আপনি কি জেনেছেন (এবং আশ্চর্য হয়েছেন) সে ব্যক্তি সম্পর্কে, যে আমাদের আয়াতসমূহে কুফরি করে এবং বলে, ‘আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে [১]।
[১] খাব্বাব ইবন আরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি ‘আস ইবন ওয়ায়েল কাফেরের কাছে কিছু পাওনার তাগাদায় গেলে সে বলল: তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব না। খাববাব জওয়াব দিলেন: এরূপ করা আমার পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভবপর নয়, চাই কি তুমি মরে পুনরায় জীবিত হতে পারে। আ’স বলল: ভালো তো, আমি কি মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হব? এরূপ হলে তাহলে তোমার ঋণ তখনই পরিশোধ করব। কারণ, তখনও আমার হাতে ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততি থাকবে। [বুখারী ১৯৮৫, ২০৯১, ২১৫৫, ২২৭৫ মুসলিম ২৭৯৫] অর্থাৎ সে বলে, তোমরা আমাকে যতই পথভ্রষ্ট ও দুরাচার বলতে এবং আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাতে থাকো না কেন আমি তো আজো তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী সচ্ছল এবং আগামীতেও আমার প্রতি অনুগ্রহ ধারা বর্ষিত হতে থাকবে। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের এ বিকৃত মন-মানসিকতা উল্লেখ করে সেটার উত্তর দিয়ে বলেছেন, সে কিরুপে জানতে পারল যে, পুনরায় জীবিত হওয়ার সময়ও তার হাতে ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততি থাকবে? সে কি উঁকি মেরে অদৃশ্যের বিষয়সমূহ জেনে নিয়েছে?
কখনই নয়, সে যা বলে আমরা তা লিখে রাখব এবং তাঁর শাস্তি বৃদ্ধই করতে থাকব [১]।
[১] অর্থাৎ তার অপরাধের ফিরিস্তিতে তার এ দাম্ভিক উক্তিও শামিল করা হবে, সেটাকে লিখে নেয়া হবে। তারপর সেটার শাস্তি বিধান করা হবে এবং এর মজাও তাকে টের পাইয়ে দেয়া হবে।
আর সে যা বলে তা থাকবে আমাদের অধিকারে [১] এবং সে আমাদের কাছে আসবে একা।
[১] সে যে আখেরাতেও সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার দাম্ভিকতা দেখাচ্ছে সেটা কক্ষনো হওয়ার নয়। কারণ, সেগুলো তো তখন আল্লাহর মালিকানাধীন হবে। তার কাছ থেকে দুনিয়াতে প্ৰাপ্ত যাবতীয় সম্পদই কেড়ে নেয়া হবে। সে হাশরের মাঠে শুধু একাই রিক্ত হস্তে উপস্থিত হবে।
আর তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য বহু ইলাহ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের সহায় হয় [১];
[১] মূলে عزًّا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা এদের জন্য ইজ্জত ও মর্যাদার কারণ হবে। এর আরেক অর্থ হচ্ছে, শক্তিশালী ও যবরদস্ত হওয়া। উদ্দেশ্য সেগুলো তার ধারণা মতে তাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে। কারও কারও নিকট এর অর্থ হচ্ছে, সহযোগী হওয়া অথবা আখেরাতে সুপারিশকারী হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]
কখনই নয়, ওরা তো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে [১]।
[১] অর্থাৎ সহায় হওয়ার আশায় কাফেররা যাদের ইবাদত করত, তারা এই আশার বিপরীত তাদের শক্র হয়ে যাবে। তারা বলবে, আল্লাহ এদেরকে শাস্তি দিন। কেননা এরা আপনার পরিবর্তে আমাদেরকে উপাস্য করে নিয়েছিল। আমরা কখনো এদেরকে বলিনি আমাদের ইবাদাত করো এবং এরা যে আমাদের ইবাদাত করছে তাও তো আমরা জানতাম না। অন্য আয়াতেও আল্লাহ সেটা বলেছেন, “আর সে ব্যক্তির চেয়ে বেশী বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলো তাদের আহবান সম্বন্ধেও গাফেল। আর যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন সেগুলো হবে এদের শত্রু এবং এরা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে।” [সূরা আল-আহকাফ ৫-৬]
আপনি কি লক্ষ্য করেননি যে, আমরা কাফেরদের জন্য শয়তানদেরকে ছেড়ে রেখেছি, তাদেরকে মন্দ কাজে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করার জন্য [১]?
