কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। * - অনুবাদসমূহের সূচী


অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আন-নূর   আয়াত:

সূরা আন-নূর

সূরার কতক উদ্দেশ্য:
الدعوة إلى العفاف وحماية الأعراض.
মুসলিম সমাজের সাধুতা, পর্দা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ এবং অশ্লীলতার উপকরণসমূহ উপরন্তু সেগুলো প্রচারে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র থেকে তাকে রক্ষা করার উপায় বর্ণনা করা।

سُورَةٌ أَنزَلۡنَٰهَا وَفَرَضۡنَٰهَا وَأَنزَلۡنَا فِيهَآ ءَايَٰتِۭ بَيِّنَٰتٖ لَّعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ
১. এ সূরাটি আমি নাযিল করেছি এবং এর বিধি-বিধানের উপর আমল করা আমি ওয়াজিব করে দিয়েছি। উপরন্তু তাতে অনেকগুলো সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি। যেন তোমরা তাতে থাকা বিধানগুলোকে স্মরণ করে সেগুলোর উপর আমল করতে পারো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
২. অবিবাহিতা ব্যভিচারিণী ও অবিবাহিত ব্যভিচারীর প্রত্যেককে একশ’টি বেত্রাঘাত করো। তাদের ব্যাপারে কোন দয়া ও মায়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। যার ফলে তোমরা তাদের উপর দÐবিধি প্রয়োগ করবে না অথবা তা হালকা করে দিবে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর যেন তাদের উপর দÐবিধি কায়েমের সময় সেখানে একদল মু’মিন উপস্থিত থাকে। যেন তাদের ব্যাপারটি বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং তাদেরকে ও অন্যান্যদেরকে তা থেকে বিরত রাখা যায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
৩. ব্যভিচারের ভয়াবহতার দরুন আল্লাহ তা‘আলা এ কথা উল্লেখ করলেন যে, একজন অভ্যস্ত ব্যভিচারী তার ন্যায় কোন ব্যভিচারিণী অথবা শিরককারিণী মেয়েকেই সে বিয়ে করতে চায়। যে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে চায় না। যদিও তাকে বিবাহ করা জায়িয নয়। তেমনিভাবে একজন অভ্যস্তা ব্যভিচারিণী তার ন্যায় কোন ব্যভিচারী অথবা শিরককারী পুরুষকেই সে বিয়ে করতে চায়। যে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে চায় না। যদিও তাকে বিবাহ করা জায়িয নয়। বস্তুতঃ একজন ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা এবং ব্যভিচরীর নিকট বিবাহ দেয়া মু’মিনদের উপর হারাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ
৪. যারা সতী মহিলাদেরকে এবং (তাদের ন্যায় সাধু পুরুষদেরকে) অশ্লীলতার অপবাদ দিয়েছে অতঃপর তাদের অশ্লীলতার অপবাদের ব্যাপারে চার জন সাক্ষী আনতে পারেনি তাহলে হে বিচারকরা! তোমরা তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং আর কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। বস্তুতঃ যারা সতী মহিলাদেরকে অপবাদ দেয় তারা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ وَأَصۡلَحُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৫. তবে যারা এ ঘটনার পর আল্লাহর নিকট তাওবা করে ফেলেছে এবং নিজেদের আমলগুলো সংশোধন করে নিয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ أَزۡوَٰجَهُمۡ وَلَمۡ يَكُن لَّهُمۡ شُهَدَآءُ إِلَّآ أَنفُسُهُمۡ فَشَهَٰدَةُ أَحَدِهِمۡ أَرۡبَعُ شَهَٰدَٰتِۭ بِٱللَّهِ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ
৬. যে পুরুষরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়; অথচ তারা নিজেরা ছাড়া এমন কোন সাক্ষী নেই যারা তাদের অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে তাদের জন্য সাক্ষ্য দিবে তাহলে তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর নামে এভাবে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই সে তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সত্যবাদী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡخَٰمِسَةُ أَنَّ لَعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ إِن كَانَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ
৭. অতঃপর সে তার পঞ্চম সাক্ষ্যতে নিজের উপর অভিশাপের উপযুক্ততার বদদু‘আ বাড়িয়ে দিবে যদি সে তার অপবাদে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيَدۡرَؤُاْ عَنۡهَا ٱلۡعَذَابَ أَن تَشۡهَدَ أَرۡبَعَ شَهَٰدَٰتِۭ بِٱللَّهِ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ
৮. এরই মাধ্যমে সে মহিলা ব্যভিচারের দÐবিধি পাওয়ার উপযুক্ত হবে। তবে তার উপর থেকে এ দÐবিধি প্রতিহত করা হবে যখন সে আল্লাহর নামে এভাবে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই সে পুরুষ তাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡخَٰمِسَةَ أَنَّ غَضَبَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَآ إِن كَانَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ
৯. অতঃপর সে তার পঞ্চম সাক্ষ্যতে নিজের উপর আল্লাহর গযবের বদদু‘আ বাড়িয়ে দিবে যদি সে পুরুষ তার দেয়া অপবাদে সত্যবাদী হয়ে থাকে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ وَأَنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٌ حَكِيمٌ
১০. হে মানুষ! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো আর যদি তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দার তাওবা গ্রহণকারী এবং তাঁর শরীয়ত ও পরিকল্পনায় প্রজ্ঞাময় না হতেন তাহলে তিনি তোমাদের গুনাহগুলোর দ্রæত শাস্তি দিতেন এবং তোমাদেরকে সেগুলোর জন্য লজ্জিত করতেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• التمهيد للحديث عن الأمور العظام بما يؤذن بعظمها.
ক. বড় কোন ব্যাপারে আলোচনার ভ‚মিকা এমন হতে হবে যা তার বড়ত্ব ঘোষণা করবে।

• الزاني يفقد الاحترام والرحمة في المجتمع المسلم.
খ. একজন ব্যভিচারী নিশ্চিতভাবে মুসলিম সমাজের দয়া ও সম্মান হারিয়ে ফেলে।

• الحصار الاجتماعي على الزناة وسيلة لتحصين المجتمع منهم، ووسيلة لردعهم عن الزنى.
গ. ব্যভিচারীদের ব্যাপারে সামাজিক অবরোধ সমাজকে বাঁচানো এবং তাদেরকে ব্যভিচার থেকে দূরে রাখার একটি বিশেষ মাধ্যম।

• تنويع عقوبة القاذف إلى عقوبة مادية (الحد)، ومعنوية (رد شهادته، والحكم عليه بالفسق) دليل على خطورة هذا الفعل.
ঘ. অপবাদদাতার শাস্তির বিভিন্নতা যেমন: তার বাহ্যিক শাস্তি তথা দÐবিধি এবং তার মানসিক শাস্তি তথা তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা উপরন্তু তার উপর ফাসিকের বিধান চাপিয়ে দেয়া এ কাজের ভয়াবহতারই প্রমাণ।

• لا يثبت الزنى إلا ببينة، وادعاؤه دونها قذف.
ঙ. সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া ব্যভিচার প্রমাণিত হয় না। বরং প্রমাণ ছাড়া এর দাবি করা অপবাদই মাত্র।

