ও অনুসারী গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক দলই তার এ বিশ্বাস নিয়ে খুশি যে, আল্লাহর নিকট তার অনুসরণীয় দ্বীনই কেবল পছন্দনীয়। তাই সে অন্যের কাছে থাকা ধর্মের দিকে সামান্যটুকুও ভ্রƒক্ষেপ করে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَذَرۡهُمۡ فِي غَمۡرَتِهِمۡ حَتَّىٰ حِينٍ
৫৪. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে তাদের উপর আযাব নাযিল হওয়া পর্যন্ত মূর্খতা ও অস্থিরতায় ছেড়ে দিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَيَحۡسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُم بِهِۦ مِن مَّالٖ وَبَنِينَ
৫৫-৫৬. নিজেদের তন্ত্রের উপর খুশি থাকা দলগুলো কি ভাবছে যে, আমি তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে যে সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি তা তাদের উপযুক্ত অগ্রিম কল্যাণ?! ব্যাপারটি তেমন নয় যা তারা ধারণা করেছে। বরং আমি তাদেরকে অবকাশ ও প্রচুর সময় দিচ্ছি। কিন্তু তারা তা অনুভব করতে পারছে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
نُسَارِعُ لَهُمۡ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ بَل لَّا يَشۡعُرُونَ
৫৫-৫৬. নিজেদের তন্ত্রের উপর খুশি থাকা দলগুলো কি ভাবছে যে, আমি তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে যে সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি তা তাদের উপযুক্ত অগ্রিম কল্যাণ?! ব্যাপারটি তেমন নয় যা তারা ধারণা করেছে। বরং আমি তাদেরকে অবকাশ ও প্রচুর সময় দিচ্ছি। কিন্তু তারা তা অনুভব করতে পারছে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱلَّذِينَ هُم مِّنۡ خَشۡيَةِ رَبِّهِم مُّشۡفِقُونَ
৫৭. নিশ্চয়ই যারা ঈমান ও সৎকর্মশীলতা সত্তে¡ও নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ يُؤۡمِنُونَ
৫৮. আর যারা তাঁর কিতাবের আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمۡ لَا يُشۡرِكُونَ
৫৯. আর যারা নিজেদের প্রতিপালককে এক ও অদ্বিতীয় বলে গণ্য করে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الاستكبار مانع من التوفيق للحق.
ক. অহঙ্কার সত্য লাভের পথে বিশেষ বাধা।

• إطابة المأكل له أثر في صلاح القلب وصلاح العمل.
খ. অন্তর ও আমলের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে পবিত্র খাদ্যের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।

• التوحيد ملة جميع الأنبياء ودعوتهم.
গ. তাওহীদ হলো সকল নবীর ধর্ম ও দা’ওয়াত।

• الإنعام على الفاجر ليس إكرامًا له، وإنما هو استدراج.
ঘ. অপরাধীকে নিয়ামত দেয়া মানে তাকে সম্মান করা নয়। বরং তার মানে হলো তাকে কিছুটা অবকাশ দেয়া।

