অর্থসমূহের অনুবাদ সূরা সূরা আল-মুতাফফিফীন - বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল কারীমের সংক্ষিপ্ত তাফসীরের অনুবাদ। - আল-কুরআনুল কারীম বিশ্বকোষ

সূরা আল-মুতাফফিফীন

সূরার কতক উদ্দেশ্য:

تحذير المكذبين الظالمين من يوم القيامة وبشارة المؤمنين به.

মিথ্যারোপকারী ও ওজনে ঠকবাজদের প্রতি সাবধানবাণী এবং দুর্বল মুমিনদের প্রতি সান্ত¦না হিসাবে পরকালীন মঞ্জিলসমূহে ও মাপকাঠিতে মানুষের অবস্থার বর্ণনার প্রতি জোর দেয়া।

---

আয়াত: 1

وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ

১. যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস ও বিনাশ।

আয়াত: 2

ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكۡتَالُواْ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسۡتَوۡفُونَ

২. তারা লোকদের নিকট থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে।

আয়াত: 3

وَإِذَا كَالُوهُمۡ أَو وَّزَنُوهُمۡ يُخۡسِرُونَ

৩. আর যখন মানুষের জন্য মাপে বা ওজন করে তখন কম দেয়। বস্তুতঃ এটি ছিলো নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মদীনায় হিজরতকালীন মদীনাবাসীদের অবস্থা।

আয়াত: 4

أَلَا يَظُنُّ أُوْلَٰٓئِكَ أَنَّهُم مَّبۡعُوثُونَ

৪. এ অন্যায় কাজ যারা করে তারা কি বিশ্বাস করে না যে, তারা আল্লাহর নিকট পুনরুত্থিত হবে।

এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:

• التحذير من الغرور المانع من اتباع الحق.

ক. সত্যকে মানার পথে বাধা সৃষ্টিকারী অহমিকা থেকে সতর্কীকরণ।

• الجشع من الأخلاق الذميمة في التجار ولا يسلم منه إلا من يخاف الله.

খ. অত্যধিক লোভ ব্যবসায়ীদের একটি নিন্দনীয় স্বভাব। যা থেকে আল্লাহভীরু ব্যতীত আর কেউই রক্ষা পায় না।

• تذكر هول القيامة من أعظم الروادع عن المعصية.

গ. কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্ব বৃহৎ উপায়।

আয়াত: 5

لِيَوۡمٍ عَظِيمٖ

৫. হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে। এক মহা দিবসে যা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়।

আয়াত: 6

يَوۡمَ يَقُومُ ٱلنَّاسُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

৬. সে দিন মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের উদ্দেশ্যে হিসাবের জন্য দÐায়মান হবে।

আয়াত: 7

كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ

৭. ব্যাপারটি তোমাদের ধারণা অনুযায়ী নয় যে, মৃত্যুর পর আর কোন পুনরুত্থান নেই। বরং পাপীষ্ঠ কাফির ও মুনাফিকদের আমলনামা থাকবে সিজ্জীনে তথা ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।

আয়াত: 8

وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ

৮. হে রাসূল! আপনি কি জানেন, সিজ্জীন কী?

আয়াত: 9

كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ

৯. তাদের আমলনামা লিপিবদ্ধ থাকবে। যা নষ্ট হবে না। না তাতে কোন কিছু কম-বেশি করা হবে।

আয়াত: 10

وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ

১০. সে দিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস ও দুর্ভোগ।

আয়াত: 11

ٱلَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ

১১. যারা সেই প্রতিদান দিবসের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। যে দিন আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে দুনিয়ার কৃত আমলের প্রতিদান দিবেন।

আয়াত: 12

وَمَا يُكَذِّبُ بِهِۦٓ إِلَّا كُلُّ مُعۡتَدٍ أَثِيمٍ

১২. বস্তুতঃ এ দিবসকে কেবল আল্লাহর সীমালঙ্ঘনকারী মহা পাপীষ্ঠ ব্যতীত অন্য কেউ অস্বীকার করে না।