إِنَّ ٱلَّذِينَ جَآءُو بِٱلۡإِفۡكِ عُصۡبَةٞ مِّنكُمۡۚ لَا تَحۡسَبُوهُ شَرّٗا لَّكُمۖ بَلۡ هُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ لِكُلِّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُم مَّا ٱكۡتَسَبَ مِنَ ٱلۡإِثۡمِۚ وَٱلَّذِي تَوَلَّىٰ كِبۡرَهُۥ مِنۡهُمۡ لَهُۥ عَذَابٌ عَظِيمٞ
১১. নিশ্চয়ই যারা উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে অশ্লীল কাজের অপবাদ দিয়েছে তারা কিন্তু তোমাদের সাথে সম্পৃক্ত একটি দল। হে মু’মিনরা! তোমরা মনে করো না যে, তাদের এ অপবাদমূলক অপকর্ম তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বরং তা অনেক ক্ষেত্রে উত্তম। কারণ, তাতে রয়েছে সাওয়াব এবং মু’মিনদের জন্য বাছাইপর্ব উপরন্তু এর পাশাপাশি তা হলো উম্মুল-মু’মিনীনের পবিত্রতার ঘোষণা। যারা তাকে অশ্লীতার অপবাদ দেয়ার অংশীদার তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তার গুনাহ কামাইয়ের প্রতিদান। কারণ, সে অপবাদের কথা উচ্চারণ করেছে। আর যে তা শুরু করে এর বড় অংশটুকুই বহন করেছে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ ظَنَّ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بِأَنفُسِهِمۡ خَيۡرٗا وَقَالُواْ هَٰذَآ إِفۡكٞ مُّبِينٞ
১২. যখন মু’মিন পুরুষ ও মহিলারা তাদেরই অন্য মু’মিন ভাইদের পক্ষ থেকে এ মহা অপবাদ শুনলো তখন তারা কেন যাকে এ অপবাদ দেয়া হয়েছে তার পবিত্রতায় বিশ্বাস করলো না। আর বললো না যে, এটি একটি সুস্পষ্ট মিথ্যা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّوۡلَا جَآءُو عَلَيۡهِ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَۚ فَإِذۡ لَمۡ يَأۡتُواْ بِٱلشُّهَدَآءِ فَأُوْلَٰٓئِكَ عِندَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ
১৩. উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর ব্যাপারে অপবাদদাতারা তাদের মহা অপবাদের উপর কেন চারজন সাক্ষী আনলো না। যারা তাদের অপবাদের বিশুদ্ধতার উপর সাক্ষ্য দিতো। যখন তারা এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী আনতে পারেনি এবং কখনোই তারা তা আনতে পারবে না তখন তারা আল্লাহর বিচারে মিথ্যুক বলেই প্রমাণিত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ لَمَسَّكُمۡ فِي مَآ أَفَضۡتُمۡ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
১৪. হে মু’মিনরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো -যার ফলে তিনি তোমাদেরকে দ্রæত শাস্তি দেননি- আর যদি তিনি তোমাদের মধ্যকার তাওবাকারীদের তাওবা গ্রহণ না করতেন তাহলে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি পেয়ে বসতো। কারণ, তোমরা উম্মুল-মু’মিনীনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার কাজে লিপ্ত হয়েছিলে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِذۡ تَلَقَّوۡنَهُۥ بِأَلۡسِنَتِكُمۡ وَتَقُولُونَ بِأَفۡوَاهِكُم مَّا لَيۡسَ لَكُم بِهِۦ عِلۡمٞ وَتَحۡسَبُونَهُۥ هَيِّنٗا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٞ
১৫. যখন তোমাদের একে অন্য থেকে তা বর্ণনা করেছে এবং তা বাতিল হওয়া সত্তে¡ও তোমরা তা নিজেদের মুখ দিয়ে চালাচালি করছিলে; অথচ সে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞানই নেই। তোমরা মনে করছিলে এ ব্যাপারটি একেবারেই সহজ ও গুরুত্বহীন। অথচ তা আল্লাহর নিকট খুবই মারাত্মক। কারণ, তাতে রয়েছে মিথ্যা ও নিরপরাধ লোককে অপবাদ দেয়া।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ قُلۡتُم مَّا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَٰذَا سُبۡحَٰنَكَ هَٰذَا بُهۡتَٰنٌ عَظِيمٞ
১৬. যখন তোমরা এ অপবাদ শুনলে তখন কেন তোমরা এ কথা বললে না যে, এ বিশ্রী ব্যাপার নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য সঠিক হবে না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি পবিত্র। তারা উম্মুল-মু’মিনীনকে যে অপবাদ দিয়েছে তা কিন্তু ভারী মিথ্যা কথা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ
১৭. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং এ কথার উপদেশও দিচ্ছেন যে, যেন তোমরা এমন অপবাদের দিকে আবার ফিরে না যাও। ফলে তোমরা একজন নিরপরাধকে আবারো অশ্লীলতার অপবাদ দিবে। যদি তোমরা আল্লাহতে বিশ্বাসী হয়ে থাকো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأٓيَٰتِۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
১৮. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তাঁর বিধানাবলী ও উপদেশ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সব কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন। তিনি তাঁর শরীয়ত রচনায় ও পরিকল্পনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
১৯. নিশ্চয়ই যারা মু’মিনদের মাঝে অপকর্মসমূহ বিশেষ করে ব্যভিচারের অপবাদ ছড়িয়ে যাওয়া পছন্দ করে তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপবাদের দÐ কায়েমের মাধ্যমে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে পরকালের জাহান্নামের শাস্তি। আল্লাহ তাদের মিথ্যা সম্পর্কে জানেন এবং তাঁর বান্দাদের বিষয়টি কোন্ পর্যন্ত গড়াবে তাও জানেন। তিনি তাদের সুবিধাদির কথাও জানেন। অথচ তোমরা তা জানো না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ وَأَنَّ ٱللَّهَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ
২০. হে অপবাদে লিপ্তরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো আর যদি আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময় না হতেন তাহলে তিনি তোমাদেরকে দ্রæত শাস্তি দিতেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• تركيز المنافقين على هدم مراكز الثقة في المجتمع المسلم بإشاعة الاتهامات الباطلة.
ক. বাতিল অপবাদ ছড়ানোর মাধ্যমে মুসলিম সমাজের আস্থার কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করা মুনাফিকদের টার্গেট।

• المنافقون قد يستدرجون بعض المؤمنين لمشاركتهم في أعمالهم.
খ. মুনাফিকরা কখনো কখনো তাদের কর্মকাÐে অংশগ্রহণের জন্য কিছু মু’মিনকে ধীরে ধীরে টেনে নেয়।

• تكريم أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها بتبرئتها من فوق سبع سماوات.
গ. উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে সপ্তাকাশের উপর থেকে পবিত্র ঘোষণার মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছে।

• ضرورة التثبت تجاه الشائعات.

