কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া * - অনুবাদসমূহের সূচী
সূরা আল-হাক্কাহ
ٱلۡحَآقَّةُ
সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:
[১] الحاقة শব্দ দ্বারা কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, বাগভী]
আয়াত সংখ্যা: ৫২ আয়াত।
নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।
রহমান, রহীম আল্লাহ্র নামে
[১] الحاقة শব্দ দ্বারা কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, বাগভী]
আয়াত সংখ্যা: ৫২ আয়াত।
নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।
রহমান, রহীম আল্লাহ্র নামে
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡحَآقَّةُ
আরবি তাফসীরসমূহ:
كَذَّبَتۡ ثَمُودُ وَعَادُۢ بِٱلۡقَارِعَةِ
[১] القارعة শব্দটি قرع শব্দ থেকে উৎপন্ন। قرع শব্দের অর্থ আরবী ভাষায় খট্খট শব্দ করা, হাতুড়ি পিটিয়ে শব্দ করা, কড়া নেড়ে শব্দ করা এবং একটি জিনিসকে আরেকটি জিনিস দিয়ে আঘাত করা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কেয়ামত যেহেতু সব মানুষকে অস্থির ও ব্যাকুল করে দেবে এবং সমগ্র আকাশ ও পৃথিবীকে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দেবে, তাই একে قارعة বলা হয়েছে। তাছাড়া কিয়ামতের পূর্বাহ্নে যে মহাশব্দের মধ্যে তার সুত্রপাত হবে এখানে সেদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে। [দেখুন-কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَمَّا ثَمُودُ فَأُهۡلِكُواْ بِٱلطَّاغِيَةِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَمَّا عَادٞ فَأُهۡلِكُواْ بِرِيحٖ صَرۡصَرٍ عَاتِيَةٖ
[১] ريح صرصر এর অর্থ অত্যধিক শৈত্যসম্পন্ন প্রচন্ড বাতাস। [মুয়াসাসার]
আরবি তাফসীরসমূহ:
سَخَّرَهَا عَلَيۡهِمۡ سَبۡعَ لَيَالٖ وَثَمَٰنِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومٗاۖ فَتَرَى ٱلۡقَوۡمَ فِيهَا صَرۡعَىٰ كَأَنَّهُمۡ أَعۡجَازُ نَخۡلٍ خَاوِيَةٖ
যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন সাতরাত ও আটদিন বিরামহীনভাবে; তখন আপনি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখতেন--- তারা সেখানে লুটিয়ে পরে আছে সারশূন্য খেজুর কাণ্ডের ন্যায়।
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَهَلۡ تَرَىٰ لَهُم مِّنۢ بَاقِيَةٖ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَجَآءَ فِرۡعَوۡنُ وَمَن قَبۡلَهُۥ وَٱلۡمُؤۡتَفِكَٰتُ بِٱلۡخَاطِئَةِ
[১] مؤتفكات এর এক অর্থ উল্টে দেয়া, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। অন্য অর্থ পরস্পরের মিশ্রিত ও মিলিত। লুত আলাইহিস্ সালামের সম্প্রদায়ের বস্তি সমূহকে مؤتفكات বলা হয়েছে। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَعَصَوۡاْ رَسُولَ رَبِّهِمۡ فَأَخَذَهُمۡ أَخۡذَةٗ رَّابِيَةً
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّا لَمَّا طَغَا ٱلۡمَآءُ حَمَلۡنَٰكُمۡ فِي ٱلۡجَارِيَةِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
لِنَجۡعَلَهَا لَكُمۡ تَذۡكِرَةٗ وَتَعِيَهَآ أُذُنٞ وَٰعِيَةٞ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ نَفۡخَةٞ وَٰحِدَةٞ
[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, صور কী? জবাবে তিনি বললেন, “শিং এর আকারে কোনো বস্তুকে বলা হয় যাতে ফুঁক দেয়া হবে।” [তিরমিয়ী ২৪৩০, আবু দাউদ ৪৭৪২]
[২] পবিত্ৰ কুরআনের কোথাও কোথাও এ দুই শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার কথা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ফুৎকারের সময় গোটা বিশ্ব-জাহানের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার যে অবস্থা সূরা আল-হাজ্জের ১ ও ২ আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪৯ ও ৫০ আয়াতে এবং সূরা আত-তাকভীরের ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকবে। পক্ষান্তরে সূরা ত্বা-হার ১০২ থেকে ১১২ আয়াত, সূরা আল-আম্বিয়ার ১০১ থেকে ১০৩ আয়াত, সূরা ইয়াসীনের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াত এবং সূরা ক্বাফ এর ২০ থেকে ২২ আয়াতে শুধু শিংগায় দ্বিতীয়বার ফুৎকারের কথা উল্লেখ হয়েছে।
[২] পবিত্ৰ কুরআনের কোথাও কোথাও এ দুই শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার কথা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ফুৎকারের সময় গোটা বিশ্ব-জাহানের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার যে অবস্থা সূরা আল-হাজ্জের ১ ও ২ আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪৯ ও ৫০ আয়াতে এবং সূরা আত-তাকভীরের ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকবে। পক্ষান্তরে সূরা ত্বা-হার ১০২ থেকে ১১২ আয়াত, সূরা আল-আম্বিয়ার ১০১ থেকে ১০৩ আয়াত, সূরা ইয়াসীনের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াত এবং সূরা ক্বাফ এর ২০ থেকে ২২ আয়াতে শুধু শিংগায় দ্বিতীয়বার ফুৎকারের কথা উল্লেখ হয়েছে।
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَحُمِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةٗ وَٰحِدَةٗ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَيَوۡمَئِذٖ وَقَعَتِ ٱلۡوَاقِعَةُ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَٱنشَقَّتِ ٱلسَّمَآءُ فَهِيَ يَوۡمَئِذٖ وَاهِيَةٞ
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَوۡمَئِذٖ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٞ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقۡرَءُواْ كِتَٰبِيَهۡ