وَٱلَّذِينَ يُؤۡتُونَ مَآ ءَاتَواْ وَّقُلُوبُهُمۡ وَجِلَةٌ أَنَّهُمۡ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ رَٰجِعُونَ
৬০. যারা নেকের কর্মসমূহে প্রচেষ্টা চালায় এবং নেক কর্মকাÐের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে; অথচ তারা এ ভয়ে ভীত যে, কিয়ামতের দিবসে যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরে যাবে তখন তিনি তাদের সাদাকা ও নেক আমলগুলো গ্রহণ করবেন কিনা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أُوْلَٰٓئِكَ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَهُمۡ لَهَا سَٰبِقُونَ
৬১. এ মহান বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারীরা নেক কাজের দিকে দ্রæত ধাবিত হয় এবং সেগুলোর প্রতি তারা দ্রæতগামী। এ জন্যই তারা অন্যদের চেয়ে অগ্রসর।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ وَلَدَيۡنَا كِتَٰبٞ يَنطِقُ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
৬২. আমি কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন আমল চাপিয়ে দেই না। আমার নিকট এমন একটি কিতাব রয়েছে যাতে আমি প্রত্যেক আমলকারীর আমল লিপিবদ্ধ করেছি। যা নিঃসন্দেহে সত্য কথা বলে। সেখানে তাদের কোন নেক আমল কমিয়ে কিংবা বদ আমল বাড়িয়ে তাদের উপর কোন ধরনের যুলুম করা হবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ قُلُوبُهُمۡ فِي غَمۡرَةٖ مِّنۡ هَٰذَا وَلَهُمۡ أَعۡمَٰلٞ مِّن دُونِ ذَٰلِكَ هُمۡ لَهَا عَٰمِلُونَ
৬৩. বরং কাফিরদের অন্তরগুলো এ কিতাব যা সত্য কথা বলে এবং যে কিতাব তাদের উপর নাযিল হয়েছে এতদুভয়ের ব্যাপারেই গাফিল। কুফরি ছাড়াও সেখানে তাদের অন্যান্য খারাপ আমল রয়েছে যা তারা করছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
حَتَّىٰٓ إِذَآ أَخَذۡنَا مُتۡرَفِيهِم بِٱلۡعَذَابِ إِذَا هُمۡ يَجۡـَٔرُونَ
৬৪. যখন আমি দুনিয়ার বিলাসীদেরকে কিয়ামতের আযাব দিয়ে শাস্তি দেবো তখন তারা ফরিয়াদের সুরে জোরে চিৎকার করে উঠবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا تَجۡـَٔرُواْ ٱلۡيَوۡمَۖ إِنَّكُم مِّنَّا لَا تُنصَرُونَ
৬৫. তখন তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে বলা হবে: আজ তোমরা চিৎকার ও ফরিয়াদ করো না। কারণ, আজ তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই যে তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَدۡ كَانَتۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡ تَنكِصُونَ
৬৬. দুনিয়াতে আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে তিলাওয়াত করা হয়েছিলো। তখন তোমরা সেগুলো শুনে সেগুলোকে অপছন্দ করে পেছনে ফিরে যেতে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مُسۡتَكۡبِرِينَ بِهِۦ سَٰمِرٗا تَهۡجُرُونَ
৬৭. তোমরা মানুষের সাথে অহঙ্কার করে এমন করতে। কারণ, তোমরা এ কথা মনে করতে যে, তোমরাই ছিলে হারামের তথা পবিত্র মক্কার অধিবাসী। বস্তুতঃ তোমরা তার অধিবাসী নও। কেননা, তার অধিবাসী হলো মূলতঃ মুত্তাকীরা। উপরন্তু তোমরা এর আশেপাশে বিশ্রী কথার গল্প করতে। এর কোন সম্মান করতে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَلَمۡ يَدَّبَّرُواْ ٱلۡقَوۡلَ أَمۡ جَآءَهُم مَّا لَمۡ يَأۡتِ ءَابَآءَهُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ
৬৮. আল্লাহ তা‘আলা যে কুর‘আন নাযিল করেছেন তা নিয়ে এ মুশরিকরা কি এতটুকুও চিন্তা করে দেখেনি। যাতে তারা এর উপর ঈমান আনতে এবং তার বিধানাবলীর উপর আমল করতে পারতো। না তাদের নিকট এমন কিছু এসেছে যা ইতিপূর্বে তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি। ফলে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ لَمۡ يَعۡرِفُواْ رَسُولَهُمۡ فَهُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ
৬৯. না কি তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে চিনতে পারেনি যাঁকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট পাঠিয়েছেন। ফলে তারা তাঁকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ তারা তাঁকে চিনেছে এবং তাঁর সত্যতা ও আমানতদারিতা সম্পর্কে ভালোই জানে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ يَقُولُونَ بِهِۦ جِنَّةُۢۚ بَلۡ جَآءَهُم بِٱلۡحَقِّ وَأَكۡثَرُهُمۡ لِلۡحَقِّ كَٰرِهُونَ
৭০. অথচ তারা বলে: সে একজন পাগল। নিশ্চয়ই তারা মিথ্যা বলেছে। বরং তিনি তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক সত্য নিয়ে এসেছেন যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বরং তাদের অধিকাংশই সত্যকে পছন্দ করে না। এমনকি তারা হিংসাবশত ও বাতিলের পক্ষ নিয়ে সত্যকে ঘৃণা করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوِ ٱتَّبَعَ ٱلۡحَقُّ أَهۡوَآءَهُمۡ لَفَسَدَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهِنَّۚ بَلۡ أَتَيۡنَٰهُم بِذِكۡرِهِمۡ فَهُمۡ عَن ذِكۡرِهِم مُّعۡرِضُونَ
৭১. আল্লাহ তা‘আলা যদি সকল ব্যাপার তাদের মন মতো পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতেন তাহলে আকাশ ও জমিন ধ্বংস হয়ে যেতো। এমনকি এতদুভয়ের মাঝে থাকা সবাই ধ্বংস হয়ে যেতো। কারণ, তারা কোন কিছুর পরিণতি সম্পর্কে জানতো না এবং পরিকল্পনার সময় শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যাচাই করতো না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَمۡ تَسۡـَٔلُهُمۡ خَرۡجٗا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيۡرٞۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ
৭২. হে রাসূল! না কি আপনি তাদের নিকট যে বিধান নিয়ে এসেছেন তার প্রতি দা’ওয়াত দিতে গিয়ে তাদের থেকে কোন প্রতিদান চাচ্ছেন। তাই তারা আপনার দা’ওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করছে? না, এটি তো আপনার পক্ষ থেকে ঘটেনি। কারণ, আপনার প্রতিপালকের সাওয়াব ও প্রতিদান এদের বা অন্যান্যদের প্রতিদানের চেয়ে অনেক উত্তম। তিনিই তো সর্বোত্তম রিযিকদাতা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّكَ لَتَدۡعُوهُمۡ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ
৭৩. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনি তো এদেরকে ও অন্যান্যদেরকে এমন এক সরল পথের দিকে ডাকছেন যাতে কোন বক্রতা নেই। সেটি হলো ইসলামের পথ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأٓخِرَةِ عَنِ ٱلصِّرَٰطِ لَنَٰكِبُونَ
৭৪. নিশ্চয়ই যারা আখিরাত ও সেখানকার হিসাব, শাস্তি ও সাওয়াব অবিশ্বাস করবে তারা অবশ্যই ইসলামের পথ ছেড়ে এমন সব বাঁকা পথের দিকে ধাবিত যা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• خوف المؤمن من عدم قبول عمله الصالح.
ক. একজন মু’মিন তার নেক আমলটুকু কবুল হয়েছে কি না সে ভয়ে ভীত থাকে।

• سقوط التكليف بما لا يُسْتطاع رحمة بالعباد.
খ. সাধ্যের বাইরে কোন কিছু করতে বাধ্য না করা সত্যিই বান্দাদের প্রতি আল্লাহর এক বিশেষ রহমত।

• الترف مانع من موانع الاستقامة وسبب في الهلاك.
গ. বিলাসিতা শরীয়তের উপর অটল থাকার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বাধা ও ধ্বংসের কারণ।

• قصور عقول البشر عن إدراك كثير من المصالح.
ঘ. মানুষের বিবেক-বুদ্ধি অনেক ধরনের লাভ-লোকসান বুঝতেই অক্ষম।

۞ وَلَوۡ رَحِمۡنَٰهُمۡ وَكَشَفۡنَا مَا بِهِم مِّن ضُرّٖ لَّلَجُّواْ فِي طُغۡيَٰنِهِمۡ يَعۡمَهُونَ
৭৫. আমি যদি তাদের প্রতি দয়া করে তাদের উপর থেকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ উঠিয়ে নিতাম তাহলে তারা সত্যভ্রষ্ট হয়ে আরো বেশি দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ভুগতো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ أَخَذۡنَٰهُم بِٱلۡعَذَابِ فَمَا ٱسۡتَكَانُواْ لِرَبِّهِمۡ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
৭৬. আমি তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেছি এরপরও তারা নিজেদের প্রতিপালকের সামনে বিনয়ী ও অবনত হয়নি। না তারা বিপদ নাযিলের সময় তা উঠিয়ে নেয়ার জন্য তাঁকে বিনয়ের সাথে ডেকেছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
حَتَّىٰٓ إِذَا فَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَابٗا ذَا عَذَابٖ شَدِيدٍ إِذَا هُمۡ فِيهِ مُبۡلِسُونَ
৭৭. এমনকি আমি যখন তাদের উপর কঠিন শাস্তির দরজা খুলে দিলাম তখন তারা সকল কল্যাণ ও বিপদ কেটে যাওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنشَأَ لَكُمُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَٱلۡأَفۡـِٔدَةَۚ قَلِيلٗا مَّا تَشۡكُرُونَ
৭৮. হে পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা! আল্লাহই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কান যাতে তোমরা তা দিয়ে শুনতে পারো এবং চোখ যাতে তোমরা তা দিয়ে দেখতে পারো আরো দিয়েছেন অন্তর যাতে তোমরা তা দিয়ে অনুধাবন করতে পারো। এতদসত্তে¡ও তোমরা এ নিয়ামতগুলোর খুব কমই কৃতজ্ঞতা আদায় করো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَهُوَ ٱلَّذِي ذَرَأَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَإِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ
৭৯. হে মানুষ! তিনিই তোমাদেরকে এ জমিনে সৃষ্টি করেছেন এবং একমাত্র তাঁর কাছেই কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে হিসাব ও প্রতিদানের জন্য একত্রিত করা হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَهُوَ ٱلَّذِي يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ وَلَهُ ٱخۡتِلَٰفُ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ
৮০. তিনি একাই জীবিত করেন। তিনি ছাড়া আর কেউ জীবন দেয়ার মতো নেই। তিনি একাই মৃত্যু দেন। তিনি ছাড়া আর কেউ মৃত্যু দেয়ার মতো নেই। একমাত্র তাঁর হাতেই দিন ও রাতের পরিবর্তন তথা অন্ধকার ও আলোকিত করা এবং খাটো ও লম্বা করার ক্ষমতা। তোমরা কি তাঁর কুদরত এবং সৃষ্টি ও পরিকল্পনায় তাঁর এককত্বের ব্যাপারটি বুঝতে পারো না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
بَلۡ قَالُواْ مِثۡلَ مَا قَالَ ٱلۡأَوَّلُونَ