۞ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ وَمَن يَتَّبِعۡ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۚ وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ أَبَدٗا وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ
২১. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমরা বাতিলকে সজ্জিত করার ক্ষেত্রে শয়তানের পথগুলোর অনুসরণ করো না। যে তার পথগুলোর অনুসরণ করবে তার জানা থাকা দরকার যে, নিশ্চয়ই সে শরীয়ত বিরোধী বিশ্রী কথা ও কাজের আদেশ করবে। হে মু’মিনরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকতো তাহলে তিনি তোমাদের মধ্যকার কোন তাওবাকারীর তাওবা কবুলের মাধ্যমে তাকে পরিচ্ছন্ন করতেন না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যার ব্যাপারে চান তার তাওবা কবুলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কথা শুনেন এবং তোমাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে ভালোই জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا يَأۡتَلِ أُوْلُواْ ٱلۡفَضۡلِ مِنكُمۡ وَٱلسَّعَةِ أَن يُؤۡتُوٓاْ أُوْلِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ وَلۡيَعۡفُواْ وَلۡيَصۡفَحُوٓاْۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٌ
২২. সম্পদে সচ্ছল ও ধর্মীয় সম্মানের অধিকারী ব্যক্তিরা তাদের মুহাজির পরমুখাপেক্ষী গরিব আত্মীয়দেরকে কোন অপরাধে লিপ্ত হওয়ার দরুন কিছু না দেয়ার কসম করবে না। বরং তাদেরকে যেনো তারা ক্ষমা ও মার্জনা করে। তোমরা কি এ কথা পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দিবেন যদি তোমরা তাদেরকে ক্ষমা ও মার্জনা করো?! বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। অতএব, তাঁর বান্দারা তাঁরই অনুসরণ করুক। এ আয়াতটি মুলতঃ আবু বকর সিদ্দীক সম্পর্কে নাযিল হয়েছে যখন তিনি মিসতাহর অপবাদে অংশগ্রহণের জন্য তার খরচ না চালানোর কসম করেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ
২৩. নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় -যে নারীরা এমন অশ্লীলতার ধারে-কাছেও নেই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে আখিরাতের কঠিন শাস্তি।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَ تَشۡهَدُ عَلَيۡهِمۡ أَلۡسِنَتُهُمۡ وَأَيۡدِيهِمۡ وَأَرۡجُلُهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
২৪. কিয়ামতের দিন তাদের উপর এর শাস্তি আপতিত হবে যেদিন তাদের জিহŸাগুলো তাদের বাতিল কথার সাক্ষ্য দিবে। উপরন্তু তাদের হাত-পাগুলোও তাদের কর্মকাÐের সাক্ষ্য দিবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَئِذٖ يُوَفِّيهِمُ ٱللَّهُ دِينَهُمُ ٱلۡحَقَّ وَيَعۡلَمُونَ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ ٱلۡمُبِينُ
২৫. এদিন আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফভিত্তিক তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দিবেন এবং তারা সেদিন জানতে পারবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সত্য। তাঁর পক্ষ থেকে সংবাদ, ওয়াদা বা হুমকি যাই দেয়া হোক না কেন তা সবই সুস্পষ্ট সত্য। যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ٱلۡخَبِيثَٰتُ لِلۡخَبِيثِينَ وَٱلۡخَبِيثُونَ لِلۡخَبِيثَٰتِۖ وَٱلطَّيِّبَٰتُ لِلطَّيِّبِينَ وَٱلطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَٰتِۚ أُوْلَٰٓئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَۖ لَهُم مَّغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ
২৬. প্রত্যেক নিকৃষ্ট পুরুষ ও মহিলাকে প্রত্যেক নিকৃষ্ট কথা ও কাজের সাথেই মানায়। তেমনিভাবে সকল পবিত্রতাই অনুরূপ পবিত্র ব্যক্তির সাথেই মানায়। এ সকল পবিত্র পুরুষ ও মহিলা সম্পর্কে নিকৃষ্ট পুরুষ ও মহিলারা যা বলে তা থেকে তারা মুক্ত ও পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা যার ভিত্তিতে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানিত রিযিক তথা জান্নাত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ
২৭. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমরা অন্যের ঘরে ঢুকার সময় সে ঘরের অধিবাসীর অনুমতি ছাড়া তাতে প্রবেশ করো না। উপরন্তু অনুমতির সময় তাদেরকে সালাম দিয়ে এভাবে বলবে: “আস-সালামুআলাইকুম, আমি কি ঢুকতে পারি?” যে অনুমতি নেয়ার ব্যাপারে তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে তা তোমাদের জন্য হঠাৎ প্রবেশ করা থেকে অনেক উত্তম। আশা করা যায় যে, তোমরা আদেশের ব্যাপারটি স্মরণ করে তা পালন করবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• إغراءات الشيطان ووساوسه داعية إلى ارتكاب المعاصي، فليحذرها المؤمن.
ক. শয়তানের লোভাতুর প্রস্তাব ও কুমন্ত্রণা পাপে লিপ্ত হওয়ার আহŸান করে তাই একজন মু’মিনকে অবশ্যই সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

• التوفيق للتوبة والعمل الصالح من الله لا من العبد.
খ. তাওবা ও নেক আমলের তাওফীক কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে; বান্দার পক্ষ থেকে নয়।

• العفو والصفح عن المسيء سبب لغفران الذنوب.
গ. দোষীকে ক্ষমা ও মার্জনা করা গুনাহ মাফের কারণ।

• قذف العفائف من كبائر الذنوب.
ঘ. সতী-সাধ্বী নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কবীরা গুনাহ।

• مشروعية الاستئذان لحماية النظر، والحفاظ على حرمة البيوت.
ঙ. অনুমতি চাওয়ার বিধান মূলতঃ চক্ষুর হিফাযত এবং ঘরের সম্মান রক্ষার জন্য।

فَإِن لَّمۡ تَجِدُواْ فِيهَآ أَحَدٗا فَلَا تَدۡخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤۡذَنَ لَكُمۡۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ٱرۡجِعُواْ فَٱرۡجِعُواْۖ هُوَ أَزۡكَىٰ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ
২৮. তোমরা সেই ঘরগুলোতে কাউকে না পেলে -অনুমতি দেয়ার মালিকের পক্ষ থেকে ঢুকার অনুমতি ছাড়া- সেগুলোতে প্রবেশ করবে না। যদি সেগুলোর মালিকরা তোমাদেরকে বলে: ফিরে যাও তাহলে সেখানে না ঢুকে ফিরে যাবে। আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য এটিই পবিত্রতার ভ‚ষণ। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তোমাদের কোন কর্মই তাঁর নিকট গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ مَسۡكُونَةٖ فِيهَا مَتَٰعٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تُبۡدُونَ وَمَا تَكۡتُمُونَ
২৯. বিনা অনুমতিতে এমন সাধারণ ঘরগুলোতে প্রবেশ করায় তোমাদের কোন অসুবিধে নেই যেগুলো কারো ব্যক্তিগত নয়। যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ব্যাপক ফায়েদার জন্য। যেমন: লাইব্রেরী, বাজারের দোকান ইত্যাদি। আল্লাহ জানেন তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য আমল ও অবস্থাগুলো। এগুলোর কোনটিই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ
৩০. হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে বলে দিন যেন তারা অবৈধ কিছু তথা মহিলা ও গুপ্তস্থানসমূহ দেখা থেকে নিজেদের চোখগুলোকে বিরত রাখে। আর তারা যেন নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে হারাম কাজ থেকে এবং জনসম্মুখে খোলা রাখা থেকে হিফাযত করে। মূলতঃ আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেয়া থেকে বিরত থাকা তাদের জন্য আল্লাহর নিকট একটি পবিত্রতার ভ‚ষণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়। তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ
৩১. আপনি মু’মিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন গুপ্তস্থানের প্রতি অবৈধ দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজেদের চোখগুলোকে বিরত রাখে। আর যেন তারা পর্দা ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে হিফাযত করে। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্যকে বেগানা পুরুষের সামনে প্রকাশ না করে। তবে যা সাধারণভাবে প্রকাশ্যে থাকে এবং যা লুকানো সম্ভবপর নয় -যেমন: কাপড়- তাহলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। আর যেন তারা নিজেদের কাপড়ের উপরিভাগের খোলা জায়গাগুলো তথা তাদের চুল, চেহারা ও গাড়ের অংশটুকু পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য কেবল তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের জন্য নিরাপদ মহিলা, চাই তারা মুসলমান হোক অথবা কাফির, নিজেদের অধীন দাস-দাসী, যৌন কামনামুক্ত অধীনস্থ পুরুষ অথবা যে বাচ্চা ছোট হওয়ার দরুন নরীদের সতর সম্পর্কে অজ্ঞ তার জন্য প্রকাশ করে। আর যেন তারা নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য তথা পায়ের খাড়– এবং এর ন্যায় কোন অলঙ্কার সম্পর্কে অন্যকে জানান দেয়ার জন্য নিজেদের পাযুগল সজোরে ক্ষেপণ না করে। হে মু’মিনরা! তোমরা হারাম দৃষ্টি ইত্যাদির জন্য সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো। যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে এবং তোমরা আশঙ্কিত বস্তু থেকে নাজাত পেতে পারো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• جواز دخول المباني العامة دون استئذان.
ক. অনুমতি ছাড়া জনসাধারণের জন্য খোলা এমন স্থাপনায় প্রবেশ করা জায়িয।