[১] هاؤم শব্দের এক অর্থ, আস। অন্য অর্থ, লও। উদ্দেশ্য এই যে, আমলনামা ডানহাতে পাওয়ার সাথে সাথেই তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে এবং নিজের বন্ধু-বান্ধবদের তা দেখাবে। সে আহলাদে আটখানা হয়ে আশেপাশের লোকজনকে বলবে, লও আমার আমলনামা পাঠ করে দেখ। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে যে, “সে আনন্দচিত্তে আপনজনদের কাছে ফিরে যাবে।” [সূরা আল-ইনশিকাক ৯]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلَٰقٍ حِسَابِيَهۡ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ
আরবি তাফসীরসমূহ:
قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ
আরবি তাফসীরসমূহ:
كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓـَٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِشِمَالِهِۦ فَيَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي لَمۡ أُوتَ كِتَٰبِيَهۡ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَمۡ أَدۡرِ مَا حِسَابِيَهۡ
আরবি তাফসীরসমূহ:
يَٰلَيۡتَهَا كَانَتِ ٱلۡقَاضِيَةَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
مَآ أَغۡنَىٰ عَنِّي مَالِيَهۡۜ
আরবি তাফসীরসমূহ:
خُذُوهُ فَغُلُّوهُ
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ ٱلۡجَحِيمَ صَلُّوهُ
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ فِي سِلۡسِلَةٖ ذَرۡعُهَا سَبۡعُونَ ذِرَاعٗا فَٱسۡلُكُوهُ
[১] অর্থাৎ ফেরেশতাদেরকে আদেশ করা হবে, এই অপরাধীকে ধর এবং তার গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর তাকে সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে গ্রথিত করে দাও। এ শিকল সংক্রান্ত এক বর্ণনা হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি এ শিকলের একটি গ্রন্থি আসমান থেকে দুনিয়াতে পাঠানো হয় তবে (অতি ভারী হওয়ার কারণে) রাতের আগেই যমীনে এসে পড়বে। যদিও আসমান ও যমীনের মাঝের দূরত্ব পাঁচশত বছরের পথ। আর সেটা যদি শিকলের মাথার অংশ হয় (অর্থাৎ আরো বড় ও ভারী হয়) তারপর যদি তা জাহান্নামে ফেলা হয় তবে সেটা তার নিম্নভাগে পৌঁছতে চল্লিশ বছর লাগবে।” [তিরমিয়ী ২৫৮৮, মুসনাদে আহমাদ ২/১৯৭]
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّهُۥ كَانَ لَا يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ ٱلۡعَظِيمِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَيۡسَ لَهُ ٱلۡيَوۡمَ هَٰهُنَا حَمِيمٞ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنۡ غِسۡلِينٖ
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَّا يَأۡكُلُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡخَٰطِـُٔونَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَلَآ أُقۡسِمُ بِمَا تُبۡصِرُونَ
‘দ্বিতীয় রুকূ’
আরবি তাফসীরসমূহ:
إِنَّهُۥ لَقَوۡلُ رَسُولٖ كَرِيمٖ
[১] এখানে সম্মানিত রাসূল বলতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। [কুরতুবী]
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَمَا هُوَ بِقَوۡلِ شَاعِرٖۚ قَلِيلٗا مَّا تُؤۡمِنُونَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَا بِقَوۡلِ كَاهِنٖۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
تَنزِيلٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ
[১] উপরোক্ত অর্থ অনুসারে এটি সিফাতের আয়াত। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আল্লাহর ডান হাত সাব্যস্ত হচ্ছে। [ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসুল জাহমিয়্যাহ ৩/৩৩৮] আয়াতের অন্য অর্থ হচ্ছে, আমরা তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। উভয় অর্থই ইবন কাসীর উল্লেখ করেছেন। এ অর্থটি এদিক দিয়ে শুদ্ধ যে, সাধারণত কাউকে অপমান করতে হলে তার ডান হাত ধরে তার উপর আক্রমণ করা হয়। [ইবন তাইমিয়্যাহ, আন-নুবুওয়াত ২/৮৯৮] অপর অর্থ হচ্ছে, তাকে আমরা আমাদের ক্ষমতা দ্বারা পাকড়াও করতাম। [সা'দী; জালালাইন; আর দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, আস-সারেমুল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল ১৭] এটি শুদ্ধ হলেও আল্লাহর হাত অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যা অন্যান্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
আরবি তাফসীরসমূহ:
ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَمَا مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ عَنۡهُ حَٰجِزِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّهُۥ لَتَذۡكِرَةٞ لِّلۡمُتَّقِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّا لَنَعۡلَمُ أَنَّ مِنكُم مُّكَذِّبِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّهُۥ لَحَسۡرَةٌ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ
আরবি তাফসীরসমূহ:
وَإِنَّهُۥ لَحَقُّ ٱلۡيَقِينِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
فَسَبِّحۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلۡعَظِيمِ
আরবি তাফসীরসমূহ:
অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা: সূরা আল-হাক্কাহ
কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ - বাংলা ভাষায় অনুবাদ- ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - অনুবাদসমূহের সূচী
বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহের অনুবাদ। ড. আবূ বকর যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত।