হে ইয়াহইয়া![১] আপনি কিতাবটিকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করুন। আর আমরা তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম প্রজ্ঞা [২]।
[১] মাঝখানে এই বিস্তারিত তথ্য পরিবেশিত হয়নি যে, আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী ইয়াহইয়ার জন্ম হয় এবং শৈশব থেকে তিনি যৌবনে পদার্পণ করেন। এখন বলা হচ্ছে, যখন তিনি জ্ঞানলাভের নির্দিষ্ট বয়ঃসীমায় পৌঁছেন তখন তাঁর উপর কী দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এখানে মাত্র একটি বাক্যে নবুওয়াতের মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করার সময় তার উপর যে দায়িত্ব অৰ্পিত হয় তার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি তাওরাতকে সুদৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবেন এবং বনী ইসরাঈলকে এ পথে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন। আর যদি কিতাব বলে কোনো সুনির্দিষ্ট সহীফা ও চিঠি সংবলিত গ্ৰন্থ বুঝানো হয়ে থাকে তবে তাও উদ্দেশ্য হতে পারে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
[২] এখানে الحكم শব্দ দ্বারা জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুঝ, দৃঢ়তা, স্থিরতা, কল্যাণমূলক কাজে অগ্ৰগামিতা এবং অসৎকাজ থেকে বিমুখতা বুঝানো হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই তিনি এ সমস্ত গুণের অধিকারী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক বলেন, মামার বলেন, ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়্যাকে কিছু ছোট ছেলে-পুলে বলল যে, চল আমরা খেলতে যাই। তিনি জবাবে বললেন: খেল-তামাশা করার জন্য তো আমাদের সৃষ্টি করা হয়নি! [ইবন কাসীর]
এবং আমাদের কাছ থেকে হৃদয়ের কোমলতা [১] ও পবিত্রতা; আর তিনি ছিলেন মুত্তাকী।
[১] حنان শব্দটি মমতার প্রায় সমার্থক শব্দ। আল্লাহ তার জন্য মায়া-মমতা ঢেলে দিয়েছিলেন। আল্লাহও তাকে ভালবাসতেন, তিনিও আল্লাহর বান্দাদেরকে ভালবাসতেন। একজন মায়ের মনে নিজের সন্তানের জন্য যে চূড়ান্ত পর্যায়ের স্নেহশীলতা থাকে, যার ভিত্তিতে সে শিশুর কষ্টে অস্থির হয়ে পড়ে, আল্লাহর বান্দাদের জন্য ইয়াহইয়ার মনে এই ধরনের স্নেহ-মমতা সৃষ্টি হয়েছিল। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর]
পিতা-মাতার অনুগত এবং তিনি ছিলেন না উদ্ধত ও অবাধ্য [১]।
[১] তিনি আল্লাহর অবাধ্যতা ও পিতা-মাতার অবাধ্যতা হতে মুক্ত ছিলেন। হাদীসে এসেছে, “কিয়ামতের দিন আদম সন্তান মাত্ৰই গুনাহ নিয়ে আসবে। তবে ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়্যা এর ব্যতিক্ৰম।’ [মুসনাদে আহমাদ ১/২৫৪, ২৯২]
আর তার প্রতি শাস্তি যেদিন তিনি জন্ম লাভ করেন, যেদিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবেন [১]।
[১] সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, তিন সময় মানুষ সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়। এক. যখন সে দুনিয়াতে প্রথম আসে; কারণ সে তাকে এক ভিন্ন পরিবেশে আবিস্কার করে। দুই. যখন সে মারা যায়; কারণ সে তখন এমন এক সম্প্রদায়কে দেখে যাদেরকে দেখতে সে অভ্যস্ত নয়। তিন. হাশরের মাঠে; কারণ তখন সে নিজেকে এক ভীতিপ্রদ অবস্থায় জমায়েত দেখতে পায়। তাই ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়্যা আলাইহিস সালামকে এ তিন বিপর্যয়কর অবস্থার বিভীষিকা থেকে নিরাপত্তা প্ৰদান করেছেন। [ইবন কাসীর]
আর স্মরণ করুন এ কিতাবে মারইয়ামকে, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল [১],
দ্বিতীয় রুকু’