আয়াত: 13

إِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ

১৩. তার সামনে আমার রাসূলের উপর নাযিলকৃত আয়াতগুলো পাঠ করা হলে সে বলে: এ সব হলো পূর্বেকার জাতিদের কিংবদন্তী; আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়।

আয়াত: 14

كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ

১৪. ব্যাপারটি এ সব মিথ্যারোপকারীর ধারণা অনুযায়ী নয়। বরং তাদের বিবেককে পরাভূত করে ঢেকে রেখেছে তাদের অর্জিত পাপসমূহ। ফলে তারা নিজেদের অন্তর দিয়ে সত্যকে দেখতে পায় না।

আয়াত: 15

كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ

১৫. নিশ্চয়ই তারা কিয়ামত দিবসে স্বীয় প্রতিপালকের দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে।

আয়াত: 16

ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ

১৬. অতঃপর তারা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। তারা এর উত্তাপ আস্বাদন করবে।

আয়াত: 17

ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ

১৭. অতঃপর তাদেরকে কিয়ামত দিবসে ধ্বমকের স্বরে বলা হবে, তোমরা যে শাস্তি পোহাচ্ছো সে ব্যাপারে দুনিয়ার জীবনে তোমাদের রাসূল তোমাদেরকে সংবাদ দিলে তা তোমরা অবিশ্বাস করতে।

আয়াত: 18

كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡأَبۡرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ

১৮. ব্যাপারটি তোমাদের ধারণা অনুযায়ী নয় যে, কোন হিসাব ও শাস্তি নেই। বরং আনুগত্যশীলদের আমলনামা ঊর্ধ্বদেশে রয়েছে।

আয়াত: 19

وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ

১৯. হে রাসূল! আপনি কি জানেন, ঊর্ধ্বদেশ কী?

আয়াত: 20

كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ

২০. তাদের আমলনামা এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এতে কোন কিছুই কম-বেশী করা হবে না।

আয়াত: 21

يَشۡهَدُهُ ٱلۡمُقَرَّبُونَ

২১. উক্ত আমলনামা আল্লাহর আসমানসমূহের সকল ফিরিশতা প্রত্যক্ষ করবেন।

আয়াত: 22

إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٍ

২২. নিশ্চয়ই বেশী বেশী আনুগত্যের কাজ সম্পাদনকারীরা কিয়ামত দিবসে স্থায়ী নিআমতের মধ্যে অবস্থান করবে।

আয়াত: 23

عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ

২৩. তারা সুসজ্জিত আসনে বসে স্বীয় প্রতিপালকের দর্শন লাভ করবে এবং তাদের চাহিদা মাফিক তারা আরো অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দৃশ্য দেখতে থাকবে।

আয়াত: 24

تَعۡرِفُ فِي وُجُوهِهِمۡ نَضۡرَةَ ٱلنَّعِيمِ

২৪. আপনি যখন তাদেরকে দেখবেন তখন তাদের চেহারায় স্বাচ্ছন্দ্যের নিদর্শন হিসেবে সৌন্দর্য ও লাবণ্য দেখতে পাবেন।

আয়াত: 25

يُسۡقَوۡنَ مِن رَّحِيقٖ مَّخۡتُومٍ

২৫. তাদেরকে নিজেদের সেবকরা মোহরকৃত সুরা পান করাবে।

আয়াত: 26

خِتَٰمُهُۥ مِسۡكٞۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ

২৬. এর মোহর হলো কস্ত‚রীর। বস্তুতঃ এ সম্মানজনক প্রতিদান পাওয়ার জন্য যেন প্রতিযোগীরা আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজ করে এবং অসন্তুষ্টির কাজ থেকে বিরত থেকে প্রতিযোগিতা করে।

আয়াত: 27

وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسۡنِيمٍ

২৭. এর সাথে রয়েছে “তাসনীম” নামক প্র¯্রবণের মিশ্রণ।

আয়াত: 28

عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا ٱلۡمُقَرَّبُونَ

২৮. এটি হলো জান্নাতের উঁচু স্তরের একটি ঝর্নাধারা। যা থেকে নৈকট্যশীল বান্দারা স্বচ্ছ ও খাঁটি পানীয় পান করবে এবং সকল মুমিনও অন্য উপাদানের সাথে মিলিয়ে তা পান করবে।