• وجوب غض البصر على الرجال والنساء عما لا يحلّ لهم.
খ. বেগানা পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে চোখকে নি¤œগামী করা ওয়াজিব।

• وجوب الحجاب على المرأة.
গ. মহিলার উপর পর্দা করা ওয়াজিব।

• منع استخدام وسائل الإثارة.
ঘ. যৌন উত্তেজনার সকল উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা নিষেধ।

وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ
৩২. হে মু’মিনরা! তোমরা এমন পুরুষদের বিবাহের ব্যবস্থা করো যাদের স্ত্রী নেই এবং এমন স্বাধীন মেয়েদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো যাদের স্বামী নেই। উপরন্তু তোমাদের মধ্যকার মু’মিন গোলাম-বান্দীদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। তারা যদি গরিব হয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা নিজ বিস্তর অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী বানিয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রচুর রিযিকদাতা। তাঁর রিযিক কাউকে স্বচ্ছল না করে পারে না। তিনি তাঁর বান্দাদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱلَّذِينَ يَبۡتَغُونَ ٱلۡكِتَٰبَ مِمَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ فَكَاتِبُوهُمۡ إِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِيهِمۡ خَيۡرٗاۖ وَءَاتُوهُم مِّن مَّالِ ٱللَّهِ ٱلَّذِيٓ ءَاتَىٰكُمۡۚ وَلَا تُكۡرِهُواْ فَتَيَٰتِكُمۡ عَلَى ٱلۡبِغَآءِ إِنۡ أَرَدۡنَ تَحَصُّنٗا لِّتَبۡتَغُواْ عَرَضَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَمَن يُكۡرِههُّنَّ فَإِنَّ ٱللَّهَ مِنۢ بَعۡدِ إِكۡرَٰهِهِنَّ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৩৩. যারা দরিদ্রতার দরুন বিবাহ করতে অক্ষম তারা যেন ব্যভিচারের ক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করে যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ বিস্তর দয়ায় তাকে স্বচ্ছল করেন। আর যে গোলামরা তাদের মনিবদের সাথে স্বাধীনতার জন্য সম্পদ হস্তার্পণের লিখিত চুক্তির আবেদন করে তাদের মনিবদের উচিত তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করা। যদি তারা গোলামদের মাঝে সম্পদ আদায়ের সক্ষমতা এবং ধার্মিকতা দেখতে পায়। আর মনিবরা যেন তাদেরকে আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে দেয় তথা তাদের সাথে কৃত চুক্তির কিয়দংশ যেন তারা ছাড় দেয়। উপরন্তু তোমরা নিজেদের বান্দিদেরকে তাদের লজ্জাস্থানের মাধ্যমে সম্পদ কামানোর জন্য ব্যভিচারে বাধ্য করো না -যা আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার দু’ বান্দির সাথে করেছে- যখন তারা অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকতে ও সংযম অবলম্বনের আশা পোষণ করে। তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি তাদেরকে এ কাজে বাধ্য করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এ জবরদস্তির পর তাদের গুনাহগুলো ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি দয়ালু। কারণ, তারা ছিলো তখন বাধ্য। আর গুনাহ হবে তাদেরকে বাধ্যকারীর উপর।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَقَدۡ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ ءَايَٰتٖ مُّبَيِّنَٰتٖ وَمَثَلٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ خَلَوۡاْ مِن قَبۡلِكُمۡ وَمَوۡعِظَةٗ لِّلۡمُتَّقِينَ
৩৪. হে মানুষ! আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। তেমনিভাবে আমি তোমাদের প্রতি তোমাদের পূর্ববর্তী মু’মিন ও কাফিরদের দৃষ্টান্তও নাযিল করেছি। আরো নাযিল করেছি এমন উপদেশ যা দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করবে এমন লোকেরা যারা নিজেদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ ٱللَّهُ نُورُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ مَثَلُ نُورِهِۦ كَمِشۡكَوٰةٖ فِيهَا مِصۡبَاحٌۖ ٱلۡمِصۡبَاحُ فِي زُجَاجَةٍۖ ٱلزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوۡكَبٞ دُرِّيّٞ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٖ مُّبَٰرَكَةٖ زَيۡتُونَةٖ لَّا شَرۡقِيَّةٖ وَلَا غَرۡبِيَّةٖ يَكَادُ زَيۡتُهَا يُضِيٓءُ وَلَوۡ لَمۡ تَمۡسَسۡهُ نَارٞۚ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٖۚ يَهۡدِي ٱللَّهُ لِنُورِهِۦ مَن يَشَآءُۚ وَيَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡأَمۡثَٰلَ لِلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ
৩৫. আল্লাহ হচ্ছেন আকাশ ও জমিনের আলো এবং উভয়ের অধিবাসীদের জন্য পথপ্রদর্শক। একজন মু’মিনের অন্তরে তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হলো জানালাবিহীন দেয়ালের একটি তাক বা প্রদীপদানি। যার ভিতরে রয়েছে একটি প্রদীপ। আর প্রদীপটি হলো একটি চকচকে কাঁচের ভিতরে। কাঁচটি যেন মুক্তার ন্যায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যা প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে বরকতময় যাইতুন গাছের তেল দিয়ে। যে গাছকে সূর্য থেকে কোন কিছুই লুকিয়ে রাখেনি। না সকালে, না সন্ধ্যায়। যে গাছের তেল পরিচ্ছন্নতার দরুন যেন নিজেই জ্বলছে। যদিও আগুন এখনো তাকে স্পর্শ করেনি। আগুন স্পর্শ করলে তাহলে কেমন হতো?! কাঁচের আলোর উপর আবার প্রদীপের আলো। এভাবেই একজন মু’মিনের অন্তর যখন তাতে হিদায়েতের আলো জ্বলে উঠে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে চান তাকেই কুর‘আনের অনুসরণের তাওফীক দেন। আল্লাহ তা‘আলা বস্তুগুলোর সদৃশ তথা সেগুলোর দৃষ্টান্ত দিয়েই সেগুলোকে সুস্পষ্ট করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই জানেন। তাঁর নিকট কোন জিনিস গোপন নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ
৩৬. এ প্রদীপটি জ্বালানো হয় সেই মসজিদগুলোতে যেগুলোর নির্মাণ ও সম্মানকে সুউচ্চ করতে এবং সেখানে আযান, যিকির ও সালাতের মাধ্যমে তাঁর নামকে স্মরণ করতে তিনি আদেশ করেন। যেখানে দিনের শুরু ও শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• الله عز وجل ضيق أسباب الرق (بالحرب) ووسع أسباب العتق وحض عليه .
ক. আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের মাধ্যমে গোলামির উপকরণকে সীমিত পর্যায়ে রেখে স্বাধীনতার উপকরণগুলোকে বিস্তৃত ও তার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করেছেন।