৮১. বরং তাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষরা কুফরির ব্যাপারে যাই বলেছে তারাও তাই বলছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُوٓاْ أَءِذَا مِتۡنَا وَكُنَّا تُرَابٗا وَعِظَٰمًا أَءِنَّا لَمَبۡعُوثُونَ
৮২. তারা এটিকে অস্বীকার ও অনেক দূরের ভেবে বললো: আমরা মরে মাটি ও পুরনো হাড় হয়ে গেলেও কি আমাদেরকে হিসাবের জন্য পুনরায় জীবিত করা হবে?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَقَدۡ وُعِدۡنَا نَحۡنُ وَءَابَآؤُنَا هَٰذَا مِن قَبۡلُ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّآ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ
৮৩. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের ওয়াদা আমাদের সাথে করা হয়েছে এমনকি ইতিপূর্বে একই ওয়াদা আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথেও করা হয়েছে। অথচ আমরা এখনো পর্যন্ত এ ওয়াদা বাস্তবায়িত হতে দেখিনি। এটি মূলতঃ পূর্ববর্তীদের মিথ্যা ও কল্পকাহিনী মাত্র।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
৮৪. হে রাসূল! আপনি পনরুত্থান অস্বীকারকারী এ কাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করুন: এ জমিন কার এবং এর অধিবাসীর মালিক কে? যদি তোমাদের এ সম্পর্কে কিছু জানা থাকে তাহলে উত্তর দাও।
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
৮৫. তারা অচিরেই বলবে: জমিন ও তার অধিবাসীর মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ। অতএব, আপনি তাদেরকে বলুন: তোমরা কি এ কথা মনে করতে পারো না যে, যিনি জমিন ও তার অধিবাসীর মালিক তিনি তোমাদেরকে মৃত্যুর পর আবারো জীবিত করতে পারেন?
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ
৮৬. আপনি তাদেরকে বলুন: সাত আকাশের মালিক কে? উপরন্তু এ মহান আরশের মালিক কে, যার চেয়ে বড় সৃষ্টি আর নেই?
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ
৮৭. তারা অচিরেই বলবে: সাত আকাশ ও মহান আরশের মালিক একমাত্র আল্লাহ। অতএব, আপনি তাদেরকে বলুন: তাহলে তোমরা কি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা মেনে তাঁকে ভয় করবে না, যাতে তোমরা তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারো?
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
৮৮. আপনি তাদেরকে বলুন: কার হাতে সকল জিনিসের মালিকানা? যাঁর মালিকানার বাইরে কোন জিনিসই থাকতে পারে না। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান সাহায্য করেন। তিনি কারো সাথে অনিষ্টের ইচ্ছা করলে কেউ কি তার শাস্তি প্রতিরোধ করতে পারবে? যদি তোমাদের এ সম্পর্কে কিছু জানা থাকে তাহলে উত্তর দাও।
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ
৮৯. তারা অচিরেই বলবে: সকল কিছুর মালিকানা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। অতএব, আপনি তাদেরকে বলুন: তাহলে তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি কোথায় চলে যায়, যখন তোমরা এ কথা স্বীকার করা সত্তে¡ও তিনি ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• عدم اعتبار الكفار بالنعم أو النقم التي تقع عليهم دليل على فساد فطرهم.
ক. কাফিরদের উপর নেমে আসা নিয়ামত ও প্রতিশোধ থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ না করা তাদের মানসিকতা নষ্ট হওয়ারই প্রমাণ।