[১] অর্থাৎ পূর্বদিকের কোনো নির্জন স্থানে চলে গেলেন। নির্জন স্থানে যাওয়ার কী কারণ ছিল, সে সম্পর্কে সম্ভাবনা ও উক্তি বিভিন্নরূপ বৰ্ণিত আছে। কেউ বলেন, গোসল করার জন্য পানি আনতে গিয়েছিলেন। কেউ বলেন, অভ্যাস অনুযায়ী ইবাদতে মশগুল হওয়ার জন্যে কক্ষের পূর্বদিকস্থ কোনো নির্জন স্থানে গমন করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এ কারণেই নাসারারা পূর্বদিককে তাদের কেবলা করেছে এবং তারা পূর্বদিকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। [ইবন কাসীর]
অতঃপর সে তাদের নিকট থেকে নিজেকে আড়াল করল। তখন আমরা তার কাছে আমাদের রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল [১]।
[১] এখানে ‘রূহ' বলে জিবরাঈলকেই বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] ফেরেশতাকে তার আসল আকৃতিতে দেখা মানুষের জন্যে সহজ নয়- এতে ভীষণ ভীতির সঞ্চার হয়। এ কারণে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মারইয়ামের সামনে মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেন। [ফাতহুল কাদীর] যেমন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা গিরি গুহায় এবং পরবর্তীকালেও এরূপ ভয়-ভীতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।
মারইয়াম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহ্কে ভয় কর) যদি তুমি ‘মুত্তাকী’ হও [১]।
[১] মারইয়াম যখন পর্দার ভেতর আগত একজন মানুষকে নিকটে দেখতে পেলেন, তখন তার উদ্দেশ্য অসৎ বলে আশঙ্কা করলেন এবং বললেন, “আমি তোমার থেকে রহমানের আশ্রয় প্রার্থনা করি, যদি তুমি তাকওয়ার অধিকারী হও।” [ইবন কাসীর] এ বাক্যটি এমন, যেমন কেউ কোনো যালেমের কাছে অপারগ হয়ে এভাবে ফরিয়াদ করে: যদি তুমি ঈমানদার হও, তবে আমার প্রতি যুলুম করো না। এ যুলুম থেকে বাধা দেয়ার জন্যে তোমার ঈমান যথেষ্ট হওয়া উচিত। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহকে ভয় করা এবং অপকর্ম থেকে বিরত থাকা তোমার জন্যে সমীচীন। [বাগভী] অথবা এর অর্থ: যদি তুমি আল্লাহর নিকট আমার আশ্রয় প্রার্থনাকে মূল্য দাও, তবে আমার কাছ থেকে দূরে থাক। [তাবারী; আব্দওয়াউল বায়ান]
সে বলল, আমি তো তোমার রবের দূত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য [১]।
[১] সে দূত হলেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। আল্লাহ্ তাঁর দূত জিবরাঈলকে পবিত্র ফুঁ নিয়ে পাঠালেন। যে ফুঁর মাধ্যমে মারইয়ামের গর্ভে এমন সন্তানের জন্ম হলো যিনি অত্যন্ত পবিত্র ও কল্যাণময় বিবেচিত হলেন। মহান আল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন, “স্মরণ করুন, যখন ফিরিশতাগণ বলল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিতেছেন। তার নাম মসীহ, মারইয়াম তনয় ‘ঈসা, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হবে। সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে পুণ্যবানদের একজন।” [সূরা আলে-ইমরান ৪৫-৪৬]
সে বলল, ‘এ রূপই হবে। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজ। আর আমরা তাকে এজন্যে সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন [১] ও আমাদের কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’
[১] এটা এমন এক নিদর্শন যা সর্বকালের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে নেয়া যায়। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর অপার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] তিনি আদমকে পিতা-মাতা ব্যতীত, হাওয়াকে মাতা ব্যতীত আর সমস্ত মানুষকে পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ঈসা আলাইহিসসালামকে সৃষ্টি করেছেন পিতা ব্যতীত। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর সব ধরনের শক্তি ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁর নিকট কোনো কিছুই কঠিন নয়।
অতঃপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা সহ দূরের এক স্থানে চলে গেল [১]।
[১] দূরবতী স্থানে মানে বাইত লাহম। [কুরতুবী] কাতাদা বলেন, পূর্বদিকে। [তাবারী] মারইয়াম আলাইহাস সালাম হঠাৎ গৰ্ভধারণ করলেন। এ অবস্থায় যদি তিনি নিজের ইতিকাফের জায়গায় বসে থাকতেন এবং লোকেরা তাঁর গর্ভধারণের কথা জানতে পারতো, তাহলে শুধুমাত্র পরিবারের লোকেরাই নয়, সম্প্রদায়ের অন্যান্য লোকেরাও তাঁর জীবন ধারণ কঠিন করে দিতো। তাই তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পর নীরবে নিজের ইতিকাফ কক্ষ ত্যাগ করে বাইরে বের হয়ে পড়লেন, যাতে আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিজ সম্প্রদায়ের তিরস্কার, নিন্দাবাদ ও ব্যাপক দুর্ণাম থেকে রক্ষা পান। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর] ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম যে পিতা ছাড়াই হয়েছিল। এ ঘটনাটি নিজেই তার একটি বিরাট প্রমাণ। যদি তিনি বিবাহিত হতেন এবং স্বামীর ঔরসে সন্তান জন্মলাভের ব্যাপার হতো তাহলে তো সন্তান প্রসবের জন্য তাঁর শ্বশুরালয়ে বা পিতৃগৃহে না গিয়ে একাকী একটি দূরবতী স্থানে চলে যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। সুতরাং নাসারাদের মিথ্যাচার এখানে স্পষ্ট। তারা তাকে বিবাহিত বানিয়ে ছাড়ছে।
অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে এক খেজুর-গাছের নীচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, ‘হায়, এর আগে যদি আমি মরে যেতাম [১] এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম।
[১] বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন বিপদে পড়ে অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা না করে।” [বুখারী ৫৯৮৯, মুসলিম ২৬৮০, ২৬৮১, আবুদাউদ ৩১০৮] সম্ভবতঃ মারইয়াম ধর্মের দিক চিন্তা করে মৃত্যু কামনা করেছিলেন। অর্থাৎ মানুষ দুনাম রটাবে এবং সম্ভবতঃ এর মোকাবেলায় আমি ধৈর্যধারণ করতে পারব না, ফলে অধৈর্য হওয়ার গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ব। মৃত্যু হলেও গোনাহ থেকে বেঁচে যেতাম, তাই এখানে মৃত্যু কামনা মূল উদ্দেশ্য নয়, গোনাহ থেকে বাঁচাই উদ্দেশ্য। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তখন ফিরিশতা তার নিচ থেকে ডেকে তাকে বলল, ‘তুমি পেরেশান হয়ো না [১], তোমার পাদদেশে তোমার রব এক নহর সৃষ্টি করেছেন [২];
[১] এখানে কে মারইয়াম আলাইহাস সালামকে ডেকেছিল তা নিয়ে দু'টি মত রয়েছে। এক. তাকে ফেরেশতা জিবরীলই ডেকেছিলেন। তখন “তার নীচ থেকে” এর অর্থ হবে, গাছের নীচ থেকে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] দুই. কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন: তাকে তার সন্তানই ডেকেছিলেন। তখন এটিই হবে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রথম কথা বলা। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] কোনো কোনো কেরাআতে مِنْ تَحْتِهَآ (যে তার নীচে আছে) পড়া হয়েছে যা শেষোক্ত অর্থের সমর্থন করে। তবে অধিকাংশ মুফাসসির প্রথম অর্থটিকেই গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করেছেন।
[২] এর আভিধানিক অর্থ ছোট নহর। [ইবন কাসীর] এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরত দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে একটি ছোট নহর জারী করে দেন [ফাতহুল কাদীর] অথবা সেখানে একটি মৃত নাহর ছিল। আল্লাহ সেটাকে পানি দ্বারা পূর্ণ করে দেন। [ফাতহুল কাদীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".