• التخلص من الرِّق عن طريق المكاتبة وإعانة الرقيق بالمال ليعتق حتى لا يشكل الرقيق طبقة مُسْتَرْذَلة تمتهن الفاحشة.
খ. লিখিত চুক্তির মাধ্যমে গোলামি থেকে মুক্তি এবং গোলামকে স্বাধীন করার জন্য সম্পদের মাধ্যমে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে গোলামরা এমন একটি নিকৃষ্ট শ্রেণীতে রূপান্তরিত না হয় যারা অশ্লীলতার পেশাই চালিয়ে যাবে।

• قلب المؤمن نَيِّر بنور الفطرة، ونور الهداية الربانية.
গ. একজন মু’মিনের অন্তর ফিত্বরত তথা সহজাত আলো এবং প্রতিপালক প্রদত্ত হিদায়েতের আলোয় আলোকিত।

• المساجد بيوت الله في الأرض أنشأها ليعبد فيها، فيجب إبعادها عن الأقذار الحسية والمعنوية.
ঘ. মসজিদগুলো জমিনে আল্লাহর ঘর যেগুলোকে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই সেগুলোকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নাপাক থেকে দূরে রাখা বাধ্যতামূলক।

• من أسماء الله الحسنى (النور) وهو يتضمن صفة النور له سبحانه.
ঙ. আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর একটি হলো নূর। যা তাঁর আলোর গুণটিকেও শামিল করে।

رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ
৩৭. এমন ব্যক্তিরা তাতে সালাত আদায় করে যাদেরকে ব্যবসা তথা বেচা-কেনা আল্লাহর স্মরণ, পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় এবং খাত অনুসারে যাকাত আদায় থেকে গাফিল করতে পারে না। তারা কিয়ামতের দিনকে ভয় পায়। যেদিন অন্তরগুলো আযাব থেকে মুক্তির আশা ও নিরাশার মাঝে ছটফট করবে। উপরন্তু তাদের চোখগুলোও অস্থির হয়ে যাবে। সেদিন সেগুলো কোন্ দিকে দৃষ্টি দিবে তা বুঝতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا عَمِلُواْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ
৩৮. তারা আমল করেছে যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলগুলোর সুন্দর প্রতিদান এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে তার আমল অনুসারে বিনা হিসাবে রিযিক দিয়ে থাকেন। বরং তাদেরকে তাদের আমলের দ্বিগুণ দিয়ে থাকেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَعۡمَٰلُهُمۡ كَسَرَابِۭ بِقِيعَةٖ يَحۡسَبُهُ ٱلظَّمۡـَٔانُ مَآءً حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَهُۥ لَمۡ يَجِدۡهُ شَيۡـٔٗا وَوَجَدَ ٱللَّهَ عِندَهُۥ فَوَفَّىٰهُ حِسَابَهُۥۗ وَٱللَّهُ سَرِيعُ ٱلۡحِسَابِ
৩৯. আর যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে তাদের আমলগুলোর কোন সাওয়াব হবে না। বরং সেগুলো জমিনের নিচু জায়গার মরীচিকার মতো। যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে সেদিকে ছুটে যায়। যখন সে তার নিকট এসে দাঁড়ায় তখন আর পানি খুঁজে পায় না। তেমনিভাবে একজন কাফির মনে করে যে, তার আমলগুলো তার খুব ফায়েদায় আসবে। কিন্তু যখন সে মৃত্যু বরণ করবে এবং তাকে পুনরুত্থিত করা হবে তখন সে আর তার সাওয়াবটুকু দেখতে পাবে না। বরং সে তখন তার প্রতিপালককেই তার সামনে দেখতে পাবে। তিনি তখন তার আমলের পরিপূর্ণ হিসাব নিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা দ্রæত হিসাব গ্রহণকারী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَوۡ كَظُلُمَٰتٖ فِي بَحۡرٖ لُّجِّيّٖ يَغۡشَىٰهُ مَوۡجٞ مِّن فَوۡقِهِۦ مَوۡجٞ مِّن فَوۡقِهِۦ سَحَابٞۚ ظُلُمَٰتُۢ بَعۡضُهَا فَوۡقَ بَعۡضٍ إِذَآ أَخۡرَجَ يَدَهُۥ لَمۡ يَكَدۡ يَرَىٰهَاۗ وَمَن لَّمۡ يَجۡعَلِ ٱللَّهُ لَهُۥ نُورٗا فَمَا لَهُۥ مِن نُّورٍ
৪০. অথবা তাদের আমলগুলো গভীর সাগরের অন্ধকারের ন্যায় যার উপর ঢেউ রয়েছে। সেই ঢেউয়ের উপর আবার অন্য ঢেউ রয়েছে। তার উপর আবার মেঘ রয়েছে যা পথপ্রদর্শক নক্ষত্রগুলোকে ঢেকে রাখে। অন্ধকারগুলো একের উপর আরেকটি স্ত‚পীকৃত। এ অন্ধকারগুলোতে পতিত ব্যক্তি যখন নিজের হাতটা বের করে তখন সে কঠিন অন্ধকারের দরুন তাও দেখতে পায় না। তেমনিভাবে একজন কাফির ব্যক্তি। তার উপর স্ত‚পীকৃত হয়েছে অজ্ঞতা, সন্দেহ, অস্থিরতা ও অন্তরের মোহরের অন্ধকারগুলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভ্রষ্টতা থেকে উদ্ধারের জন্য হিদায়েতের তাওফীক এবং তাঁর কিতাবের জ্ঞান দিবেন না তখন তার জন্য কোন হিদায়েতই থাকবে না যা দ্বারা সে সঠিক পথের দিশা পাবে। না তার জন্য কোন কিতাব থাকবে যা দ্বারা সে আলোকিত হতে পারবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱلطَّيۡرُ صَٰٓفَّٰتٖۖ كُلّٞ قَدۡ عَلِمَ صَلَاتَهُۥ وَتَسۡبِيحَهُۥۗ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِمَا يَفۡعَلُونَ
৪১. হে রাসূল! আপনি কি জানেন না যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার জন্য আকাশ ও জমিনের সকল সৃষ্টি পবিত্রতা বর্ণনা করে। তেমনিভাবে পাখিরাও তাদের ডানাগুলো বাতাসে বিছিয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে। এ সকল সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা জানেন তাদের মধ্যকার কে মানুষের ন্যায় সালাত আদায় করে। আর পাখির মতো কে তাসবীহ পাঠ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِيرُ
৪২. একমাত্র আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের মালিকানা। তাই একমাত্র তাঁর দিকেই কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য ফিরে যেতে হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُزۡجِي سَحَابٗا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيۡنَهُۥ ثُمَّ يَجۡعَلُهُۥ رُكَامٗا فَتَرَى ٱلۡوَدۡقَ يَخۡرُجُ مِنۡ خِلَٰلِهِۦ وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن جِبَالٖ فِيهَا مِنۢ بَرَدٖ فَيُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ وَيَصۡرِفُهُۥ عَن مَّن يَشَآءُۖ يَكَادُ سَنَا بَرۡقِهِۦ يَذۡهَبُ بِٱلۡأَبۡصَٰرِ
৪৩. হে রাসূল! আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহ তা‘আলা মেঘমালাকে চলমান করে তার একটি অংশকে অন্যটির সাথে মিলিয়ে একটার উপর আরেকটাকে স্ত‚পীকৃত করেন। অতঃপর আপনি মেঘমালার ভেতর থেকে বৃষ্টি হতে দেখেন। আরো নাযিল হয় আকাশের দিককার বিশাল পাহাড়ের ন্যায় ঘন মেঘমালা থেকে কুচি পাথরের ন্যায় পানির জমাটবাঁধা টুকরো। এ শিলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে চান তার নিকট পৌঁছান আর যার থেকে চান তার থেকে দূরে সরিয়ে দেন। অত্যধিক চমকের দরুন মেঘমালার বিদ্যুতের আলো চোখগুলোকে নষ্ট করে দিতে চায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• موازنة المؤمن بين المشاغل الدنيوية والأعمال الأخروية أمر لازم.
ক. দুনিয়ার ব্যস্ততা ও আখিরাতের আমলের মাঝে একজন মু’মিনের ভারসাম্য থাকা বাধ্যতামূলক।

• بطلان عمل الكافر لفقد شرط الإيمان.
খ. ঈমানের শর্ত না থাকার দরুন কাফিরের আমল সম্পূর্ণরূপে বাতিল।

• أن الكافر نشاز من مخلوقات الله المسبِّحة المطيعة.
গ. একজন কাফির আল্লাহর অনুগত ও পবিত্রতা বর্ণনাকারী সৃষ্টিগুলোর মধ্যকার এক অবাধ্য সৃষ্টি।

• جميع مراحل المطر من خلق الله وتقديره.
ঘ. বৃষ্টির সকল পর্যায় আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর পরিমাপ অনুযায়ী।

يُقَلِّبُ ٱللَّهُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبۡرَةٗ لِّأُوْلِي ٱلۡأَبۡصَٰرِ
৪৪. আল্লাহ তা‘আলা দীর্ঘ ও খাটো এবং আসা ও যাওয়ার মাধ্যমে দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান। এ সকল নিদর্শনাবলী তথা প্রভুত্বের দলীলাদির মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও এককত্বের ব্যাপারে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٖ مِّن مَّآءٖۖ فَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ بَطۡنِهِۦ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰ رِجۡلَيۡنِ وَمِنۡهُم مَّن يَمۡشِي عَلَىٰٓ أَرۡبَعٖۚ يَخۡلُقُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ
৪৫. আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর বিচরণকারী সকল প্রাণীকে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোর কিছু তো পেটের উপর ভর দিয়ে চলে যেমন: সাপ। আর কিছু আছে দু’পায়ে চলে যেমন: মানুষ ও পাখি। আর কিছু আছে চারপায়ে চলে যেমন: চতুষ্পদ পশু। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত ও অনুল্লিখিত যাই চান তা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু করতে সক্ষম। কোন কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّقَدۡ أَنزَلۡنَآ ءَايَٰتٖ مُّبَيِّنَٰتٖۚ وَٱللَّهُ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ
৪৬. নিশ্চয়ই আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি যাতে কোন সন্দেহ নেই। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে এমন সরল পথের তাওফীক দেন যাতে কোন ধরনের বক্রতা নেই। যে পথ তাকে জান্নাতের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ
৪৭. মুনাফিকরা বলে: আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করেছি। অতঃপর তাদের একটি দল তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা আল্লাহর পথে জিহাদ ও অন্যান্য আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে না। অথচ তারাই ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান ও তাঁদের আনুগত্যের দাবি করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে ফিরে যাওয়া লোকরা মু’মিন নয়। যদিও তারা নিজেদেরকে মু’মিন বলে দাবি করে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ
৪৮. যখন এ মুনাফিকদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় যাতে রাসূল তাদের ঝগড়াপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করতে পারেন তখন তারা মুনাফিকীর দরুন তাঁর ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِن يَكُن لَّهُمُ ٱلۡحَقُّ يَأۡتُوٓاْ إِلَيۡهِ مُذۡعِنِينَ
৪৯. আর যদি তারা জানে, সত্য তথা প্রাপ্যটুকু তাদেরই জন্য এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অচিরেই তাদের পক্ষেই ফায়সালা করবেন তখন তারা ন¤্র ও বিনীত হয়ে তাঁর নিকটই উপস্থিত হয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَفِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَمِ ٱرۡتَابُوٓاْ أَمۡ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ وَرَسُولُهُۥۚ بَلۡ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
৫০. এদের অন্তরে কি অবধারিত রোগ রয়েছে, নাকি তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রিসালাতের ব্যাপারে সন্দেহ করছে, নাকি তারা এ আশঙ্কা করছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের উপর যুলুম করবেন? না ব্যাপারটি উক্ত কোন কারণেই নয়। বরং তা কিন্তু তাঁর ফায়সালা থেকে তাদের মুখ ফেরানো এবং তাদের হঠকারিতার দরুন তাদের মনের ভেতরকার কোন একটি কারণেই।
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ
৫১. তবে যখন মু’মিনদেরকে তাদের মাঝে ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় তখন তাদের কথা এমন হয় যে, তারা বলে: আমরা আপনার কথা শুনেছি ও আপনার আদেশের আনুগত্য করেছি। বস্তুতঃ এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ
৫২. মূলতঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তাঁদের ফায়সালাকে মাথা পেতে গ্রহণ করে উপরন্তু পাপরাশির পরিণতিকে তারা ভয় পায় এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে কেবল তাঁর আযাবের ভয়েই তারা আতঙ্কিত থাকে একমাত্র তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ পেয়ে পুরস্কৃত হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
۞ وَأَقۡسَمُواْ بِٱللَّهِ جَهۡدَ أَيۡمَٰنِهِمۡ لَئِنۡ أَمَرۡتَهُمۡ لَيَخۡرُجُنَّۖ قُل لَّا تُقۡسِمُواْۖ طَاعَةٞ مَّعۡرُوفَةٌۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ
৫৩. মুনাফিকরা যথাসম্ভব আল্লাহর উপর তাদের চ‚ড়ান্ত কঠিন কসম খেয়ে বলে: আপনি যদি নিশ্চয়ই তাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার আদেশ করেন তাহলে তারা অবশ্যই বের হবে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলুন: তোমরা কসম খেয়ো না। তোমাদের মিথ্যা এবং তোমাদের তথাকথিত আনুগত্য সত্যিই সুপ্রসিদ্ধ। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট তোমাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই গোপন নয় যতোই তোমরা সেগুলোকে লুকিয়ে রাখো না কেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• تنوّع المخلوقات دليل على قدرة الله.
ক. বস্তুতঃ হরেক রকমের সৃষ্টি আল্লাহর অসীম ক্ষমতারই প্রমাণ।

• من صفات المنافقين الإعراض عن حكم الله إلا إن كان الحكم في صالحهم، ومن صفاتهم مرض القلب والشك، وسوء الظن بالله.
খ. মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। তবে ফায়সালাটি যদি তাদের পক্ষে হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তাদের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো অন্তরের ব্যাধি ও সন্দেহ এবং আল্লাহর প্রতি তাদের কুধারণা।

• طاعة الله ورسوله والخوف من الله من أسباب الفوز في الدارين.
গ. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং আল্লাহর ভয় উভয় জাহানের সফলতার মাধ্যম।

• الحلف على الكذب سلوك معروف عند المنافقين.
ঘ. মিথ্যার উপর কসম খাওয়া মুনাফিকদের একটি সুপরিচিত চরিত্র।

قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ
৫৪. হে রাসূল! আপনি এ মুনাফিকদেরকে বলুন: তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। তোমরা যদি তাঁদের আদেশকৃত আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো, তাঁর দায়িত্ব হলো পৌঁছানো আর তোমাদের দায়িত্ব হলো আনুগ্য করা ও তাঁর আনীত বিধান মেনে চলা। যদি তোমরা তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করো তাহলে তোমরা অবশ্যই সত্য পথের দিশা পাবে। বস্তুতঃ রাসূলের দায়িত্ব হলো সুস্পভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া। তাঁর দায়িত্ব নয় তোমাদেরকে হিদায়েতের উপর উঠানো এবং তাতে তোমাদেরকে বাধ্য করা।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَيَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ كَمَا ٱسۡتَخۡلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمۡ دِينَهُمُ ٱلَّذِي ٱرۡتَضَىٰ لَهُمۡ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ أَمۡنٗاۚ يَعۡبُدُونَنِي لَا يُشۡرِكُونَ بِي شَيۡـٔٗاۚ وَمَن كَفَرَ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ
৫৫. আল্লাহতে বিশ্বাসী ও নেক আমলকারী মু’মিনদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা এ ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদেরকে তাদের শত্রæদের উপর বিজয়ী করবেন এবং তিনি তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানাবেন যেমনিভাবে তিনি পূর্বেকার মু’মিনদেরকে সেখানকার প্রতিনিধি বানিয়েছেন। উপরন্তু তিনি তাদের ধর্ম তথা আল্লাহর পছন্দনীয় ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত ও পরাক্রমশালী করবেন। তিনি আরো ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদের ভীতিকর অবস্থাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করবেন। এর বিনিময়ে যে, তারা আমার একক ইবাদাত করবে। আমার সাথে কোন বস্তুকে শরীক করবে না। আর যারা এ নিয়মতগুলো পাওয়ার পরও কুফরি করবে তারা মূলতঃ আল্লাহর আনুগত্যের বাইরেই অবস্থানকারী তথা বিদ্রোহী।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ
৫৬. তোমরা পরিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করো, নিজেদের সম্পদগুলোর যাকাত দাও এবং রাসূলের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁর আনুগত্য করো তাহলে তোমরা আল্লাহর রহমত পেয়ে ধন্য হবে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مُعۡجِزِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ وَلَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ
৫৭. হে রাসূল! আপনি মনে করবেন না যে, যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে তাদের উপর যখন আমি আযাব নাযিল করতে চাইবো তখন তারা আমার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারবে। বরং কিয়ামতের দিন তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাদের কতোই না নিকৃষ্ট পরিণাম যাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম।
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِيَسۡتَـٔۡذِنكُمُ ٱلَّذِينَ مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ وَٱلَّذِينَ لَمۡ يَبۡلُغُواْ ٱلۡحُلُمَ مِنكُمۡ ثَلَٰثَ مَرَّٰتٖۚ مِّن قَبۡلِ صَلَوٰةِ ٱلۡفَجۡرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ ٱلظَّهِيرَةِ وَمِنۢ بَعۡدِ صَلَوٰةِ ٱلۡعِشَآءِۚ ثَلَٰثُ عَوۡرَٰتٖ لَّكُمۡۚ لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ وَلَا عَلَيۡهِمۡ جُنَاحُۢ بَعۡدَهُنَّۚ طَوَّٰفُونَ عَلَيۡكُم بَعۡضُكُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأٓيَٰتِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
৫৮. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমাদের গোলাম ও বান্দীরা এবং যে স্বাধীন বাচ্চারা এখনো সাবলক বয়সে পৌঁছায়নি তারা যেন তিনটি সময়ে তোমাদের কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি চায়: ফজরের সালাতের আগে তথা ঘুমের পোশাক ছেড়ে জেগে থাকার পোশাক পরিবর্তনের সময়, দুপুরের সময় যখন তোমরা সামান্য ঘুমের জন্য নিজেদের কাপড়গুলো খুলে ফেলো এবং ইশার সালাতের পর। কারণ, তা হলো তোমাদের ঘুম এবং জেগে থাকার পোশাক খুলে ঘুমের পোশাক পরিধানের সময়। এ তিনটি মূলতঃ তোমাদের জন্য গোপনীয়তার সময়। সেগুলোতে তারা অনুমতি ছাড়া তোমাদের নিকট প্রবেশ করবে না। এ তিনটি সময় ছাড়া অন্য যে কোন সময়ে তারা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে না তোমাদের কোন অসুবিধে রয়েছে, না তাদের। বস্তুতঃ তারা বেশি ঘুরাফেরা করা লোক। এ সময়গুলোতে তোমাদের একজন অন্যের নিকট ঘুরতে যায়। তাই অনুমতি সাপেক্ষে সবসময় তাদেরকে ঢুকতে দেয়া সত্যিই কষ্টকর। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য অনুমতির বিধানসমূহ বর্ণনা করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য এমন আয়াতগুলো বর্ণনা করেন যেগুলো তাঁর দেয়া শরীয়তের বিধানাবলী বুঝায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সুবিধাদি জানেন। তিনি তাদের জন্য বিধান রচনায় অতি প্রাজ্ঞ।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• اتباع الرسول صلى الله عليه وسلم علامة الاهتداء.
ক. রাসূলের অনুসরণ বস্তুতঃ হিদায়েতের আলামত।

• على الداعية بذل الجهد في الدعوة، والنتائج بيد الله.
খ. একজন দা‘য়ীর উচিত দা’ওয়াতী কাজে প্রচেষ্টা চালানো; ফলাফল তো কেবল আল্লাহরই হাতে।

• الإيمان والعمل الصالح سبب التمكين في الأرض والأمن.
গ. ঈমান ও নেক আমল জমিনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও নিরাপত্তা লাভের মাধ্যম।

• تأديب العبيد والأطفال على الاستئذان في أوقات ظهور عورات الناس.
ঘ. মানুষের গোপনাঙ্গ খোলার সময়গুলোতে গোলাম ও বাচ্চাদেরকে অনুমতি চাওয়ার আদব শিক্ষা দিতে হবে।