• كفران النعم صفة من صفات الكفار.
খ. নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা কাফিরদেরই একটি বৈশিষ্ট্য।

• التمسك بالتقليد الأعمى يمنع من الوصول للحق.
গ. অন্ধ অনুসরণকে আঁকড়ে ধরা সত্যের দিকে পৌঁছানোর পথে একটি মারাত্মক বাধা।

• الإقرار بالربوبية ما لم يصحبه إقرار بالألوهية لا ينجي صاحبه.
ঘ. আল্লাহর প্রভুত্বের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাঁর উপাস্য হওয়ার স্বীকৃতি না থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কখনোই রক্ষা করতে পারে না।

بَلۡ أَتَيۡنَٰهُم بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ
৯০. ব্যাপারটি তেমন নয় যা তারা দাবি করছে। বরং আমি তাদের নিকট যে সত্য নিয়ে এসেছি তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারা যে আল্লাহর অংশীদার ও সন্তান আছে বলে দাবি করে তাতে তারা মিথ্যুক। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ কথা থেকে বহু ঊর্ধ্বে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۭ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ
৯১. আল্লাহ তা‘আলা কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। যা কাফিররা ধারণা করছে এবং তাঁর সাথে আর কোন সত্য মা’বূদ নেই। যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাঁর সাথে অন্য কোন সত্য মা’বূদ রয়েছে তাহলে প্রত্যেক মা’বূদই তাঁর বানানো সৃষ্টির অংশটুকু অধিগ্রহণ এবং একে অপরের উপর জয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন। ফলে দুনিয়ার শৃঙ্খলাই ভেঙ্গে পড়বে। বাস্তব কথা হলো এসব কোন কিছুই ঘটেনি। সুতরাং তা থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, সত্য মা’বূদ হলেন শুধুমাত্র একজন, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি হলেন এক আল্লাহ। তিনি মুশরিকরা যে তাঁকে সন্তান ও শরীকের বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট করেছে তা থেকে পূত ও পবিত্র। যা তাঁর সাথে আদৌ মানায় না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
عَٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ
৯২. তিনি তাঁর সৃষ্টির সব অদৃশ্যই জানেন এবং যা দেখা ও পঞ্চেন্দ্রীয় দিয়ে বুঝা যায় তা সবই জানেন। এর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। আল্লাহর সাথে শরীক থাকার বিষয় থেকে তিনি সত্যিই অনেক ঊর্ধ্বে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُل رَّبِّ إِمَّا تُرِيَنِّي مَا يُوعَدُونَ
৯৩. হে রাসূল! আপনি বলুন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি আমাকে এ মুশরিকদের ব্যাপারে আপনার ওয়াদাকৃত আযাবটুকু দেখাতেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
رَبِّ فَلَا تَجۡعَلۡنِي فِي ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ
৯৪. হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি আমার উপস্থিতিতেই তাদেরকে শাস্তি দেন তাহলে আপনি আমাকে তাদের মাঝে রাখবেন না। যাতে যে আযাব তাদের উপর আসবে তা আমার উপর না আসে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّا عَلَىٰٓ أَن نُّرِيَكَ مَا نَعِدُهُمۡ لَقَٰدِرُونَ
৯৫. বস্তুতঃ আমি আপনাকে তাদের সাথে ওয়াদাকৃত আযাবটুকু দেখাতে ও অবলোকন করাতে সক্ষম। আমি সেটা বা সেটা ছাড়া অন্য কিছু করতেও অক্ষম নই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ٱلسَّيِّئَةَۚ نَحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