ষষ্ঠ রুকু’
[১] تَوْزُّهُمْ اَزًّا শব্দের অর্থ দ্রুত করতে চাওয়া। [ফাতহুল কাদীর] তার অন্য অর্থ হচ্ছে, নাড়াচাড়া দেয়া, কোনো কাজের জন্যে প্রলুব্ধ করা, উৎসাহিত করা। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই যে, শয়তানরা কাফেরদেরকে মন্দ কাজে প্রেরণা যোগাতে থাকে, মন্দ কাজের সৌন্দর্য অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করে দেয় এবং সেগুলোর অনিষ্টের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে দেয় না। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে থাকে। সীমালঙ্গন করতে দেয়। [ইবন কাসীর]
কাজেই তাদের বিষয়ে আপনি তাড়াতাড়ি করবেন না। আমরা তো গুনছি তাদের নির্ধারিত কাল [১],
[১] এর মানে হচ্ছে, এদের বাড়াবাড়ির কারণে তাদের জন্য আযাবের দো'আ করবেন না। [ইবন কাসীর] কারণ, এদের দুর্ভাগ্য ঘনিয়ে এসেছে। পাত্ৰ প্ৰায় ভরে উঠেছে। আল্লাহর দেয়া অবকাশের মাত্র আর ক'দিন বাকি আছে। এ দিনগুলো পূর্ণ হতে দিন। সুতরাং আপনি তাদের শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। শাস্তি সত্বরই হবে। কেননা আমি তাদেরকে দুনিয়াতে বসবাসের জন্যে যে গুনাগুনতি দিন ও সময় দিয়েছি, তা দ্রুত পূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর শাস্তিই শাস্তি। [ইবন কাসীর]
যেদিন দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীগণকে সম্মানিত মেহমানরূপে [১] আমরা সমবেত করব,
[১] যারা বাদশাহ অথবা কোনো শাসনকর্তার কাছে সম্মান ও মর্যাদা সহকারে বাহনে চড়ে গমন করে, তাদেরকে وفد বলা হয়। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানদারদেরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাদের প্রভুর সমীপে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদেরকে জান্নাত ও সম্মানিত ঘরে প্রবেশ করানো হবে। [ফাতহুল কাদীর] পরবর্তী আয়াতে এর উল্টো চিত্ৰই ফুটে উঠেছে। সেখানে অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করানোর কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
যারা দয়াময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে, তারা ছাড়া কেউ সুপারিশ করার মালিক হবে না [১]।
[১] عهد অর্থ অঙ্গীকার আদায় করা। বলা হয়ে থাকে, বাদশাহ এ অঙ্গীকার নামা অমুকের জন্য দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] যেটাকে সহজ ভাষায় পরোয়ানা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে তার পক্ষেই সুপারিশ হবে এবং যে পরোয়ানা পেয়েছে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। আয়াতের শব্দগুলো দু’দিকেই সমানভাবে আলোকপাত করে। সুপারিশ কেবলমাত্র তার পক্ষেই হতে পারবে যে রহমান থেকে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে, একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এ সাক্ষ্য দিয়েছে এবং সেটার হক আদায় করেছে। ইবন আব্বাস বলেন, পরোয়ানা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে কোনো প্রকার শক্তি-সামৰ্থ ও উপায় তালাশ না করা, আল্লাহ ব্যতীত কারও কাছে আশা না করা। [ইবন কাসীর]
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করলে বিশেষতঃ আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করলে পৃথিবী, পাহাড় ইত্যাদি ভীষণরূপে অস্থির ও ভীত হয়ে পড়ে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “খারাপ কথা শোনার পর মহান আল্লাহর চেয়ে বেশী ধৈর্যসহনশীল আর কেউ নেই, তার সাথে শরীক করা হয়, তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা হয় তারপরও তিনি তাদেরকে নিরাপদ রাখেন এবং তাদেরকে জীবিকা প্ৰদান করেন। [বুখারী ৬০৯৯, মুসলিম ২৮০৪]
তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গুণে রেখেছেন [১]।
[১] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সমগ্র মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে সম্যক জানেন। তিনি সেগুলোকে সীমাবদ্ধ করে গুণে রেখেছেন সুতরাং তার কাছে কোনো কিছু গোপন থাকতে পারে না। সৃষ্টির শুরু থেকে ছোট বড়, পুরুষ মহিলা সবই তাঁর জ্ঞানে রয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".