وَإِذَا بَلَغَ ٱلۡأَطۡفَٰلُ مِنكُمُ ٱلۡحُلُمَ فَلۡيَسۡتَـٔۡذِنُواْ كَمَا ٱسۡتَـٔۡذَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ
৫৯. যখন তোমাদের বাচ্চারা সাবালক বয়সে পৌঁছাবে তখন তারা যেন সর্বদা ঘরে ঢুকার সময় অনুমতি প্রার্থনা করে। যেমন ইতিপূর্বে বড়দের সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য অনুমতি চাওয়ার বিধান বর্ণনা করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সকল সুবিধা সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি তাদের শরীয়ত রচনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۭ بِزِينَةٖۖ وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ
৬০. আর বয়স্কা নারীরা যাদের বয়স বেশি হওয়ার দরুন তারা ঋতু¯্রাবী ও গর্ভবতী হয় না এবং বিবাহের প্রতিও তাদের কোন আগ্রহ নেই তাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তারা নিজেদের কিছু কাপড় খুলে রাখে যেমন: নিকাব ও গায়ের চাদর। তবে তারা যেন ভেতরের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে যা ঢেকে রাখার জন্য তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে। তারপরও তারা যদি এ কাপড়গুলো খোলে না রাখে তাহলে তা তাদের জন্য খোলে রাখার চেয়ে অনেক উত্তম হবে। যাতে পুরোপুরিভাবে তাদের গোপনীয়তা ও সাধুতা রক্ষা পায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সব কথা শুনেন এবং তাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّيۡسَ عَلَى ٱلۡأَعۡمَىٰ حَرَجٞ وَلَا عَلَى ٱلۡأَعۡرَجِ حَرَجٞ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرِيضِ حَرَجٞ وَلَا عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ أَن تَأۡكُلُواْ مِنۢ بُيُوتِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ ءَابَآئِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ أُمَّهَٰتِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ إِخۡوَٰنِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ أَخَوَٰتِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ أَعۡمَٰمِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ عَمَّٰتِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ أَخۡوَٰلِكُمۡ أَوۡ بُيُوتِ خَٰلَٰتِكُمۡ أَوۡ مَا مَلَكۡتُم مَّفَاتِحَهُۥٓ أَوۡ صَدِيقِكُمۡۚ لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَأۡكُلُواْ جَمِيعًا أَوۡ أَشۡتَاتٗاۚ فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأٓيَٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ
৬১. যে অন্ধ তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে তার কোন গুনাহ নেই। তেমনিভাবে খোঁড়ারও কোন গুনাহ নেই। উপরন্তু অসুস্থেরও কোন গুনাহ নেই যদি তারা নিজেদের সাধ্যের বাইরের শরয়ী দায়িত্বগুলো পরিত্যাগ করে। যেমন: আল্লাহর পথে জিহাদ। আর হে মু’মিনরা! তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি নেই নিজেদের ঘর থেকে খেলে, না তোমাদের ছেলেদের ঘর থেকে, না তোমাদের বাপ-দাদা, মা-নানী, ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, মামা কিংবা খালাদের ঘর থেকে অথবা ওই সকল ঘর থেকে যেগুলোর হিফাযতের দায়িত্ব তোমাদের হাতে ন্যস্ত যেমন: বাগানের পাহারাদার। না তোমাদের কোন অসুবিধে রয়েছে নিজেদের বন্ধুর ঘর থেকে খাওয়ায়। কারণ, স্বভাবতঃ তার মন এতে খুশি। না তোমাদের কোন গুনাহ রয়েছে সম্মিলিত কিংবা একা খাওয়ায়। আর যদি তোমরা উল্লিখিত ঘর কিংবা অন্যান্য ঘরসমূহে প্রবেশ করো তাহলে সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইকুম। তবে সেগুলোতে কেউ না থাকলে তোমরা নিজেদের উপর এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইনা ওয়া‘আলা ইবাদিল্লাহিস-সালিহীন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ বরকতময় সম্ভাষণ। যা তোমাদের মাঝে মায়া ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিবে। যা পবিত্রও বটে যা শুনলে শ্রোতার মন আনন্দে ভরে যায়। এ সূরার পূর্বের বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝে সেগুলোর উপর আমল করতে পারো।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• جواز وضع العجائز بعض ثيابهنّ لانتفاء الريبة من ذلك.
ক. বয়স্কা নারীদের জন্য তাদের কিছু কাপড় খোলা জায়িয। কারণ, তাতে তাদেরকে কোন ধরনের সন্দেহ করা হবে না।

• الاحتياط في الدين شأن المتقين.
খ. ধর্মের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা মুত্তাকীদেরই বৈশিষ্ট্য।

• الأعذار سبب في تخفيف التكليف.
গ. ওজরসমূহ দায়িত্ব হালকা করার বিশেষ কারণ।

• المجتمع المسلم مجتمع التكافل والتآزر والتآخي.
ঘ. মুসলিম সমাজ মূলতঃ পরস্পর সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ব ও অন্যের দায়িত্ব বহনের সমাজ।

إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَإِذَا كَانُواْ مَعَهُۥ عَلَىٰٓ أَمۡرٖ جَامِعٖ لَّمۡ يَذۡهَبُواْ حَتَّىٰ يَسۡتَـٔۡذِنُوهُۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَـٔۡذِنُونَكَ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ فَإِذَا ٱسۡتَـٔۡذَنُوكَ لِبَعۡضِ شَأۡنِهِمۡ فَأۡذَن لِّمَن شِئۡتَ مِنۡهُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمُ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
৬২. নিশ্চয়ই সত্যবাদী ঈমানদার মু’মিন হলো ওরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে। যখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে মুসলমানদের সুবিধার জন্য কোন কাজে একত্রিত হয় তখন তারা তাঁর নিকট থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি না চেয়ে সেখান থেকে চলে যায় না। হে রাসূল! যারা আপনার কাছ থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর সত্যিকারের ঈমান রাখে। তাই তারা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার অনুমতি চাইলে আপনি তাদের যাকে চান অনুমতি দিন। আর তাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের গুনাহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অতি দয়ালু।
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ
৬৩. হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর রাসূলকে সম্মান করো। তোমরা তাঁকে ডাকলে তাঁর নামে ডাকবে না। যেমন: হে মুহাম্মাদ! অথবা তাঁর বাপের নামে যেমন: হে আব্দুল্লাহর ছেলে! যেমনিভাবে তোমাদের কেউ কেউ অন্যের সাথে করে থাকে। বরং তোমরা বলবে: হে আল্লাহর রাসূল! হে আল্লাহর নবী! আর যদি তিনি তোমাদেরকে সমষ্টিগত কোন কাজে ডাকেন তখন তোমরা তাঁর ডাকাকে তোমাদের মধ্যকার স্বভাবতঃ সাধরণ কোন বিষয়ে কারো ডাকের মতো মনে করবে না। বরং তোমরা সে ডাকে দ্রæত সাড়া দিবে। আল্লাহ তা‘আলা জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বিনা অনুমতিতে গোপনভাবে চলে যায়। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাসূলের আদেশের বিরোধিতা করে তারা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বালা-মুসীবত ও পরীক্ষা অথবা এমন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার ভয় পায় যার উপর তারা কখনোই ধৈর্য ধরতে পারবে না।
আরবি তাফসীরসমূহ:
أَلَآ إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ قَدۡ يَعۡلَمُ مَآ أَنتُمۡ عَلَيۡهِ وَيَوۡمَ يُرۡجَعُونَ إِلَيۡهِ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُواْۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمُۢ
৬৪. কেবল আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি, মালিকানা ও পরিচালনা। হে মানুষ! তিনি জানেন তোমরা কোন্ অবস্থায় আছো। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়। যখন তারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থান তথা কিয়ামতের দিন তাঁর নিকট ফিরে আসবে তখন তিনি তাদেরকে তাদের দুনিয়ার আমলসমূহের সংবাদ দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুই জানেন। তাঁর নিকট আকাশ ও জমিনের কোন কিছুই গোপন নয়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:
• دين الإسلام دين النظام والآداب، وفي الالتزام بالآداب بركة وخير.
ক. ইসলাম ধর্ম হলো শিষ্টাচার ও নিয়মানুবর্তিতার ধর্ম। মূলতঃ আদব মেনে চলার মাঝেই রয়েছে বরকত ও কল্যাণ।

• منزلة رسول الله صلى الله عليه وسلم تقتضي توقيره واحترامه أكثر من غيره.
খ. আল্লাহর রাসূলের অবস্থান অন্যের চেয়ে তাঁকে বেশি সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার দাবি রাখে।

• شؤم مخالفة سُنَّة النبي صلى الله عليه وسلم.
গ. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাতের বিরোধিতা মূলতঃ কুলক্ষণই বটে।

• إحاطة ملك الله وعلمه بكل شيء.
ঘ. আল্লাহর জ্ঞান ও মালিকানা সবকিছুকেই বেষ্টন করে আছে।

 
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আন-নূর
সূরাসমূহের সূচী পৃষ্ঠার নাম্বার
 
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - অনুবাদসমূহের সূচী

বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। মারকাযু তাফসীর লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত।

বন্ধ