৯৬. হে রাসূল! যে আপনার সাথে খারাপ আচরণ করে আপনি ভালো আচরণ দিয়ে তার প্রতিরোধ করুন। আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার দেয়া কষ্টের উপর ধৈর্য ধরুন। আমি তাদের শিরক ও মিথ্যারোপ সম্পর্কে জানি এবং জানি আপনাকে দেয়া অশোভনীয় বিশেষণগুলোও যেমন: যাদুকর ও পাগল বলে আখ্যায়িত করা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنۡ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِينِ
৯৭. আপনি বলুন: হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ওয়াসওয়াসা থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحۡضُرُونِ
৯৮. হে আমার প্রতিপালক! আমি আরো আপনার আশ্রয় কামনা করছি আমার যে কোন কাজে তাদের উপস্থিতি হতে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ٱرۡجِعُونِ
৯৯. এমনকি এ মুশরিকদের কারো কাছে যখন মৃত্যু এসে যায় এবং সে নাযিল হওয়া সবকিছু দেখতে পায় তখন সে তার গত জীবনে আল্লাহর শানে তার সকল ত্রæটি-বিচ্যুতির কথা স্মরণ করে তার উপর লজ্জিত হয়ে বলে: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে দুনিয়ার জীবনে ফিরিয়ে দিন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَعَلِّيٓ أَعۡمَلُ صَٰلِحٗا فِيمَا تَرَكۡتُۚ كَلَّآۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ
১০০. যাতে আমি সেখানে ফিরে গিয়ে নেক আমল করতে পারি। বলা হবে: কখনোই না। তুমি যা কামনা করছো ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং এটি একটি কথার কথা যা সে বললো। তাকে যদি দুনিয়ার জীবনে ফেরত দেয়া হয় তাহলে সে তার ওয়াদা পুরা করবে না। বস্তুতঃ এ মৃতরা পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যকার একটি আড়ালে অবস্থান করবে। তারা আর সেখান থেকে নিজেদের হারানো জিনিস ফিরে পেতে এবং নষ্ট কর্ম সংশোধনের জন্য দুনিয়াতে ফিরে আসতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ
১০১. শিঙ্গায় ফুৎকারে দায়িত্বরত ফিরিশতা যখন কিয়ামতের ঘোষণা সংক্রান্ত দ্বিতীয় ফুৎকার দিবে তখন তারা পরকালের ভয়াবহ অবস্থায় ব্যস্ত থাকার দরুন নিজেদের মধ্যকার বংশ পরিচিতি নিয়ে একে অপরের সাথে গর্ব করবে না এবং নিজেদের বিষয়সমূহ নিয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন একে অপরকে কিছু জিজ্ঞাসাও করবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ
১০২. অতঃপর গুনাহর তুলনায় নেকি বেশি হওয়ার দরুন যাদের নেকির পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে এবং তারা আশঙ্কিত বস্তু থেকে দূরে থাকবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ
১০৩. আর নেকির তুলনায় গুনাহ বেশি হওয়ার দরুন যাদের নেকির পাল্লা হালকা হবে তারা মূলতঃ লাভজনক ঈমান-আমল ছেড়ে এবং ক্ষতিকর বস্তুতে লিপ্ত হয়ে নিজেদেরকেই ধ্বংস করেছে। তাই তারা জাহান্নামের আগুনে অবস্থান করবে। তারা সেখান থেকে আর কখনোই বের হতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ
১০৪. আগুন তাদের চেহারাগুলো পুড়ে ফেলবে এবং চেহারার কঠিন বীভৎসতার দরুন তাদের দাঁতগুলো থেকে নিজেদের উপরের-নিচের ঠোঁটগুলো সঙ্কুচিত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الاستدلال باستقرار نظام الكون على وحدانية الله.
ক. দুনিয়ার নিয়মতান্ত্রিকতার স্থিতিশীলতা আল্লাহর এককত্বকে প্রমাণ করে।

• إحاطة علم الله بكل شيء.
খ. আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকেই বেষ্টন করে রয়েছে।

• معاملة المسيء بالإحسان أدب إسلامي رفيع له تأثيره البالغ في الخصم.
গ. অন্যায়কারীর সাথে ইহসান তথা সদাচরণ একটি উঁচু ইসলামী আদব প্রতিপক্ষের মাঝে যার অনেক প্রভাব রয়েছে।

• ضرورة الاستعاذة بالله من وساوس الشيطان وإغراءاته.
ঘ. শয়তানের ধোঁকা ও কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করার গুরুত্ব অপরিসীম।

أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ
১০৫. তাদেরকে ধমক দিয়ে বলা হবে: দুনিয়াতে কি তোমাদেরকে কুর‘আনের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনানো হয়নি?! তখন কিন্তু তোমরা সেগুলোকে অস্বীকার করেছিলে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ
১০৬. তারা বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! পূর্ব থেকেই আপনার জ্ঞানে থাকা দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পরাস্ত করেছে। আর আমরা সত্যিই এক সত্যভ্রষ্ট জাতি ছিলাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ
১০৭. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আগুন থেকে বের করে দিন। আমরা যদি আবারো পূর্বের কুফরি ও ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে যাই তাহলে আমরা সত্যিই নিজেদের উপর যুলুম করে বসবো। তখন আর আমাদের কোন ওযর থাকবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالَ ٱخۡسَـُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
১০৮. আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে আগুনেই বসবাস করো। আর আমার সাথে কোন কথাই বলবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ
১০৯. আমার একদল মু’মিন বান্দারা বলতো: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। অতএব, আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে দয়া করুন। আপনিই তো সর্বোত্তম দয়াবান।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ
১১০. তোমরা তখন নিজেদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনাকারী এ মু’মিনদেরকে ঠাট্টার পাত্র বানিয়েছিলে। তোমরা তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা ও মশকারা করতে। তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করার ব্যস্ততা তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। আর তোমরা ঠাট্টা ও মশকারা করে তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশায় মগ্ন থাকতে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ
১১১. আমি কিয়ামতের দিন এ মু’মিনদেরকে জান্নাত পাওয়ার সফলতার প্রতিদান দেবো। এটা হবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তোমাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টের উপর তাদের ধৈর্য ধারণের জন্য।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ عَدَدَ سِنِينَ
১১২. তিনি বলেন: পৃথিবীতে তোমরা কতো বছর অবস্থান করছিলে? তোমরা সেখানে কতো সময় নষ্ট করেছিলে?
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَالُواْ لَبِثۡنَا يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖ فَسۡـَٔلِ ٱلۡعَآدِّينَ
১১৩. তখন তারা উত্তরে বলবে: আমরা একদিন বা তার কিয়দংশ সময় সেখানে অবস্থান করেছিলাম। আপনি মাস ও দিনের হিসাবকারীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قَٰلَ إِن لَّبِثۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلٗاۖ لَّوۡ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
১১৪. তিনি বললেন: তোমরা আসলেই দুনিয়াতে খুব অল্প সময়ই অবস্থান করেছিলে। যখন আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধরা তোমাদের জন্য সহজ ছিলো। তোমরা যদি আসলেই তোমাদের অবস্থানের সময়টুকু ভালোভাবে জানতে!
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ
১১৫. হে মানুষ! তোমরা কি এমন মনে করছো যে, আমি তোমাদেরকে কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই শুধুমাত্র তামাশার বস্তু হিসেবেই সৃষ্টি করেছি। পশুদের ন্যায় তোমাদেরও কোন শাস্তি বা প্রতিদান থাকবে না। আর তোমরা কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য আমার নিকটও ফিরে আসবে না?!
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ ٱلۡمَلِكُ ٱلۡحَقُّۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡكَرِيمِ
১১৬. প্রকৃত মালিক আল্লাহ পূত ও পবিত্র। যিনি তাঁর সৃষ্টির মাঝে যা চান তাই করেন। যিনি সত্য। যাঁর ওয়াদা সত্য। যাঁর কথা সত্য। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি মহান আরশের মালিক। যা তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্যে বড়। আর যিনি সবচেয়ে বড় সৃষ্টির মালিক তিনি তো সব কিছুরই মালিক।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ
১১৭. যে ব্যক্তি আল্লাহর পাশাপাশি অন্য মা’বূদকে ডাকে -যার ইবাদাতের উপযুক্ততার ব্যাপারে কোন প্রমাণই নেই- (আর এটি আল্লাহ ছাড়া সকল মা’বূদেরই অবস্থা) নিশ্চয়ই তার এ খারাপ আমলের প্রতিদান তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তিনি তাকে এর শাস্তির মাধ্যমে প্রতিদান দিবেন। বস্তুতঃ কাফিররা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে এবং আশঙ্কিত বস্তু থেকে নাজাত পেয়ে কখনোই সফলকাম হতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقُل رَّبِّ ٱغۡفِرۡ وَٱرۡحَمۡ وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ
১১৮. হে রাসূল! আপনি বলুন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আপনার নিজ অনুগ্রহে আমাকে দয়া করুন। শুধুমাত্র আপনিই একজন পাপীর প্রতি সর্বোত্তম দয়াশীল। আপনিই তার তাওবা কবুল করে থাকেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الكافر حقير مهان عند الله.
ক. একজন কাফির আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও লাঞ্ছিত।

• الاستهزاء بالصالحين ذنب عظيم يستحق صاحبه العذاب.
খ. নেককারদের সাথে ঠাট্টা করা একটি মহা পাপ। যে অপরাধ শাস্তির উপযুক্ত।

• تضييع العمر لازم من لوازم الكفر.
গ. নিজ জীবনকে নষ্ট করে দেয়া কুফরির একটি বাধ্যতামূলক দিক।

• الثناء على الله مظهر من مظاهر الأدب في الدعاء.
ঘ. দু‘আর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করা দু‘আর একটি আদবের বহিঃপ্রকাশ।

• لما افتتح الله سبحانه السورة بذكر صفات فلاح المؤمنين ناسب أن تختم السورة بذكر خسارة الكافرين وعدم فلاحهم.
ঙ. যখন আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সফলতার গুণাবলী উল্লেখের মাধ্যমে সূরাটি শুরু করেছেন তখন সূরাটিকে কাফিরদের ক্ষতিগ্রস্ততা ও ব্যর্থতার উল্লেখের মাধ্যমে শেষ করাই প্রাসঙ্গিক।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-মুমিনুন
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