আয়াত: 29

إِنَّ ٱلَّذِينَ أَجۡرَمُواْ كَانُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يَضۡحَكُونَ

২৯. নিশ্চয়ই যারা কুফরির মাধ্যমে অপরাধ করেছে তারা ঠাট্টার ছলে মুমিনদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে।

আয়াত: 30

وَإِذَا مَرُّواْ بِهِمۡ يَتَغَامَزُونَ

৩০. তারা মুমিনদের নিকট দিয়ে গমন করলে ঠাট্টা ও বিদ্রƒপের ছলে পরস্পর চোখ টিপা-টিপি করে।

আয়াত: 31

وَإِذَا ٱنقَلَبُوٓاْ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِمُ ٱنقَلَبُواْ فَكِهِينَ

৩১. আবার যখন তারা নিজেদের পরিজনের নিকট ফিরে যায় তখন তারা আনন্দ চিত্তে ফিরে এ কারণে যে, তারা কুফরির উপর রয়েছে এবং মুমিনদেরকে নিয়ে বিদ্রƒপ করেছে।

আয়াত: 32

وَإِذَا رَأَوۡهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ لَضَآلُّونَ

৩২. আর যখন মুসলমানদেরকে দেখে তখন বলে, এরা মূলতঃ সত্য থেকে পথভ্রষ্ট। কেননা, এরা নিজেদের বাপ-দাদার ধর্ম পরিহার করেছে।

আয়াত: 33

وَمَآ أُرۡسِلُواْ عَلَيۡهِمۡ حَٰفِظِينَ

৩৩. বস্তুতঃ আল্লাহ তাদেরকে এদের আমল সংরক্ষণের দায়িত্ব দেন নি। যার ফলে তারা এ কথা বলতে পারে।

এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:

• خطر الذنوب على القلوب.

ক. অন্তরের উপর পাপাচারের ভয়ানক প্রভাব।

• حرمان الكفار من رؤية ربهم يوم القيامة.

খ. কিয়ামত দিবসে আল্লাহর দর্শন থেকে কাফিররা বঞ্চিত থাকবে।

• السخرية من أهل الدين صفة من صفات الكفار.

গ. ধার্মিকদের নিয়ে ঠাট্টা করা কাফিরদেরই স্বভাব।

আয়াত: 34

فَٱلۡيَوۡمَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنَ ٱلۡكُفَّارِ يَضۡحَكُونَ

৩৪. কিয়ামত দিবসে মুমিনরা কাফিরদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করবে যেমনটি কাফিররা দুনিয়াতে মুমিনদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।

আয়াত: 35

عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ

৩৫. তারা সুসজ্জিত আসনে বসে তাদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত আল্লাহর স্থায়ী নিয়ামত প্ররিদর্শন করবে।

আয়াত: 36

هَلۡ ثُوِّبَ ٱلۡكُفَّارُ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ

৩৬. বস্তুতঃ কাফিরদেরকে তাদের দুনিয়ার কৃতকর্মের ফলস্বরূপ পরকালে অপমানজনক প্রতিদান দেয়া হবে।

এই পৃষ্ঠার আয়াতগুলোর কতক ফায়দা:

• خضوع السماء والأرض لربهما.

ক. নিজেদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে আসমান ও যমীনের অনুগত হওয়া।

• كل إنسان ساعٍ إما لخير وإما لشرّ.

খ. প্রতিটি মানুষমাত্রই সে সাধনা করে যাচ্ছে, হয় ভালোর পথে না হয় মন্দের পথে।

• علامة السعادة يوم القيامة أخذ الكتاب باليمين، وعلامة الشقاء أخذه بالشمال.

গ. কিয়ামত দিবসে সৌভাগ্যের লক্ষণ হলো ডান হাতে আমলনামা গ্রহণ। পক্ষান্তরে হতভাগ্যের প্রমাণ হলো বাম হাতে আমলনামা গ্রহণ।